হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|১৪| #শার্লিন_হাসান

0
407

#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|১৪|
#শার্লিন_হাসান

কিন্তু সে তো আর্থর মাধ্যমে সবাইকে জানালো। যাই হোক আর্থকে সে বলেছে বিয়ের কথা উঠলে যাতে সেরিনের কথা বলে। আর্থ তার থেকে ঘুষ চেয়েছে। কয়েকটা শর্ত দেয় যার মধ্যে একটা মালদ্বীপে হানিমুনে যাওয়ার খরচ শুভ্রকে দিতে হবে। শুভ্র খুব একটা কিপ্টা না তবে কিপ্টা কম ও না।

কাজ শেষে শুভ্র বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। মনে,মনে নিজেকে কয়েকটা গা’লি দেয়।
শুভ্র কী দেখতে খারাপ? নাকী যোগ্যতা নেই তার? অবশ্যই সব কিছু আছ শুভ্রর তাহলে সেরিন রাজী হবে না কেন? শুধু সেরিন না সেরিনে আম্মুও রাজী হবে। শুভ্রর মনে কনফিডেন্স চলে এসেছে।

রাতটা না ঘুমিয়ে কেটে গেলেও সকালের দিকে একটু চোখ লেগে আসে শুভ্রর। এলার্ম-ঘড়ির শব্দে ঘুম ছটে যায়। ফজরের আজান হতে নামাজ আদায় করে বেলকনিতে কোরআন তেলাওয়াত করতে বসে শুভ্র। সকালের হিমশীতল বাতাস শুভ্রর গায়ে বাড়ি খাচ্ছে। হয়ত একটু পর সূর্যের আলোয় সবকিছু গরম হয়ে উঠবে। তীব্র কাঠখোট্টা গরমে রোদে একমুহূর্ত ও দাঁড়ানোর জো নেই। কিন্তু সে তো তার স্টুডেন্টদের মাঠে রোদের মধ্যে বসিয়ে রেখে আধঘন্টা করে ভাষণ দেয়। কোরআন তেলাওয়াত হতে বুয়া এসে কফি রেখে যায় রুমে। শুভ্র কফির মগ নিয়ে পুনরায় বেলকনিতে যায়। নিচের দিকে চোখ যেতে দেখে তার বাবা আর আর্থর বাবা দু’জন বেড়িয়েছে বাড়ীর গেট দিয়ে। হয়ত কলেজের পেছনের দীঘির পাড়ে হাঁটতে যাবে। যেখানে চৌধুরী পরিবারের সবাই যায় সকাল বেলা হাঁটতে। দীঘির পানির ঠান্ডা হিমশীতল বাতাস গায়ে লাগলে আলাদা শান্তি পাওয়া যায়। শুভ্র কফিটা রেখে নিচে আসতে আর্থর দেখা পায়। বেচারায় মাত্র ঘুম থেকে উঠে এসেছে। শুভ্রকে দেখে আর্থ বলে,

‘সেরোয়ানি কিনেছ তো?’

‘কিসের সেরোয়ানি? আমি পান্জাবি পড়ে বিয়ে করবো সাদা পান্জাবি।’

‘এহহ বিয়েটা মনে হয় ঠিক। আমি তো এমনিতে বলেছি। আজকে পাটওয়ারী বাড়ী যাবো। আমার বিয়েী ডেট ফাইনাল হলেও তোমারটা হবে কীনা সন্দেহজনক। ‘

‘তোকে এতো কথা বলতে বলিনি। সবার আগে আমারটা হবে।’

‘যেই দজ্জাল ফুফি শাশুড়ী বসে আছে যেও। তার ছেলের বউকে তোমায় দিবে কত।’

‘শুভ্রর একটা ধমক শোনলে উনি একমাস অজ্ঞান থাকবে। যেহেতু উনি বুড়ো মানুষ সেহেতু এমন দীর্ঘ সময় অজ্ঞান থাকার আশংকা করা যায়।’

‘ভাইরে ভাই তোমার যা ধমক। ধমক দিয়ে না জানি বউকে হার্ট অ্যাটাক করিয়ে নেও।”

‘দেখা যাবে।’

‘বিয়েটা তো আগে হোক।’

‘এই তুই বারবার আমায় ভয় দেখাচ্ছিস কেনো? বিয়ে হবে না কেন? একশবার বিয়ে হবে।’

শুভ্র আর্থকে কয়েক গা লাগিয়ে দিয়ে চলে আসে। আর্থ শুভ্রর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসছে। তখন আবার আর্থর আম্মু মিরা আসে। আর্থকে নিজে,নিজে হাসতে দেখে বলে,

‘পাগল হয়ে গেলে নাকী?’

আর্থ হাসি থামিয়ে তার আম্মুর দিকে তাকায়। কফির মগ হাতে নিতে,নিতে বলে,
‘হ্যাঁ হলাম তো তোমার বউমার প্রেমে।’

তখন আবার আয়মান চৌধুরী আসেন। আর্থর কথা শোনে তিনি শুধান,
‘এভাবে বলে না। একটু লজ্জা শরম রাখো।’

‘তো কী? তুমি বুঝি প্রেমে পড়োনি কারোর?’

‘পড়েছি তো তোমার ছোট আম্মুর।’

ওদের দু’জনের কথাবার্তা শোনে মিরা ইসলাম সরে আসে। আর্থ একটু এমনই! সবার সাথেই ফ্রেন্ডলি ভাব নিয়ে কথাবার্তা বলে।

*******

পাওয়ারী বাড়ীতে কাজ চলছে এক দফা। সেরিনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে লিভিং রুম আর টেবিল ডেকোরেশন করার। সেই সাথে সবার রুম সাজিয়ে দেওয়ার। সেরিন সকালে নাস্তা করে কাজে নেমে পড়েছে। সে জানে আজকের মতো তার কোমড় আর শরীর দুটোই শহীদ। যেহেতু তাঁদের জয়েন ফ্যামিলি বিল্ডিংটাও সেভাবেই করা। আটটা বেডরুম গোছাতে,গোছাতে বেচারি হাফিয়ে গেছে। লিভিং রুমে এসে শশীকে ডাকে সেরিন। তখন তার আম্মু সাইয়ারা এসে বলে,
‘ও কোন কাজ করবে না।’

‘বিয়েটা তো আর আজকে হচ্ছে না। সবাই শুধু আমাকে দিয়েই সব কাজ করায়। আমার চেহারায় মনে হয় কাজের বুয়া টাইপ ভাব আছে।’

সেরিনকে রাগানোর জন্য তার ভাই মাহি আবার বলে,
‘ফাইনালী বুঝতে পেরেছিস। এইজন্যই তো তোকে দিয়ে আমার শার্ট আয়রন করাই। রুম গুছাতে বলি। তুই হলি আমাদের বাড়ীর কাজের মেয়ে সেরিন। চেহারাটা দেখলেই বুঝা যায় তোর জন্মই বিল্ডিং পরিষ্কার করার জন্য।’

‘আম্মুউউ তোমার ছেলেকে কিছু বলবা নাকী আমি ওর মাথায় দুই চারটা বারি মারবো।’

তখন সাইয়ারা বলেন,
‘মাহি ওকে রাগিয়ো না। ও রাগলে আবার এগুলো কে করবে?’

‘তুমি বললে তোমার বউমা এসে করে দিয়ে যাবে।’

‘অ’জাতের বংশ অ’জাত বলে কী? আয় তোরে কয়টা খুন্তি দিয়ে থেরাপী দেই। দুই অ’জাত আমার হয়েছে। একটাও জাতের হয়নি। কাজকর্মের কথা বললে একটা বামে যায় তো ডানে লাফায় আরেকটা শুধু বউ,বউ করে।’

সেরিন,মাহি দু’জনেই তার আম্মুর দিকে হতাশর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার আম্মু যেতে সেরিন মাহিকে বলে,
‘আমার বংশ অ’জাতের? লাইক সিরিয়াললি আমাকে দেখে অ’জাতের বংশের মেয়ে মনে হয়?’

‘আমাকে দেখে সত্যি অ’জাতের বংশের ছেলে মনে হয়?’

‘তোর জন্য আম্মু আমায় এতো গুলো কথা শোনালো।’

‘আমাকে মনে হয় আদর করলো কত? তোর জন্য আমার বংশকে অপবাদ দিয়েছে।’

‘তোর আর আমার দুজনের বংশ একটাই।’

সেরিনের কথায় শশী বলে,

‘সেটা হলো অ’জাতের বংশ আবার কখনো পাগলের জাত।’

সেরিন হাতের ঝাড়ুটা শশীর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,
‘চলেই তো যাবি। একটু তো কাজকর্ম করে ছোট বোনের থেকে দোয়া নে?’

‘তোর দোয়া লাগবে না। যেই মুখে সারাক্ষণ গালি থাকে সেই মুখে আবার দোয়া আসবে কোথা থেকে?’

‘সর! আমার মতো ভালো মেয়ে একটাও পাবি না।’

‘হ্যাঁ এমনি ভালো যে একজনের চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করতে,করতে রাস্তা দিয়ে যায় আবার রাস্তায় বুড়ো মানুষ দেখলে সালাম দিয়ে ভালো সাজে।’

শশীর কথায় মাহি আর সেরিন দু’জনেই হেঁসে দেয়। শশী লিভিং রুমের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সেরিন টেবিলে গ্লাস,প্লেট সব সাজিয়ে রাখে।

তাদের কাজ শেষ হতে শশী,সেরিন শাওয়ার নিয়ে নেয়। আজকে সেরিন হোয়াইট আর মেরুন কালারের কারুকাজ করা থ্রি পিস পরিধান করেছে। যেহেতু শশীকে দেখতে আসবে সেহেতু তাকে শাড়ী পড়ানো হবে। সেরিন শাড়ী নামিয়ে চলে যায় লিভিং রুমে।

চৌধুরী বাড়ী থেকে শুভ্র, আয়মান চৌধুরী এবং আরাফ চৌধুরী চলে আসে। শুভ্রকে আচমকা দেখে সেরিন কোন দিকে যাবে ভেবে পাচ্ছে না। তারউপর বড়রা আছে। হাতের ফোনটা সোফার উপর রেখে তাঁদের সামনে গিয়ে সালাম দেয় সেরিন। আয়মান চৌধুরী এবং আরাফ চৌধুরী সেরিনের সালামের জবাব দেয়। আরাফ চৌধুরী বলেন,

‘তুমি সিহান পাটওয়ারীর মেয়ে না? নাম কী তোমার মা?’

‘জ্বী! আমার নাম সেরিন পাটওয়ারী মিশাত।’

সেরিন নামটা শোনে আয়মান চৌধুরী শুভ্রর দিকে তাকায়। সবার আগে চোখ যায় শুভ্রর সাদা পান্জাবি আর সেরিনের পরিধান করা সাদা থ্রি পিসের দিকে৷ শুভ্রকে আস্তে করে আয়মান চৌধুরী বলেন,
‘উহুম! আগে থেকে প্লান করে রেখেছো নাকী হোয়াইট পড়বা?’

‘একদম না চাচ্চু। কীভাবে জেনো মিলে গেলো।’

সেরিন তাঁদেরকে ভেতরে নিয়ে আসে। আরাফ চৌধুরী সামনে তারপর সেরিন তার পেছন দিয়ে শুভ্র হাঁটছে। আয়মান চৌধুরী পেছন থেকে লক্ষ্য করছেন তাদের দু’জনকে কেমন লাগছে।

কিরণ পাটওয়ারী কাজে বাইরে গেছে একটু পর চলো আসবে। মাহি তাঁদের তিনজনকে ওয়েলকাম ড্রিং দেয়। সেরিন নাস্তা নিয়ে আসে। সেরিনকে ডেকে নিজের পাশে বসায় আরাফ চৌধুরী। তার পাশে আবার শুভ্র বসা ছিলো। শুভ্র এবং আরাফ চৌধুরীর মাঝে সেরিন বসে। সেরিনের হার্ট বিট উঠা নামা করছে। বিশ্বাস হচ্ছে না শুভ্রর পাশে তাকে বসানো হয়েছে। যাকে দেখলে দশহাত দূর থেকে দৌড় দেয় মানুষ। আয়মান চৌধুরী বসে,বসে তাদেরকে দেখছে। সবার আড়ালে শুভ্র আর সেরিনের কয়েকটা পিকচার ও তুলে নেয়। সেরিনকে এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে আরাফ চৌধুরী। শুভ্র নিজের ফোন নিয়ে ব্যস্ত। তবে তার কাছে ভালোই লাগছে ব্যপারটা। কে জানে তাঁদেরকে একসাথে কেমন লাগছে?

সেরিন কোনরকম কথা বলে উঠে নিজের রুমে চলে যায়। তখন আয়মান চৌধুরী শুভ্রকে ডেকে তার পাশের বসায়। ফোন থেকে তোলা ছবি গুলো শুভ্রকে দেখিয়ে বলে,
‘মাশাল্লাহ, মাশাল্লাহ। শুভ্র বিয়েটা হবে তো?’

শুভ্র মাথা চুলকায়। তখন আবার সিহান পাটওয়ারী আসে সাথে তার বোন সাহিনূর পাটওয়ারী। শুভ্র ভদ্র মহিলার দিকে একনজর তাকায়। এনি সেই মহিলা যার জন্য এখন তাদের দুই ভাইকে বিয়ে করার জন্য তাড়াহুড়ো করতে হচ্ছে।

#চলবে

(শুভ্র সেরিনের বিয়েটা দিয়ে দিবো গাইস? নাকী আর্থ আর শশীর টা এখন হবে?👀)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here