আমৃত্যু_ভালোবাসি_তোকে #লেখনীতে_সালমা_চৌধুরী #পর্বঃ০১

0
1028

৭ বছর পর বাড়ি ফিরছে খান বংশের বড় ছেলে #সাজ্জাদুল_খান_আবির । বাড়ি ফিরছে বললে ভুল হবে বিদেশ থেকে দেশে ফিরছে আবির। এই ৭ বছরে খান বাড়িতে ঘটে গেছে অনেক ঘটনা যার সাথে স্ব শরীরে যুক্ত নেই আবির, তবে আত্মিকভাবে প্রতিটা ঘটনায় জরিয়ে আছে সে৷

আবিরের বাবা চাচা তিনজন, আবিরের বাবা সবার বড় নাম,’আলী আহমদ খান’
তানভীরের বাবা মেজো নাম, ‘মোজাম্মেল খান’
ছোট চাচ্চুর নাম ‘ ইকবাল খান’

আবির তার বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে৷
মেজো চাচা মানে মোজাম্মেল খানের এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলের নাম #তানভির খান। মেয়ের নাম #মাহদিবা_খান_মেঘ
ছোট চাচার এক মেয়ে এক ছেলে মীম আর আদি। এখনো তারা এলাকার যৌথ পরিবারগুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠ। বাড়ির সকলের প্রাণ যেনো এক সুতোয় বাঁধা ।

৫ ভাইবোনের মধ্যে আবির সকলের চোখের মনি। আবিরের জন্মের পর তার বাবা মা দ্বিতীয় সন্তান নেওয়ায় চিন্তায় করেন নি। HSC পর্যন্ত সে বাড়িতেই ছিল সবার নয়নের মনি৷ আবিরের চাঞ্চল্যে মেতে থাকতো খান বাড়ি৷ আচমকা যেনো পরিবেশটা পাল্টে গিয়েছিল। ১৮ বছর বয়সে আবিরের হঠাৎ করে স্কলারশিপে বিদেশে পড়তে যাওয়া, বাড়ির সকলের সাথে শারীরিক ভাবে যেমন দূরত্ব বেড়েছিল৷ তেমনি দূরত্ব বেড়েছে মানসিকতার৷

৭ বছর পূর্বের আবিরের সাথে বর্তমান আবিরের আকাশ পাতাল পার্থক্য। দেখেও যেনো চেনার উপায় নেই। ৬ ফুট লম্বা ছেলেটা গায়ের রঙ শ্যামলা, গাল ভর্তি ছাপ দাঁড়ি, চুলের স্টাইল কোনো নায়কের থেকে কম না তার ফ্যাশন আর লুকে যেকোনো মেয়ে এক দেখাতেই প্রেমে পরতে বাধ্য৷

প্লেনে বসে আবির অবলীলায় ভেবে যাচ্ছে অতীতে ফেলে আসা স্মৃতি গুলো।
সেই চাঞ্চল্যকর মুহুর্তগুলো এখন শুধুই স্মৃতির পাতায়। মা কে রেখে এসেছিল সেই যৌবনের প্রথম দিকে যখন তার বয়স ছিল সবেমাত্র ১৮ ৷ সেই সময়ে মা ই ছিল তার একমাত্র বন্ধু৷ আজ সে ২৪ বছরের যুবক। এতগুলো বছরের একটা দিনও বাদ যায় নি যে মায়ের সাথে ফোনে কথা বলে নি সে। বাড়ির সকলের সাথেই মোটামুটি কথা বলার চেষ্টা করেছে৷ ছোটবেলার স্মৃতি গুলো ভাবতে ভাবতে নিজের দেশে পৌছে গিয়েছে আবির৷

এয়ারপোর্টে আবিরের বাবা ‘আলী আহমদ খান’ আর তানভীর দাঁড়িয়ে আছে। তানভীর সম্পর্কে তার চাচাতো ভাই আর বয়সে ২ বছরের ছোট কিন্তু দুজন দুজনের বেস্ট ফ্রেন্ড আর কলিজার বন্ধু । তানভীর আবিরকে দেখেই দৌড়ে এসে জরিয়ে ধরলো। এই ৭ বছরে একবারের জন্য ও বাড়ি ফেরেনি আবির। তবে প্রতিনিয়ত কথা হয় আবির তানভীরের।

আবির তার আব্বুকে সালাম করে জরিয়ে ধরে। তারপর বাড়ি ফিরে তিনজন। বাড়িতে যেনো হৈহৈ রৈরৈ ব্যাপার । হবে নাই বা কেন
বাড়ির বড় ছেলে এত বছর পর বাড়ি ফিরছে। রান্নাঘরে বাহারি রকমের রান্নার ধুম পরেছেন মা চাচিদের। হঠাৎ দরজায় আবিরকে দেখে সবার মধ্যে হৈচৈ শুরু হয়ে গেছে। আবিরের আম্মু দৌড়ে এসে জরিয়ে ধরলেন ছেলেকে। আবেগাপ্লুত হয়ে মাকে জরিয়ে ধরলো আবির।
মমতাময়ী মাকে সেই ৭ বছর আগে ছুঁয়েছিল আজ এত বছর পর মায়ের ছোঁয়া পেলো আবির। মা চাচিদের সালাম করলো। সোফায় বসিয়ে ছেলেকে একের পর এক শরবত নাস্তা দিতে ব্যস্ত সবাই। এরিমধ্যে উদয় হলো মীম আর আদির৷ মিমের বয়স ১৪ বছর। তার ছোটভাই আদির বয়স মাত্র ১০ বছর। আদিই এই বাড়ির সবচেয়ে ছোট । আবির যখন দেশ ছেড়ে ছিল তখন আদির ৩ বছর হয়েছে মাত্র৷ ভিডিও কলে দেখতে দেখতে ভাইকে সে একটু একটু চিনে৷ দৌড়ে এসে জরিয়ে ধরেছে ভাই কে। আবিরও জরিয়ে ধরেছে আদিকে। মীম ও আবিরের পাশে বসেছে৷ খোঁশগল্প করছে সবাই মিলে৷

আদি জিজ্ঞেস করছে
‘ভাইয়া, আমার জন্য কি এনেছো? ‘

আবির যেইনা উঠতে যাবে মা চাচিরা উঠতে দিচ্ছে না। আগে শরবত খাবি তারপর উঠবি। আবির তানভিরের দিকে তাকিয়ে বললো
‘ঐ লাগেজ টা নিয়ে আয় তো ‘

তানভির একটা লাগেজ টান দিতে যাবে আবির আচমকা বসা থেকে দাঁড়িয়ে
‘ঐটা তে ছোঁবি না ‘

তানভির সহ বাড়ির সকলেই যেনো অবাক হয়ে গেলো।

আবির আবার ঠান্ডা মাথায় বললো পাশের লাগেজ টা নিয়ে আয়….

তানভিরও তার কথা মতো লাগেজ নিয়ে আসলো৷ লাগেজ খুলে যে যার মতো জিনিস বের করছে আর জিজ্ঞেস করছে এটা কার,ঐটা কার। আবির শরবত খেতে খেতে উত্তর করছে।

আদির জন্য বিদেশি দামি দামি খেলনা, মীমের জন্য ড্রেস,কসমেটিকস বক্স, মা কাকিদের জন্য অনেক গিফট। তানভীরের জন্য মোবাইল, একটা ল্যাপটপ অন্যান্য গিফট৷ আলাদা আরেকটা ল্যাপটপ আছে।

মীম জিজ্ঞেস করছে, ‘ভাইয়া এই ল্যাপটপ টা কি তোমার? ‘

আবির উত্তর দেয়, ‘না এটা মেঘের’

মেঘের মা ‘ হালিমা খান’ জিজ্ঞেস করলেন মেঘের ল্যাপটপ কি দরকার বাবা?

আবিরঃ ওর তো HSC পরীক্ষা শেষ৷ সামনে Admission Test আছে। অনেক কিছু জানার বা পড়ার দরকার আছে৷ মোবাইল দেখে পড়ার থেকে ল্যাপটপে সুবিধা হবে তাই নিয়ে আসলাম।

মীমঃ আমার জন্যও নিয়ে আসতা একটা..!!

আবির অবলীলায় হেসে উত্তর দেয়। তোর ১৮ বছর বয়স হলে তোকেও কিনে দিব। চিন্তা করিস না।

মীম খুশিতে গদগদ হয়ে বলে,’ধন্যবাদ ভাইয়া।’

বাড়ির হৈচৈ শুনে ঘর থেকে বের হলেন ছোট চাচা ইকবাল খান। আবির চাচ্চুকে দেখেই সালাম করতে যায়, চাচ্চু বাঁধা দিয়ে জরিয়ে ধরেন ভাতিজা কে।

ইকবাল খান বাড়ির সকলের দিকে এক পলক তাকিয়ে নরম স্বরে বলেন… এতদিনে এই বাড়িটা পরিপূর্ণ হলো৷

ইকবাল খানের জন্য আনা উপহার আবির নিজের হাতেই চাচ্চুকে দিলো। বাকিদের জিনিস গুলোও একটা একটা করে দিলো আবির। মেজো চাচ্চু মানে মোজাম্মেল খান বাসায় নেই। তাই ওনার জন্য আনা গিফট যত্ন করে রেখে দিলো আবির৷

লাগেজে পরে আছে একটা বক্স যেটা রেপিং পেপারে মুড়ানো আর একটা শপিং ব্যাগ।

আদি জিজ্ঞেস করছে, ‘ভাইয়া ঐটা কার?’

আবির ল্যাপটপের পাশে বক্স আর শপিং ব্যাগ টা রেখে উত্তর করলো

এগুলো মেঘকে দিয়ে দিও। আমি রুমে যাচ্ছি

ইকবাল খান এক পলক সবার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো

‘মেঘ কোথায়?’

হালিমা খান উত্তর দিলেন, ও তো কোচিং এ গেছে, এতক্ষণে তো চলে আসার কথা

আবির বাকি ২টা লাগেজ নিয়ে উঠতে চাচ্ছিলো, হঠাৎ পিছন ফিরে মায়ের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো, আমি কোন রুমে থাকবো?

ছেলের এমন প্রশ্নের জন্য মা ‘মালিহা খান’ হতভম্ব হয়ে পরলেন,তৎক্ষনাৎ স্বাভাবিক হয়ে উত্তর করলেন
তোর রুম তোরই আছে ৷ আজ সকালেই পরিষ্কার করা হয়েছে৷

আবির কোনো কথা না বলে দুই লাগেজ নিয়ে উঠতে গেলে তানভির এগিয়ে আসে৷ আমায় দাও আমি নিয়ে যাচ্ছি। আবির একটা লাগেজ তানভিরের দিকে এগিয়ে দেয়৷ নিজে আরেকটা লাগেজ সযত্নে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে থাকে৷

ততক্ষণে দরজায় এসে উপস্থিত হয় এই বাড়ির বড় মেয়ে #মাহদিবা_খান_মেঘ

মীম মেঘকে দেখে দৌড়ে এসে বলে, ‘আপু আপু আবির ভাইয়া এসেছে’

মেঘ সিঁড়ি দিকে তাকায়, লম্বা স্বাস্থ্যবান সুপুরুষ দেহি একজন হাতে লাগেজ নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠছে। শুধু পিছন টা দেখা যাচ্ছে। মেঘ ভিতরে ঢুকে সবার হাতে গিফট দেখে এদিক সেদিক তাকায়।
ততক্ষণে আবির নিজের রুমে চলে গিয়েছে।
মেঘের মা ‘হালিমা খান’ মেয়ের দিকে এগিয়ে এসে তোর জন্য গিফট এনেছে।

মেঘ তাকিয়ে বলে, ‘কি গিফট?’

সোফায় রাখা ল্যাপটপের দিকে চোখ পরে মেঘের, ছুটে যায় ল্যাপটপের কাছে৷ ‘এটা কি আমার?’

মীম: হ্যাঁ আপু এটা তোমার, বক্সটা আর শপিং ব্যাগটাও তোমার ।

ল্যাপটপ টা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছে মেঘ, যেনো আকাশকুসুম কিছু পেয়ে গেছে৷ তারপর শপিং ব্যাগ টা একটু খুলে দেখলো ২ টা ড্রেস মনে হচ্ছে৷ সে ল্যাপটপ আর বক্স গুলো নিয়ে রুমের দিকে চলে যায়।

চলবে………

📌গল্প কপি করা নিষেধ। শেয়ার করলে পেইজের নাম ম্যানশন করবেন

#আমৃত্যু_ভালোবাসি_তোকে
#লেখনীতে_সালমা_চৌধুরী
#পর্বঃ০১

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here