#ইয়াসমিন_রিমা
#অসম_প্রেম
#পর্ব_৬০
কাঁদছে আর হাসছে।
আমি হেরে গেছি।না পাওয়া গল্পে আমি ভীষণ ভাবে হেরে গেছি। আমি হেরে গেছি।।হেরে যাওয়া গল্পের পথিক আমি। আমি ক্ষমার অযোগ্য।হা হা হা হা।
আমি হেরে গেছি।ভালোবাসা পাওয়ার গল্পে রাজা হারানো রানি আমি।
নিজের খেয়াল রেখো আমার না হওয়া মহারাজা।
বাড়ির সবাই শুধু প্রেমাকে খামখেয়ালি জেদি খারাপ মানুষ ভাবতো। কিন্তু সবার ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে।এই প্রথম সবাই জানলো প্রেমা কতটা ভালোবাসতে পারে।এত গুলো বছর কতটা যন্ত্রনা লুকিয়ে রেখেছে। সবাই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সবার বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে।
আসরাফ চৌধুরী রিনা চৌধুরী কখনো বুঝতে পারেনি তার মেয়ে কতটা একাকিত্ব নিয়ে কাটিয়েছে।আজ বুঝতে পারলো কঠিন হৃদয় এর মানুষটির মধ্যে কতটা ভালোবাসা লুকিয়ে ছিল। কিন্তু তারা তো বাবা মা হিসেবে মেয়ের ভালো টাই চেয়ে ছিল।যাতে তার মেয়ে আরাম আয়েশে সুখে শান্তিতে কারো কাছে ভালো থাকবে। যেভাবে বড় হয়েছিল সেভাবে কি গরীব ঘরে থাকতে পারতো। কখনো না।তারা বাবা মা হিসেবে কখনো সহ্য করতে পারতো না।যে তাদের মেয়ে গরীব ঘরে টানা পরানে জীবন যাপন করবে।তারা বড় অট্টালিকায় আরাম আয়েশে থাকবে।কোনো বাবা মা সন্তানের খারাপ চায় না।তাই তারা চায়নি খুব কম বয়সে প্রেমা গরীব ঘরে জীবন সাজাক।তারা সারাজীবন সন্তান কে সব সময় বেস্ট জিনিসটা দেওয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু আজ বোধহয় তাদের চাওয়া টা বেশি হয়েগেছিল। কখনো প্রেমার একাকিত্বের সঙ্গী হয়নি তাই আজকে এত কষ্ট পেয়েছে।যদি দুঃসময়ে পাশে থাকতো আজ কে এমন দিন আসতো না।
আজ অবধি সবাই শুধু ওকে খারাপ ভেবেছে সবাই ওর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে কখনো ওর মনটাই কেউ বুঝতে চায়নি। কখনো বুঝেনি একটা কঠিন হৃদয় এর মানুষের একটা সুন্দর মন আছে।এই জঘন্য তম মানুষ টা ও কাউকে পাগলের মত ভালবাসতে পারে।
সবাই ভাবছে,কতটা নির্লজ্জ হলে এতটা অপমানের পরও একটা মানুষ বেহায়ার মত আঁকড়ে ধরতে চায় । কতটা ভালোবাসলে একটা মানুষ নিজের সম্মানের কথা ভুলে গিয়ে বার বার তার কাছে যেতে চায়। হয়তো ভালোবাসলে মানুষ অসহায় হয়ে পড়ে।
আদি এই বোধহয় এই প্রথম প্রেমাকে দেখলো এতটা ভেঙ্গে যেতে। প্রথমে খারাপ ভেবে কন্ট্রাক ম্যারেজ করেছিল। তখন সহ্য করতে পারতো না।মেয়েটার সাথে যখন সংসার করেছিল তখন কত অবহেলাই না করেছে। কিন্তু যখন স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করলো তখন ছেরে চলে গেল। খুব খুজেছিল। খুব কষ্ট হয়েছিল। তার পর যখন আবার ফিরে পেল তখন আবার বাঁচার ইচ্ছে বেরে গেল। মাঝে যখন খারাপ ব্যবহার করতো খুব কষ্ট পেত কখনো বুঝতে দেয়নি। কিন্তু আজ মনে হলো প্রেমা ওর থেকে ও বেশি যন্ত্রনা লুকিয়ে রেখেছে।এ কেমন মেয়ে। সত্যি আজ প্রেমা সবার কাছে খুব অচেনা। মেয়েটা কিভাবে বেঁচে আছে এই যন্ত্রনা নিয়ে।কত মানুষ একটু কষ্ট পেয়েও আত্ম ত্যাগের পথ বেছে নেয়। কিন্তু প্রেমা দায়িত্ব দিয়ে বাঁধা।যার জন্য বাঁচতে হয়েছে।প্রেমা সত্যি অসাধারণ। চোখ থেকে অস্রু গড়িয়ে পড়ছে।
আদি ভাবছে কেন একটু বুঝতে চেষ্টা করলো না। সেই লুকিয়ে রাখা মানুষ টা কে কেন খুঁজতে চেষ্টা করলো না। সেদিন থেকে কতই না অবহেলা করেছে। এমনকি ওর মুখের দিকে ফিরে ও তাকায়নি।আজ নিজেকে খুব অপরাধী মনে করছে। আদির ভেতরটা চুরমার হয়ে যাচ্ছে।প্রেমার বলা প্রতিটা কথা ওর ভেতরে ক্ষত বিক্ষত করছে।যে প্রেমাকে এত ভালোবাসলো সেই প্রেমা ই অন্য কাউকে ভালোবেসে নিজেকে শেষ করে দিয়েছে।
আজ সবাই আফসোস করছে কেন ওর ভেতরের মানুষটা খুঁজেও দেখলো না। সবার খুব খারাপ লাগছে।কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গেছে। সবাই বুঝতে পেরেছে যে মানুষ টা সব সময় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে আজ সে হার মেনে ভেঙ্গে গেল।এক মূহুর্তে কিভাবে হার মেনে নিল।সে নিজের মুখে ই বললো আমি হেরে গেছি।
প্রিয় পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো প্রেমা হাঁটু গেড়ে বসে অঝোরে কাঁদছে।যে মানুষ টা একসময় ওর হদয়ে বাস করতো।আজ সে ওকে ভুলতে না পারার অসুখে ভুগছে। প্রিয় কেন ওকে ভালোবেসেছিল।ওদের পরিচয় না হলে ই ভালো হতো।আজ ওর সন্তানের খু নি।কি বলবে তার ভাষা নেই।
প্রেমা একপলক চারিদিকে তাকিয়ে দেখ। সবাই সবার মনের মানুষ টা কে পেয়েছে। কিন্তু ওর কি অপরাধ ছিল যে পেল না। সবাই যে যার সঙ্গী পেয়েছে। তন্ময় আরুতাকে । আয়ান পূর্ণতা কে।আরিশ টুসি কে । পূর্ব টায়রা কে। হিমানি সাইফ কে। সাইফ পারিনা কে। ফারহান পেয়েছে প্রিয়তাকে। প্রান্তিক পেয়েছে আলিশাকে।আর যে যার অর্ধাঙ্গিনীর সাথে। সবার দিকে চোখ বুলিয়ে। একবার প্রিয়র দিকে তাকালো।
প্রিয় তাচ্ছিল্য করে চলে গেল।
প্রেমা বললো, না নিজের মনটাকে বুঝাতে পারলাম।না কাউকে বুঝাতে পারলাম নিজের ভেতরের যন্ত্রনার কথা।সব শেষে অপেক্ষা করে গেলাম ভালো দিনের। কিন্তু ভালো দিন আসলো আর কই।সব সময় ভাবি জীবন টা এমন না হলেও পারতো। একটুখানি ভালো থাকতে চাই। সেটাও আমার ভাগ্যে জোটে না। প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু কারনে বিষন্নতা একাকিত্ব নিয়ে সময় কাটাতে হয়। বুকের ভেতর যন্ত্রনা সৃষ্টি হয়। সারাক্ষণ মনে হয় নিঃশ্বাস এর সাথে সাথে ভেতরটা চিরে বের হয়ে যাচ্ছে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়।
আমি মুক্তি চাই।এই হেরে যাওয়া জীবন থেকে।
চোখের পানি মুছতে মুছতে বললো যে জীবনে প্রিয়র ভালোবাসা নেই সে জীবন আমি রেখে কি করবো।
প্রিয় বিহীন জীবন নিয়ে আমি বাঁচতে পারবো না। আমি সত্যি জঘন্য তম খারাপ। খুব খারাপ। আমি খু নি। হ্যা আমি খু নি। আমি সবার ক্ষমার অযোগ্য। আমার শাস্তি হওয়া উচিত। কঠিন তম শাস্তি হওয়া উচিত।এই সুন্দর জীবন টা আমার মতো পাপীর জন্য না। আমার সব যন্ত্রনা সীমা ছাড়িয়ে গেছে।এই জীবন আমি রাখবো না।
শেষ হোক এই না পাওয়া গল্পে হেরে যাওয়া মানুষটার।
কিন্তু তার আগে আমাকে জানতে হবে প্রিয় আমায় কতটা ভালোবাসে।
সবাই আসলো ওর কাছে। সবাই সান্তনা দিচ্ছে।আদি কি করবে বুঝতে পারছে না। ওকে ধরতে গেলে। হাত দিয়ে থামিয়ে । আদির চোখে তাকিয়ে বললো।, আমি ক্ষমার অযোগ্য। আমায় কখনো ক্ষমা করো না। ভুলে আবার আমার মায়ায় জড়িয়ো না।হাত সরিয়ে দিয়ে আমি কোনো কিছুর যোগ্য নই। বলেই নিজের রুমে চলে গেল। দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।
সবাই খুব চেষ্টা করলো খোলার। সবাই খুব টেনশন করছে।ও যদি কিছু করে ফেলে।
আদি দরজায় হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই দরজা খুলে হাতে রিবালবার নিয়ে সবার সামনে দিয়ে বেরিয়ে গেল। অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
আদিও পিছু পিছু ছুটলো।
,
এদিকে প্রিয়র ফ্লাটে কলিং বেলের আওয়াজ শুনে। আফসানা দরজা খুলে দেখতে পেল প্রেমা হাতে গান নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ লাল হয়ে আছে।
ভেতরে ঢুকলো।
আফসানার মাথায় রিবালবার ঠেকিয়ে বললো,
,কেন ও আমাকে ভালোবাসে না। কেন আমাকে ঘৃণা করে। আমি এতটাও খারাপ না। কেন বার বার আমায় দূরে সরিয়ে দেয়।
আফসানা, তুমি খারাপ নও আমি নিজেই প্রিয়কে আমার কাছে নিয়ে এসেছি। আমি শুনেছি ও কাউকে ভালোবসতো। তাই আমি তার থেকে ওকে নিজের করে নিয়েছি। ওকে সব অতীত ভুলতে বাধ্য করেছি।
প্রিয় এসেছে ,
,থামো প্রেমা।গান নিচে করো নয়ত আমি গুলি করবো।
প্রেমা ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে।
,কাউকে প্রানে মারার জন্য অসম্ভব ঘৃণা থাকা প্রয়োজন। তুমি আমাকে অসম্ভব ঘৃণা করতে পার না।
প্রিয়, কতটা ভালোবাসা আর ঘৃনা। এক্ষুনি প্রমান হয়ে যাবে ।
, ওকে চলো আজকে তাহলে দেখা যাক।
কিছু বুঝে উঠার আগেই সুট করে দিলো প্রেমার বুকে। আস্তে আস্তে মেঝেতে লুটিয়ে পড়লো।
আদি পিছু নিয়ে আসতে আসতে দেখে সুট করা হয়েছে গেছে।
প্রিয় আফসানার কাছে এসে বলে, তুমি ঠিক আছো।
আফসানা, হুম ঠিক আছি কিন্তু প্রেমা।
প্রেমার কাছে এসে গান হাতে নিয়ে ওটা খুলে দেখে খালি।
আফসানা,এটা তো খালি।
প্রিয় অবাক হয়ে যায়। হাত থেকে গান পড়ে যায়।
প্রেমা বলে উঠে, আমার জীবনের মতো।
আফসানা, তুমি এমন ট কেন করলে।
প্রিয় প্রেমার কাছে এসে মাথা তুলে বলে, কেন এমন করলে।
,এটা আমার জন্য দরকার ছিল। ক্ষমতা দেখাতে চেয়েছিলাম মৃ ত্যু তো দরকার ছিল।মৃ ত্যু র পরে তুমি কি করবে । কিভাবে বাচবে সারাজীবন এটা ভাববে তুমি আমাকে মে রে ফেললে।
, প্রিয়, তুমি এমন কেন করলে। অন্য রাস্তা বেছে নিতে পারতে। কেন এমন পাগলামী করেছো। অন্য কাউকে নিয়ে সুখে জীবটা কাটাতে পারতে। কেন করলে না। এমন খারাপ না হলেও পারতে।
প্রেমার চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে।প্রতেকটা লাইন বলতে খুব কষ্ট হচ্ছে।
, তোমার ভালোবাসা ছাড়া অন্য কোন রাস্তা বেছে নিতে পারিনি।তোমাকে দেওয়া কথা।যতদিন হৃদস্পন্দন থাকবে ততদিন ভালোবাসা শুধু তোমার।যতদিন নিঃশ্বাস থাকবে ভালোবাসা শুধু তোমার।। যতদিন জীবন থাকবে ভালোবাসা শুধু তোমার। আমি তোমার থেকে অনেক দূরে চলে যাব।
I can’t live with you.
প্রিয় অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সবাই কেঁদে দিল। ভালোবাসার জন্য মানুষ কত টা পাগল হতে পারে।
আদি ছুটে গিয়ে বুকের সাথে জরিয়ে ধরলো আর কাঁদছে।প্রেমা আদির চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলল, আমি খুব খারাপ তাই না। আমায় কখনো ক্ষমা করো না ।আমায় কখনো ক্ষমা করো না। বলেই কেঁদে দিল। আমি ক্ষমার অযোগ্য। পৃথিবীর নিকৃষ্টতম পাপী আমি।দম বন্ধ হয়ে আসছে।প্রেমা আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে পড়লো।
সব কিছু এক নিমিষেই যেন থমকে গেল।
চলবে,