#দ্বিতীয়_ফাগুন
#পর্বসংখ্যা_১১
#লেখিকা_Esrat_Ety
সবাই রোদেলা এবং তাশরিফের দিকে তাকিয়ে আছে। রোদেলা তাশরিফের প্রশ্নের কোনো জবাব না দিয়ে আবারো প্রশ্ন করে,”এখানে কি করছেন আপনি?”
তাশরিফ থ হয়ে গিয়েছে। এটা কি কাকতালীয়? নাকি নাটকের কোনো স্ক্রিপ্ট ঢুকে গিয়েছে তার জীবনের গল্পে। প্রকৃতি কি কোনো না কোনোভাবে তাশরিফের সাথে রোদেলাকে জুড়ে দিতে চাইছে? নইলে আজ এভাবে রোদেলার মুখোমুখি কেনো হবে সে? রোদেলার পরিবর্তে যে কেউ থাকতে পারতো এখানে।
তাশরিফ নিজের হতভম্ব ভাব কাটিয়ে মিনমিন করে বলে,”আদিল আমার ছোটো ভাই।”
আদিলের পেছন থেকে রাফসান ফিসফিসিয়ে বলে,”এই দেখেছিস তোর ভাইয়াও রোদেলা আপুর সাথে মিনমিন করে কথা বলছে। সেও ভয় পেয়েছে এই মহিলাকে।”
রোদেলা তাশরিফের কথা শুনে একবার আদিলের দিকে তাকায়। চেহারায় বেশ মিল দুজনের। এজন্যই আদিলকে দেখে প্রথম তার খুব চেনা চেনা লেগেছিলো। কয়েক পলক দুই ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে চোখ মুখ কঠিন করে ফেলে সে।
কন্ঠে ক্ষোভ নিয়ে বলে,”আপনার এই অসভ্য ভাই আমার বোনকে ফুঁসলিয়ে বিয়ে করেছে। একে আমি পুলিশে দেবো।”
তারপর বৃষ্টির কাছে গিয়ে আদিলের থেকে বৃষ্টির হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,”চল আমার সাথে। বাসায় যাবি।”
বৃষ্টি নিজের যায়গা থেকে একটুও সরেনি। রোদেলা মাথা ঘুরিয়ে তাকায়। বৃষ্টি কাতর কন্ঠে বলে,”আপু ওকে খুব ভালোবাসি।”
রুহুল আমিন পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেঘলা চেঁচিয়ে ওঠে,”তুই এভাবে বাবাকে,আমাদের না জানিয়ে এতো বড় কাজটা করতে পারলি! এভাবে আমাদের কষ্ট দিলি!”
বৃষ্টি কাঁদতে কাঁদতে বলে,”তোমরাই তো আমাকে ভুল বুঝেছিলে, তোমরাই তো বলেছিলে ও নাকি আমাকে কখনো বিয়ে করবে না,তাই তোমাদের দেখানোর জন্যই বিয়ে করেছি।”
রোদেলা পুনরায় স্বশব্দে বৃষ্টির গালে একটা চড় মেরে দেয়। তাশরিফ চমকে ওঠে। এ কোন ভয়ংকরীকে সে পছন্দ করেছে!
আদিল গিয়ে এইবার রোদেলার সামনে দাঁড়ায়। গম্ভীর হয়ে বলে,”অনেক হয়েছে। আপনি আমার বৌকে এভাবে মারতে পারেন না।”
রোদেলা ঠাস করে আদিলের গালেও একটা চড় বসিয়ে দেয়। গালে হাত দিয়ে হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে আদিল। তাশরিফ নিজের ভাইকে চড় খেতে দেখে কয়েক মুহূর্ত হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে তারপর আর চুপ থাকতে পারে না, রোদেলার দিকে এগিয়ে এসে বলে,”আমরা একটু বসে কথা বলি চলুন।”
রোদেলা তাশরিফের কথা গায়ে না মেখে বৃষ্টির হাত ধরে টানছে। বৃষ্টি একটুও নড়ছে না যায়গা থেকে। আদিল বৃষ্টিকে আগলে রেখেছে। রোদেলা আবারো গিয়ে আদিলকে আরেকটা চড় মারতে যাবে অমনি তাশরিফ রোদেলার হাত ধরে ফেলে,”আপনি এভাবে দুজন প্রাপ্তবয়স্ক ছেলে মেয়েকে মারধোর করতে পারেন না।”
রোদেলা তাশরিফের দিকে শীতল দৃষ্টি দিয়ে চায়। দাঁতে দাঁত চেপে বলতে থাকে,”আমার হাত ছেড়ে দিন নয়তো আপনাকেও চড় মারবো আমি।”
তাশরিফ সাথে সাথে রোদেলার হাত ছেড়ে দেয়। এই ভয়ংকরী তাকে চড় মেরে দিতেও পারে। বিয়ের আগে সে হবু বৌয়ের হাতে চড় খেতে ইচ্ছুক না।
রোদেলা মাথা ঘুরিয়ে বৃষ্টির দিকে তাকায়।
“তুই যাবি না?”
_আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে আপু।
দৃঢ় ভাবে বলে বৃষ্টি।
রোদেলা একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে,”ঠিক আছে। তুই থাক । আমিও দেখবো এই নেশা খোরের সাথে ঠিক কদিন সংসার করতে পারিস তুই।”
তাশরিফ গলার স্বর কিছুটা উঁচুতে তুলে বলে,”আমার ভাইকে আপনি নেশা খোর বলছেন কেনো? ওর মতো মেধাবী একটা ছেলেকে আপনি নেশা খোর বলছেন ! নেশা তো দূরে থাক, কখনো একটা সিগারেট খেয়ে দেখেনি আমার ভাই!”
আদিল লজ্জিত ভঙ্গিতে ভাইয়ের দিকে তাকায়। ভাইয়া একটু বাড়িয়ে বলে ফেললো, সে তো সিগারেট খায়। ভাইয়া আর সে একসাথে বসেই তো প্রায়ই সিগারেট খায়।
রুহুল আমিন নীরবতা ভেঙে রোদেলাকে ডেকে ওঠে,”রোদেলা। এতো চেঁচামেচি করিস না। লোকজন হাসছে। চল বাড়িতে চল।”
বৃষ্টি তার বাবার দিকে তাকায়। রোদেলা এসে রুহুল আমিনের হাত ধরে। রুহুল আমিন বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে,”ভালো থাকিস মা।”
বৃষ্টির চোখ দুটো ভিজে ওঠে। তার ইচ্ছা করছে ছুটে গিয়ে বাবার পায়ে পরে যেতে।
রোদেলা বৃষ্টির দিকে তাকায়। কয়েক পলক তাকিয়ে থেকে মেঘলাকে বলে,”আপু চলো। এখানে আমাদের থেকেও ওর অনেক আপনজন হয়েছে। আমাদের এখানে আর থাকার প্রয়োজন নেই।”
তাশরিফ রোদেলাকে আটকায়,”শুনুন। বাচ্চা মানুষ ওরা, ঝোঁকের মাথায় ভুল করেছে। তাই বলে আমাদের কি মুখ ফিরিয়ে থাকা উচিত বলুন? চলুন আমরা বসে কথা বলি।”
_আপনি অফিসে আমার বস হতে পারেন, এখানে না। তাই আমাকে কোনো জ্ঞান দিতে আসবেন না। আপনাদের বাড়ীর বৌ আপনারা নিয়ে যান।
তাশরিফ চুপ হয়ে যায়।
রোদেলা দ্রুত পায়ে হেঁটে বাইরে বের হয়। মেঘলা বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে থাকে। রুহুল আমিন মেঘলাকে বলে,”চল মেঘলা।”
***
সবাই বেরিয়ে গেলে কান্নায় ভেঙে পরে বৃষ্টি। আদিলের ইচ্ছে করছে বৃষ্টিকে একটু জরিয়ে ধরে শান্তনা দিতে কিন্তু ভাইয়া এখানে দাঁড়িয়ে আছে,ওর পক্ষে এই কাজ করা অসম্ভব। সে ভয়ে ভয়ে তাশরিফের দিকে তাকায়। তাশরিফ রাগী চোখে তাকিয়ে আছে তারই দিকে। আদিল তোতলাতে তোতলাতে বলে,”ভুল হয়ে গিয়েছে ভাইয়া। আর এমন ভুল হবে না।”
_যা করার তো করেই ফেলেছিস, এখন সামনে কি করবি সেটা চিন্তা কর। মাকে কিভাবে ম্যানেজ করবো সেটা ভেবেই আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।
কথাটি বলে তাশরিফ বৃষ্টির দিকে তাকায়। নরম গলায় বৃষ্টিকে বলে,”কান্নাকাটি করো না। নতুন বৌ এভাবে কাঁদলে ব্যাপারটা ভালো দেখায় না। নতুন বৌয়ের মুখে হাসি থাকবে। দুজনে ভালোবেসে বিয়ে করেছো।”
শাফিন এসে খুশি খুশি গলায় বলতে থাকে,”আমি তো রোদেলা আপুর কাঁচুমাচু মুখ টা দেখে খুব মজা পেয়েছি। বেচারী এতো হম্বিতম্বি করেও কিছু করতে পারলো না।”
তাশরিফ ওদের সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,”শেষমেশ কাঁঠাল টা তো আমার মাথায় ভেঙে দিলি সবাই। আমি মাকে কিভাবে ম্যানেজ করবো আল্লাহ জানেন।”
_যেভাবেই হোক ভাইয়া। আপনার কথা আন্টি শুনবে। বিড়ালের গলায় ঘন্টাটা আপনাকেই বাঁধতে হবে। আমরা আপনার পেছনে আছি।
কথাটি সুহানা বলতেই সুহানার দিকে তাকিয়ে তাশরিফ হাসে।
তারপর বলে,”চল এখন বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নেই। অনেক রাত হয়ে গিয়েছে। নতুন বৌ এভাবে কাজী অফিসে বসে বসে কাঁদছে,এটা তো মানা যায় না।”
তারপর আদিল আর বৃষ্টির সব বন্ধু বান্ধবদের উদ্দেশ্য করে বলে,”তোরা কি যেতে চাস আমাদের সাথে?”
_অবশ্যই ভাইয়া। এতদূর পর্যন্ত যখন ওদের পাশে থেকেছি তখন ওদের বাসরের খাট সাজিয়েই দিয়ে আসি চলুন।
দাঁত বের করে রাফসান বলে কথাটি, কাজী অফিসে চাপা হাসির রোল পরে যায়। আদিল চোখ গরম করে রাফসানের দিকে তাকায়।
_কেউ তো বোধ হয় কিছু খাসনি? আর বাড়ি গিয়ে আজ যে আমার মায়ের হাতের খাবার কপাল জুটবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। চল আগে খাওয়া দাওয়া সেরে নেই। অনেক সার্কাস দেখিয়েছিস কাজী অফিসে, এবার এখান থেকে বের হ।”
তাশরিফের কথায় সায় দিয়ে সবাই কাজী অফিস থেকে বের হয়। আদিল আর বৃষ্টি সবার পেছনে। বৃষ্টি তখনো কেঁদে যাচ্ছিলো। আদিল নরম গলায় বলে,”দেখলে তো,বলেছিলাম না আমার ভাইয়া খুবই ভালো। দেখবে মাকেও ম্যানেজ করে নিয়েছে। ভাইয়া খুবই ভালো মনের মানুষ। তোমার আপুর মতো নয়।”
বৃষ্টি রাগী চোখে আদিলের দিকে তাকায়। আদিল ভয় পেয়ে কাঁচুমাচু মুখ করে বলে,”সরি বৃষ্টি।”
***
“মেয়ে মানুষের মতো কেঁদো না তো বাবা, ওর জীবন ও বেছে নিয়েছে। ওর যা হবার হোক। তুমি কেঁদে কেঁদে অসুস্থ হয়ে যেও না প্লিজ।”
রোদেলা রুহুলের দিকে তাকিয়ে বিরক্ত ভাব নিয়ে কথাটা বলে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। রুহুল আমিন বাচ্চাদের মতো কাঁদছে। মেঘলা তার বাবাকে ধরে রেখেছে।
“বুকটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে রে রোদেলা। অবুঝ মেয়েটা নিজের কোন বিপদ ডেকে নিলো। আমার দমটা যে বেরিয়ে যাচ্ছে।”
রোদেলা বাবার কাঁধে মাথা রাখে। রুহুল আমিন বলতে থাকে,”ও সংসারের কি বোঝে! জেদের বশে এতো বড় একটা কান্ড করে ফেললো,এখন সারাজীবন ভুগতে না হয় মেয়েটার। ওকে ছাড়া আমি কিভাবে থাকবো রে রোদেলা।”
রুহুল আমিন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। তার দুই মেয়ে তাকে দুই পাশ থেকে ধরে রেখেছে। কান্নার গতি থামিয়ে বলে,”সবসময় মা বাবা দুজনের ভালোবাসা একসাথে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। এতো করেও মেয়েটার সাথে মানসিক দূরত্বটা কমিয়ে আনতে পারলাম না রে রোদেলা। তোরাই বল,তোদের আমি কখনো কোনো কিছুতে বাধা দিয়েছি? ও একবার ও ভাবলো না ওর জীবনে ওর বাবা আছে। কোনো কিছু না ভেবেই বিয়ের মতো একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো আমাকে না জানিয়ে। একবার ও ভাবলো না আমার কথা?”
রোদেলা রুহুল আমিনের কথার উত্তর না দিয়ে সিএনজির জানালায় দৃষ্টি রাখে। বড্ড ক্লান্ত দুটি চোখ শূন্যে দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে আছে। নাটকীয়তায় ভরা জীবনে নাটক যেন শেষ ই হচ্ছে না। একটার পর একটা মোড় নিচ্ছে সেই নাটকের।
***
“খাচ্ছো না কেনো বৃষ্টি? খাও”
আহ্লাদী গলায় বৃষ্টিকে খাবারটা খাওয়ার জন্য তাগাদা দেয় আদিল। বৃষ্টি মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে আছে। যেন আদিলের কথা সে শুনতে পায়নি।
তারা এসেছে একটি নামকরা রেস্তোরাঁয়। বৃষ্টি খাচ্ছে না দেখে আদিল নিজের খাওয়া বন্ধ করে দিয়ে বসে আছে।
তাশরিফ আদিলকে বলে ওঠে,”ওর মন খারাপ। ধীরে সুস্থে খাক। তুই তোর খাবার টা খা। এতক্ষণ তো দু’জন চড় খেয়ে খেয়ে পেট ভরেছিস।”
তাশরিফের কথায় বিব্রত হয়ে আদিল নিজের গালে হাত দেয়। সত্যিই খুব জোরে লেগেছে চড় টা,এখনো জ্বলছে গালটা। মনে মনে সে বদ দোয়া দিতে থাকে,ওই সিমেন্ট আপুর কপালে যেন খুব বাজে একটা লোক জুটে যায়। যে তাকে কথায় কথায় চড় মারবে।
সবাই চুপচাপ খাচ্ছে। তাশরিফ হঠাৎ করে বলে ওঠে,”এই রোদেলা আমিন মানে বৃষ্টির বড় বোন তোকে নেশা খোর টাইপ ছেলে বলছিলো কেনো বারবার? ব্যাপার কি?”
আদিল খাওয়া থামিয়ে ভাইয়ের দিকে চায়। কন্ঠে রাগ নিয়ে বলে,”অতি সন্দেহবাতিক মহিলা ভাইয়া। চুল টা একটু বড় রেখেছি আর অমনি আমি নেশা খোর হয়ে গেলাম।”
তাশরিফ উচ্চশব্দে হেসে ফেলে। আদিল বলে,”তুমি হাসছো ভাইয়া? জানো না কতটা ভয়ংকর এই মহিলা, একশো জন পুরুষ লোকের তেজ নিয়ে চলে।”
কথাটি বলেই আদিল বৃষ্টির দিকে তাকায়। বৃষ্টি কান্না থামিয়ে তার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে আছে। আদিল একটা ঢোক গিলে বলে,”না মানে, বলতে চেয়েছি অনেক সাহসী নারী ভাইয়া।”
তাশরিফ আনমনে হেসে ফেলে। শাফিন বলে ওঠে,”আচ্ছা ভাইয়া এই রোদেলা আপুকে আপনি কিভাবে চেনেন?”
_আমার কলিগ।
সবাই খানিকটা অবাক হয়ে যায়। তাশরিফ টিস্যু পেপার দিয়ে মুখ মুছে নিয়ে বলে,”এবার তাহলে ওঠা যাক! সামনে যে ভূমিকম্প হতে চলেছে তার জন্য সবাই মানসিক ভাবে প্রস্তুত হও। আর আদিল তুই শারীরিক মানসিক দুইভাবেই প্রস্তুত হ কারন মা তোকে কি করবে আমি জানি না। তবে চিন্তা করিস না, বৃষ্টির কোনো অসম্মান আমি হতে দেবো না। ওর দায়িত্ব আমি নিলাম। তুই শুধু মুখ বুজে মায়ের দুটো চড় থাপ্পড় সহ্য করে নিস।
***
খট করে দরজা খোলার আওয়াজ হতেই সবাই শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আদিলের বুক ধুকপুক করছে। তাশরিফ একপলক আদিলের দিকে তাকিয়ে মাথা ঘুরিয়ে নেয়। দরজা খুলে দেয় তাশরিফ আর আদিলের বাবা আফতাব হাসান। একটা লুঙ্গি এবং গেঞ্জি পরে দাঁড়িয়ে আছে সে। তার হাতে একটা সাইকোলজির বই। বইটা পড়তে পড়তেই এসে দরজা খুলেছে সে। ইদানিং ধরে হিউম্যান সাইকোলজি সম্পর্কিত বইয়ের প্রতি তার খুব আগ্রহ বেড়েছে। দরজার বাইরে এতো জনকে দেখে তাকে তেমন বিচলিত দেখালো না। গা ছাড়া ভাব নিয়ে বলে,”সিনেমা দেখতে গিয়েছিলি নাকি সবাই? আয় ভেতরে আয়।”
তাশরিফ মৃদু স্বরে বলে,”মা কোথায় বাবা?”
“এইতো আমি। কি হয়েছে?”
একটা তোয়ালে দিয়ে হাত মুছতে মুছতে তাহমিনা এসে দরজার কাছে দাড়ায়। আদিল সাথে সাথে তাশরিফের পেছনে গিয়ে লুকায়। তাহমিনা ভ্রু কুঁচকে সবাইকে দেখতে থাকে। সব কটা আদিলের বন্ধু, তাহমিনা চেনে ওদের। হঠাৎ বৃষ্টির দিকে তাকাতেই তার দৃষ্টি স্থির হয়ে যায়। শাড়ি পরা বৌ বৌ সাজে এই মেয়েটি কে!
সে তাশরিফের দিকে তাকিয়ে বলে,”ও কে তাশরিফ?”
তাশরিফ ইতস্তত করতে থাকে। তাহমিনা আতংকিত হয়ে বলে,”বলছিস না কেনো? মেয়েটি কে? ওকে তো আগে দেখিনি? আদিলের বন্ধু? তোর পরিচিত? ও এভাবে বৌ বৌ সেজে আছে কেনো? ”
তাশরিফ একটা গভীর নিঃশ্বাস নিয়ে নেয়। তারপর বলে,” বলছি। আগে ভেতরে আসতে দাও।”
তাহমিনা বৃষ্টির দিকে দৃষ্টি স্থির রেখেই দরজা থেকে সরে দাঁড়ায়। আফতাব হাসান হাত থেকে বইটা নামিয়ে একটা টেবিলের উপর রেখে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। তাশরিফ বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে,”এসো ভেতরে।”
বৃষ্টি তাশরিফের পিছু পিছু ভেতরে ঢোকে। তাদের পিছু পিছু ঢোকে আদিল এবং তার বন্ধুরা।
তাহমিনা দরজা লাগিয়ে দিয়ে তাশরিফের দিকে ঘুরে তাকায়,”এখন বল। এই মেয়ে কে?”
তাশরিফ গলা খাঁকারি দিয়ে ধীরে ধীরে বলে,”তোমার বৌমা!”
তাহমিনা আঁতকে উঠে দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে। তারপর চেঁচিয়ে বলে,
“বৌমা মানে? ফাজলামি করছিস? নাকি আমাকে বোকা বানাচ্ছিস? দেখ তাশরিফ এই ধরনের মজা আমি পছন্দ করি না তা তুই খুব ভালো করেই জানিস।”
_আমি সত্যিই বলছি। ও তোমার ছেলের বৌ।
তাহমিনা কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে,”এতো বার করে বলেছি তোর পছন্দ থাকলে বল আমাকে, তখন তো কিছু বলতি না আজ কোথা থেকে যাকে তাকে ধরে এনে ও তোমার বৌমা? মা বাবাকে না জানিয়ে বিয়েটা করতে হলো কেনো? জবাব দে আমাকে।”
চেঁচিয়ে ওঠে তাহমিনা । বৃষ্টি ভয়ে গুটিয়ে আছে।
তাশরিফ বিব্রত হয়ে পরে। তারপর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,”আমি বিয়ে করি নি মা।”
তাহমিনা রাগে কাঁপতে থাকে,”বিয়ে করিসনি তাহলে ওকে আমার বৌমা বলছিস কেনো?”
_মা ও তোমার ছোটো ছেলের বৌ। ওর নাম বৃষ্টি। আজ সন্ধ্যায় ওদের বিয়ে হয়েছে।
আদিল তাশরিফের পেছন থেকে কচ্ছপের মতো মাথা বের করে তাহমিনার দিকে তাকায়। তাহমিনা একবার তাশরিফ, একবার আদিল, একবার বৃষ্টির দিকে তাকায়। আফতাব হাসান হতভম্ব হয়ে তাশরিফের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
তাশরিফ এসে মায়ের হাত দুটো মুঠি করে ধরে ফেলে,”মা ওদের কিছু বলো না। ওরা দু’জন দু’জনকে খুব ভালোবাসে, প্লিজ মেনে নাও।”
তাহমিনা দুলছে। তার মাথা চক্কর দিয়ে উঠেছে। তাশরিফ আদিলকে চোখ দিয়ে ইশারা করে।
আদিল এসে তাহমিনার পায়ে পরে যায়,”মা প্লিজ তুমি আমাদের মেনে নাও। প্লিজ মা।”
তাহমিনা একবার আদিলের দিকে তাকায়। কয়েক মুহূর্ত পরে ধপ করে সে পরে যেতে নিলে তাশরিফ তার মাকে ধরে ফেলে।
চলমান…..