#মায়াবিনী_(২)
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_৩৬
_____________
দিনের প্রথম ভাগের সূর্যের মিষ্টি আলো চোখে মুখে পড়তেই চোখ জোড়া কুঁচকে এলো আরুহীর মনে মনে খুব বিরক্ত ভঙ্গিতে কম্বলের ভাজঁ টা টেনে আরো উপরে তুলতে গিয়েই খেয়াল হলো সে তার হাত নাড়াতে পারছে না কোন একটা শক্ত বাঁধনে আটকা পড়ে আছে তার সমস্ত শরীর। কানের কাছে একই সুরে কেউ “লাব” ” ডাব” শব্দ করে ই যাচ্ছে বিরতিহীন ভাবে।
পিটপিট করে চোখের পাতা খুলে তাকালো আরুহী চোখের সামনে সামনে কারো উন্মুক্ত বক্ষ দেখতে পেয়ে বেশ অনেক খানি চমকে উঠে সে। ধীরে ধীরে রাতের কাহিনি মনে পড়তেই চোখ জোড়া বন্ধ করে আরুহী।
কাল রাতে তো ব*দ*মাইশ টা ডিভান ভিজিয়ে দিয়ে তারপর ক্ষান্ত হলো। ডিভান টা পুরোপুরি ভিজিয়ে দিয়ে আরামসে বিছানার উপর হেলান দিয়ে আধশোয়া অবস্থায় বসলো, আর বউ বউ করতে করতে মাথা হ্যাং করে দিয়েছিলো কথা গুলো মনে পড়তেই মুচকি হাসলো আরুহী।
সারাটা সময় তেল মেরেই গেছে কিন্তু যখন বুঝলো কাজের কাজ কিচ্ছু ই হয় নি শেষ মেষ কোলে তুলে এক হাতে শক্ত করে জরিয়ে ধরে আরেক হাতে গায়ে কাথা টেনে গলা অব্দি টেনে নিলো দুজনের উপর। দু হাতে চেপে ধরে শুয়ে পড়লো, যত যাই হোক একজন পুরুষের শক্তির সাথে একজন নারী শক্তি কখনো পেরে উঠবে না যেমন টা কাল রাতে আরুহীও শত চেষ্টা করে ও আরুশের বাধন হতে মুক্ত হতে পারে নি। শেষে ক্লান্ত হয়ে আরুশের বুকেই মাথা দিয়ে ঘুমিয়েছে।
কথা গুলো ভেবেই আরুহী চোখ খুলে তাকালো, ঘুমটা পুরোপুরি ভেঙে গেছে।
দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সবে সকাল সাত টা।
বালিশের তলায় থেকে কাঁপুনি টের পেলো আরুহী, ফোন রা বায়োব্রেট মুডে বেজেই চলেছে। আরুহী এক হাত আরুশের শক্ত বাধন হতে মুক্ত করে হাত বাড়িয়ে বালিশের তলায় থেকে মোবাইল টা বের করলো।
স্ক্রিনে সুলতান ভাই নামটা দেখে খানিকটা অবাক হয়ে এক হাতে ফোন টা ধরে রিসিভ করে কানে ঠেকালো,
” শুভ সকাল আরুহী ”
” শুভ সকাল সুলতান ভাই। এতো সকালে ফোন করলে যে কোন সমস্যা হয়েছে? ”
” সবার জন্য এতো সকাল হলেও তোমার জন্য মোটেও এতো সকাল না, তুমি সচরাচর সাত টায় উঠো না, শরীর কি খারাপ তোমার? আগেই বলছিলাম ডক্টরের এপোয়েন্টম্যান্ট নাও তুমি তো আমার কোন কথাই শুনো না, আজ সত্যি ভাই ভাবলে কথা শুনতে! ”
আরুহী নিঃশব্দে হাসলো, আসলেই সুলতান তার জন্য চিন্তা করে একজন ভাই যেমন বোন কে আগলে আগলে রাখে তেমন ভাবেই সুলতান আরুহীকে ট্রিট করে।
” আহা সুলতান ভাই এতো বেশি কেন ভাবো বলো তো! আমার কিচ্ছু হয় নি বাবা, আমি ঠিক আছি, আসলে কাল রাতে দেরি করে ঘুমিয়েছিলাম তাই দেরি হয়েছে আর আমি ডক্টর এর এপোয়েন্টম্যান্ট নিবো তো এতো উতলা হইও না তো ”
” হুমম ঠিক আছে, আর শোনো আজ কিন্তু হেড অফিস এ যাওয়ার কথা ছিলো, ন’টায় গিয়ে দেখা করে এসো কেমন! আর আরুহী.. ”
” হুম বলো”
সুলতান হালকা হেসে বলল,
” তোমার মেহমান কে তো ভালোই মেহমানদারি করা হ’য়েছে তুমিও এসে আরোও ভালো ভাবে করতে! ”
আরুহী রহস্যময় বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বলল,
” আজকে একটু বেশি যত্ন করতে বলো সুলতান ভাই, কারণ কুরবানির আগে গরুকে বেশি খাওয়াতে হয় ”
” তা কখন আসবে তুমি? ”
” রাতে ”
বলেই আরুহী ফোন কেটে দিলো। ফোন টা কেটে মুখ তুলে উপরে তাকালো আরুহী, সকালের মিষ্টি আলো তে লোকটার চেহারাটা কেমন আদুরে আদুরে লাগছে, খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি আর বেশি ঘুমানোর ফলে ফর্সা গাল ঠোঁট নাক সব ফুলে ফুলে আছে। চুল গুলো জেল না থাকার দরুন এলোমেলো হয়ে কপালে পড়ে আছে। কেমন যেন বাচ্চা বাচ্চা লাগছে দেখতে।
আরুহী চুলে হাত দিতে গিয়েও থেমে গেলো, আরুশ কে ঠেলে উঠতে গেলে আরুশ ঘুমের মাঝে ই আরোও জোরে চেপে ধরলো। আরুহী ভ্রু কুঁচকে তাকালো আরুশের দিকে। ঘুমের মাঝে ও কপাল কুঁচকে রেখেছে লোকটা।
আরুহী আরেকটু নড়াচড়া করতে ই আরুশ ঘুমু ঘুমু কন্ঠে বলল,
” আরু প্লিজ নড়িস না, ঘুমুতে দে, তোর যন্ত্রণায় বহুদিন ঘুমাতে পারি না”
আরুহী বিরক্ত কন্ঠে বলল,
” আমাকে ছাড়ো আরুশ ভাই, আমার কাজ আছে, উঠতে হবে, তুমি ঘুমিয়ে থাকো না! তোমাকে তো আমি উঠাচ্ছি না ”
আরুশ আরেক টু শক্ত করে ধরে বলল,
” আমি ঘুমাচ্ছি মানে তুই ও আমার সাথে ঘুমাবি আরু, আর কোন কথা শুনব না ”
আরুহী বেশ অনেক টায় বিরক্ত হলো, একদিকে তার শত রাজ্যের কাজ এসে জমা হয়েছে আর এদিকে মহাশয় শোয়া থেকে উঠতে ই দিচ্ছে না ।
আরুহী দাঁতে দাঁত চেপে আরুশের কাছ থেকে নিজেকে মুক্ত করতে করতে বলল,
” আরুশ ভাই তুমি কি আমাকে ছাড়বে নাকি এক লা*ত্থি দিয়ে বিছানা থেকে ফেলে দিবো? তুমি তো জানোই ছোট বেলা থেকে ই আমি লা*ত্থা*লা*ত্থি তে বেশ পটু ”
আরুশ তৎক্ষনাৎ চোখ মেলে তাকালো, চোখ দুটো বড়ো বড়ো করে বলল,
” ছিইই আরু তুই তো কবিরা গুনাহ করতেছিস, তাড়াতাড়ি আল্লাহর কাছে মাফ চায় ”
আরুহী চোখ দুটো ছোট ছোট করে বলল,
” আমি কবিরা গুনাহ করতেছি! ”
আরুশ ঘুমু ঘুমু চোখ নিয়ে উঠে বসলো,
” ফাস্ট অব অল তুই জামাই কে সেই কখন থেকে ভাই ভাই ডাকতেছিস তার ওপর আবার জামাইকে লা*ত্থানোর ও হুমকি দিতেছিস, এটা কি কবিরা গুনাহর মধ্যে পড়ে না! ”
আরুহী নিজের ঠোঁটের উপর চিমটি কাটতে কাটতে ভাবুক ভঙ্গিতে বলে উঠলো,
” তা এই কথা টা কোন হাদিসে লেখা আছে শুনি! যে জামাইকে ভাই বলা যাবে না”
আরুশ থতমত খেয়ে বলল,
” আবব আপাতত হাদিস টার নাম পড়তেছে না, তবে তুই আমাকে আর ভাই ডাকবি না, পরে দেখা যাবে আমার বাচ্চা কাচ্চা আমাকে বাবা না ডেকে মামা ডাকতেছে ”
আরুহী বিরক্তিকর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বিছানা ছেড়ে উঠে ওয়াসরুমে যেতে যেতে ঠান্ডা গলায় বলল,
” তোমার হাদিস নিয়ে তুমিই বসে থাকো, আর হাদিসের নামে আজাইরা কথা বলবা তো খবর আছে, ভালো কিছু জেনে তারপর বলবা বানোয়াট কথা বললে কিন্তু আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না বলে দিলাম, জানতে হলে অনেক বিখ্যাত বিখ্যাত হাদিস বই আছে তা পড়ো এবং জানো ”
বলেই আরুহী ওয়াস রুমে ঢুকে গেলো, বিছানায় বসে আরুশ আরুহীর ঠান্ডা গলার ধমক ঠান্ডা মাথায় খালি পেটে হজম করলো।
________________
সকালের নাশতা শেষ করে আরুহী রুমে এসে রেডি হতে হতে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালো, ঘড়ির বাধ্য কাটা গুলো টিকটিক করে জানান দিচ্ছে এখন আট টা বেজে ত্রিশ মিনিট।
” বউ ”
দরজায় কারো কন্ঠ শুনতে পেয়ে আরুহী ঘাড় বাঁকিয়ে দরজার দিকে তাকালো, অ্যাস কালারের সর্ট স্লিভের একটা টি শার্ট পরিহিত যা একদম শরীরের সাথে আঁটসাঁট করে সেটে আছে, পেটের কাছে ছ টা ভাজ স্পষ্ট আর কালো রঙের টাওজার পরে হাত দুটো আড়াআড়ি ভাবে ভাজ করে বুকের মধ্যে বেঁধে দরজার সাথে হেলান দিয়ে আরুহীর দিকে ই তাকিয়ে আছে আরুশ। আরুশ সচরাচর এমন আটসাট ড্রেস পড়ে না।
আরুহী আরুশের দিকে তাকাতেই আরুশ আরুহী কে চোখ মেরে ভেতরে ভেতরে ঢুকে বিছানায় বসলো।
আরুহী সেদিকে এক পলক তাকিয়ে পুনরায় ব্ল্যাক শার্টের স্লিভ গুটাতে গুটাতে এক পলক আয়নার দিকে তাকালো। মুচকি হেসে বলল,
” এসব জোকার মার্কা কাজে আরুহী চৌধুরী ইমপ্রেস হবে না ডক্টর আরুশ খান, এসব পুরোনো ট্রেন্ড, নতুন আর ইউনিক কিছু ট্রাই করেন তাহলে যদি কিছু হয়!”
আরুহীর দেওয়া খোঁচা টা ঠিক ঠাক হজম করে বাঁকা হাসলো আরুশ। বিছানা ছেড়ে উঠে আরুহীর দিকে এগুতে এগুতে বলল,
” তাই নাকি বউ! আজকাল বেশ রোমান্টিক মুডে আছো দেখছি! আমি তো ভাবছিলাম দু এক বছর তো কমপক্ষে এখন দেখি তোমার ই এতো তাড়া! ”
আরুহী আয়না দিয়ে আরুশের দিকে তাকালো, ততক্ষণে আরুশ আরুহীর ঠিক পিছনে এসে দাড়ালো,
আরুহী ভ্রু কুঁচকে আরুশের ভাব ভঙ্গি বোঝার চেষ্টা করছে,
আরুশ দু হাতে আরুহীর কোমর চেপে ধরে কাঁধে থুতনি ঠেকালো,
” আরু দেখো তো কে বেশি ফর্সা আমি না তুমি? ”
আরুহী থতমত খেয়ে আরুশের দিকে তাকালো, এই মূহুর্তে এই প্রশ্ন টা মোটেও আশা করে নি সে। তবেএই বদমইশের ধারা সব সম্ভব।
আরুহী আয়নায় তাকিয়ে দেখে আরুশ মুচকি মুচকি হাসছে, আরুহী ভালোই বুঝতে পারছে আরুশ তাকে জ্বালানোর পায়তারা করছে বেশ ভালো রকমের…
চলবে…
[ আজকের পর্ব টা কেমন লাগলো গঠন গত মন্তব্য করবেন কিন্তু ]