#ইয়াসমিন_রিমা
#অসম_প্রেম
#পর্ব_৩৮
প্রেমা পেছনে খাবার টেবিলের কাছে দাঁড়ানো। হাতে ধারালো ছুরিতে আঙ্গুল দিয়ে ঘষছে ।ডেবিল মার্কা হাসি দিয়ে। আর মনে মনে বলছে,সবে তো খেলা শুরু হা হা হা হা।বাকা হাসি দিয়ে। সবাই এবার খুব খুশি তাই না হা হা হা খুব শীঘ্রই সব শেষ হয়ে যাবে।হা হা হা আমি সব কিছু শেষ করে দিব। তোমরা সবাই মিলে আমার কাছ থেকে আমার দামী জিনিস টা কেরে নিয়েছ ।এই এত গুলো বছর আমি সব খুশি ভালোবাসা মায়া ছাড়া এক বিষন্নতায় কাটিয়েছি। কি দোষ আমি করেছিলাম যার শাস্তি আজো পেতে হচ্ছে।কতটা কষ্ট পেয়েছি তা শুধু আমি জানি।তার প্রতিশোধের সময় চলে এসেছে।হা হা হা হা।
জীবন নামক অচেনা গলিতে চলার পর বুঝতে পারলাম। কেউ কারোর না। একটা বয়সের পর আমরা নিজেরাই বুঝতে পারি তর্ক করার চেয়ে নিরবতা অনেক ভালো। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
ছাড়বো না আমি কাউকে।যত হাসি হেসে নাও হা হা হা।সব ধুলিষাত হয়ে যাবে।
সবাই তাকিয়ে আছে লোকটার দিকে জরাজীর্ণ কাপড়ে দাড়িয়ে আছে।
আসরাফ চৌধুরী আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। তার চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছে তার সেই হাড়িয়ে যাওয়া ভাই অজয় চৌধুরী।কত গুলো বছর কেটে গেছে তার হিসেব নেই। দৌড়ে গিয়ে ভাইকে জরিয়ে ধরলেন।
,আসরাফ চৌধুরী , তুই এত দিন কোথায় ছিলি।জানিস আমরা তোকে কোথায় না কোথায় খুঁজে ছি।তোর এমন হাল কি করে হলো। কেঁদে দিলেন।
, অজয় চৌধুরী, আমাকে ক্ষমা করবেন দাদা। আপনারা ভালো আছেন।
কেউ কোনো ভাবেই ভাবতেই পারেনি যে অজয় চৌধুরী সত্যি একদিন ফিরে আসবে। তিনি এক বিয়ের অনুষ্ঠানে চলে গিয়েছিলেন আর আজ এত গুলো বছর পর ফিরলেন।৩০ টি বছর পর।
শাহাজাহান চৌধুরী রহমান চৌধুরী এসে ভাইকে জরিয়ে ধরলেন। অনেক গুলো বছর কেটে গেছে তার ভাইকে দেখে নি।
সবাই খুব খুশি হলো।আর গাড গুলো চলে গেল। কিন্তু কেউ বুঝলো না এভাবে ধরে আনার কি প্রয়োজন।
আসরাফ চৌধুরী,প্রেমা তুই এভাবে ওকে কেন নিয়ে এসেছিস। আমার ভাইয়ের কি হয়েছিল।
প্রেমা,বাবা কাকাই আসতে চাইয়েনি তাই এভাবে নিয়ে আসা ।আর উনি আমার কন্ট্রাকশন সাইডে কাজ করছিল। ভাবতে পারিনি আবার ফিরে পাব। মনে মনে, তোমাদের খুশি আমার সহ্য হচ্ছে না। একদিন এই অজয় চৌধুরীর চলে যাওয়ার পিছনে আমার হাত ছিল আর আজও ফিরে আসার পিছনে আমার হাত ধরে আছে।বাকা হাসি দিয়ে।
, আসরাফ চৌধুরী,কি বলছিস তুই এসব। বলেই ভাই কে জরিয়ে ধরলেন।
আসরাফ চৌধুরী, অজয় তুই সব কিছু ছেড়ে অনেক দূরে ছিলিস তাই না।তোর ছেলে মেয়ে অনেক বড় হয়ে গেছে।
, অজয় চৌধুরী, হুম। আমি ওদের দেখবো । কোথাও ওরা।
আলিশাকে অনিন্দিতা চৌধুরী হাত ধরে নিয়ে এসে দেখালেন।, এই হলো আপনার মেয়ে।
আলিশা ভাবতেই পারেনি তার বাবাকে ফিরে পাওয়া যাবে। চোখ দিয়ে পানি ঝরছে। অজয় চৌধুরী মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।
,অজয় চৌধুরী,আমায় তোরা ক্ষমা করে দিছ। আমি কোনো দিনও তোদের ভালো বাবা হতে পারিনি।আজ আমি অনুতপ্ত।আমায় ক্ষমা করে দে।
, আলিশা বাবা বলে জরিয়ে ধরলো।আর কাঁদছে। এদিকে আদিত্য রাগে ফুঁসছে। চোখ রক্ত লাল হয়ে গেছে। এইসব কোনো মতেই বেশিক্ষণ সহ্য করতে পারবে না।তাই এখান থেকে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। আমি ক্ষমা করে দিলাম বাবা।
রিনা চৌধুরী একটু ভয়ে আছেন তার মেয়ে না জানি সামনে কি করে ।এত ভালো তার কাছ আসা করতে পারছে না।
, আসরাফ চৌধুরী , ওকে কিছু ভালো জামা দাও।আর আজকে ওর সব পছন্দের খাবার তৈরি করো।
রিনা চৌধুরী, হুম তাই হবে।আজ আমরা সবাই। অজয়ের সব পছন্দের খাবার তৈরি করব।
অজয় চৌধুরী,যার জন্য তোমাদের ফিরে পেলাম সে কোথায়।
রিনা চৌধুরী খাবরে গেলেন। আসরাফ চৌধুরী,হ্যা সে ত এখানে আছে প্রেমা।
, অজয় চৌধুরী,প্রেমা।
,শাহাজাহান চৌধুরী,হ্যা প্রেমা আমাদের প্রেমা।এই বাড়ির বড় মেয়ে। আমাদের নয়নে মনি।যে তোর খুব পছন্দের ছিল।
, অজয় চৌধুরী,ওহ কোথায় ও।
,প্রেমা, হাতে ছুরি দিয়ে আঙ্গুল বুলিয়ে, আমি এখানে।ডেবিল মার্কা হাসি দিয়ে।
, অজয় চৌধুরী অবাক হয়ে গেলেন। এই মেয়ে ও কন্ট্রাকশনের মালিক ছিল। খুব খুশি হলো।, তুমি।
,হ্যা আমি। হেসে।
,সত্যি আজ তোর জন্য আমি আমার সব কিছু ফিরে পেলাম রে মা। আমি তো কাছে চির কৃতজ্ঞ থাকব।
,কাকাই এভাবে বলো না প্লিজ। একদিন সব ঠিক হওয়ারি ছিল।
এদিকে শেহ্জাহান বাড়ির সবাই তাকিয়ে দেখছে।যে মানুষ টা কে তারা ভালো করেই দেখেনি। আদিত্য ও আলিশা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আদিত্য তার বাবাকে কখনো সহ্য করতে পারে না। তার বাবার জন্য ই তার মাকে হারাতে হয়েছে।
আদিত্য প্রেমার কাছে গিয়ে ছুরি টা টান মেরে নিয়ে নিল।
,প্রেমা,কি হয়েছে।
, আদি, কি হয়েছে মানি। রেগে। তুমি ওই লোকটাকে কেন নিয়ে এসেছ ।
, কারণ আমার ইচ্ছা।
, তোমার যা ইচ্ছা তাই করবে।
,হ্যা তাই করবো।এনি প্রবলেম। নিজের বাবাকে সহ্য করতে পারছ না।
, তুমি খুব ভালো করেই জানো ।আমি ওই লোকটা কে সহ্য করতে পারি না। উনার জন্য মা আর নেই। শুধু উনার জন্য আমাদের জীবন টা শেষ হয়ে গেছে।
, ভুল ত মানুষ মাত্রই হয়।কারো ভুল ক্ষমা করা মহত গুন।
, তুমি কি শুরু করেছ হ্যা।
, আমি আবার কি করলাম।
, আমি এখানে এক মুহুর্ত থাকবো না।আর তুমি ও থাকবে না। তুমি আমার সাথে যাবে।যাও গিয়ে রেডি হয়ে নাও।
, আমি কারোর বউ নই।
,প্রেমা বেশি হচ্ছে কিন্তু। আমি তোমার স্বামী।
, কিন্তু আমি তো তা মানি না। হেসে।
, আমি যা বলব তাই তোমাকে শুনতে হবে।কি ভেবেছ কখনো আমি আমার অধিকার ফলাইনি বলে যে। ফলাবো না তা কিন্তু নয়।চলো ।আমি আমার স্ত্রী অধিকার ফিরে পেতে চাই।
তুমি কি জানো স্বামী কি ।আমি বলছি। স্বামী পদতলে স্ত্রীর বেহেস্তে তা কি জানো। স্বামীর ভালবাসা ছাড়া কোনো মেয়ে পূর্ণতা পায় না।
, আমি সব কিছু শেষ করব তার জন্য আবার নেকামো হ।
জোর করে হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছিল তখনই আসরাফ চৌধুরী বলেন,আদি দেখ কে এসেছে।ওই হলো তোর ছেলে।দেখ কত বড় হয়েছে।
অজয় চৌধুরী তাকিয়ে দেখছে তার ছোট্ট ছেলে টা আজ কত বড় হয়েছে। চোখ দুটো ছলছল করছে।,আদি।
আদি রেগে আছে।
প্রেমা, কেমন লাগছে এখন।জটকা মেরে হাতটা ছাড়িয়ে নিল। আমি কোথাও যাবো না।
আদিত্য রেগে আছে।প্রেমার এহন কান্ডে।
রিনা চৌধুরী আদিত্য কে নিয়ে গেলেন তার বাবার কাছে।
, তোর বাবা উনি এভাবে মুখ ফিরিয়ে নিস না আদি।
,আদি,থাম তুমি বড় মা। এই লোকটা কে আমি সহ্য করতে পারি না চিৎকার করে। উনার জন্য আজ আমার মা নেই শুধু উনার জন্য। আঙ্গুল উঁচিয়ে।
অজয় চৌধুরী আদি হাত ধরে ছিলেন,আদি বাবা তুই আমাকে ক্ষমা করে দে। আমি আজ অনুতপ্ত। কেঁদে দিলেন।
কিন্তু হাত সরিয়ে হন হন করে চলে গেল বাইরে। কোনো দিন উনার মুখটা দেখতে চাইনি আজ সেট সত্যি করেছে প্রেমা।প্রেমা সব জানতো।ওকি ইচ্ছা করে আদিকে কষ্ট দেওয়া জন্য ওর বাবা কে নিয়ে এসেছে।
সবাই খুব খুশি।আজ বাড়ি চার ছেলে একসাথে ডিনার করছে।প্রেমা শুধু প্রহর গুনছে এই সময়ের শেষ হবার।
,,
প্রেমা ডিনার শেষে রুমে চলে আসলো।আজ সবার খুশি তে জ্বলছে।আর পুরোনো দুঃখ ভেসে উঠছে।
অনেক রাত হয়ে গেছে প্রেমা রুমে এসে।কাঁচের জানালা পাশে রকিং চেয়ার এ হেলান দিয়ে বসে আছে। চোখ বন্ধ করে ভাবছে। স্নিগ্ধ চাঁদের আলোয় ভাসছে। চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে।
জীবনে কখনো কাউকে পাওয়ার জন্য কাঁদবে না। যার জন্য তুমি কাঁদবে সে কখনোই তোমার হবে না।আর যে তোমার হবে সে কখনোই তোমাকে কাঁদতে দিবে না। কোথাও কেউ ভালো নেই সবাই কিছু না পাওয়া। পেয়ে হাড়ানোর হতাশ নিয়ে বাচে ।এমন একজনকে বিশ্বাস করবে যে তোমাকে দুঃখ দিয়ে নিজেকে অপরাধী মনে করবে ।এমন একজনকে ভালবাসবে যার ভেতর সারাক্ষণ তোমাকে হাড়ানোর ভয় থাকবে। এমন একজনকে ভালবাসবে যে তোমার সাথে কথা না বললে সে তোমাকে খুঁজে বেড়াবে কেউ সুন্দর হয় না যে যাকে যত বেশি ভালোবাসবে তাকে তত বেশি সুন্দর মনে হবে।প্রিয় মানুষ গুলো শুধু রাগটাই দেখে রাগের ভিতরে ভালোবাসা টা দেখে না। ভালোবাসা মানুষের কোনো কিছু অবহেলা করতে নেই অবহেলা তখনই কাটার মত বাধে যখন সেটা কাছের মানুষ দেয়। সবাই ভালোবাসি বলতে পারে কিন্তু কেউ অপেক্ষা করে ভালোবাসি বলতে পারে না।credit of prio Ahmed.
ভাবতে ভাবতে অতীতে ফিরে গেল। ঠিক ১৪ বছর আগে।
#ফ্লাসব্যক
গ্রামের নাম প্রতাপঘর। গ্রামে কি নেই আছে গোলা ভরা ধান পুকুর ভরা মাছ গোয়াল ভরা গরু। আরো কত কি। গ্রামের রাস্তার দুই ধারে সারি সারি গাছ। দুই পাশে জমি । জমি ভরা ধান গাছ। সবুজে শ্যামলে ভরা।আর মন ভোলানো স্নিগ্ধ বাতাস।
আজ প্রেমা বাড়ির সবার সাথে অনেক রাগারাগী করেছে গ্রামে থাকার জন্য।ক্লাস এইট অবধি শহরের নাম করা স্কুলে পড়েছে। কিন্তু প্রেমার শহরে মন বসে না।সে বরাবই গ্রাম খুব পছন্দ করে। যেখানে সবাই আকাশ তন্ময়। আয়ান ও সিয়ান এক বয়সের হয়েও শহরে পড়ছে সেখানে প্রেমা শহর থেকে গ্রামে থেকে পড়বে। শেষ পর্যন্ত প্রেমার খামখেয়ালি জন্য মেনে নেওয়া হয়েছে কিন্তু কলেজ শহর থেকেই করতে হবে।আজ গ্রামের স্কুলে থেকে পড়বে।আর গ্রামেই থাকবে।সে কবে না কবে গ্রামে আসে।
বিশাল পুরোনো আমলের বাড়ি। তার সামনে প্রেমা দড়িয়ে আছে একটা ব্যাগ কাঁধে।আজ ওর খামখেয়ালির জন্য আসতে পেরেছে। এখন থেকে এখানেই থাকবে।আর প্রান খুলে গ্রামটাকে ঘুরে দেখবে। বাড়ির সামনে উঠোন।উঠনের পাশে প্রেমার দাদা প্রতাপ চৌধুরী বসে পান খাচছিলেন। গ্রামের কেবল তার মেয়েই থাকে বাকি চার ছেলের তিন ছেলে ই শহরে থাকে।আর জনের কোনো খোঁজ নেই । তবুও প্রতাপ চৌধুরী দিব্বি আছেন কিন্তু সন্তান তাকে কি ভুলে থাকা যায়। কখনো না।
,প্রেমা,দাদা বলে চিৎকার দিল।
প্রতাপ চৌধুরী, তুমি দিদিভাই।
তার পাশে বসে।
, আমি তোমাদের সাথে থাকবো।আর আমি এখানের স্কুলে পড়াশোনা করবো।
, সবাই ত শহরে থাকে।
, তাতে কি হয়েছে আমি থাকবো আমার গ্রাম খুব পছন্দের।যান কাল আমার নতুন স্কুলের দিন। আমি খুব খুশি।
,তাই।
, হুম।দাদি কোথায়।
দাদি দাদি বলে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।এর ফুফু রুমানা বেগম। সাথে দেখা।
রুমানা বেগম, তুই। এখানে।
বলেই জরিয়ে ধরলেন।
,হ্যা আমি এখন থেকে এখানেই থাকব। আমার ব্যাগ গুলো ধরো আমি সারা গ্রাম ঘুরে আসি। মুক্ত বাতাস খেয়ে আসি।
দেখতে দেখতে আগামীকাল হয়ে গেল আজ প্রেমার গ্রামের স্কুলের প্রথম দিন।রেডি হয়ে স্কুলে রওনা হলো।
ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে দুপাশে দুটো বিনুনি বেঁধে।মাঠে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল তখনই,
চলবে,
কপি করা নিষেধ