দ্বিতীয়_ফাগুন #পর্বসংখ্যা_১৩ #লেখিকা_Esrat_Ety

0
538

#দ্বিতীয়_ফাগুন
#পর্বসংখ্যা_১৩
#লেখিকা_Esrat_Ety

এটা যেন নাটকের কোনো স্ক্রিপ্ট। দর্শক কে চমকে দিতে পরিচালক মাঝে মাঝে কিছু অদ্ভুত কাকতালীয় ঘটনা স্ক্রিপ্টে ঢুকিয়ে দেয়। আমার গল্পেও ঠিক এমন হয়েছে। আমার ছোটো ভাই ভালোবেসে যে মেয়েটিকে বিয়ে করেছে, অদ্ভুত ভাবে রোদেলা আমিন নামের ভদ্রমহিলা সেই মেয়েটির বড় বোন। সবার চোখে এটা কাকতালীয় ব্যাপার মনে হবে কিন্তু আমার চোখে এটা শুধুমাত্র কাকতালীয় কোনো ঘটনা না। ঢাকা শহরে এতো লোকের বসবাস,আমার ছোটো ভাই আদিল কেনো রোদেলা আমিনের ছোটো বোনকেই ভালোবেসে ফেলবে? অন্য কাউকেও তো ভালবাসতে পারতো। প্রকৃতি আমাকে আর রোদেলা আমিনকে জুড়ে দিচ্ছে কোনো না কোনো ভাবে। সে যাই হোক,আসল কথায় আসি। আমার গুণধর ছোটো ভাই তো নিজের আখের গুছিয়ে নিয়েছে, কিন্তু আমাকে ফেলেছে বিপদে। এতো কান্ডের পরে মায়ের শেষ আশা ভরসা হলাম আমি। আমার আবেগী মা এখন মনে প্রানে চাইবে আমার বিয়েটা ওনার পছন্দ মতো করাতে। এখন মাকে গিয়ে যদি বলি “মা আমি একজনকে ভালোবাসি,সে আর কেউ না,তোমার ছোটো ছেলের বৌয়ের বড়বোন ” তাহলে মা নির্ঘাত আমায় বলি দিয়ে দেবে। এই হচ্ছে আমার গল্পের চার নাম্বার সমস্যা। যেটা আজ সন্ধ্যা সাতটায় কাজী অফিসে জন্মগ্রহন করেছে‌। জানিনা আর কি কি সমস্যা আসতে চলেছে আমার সামনে।

নোট প্যাডে পূর্ববর্তী লেখার নিচে এই কথাগুলো লিখে ফেলে তাশরিফ। ফোন রেখে ঘড়ির দিকে চায় সে। রাত দুইটা বেজে তের মিনিট। মা,বাবা,আদিলের সব বন্ধু বান্ধবীরা ঘুমিয়ে গিয়েছে। আচ্ছা রোদেলা আমিন এখন কি করছে? রাগে,দুঃখে, প্রচন্ড ক্ষোভে নিশ্চয়ই এখন বসে বসে হাত কামড়াচ্ছে। তাশরিফ আনমনে হেসে ফেলে। মনে মনে ভাবে,আচ্ছা এখন ওনাকে একটা ফোন দিয়ে জ্বালাতন করলে কেমন হয়? ফোন দিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলবে,”রোদেলা আমিন, আপনি অযথা চিন্তা করবেন না। আপনার বোনকে আর আমার ভাইকে আমি নিরাপদে তাদের বাসর ঘরে পৌছে দিয়েছি। আপনি নিশ্চিন্তে ঘুমান।”
কথাটি ভাবতেই তাশরিফ উচ্চশব্দে হেসে ফেলে। কয়েক মুহূর্ত হেসে নিয়ে নিজে নিজেকে শাসায়,”স্টপ ইট তাশরিফ। কেনো বেচারীর অনূভুতি নিয়ে মজা নিচ্ছো! বৃষ্টি যদি তোমার ছোটবোন হতো তাহলে এতো সহজে মানতে পারতে এসব?”
তাশরিফ বিছানা থেকে নামে। তার প্রচন্ড তৃষ্ণা পেয়েছে । ঘরের দরজা খুলে ডাইনিং রুমে গিয়ে দাঁড়িয়ে পরে সে। আদিল একটা প্লেটে খাবার নিচ্ছিলো,ভাইয়াকে দেখে ঘাবড়ে যায়, লজ্জিত ভঙ্গিতে বলে,”ও তখন রেস্তোরাঁয় বসে কিছু মুখে দেয়নি। এখন বলছে খুব খিদে পেয়েছে।”
তাশরিফের খুব হাসি পায় আদিলের কাঁচুমাচু মুখ দেখে। কিন্তু সে গম্ভীর হয়ে বলে,”মাকে ডেকে দেবো? মা ব্যবস্থা করে দেবে‌।”

আদিল চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলে,”ওরে বাপরে! মাফ করো ভাইয়া। লাগবে না।”
বলেই আদিল প্লেট উঠিয়ে নিজের ঘরের দিকে দৌড় লাগায়।

তাশরিফ সেদিকে তাকিয়ে হাসে। তার সেদিনের সেই ছোট্ট ভাই টা কেমন কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে দায়িত্বশীল স্বামী হয়ে গিয়েছে। দুজন অল্পবয়সী কপোত কপোতীর ভালোবাসায় ভরা পাগলামী গুলো দেখতে খুবই ভালো লাগছে তার।
এই ভালোবাসা যেনো দুজনকে আজীবন ঘিরে রাখে।

***
খুব ভোরেই তিনজন লোক খাটিয়ে ফ্ল্যাট থেকে সব মালামাল এক এক করে নামিয়ে ট্রাকে তোলা হচ্ছে। বাসা ঠিক করা হয়েছে খুব কাছেই। এখান থেকে দুটো গলি পরেই । পাঁচ তলায় তিন রুমের একটা ফ্ল্যাট। ভাড়া তুলনামূলক কম হলেও পরিবেশ মোটামুটি ভালোই। অতশত দেখার সময়ও তো ছিলো না রোদেলার,জলদি জলদি যা পেয়েছে তাতেই হ্যা বলে দিয়েছে।

রুহুল আমিন বসার ঘরের সোফায় চুপচাপ বসে আছে। মেঘলা বাবার ব্লাড প্রেসারের ওষুধ নিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
রোদেলা এবং আয়েশা সিদ্দিকা হাতে হাতে সব গুছিয়ে নিচ্ছে। এমন সময় বাড়িওয়ালা দিদারুল ইসলাম ভেতরে ঢোকে।

রোদেলা উঠে দাঁড়ায়। দিদারুল ইসলাম এসে রুহুল আমিনের সামনের সোফায় বসে। কন্ঠে খুবই আফসোস নিয়ে বলতে থাকে,”অল্পবয়সী মেয়ে। জীবনের বাস্তবতা সম্পর্কে ধারণা জন্মায়নি এখনো। মেনে নিন ভাই। আপনাদের তো আরো খুশি হবার কথা,শরীয়ত মোতাবেক বিয়ে হয়েছে। শেষমেশ মেয়েটা কলঙ্কিত তো হয়নি।”

রোদেলা ঘরে ঢুকে একটা খাম এনে দিদারুল ইসলামের হাতে ধরিয়ে দেয়,”এই মাসের ঘর ভাড়া টা। নিন আর এখান থেকে যান।‌ আমরা দুপুর নাগাদ চলে যাবো।”

দিদারুল ইসলাম বিব্রত হয়ে খুক খুক করে কাশতে থাকে। তারপর উঠে চলে যায়।

রোদেলা আবারো গোছগাছের কাজে মন দেয়। মেঘলা রুহুল আমিনকে ওষুধ টা খাইয়ে দিয়ে চলে যেতে নিলে রুহুল আমিন বলে ওঠে,”একটা বার মেয়েটার খোজ পেলে মনে বড় শান্তি পেতাম রে মেঘলা।”

রোদেলা চেঁচিয়ে ওঠে,”এতো শান্তি দিয়ে কি করবে তুমি? এতো শান্তি রাখবে কোথায়? চুপ করে ওখানে বসে থাকো। এক জীবনে এতো শান্তি পেতে নেই।”

***
“আদিল। এই আদিল।”

বৃষ্টির ডাকে আদিল কোনো সাড়া দেয়না, বেঘোরে ঘুমাচ্ছে সে। বৃষ্টি বিরক্ত হয়ে গায়ে হাত রেখে আদিলকে ডাকে। বৃষ্টির হাতের স্পর্শে আদিল আচমকা চোখ মেলে তাকায়,অবাক হয়ে দুমিনিট বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে থাকে। বৃষ্টি চোখে মুখে বিরক্তি ফুটিয়ে বলে,”কি হয়েছে! কি দেখছো?”

আদিল চোখ ডলতে ডলতে উঠে বসে। ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে,”আমি আসলে চমকে গিয়েছি তোমাকে দেখে। এখনো ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না আমাদের বিয়ে হয়েছে। মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছি। এই আমাকে একটা চিমটি কাটো তো।”
আদিল হাত বাড়িয়ে দেয়। বৃষ্টি প্রচন্ড জোরে চিমটি কেটে দেয় আদিলের হাতে। আদিল যন্ত্রনায় “ওরে বাপরে” বলে চেঁচিয়ে ওঠে। বৃষ্টি মুখে হাত চেপে হাসছে।

আদিল হাত টা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে চিমটি কাটা স্থানে হাত বোলাতে থাকে। অভিমানের সুরে বৃষ্টিকে বলে,”এখন আমি একটা দিলে তো ভ্যা ভ্যা করে কাঁদবে।”

বৃষ্টি আদিলের কথা গায়ে না মেখে আদিলের দিকে এগিয়ে বসে। বৃষ্টির গা থেকে একটা মিষ্টি গন্ধ আসছে। এতো কাছে এগিয়ে বসেছে,আরেকটু কাছে আসতে সমস্যা কোথায় ! নিজে থেকেও আসবে না, একটু জরিয়েও ধরবে না। আদিল কাছে যেতে চাইলেও তালবাহানা করছে। অদ্ভুত মেয়েমানুষ। বিয়েটা করেছে কেনো তাহলে ! চেহারা দেখার জন্য ?

বৃষ্টি ফিসফিস করে আদিলকে বলে,”আচ্ছা শোনো। ফ্রেশ হয়ে বসে আছি সেই কখন থেকে। আমার কি বাইরে যাওয়া উচিত? মা কি কিছু বলবেন? বকবেন আমায় দেখলে?”

আদিল একটু চিন্তা করে। তারপর বলে,”তা তো বলতে পারছি না। এখানে বসে থাকো চুপচাপ। কেউ ডাকতে এলে তবেই বেড়োবে।”

বৃষ্টি মাথা নেড়ে বসে থাকে চুপচাপ। আদিল বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে থাকে। কয়েক মুহূর্ত পরে বলে ওঠে,”তোমাকে একটা কথা কখনো বলিনি বৃষ্টি। আজ বলতে ইচ্ছে করছে খুব !”

_কি?
শুনতে আগ্রহী হয়ে ওঠে বৃষ্টি।
_পৃথিবীতে আমার দেখা দ্বিতীয় সুন্দরী নারী তুমি। তোমার চেহারা দেখলেই আমার এখানে শান্তি লাগে।

আদিল নিজের বুকে হাত রেখে বলে।

বৃষ্টি চোখদুটো সরু করে বলে,”প্রথম সুন্দরী কে?”
_আমার মা।

বৃষ্টি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে,বলে,”ও তাই বলো। আমি ভেবেছিলাম তোমার কোনো প্রাক্তন প্রেমিকা।”

আদিল হাসে। বৃষ্টির হাত দুটো নিজের হাতে নিয়ে বলে,”তোমার হাতে চুড়ি দুটো বেশ মানিয়েছে। এগুলো সবসময় পরে থাকবে। আমি তোমার হাতে একটা চুমু খাই?”

লজ্জায় লাল হয়ে যায় বৃষ্টি। চুমু খাওয়ার হলে খাবে। এখন এতো ভদ্রতা দেখাচ্ছে কেনো! ইচ্ছে করে বৃষ্টিকে লজ্জা দিতে চাইছে।

আদিল বৃষ্টির হাতে চুমো খেতে নিলে দরজায় টোকা পরে। বিরক্ত হয়ে উঠে যায় আদিল। গিয়ে দরজা খুলে দেখে তাহমিনা দাঁড়িয়ে আছে দরজার বাইরে। তাহমিনাকে দেখেই আদিলের হাঁটু কাঁপতে শুরু করে। বৃষ্টি খাট থেকে নেমে দাঁড়ায়,ভীত চোখে নিজের শাশুড়ির দিকে তাকায়।
তাহমিনা আদিলকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে ঘরে ঢোকে। বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে,”খিদে পায়নি?”
বৃষ্টি মাথা নাড়ায়। তার খিদে পায়নি।
তাহমিনা বৃষ্টিকে দেখতে থাকে। নাহ,তার ছেলের পছন্দ আছে বলতে হয়। লম্বা চুল, গোলাকার মুখ,অসম্ভব সুন্দরী একটি মেয়ে।
বিছানার উপরে বসতে বসতে বলে,”শাড়ি পরার অভ্যাস নেই বোধ হয়। বিকেলে দর্জি আসবে,তার কাছে মাপটা দিও। সালোয়ার কামিজ গুলো বানিয়ে দেবে।”
বৃষ্টি এবারো মাথা নাড়িয়ে উত্তর দেয়। তাহমিনা বলে,”বাবা কি করেন?”
_প্রথম জীবনে মালয়েশিয়ান প্রবাসী ছিলেন,তারপর দেশে এসে ঢাকাতেই একটা মোবাইলের দোকান নিয়েছিলেন, দু’বছর হয় স্ট্রোক করেছেন, পায়ে সমস্যা হয়েছে। এখন আর সেই ব্যাবসাও নেই।

_ওহহ। ভাই-বোন কয়জন?
_আমরা তিনবোন মা। আমিই ছোটো।

তাহমিনা মাথা ঘুরিয়ে আদিলের দিকে তাকায়। তারপর বলে,”এখানে খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? ফ্রেশ হয়ে তাশরিফের কাছে যা। তোকে ডাকছে।
আদিল বাধ্য ছেলের মতো ওয়াশ রুমে ঢুকে পরে দ্রুত।
তাহমিনা বৃষ্টিকে বলতে থাকে,”এইচএসসি কোন কলেজ থেকে?”
_ভিকারুননিসা।
_ভিকারুননিসার মেয়ে ঢাকা কলেজের ছেলের সাথে যোগাযোগ হলো কিভাবে ?
_একই কোচিং সেন্টারে পড়তাম।

তাহমিনা আর কিছু বলে না, উঠে দাঁড়িয়ে বলে, “খেতে এসো।”

বৃষ্টি একটা বড় নিশ্বাস ছাড়ে। ভয়ে তার কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছিলো। ভেবেছিলো তার শাশুড়ি তাকে কড়া কিছু শুনিয়ে দেবে,কিন্তু না শাশুড়ি শুধুমাত্র তাঁর ইন্টারভিউ নিতে এসেছিলো।

***
খাবার টেবিলে সবাই চুপচাপ খাচ্ছে। আদিল বারেবারে খাওয়া থামিয়ে বৃষ্টির দিকে তাকায়। বৃষ্টি খাবার নিয়ে নাড়াচাড়া করছে শুধু। বৃষ্টির কি আবারও মন খারাপ হয়ে গিয়েছে! সবার সামনে আদিল কিছু জিজ্ঞেসও করতে পারছে না। তাশরিফ খেতে খেতে আদিলের দিকে তাকায়। আদিলের দৃষ্টি অনুসরণ করে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,”বৃষ্টি!”
বৃষ্টি মাথা তুলে তাশরিফের দিকে চায়, অস্ফুট স্বরে বলে,”জ্বি ভাইয়া।”
_খাওয়া শেষ করে একটু আমার কথা শুনে যেও।
বৃষ্টি মাথা নাড়ায়। আফতাব হাসান তাহমিনার দিকে তাকিয়ে বলে,”এখন কি করবে? দেশের বাড়িতে খবর দিতে হবে না? সবাইকে তো জানাতে হবে।”
_আরে দাঁড়াও,আগে নিজেরা হজম করে নেই বিষয়টা। বিয়েটা যখন করেই ফেলেছে, লুকিয়ে তো আর রাখতে পারবো না তাইনা।
আফতাব হাসানের কথার পিঠে বলে তাহমিনা।

_পাড়া প্রতিবেশীকে তো জানাতেই পারি।

_হ্যা হ্যা জানাও। এক কাজ করো, সারাদিন তো কিছুই করো না। একটা ঢোল নিয়ে এপার্টমেন্টের বাইরে দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে বলো,”তোমরা সবাই কে কোথায় আছো। দেখে যাও,আমার অপদার্থ ছোটো ছেলে ,যার এখনো দুধের দাঁত পরেনি সে বড় ভাইয়ের আগে বাড়িতে বৌ নিয়ে এসেছে। এসো এসো সবাই, মিষ্টি খেয়ে যাও।”
তাহমিনার কথায় মজা পেয়ে আদিলের বন্ধুরা উচ্চশব্দে হেসে ওঠে। আফতাব হাসান বিরস মুখে নিজের স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকে, দিন দিন অভদ্র হয়ে যাচ্ছে এই মহিলা। স্বামীকে একটুও মান দিয়ে কথা বলে না।

“ভাইয়া আমাকে ডেকেছিলেন?”
তাশরিফ অফিস যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছিলো। বৃষ্টিকে দেখে বলে,”হ্যা। ভেতরে এসো।”
বৃষ্টি তাশরিফের ঘরে ঢোকে। তাশরিফ গলার টাই বেঁধে বৃষ্টিকে বলে,”মা প্রথম প্রথম একটু রাগী রাগী মেজাজে কথা বলবে,মানিয়ে নিও। পরে দেখবে তোমায় সে চোখে হারায়।”
বৃষ্টি মাথা নাড়ায়। তাশরিফ বৃষ্টির মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,”ও বাড়ির জন্য মন খারাপ?”
বৃষ্টি চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। তার হঠাৎ করে খুব কান্না পাচ্ছে।
তাশরিফ বলে,”আমি তোমাকে ডেকেছি একটা কাজে। আমি রোদেলা আমিনকে এখন ফোন করবো। তুমি কথা বলে নাও।”

বৃষ্টি দাঁড়িয়ে থাকে। সে জানে মেজো আপু তার সাথে কথা বলবে না।

তাশরিফ নিজেও সন্দিহান। পেঁচা মুখী তাকে নির্ঘাত কথা শুনিয়ে দেবে তবু সে রোদেলার নাম্বার ডায়াল করে।

দু’বার রিং বাজতেই ওপাশ থেকে রোদেলা ফোনটা রিসিভ করে হ্যালো বলে। প্রিয় কন্ঠটি শুনতেই তাশরিফের বুকের ধুকপুকুনি বেড়ে যায়। নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলে,”আমি তাশরিফ হাসান।”

রোদেলা কয়েক মূহুর্ত চুপ থাকে। তারপর বলে,”স্যার আমি ছুটিতে আছি। আপনি বোধহয় ভুলে গিয়েছেন। এখন কোনো অফিশিয়াল ফোন কল রিসিভ করে কথা বলতে আমি বাধ্য নই।”

_রোদেলা আমিন এক মিনিট।
রোদেলা ফোনটা রাখতে গিয়েও রাখে না। তাশরিফ বলে,”এক মিনিটের জন্য একটু বৃষ্টির সাথে কথা বলুন। আপনি বা যে কেউ।”

রোদেলা চুপ করে থাকে। তাশরিফ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে তারপর বলে,”ঠিকাছে। কথা বলতে হবে না। শুধু শুনে রাখুন, বৃষ্টি ভালো আছে, সুস্থ আছে। এখানে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না ওর।”

কথাটি বলে তাশরিফ ফোন কেটে দেয়। বৃষ্টি ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে। তাশরিফের খুব খারাপ লাগে বৃষ্টির জন্য। আদিল গিয়ে দরজার বাইরে দাঁড়ায়,”কিছু হয়েছে ভাইয়া?”
_হু, রোদেলা আমিন কথা বলেনি ওর সাথে তাই কাঁদছে। ওকে ঘরে নিয়ে যা। আমি এখন অফিসে যাবো,এসে কথা বলছি।

তাশরিফ বেড়িয়ে যায়। বৃষ্টি চোখ মুছে আদিলের ঘরে চলে যায়। আদিলের ইচ্ছা করছে বৃষ্টির পিছু পিছু যেতে, গিয়ে ওকে শান্তনা দিতে। কিন্তু মা তার দিকে তাকিয়ে আছে, এই মুহূর্তে সে কিছুতেই যেতে পারবে না বৃষ্টির কাছে। সে পুনরায় এসে খাবার টেবিলে বসে বন্ধুদের সাথে কথা বলতে থাকে।

কিছুক্ষণ ফোনের দিকে তাকিয়ে থেকে মেঘলাকে ডাকতে থাকে রোদেলা। মেঘলা দরজার কাছে এসে দাঁড়ায়। রোদেলা মৃদু স্বরে বলে,”বাবাকে গিয়ে বলে দাও তার ছোটো মেয়ে ভালো আছে, সুস্থ আছে। ওখানে তার কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।”
***

পাঁচতলার জানালা দিয়ে তাকালেই একটা বড় কিন্ডারগার্টেন স্কুলের মাঠ দেখতে পাওয়া যায়। বাচ্চারা মাঠে হৈচৈ করছে,খেলছে। মেঘলা জানালার পর্দা সরিয়ে সেদিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। পেছন থেকে রোদেলা ডাকে,”আপু‌।”

মেঘলা ফিরে তাকায়। রোদেলা বলে,”কেমন লাগছে নতুন বাসা?”

মেঘলা শুকনো হাসি হাসে,”ভালো লাগা দিয়ে এখন আর কিছু যায় আসে? হ্যা মোটামুটি ভালোই পরিবেশ। তবে বেলকনি দুটোতে যায়গা খুবই কম।”

_হুম,তা ঠিক। বৃষ্টি থাকলে নাক চোখ কুঁচকে ফেলতো। ওর সব ফুল গাছ আর ক্যাকটাস গুলো রাখার যায়গা হয়নি যে।

_ভালো কথা, বাকি গাছ গুলো কোথায় রেখেছিস?

_ছাদে। একটা পোর্চের নিচে। ছাদ পুরো ফাঁকা। বাড়িওয়ালার মায়ের থেকে পারমিশন নিয়েছি,সে বলেছে সমস্যা নেই।

কলিং বেলের আওয়াজ পেয়ে দুই বোন বসার ঘরের দিকে যায়। মেঘলা গিয়ে দরজা খুলে দেয়। দরজার বাইরে একজন ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে আছে, বেশ লম্বা, চওড়া, বলিষ্ঠ শরীর। বয়স বেশি হলে আটত্রিশের কাছাকাছি। কানের কাছে দুয়েকটা চুল সাদা হয়ে গিয়েছে। সাদা পাঞ্জাবির উপরে মুজিব কোট পরা,গায়ের রঙ এককথায় খুবই কালো, কিন্তু লোকটি দেখতে বেশ সুদর্শন, চেহারার গঠন খুবই আকর্ষণীয়। সে দুই হাতে দুটো বাচ্চার হাত ধরে রেখেছে। বাচ্চা দুটির মধ্যে একজন ছেলে, একজন মেয়ে। তারা খুবই নড়ছে, দরজার বাইরে থেকে মেঘলাদের বসার ঘরে উঁকি দিচ্ছে।

মেঘলা তাকিয়ে আছে। ভদ্রলোক বলে ওঠে,”আমি সালমান সাদাফ, এই এপার্টমেন্টের মালিক।”
খুবই গম্ভীর কন্ঠের একজন পুরুষ। এই কন্ঠ নিয়ে জনসভায় ভাষণ দিলে লোকজন মনযোগী শ্রোতা হয়ে শুনবে।
মেঘলা সালাম দেয়। ভদ্রলোক সালামের উত্তর দিয়ে বলে,”ছাদে যে গাছ গুলো ছিলো ওগুলো কি আপনাদের?”

মেঘলা এবং রোদেলা উভয়ই মাথা নাড়ায়।

_দুঃখিত। কিছু মনে করবেন না। আমার বাচ্চা দুটো খুব দুষ্টু। ওরা সবগুলো গাছ ভেঙে ফেলেছে।

মেঘলা আর রোদেলা অবাক হয়ে বাচ্চা দুটির দিকে তাকায়। দুজনের বয়স খুব বেশি হলে ছয় থেকে সাড়ে ছয় বছর হবে। তারা মেঘলার দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাসছে। বারো টা ফুলের টব ভাঙতে পারায় তাদের খুবই আনন্দিত লাগছে।

মেঘলা কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না। বৃষ্টি হলে এতক্ষণে একটা বিকট চিতকার দিয়ে কান্না জুড়ে দিতো।

ভদ্রলোক আবারো বলতে থাকে,”চিন্তা করবেন না। আমি জরিমানা দিয়ে দেবো।”

চলমান……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here