#ইয়াসমিন_রিমা
#অসম_প্রেম
#পর্ব_৪২
এক সময়ের কেউ বলে উঠলো,
,Hunter,শিকারী কখনো তার শিকার ভুলে না হা হা হা হা হা। অট্ট হাঁসিতে মেতে উঠেলো ।আমার শুধু চাই মৃ ত্যু
হা হা হা।সব শশান বানিয়ে দিব। সবাই কে মে রে ফেলব। বলেই হাতের বিয়ারের বোতল মাটিতে আছড়ে ফেলে দেয়। পুরো মেজে কাঁচের টুকরো ছরিয়ে ছিটিয়ে আছে।খালি পায়ে কাঁচের টুকরোর উপর দিয়ে হেঁটে গেলে। পুরো মেঝেতে রক্ত আর রক্ত। লোকটার কোনো ব্যাথার অনুভূতিই কাজ করছে না।
এদিকে,
প্রান্তিক বাড়ি ফেরার পথে প্রেমার সাথে কথা বলছিল তখন কিছু মুখোশ ধারি লোক এসে।মুখ চেপে ধরে কালো মুখোশ পরিয়ে নিয়ে যায়। ততক্ষণে প্রান্তিক অজ্ঞান হয়ে গেছে।প্রেমা অনেক ফোন দিলেও ফোন বন্ধ আসে।যখন প্রান্তিকের জ্ঞান ফিরে তখন দেখলো একটা বন্ধ অন্ধকার ঘরে আটকা। কিছু ই দেখা যাচ্ছে না। প্রান্তিককে সুই দিয়ে আবার অজ্ঞান করে রাখা হয়।
সকালে, সবাই ড্রাইনিং টেবিলে বসে চা খাচ্ছিল । আদির মাথায় ব্যান্ডেজ দেখে সবাই অবাক হয়ে যায়।
তখন অজয় চৌধুরী ও বসে ছিলেন। অজয় চৌধুরী ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছেন ছেলে কি বলে আদৌ কি ক্ষমা করবে।আসরাফ চৌধুরী জিগ্যেস করলেন।
,আদি কি হয়েছে এভাবে মাথা ফাটলো কেন।
,আদি, না কাকাই তেমন কিছু হয়নি। আসলে ছোট্ট একটি এক্সিডেন্ট হয়ে ছিল। এখন সব ঠিক আছে।
,কাল ওরকম ভাবে রাগ করে চলে গেলে।আমরা সবাই খুব কষ্ট পেয়েছি।
,অনিন্দিতা চৌধুরী সেজ চাচী,আদি আগে তা হয়েছে তা ভুলে যাও। কেউ যদি তার ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চায় অনুতপ্ত হয় তাকে ক্ষমা করে দেওয়া উচিৎ। দেখ আদি সবাই তো কত ভুল করি তাই না। এখন ক্ষমা ই করে দেওয়া হয় উচিত তা না হলে কি করে সুধরাবে হুম। মাথায় হাত বুলিয়ে।যা হয়েছে তা ভুলে যাও।
, রিনা চৌধুরী,সেজ একদম ঠিক বলেছো।হ্যারে আদি ভুলে যা আমরা সবাই একসাথে থাকবো কেমন। আমরা সবাই আছিতো।
, আয়না চৌধুরী ছোট চাচী, আদি তুই তো আমাদের ভালোবাসিস বল। আমাদের জন্য না হয়
আদি থামিয়ে দিয়ে বলল,প্লিজ কাকি তোমরা আমাকে জোর করবে না। আমি কোনো কথা শুনতে চাই না।
সবাই আদি কে এক প্রকার চেপে ধরলো। আরুতা বললো, ভাইয়া তুমি প্লিজ আমাদের ছেড়ে চলে যেওনা। তুমি কাকাই কে ক্ষমা করে দাও। তুমি কি আমাদের কাউকে কি ভালোবাসা না। আদির হাত ধরে বলছিল ।
তন্ময় রাগি চোখে তাকিয়ে আছে।
কারন ওযে আরুতাকে ভালোবাসে কিন্তু কেউ জানে না। জানে হয়তো ওকে ও অজয় চৌধুরীর মতো বাড়ি ছাড়তে হবে। চৌধুরী পরিবারের কিছু পুরনো নিয়ম আছে।তা পূর্বকাল থেকে ওর দাদা পালন করে আসছে।
তন্ময়ের চোখে চোখ পড়লো আরুতার । আরুতা ভয় পেয়ে গেল সাথে সাথে হাত ছাড়িয়ে নিল। কিন্তু উল্টো ভাবে আদি আরুতার হাত ধরে নিল।কারন আদি দেখছিল প্রেমা আসছে।যদি প্রেমা একটু জেলাসি হয় তো। শেষ পর্যন্ত চিপায় পড়ে গেল আরুতা তন্ময় আজ ওকে একটা ঝাড়ি মারবেই। তন্ময় বার বার করে বলে দিয়েছে ও যেন কোনো ছেলের হাত না ধরে।সেই ভুল টাই করে ফেলেছে।
এখন এই বিপদ থেকে একজন রক্ষা করতে পারে সে হলো আরুতার প্রেমা আপু। তন্ময় জমের মতো ভয় পায় প্রেমাকে।
প্রেমা সবে জিম থেকে আসছিল হালকা পায়ে ব্যাথা হচ্ছে। আস্তে আস্তে আসছিল। তখন ই দেখে আদি আরুতার হাত চেপে ধরেছে। ফোন থেকে চোখ সরিয়ে একবার তন্ময় এর দিকে চোখ বুলিয়ে নিল। তন্ময় রাগি দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে। মুচকি হাসলো।
, প্রেমা,আরুতা এদিকে আয়তো তোদের জন্য বিদেশ থেকে অনেক গিফট এনেছিলাম। এগুলো নিয়ে যা আর সবাইকে দিয়ে দে ।
ব্যাস শোনা মাত্র ই আরুতা আকাশ দীপ্ত খাওয়া ছেড়ে ছুটে চলে আসলো প্রেমার কাছে।
আদি সব কাজ বৃথা গেল।প্রেমার মধ্যে কোনো জেলাসি দেখলোই না। তন্ময় হাফ ছেড়ে বাঁচল ।না পারছিল সবার সামনে বলতে না পারছিল সহ্য করতে।
ড্রয়িং রুমে সোফায় বসে।সবাই কে সবার পছন্দের গিফট দিল।
,আকাশ,আপু তুই জানিস কিভাবে বলতো আমার এটাই লাগবে।
,প্রেমা,ম্যাজিক দু হাত মেলে।
,আদির হাতে একটা ধরিয়ে দিল,এটা তোর জন্য।
,আদি,আছে এতে
প্রেমা ,দেখলেই বুঝতে পারবি।
প্যাকেটটা খুলে দেখলো সব সাইজের জামা একদম ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত বয়সের। সাথে কিছু খেলনা ও ঘরিও মোবাইল ল্যাপটপ ছিল। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
,রিনা চৌধুরী,প্রেমা তুই এগুলো কি দিয়েছিস ওকে।
,প্রেমা,মা আজ অবধি আমি আমার দায়িত্ব কর্তব্য ভুলিনি।তাই যে দায়িত্ব কর্তব্য পালন করা উচিৎ তাই করেছি। এগুলো সবাই কে দেয়ছিলাম শুধু ওদের বয়স ভেদে আলাদা আলাদা করে দেওয়া হয়েছিল।তা হলে আদির আর আলিশা ক্ষেতে ভিন্ন হবে কেন। ওদের ও এই গুলো আমার কাছ থেকে পাওয়া উচিৎ ছিল। তখন দিতে পারিনি আজ সব একসাথে দিয়ে দিলাম। একটা কথা শুনে রাখ ওরা সবাই আমার কাছে সমান।
তন্ময়, আপু তুই আমাদের এত ভালোবাসিস আমরা শুধু তোর রাগ টাই দেখি বলেই তন্ময় ও আকাশ জরিয়ে ধরলো।
আর আদি রাগ কন্ট্রল করছে।
সবার সামনে আলিশা মিষ্টি নিয়ে হাজির হলো।
অনিন্দিতা চৌধুরী, আলিশা তুই মিষ্টি নিয়ে হাজির হয়েছিস কেন। কোনো সুখবর আছে নাকি। হুম।
আলিশা,হ্যা তোমাদের নতুন অতিথি আসবে তাই। মানে আমি মা হতে চলেছি। মুচকি হেসে।
সবাই খুব খুশি হয়ে গেল। সবাই আলিশা কে অনেক দোয়া করলো।প্রেমা গিফট টা আলিশা কে দিল।,আরো নতুন গিফট আছে পরে দিব। গালে হাত বুলিয়ে। একটা মিষ্টি মুখে দিয়ে রেডি হয়ে চলে গেল।
আলিশা ও একই রকম আদির মতো অনেক কাপড় পেয়েছে। সবাই কে জিজ্ঞেস করায় প্রেমার বলা কথা গুলো বললো। আলিশা অনেক আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়লো এতটা ভালোবাসে।
আদি অসুস্থ তাই প্রেমার ঘরে ঢুকে বিছানায় শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে আর প্রেমার গায়ের গন্ধ শুঁকছে বিছানায় শুয়ে। মনে হচ্ছে প্রেমা ওকে আস্টে পিস্টে জরিয়ে ধরে রেখেছে। ঘুমের অতলে তলিয়ে গেছে ভাবতে ভাবতে।
এদিকে প্রেমা প্রান্তিককের খবর না পেয়ে ওর বাড়ি আসলো। কোনো কিছু না ভেবেই সোজা প্রান্তিকের ঢুকে গেল। কিন্তু প্রান্তিক নেই।প্রেমার মনে প্রান্তিকের জন্য একটা সফ্ট কর্নার আছে। কারন প্রান্তিকের মতো মানুষ হয় না। নিঃশন্দেহে প্রান্তিক একজন ভালো মানুষ প্রেমার বিশ্বাস।
বিছানায় বসে ভাবতে লাগলো, গেল কোথায় প্রান্তিক।কাল ফোনে কথা শেষ হওয়ার আগেই কেটে গেল। কিন্তু কেন। তারপর আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। প্রতিবার not richaval আসছে। কেন।
রুম থেকে বের হতে যাবে তখন বেডের নিচে চিপায় একটা কাগজ দেখলো। আগ্রহ নিয়ে উঠিয়ে দেখলো।একটা ছোট পাসপোর্ট সাইজের ছবি। কিন্তু ছবিটা আর কারো নয়।এটা আলিশার ছবি। অনেক পুরোনো। পাশের কিছু অংশ উঠে গেছে ঘষা লেগে। কিন্তু মুখ স্পষ্ট।
খালি মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। এটা তো প্রান্তিকের রুম। এখানে এই ছবি কেন। হুয়াই।
অন্য মনস্ক হয়ে নিচে নামছিল। তখন। প্রান্তিককে ভাইয়ের মেয়েরা খুশি হয়ে ছোট মা বলে জরিয়ে ধরলো।
বাকি সবাই খুশি হলো কারণ প্রেমা সাধারণত এই বাড়িতে তেমন একটা আসে না। সবাই চায় একটু আসুক। প্রান্তিককের ভাবিরা ও দুই ভাই খুব খুশি হলো। এ বাড়ি সবাই প্রেমাকে খুব ভালো বাসে।যদি কেউ কিছু কেনে তার জন্য কিনে পাঠিয়ে দেয়।যাকে বলে নিষ্শার্থ ভালোবাসা।প্রেমার মত বড় এত বড় লোক না হতে পারলেও সবার সুন্দর একটা মন আছে ।
সবাই প্রেমাকে পেয়ে আর ছাড়লো না।প্রেমার জন্য ভাবীরা মন ভরে আয়োজন করলো । বিভিন্ন ধরনের খাবার বিভিন্ন ধরনের পিঠা।প্রেমার সব পছন্দের খাবার তৈরি করেছে।
এদিকে চৌধুরী বাড়ির সদর দরজায় পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে।তারা সবাই কে ডাকলো। রিনা চৌধুরী, আপনারা এখানে এই সময়ে কেন।
পুলিশ, আমরা একটা লা,শ পেয়ে ছি । ধারনা করছি আপনাদের বাড়ির জামাইয়ের।
শুনে অবাক হয়ে গেল।এর মধ্যে আদিও চলে আসলো বাকি ছেলে মেয়ে রা কাজে গেছে। এখানে থাকলে আতংকিত হয়ে যেত।
আলিশাও আসলো শুনে অবাক হয়ে গেল। আদি আলিশাকে ধরে রেখে।আদি জিগ্যেস করলো , আপনি কার কথা বলছেন।
পুলিশ টা একটা ছবি দিল।আদি দেখে বুঝতে পারছে না কে ।মুখ খুব ভয়ংকর ভাবে থেঁতলে গেছে। বোঝাই যাচ্ছে না। কিন্তু পোশাক আর বডি দেখে বুঝতে পারলো এটা শ্রাবন।শ্রাবন কাল বিকেলে ই চলে গেছে।
কিন্তু কে এত নিশংশ ভাবে মারলো।শ্রাবনকে।
পুলিশ, আমরা তদন্ত করে দেখছি কিন্তু কোনো ক্লু তেমন পাওয়া যায়নি কিন্তু আমার মনে হয় ওনার ফোনে কোনো ক্লু থাকতে পারে। ফোন টা পাওয়া যাচ্ছে না।
, আদি,কে এই ভাবে মারলো।
চলবে,