মায়াবিনী_(২) #Ayrah_Rahman #পর্ব_০৩

0
1001

#মায়াবিনী_(২)
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_০৩
________________

“সুলতান! আমাদের ফাস্ট সিডিউল কোথায় কিছু জানো? ”

সিটি হসপিটালের বারান্দা দিয়ে হাটতে হাটতে সামনের দিকে তাকিয়ে কথা টা বলল আরুহী। তার পিছনে পিছনে ই সুলতান হাটছে,

আরুহীর হঠাৎ করা প্রশ্নে খানিকটা চকমে উঠে সে অজ্ঞাত কারণে আরুহীকে ভীষণ ভয় পায় সে, বয়সে বছর পাঁচেক এর ছোট আরুহী তার অথচ মেয়েটির রাগ আর এ্যাটিটিউড আকাশচুম্বী।

সুলতান খানিকটা থেমে আমতাআমতা করে বলল,

” এক্সেক্টলি বলতে পারবো না ম্যাম! সম্ভবত সিটি হসপিটালেই পড়তে পারে ”

” সিটি হসপিটালে? বাট হসপিটাল কেন? অন্য সেক্টর গুলো নয় কেন? ”

“মেম এটা বাংলাদেশ। এখানে ঔষধে ও ভেজাল মেশানো হয়। কিছু কিছু ফেইক কম্পানী আছে যেখানে ঔষধে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে সেবন অনুপযোগী করে বাজারে ছাড়ে যার ফলে অসুস্থ মানুষ আরোও অসুস্থ হয়, তাই ইনভেস্টিগেশন টা হসপিটাল থেকে শুরু করলেই ভালো হয়। ”

” তাহলে শহরের সবচেয়ে ভালো হসপিটাল ছেড়ে এই সিটি হসপিটাল কেন? ”

আরুহীর কথা শুনে সুলতান বলে উঠলো,

” মেম শহরের সবচেয়ে ভালো এবং সবচেয়ে বেশি ঔষধ বিক্রি হয় এই হসপিটাল থেকে ই, তাই এখানে ইনভেস্টিগেশন করলে আমার মনে হয় আপনি আপনার কাঙ্খিত ফলাফল পেয়ে যাবেন খুব তাড়াতাড়ি। ”

আরুহী হেটে গাড়ির কাছে এসে বলল,

” হুমম ঠিক আছে, তুমি সব তথ্য কালেক্ট করে মেইল করো আমাকে, আজ আমি অ্যাপার্টমেন্টেই থাকবো, কাল থেকে ইনভেস্টিগেশন শুরু করবো”

সুলতান মাথা নাড়িয়ে বলল,

” ওকে ম্যাম ”

আরুহী গাড়িতে উঠতে নিয়েও থেমে যায়, সুলতানের দিকে তাকিয়ে বলল,

” সুলতান?”

” জি ম্যাম”

“রুশা চৌধুরীর সকল ডিটেইলস আমার চাই, ১ ঘন্টার ভিতরে ”

সুলতান ভ্রু কুচকে বলল,

“রুশা চৌধুরী! ”

” মাহাবীন খান আয়াত এবং আবরার চৌধুরীর মেয়ে
রুশা চৌধুরী ”

” ওকে ম্যাম”

আরুহী আর কথা না বাড়িয়ে বাসায় চলে আসে।
একটা ফাইভ স্টার হোটেলের ন’তালায় তার অ্যাপার্টমেন্ট। বাসার ভেতরে ঢুকে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো, বাসাটা বেশ সুন্দর আর খুব বড়।

লাগেজ থেকে কাপড় নিয়ে ওয়াসরুমে ঢুকে গোসল করার উদ্দেশ্যে,

গোসল শেষ করে একটা টি শার্ট আর একটা থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পরে বের হয়,

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল মুছতে মুছতে হঠাৎ ফোনের শব্দে সে তোয়ালে রেখে ফোন হাতে নেয়, ফোনের ডিসপ্লে তে কারো নাম দেখে মুচকি হাসে,

” হ্যালে মাই ডিয়ার চাইল্ড, হুয়াট’স অ্যাপ? ”

“কি ব্যাপার আম্মাজান! আপনি বিডি তে যাবেন আগে জানালেন না কেন? আমার কেন আপনার অফিস থেকে জানা লাগবে আপনি দেশের বাহিরে! তারাও তো বলতে পারে না আপনি কোন দেশে গেছেন তারপর কেন আমাকে এয়ারলাইনসে লিস্ট চ্যাক করিয়ে জানতে হবে আপনি বিডিতে গেছেন? ”

আরুহী হাসলো, তার ছোট বাবা মানে আয়াস চৌধুরী, আবরার চৌধুরীর ছোট ভাই, ভীষণ ভালোবাসে তাকে, কখনো শাসন করেছে বলে আরুহীর মনে হয় না, সব বিষয় তাকে সাপোর্ট করে তার ছোট বাবা, আায়াস চৌধুরী ফ্যামিলি সহ কানাডায় সেটেল এবং আরুহী এতোদিন কানাডায় ছিলো কিন্তু সে তার ছোট বাবার সাথে নয় নিজের অ্যাপার্টমেন্ট এ। তা নিয়ে আয়াস বেশ রাগ করলেও আরুহী মানিয়ে নেয় তাকে।

” আরে ছোট বাবা রেগে যাচ্ছো কেন? আমি তো ঘুরতে আসি নি গভার্নমেন্ট থেকে দায়িত্ব পেয়ে তার ফুলফিল করতে এসেছি”

” একবার বলে গেলে কি হতো আরুহী? তোমার মৃদুলা মা তোমার জন্য পায়েস রান্না করেছিলো, কিন্তু তুমি তো থাকো নিজের অ্যাপার্টমেন্ট এ, তোমার বাসায় গিয়ে দেখে কেউ নেই ”

” তুমি মন খারাপ করছো কেন ছোট বাবা? তোমার বউ তো সারাদিন শুয়ে বসেই কাটাই, একটু তো কাজ করাও নয়তো সব হাড্ডি জং ধরে যাবে ”

আয়াস কথা বলছিলো আর হাসছিলো হঠাৎ তার পিছনে থেকে মৃদুলা এসে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে বলল,

” বড্ড পাকা হ’য়ে গেছো তুমি রুহী! একদম কান টেনে দিবো, ফাজিল মেয়ে ”

” ঠিক আছে ঠিক আছে, কানাডায় আসলে তারপর না হয় দিও মৃদুমা! আর ছোট বাবা শোনো? ”

” হুম বলো ”

” তুমি জেনেছো খুব ভালো, তবে খবর টা যেন লিক না হয় যে আমি বিডি তে আছি!”

” ঠিক আছে বলব না ”

” এই তো আমার লক্ষি ছেলে ”

বিভিন্ন কথা বার্তা বলে আরুহী ফোনটা কেটে দেয়।

__________________

“আয়াত? মাহাবীন খান আয়াত কোথায় আপনি? ”

স্টাডি রুমে ঢুকতে ঢুকতে আয়াত কে ডাকলো আবরার। সামনে তাকিয়ে দেখে সাদা রঙের শাড়ি পড়ে আয়াত তখন একটা বিজনেস বিষয়ক বই পড়ছিলো, আবরারের ডাক শুনে এক পলক আবরারের দিকে পুনরায় পড়াই মন দিলো,

আবরার আয়াত কে দেখে মুচকি হেসে তার পাশে গিয়ে বসলো,

” কি ব্যপার মহারাণী? মন মেজাজ ভালো না? ”

আয়াত বইটা বন্ধ করে আবরারের দিকে মুখ করে সোজা হয়ে বসল, সে বুঝতে পেরেছে আবরার এখানে তাকে তো পড়তে দেবেই নি উল্টো ডিস্টার্ব করবে,

আয়াত চশমা টা ঠিক করে বলল,

“তোমরা বাপ বেটি মিলে আমার মেজাজ কবে ভালো থাকতে দিলে? বড়টার যন্ত্রণায় কবে জানি বনবাসে যেতে হয় আমায়!”

” আমার মেয়েরা আবার কি করলো?”

” তোমার মেয়ে বাংলাদেশ এসেছে! ”

আবরার হাসলো,
বড় মেয়েটা হয়েছে ঠিক তার মায়ের মতো একরোখা আর জেদি, আর ছোট টা হয়েছে একদম তার মতো ভীষণ দুষ্টু।

আয়াতের কথা শুনে আবরার নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বসে বলল,

“মেয়েটা তো হয়েছে তোমার মতো জেদি, তোমার মেয়ে তুমি সামলাও, আমার কি! ”

আয়াত কিছু বলল না আবরারের কাঁধে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে রইলো, আবরার এক পলক আয়াতের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চুলে বিলি কেটে দিতে লাগলো,

” আম্মুওও ”

ছোট মেয়ে রুশার কন্ঠ শুনতে পেয়ে চোখ খুলে তাকালো আয়াত। রুশা এইবার অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী।

” ফ্রেস হয়েছো মা? ”

রুশা মুচকি হেসে এগিয়ে এসে পিছনে থেকে আবরার আর আয়াত কে জরিয়ে ধরে বলল,

” হ্যা মা মাত্র এসে ফ্রেস হয়ে খেয়ে তারপর এখানে আসলাম ”

” গুড গার্ল ”

রুশা ওর মা বাবা কে ছেড়ে সামনের চেয়ারে গিয়ে গালে বসল,

” মা জানো, রোদ আপু না এখনো বিয়ের জন্য রাজি হয় না, সাফাদ ভাইয়া আর কত ওয়েট করবে বলো? দিভাই কি বাংলাদেশ আসবে? ও তো কথায় ই বলে না ”

” রোদ টা যে কেন এমন পাগলামি করছে? ”

” মা দিভাই কি আর আসবে না? ”

” তোমার দি ভাই বাংলাদেশেই আছে”

আয়াতের কথা শুনে রুশা লাফ দিয়ে বসা থেকে উঠে দাড়ালো,

চোখ দুটো বড়ো বড়ো করে বলল,

” আর ইউ সিউর আম্মু? দিভাই দেশে? কিন্তু কোথায়? ”

আয়াত মুচকি হেসে চোখ থেকে চশমা টা খুলতে খুলতে বলল,

” সেটা তো আমি বলতে পারব না রুশা, তবে এটা বলতে পারি আর কারো সাথে দেখা না করলেও তোমার সাথে দেখা আরু করবে ”

আরুশা খুশি হয়ে বলল,

” তুমি সত্যি বলছো আম্মু? ”

আয়াত হেসে বলল,

” হুমম ”

আরুশা কথা টা চিন্তা করে রুম থেকে বের হয়ে যায়,

” তুমি ওকে মিথ্যা আশ্বাস দিলে কেন আয়ু? ”

আবরারের কথা শুনে আয়াত ঘাড় ঘুরিয়ে আবরারের দিকে তাকালো,

” তোমাকে কে বলল আমি মিথ্যা আশ্বাস দিচ্ছি? আমার মেয়ে ও দশ মাস পেটে ধরেছি আমি তার প্রতিটি লোম কুপ সম্পর্কে অবগত,তাই নিশ্চিন্তে থাকো ও আরুশার সাথে দেখা করবে”

____________________

রাত তখন ১০ টা, আরুহী রাতের খাবার শেষ করে বিছানায় এসে বসলো, হাতে মোবাইল, মিনিট পাচেক আগে সুলতান রুশার সকল ডিটেইলস আরুহীক মেইল করে দিয়েছে।

আপাতত আরুহী রুশার নাম্বার হাতে নিয়ে বসে আছে, ফোন করবে কি করবে না সেই দ্বিধা ধন্দের মধ্যে বিরাজ করছে,

আদরের ছোট বোন তার আরুহী থেকে রুশা ৫ বছরের ছোট,

আরুহী আর কিছু না ভেবে ফোন করে রুশা কে,

রুশা মাত্র ঘুমানোর জন্য মাত্র ই বিছানায় শুয়েছে, হঠাৎ ফোনের শব্দে ফোনটা হাতে নিলো সে,

আননোন নাম্বার দেখে খানিকটা ভ্রু কুচকালো সে,

” হ্যালো”

” হ্যালো রুশো!”

রুশা থমকে গেলো! এত বছর পর তার দিভাই এর কন্ঠ চিনতে মোটেও অসুবিধা হলো না তার,গলার স্বর যেন আটকে আসছে, কাপা কাপা কন্ঠে বলল,

” দদদিভভাইই?”

চলবে…

[ কালকের পর্বে সবার পরিচয় টা ক্লিয়ার করে দেবো ইন শা আল্লাহ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here