#ইয়াসমিন_রিমা
#অসম_প্রেম
#পর্ব_৬৫ শেষ।
আদি শুধু ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।আজ যেন পুরো দুনিয়া টা শেষ হয়ে গেল। এই নিষ্পাপ শিশুর সাথে এমন টা কেন হলো।
সবাই খুব কাঁদলো কিন্তু আদির চোখে একফোঁটা জল অবধি নেই।এটা ওদের ভাগ্য এ লেখা ছিল। কিন্তু কেন?
বাড়ির কেউ বিশ্বাস ই করতে পারেনি।প্রেমা সবাই কে ছেড়ে চলে গেছে।যে মানুষ টা সব কষ্ট ভুলে জীবন টা সুন্দর করে সাজিয়ে তুলতে চেয়েছিল কিন্তু আজ ভাগ্য তাকে সব কিছু থেকে কেরে নিয়ে গেছে। সবাই খুব কষ্ট পেল।
আদি ওর মুখ টা দেখতে চেয়েছিল কিন্তু হঠাৎ ওর লা শ টা পাওয়া যাচ্ছে না।কেউ প্রেমাকে পেল না।এক প্রকার নিখোঁজ।প্রেমার জন্য আদি পাগল হয়ে যাবে। তারাহুরো করে দিয়েছে। ওকে খোঁজার জন্য। কিন্তু পায়নি।
বাড়ির সবাই ধরেই নিয়েছে প্রেমা নেই।আদি বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে।
আজ একটি বছর পার হলো।
আদির জীবন অনাকাঙ্ক্ষিতায় চলতে লাগলো।একা একা বাচ্চা দুটোকে সামলাচ্ছে। প্রেমাকে হারানোর যন্ত্রা
নিয়ে বেঁচে আছে।
সন্ধ্যায়
বাচ্চা দের তার দাদী নানী সামলাচ্ছে।আদি ড্রয়িং রুমে বসে অফিসের ফাইল দেখছিল। হঠাৎ অনেকক্ষণ ধরে কলিং বেল বাজাচ্ছে। সবাই খুব ব্যস্ত আছে ।
তাই কাজ ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। গিয়ে দরজা খুলে দিল।
আদির চোখ দুটো ছলছল করছে। চোখের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। একজন অপরুপ রমনী।পরনে আদির পছন্দের শাড়ি। আদির দেওয়া সেই গহনা। চুল খোঁপা করা। চোখ দুটো টানাটানা।যাকে প্রথম বিয়ের করেছিল।যে সারাদিন এমন বউ সেজে আদির বাড়িতে ঘুর ঘুর করে বেড়াত। অথচ তখন কতই না অবহেলা করেছিল।আজ সেই তার প্রিয়তমা স্ত্রী।যাকে সবাই ভেবেছিল মারা গেছে।
পেছনে সবাই দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।এটা সয়ং প্রেমা দাঁড়িয়ে আছে। একজন ঘরোয়া বউ সেজে। প্রেমাকে কখনো ই এমন সাজে দেখেনি।
আদি জরিয়ে ধরতে যাবে তখন প্রেমা আদির পায়ে পড়ে ক্ষমা চাইল।, আমাকে ক্ষমা করবেন স্বামী। আমি আপনার প্রতি অনেক অবিচার করেছি। বিয়ে হওয়া সত্ত্বেও আপনাকে আমি আমার থেকে দূরে সরিয়ে রেখে ছি। আমি অনেক ভুল করে আপনার উপর রাগারাগী, গায়ে হাত তুলেছি। আমাকে ক্ষমা করুন। আমি আপনার অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছি। ক্ষমা করবেন। আপনি আমাকে বলেছিলেন আমাকে শুদ্ধ হতে হবে । আমি শুদ্ধ হয়েছি। আমি আমার যোগ্য শাস্তি নিজেকে দিয়েছি।আজ থেকে আমি আপনার অনুমতি বিহীন কোন কাজ করব না। আমি কখনো আমার সন্তানের উপর কখনোই অবিচার করব না। আপনি আমাকে যা শাস্তি দিবেন আমি মেনে নিব। আমি আর কখনো আপনার মুখের উপর কথা বলব না। আমি আপনার সকল আদেশ পালন করব। আপনি আমাকে ক্ষমা করে গ্রহণ করবেন স্বামী। কেঁদে বলছিল।এ জীবনে একজন পুরুষ ই আমার জীবনে থাকবে সেটা শুধু আপনি। আদির পা জরিয়ে ধরে কেদে বলছিল।
,আদি ও ভাবতে পারেনি যে মেয়ে খামখেয়ালি জেদি ছিল।আজ সে তার বাধ্য হয়ে থাকতে চায়।,প্রেমা উঠো। দুহাত দিয়ে উঠিয়ে জরিয়ে ধরলো।প্রেমাও জরিয়ে ধরে কেদে উঠল।, আমাকে ক্ষমা করবেন।
,একি তুমি আমাকে আপনি কেন বলছো।
, কারন আমার কাছে আপনি নামটাই বেশি সম্মানের লাগে। তাই। এতদিন তো অসম্মান করেছি। এখন থেকে শুধু সম্মান করবো। আমি সব কিছু ছেড়ে দিয়েছি। সকল কিছু খারাপ কাজ থেকে বেরিয়ে এসেছি।
আদি প্রেমার দু গালে আলতো হাত দিয়ে বললো, তাই আমাকে এত ভালবাস। সম্মান দেওয়ার জন্য আপনি বলার দরকার নেই। তুমি বেশি সুন্দর লাগে। মুচকি হেসে।
, ঠিক আছে আপনি যা বলবেন তাই করবো।
, চোখের পানি মুছে, আবার আপনি।
,হে হে সরি তুমি।একটু লজ্জা পেয়ে।
, আচ্ছা তুমি কবে থেকে লজ্জা পেলে হুম।
,যবে থেকে আপনি ওফ তুমি আমার স্বামী। তখন থেকে।
দুজনে ই হেসে দিল। বাড়ির সবাই এদের কান্ড দেখে তারাও হেসে কুপোকাত।।
প্রেমা গিয়ে বাচ্চাদের কোলে নিয়ে। অনেক গুলো কিস করলো। নিজের সন্তানদের বুকে আগলে নিল।
আদিও আসলো প্রেমা কাছে। বাচ্চাদের আদর করলো।
আজ সবাই হই হুল্লোড় করেছে। এবার থেকে প্রেমা আদির বউ হয়েই থাকবে। একজন পিওর গৃহিণী হবে।
প্রেমা এক বছর পর ফিরে আসলো।তাই বাকি ভাই বোন গুলো মিলে বাসর ঘর সাজালো। প্রেমাকে সাজিয়ে রুমে ঢুকিয়ে দিল। কিন্তু কেউ ওরা আদিকে ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছে না। কারন তাদের চাঁদা দিতে হবে ভেতরে ঢুকতে।
কোনো উপায় না পেয়ে শেষ পর্যন্ত ওদের টাকা দিয়ে বিদায় করলো। এবার নার্ভাস হয়ে ভিতরে ঢুকলো। দরজা বন্ধ করে দিয়েছে।
প্রেমার পাশে বসলো আদি।যেই ঘোমটা উঠালো তখন দেখলো এটা প্রেমা নয় দীপ্ত কে ওরা মেয়ে সাজিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে।
, তুই এখানে। দীপ্ত। আমার বউ কোথায়।
এদিকে সামনে দাঁড়িয়ে প্রেমার হেসেই যাচ্ছে। সাথে বাকি বদমাইশ গুলো ও হেসে যাচ্ছে।
আদি রেগে গিয়ে সব গুলোকে বার করলো। দরজা বন্ধ করে।ছুটে জরিয়ে ধরলো।,ফাইনালি এত অপেক্ষার প্রহর পর আমার ভালোবাসা কে পেলাম।
, হুম।
,কি হুম। তুমি কি লজ্জা পাচ্ছো।
, কেন।
, কিছু না
বলেই কোলে তুলে নিলো সারা ঘরে ঘুরলো। দুজনে ই হাসছে।
পুরো রাতটা সুন্দর করে কাটিয়ে নিল।আজ থেকে প্রেমা আদির ভালোবাসা পূর্ণতা পেল।প্রেমা এক কথায় আদির ভক্ত।আদি ছাড়া কিছুই বোঝে না।
আজ প্রেমার খুব ইচ্ছে হলো সবাই মিলে একসাথে আনন্দ
করবে। নিজের হাতে সবার জন্য বাহারী রকমের রান্না করেছে। সবাই খুব আনন্দে আছে। সেখানে প্রিয় আফসানা, ফারহান প্রিয়তা, প্রান্তিক আলিশাও,আর সেখানে সকল বন্ধুরা আছে। প্রিয় প্রেমার জীবনে এখনো আছে। কিন্তু সেটা প্রাক্তন হয়ে নয় একজন ভালো বন্ধু হয়ে।
সবাই আনন্দে আত্মহারা হয়ে যাচ্ছে সকল কে দেখে প্রেমা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দিল।সব ভালো যার শেষ ভালো তার। হঠাৎ ভাবনার মাঝে আদি প্রেমাকে পেছন থেকে সবার সামনে জরিয়ে ধরলো, আমার মিষ্টি বউ।
সবাই ওদের দিকে তাকিয়ে আছে ।একটু পর সবাই হেসে উঠল।প্রেমা আবার ও আদির কান্ডে লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে আছে।
আদি, সবাই দেখ আমার বউ আমার থেকে আট বছরের বড় হয়েও আমার কথায় লজ্জায় মুখ লাল হয়ে যায়।হা হা হা হা।
এইবার ঠেলে সরিয়ে দিয়ে চলে যাচ্ছিল তখন আদি প্রেমার হাতটা ধরে তাকিয়ে আছে। দুজন দুজনের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এই চোখ যেন হাজার বছরের পূর্নতা খুঁজে পেল।
আবার দুজনে জরিয়ে ধরলো।এক জনমের পর পাওয়া যা হাজার জনমে শেষ হবে না।
প্রেমা, আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি। অনেক ভালোবাসি। তুমি আমার এ জীবনে কেন। যতবার জন্ম হবে ততবাই তোমার বউ হতে চাই গো স্বামী।
,আদি, আমি ও তোমাকে ভিশন ভালোবাসি। আমার ভালোবাসা এই জন্মে হবে না। তোমাকে প্রতি জন্মে ভালোবাসতে চাই।যততই ভালোবাসি না কেন আমার মন ভরে না। আরো বেশি ভালোবাসতে চাই। তুমি আমার শত জনমের ভালোবাসা।
বলেই আবার জরিয়ে ধরলো। ভালোবাসা যেন কখনো ই শেষ না হয়।
সমাপ্তি মানেই শেষ নয় END শব্দটির মানে হচ্ছে।
Effort Never Dies অর্থাৎ প্রচেষ্টার মৃত্যু নেই।
_____________
🌹 সমাপ্ত🌹
🔴#অসম_প্রেম_সিজন_২ (সব পর্বের লিংক একসাথে)
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=122143813172035373&id=61551061215369&mibextid=Nif5oz
(গল্প টা যেন শেষ হয়েও হলো না।মন চায় শেষ না করি তবে করতেই হতো। খুব খারাপ লেগেছে শেষ করতে।জানি না কেমন লিখেছি। সবার কাছে কেমন লেগেছে। তবে আমি আমার তরফ থেকেও ভালো টা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।যদি ভুল ত্রুটি হয় তবে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)
#সবাই
❤️আল্লাহ হাফেজ। সবার জন্য শুভ কামনা রইল ❤️