#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|১৫|
#শার্লিন_হাসান
‘মাশাল্লাহ, মাশাল্লাহ। শুভ্র বিয়েটা হবে তো?’
শুভ্র মাথা চুলকায়। তখন আবার সিহান পাটওয়ারী আসে সাথে তার বোন সাহিনূর পাটওয়ারী। শুভ্র ভদ্র মহিলার দিকে একনজর তাকায়। এনি সেই মহিলা যার জন্য এখন তাদের দুই ভাইকে বিয়ে করার জন্য তাড়াহুড়ো করতে হচ্ছে। সাহিনূর পাটওয়ারী সামনের সিঙ্গেল সোফায় বসে পড়েন। সিহান পাটওয়ারী শুভ্র,আয়মান চৌধুরী এবং আরাফ চৌধুরীর সাথে কথা বলেন।
চৌধুরী পরিবারের বাকী সদস্যদের আসতে একটু লেট হয়। তবে সবাই আসে! একমাত্র জান্নাতুল ফেরদৌস ছাড়া। অবশ্য আর্থর এতে কিছু যায় আসে না। তার বিয়েতে সে না থাকলেও কিছু যায় আসবে না। সুলতানা খানম আর মিরা তুষি এবং সাইয়ারার সাথপ এটা ওটা হেল্প করছে। ভীষণ মিশুক প্রকৃতির তারা দু’জন। সেরিন ও তাঁদের সাথে কথা বলে।
খাওয়া দাওয়ার পাঠ চুকিয়ে শশীকে আনা হয়। মেরুন কালারের শাড়ীতে শশীকে সাজানো হয়। শশীকে আনা হতে আর্থ তার দিকে হা করে তাকিয়ে রয়। পাশ থেকে শুভ্র তাকে ধাক্কা দিতে নজর সরিয়ে ফ্লোরে স্থির করে আর্থ। শশীকে দেখতে গিয়ে সে বেমালুম ভুলে গিয়েছিলো তার শ্রদ্ধেয় পিতা মাতা যে এখানে উপস্থিত আছে। সে সবার সামনে আর যাই হোক বাবা নায়ের সামনে ভালো একটা ছেলে। বেপাশ কথাবার্তা ও বলে না তাঁদের সামনে। শশীকে দেখা হতে মিরা ইসলাম এক জোড়া বালা তার হাতে পড়িয়ে দেয়। চৌধুরী পরিবারের সবাই মোটামুটি গোল্ডের কিছু না কিছু শশীকে দিয়েছে। শুধু আর্থর তরফ থেকে কিছুই দেয়নি। সে তো এনগেজমেন্টের ডেট ফিক্সড হলে সেদিন দিবে। তাঁদের দেখাদেখির পালা শেষ হতে আয়মান চৌধুরী বলেন,
‘পাটওয়ারী সাহেবরা একসাথে দুই মেয়েকে বিয়ে দিন। নেচে গেয়ে! যেহেতু শুনেছি ওদের বেড়ে উঠা সবকিছুই টুইনের মতো। আমাদের তো আরেকটা ছেলে আছেই! সমস্যা নেই।’
তখন সাহিনূর পাটওয়ারী বলেন,
‘সেরিনকে আমার অক্ষেরের বউ করবো। এটা আমার অনেক আগপর ইচ্ছে। আমার ছেলের ছোট্ বেলায় ঠিক করে নিয়েছি আমি শশী বা সেরিন যেকোন একজনকে নিবো। যেহেতু শশীর বিয়ে ঠিক অফকোর্স সেরিনই আমার ছেলের বউ হবে। নেক্সট উইকে অক্ষর দেশে আসছে। সমস্যা নেই আপনারা চাইলে ওঁদের বিয়েটা একসাথেই হবে।’
সাহিনূর পাটওয়ারীর কথায় মূহুর্তে শুভ্রর মাথা গরম হয়ে যায়। কপালে আঙুল দিয়ে স্লাইড করছে। আর্থ তাকে থামিয়ে,থামিয়ে রাখছে। কারণ শুভ্র রেগে একটা ধমক দিলে সাহিনূর পাটওয়ারী চারদিন অজ্ঞান থাকবে।
তখন আয়মান চৌধুরী বলেন,
‘না আপনার ছেলের জন্য বলিনি। আমাদের চৌধুরী পরিবারের ছেলের জন্য বলেছি।’
‘ব্যপারটা মন্দ হতো না।’
আরাফ চৌধুরী বলেন। কিন্তু পাটওয়ারী পরিবারের কেউই কিছু বলেনি। তবে মূহুর্তে প্রসঙ্গ পাল্টে নেয় সিহান পাটওয়ারী। তার কথার ধরনে বুঝায় মেয়েকে এখন বিয়ে দিবে না সে। কারোর সাথেই না।
শুভ্র আর্থকে নিয়ে উঠে ভেতরের দিকে যায়। মাহি সহ আছে তাঁদের সাথে। মাহি তাঁদের কে দেখিয়ে দিচ্ছে কোনটা কার রুম। শুভ্র কোন কথা কানে না নিয়ে একটা রুমে ঢুকে পড়ে। মাহি আর্থর সাথে কথা বলছে।
শুভ্র রুমে প্রবেশ করতে খেয়াল করে রুমটা বেশ পরিপাটি হলেও দেওয়ালে একটা ছবির এলবাম সেটা সেরিনের। সোফায় উপর একটা গিটার রাখা। রুমের দেওয়ালে কত স্টাইলের তোলা সেরিনের ছবি জুলানো। সেই সাথে লাইটিং করে ডেকোরেশন করা। রুমটা শুভ্রর পছন্দ হয়। তবে পড়ার টেবিলের সামনে এসে একটা কাগজ জাতীয় কিছু রাখে শুভ্র।
কোথা থেকে তড়িঘড়ি সেরিন রুমে প্রবেশ করে। শুভ্র একসাইডে দাঁড়ানো। সেরিনের সেদিকে খেয়াল নেই। সে কোন দরকারে টেবিলের সামনে যেতে একটা খাম দেখে। মূহুর্তে মেজাজ বিগড়ে যায় তার। খামটা হাতে নিয়ে সাইডে থাকা ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে বিরক্তি নিয়ে বলে,
‘ছাতার মাথার চিঠি এখানে আসলো কীভাবে? কোন বা’লই কাজে লাগে না।’
বিরক্তি নিয়ে সামনে তাকাতে খেয়াল হয় আস্ত একটা মানুষ দাঁড়ানো। শুভ্র তার দিকে রক্ত চক্ষু করে তাকিয়ে আছে। সেরিনের গলা শুকিয়ে আছে। এমনিতে সে শুভ্রকে ভয় পায়। তার ওই ভয়েস যেটা দিয়ে ধমক একটা দেয় আর ক্যাম্পাস কেটে উঠে। সেরিনের মনে পড়ে তাদের রুম গুলো সাউন্ড প্রুফ। স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে! যাতে শুভ্র ধমক দিলে বাইরে না যায়। দেরীও হয়নি শুভ্র হাত উঠিয়ে জোরে এক ধমক দিয়ে বলে,
‘হাউ ডেয়ার ইউ। এক থাপ্পড় দিয়ে কানা বানিয়ে দেবো বলে দিলাম তুমি…’
বলার আগে সেরিন ঠাস করে নিচে পড়ে যায়। আর্থ মাহিও সেই মূহুর্তে রুমে আসে। সেরিনকে পড়তে দেখে তারা শুভ্রর দিকে তাকায়। সে হাত সেভাবে রেখে দাঁড়িয়ে আছে। মাহি তড়িঘড়ি সেরিনের কাছে যায়। আর্থ শুভ্রকে খোঁচা মেরে বলে,
‘ছিহ্! আমার শালিটাকে তুমি এখনি অজ্ঞান করে দিলে? বাসর করা লাগবে না তোমার। বিয়েই হবে না দেখো।’
‘চুপ থাকবি তুই? এমনিতে মাথা গরম তার উপর মেয়েটা যা বেয়াদবি করলো।’
‘ও অজ্ঞান হয়ে গেছে ভাই।’
ওপাশ থেকে মাহি বলে। শুভ্র এবং আর্থ ভ্যাবাছ্যাকা খেয়ে যায়। তখন আর্থ বাইরে গিয়ে তুষিকে ডেকে আনে সেরিন অজ্ঞান হয়ে গেছে। মূহুর্তে কথাটা জেনো বা’জ পড়ার মতো ছিলো। সবাই হতদন্ত হয়ে ছুটে আসে। সাইয়ারা এবং তুষি সেরিনকে কিছুক্ষণ ডাকে। মাহি সেরিনকে কোলে নিয়ে খাটের উপর শুইয়ে দেয়। বাকীরা বোকার মতো ডাকাডাকি করছে। যা দেখে শুভ্রর মেজাজ আরো খারাপ হয়ে যায়। তেজ দেখিয়ে বলে,
‘ও এভাবে উঠবে না। ডক্টর আনানো হোক।’
শুভ্রর কথায় কিরণ পাটওয়ারী আর দেরী করেননি ডক্টরকে কল লাগান। বাকীরা বসে,বসে গসিপ করছে সেরিন কীভাবে অজ্ঞান হলো। আর্থ শুভ্রকে বকেই যাচ্ছে। কেনো সেরিনকে সে ধমক দিতে গেলো।
সবাই মূহুর্তে নিরব হয়ে সেরিনের দিকে তাকিয়ে আছে। ডক্টর আসতে উত্তেজিত হয়ে পড়ে সিহান পাটওয়ারী। তার মেয়ের আবার কী হলো? ডক্টর সেরিনকে দেখে বলে,
‘সেরিন কিছু নিয়ে ভয়ে ছিলো। আর ভীষণ ভয় পেয়েছে মেয়েটা। চিন্তা করবেন না ঘন্টা খানেকের মধ্যে
জ্ঞান চলে আসবে।’
‘ঘন্টা খানেক সময় লাগবে কেনো? এখনি জ্ঞান আসবে না কেনো?’
শুভ্র পাল্টা প্রশ্ন করে ডক্টরকে। ডক্টর শুভ্রকে দেখে কিছুটা হতদন্ত হয়ে পড়ে। আমতাআমতা করে বলে,
‘অজ্ঞান হলে তো আর সাথে,সাথে জ্ঞান চলে আসেনা তাই না? একটু তো লেট হয়ই।’
‘এসব পুরনো গল্প। আমায় এসব শেখানো লাগবে না।’
শুভ্রর এমন রিয়েক্ট করা কারোরই সুবিধার ঠেকছে না। আর্থ তার মুখে হাত দিয়ে তাকিয়ে নিয়ে প্রস্থান করে। লিভিং রুমে আসতে শুভ্রকে কয়েক গা লাগিয়ে দেয় আর্থ।
‘ভাই কন্ট্রোল মানলাম ওর প্রেমে উ’ষ্ঠা খেয়েছিস। তো বড়রা আছে তো!’
‘তুই চুপ থাক তো। আমায় রিজেক্ট করলো এই পাটওয়ারী পরিবার? আমার মতো ছেলে পাবে তো তারা? লাগবে না এই পাটওয়ারী পরিবার বিয়ে করা। কত সেরিন আসবে আর যাবে শুভ্রর জন্য।’
‘তাহলে তোর বিয়েটা ক্যান্সেল?’
‘হুম।’
‘আলহামদুলিল্লাহ। ‘
শুভ্র সোফায় এসে বসে পড়ে। তার তো সাহিনূর পাটওয়ারীকে কয়েকটা ধমক দিতে মন চাচ্ছে। সেরিন মেয়েটা তো খুব সাহসী। শুভ্রর খুব তো বদনাম করতো বুক ফুলিয়ে। এখন ধমক একটা খেয়েই এই অবস্থা? শুভ্র ভাবছে আসলেই তার ধমকে মানুষ অজ্ঞান হয়? হবেই তো! সে তো যেখানে যায় সেই জায়গাটাই নিরব। ত্যাড়া রগের স্টুডেন্ট ও তখন সোজা। শুভ্র ভাবছে তার ধমকা ধমকি টা একটু হলেও কমাবে।
সেরিনকে নিয়ে মোটামুটি বসাই ব্যস্ত হলেও চৌধুরী পরিবারের সবাই আফসোস করছে তার জন্য। শশী তাকিয়ে আছে সেরিনের দিকে। আর্থ শশীকে দেখছে। আয়মান চৌধুরী শুভ্রর পাশে এসে বসে। মুখে গম্ভীর্যতা টেনে বলে,
‘ধমক দিয়েছো তুমি?’
‘হুম।’
হতাশ হয়ে যায়ন আয়মান চৌধুরী। কী আর করবে সম্মোন্ধ। যেখানে শুভ্রর ধমকে মেয়েটা অজ্ঞান সেখানে বিয়েশাদি ইম্পসিবল। তখন আর্থ এসে বলে,
‘চাচ্চু শুভ্র ভাই বিয়ে টিয়ে করবে না। ক্যান্সেল। এখন আমারটার এন্গেজ ডেট ফিক্সড করে নিও।’
আয়মান চৌধুরী শুভ্রর দিকে তাকাতে শুভ্র হ্যাঁ বোধকে মাথা নাড়ায়। সেদিনের মতো সবাই বিদায় নিয়ে আসে। কল দিয়ে এনগেজমেন্ট ডেট ফিক্সড করার কথা বলে। শুভ্র নিজের গাড়ী নিয়ে একাই চলে আসে। গাড়ীতে বসে সেরিনের বাবা আর ফুফির গুষ্টি উদ্ধার করে নেয় সে। পরক্ষণে নিজেকেই গা’লি দেয়।
‘শুভ্র সেরিনের বাতাস পেয়েছিস? করা লাগবক না তোর বিয়ে। বিয়ের নানী টুট…….’
‘আচ্ছা আমি কী দেখতে খারাপ? বয়সের ছাপ কী পড়ে গেলো? শুভ্র লুকিং গ্লাসে নিজেকে দেখে। সাদা রঙের পাঞ্জাবিতে তাকে সত্যি শুভ্র লাগছে। শুভ্র বাড়ীতে এসে নিজের রুমে চলে যায়। করবে না সে বিয়ে।
আয়মান চৌধুরী, আর্থ এবং সুলতানা খানম তারা এক কারে করে আসে। শুভ্রকে নিয়ে তাঁদের হাসি থামছেই না। আসলেই হাস্যকর ঘটনা ক্রিয়েট করলো। ধমকা ধমকি ঠিক আছে তাই বলে এমন ধমক যে মানুষ অজ্ঞান হয়ে যায়। তারউপর এতো রাগা রেগেছে বেচারা যে এতোদিন বিয়ের জন্য লাফালাফি করলেও এখন বিয়ে করবে না সে।
******
রাতের দিকে সেরিন উঠে বসে। তার সামনে তার ভাইমাহি আর তার চাচ্চু কিরণ পাটওয়ারী বসে আছে। সেরিনকে দেখে কিরণ পাটওয়ারী উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করে,
‘কী দেখে অজ্ঞান হয়ে গেছো আম্মু? সাপ? নাকী ভূত দেখেছো?’
সেরিন ভ্যাবাছ্যাকা খেয়ে যায়। কঠোর গলায় বলে,
‘দেখেছিলাম একটা জ্বীন। চাচ্চু ওটার চোখ গুলো দেখে আমি বেশী ভয় পেয়ে গেছি। জানো চাচ্চু ওই জ্বীন আমায় এতো জোরে ধমক দিয়েছে যে ভয়ে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। ওই জ্বীন অনেক লম্বা চাচ্চু। তারউপর সাদা পোষাক পড়ে জ্বীন সেজে এসেছে। চাচ্চু আমি যে হার্ট অ্যাটাক করিনি এটাই শুকরিয়া। চাচ্চু আমায় প্লিজ দোয়া পড়ে ঝাড়ফুঁক দাও। নাহলে আমি মরেই যাবো জ্বীনের ভয়ে।’
#চলবে
(অনেকে হয়ত বলবেন ধমকে সত্যি অজ্ঞান? সত্যি বলতে এই শুভ্র স্যার যাকেই ধমক দিবে হার্ট অ্যাটাক করার মতো সেখানে অজ্ঞান হওয়া কিছুই না। হাজারটা স্টুডেন্ট সামলাতে বিশ ত্রিশ জন টিচার লাগলেও উনি যখন আসবেন তখন সব ঠান্ডা। আর ওনার ধমক একটা পুরো ক্যাম্পাস নিস্তব্ধ করার মতো।🫠 জানিনা গল্পে কতটুকু তুলে ধরতে পেরেছি বাট এই লোকটা ডেঞ্জারাস ভাই💔)
আমার লেখা সব গল্পের লিংক,
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=299892079272405&id=100077548442342&mibextid=Nif5oz
গ্রুপ লিংক,
https://www.facebook.com/groups/582123563029858/?ref=share_group_link
আমার পার্সোনাল আইডির লিংক,
https://www.facebook.com/profile.php?id=100076559331822