দ্বিতীয়_ফাগুন #পর্বসংখ্যা_২৩ #লেখিকা_Esrat_Ety

0
394

#দ্বিতীয়_ফাগুন
#পর্বসংখ্যা_২৩
#লেখিকা_Esrat_Ety

রোদেলা দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ। মেহেরিন তাকে দেখে এগিয়ে যায়। তাশরিফ রোদেলার দিকে তাকিয়ে আছে।
“কি হয়েছে রোদেলা? জিএম স্যার কি বলেছে?”
রোদেলা চুপ করে আছে। তাশরিফ রেগে গিয়ে বলে,”কিছু জিজ্ঞেস করা হচ্ছে তো! আন্সার করুন।”

রোদেলা তার হাতের কার্ড টা মেহেরিনের দিকে তুলে ধরে অস্ফুট স্বরে বলে,”এখানে কাল বিকেল পাঁচটায় তার সাথে দেখা করতে হবে। তাহলে নাকি তিনি সমস্যার সমাধান করে দিবেন।”

তাশরিফের মাথায় রক্ত উঠে যায় কথাটি শুনে,হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁড়িয়ে রোদেলার দিকে তাকিয়ে আছে। মেহেরিন হতভম্ব হয়ে মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরে,বলে,”কি ভয়ংকর কথা! তাশরিফ দেখলে যা ভেবেছি তাই সত্যি হয়েছে। মাই গড। এখন তবে কি করবে রোদেলা? দেখা না করলে কি হবে? চাকরি যাবে বলেছে?”

_চাকরি যাবে। এবং অর্ধ কোটি টাকা জরিমানা দিতে হবে। নয়তো জেল হবে।

রোদেলার কথা শুনে মেহেরিন আরো একবার মুখে হাত দেয়। তাশরিফের দৃষ্টি রোদেলার চোখের দিকে। রোদেলা একটা চেয়ারে বসতে বসতে বলে,”আমাকে এক গ্লাস পানি দেবেন মেহেরিন আপা?”

মেহেরিন রোদেলাকে পানি দেয়। তাশরিফ তখনো চুপচাপ। তার ইচ্ছা করছে রাশেদুজ্জামানকে মারতে মারতে মেরেই ফেলতে। সে একটা গভীর নিঃশ্বাস নিয়ে নার্ভ ঠান্ডা করার চেষ্টা করে। তাকে অস্থির হলে চলবে না।
মেহেরিন বলে,”এখন কি করা যায় তাশরিফ? কোনো উপায়? এমডি স্যারের কাছে আমরা সবাই মিলে গেলে কেমন হয়? সে যদি কনসিডার করে। সে তো খুব ভালো মানুষ।”

_এটা করা যাবে না আপা। এক দুই টাকার ব্যাপার না এটা। অর্ধ কোটি টাকা! এমডি মানবে না। আর রাশেদুজ্জামান এমডি এবং চেয়ারম্যান স্যারের ফুফাতো ভাই হয় এটা ভুলে যাচ্ছেন কেনো? তার অনেক ক্ষমতা। এমডি আর চেয়ারম্যান স্যার তার সব কথা শোনে। রাশেদুজ্জামান বলে লোকটা যখন বলেছে সে একটা ব্যবস্থা করে দিতেও পারে তার মানে আমি নিশ্চিত ফাইলটা ওনার কাছেই আছে। এসব উনিই করেছে এবং এই সবটাই উনি সাজিয়েছে রোদেলা আমিনকে ফাঁদে ফেলতে।

_এখন তাহলে উপায়?
_সেটাই ভাবছি। ওনার সাথে সম্মুখ সমরে আমরা পারবো না। বুদ্ধি খাটিয়ে কিছু একটা করতে হবে।

রোদেলা ব্যাগ কাঁধে রেখে উঠে দাঁড়ায়,”আপনাকে কিছু করতে হবে না আমার জন্য। আমার টা আমি বুঝে নিবো।”

_কি করবেন? অর্ধ কোটি টাকা দিয়ে দেবেন। তাই তো? আছে অত টাকা?

_না,অত টাকা আমার নেই। তাই জেলে যাবো। ওটা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

তাশরিফ রেগেমেগে টেবিলে একটা চাপড় দিয়ে চেঁচিয়ে ওঠে,”এতো সহজ সবকিছু? আরে মাথা মোটা মেয়ে সবকিছু চুপচাপ মেনে কেনো নিতে হবে? ”

রোদেলা চুপ করে আছে। মেহেরিন বলে,”তুমি একটা উপায় বের করো তাশরিফ। যেকোনো হেল্প লাগলে আমি,খলিল স্যার,রিয়াজ, শারমিন আছি।”

তাশরিফ কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে রোদেলাকে বলে,”কাল আপনি জিএম স্যারের সাথে দেখা করতে যাবেন। ”

রোদেলা হতভম্ব হয়ে তাশরিফের দিকে তাকায়। মেহেরিনেরও একই অবস্থা।
রোদেলা রেগে গিয়ে বলে,”আপনার সাহস কি করে হয় আমাকে এটা বলার।”
তাশরিফ শান্ত ভাবে জবাব দেয়,”আপনি যাবেন। আর আপনার সাথে আমিও যাবো।”
_আপনিও যাবেন মানে?
_আপনার বডিগার্ড হয়ে। জিএম স্যার আপনার সাথে যাতে কোনো অশোভন আচরণ না করতে পারে।
_আমরা গিয়ে করবোটা কি?
_সেটা কালই আপনাকে বলব। ভয় নেই, আপনার কোনো ক্ষতি হতে দেবো না।
_আমি আপনাকে ভরসা করতে পারছি না।
_এছাড়া আপনার কোনো উপায় নেই। আর জেল খাটার চিন্তা বাদ দিন। ভুলে যাবেন না আপনার বাবাকে আপনার দেখতে হয়। এসব চিন্তা করা বোকামি। তাই যেমন যেমন আমি বলবো আপনি ঠিক তেমন তেমন কাজ করবেন।

রোদেলা চুপ করে থাকে। শেষমেশ কিনা এই লোকটার ভরসায় তাকে চলতে হবে! তাশরিফ বলে,”কান্নাকাটি না করে বাসায় গিয়ে একটু রিল্যাক্স হয়ে ঘুম দিন। কালকের টা কালকে দেখা যাবে। যান এখন। বাড়িতে এসব বলার দরকার নেই কারো সাথে। বৃষ্টি অসুস্থ, আপনার বাবা অসুস্থ,মেঘলা আপু নরম মনের মানুষ। সবাই বেহুদা টেনশন করবে।”

রোদেলা গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে কেবিনের দরজা খোলে। তারপর একবার তাশরিফ আর মেহরিনের দিকে চায়। মেহেরিন চোখ দিয়ে ইশারা করে আশ্বস্ত করে তাকে। রোদেলা বেড়িয়ে যায় কেবিন থেকে। মেহরিন মাথা ঘুরিয়ে তাশরিফের দিকে তাকিয়ে বলে,”কি ভেবেছো তাশরিফ? কি করবে?”
_সেটা কাল দেখবেন আপা। আপনাকে একটা কাজ করতে হবে। সাহস থাকলে বলেন।
_হুম, এনিথিং ফর রোদেলা। ওকে আমি ভীষণ পছন্দ করি,ভালোবাসি।
_আমিও।
_মানে?
_মানে কিছু না। মন দিয়ে শুনুন।

তাশরিফ এগিয়ে গিয়ে মেহেরিনকে অত্যন্ত নিচু স্বরে কিছু বলে। মেহরিন একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে বলে,”হুম। বুঝলাম। যদিও খুব রিস্কি। তবে পারবো। ওটাকে সামলে নেয়া কোনো ব্যাপারই না। তুমি যাস্ট একটা ফোন দিও।”

তাশরিফ মাথা নাড়ায়। মেহরিন কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। তাশরিফ নিজের চেয়ারে বসে গা এলিয়ে দেয়। চোখ দুটো বন্ধ করে রাখে। বিড়বিড় করে বলে,”আপনার জন্য এখন টুকটাক বাটপারীও করতে হবে আমাকে। কি দিন এলো পেঁচা মুখী আমার।”

***
চুলে হাত বুলিয়ে দিতেই রোদেলা চমকে ওঠে। মেঘলা বোনের মুখ দেখে বেশ চিন্তিত হয়ে পরে, উৎকণ্ঠা নিয়ে বলে,”কিরে? চোখ ফুলে কি হয়েছে! কেদেছিস নাকি!”

রোদেলা উপর হয়ে শুয়ে ছিলো। সে উঠে বসে,ধরা গলায় বলে,”কি যে বলো না আপু। আমি আবার কাঁদবো‌। কখনো দেখেছো আমাকে কাঁদতে?”
_না দেখিনি। তাইতো তোর মুখ দেখে চিন্তা হচ্ছে। কিছু না হলে এমন দেখাবে কেনো মুখটা?

রোদেলা বোনকে আশ্বস্ত করে বলে,”ছাড়ো তো। আন্দাজে কথা বলো না। তুমি এলে কখন? সুহা সিরাত এসেছে?”
_হু এসেছে। বাবা আর আন্টির সাথে গল্প করছে। তোর রুমে আসতে চায়না। তোকে ভয় পায়।
রোদেলা হাসে,”ভাইয়া কোথায়? বাড়িতে নেই বুঝি?”
_আজ সারাদিন নির্বাচনী প্রচারণায় ছিলো। দুপুরে খেতে পর্যন্ত আসেনি।

রোদেলা চুপ করে থাকে। মেঘলা বলে,”তোর ভাইয়াই আজকে তোর কাছে আমাকে পাঠিয়েছে।”

_কেনো? কোনো দরকার?

মেঘলা ইতস্তত করতে থাকে। তারপর বলে,তুই প্লিজ তোর ভাইয়ার ওপর রাগ করিস না।
_আরে বলো তো,এতো ভনিতা করছো কেনো।

_তোর ভাইয়া না তোকে জিজ্ঞেস না করেই তোর ছবি আর বায়োডাটা একটা ছেলেকে দিয়েছে। তার বন্ধুর ছোটো ভাই। পুলিশ ইন্সপেক্টর। ছেলে তোর ছবি দেখে পছন্দ করেছে। ছেলের বাড়ির সবাই পছন্দ করেছে।

রোদেলা শীতল চোখে মেঘলার দিকে তাকিয়ে আছে। মেঘলা কাঁচুমাচু মুখ করে বলে,”তুই প্লিজ রাগ করিস না তোর ভাইয়ার উপর। সে তো তোকে ছোটো বোন মনে করে,তাই একটু অধিকার খাটিয়ে ফেলেছে। তুই না চাইলে আমি নিষেধ করে দেবো। আর বাড়াবাড়ি করবে না ‌।”

_রাগ করি নি। আমাকে তিনদিন সময় দাও। আমার কিছু কাজ আছে। জানিয়ে দেবো ভাইয়াকে।
নিষ্প্রাণ গলায় জবাব দেয় রোদেলা। মেঘলা একটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। সে ভেবেছিলো রোদেলা প্রচন্ড রেগে যাবে। কিন্তু রোদেলা কিছুই করেনি!

***

অপলক দৃষ্টিতে তাশরিফ তাকিয়ে আছে। তার দিকে এগিয়ে আসছে রোদেলা। তার কাছে মনে হচ্ছে পুরো পৃথিবীটাই থেমে গিয়েছে। শুধু এখানে তার আর তার পেঁচা মুখীর অস্তিত্ব বিদ্যমান। রোদেলা তার একেবারে কাছে আসতেই তার ঘোর কেটে যায়। গলা খাঁকারি দিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে। তার অস্বস্তি যাতে রোদেলা আমিন বুঝতে না পারে তাই হাত ঘড়িতে সময় দেখার ভান করছে।
রোদেলা তার সামনে এসে দাঁড়ায়। তাশরিফ একটা শুকনো হাসি হেসে বলে,”ধন্যবাদ আমাকে ভরসা করার জন্য। ভেবেছি আসবেন না। স্বেচ্ছায় জেলে যাবেন।”

রোদেলা ঠান্ডা গলায় বলে,”বলুন এখন কি করতে হবে।”

কয়েক পলক রোদেলার দিকে তাকিয়ে থেকে তাশরিফ বলে,”বলছি। তার আগে বলুন তো আজ আপনাকে এতো সুন্দর লাগছে কেনো! জিএম স্যারের সাথে দেখা করবেন বলে সেজে এসেছেন নাকি!”
রোদেলা কথাটি শুনেই চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে, ঘুরে উল্টো পথে হাঁটা শুরু করে। তাশরিফ দৌড়ে গিয়ে রোদেলার সামনে দাঁড়ায়,”আরে আমি মজা করেছি। রাগবেন না,প্লিজ প্লিজ।”

তারা এখন দাঁড়িয়ে আছে একটি বিলাসবহুল হোটেলের সামনে।

রোদেলা বিরক্ত হয়ে যায়, কপাল কুঁচকে বলে,”এটা মজা করার সময়? আপনি জানেন আমার মনের উপর দিয়ে কি যাচ্ছে? আপনি সবকিছুতে মজা খুঁজতে থাকেন। এজন্যই আপনাকে আমার পছন্দ না।”

তাশরিফ কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে গম্ভীর হয়ে বলে,”দুঃখিত!”

_এখন বলুন,কি করতে হবে।

তাশরিফ রোদেলার কাছে এগিয়ে যায়। রোদেলা দুই পা পিছিয়ে গিয়ে বলে,”আপনি এভাবে কাছে আসছেন কেনো?”

_আরে ভয় পাবেন না। আমি যেটা বলবো তা যাতে অন্য কেউ শুনতে না পায়। ফিসফিসিয়ে বলতে হবে। চিন্তা নেই,আমি নিরাপদ দুরত্ব বজায় রাখবো।

রোদেলা দাঁড়িয়ে থাকে। তাশরিফ ধীরে ধীরে ফিসফিসিয়ে কিছু একটা রোদেলাকে বলতেই রোদেলা হা হয়ে তাশরিফের দিকে তাকায়,”এতে কাজ হবে? যদি বুঝে যায়?”

_ওই গাধাটা বুঝতে পারবে না। কারন ও আপনাকে দেখেই কুল পাবে না অন্যকিছু খেয়াল করবে কখন? আর ওর ধারণাই হবে না আপনি এমন কিছু করতে পারেন‌।

রোদেলা কিছুক্ষণ তাশরিফের দিকে তাকিয়ে থাকে, তারপর গম্ভীর হয়ে বলে,”এজন্যই ফিল্ম কম দেখা উচিত। স্যার এটা কোনো ফিল্ম না ঠিকাছে? এটা বাস্তবতা।”
_আই নো, কোনো ফিল্ম না। কিন্তু এছাড়া আর কিছু করার নেই। আপনিই ভেবে দেখুন। আর কি করবেন? আইন থেকে শুরু করে ক্ষমতা সব রাশেদুজ্জামানের। আপনি যদি একটাবার চেয়ারম্যান স্যারকে এটা দেখাতে পারেন তাহলেই হবে। বাকিটা চেয়ারম্যান স্যার বুঝে নেবে।
তারপর একটু থেমে আবার বলে,”ট্রাস্ট মি,যদি কাজটা নাও হয়। তবুও আমি আপনার কোনো ক্ষতি হতে দেবো না। আপনাকে পরের দিন নিরাপদে জেলে দিয়ে আসবো। কিন্তু একটা চেষ্টা তো করাই যায়!”

রোদেলা চুপ করে থাকে। তাশরিফ বলে,”জিএম কে ফোন দিন।”

রোদেলা আতংকিত মুখ নিয়ে তাকায়। তারপর জিএম এর নাম্বারে ফোন দেয়। দুইবার রিং বাজতেই ওপাশ থেকে রাশেদুজ্জামান ফোনটা রিসিভ করে খানিকটা জরানো কিন্তু আনন্দিত গলায় বলে,”হ্যা রোদেলা। তুমি এসে গিয়েছো?”

রোদেলা কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,”জ্বি স্যার।”

_গ্রেট। এক কাজ করো,তুমি রুম নাম্বার তিনশো তিনে চলে আসো।

রোদেলা কেঁপে ওঠে,”রুম কেনো স্যার?”
তাশরিফ শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আজ এই রাশেদুজ্জামানকে সে কি করবে নিজেও জানে না।

রাশেদুজ্জামান বলে,”আরে আগে এসে তো দেখো। সমস্যা নিয়ে আলাপ আলোচনা করার জন্য এটাই উপযুক্ত যায়গা।”

রোদেলা ফোন কেটে দিয়ে তাশরিফের দিকে চায়,”আমার প্রচন্ড ভয় হচ্ছে। জানোয়ার টার কথা শুনে মনে হচ্ছে মদ গিলেছে। খুব ভয় করছে।”

তাশরিফ বলে,”আসুন আমার পেছনে পেছনে। আগে মুখে মাস্ক পরে নিন।”
তাশরিফ সামনে সামনে হাঁটছে, রোদেলা তার পেছনে। আগুন নিয়ে খেলতে যাচ্ছে সে,একটু এদিক ওদিক হলেই সর্বনাশ হয়ে যাবে। এই তাশরিফ হাসান এতোটা আত্মবিশ্বাসের সাথে কি করে বলছে কিছু হবে না!

রুম নাম্বার তিনশো তিনের সামনে দাঁড়িয়ে রোদেলা তাশরিফ হাসানের দিকে তাকায়। অস্ফুট স্বরে বলে,”আমার ভয় হচ্ছে স্যার।”

_একটা টোকাও আপনার গায়ে আমি পরতে দেবো না। আপনি যান। মনে রাখবেন,আপনি শুধু নিজের জন্য যাচ্ছেন না। আরো অনেক মেয়েদের জন্য যাচ্ছেন যারা রাশেদুজ্জামানের ভবিষ্যৎ শিকার হতে পারে। বুঝেছেন?

রোদেলা মাথা নাড়ায়। তাশরিফ বলে,”আমি ঠিক বিশ মিনিটের পর ঢুকবো। তার আগে আপনি যা করার করবেন।‌ আপনার হাতে সময় বিশ মিনিট।”

রোদেলা একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে দরজার নব ঘোরায়। তারপর ভেতরে ঢোকে।
তাশরিফ মেহেরিনকে ফোন লাগায়। ফিসফিসিয়ে বলে,”কি অবস্থা ওদিকের?”
_চড়িয়ে , ধমকিয়ে চাবি নিয়েছি। সবাই খোঁজাখুঁজি করছি।

_ঠিকাছে।
তাশরিফ ফোন কেটে দেয়। তার হৃদপিন্ড সমান তালে লাফাচ্ছে। ভেতরে পেঁচা মুখী নার্ভাস হয়ে যায়নি তো!

রাশেদুজ্জামান একটা ডিভানে গা এলিয়ে দিয়ে পায়ের ওপর পা তুলে বসে আছে। তার হাতে একটা গ্লাসে পানীয় ধরনের কিছু। রোদেলাকে দেখতে পেয়ে একটা প্রশস্ত হাসি দিয়ে জরানো গলায় বলে,”এসো রোদেলা।”
তারপর একটা মুখোমুখি চেয়ার দেখিয়ে দিয়ে বলে,ওখানে বসো। কথা বলি।
রোদেলা ধীরে ধীরে এগিয়ে এসে চেয়ারটাতে বসে। রাশেদুজ্জামান চোখ বুলিয়ে রোদেলার পা থেকে মাথা পর্যন্ত দেখতে থাকে। তারপর তার দৃষ্টি এসে রোদেলার বুকের কাছে থামে। রোদেলা থমথমে মুখ নিয়ে বলে,”স্যার কেনো ডেকেছেন বলেন।”
রাশেদুজ্জামান হেসে ফেলে,”তুমি এতো ইনোসেন্ট রোদেলা জানতাম না। একটা লোক তোমাকে এরকম একটা পাঁচতারা হোটেলের রুমে ডাকবে,আর তুমি কারন বুঝতে পারছো না? ন্যাকামী হচ্ছে? এতোটা বোকা মেয়ে তো তুমি নও।”

রোদেলা রাশেদুজ্জামানের চোখে চোখ রাখে,তার ইচ্ছা করছে এক্ষুনি জানোয়ারটার জিভ টেনে ছিঁড়ে ফেলতে। কিন্তু তাকে শান্ত থাকতে হবে।
রোদেলা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে,”এসব আপনি করিয়েছেন না স্যার? ফাইলটা আপনি গায়েব করেছেন? আমাকে ফাঁসানোর জন্য?”

রাশেদুজ্জামান ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে। রোদেলা বলে,”ছিঃ আপনি কত জঘন্য একটা লোক। একটা বিকৃত মানুষ আপনি।”

রাশেদুজ্জামান নড়েচড়ে বসে, রোদেলার দিকে কিছুটা ঝুঁকে বলে,”আমার অন্যায় তোমার চোখে পরছে আর আমার ছটফটানি তোমার চোখে পরছে না তাই না? কতটা আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিলাম আমি তোমার সৌন্দর্যে। প্রথমে ভেবেছিলাম তোমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেবো। খুব ইমপ্রেসড হয়ে গিয়েছিলাম তোমার স্মার্টনেস দেখে জানো? হালাল করে তোমাকে পাওয়ার ইচ্ছে জন্মেছিলো। কিন্তু তুই তো একটা…..”
রাশেদুজ্জামানের কথা জরিয়ে যাচ্ছে। রোদেলা শান্ত হয়ে বসে থাকে। তারপর স্বাভাবিক গলায় বলে,”ফাইল টা কোথায় রেখেছেন স্যার ।”
রাশেদুজ্জামান হো হো করে হাসতে থাকে, তারপর হাসি থামিয়ে বলে,”বলবো। বলবার জন্যই তো এখানে তোমাকে ডেকেছে। কিন্তু তার আগে তোমাকে আমার ছোটোখাটো আবদার পূরণ করতে হবে যে। মনের মধ্যে আমি অনেক দিন ধরে একটা শখ পুষে রেখেছি। সেটাকে একটু পূরন করতে হবে।”

রোদেলা একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে,”তোর কোনো আবদার পূরণ হবে না জানোয়ার।”

_খবরদার তুই তুকারি করবে না রোদেলা। আমি আজ তোমার প্রতি নরম থাকতে চাই। ভালোবাসতে চাই তোমায়। আমার রাগ উঠিও না। আমার মাথায় জেদ চেপে গেলে কিন্তু!!
রোদেলার ঘেন্নায় গা গুলিয়ে আসে। সে মোবাইল টা হাতে নিয়ে কিছু একটা করতেই রাশেদুজ্জামান বলে,”এসো। আমার পাশে বসো। কিছুক্ষণ ভালোবাসার গল্প করি। তুমি তো ভীষণ ভালো গল্প জানো। আজ বরং আমি তোমাকে গল্প শোনাবো। এসো। জেদ করে না রোদেলা,এসো।”

রোদেলা ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। কাজটা ঠিকঠাক ভাবে করতে পেরেছে তো!

রাশেদুজ্জামান বলে,”ফাইলের কথা নিয়ে তোমায় চিন্তা করতে হবে না। আজ তুমি আমার কথা শুনবে,কাল থেকে দেখো এই রাশেদ তোমার জন্য কি কি করে রোদেলা আমিন! তোমার কোনো কিছুর অভাব রাখবো না। নেক্সট প্রমোশন টা তোমাকে পাইয়ে দেবো আমি।”
রোদেলা আবারো বলে,”ফাইলটা কোথায় আছে আপনি বলবেন না তাইনা?”
_আমার কথা না শুনলে বলবো না।

রোদেলা ফোনটা হাতে নিয়ে বলে,”আপনার আর বলতেও হবে না। যা বলেছেন তাই যথেষ্ট। বাকিটা এমডি স্যার নিজেই বের করে নেবেন।”
রাশেদুজ্জামান কপাল কুঁচকে বলে,”মানে?”
রোদেলা একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে ফোনটা উঁচু করে ধরে বলে,”এতোক্ষণ যা যা বলেছেন তা রেকর্ড করে এমডি স্যারের হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে পাঠিয়ে দিয়েছি শ্রদ্ধেও জিএম স্যার।”

রাশেদুজ্জামান তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে। রোদেলার দিকে তাকিয়ে বলে,”তোর সাহস দেখে আমি অবাক হচ্ছি। তুই ভাঙবি তবু মচকাবি না তাইনা? আমায় ধরিয়ে দিবি তুই? তোর মতো দুই টাকার মেয়ের কথা এমডি বিশ্বাস করবে? কিসের রেকর্ড করেছিস তুই হ্যা? ওসব বানোয়াট প্রমান করে দিতে আমার দুমিনিট সময় লাগবে না।”

রোদেলা বলে,”তোর মতো একটা পাগলা কুত্তাকে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে জুতাপেটা করা উচিৎ।”

আঠেরো মিনিট হয়ে গিয়েছে। তাশরিফের অস্থিরতা বেড়ে যাচ্ছে,তাশরিফ ঠিক করলো এখনি সে ঢুকবে। তখনি তাশরিফের ফোনে ফোন আসে মেহেরিনের। ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে মেহেরিন চেঁচিয়ে ওঠে,”তাশরিফ পেয়েছি। ফাইলটা পেয়ে গিয়েছি তাশরিফ। বদমাইশ টা আলমারিতে খুব যত্ন করে তুলে রেখেছে।”
_দ্যাটস গ্রেট।
_আরে দ্যাটস গ্রেট পরে বলো,আগে শোনো আমার কথা। এখানে কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে কেউটে বের করে ফেলেছি। ওই রাশেদুজ্জামান আজ পর্যন্ত কোম্পানির যত টাকা মেরে খেয়েছে তার তথ্য প্রমাণ আমাদের হাতে এসেছে। কত হিসেবের গড়মিল করে যে ও চেয়ারম্যান স্যারকে ঠকিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই।
তাশরিফ কথাটি শুনে যেনো হাতে আকাশের চাঁদ পেয়ে যায়। উত্তেজিত হয়ে মেহেরিনকে বলে,”খলিল স্যারকে দিয়ে এক্ষুনি এমডি স্যারকে ইনফর্ম করুন, এক্ষুনি। আমি রাখছি আমার দেড়ি হয়ে যাচ্ছে।”

রাশেদুজ্জামান রাগে কাঁপতে কাঁপতে বলে,”পাগলা কুত্তা আমি তাই না? আজ পাগলা কুত্তা তোর কি হাল করে তুই শুধু সেটা দেখবি। দে ফোন দে আগে আমার কাছে।”
রাশেদুজ্জামান রোদেলার ওপর এক প্রকার ঝাঁপিয়ে পরে রোদেলার ডান হাতের কব্জি শক্ত করে ধরে ফেলে। রোদেলা প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায়। মনে মনে তাশরিফকে ডাকতে থাকে,”আপনি কোথায়! আপনি আসছেন না কেনো!”

ঠিক তখনি,দরজা ঠেলে ভেতরে মাথা বাড়িয়ে উঁকি দেয় তাশরিফ। মুখ হাঁসি হাঁসি করে বলে,”এক্সকিউজ মি স্যার? মে আই কাম ইন?”

চলমান…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here