হৃদয়ের_সন্ধিক্ষণ #ফারিহা_খান_নোরা #পর্বঃ১১

0
280

#হৃদয়ের_সন্ধিক্ষণ
#ফারিহা_খান_নোরা
#পর্বঃ১১
অন্ধকার হয়ে থাকা এই রাত্রিতে নিষ্প্রভের ছোট্ট হৃদয়টাতেও আঁধার নেমে এসেছে।তার মনে একটাই প্রশ্ন ঘুরছে,তাহলে কি তুর চাইছে নিষ্প্রভ তাঁকে ডিভোর্স দিক! নিষ্প্রভ তুরের দিকে তাকিয়ে অসহায় কন্ঠে বলল,

‘তুমি কি ডির্ভোস চাও?’

তুর এবার একটু জোরেই হেঁসে উঠে।সেই হাসিতে কোনো মুগ্ধতা ছিলো না,ছিলো একরাশ তাচ্ছিল্য।তুর কন্ঠস্বর নিচু রেখে বলল,

‘আমার চাওয়া না চাওয়ার দাম আছে কারো কাছে? আমি তো ফেলনা,যে যেভাবে খুশি সেভাবে আমাকে ব্যাবহার করছে।মায়ের টাকার প্রয়োজন ছিলো আমাকে ইউজ করছে বান্ধবীর ল’ম্প’ট ছেলের সাথে বিয়ে দিতেও পিছুপা হয় নি,ভুলক্রমে আপনার সাথে বিয়েটা হয়েছে আপনার প্রয়োজন পড়লে ডিভোর্স দিবেন এতে আমার মতামত নেওয়ার কোনো দরকার নেই। আমার জীবণ কখনো আমার ইচ্ছায় চলে না।অন্যের স্বার্থে তাদের ইচ্ছা আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া হয়।’

তুরের কথায় নিষ্প্রভ বাকরুদ্ধ হয়ে যায়।সে কিছুটা হলেও বুজতে পারছে তুরের কষ্ট।কারণ মাত্র চার বছর বয়সে নিষ্প্রভের মা মারা যার।সেদিন থেকে তার জীবণে কষ্টের সূচনা হয়।তাঁর মা মারা যাবার ৪০ দিন না যেতেই তাঁর বাবা বিয়ে করে আশা বেগম কে নিয়ে আসে। তাঁর বাবার কথা নিষ্প্রভের জন্য এতো তাড়াতাড়ি দ্বিতীয় বিয়ে করছে। কিন্তু আসল কারণ তো সে জানে যদিও বুদ্ধি হবার পর সত্য চোখের সামনে এসেছে যাইহোক বাবা বিয়ে করে বউ পেয়েছে ঠিকই কিন্তু সে মা পায় নি। মূল কথা আশা বেগম তাঁর বাবার ব‌উ কিন্তু তাঁর মা নয়।তার মতে সৎ মা বাবার ব‌উ এর অভাব দূর করতে পারে কিন্তু একটা সন্তানে মায়ের অভাব দূর করতে পারে না।এই আশা বেগমের জন্যই নিষ্প্রভের ছোট বেলা দুর্বিসহ হয়ে যায়।এই মহিলা এসেই তাঁর বাবাকে তাঁর থেকে দূরে সরে দিয়েছে।

অতীতের কষ্ট থেকে বেরিয়ে এসে নিষ্প্রভ শান্ত কন্ঠে তুরকে বলল,

-‘দেখো আমি তোমার দিকটা বুজতে পারছি।আমি এভাবে কথাটা বলতে চাই নি।আমি জানি বাবা মা না থাকার কষ্ট ঠিক কতখানি কারণ আমার মা নেই বাবার কথা আর কি বলি থাক বাদ দেও।আর তোমার মা থেকেও নেই, আমার কথা তোমার খারাপ লাগতে পারে তবুও এসব বলতে বাধ্য হলাম।’

তুর নিষ্প্রভের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘বাদ দেন এসব। আপনার ডিভোর্স লাগলে আপনি পেপার রেডি করবেন আমি সিগনেচার করে দিবো।আর হ্যা এসব ঝামেলার জন্য কয়দিন হলো আমার ভার্সিটি যাওয়া হয় নি।অনেক ক্লাস মিস গেছে কাল থেকে ভার্সিটি যেতে চাইছি।’

ডিভোর্স মানেই তো দুইজন চিরকালে জন্য আলাদা হয়ে যাওয়া।ভেবেই নিষ্প্রভের বুকের ভিতরে অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে এমন হচ্ছে কেন? সে শুকনো মুখে বলল,

‘আমার আগেই তোমার দিকটা ভাবা উচিত ছিলো।সরি সত্যি আমার তোমার লেখাপড়ার দিকটা মনে ছিলো না। তুমি কাল থেকে ভার্সিটিতে যাবে বাকি সব আমি সামলিয়ে নিবো তোমার চিন্তা করতে হবে না।’

তুর দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে বলে,

‘সব থেকে বড় চিন্তা তো আপনি।’

________________

সকালের মিষ্টি রোদ গায়ে মাখিয়ে নিষ্প্রভের সাথে ভার্সিটিতে এসেছে তুর।নিষ্প্রভ তুরকে গেটে নামিয়ে দিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।যাবার আগে তুরের থেকে ক্লাস কয়টায় শেষ হবে তা শুনে যায় যদিও তুর বার বার করে নিষেধ করেছে জেনো না আসে।তুরের হাতে বেশ কিছু টাকাও গুঁজে দেয়, এতে করে তুর কিছুটা সংকোচ বোধ করলেও না করে নি,কারণ তুরের হাতে এক টাকাও নেই। কলেজের গেট পার হয়ে গাছের নিচে যেয়ে দাঁড়িয়ে থাকে তুর।তার কাছে ফোন নেই যার জন্য আতিয়ার সাথেও কথা হয় নি।

তুরকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আতিয়া ঝড়ের গতিতে দৌড়ে এসে তুরে পিঠে দু’ঘা ব’সি’য়ে দেয়।তুর ব্যা’থা’য় কঁকিয়ে উঠে।পিঠে হাত দিয়ে বুলাতে বুলাতে ভ্রু কুঁচকে বলে,

‘পা’গ’ল হয়ছিস। এভাবে কেউ মা’রে?’

আতিয়া মুখ বাঁকিয়ে বলে,

‘তোকে যে এখনো মে’রে ফেলি নি শুকরিয়া কর।হা’রা’মী ছিলি কোথায় এতো দিন।কোনো খোঁজ খবর নাই তোর ফোনে না হলেও অন্তত হাজার বার ফোন দিয়েছি প্রতিবারই অফ দেখায়। কোথায় গেছলি ম’র’তে।জানিস তোকে ছাড়া এ কয় দিন আমার একটুও ভালো লাগে নি।এমনকি আমার ক্রাশ স্যারকেও ভালো লাগে নি এতোদিন।’

আতিয়ার এক নাগাড়ে বলা কথা তুর নিরব শ্রোতা হয়ে শুনে। হঠাৎ করেই আতিয়াকে চমকে দিয়ে তুর তাকে জড়িয়ে ধরে।আতিয়া তুরের পিঠে হাত রেখে উৎকণ্ঠা নিয়ে বলে,

‘তুর দোস্ত কি হয়েছে তোর। তুই ঠিক আছিস?’

আতিয়া কাঁধের জামার অংশে পানির আভাস পায় তার বুজতে অসুবিধা হয় না।তুর কাঁদছে এবার সে একটু ভয় পেয়ে যায়।তুরকে ধরে একটা খালি বেঞ্চে বসায় ইতিমধ্যে তুরের ফর্সা মুখ লাল বর্ণ ধারণ করেছে। আতিয়া তুরের চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলে,

‘কি হয়েছে প্লীজ বল সোনা,আমার খুব টেনশন হচ্ছে।’

তুরের ঠোঁট দুটো অসম্ভব কাঁপছে সাথে কান্নার গতিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আতিয়ার মুখে এটুকু কথা শুনে মনে হচ্ছে এই তো তার আপনজন আছে।কেউ তো আছে যে,তার জন্য টেনশন করে।নিজের মা খোঁজ খবর অবধি নেয় না।তুর নিজেকে কিছুটা শান্ত করে একে একে আতিয়াকে শুরু থেকে শেষ অবধি বলে দেয়।

সব শুনে আতিয়া রেগে বো’ম হয়ে যায়।তুরের মায়ের উপর ঘৃ’ণা এসে যায়।ছিঃ কোনো মা কি এমন ও হয়? নিজ স্বার্থের জন্য নিজের মেয়েকে এমন একটা চরিত্রহীন ছেলের হাতে তুলে দিতেও ভাবে না।সে কেমন মা? আফসান কে আতিয়া সেইদিনের পর থেকে চরিত্রহীন ল’ম্প’ট হিসাবেই চেনে। আতিয়া দ্বিধা নিয়ে প্রশ্ন করে,

‘নিষ্প্রভ ভাইয়া মানুষ হিসেবে কেমন?’

‘ভালো।’

‘বিয়ে যেহেতু হয়েই গেছে আর ভাইয়া‌ও ভালো তুই তাহলে এই সম্পর্ক নিয়ে কিছু ভেবেছিস?’

‘সে আমায় ডিভোর্স দিবে।’

তুরের অমনোযোগী উত্তর। আতিয়া এবার বেশ জোরেই চেঁ’চি’য়ে উঠে বলে,

‘মানে।’

আতিয়ার এমন চিৎকারে আশেপাশের মানুষ জন তাদের দিকে তাকিয়ে আছে ।সে ওসব পাত্তা না দিয়ে কন্ঠ খাদে নামিয়ে বলে,

‘মগের মুল্লুক নাকি! ইচ্ছে হলে বিয়ে করবে আবার ইচ্ছে হলে ডিভোর্স দিবে মানেটা কি! এই তোর বরের জিএফ আছে নাকি।এসব থাকলে একবার শুধু আমায় বল অই মেয়েকে বুড়িগঙ্গার কালা পানিতে চু’বি’য়ে এমন মা’র মা’র’ব আমি যে,অই পেত্নি কে তোর বর চিনতে অবধি পারবে না।আর না চিনলে এসব প্রেম পিরিতি ও হবে না। আমি এর শেষ দেখে নিবো বলে দিলাম। ফাইজলামি পাইছে তাই না?’

তুর আনমনে বলে,

‘ইচ্ছে করে বিয়ে করে নি, ইচ্ছার বিরুদ্ধে করেছে।তখন পরিস্থিতিটাই অন্যরকম ছিলো।’

‘মানলাম ইচ্ছার বিরুদ্ধে যেয়ে বিয়ে করেছে তাই বলে ডিভোর্স দিবে।কেন রে ভাই একবার যখন বিয়ে করেইছিস সংসারটা তো করাই যায়।দুই চারমাস একসাথে থাকলে ভালোবাসাটা আপনা আপনি উৎপাদন হবে।’

আতিয়ার কথায় এতো কষ্টের মধ্যেও তুরের হাঁসি পায়।এই মেয়ে টা পারেও বটে কি সব ল্যাঙ্গুয়েজ ইউজ করছে।তুর আকাশের দিকে তাকিয়ে ছল ছল চোখে বলে,

‘আতিয়া আমি চাইলে হয়তো উনি আমায় ডিভোর্স দিবে না। কিন্তু আমি চাইনা ইচ্ছার বিরুদ্ধে যেয়ে কারো ঘাড়ে চে’পে বসতে।এতো দিন মায়ের কাছে বোঝা হয়ে ছিলাম।বিয়ের পর একটা মেয়ের কাছে তার স্বামীই সব হয়।সেই আমি কিনা স্বামীর কাছে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বোঝা হয়ে থাকবো?’

আতিয়া কিছুক্ষণ ভাবুক দৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে তারপর হঠাৎ করে বো’ম ফা’টা’র মতো একটা প্রশ্ন করে,

‘তুর তোর শাড়িতে জুস ফেলা,তোকে অই ঘরে আটকিয়ে রাখা, কারেন্ট যাওয়া এসব কেউ প্ল্যান করে করে নি তো!তুই ভাব এতকিছু কাকতালীয় ঘটনা হতে পারে?’

চলমান।‌

বিঃদ্রঃ ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আমার মন খারাপ,আপানাদের জন্য ১২ পর্ব আগেই লিখে রেখেছিলাম অসাবধানতাবশত ডিলিট হয়ে যায়।মন খুব খারাপ,লিখতে ইচ্ছে করছে না।এখন কি করি?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here