তোমায়_যবে_পাই_দেখিতে #তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া #পর্ব_৫ (প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)

0
305

#তোমায়_যবে_পাই_দেখিতে
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
#পর্ব_৫
(প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)

প্রণয় বুঝতে পারছে, তার ভাইয়ের মাথায় অন্য কোনো পরিকল্পনা ঘুরছে। কিন্তু কী সেটা বুঝতে পারছে না। মায়ের অবাধ্য সে হতে পারবেনা কারণ মাথার দিব্যি দিয়েছেন জাহানারা বেগম। তাহলে কী করবে? এসব ভাবতে ভাবতে ভাইয়ের পাশ থেকে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালো প্রণয়। মৃন্ময়ী আর রাহাকে ভীষণ মিস করছে সে। এতটুকু সময় হয়েছে নজর ছাড়া হয়েছে তবুও স্ত্রী, সন্তানের জন্য মনটা কেমন হাসফাস করছে!
” ওহে প্রণয়,তোমার প্রণয়িনীকে মিস করছো না-কি? ”
প্রণয় আবরিশামের মাথায় আলতো করে একটা গাট্টা মেরে আলতো হেসে বললো,
” তুই আর ভালো হবি না আবরিশাম?”
আবরিশাম চৌধুরী, প্রণয়ের মামাতো ভাই। বয়সে সমবয়সী দুজনেই। রাজশাহীতে মা,বাবা আর বোনকে নিয়ে থাকে সে। ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষে ঢাকায় আসা। বাবার অঢেল সম্পত্তি থাকায় কোনো কাজকর্মের প্রতি তার ঝোঁক নেই।
” লোকে বলে ভালো হতে পয়সা লাগে না বাট আমি বলি ভ্রাতা,টাকা ছাড়া কিচ্ছু হয় না। সে যাইহোক, আসমান ভাইয়ের চোখমুখ কেমন অন্য রকম লাগছে না? ”
” হ্যাঁ। ভাইয়া কোনো ফন্দি আঁটছে বুঝলি।”
” আমি গিয়ে জিজ্ঞেস করবো না-কি? ”
” না থাক, বললো তো সময় হলে আমাকে বলবে।”
আবরিশাম কিছু বলতে যাবে তখনই ফোনের রিংটোনে অন্যমনস্ক হয়ে যায়। ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে ঠোঁটের কোণে দুষ্ট হাসি ফুটিয়ে বলে,
” এক্সকিউজ মি ভ্রাতা,আমার…. ”
” বলতে হবে না। আমি জানি তোর ইনা,মিনা,টিনারা ডাকছে। কয়জনকে যে বিয়ে করবি তুই জানিস আর আল্লাহ জানেন!”
প্রণয়ের হতাশা জড়িত কন্ঠে আবরিশাম হেসে অন্য দিকে চলে যায়।

সকাল থেকেই কেমন অস্থির লাগছে তিয়াসের। কেনো জানি মনে হচ্ছে বুকটা ফাঁকা ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। কিছুতেই কাজে মন বসাতে পারছেনা। আসরের নামাজ পড়ে হাঁটে গরুর কাছে এসেছে তিয়াস। তাকে বসিয়ে রেখে মুজিবুর নামাজ পড়তে যাবেন।
” তিয়াস তোমার কি শরীর খারাপ লাগছে না-কি? ”
খালুর প্রশ্নে বেশ থতমত খেয়ে গেছে তিয়াস। উনাকে কীভাবে বলবে প্রিয়ন্তির জন্য তার মন অস্থির হয়ে আছে। দুদিন ধরে কেনো ফোন বন্ধ বলছে। বাসায় কি বড়সড় ঝামেলা হলো?
” কিছু না, শরীর ঠিক আছে আমার খালু। আচ্ছা আমরা বাড়ি যাচ্ছি কবে খালু?”
মুজিবুর পাঞ্জাবির পকেট থেকে টুপি বের করে মাথায় দিয়ে বলে,
” কাল কিংবা পরশু। কেনো কিছু হয়েছে? ”
” না,আপনি যান। নামাজের ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাবে। ”
” আচ্ছা গেলাম। থাকো তুমি। ”
মুজিবুর মসজিদের দিকে এগোলো। তিয়াস প্যান্টের পকেট থেকে ফোন বের করে প্রিয়ন্তির নম্বরে আরেকবার ডায়াল করলো।
” এই মুহুর্তে আপনার কাঙ্খিত নম্বরটি বন্ধ আছে। অনুগ্রহ করে একটু পর আবার ডায়াল করুন,ধন্যবাদ । ”
ফোনের ওপাশ থেকে যান্ত্রিক কন্ঠে এক নারী কথাগুলো বলেই কল কেটে গেলো। কিছু তো ঘটেছেই কিন্তু কী সেটা বুঝতে পারলে হয়তো তিয়াস এখনই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হতো।

সন্ধ্যা নেমেছে। প্রিয়ন্তির বাড়ির আশেপাশে অনেক লোকজন। সবাই কানাঘুষা করছে। বিশেষ করে মহিলারা। এতটুকু মেয়ের সাথে কেউ দ্বিগুণ বয়সী ছেলের বিয়ে দেয় না-কি? অর্পার মনটা কেমন কু’ডাকছে। নিজের স্বামীকে অচেনা নয় তার। নিশ্চিত প্রিয়ন্তির বিয়ের পেছনে অন্য কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে। কিন্তু কী সেটা বুঝতে পারছে না। বিয়ের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। রিক্তা,স্নেহা আসমানের কাজিনদের সাথে ভালোই মজা করছে। সিপ্ত আসমানের চাচাতো ভাই, আনহা আবরিশামের ছোটো বোন। সিপ্ত প্রিয়ন্তির সমবয়সী কিন্তু আনহা কেবল দশম শ্রেণিতে । সামনের ফেব্রুয়ারিতে মাধ্যমিক পরীক্ষা তার। সে কারণে বিয়েতে মায়ের সাথে এক প্রকার যুদ্ধ করে আসতে হয়েছে তাকে। প্রিয়ন্তি বসে আছে আসমানের সামনাসামনি কনের আসনে। কিন্তু আসমান একবারও তার দিকে তাকায়নি। বিয়ের চেয়ে তার যেনো ফোনের দিকে বেশি আগ্রহ বলে মনে হচ্ছে প্রিয়ন্তির। অবশ্য সে নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই প্রিয়ন্তির। তিয়াস নিশ্চয়ই এখন ভীষণ চিন্তায় আছে! ছেলেটার জীবনটা এমনি মরুভূমি, সেই মরুভূমির মধ্যে এক ফোঁটা পানির বিন্দুর মতোই ছিলো প্রিয়ন্তি! কথায় আছে না অভাগা যেদিকে তাকায় সেদিকেই সাগর শুকিয়ে যায়।
” এই প্রিয়ন্তি তোর জামাই বিয়ে বন্ধ করতে বললো কেনো রে?”
হঠাৎ শিরীনের কথায় আশেপাশে তাকিয়ে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করে প্রিয়ন্তি। অন্যমনস্ক থাকার ফলে এদিকে কী হয়েছে খেয়াল করেনি।
” এটা কেমন কথা আসমান? বিয়ের আসনে বসে বিয়ে বন্ধ করতে বলছিস কেনো?”
আসমানের চাচা জালাল উদ্দীন বেশ রেগে কথাগুলো বললেন। রেজওয়ানও ক্ষিপ্ত হয়ে গেছে। কিন্তু এখনো কিছু বলেনি। জালাল উদ্দীনের কথা শেষ হওয়ার অপেক্ষায় আছে। আসমান শান্ত ভঙ্গিতে চাচার দিকে তাকিয়ে ইশারায় পাশে নিয়ে গেলো। দু’জনে চাপা স্বরে কথা বলতে লাগলো। চারপাশের পরিস্থিতি কেমন গুমোট বেঁধেছে। এমনিতেই ছেলের বয়স নিয়ে মানুষের নানা কথা তার উপর বিয়ে বন্ধ করতে বলে এরকম আচরণের কারণে আরও কথাকথি হচ্ছে। প্রিয়ন্তির সেসবে কিচ্ছু যায় আসছে না। হাতের মুঠোয় তার একটা বেলি ফুল!
” রেজওয়ান ভাই, আমি আপনার কাছে বিনীতভাবে অনুরোধ করছি আপনি আবরিশামের সাথে আপনার মেয়ের বিয়েটা দিন।”
” পাগলামি পেয়েছেন না-কি মশাই? মনে হচ্ছে পুতুলের বিয়ে দেখতে এসেছেন। ”
” আপনি অনুগ্রহ করে একটু সাইডে এসে আসমানের কথাগুলো শুনুন, প্লিজ!”
রেজওয়ানের হাত ধরে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে জালাল উদ্দীন আসমানের পাশে নিয়ে গেলো। আবরিশাম আর প্রণয়ও সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু দুজনের চেহারায়ই বিষাদের ছাপ স্পষ্ট। অর্পা দূরে দাঁড়িয়ে সবকিছুই দেখছে কিন্তু কিছু বুঝতে পারছে না। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই রেজওয়ান জালাল উদ্দীনকে সাথে নিয়ে অন্য দিকে গিয়ে বসলো। আসমান বরের আসনে বসে আবরিশামকেও বসালো। কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রিয়ন্তি ও আবরিশামের বিয়ে সম্পন্ন হয়। অর্পা চাইলেও কিছু বলতে পারেনি স্বামীকে। প্রিয়ন্তি সবকিছু দেখেও চুপ করে ছিলো। কারণ তার কাছে আসমান কিংবা আবরিশাম দু’জনেই সমান। পার্থক্য একটাই আবরিশাম আসমানের থেকে বয়সে ছয় বছরের ছোটো।খাওয়াদাওয়ার পাট চুকিয়ে নতুন বউ নিয়ে যাত্রা শুরু করবে আসমানের পরিবার। আবরিশাম একেবারে চুপচাপ হয়ে গেছে। যে ছেলে সারাদিন মাতিয়ে রাখে সে একেবারে নিশ্চুপ। ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে করার জন্য নয় এটা,এর পিছনে অন্য কোনো কারণ রয়েছে। সবাই খাওয়াদাওয়া করলেও প্রণয়,আবরিশাম আর প্রিয়ন্তি কিচ্ছু দাঁতে কাটেনি।
” প্রিয় কিছু খেয়ে নে। নতুন বাড়ি যাবি কখন খাওয়াদাওয়া করবি কে জানে!”
” আর নতুন বাড়ি।”
বিরক্তি নিয়ে বললো প্রিয়ন্তি। রিক্তা বান্ধবীর হাত ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
” বিশ্বাস কর আল্লাহ যা করেন বান্দার ভালোর জন্য করেন। আবরিশাম ভাই আসমান ভাইয়ের চেয়ে খারাপ না। কিন্তু একটা বিষয় আমিও বুঝতে পারছি না, বিয়ে যদি না করারই হয় তাহলে আগেই বলতে পারতেন তিনি। এরকম বাংলা সিরিয়ালের মতো শেষ মুহুর্তে এসে পাত্র বদলালেন কেনো!”
প্রিয়ন্তি চোখমুখ শক্ত করে। রিক্তার কথার উত্তর না দিয়ে বসা থেকে উঠে সোজা মায়ের কাছে যায়। অর্পাও মেয়ের কাছেই আসছিলো। মাঝ পথে দেখা হয় দুজনের। প্রিয়ন্তিকে জড়িয়ে ধরে বুকফাটা কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। কী হওয়ার কথা ছিলো আর কী হচ্ছে!
” কেঁদো না মা। আমি যাওয়ার পরে বাবা তোমার সাথে কেমন আচরণ করে সেটা আমাকে জানাবে। এরপরে যদি তিনি তোমার সাথে অশান্তি করে, কসম আমি উনাকে খু*ন করে জেলে যাবো।”
প্রয়ন্তির চোখ ভয়ার্ত দেখাচ্ছে। যতোই মুখে বলুক তিয়াসের সাথে কোনো ঘনিষ্ঠতা নেই কিন্তু মনের দিক থেকে কতটা কাছাকাছি ছিলো সেটা কেবল উপরওয়ালা জানেন। অর্পা মেয়ের কথায় কেবল মাথা নাড়ে। প্রিয়ন্তি এখন স্বাভাবিক নেই। রাগে,দুঃখে কেমন লোহার মতো শক্ত হয়ে গেছে। মা হয়ে সেটা ভালো করেই বুঝতে পেরেছেন তিনি। মা, মেয়ের কথা শেষ হওয়ার আগেই বাইরে থেকে রেজওয়ানের ডাক শুনতে পায়। পাত্রপক্ষ এখুনি বেরিয়ে যাবে। অনেকটা পথ,যেতে যেতে আগামীকাল তো হবেই। যাওয়ার কথা ছিলো ঢাকা কিন্তু এখন যেতে হবে রাজশাহীতে।
চিরচেনা জায়গা, মানুষগুলো ছেড়ে নতুন গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে প্রিয়ন্তি। চার চাকার গাড়িতে বসে সাঁই সাঁই করে এগিয়ে যাচ্ছে অন্য শহরের দিকে। পেছনে ফেলে যাচ্ছে সবকিছু! তিয়াসের কথা যতোবারই মনে পড়ছে বুকের ভেতর কেমন মোচড় দিয়ে উঠছে ততবার। আবরিশাম পাশে বসে আছে চুপচাপ। মনে হয় একেবারে ভদ্রলোক। এই ছেলেটা যে কী জিনিস সেটা যদি প্রিয়ন্তি জানতো! আনহা ভাইয়ের অনাকাঙ্ক্ষিত বিয়ে মেনে নিতে পারেনি। সামনের সিটে ড্রাইভারের পাশে বসে আছে সে। আবরিশামের মাকে কল দিয়ে জালাল উদ্দীন সবকিছুই বলেছেন। প্রথমে রাগারাগি করলেও পরেও আসমানের সাথে কথা বলার পরে নতুন বউ ঘরে উঠানোর জন্য আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে।

চলবে,

কেমন হচ্ছে জানাবেন। জানি তিয়াসকে কষ্ট দেওয়ার জন্য সবাই রাগ করবেন কিন্তু জীবনে সবকিছু কি আমরা পাই? হয়তো এই না পাওয়াতেও কোনো ভালো লুকিয়ে থাকে! ধৈর্য ধরে পড়ুন, ভালো লাগবে। সর্বোচ্চ রেসপন্স করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here