#ইয়াসমিন_রিমা
#অসম_প্রেম
#পর্ব_৪৯
হঠাৎ সেই লোক টির ও চোখ পড়ে প্রেমার চোখে।আজ দু জনে হাজার কোটি বছর পর একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে।যেন পুরো পৃথিবীটা থমকে গেছে। বলে বোঝানো যাবে না।
প্রিয় যখন বইয়ের পাতা থেকে চোখ সরিয়ে সামনে তাকালো স্তব্ধ হয়ে গেল। চোখের সামনে হারিয়ে ফেলা মানুষ টা পলকহীন ভাবে তাকিয়ে আছে।এ জীবনের প্রথম প্রেম। এখন শুধুই প্রাক্তন। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
ভাবতে লাগলো,
প্রাক্তন হবার গল্পে কখনো মিশে থাকে অভিমান আবার কখনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।অভিমানের দেয়াল টা ছাপিয়ে ভুলের পরিমানটা যদি অনেক গুনে বেড়ে যায় । তবেই সেই স্মৃতি বেড়ে হয়ে উঠে আখখেপের জনজাল। বহু বছর পর সেই সৃতি গুলো একটুকরো বাস্তবতা হয়ে দেখা দেয়।চোখে চোখ রেখে কথা বলাটাও দুষ্কর হয়ে উঠে। নিঃশব্দ চোখের জলটাও ভাষা হারায় প্রিয় মানুষ টির কাছে।
চলে যাওয়ার সময় কাছের মানুষের দিকে তাকানো যায় না ।তাকালে টুক করে জল পড়ে যায় । তবুও হেঁটে যেতে যেতে হাতের উলটো পাশ দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে চলে ছেরে গেল একটা জলজ্যান্ত কল্পনার সংসার । সম্পর্ক ত একটা সংসারের মতই সম্পর্কে নিজের সন্তানের মত একটু একটু করে লালন পালন করেতাকে বড় করতে হয় । নিজের হাতের সন্তানের গড়ে তোলা মৃত্যুতে যেমন মানুষ নিজেকে সামলাতে পারে না তেমনি সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ার এই সাময়িক ব্যাথা টা সামলে উঠাটাও সহজ নয়।
প্রেমা অপলক হীন ভাবে তাকিয়ে আছে কোনো কথা নেই।একে বারে কোলাহল বিহীন।মন টা খুব করে চাইছে ছুটে জরিয়ে ধরে সকল কষ্ট ভেঙ্গে ফেলতে।
প্রেমা মনে মনে, এবার তোমাকে আমি আমার করেই ছাড়বো প্রিয়। তাতে আমায় যত খারাপ হতে হোক না কেন। সময়ের ব্যবধানে মানুষ টা কত বদলে গেছে। এখন দেখে খুব দায়িত্ব বান পুরুষ লাগছে। মুচকি হেসে। বাহ্ বই পড়ার অভ্যাস। আমার সাথে থাকতে থাকতে বই পড়াও ভালো বেসেফেলেছে। আমি যে প্রচন্ড রকমের বই পড়তে ভালোবাসি। তার মানে ও এখনও আমাকে ভালোবাসে।ভেবেই খুশিতে মনটা লাফিয়ে উঠলো।
যখনই প্রিয়র সাথে কথা বলতে যাবে তখন। দরজা খুলে আদিত্য আসলো। দরজা খোলার শব্দে দুইজনেই সামনে তাকালো।
প্রেমা বিরক্ত হলো, মনে মনে,এর আর কোনো কাজ নেই সব সময় আমার আর প্রিয়র মাঝখানে ডুকবেই।কত দিন আর ডুকবি তোর মাকে আমি পেয়েছি। এবার শুরু হবে আমার রাজত্ব।বাকা হাসি দিয়ে।
আদি ব্যাগ গুলো জায়গায় রেখে।প্রেমার পাশে বসলো।
প্রেমা এবার ঠিক করেই নিল প্রিয়র সাথে কথা বলবে।
,প্রিয়র দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে,হ্যালো।
প্রিয় বললো,হ্যালো।
, কেমন আছেন।
, ভালো।উনিকে।
আদি বলতে যাচ্ছিল, আমি ওর
প্রেমা বলে দিল, আমার ছোট ভাই। মুচকি হেসে।
আদি অবাক হয়ে গেল। প্রেমাকে টেনে আস্তে বললো, তুমি আমাকে ভাই বললে। তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে। আমি তোমার স্বামী। মজা করছো আমার সাথে। রেগে।
আদি প্রিয়র সাথে আলাপ করলো, আমি আদিত্য শেহ্জাহান খান। আপনি।
প্রিয় বললো , নরমাল ভাবেই বললো, আমি প্রিয় আহমেদ।
আদির চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল।প্রেমা কি তাহলে এই জন্য ভাই বলেছিল ।এই হলো সেই প্রিয় ।যাকে প্রেমা পাগলের মত ভালবাসে। আজ দশ বছর পর তার সাথে দেখা।প্রেমার দিকে তাকালো।
প্রেমার বাঁকা হাসিতেই বুঝে গেল।এই সেই কোনো সন্দেহ নেই। এবার কি হবে।যাকে এত ভালোবাসে। ছলছল চোখে দুজনে দিকে তাকিয়ে আছে।আজ বড্ড বেশি অসহায় লাগছে।
প্রেমার চোখে তাকিয়ে দেখলো আর নিজেকে নিয়ে ভাবলো।
এক চোখে অপেক্ষা আর এক চোখে শূন্যতা। তবুও বিশ্বাস রাখি তুমি আমার হবে।
প্রিয়র কাছে আদিত্য ও প্রেমাকে একটু অস্বাভাবিক লাগছে। কারন প্রেমাকে যে খুব ভালো ভাবে চেনে। হয়তো এতগুলো বছরে অনেক টাই বদলে গেছে।প্রেমা কিছু লুকোচ্ছ না ত।
প্রিয় ভাবছে প্রাক্তন নিয়ে থাকলে ত হবে না। এতগুলো বছরে সবার জীবন কম বেশি বদলে গেছে। কিন্তু কিছু কিছু ভালো বাসা যা বদলাতে পারেনি। প্রাক্তনের সাথে সম্পর্ক ছিল।যার কথা আজও মনে পড়ে। তার জন্য কত পাগলামী করেছিল। এমনকি অনেক মারও খেয়েছিল।কি হল শেষ পরিনতি। হয়তো বিয়ে শাদি করে বাচ্চা সামলাচ্ছে।ওর হাজবেন্ড এর কথা একবার জিজ্ঞেস করে দেখবো।
,প্রিয় ,প্রেমা তোমার হাজব্যান্ড কোথায়।
,প্রেমা, আমি বিয়ে করিনি নির্দিধায় বলে দিল। শুধু তোমার অপেক্ষা।আজ বোধহয় শেষ হলো।
প্রিয় অবাক হয়ে গেল।প্রেমা বিয়ে করেনি। কিন্তু কেন।ওর বাবা যে বলেছিল।
আদি শুধু শুনেই যাচ্ছে আজ কিছু বলতে পারছে না।গলা দিয়ে কিছু বেরোচ্ছে না।
প্রেমা, তুমি কি বিয়ে করেছো।
প্রিয় কিছু বলতে পারলো না। তার মধ্যে কেউ ফোন করল।হ্যালো স্যার বলুন।
Some one, তুমি কে জানো ত।
,হ্যা স্যার আপনি চিন্তা করবেন না আমি সব খবর বের করে ফেলবো।
, some one, তোমার উপর এই ইনভেস্টিগেশন এর দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আশাকরি তুমি সব পারবে। আমার পূর্ন বিশ্বাস আছে তুমি পারবে। তোমার মত সাহসী অফিসার আমাদের চাই।
, ওকে স্যার।
, আগে তুমি ডেবিড কে ধরে ফেলো। তবেই।আসল মাথা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবে।
, ওকে স্যার, কিন্তু আস্তে করে hunter
,সে কে সেটা ত কেউ জানেনা ।সাবধান ওর লোক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। নিজের খেয়াল রেখো।
, ওকে স্যার বলে কেটে দিল।
একটা রাত তিন জনে মোটামুটি খোশগল্প করে কাটিয়ে দিল। এবার দুজনের কাংখিত স্থানে যেতে হবে।ট্রেন থেকে দুজনে দুদিকে চলে গেল।
আদির সাথে প্রেমা যাচ্ছে যাওয়ার পথে পিছন ফিরে দেখলো প্রিয়
সময়ের ব্যবধানে মানুষ কত বদলে যায়।
চার বছরের সম্পর্ক ভেঙ্গে দিয়ে কাছের মানুষ টা চলে গেল বিশ্বাস করুন সেদিন আমি প্রচুর কেঁদে ছিলাম বেঁচে থাকার সব টুকু সাদ শেষ হয়ে গিয়েছিল আমি অনেক ভেঙ্গে পড়ে ছিলাম অনেক বার আত্ম ত্যাগের পথে অনেক বার পা বাড়িয়ে ছিলাম কিন্তু যতবারই সিলিংয়ে সাথে গামছাটা পেঁচিয়ে ছিলাম ততবার ই মায়ের টানানো ছবিটি আমার খুঁজে নেওয়া পথটা বন্ধ করে দিয়েছিল আমার সেদিন মনে হয়েছিল চার বছরের সম্পর্ক চার বছর ধরে গড়ে তোলা বিন্দু বিন্দু স্বপ্নের পাহাড় ভেঙ্গে দিয়ে যেই মানুষ টা কে এত বেশি ভালো বাসতাম সেই মানুষ টাকে ভুলে থাকব ভবিষ্যতের দিন গুলোতে খুব খুব কেদেছিলাম
আমার পক্ষে কোনো ভাবেই সম্ভব ছিল না এখন দিব্বি দিন কাটাচ্ছি এখন আর আগের মতো মনে পড়ে না মনে পড়লেও বর্তমান কে প্রবাহিত করে না।
মানুষের জীবন টা আসলে স্রোতে ভেসে যাওয়া শেওলার মত ভাসতে ভাসতে কোথায় গিয়ে বস্তি গড়ে মায়া মমতায় আবদ্ধ হয়ে যায় কিন্তু একটা সময় পর ঠিকি স্রোতে গা ভাসিয়ে চলে যেতে হয় ।
চলবে,