তোমায়_যবে_পাই_দেখিতে #তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া #পর্ব_৬ (প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)

0
200

#তোমায়_যবে_পাই_দেখিতে
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া
#পর্ব_৬
(প্রাপ্তবয়স্ক ও মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)

আবরিশামের মাকে কল দিয়ে জালাল উদ্দীন সবকিছুই বলেছেন। প্রথমে রাগারাগি করলেও পরে আসমানের সাথে কথা বলার পরে নতুন বউ ঘরে উঠানোর জন্য আয়োজনে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন তিনি। মনে মনে ফাতিমা চৌধুরী আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেছেন। কেনোনা নিজের ছেলেকে ভালো করেই চেনেন উনি। আবরিশাম কবে বিয়ে করতো সেই বিষয় সন্দেহ ছিলো সবার। তাছাড়া আসমানের জন্য যে মেয়েকে পছন্দমতো করা হয়েছিল সে নিশ্চয়ই লক্ষ্মী মেয়ে।
” এই মিনি প্যাকেট!”
হঠাৎ পুরুষালি গম্ভীর স্বরে এমন সম্মোধন শুনে হকচকিয়ে গেলো প্রিয়ন্তি। চোখ পিটপিট করে তাকালো আবরিশামের দিকে।
” আমাকে বলছেন? ”
” তুমি ছাড়া পাশে তো আর কেউ নেই। কাজের কথা শোনো, বউ হয়েছো ভালো কথা কিন্তু আমি তোমার স্বামী হতে পারবোনা। আমি নিজের মতো করেই লাইফ লিড করবো,ওকে?”
সদ্য বিয়ে করা বউ হওয়া স্বত্বেও প্রিয়ন্তি স্বামীর মুখে এরকম কথা শুনে একটুও বিচলিত হলোনা। কারণ সামনের লোকটাকে স্বামী হিসেবে ভাবতেও পারেনি প্রিয়ন্তি।
” ওকে।”
অতি সংক্ষিপ্ত আকারে উত্তর দিলো প্রিয়ন্তি। জানালার দিকে দৃষ্টিপাত করে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। আবরিশাম কাউকে কল দিয়ে কথা বলতে শুরু করলো। আনহা একবার কী জানি বললো ভাইকে। ভাইবোনের কথোপকথনে খেয়াল নেই প্রিয়ন্তির। তার ভাবনা জুড়ে তিয়াস আর মায়ের সাথে কাটানো সময়গুলো।
আসমানের সাথে বিয়ে না হওয়াতে ভালো হয়েছে বুঝেছে অর্পা। ছেলের যে আগেও একটা বিয়ে হয়েছিল জানতো না অর্পা নিজেও। তাছাড়াও একটু গুরুত্বপূর্ণ কারণে বিয়ে করেনি আসমান। বিয়ে মিটে যেতেই রেজওয়ান তার আসল রূপ দেখাতে শুরু করেছে। অর্পা মনে মনে যে ভয় পাচ্ছিলো ঠিক সেটাই হলো। কিন্তু সে এবার সিন্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে,এভাবে পড়ে পড়ে মরবে না আর। মেহমানরা চলে গেছে অনেক আগে। এখন প্রায় ভোররাত। বসার ঘরে বসে আছে অর্পা। প্রিয়ন্তির কথা খুব মনে পড়ছে তার। রেজওয়ান নিজের ঘরে শুয়ে ঘুমোচ্ছে। আসমার সাথে ফোনে কথা বলতে শুনেছিলো অর্পা। আসমার কথোপকথন শুনতে না পারলেও রেজওয়ানের কথায় বুঝলো তাকে ডিভোর্স দিয়ে আসমাকে এই ঘরে নিয়ে আসবে। পথ পরিষ্কার করার জন্যই প্রিয়ন্তিকে হাত-পা বেঁধে জলে ফেললো রেজওয়ান। অর্পা রাগে,ঘৃণায় নিজের হাতে নিজেই আঁচড়াল, কামড়ালো। ইচ্ছে করছে চুলগুলো ছিড়ে ফেলতে। যতক্ষণ ভোরের আলো না ফুটলো ততক্ষণ নীরবে কাঁদলো অর্পা। নতুন সকালের সাথে সাথে অর্পাও নতুন করে নিজেকে চেনার চেষ্টা করলো। ছোটো থেকে মা’কে বাবার সাথে আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে থাকতে দেখে মেয়েটাও সেরকমই মনোভাব নিয়ে বেড়ে উঠেছে। তাই যেকোনোভাবেই বাবা-মাকে একসাথে দেখতে চেয়েছিল। কিন্তু দিনশেষে যে ব্যক্তিত্বহীন হয়ে কারো কাছে থাকা যায় না সেটা আজ অনুভব করেছে অর্পা। হাতমুখ ধুয়ে রান্নাঘরে গিয়ে নাস্তা তৈরি করতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে অর্পা। মন ও মস্তিষ্কে চলছে তার কোনো ভয়ংকর পরিকল্পনা। অনেক হয়েছে! মানুষ যদি সময়মতো অনেক সিন্ধান্ত নিতে পারতো তাহলে তার জীবন বদলে যেতো। অর্পা আজ যে ভয়ংকর সিন্ধান্ত নিয়েছে সেটা কিছুদিন আগে নিলে তিয়াসের থেকে আলাদা হতে হতোনা প্রিয়ন্তির।
ভোরের সূর্যের আলো চোখে এসে পড়তেই ঘুম ভেঙে গেলো প্রিয়ন্তির। গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে একটা রেস্টুরেন্টের সামনে। জানালা দিয়ে তাকিয়ে আশেপাশে ভালো করে দেখে নিচ্ছে প্রিয়ন্তি।
” আপু নাস্তা করে নিবে চলো।”
আনহা এসেছে জানালার কাছে। এতক্ষণ তো আশেপাশে ছিলোনা। হুট করে আসলো কোথা থেকে? মনের প্রশ্নগুলো মনে রেখেই প্রিয়ন্তি গাড়ি থেকে নামলো। কোনো কথা না বলে আনহার পিছু পিছু রেস্টুরেন্টে গিয়ে ঢুকলো। আবরিশাম আর ড্রাইভার সাইদ চাচা এক টেবিলে বসে খাচ্ছে। আনহা একটা টেবিল দেখে প্রিয়ন্তিকে নিয়ে বসলো।
” আমি শুধু এক কাপ কফি খাবো আনহা।”
” সে কী! কালকেও তো খেলে না কিছু। মানছি হুট করে বিয়ে হওয়াতে তোমাকে ভাবি ডাকতে পারছি না। কিন্তু আপু তো বটে তাই না? ”
কিশোরী আনহার কথায় হাসলো প্রিয়ন্তি। মেয়েটা বড্ড ভালো। অবশ্য এতটুকু সময়ে কি কাউকে ভালোর তকমা দেওয়া যায়? মানুষ চেনা যে বড়ো জটিল কাজ।
” তা তো অবশ্যই। আচ্ছা অল্প কিছু খাবো। তুমি অর্ডার করো।”
সবগুলো দাঁত বের করে চমৎকার একটা হাসি দিয়ে অনেকগুলো খাবার অর্ডার করলো আনহা। বোনের এত পদের খাবার অর্ডার করা দেখে ভাইয়ের দিকেও একবার তাকালো প্রিয়ন্তি। আবরিশাম গোগ্রাসে গিলতে ব্যস্ত। এঁরা যে সেই লেভেলের ভোজনরসিক বুঝতে আর বাকি রইলো না প্রিয়ন্তির।
খাওয়া শেষে আবারও গাড়িতে উঠে বসলো চারজন। এবার আনহা বসলো প্রিয়ন্তির পাশে,আবরিশাম সামনের সিটে। মায়ের কাছে কল দেওয়ার জন্য প্রিয়ন্তি ফোন হাতে নিতেই দেখলো চার্জ শেষ ফোনের। কাল ঝামেলার মধ্যে চার্জ দিয়ে রাখা হয়নি। আনহা কি ফোন ব্যবহার করে? মনে মনে ভাবলো প্রিয়ন্তি। কী বোকা বোকা ভাবনা! এই ডিজিটাল যুগে নিশ্চয়ই আনহাও ফোন ব্যবহার করে।
” আনহা তোমার ফোনটা একটু দিবে? মায়ের সাথে কথা বলতাম, আমার ফোনের চার্জ শেষ। ”
আনহা আবারও দাঁতকপাটি বের করে জোরেসোরে হাসলো। নিজেকে কেমন বোকা বোকা লাগলো। কোনো হাসার মতো কথা বললো কি সে?
” আপু আমি তো ফোন ব্যবহার করি না। ভাইয়া বলেছে এসএসসি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করলে কিনে দিবে। আর যদি রেজাল্ট খারাপ হয় তাহলে আঠারো বছর হওয়ার পর। ”
যাক তাহলে ভালো পরিবার বলা চলে। অবশ্য ভালোমন্দ যাইহোক থাকতে তো হবেই সেখানে। তবে একটা বিষয় ভেবে প্রিয়ন্তি স্বস্তি পেলো, লেখাপড়ার কদর করে আবরিশাম নামক লোকটা। নিশ্চয়ই তার লেখাপড়ার ক্ষেত্রে কোনো বাঁধা আসবে না।
” আচ্ছা ঠিক আছে। ”
” ভাইয়ার ফোন থেকে কল করে নাও। আমি বলে দিচ্ছি। ”
” না না থাক।”
প্রিয়ন্তির বারণের থোড়াই কেয়ার করলো আনহা। চট করে ভাইয়ের ফোন চেয়ে নিয়ে প্রিয়ন্তির হাতে ধরিয়ে দিলো। প্রিয়ন্তি আর দোনোমোনো না করে দ্রুত মায়ের নম্বরে কল দিলো। প্রথমবার কল রিসিভ হলো না, দ্বিতীয় বার দিতেই ওপাশ থেকে মায়ের কন্ঠস্বর ভেসে এলো।
” হ্যালো, কে বলছেন? ”
” মা আমি প্রিয়। কেমন আছো তুমি? ”
” ভালো আছি,তুই ঠিক আছিস তো? তোর ফোন বন্ধ কেনো?”
ব্যস্ত হয়ে উঠলো অর্পা। সকাল হতেই কল দিয়েছিলো প্রিয়ন্তিকে কিন্তু কিছুতেই পায়নি। সেজন্য খুব চিন্তায় ছিলো এতক্ষণ।
” আমি ঠিক আছি। ফোনের চার্জ শেষ। বাবা কোথায়? ”
অর্পা মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে এদিকে যাইহোক না কেনো প্রিয়ন্তিকে কিচ্ছু বুঝতে দিবে না। সবকিছু নিজেই সামাল দিবে।
” নাস্তা করে বেরুলো একটু আগেই। পৌঁছে গেছিস তোর শ্বশুর বাড়ি? ”
” না, তুমি নিজের খেয়াল রেখো মা। আর বাবা যদি আবারও আগের মতো আচরণ ফের করে আমাকে বলবে।”
” ঠিক আছে লক্ষ্মী মা। তুই পৌঁছে জানাস আর ফোনে চার্জ দিস।”
” আচ্ছা মা রাখছি।”
” প্রিয় শোন।”
” হ্যাঁ বলো মা।”
” এটা কি জামাইয়ের ফোন নম্বর? ”
” হ্যাঁ মা,রাখছি।”
প্রিয়ন্তি কথা শেষ করে আনহাকে ফোন দিয়ে দিলো। আনহার হাতে ফোন যেতেই আবরিশাম ফোনটা কেঁড়ে নিলো। মনে হচ্ছিল ফোনের মধ্যে অগাধ সম্পত্তি তার। মায়ের সাথে তো কথা বলা গেলো কিন্তু তিয়াস! লোকটা কি ফিরলো বাড়িতে? যদি ফিরে থাকে তাহলে কীভাবে সহ্য করবে সবকিছু! প্রিয়ন্তি জানালার বাইরে দৃষ্টি ছড়িয়ে ঝাপসা চোখে গাছপালা দেখতে লাগলো।

হাঁটে গন্ডগোলের কারণে গতকাল রাতেই নিজ শহরে গরুগুলো নিয়ে রওনা হয়েছিল মুজিবুর ও তিয়াস। দুপুর হতেই বাড়ি পৌঁছে গেছে তারা। এলাকায় ঢুকতেই দু’জনেই বুঝতে পেরেছে আশেপাশে কারো বিয়ে হয়েছে। কিন্তু কার বিয়ে সেটুকু বুঝতে পারেনি কেউ। কারণ খুব সকালেই বিয়ে বাড়ি সাজানোর সকল সরঞ্জাম এসে নিয়ে গেছে ডেকোরেশনের লোকজন। সকালে কিছু খাওয়া হয়নি বলে বাড়ি ফিরে একেবারে দুপুরের খাওয়াদাওয়ার পরে প্রিয়ন্তির সাথে দেখা করার জন্য বেরুলো তিয়াস। গরুর হাটের জায়গা থেকে পাশেই নতুন একটা গ্রাম তৈরি হয়েছে। সেখানে মেলা বসেছিলো দুদিনের জন্য। সেই মেলা থেকে দুই ডজন নীল রঙের কাঁচের রেশমি চুড়ি কিনেছে তিয়াস। সাথে এক পাতা কালো রঙের টিপের পাতা। আসার পথে খুব সাবধানে নিয়ে এসেছে সেগুলো। কাঁচের চুড়ি ভেঙে গেলে যে প্রিয়ন্তির মন খারাপ হবে! এসব ভেবে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে তিয়াসের। একহাতে চুড়ি আর টিপের পাতার প্যাকেট অন্য হাত দিয়ে নিজের চুলগুলো উপরে ঠেলে হাঁটতে লাগলো সে। মিনিট পাঁচেক হাঁটতেই প্রিয়ন্তির বাসার সামনে পৌঁছুলো। কিন্তু ডাকবে কীভাবে? যদি ওর বাবা বাসায় থাকে? ইশ! ফোনটাও বন্ধ মেয়েটার। কতদিন হলো কন্ঠও শোনেনি। আনমনে এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ শিরীনকে দেখতে পেলো তিয়াস। শিরীনের বাসাও এক এলাকায়।
” কেমন আছো শিরীন? ”
তিয়াসকে দেখে চোখমুখ মলিন হয়ে গেলো শিরীনের। বিষয়টা খেয়াল করেছে তিয়াস। কিন্তু হেতু বুঝলো না।
” ভালো আছি, আপনি কেমন আছেন ভাইয়া?”
” আলহামদুলিল্লাহ। প্রিয়কে গিয়ে একটু বলতে পারবে আমি অপেক্ষা করছি এখানে? আসলে ওকে ফোনে পাচ্ছি না। আর আঙ্কেল যদি বাসায় থাকে এখন এজন্য তোমাকে বললাম। বুঝতেই পারছো কতদিন কথা হয়নি!”
শিরীনের কন্ঠে যেনো কথা আসছে না। ছেলেটার চোখেমুখে প্রেয়সীকে দেখার জন্য কতো ব্যকুলতা! কীভাবে বলবে তাকে, তার প্রিয় অন্য কারো ঘরে বউ হয়ে চলে গেছে। শিরীনের নীরবতা দেখে বিরক্ত লাগছে তিয়াসের। প্রিয়ন্তিকে দেখার জন্য অধৈর্য হয়ে আছে তার চিত্ত।
” এই শিরীন! কী হলো তোমার? যাও না একটু। আচ্ছা ফুসকা খাওয়াবো বিকালে পাক্কা।”
” তিয়াস ভাই! ”
শিরীন কিছু বলতে পারছেনা। হুহু করে কেঁদে উঠলো মেয়েটা। তিয়াসের বুকের ভেতর কেমন করছে। শিরীনের চোখের জল নিশ্চিত কোনো ভয়াবহ দূর্ঘটনার আভাস। অস্থির হয়ে উঠলো তিয়াস।
” কী হয়েছে শিরীন? প্রিয় ঠিক আছে তো? এভাবে কাঁদছো কেনো? আমার টেনশন হচ্ছে খুব। ”
” ভাই প্রিয়ন্তির বিয়ে হয়ে গেছে গতকাল রাতে। আঙ্কেল এক প্রকার জোর করে বিয়ে দিয়েছে ওকে। ওর কিছু করার ছিলো না।”
তিয়াসের হাত থেকে কাঁচের চুড়ির প্যাকেটটা মাটিতে পড়ে গেছে। কাঁচের চুড়ি ভাঙার শব্দ শোনা গেলেও তিয়াসের হৃদয় ভাঙার আওয়াজ শোনা গেলো না। কিন্তু ভাঙলো একসাথেই। শিরীন কিছু বোঝার আগেই তিয়াস মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। মেয়েটা ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলো। রেজওয়ান বাসায় ছিলো না বলে শিরীনের চিৎকারে ছুটে এলো অর্পা। কিন্তু তিয়াসকে ওরকম অবস্থায় দেখার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলোনা অর্পা।
চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here