দ্বিতীয়_ফাগুন #পর্বসংখ্যা_১৪ #লেখিকা_Esrat_Ety

0
534

#দ্বিতীয়_ফাগুন
#পর্বসংখ্যা_১৪
#লেখিকা_Esrat_Ety

“রোদেলা আমিন আপনাকে তাশরিফ স্যার তার কেবিনে একবার যেতে বলেছেন।”

ডেস্কটপ থেকে চোখ সরিয়ে রোদেলা তাশরিফের নতুন পিএ তনির দিকে তাকায়। ভ্রু কুঁচকে বলে,”আমাকে?”
_জ্বী।
তনি চলে যায়। রোদেলা মনে মনে প্রচন্ড বিরক্ত হয়। আজ সে পাঁচদিনের ছুটি ক্যানসেল করে তিন দিনের দিনই অফিসে এসেছে। এখনি তাশরিফের সামনে যেতে তার একদমই ইচ্ছা করছে না। কিন্তু তাকে যেতে হবে। বস বলে কথা।

“আসবো স্যার।”
_আসুন।
রোদেলার দিকে না তাকিয়ে জবাব দেয় তাশরিফ।
_বসুন।
রোদেলা বসে। সরাসরি তাশরিফের চোখের দিকে তাকায়। তাশরিফ ঘামতে থাকে,মনে মনে বলে,”এভাবে তাকিয়ে থেকো না পেঁচা মুখী। তুমি এভাবে তাকালেই আমার হার্ট লাফালাফি শুরু করে দেয়।”

_বলুন স্যার কেনো ডেকেছেন।
তাশরিফ গলা খাঁকারি দেয়। মনে মনে দোয়া করতে থাকে রোদেলা যাতে ক্ষেপে না যায়। রোদেলা আবারো বলে,”কিসের জন্য ডেকেছেন স্যার !”

তাশরিফ একটা খাম তুলে রোদেলার দিকে এগিয়ে দেয়। রোদেলা খামটা দেখতে থাকে। তারপর হাত বাড়িয়ে নেয়। তাশরিফের দিকে তাকিয়ে বলে,”এটা কি স্যার?”

_নিমন্ত্রনপত্র । আমার ছোটোভাই নতুন বিয়ে করেছে বুঝলেন। ভালোবাসার বিয়ে। তাদের জন্য একটা ছোটোখাটো রিসিপশন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি আগামীকাল। ঘরোয়া ভাবে হবে । অফিসের সবাইকেই বলেছি। আপনাকেও দিলাম। পরিবার নিয়ে আসবেন। এলে খুশি হবো।

রোদেলা কয়েক মূহুর্ত তাকিয়ে থাকে খামটার দিকে। তাশরিফ তাকিয়ে থাকে রোদেলার দিকে তার থেকে উত্তরের অপেক্ষায়।

তারপর তাশরিফকে অবাক করে দিয়ে রোদেলা খামটা ছিঁড়ে ফেলে। তাশরিফ হতভম্ব হয়ে রোদেলার দিকে তাকিয়ে আছে। রোদেলা চুপচাপ খামটার অসংখ্য টুকরো করতে থাকে।

***
“তোমাকে তো ঠিক চিনলাম না মা।”
একজন ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা মহিলা মেঘলার দিকে তাকিয়ে আছে। মেঘলা মহিলাটিকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখে। বৃদ্ধা হলেও যথেষ্ট আধুনিক। একটা সাদা রঙের শাড়ি পরে আছে। চোখে সোনালী ফ্রেমের চশমা। মেঘলা অত্যন্ত নরম গলায় বলে,”আন্টি আমি আপনাদের পাঁচতলায় নতুন এসেছি।”

_ওও আচ্ছা আচ্ছা। এসো ভেতরে এসো।
ভদ্রমহিলা দরজা থেকে সরে দাঁড়ায়। মেঘলা ভেতরে ঢোকে। ভেতরের একটা রুম থেকে বাচ্চাদের চেঁচামেচির শব্দ আসছে।
ভদ্রমহিলা বলে,”বসো মা। চা দিতে বলছি।”

মেঘলা বলে,”না আন্টি তার দরকার নেই। আমি এসেছি ছাদের স্টোর রুমের চাবি আপনাকে দিতে। কেয়ারটেকার ভাইকে পেলাম না তাই।”

_হ্যা ও ছুটিতে গিয়েছে। তুমি বসো , আলাপ করি। যে মেয়েটি প্রথমদিন বাসা দেখতে এসেছিলো সে তোমার কে হয়?

_ছোটোবোন।

সেদিনের সেই বাচ্চা দুটি চিৎকার দিতে দিতে বসার ঘরের দিকে আসছে। ভদ্রমহিলা বলে,”আমার নাতী নাতনি। সিরাত আর সুহা,ওরা জমজ। ভারি দুষ্টু!”

মেঘলা হাসে। মেয়ে বাচ্চাটি ছেলেটাকে তাড়া করছে একটা কলম নিয়ে। চেঁচিয়ে বলতে থাকে,”তুই দাড়া। তোকে এক্ষুনি ফুটো করে দিচ্ছি।”
ছেলেটি দৌড়ে এসে তার দাদীর পেছনে লুকায়। তাদের দাদী সিরাতকে আগলে নিয়ে সুহাকে চোখ রাঙানি দেয়,”কি হচ্ছে দাদুমনি তুমি এভাবে ভাইকে তাড়া করছো কেনো?”

_দাদু ও আমার বার্বির হাত ভেঙেছে,ওকে আমি মারবো।

সুহা কলম দিয়ে সিরাতকে আক্রমণ করতে যায়। ভদ্রমহিলা বাচ্চা দুটোর সাথে পেরে ওঠে না। মেঘলা গিয়ে সুহাকে ধরে,আদুরে কন্ঠে বলে,”তুমি কলম টা আমায় দিয়ে দাও বাবু। তোমার ভাইয়ের চোখে লেগে যাবে।”

সুহা দেয়না। চোখ মুখ শক্ত করে মেঘলার দিকে তাকিয়ে থাকে। মেঘলা পুনরায় বলে কলমটা দিয়ে দিতে। সুহা মেঘলাকে হতভম্ব করে দিয়ে মেঘলার গায়ে থুতু মেরে কলমটা ছুড়ে ফেলে দৌড়ে ভেতরে যায়।

মেঘলা ভদ্রমহিলার দিকে তাকায়। ভদ্রমহিলা অপরাধী গলায় বলে,”কিছু মনে করো না মা, মা নেই তো তাই এমন হয়েছে দুটো বাচ্চা। এতদিন ওদের ফুপু ছিলো,তার কথা শুনতো দুজন‌ । একমাস হয় তার বিয়ে হয়েছে। এখন আর এদের আমি একা সামলে রাখতে পারি না। দিন দিন পাজি হচ্ছে।”

মেঘলা কাতর চোখে সিরাতের মুখের দিকে তাকায়। তারপর নরম গলায় বলে,”ওদের মা নেই মানে?”

_মারা গিয়েছে। ওদের তখন তিন বছর বয়স।

মেঘলার প্রচন্ড খারাপ লাগে কথাটি শুনে। ভদ্রমহিলা বলতে থাকে,”ওদের বাবা যতক্ষন বাড়িতে থাকে সে একটু সামলাতে পারে দুজনকে, ওদের বাবাও তো ব্যস্ত মানুষ ‌। খুব বেশি সময় দিতে পারে না ওদের।”

_কি করেন ওদের বাবা?
মেঘলা জানতে চায়।

_ওদের বাবা রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকে। সে অত্র এলাকার সুপরিচিত একজন জননেতা। সালমান সাদাফের নাম শোনোনি বুঝি?

মেঘলা অবাক হয়ে যায়। বিড়বিড় করে বলে,
_শুনেছি। কিন্তু আগে কখনো তাকে দেখিনি। গতকাল আমাদের ফ্ল্যাটে গিয়েছিলেন ফুল গাছ ভাঙার জন্য বাচ্চাদের হয়ে সরি বলতে। তখন বুঝতে পারিনি এই সালমান সাদাফই সেই সালমান সাদাফ।

***
লাঞ্চ শেষ করে মাত্রই রোদেলা নিজের ডেস্কে ফিরে গিয়ে বসে পরেছে। অমনি খবর আসলো রাশেদুজ্জামান তাকে ডেকে পাঠিয়েছে। রোদেলার ইচ্ছা করছে প্রচন্ড জোরে একটা চিৎকার দিয়ে রাশেদুজ্জামানকে কুৎসিত কিছু গালি শুনিয়ে দিতে। এটা এখন সে না পারলেও ভবিষ্যতে একদিন সে করবেই করবে। বিরক্ত মুখে জিএম রাশেদুজ্জামানের কেবিনের বাইরে গিয়ে দুমিনিট দাঁড়িয়ে থাকে। ভেতরে ঢুকতে তার মন সায় দিচ্ছে না। অফিসের সবাই এখন ক্যান্টিনে। এরকম নিরিবিলি পরিবেশে রোদেলার সাহস হচ্ছে না ভেতরে যেতে।

“কি? সব হাওয়া বেড়িয়ে গেলো তো?”

রোদেলা মাথা ঘুরিয়ে পেছনে তাকায়। তাশরিফ তার দিকে তাকিয়ে আছে। তারপর আবার বলে,”এখন কাঁচুমাচু মুখ করে কোথায় যাচ্ছেন? আপনার সেই তেজ কোথায়? খুব তো তেজ দেখিয়ে এটা করতে পারেন,সেটা করতে পারেন,একে কথা শোনাতে পারেন,তাকে কথা শোনাতে পারেন। এই জিএম এর বেলায় আপনার তেজ কোথায় যায়? সারাদিন বাঘিনী রুপ ধারণ করে থাকা রোদেলা আমিন জিএম স্যারের ডাক পরলেই নেংটি ইঁদুর হয়ে যায় কেনো? এখন তেজ দেখাতে পারেন না? তেজ দেখিয়ে এই বদমাশ জিএম কে এক্সপোজ করতে পারেন না? ”

রোদেলা কোনো কথা বলে না। তাশরিফের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। তাশরিফ রোদেলার দিকে এগিয়ে আসে। সে রোদেলার চোখে চোখ রেখে বলে,”আপনি একটা শিক্ষিতা আহাম্মক আপনি জানেন? কেউ বলেছে এর আগে আপনাকে?”
রোদেলা তাশরিফের কথা শুনে অবাক হয়ে যায়। তাশরিফ বলতে থাকে,”যান গিয়ে জিএম স্যারের কাছ থেকে ফাইলের স্তুপ নিয়ে আসুন। প্রতিবাদ তো করতে পারবেন না। শিক্ষিতা আহাম্মকদের সাথে এমনটাই হওয়া দরকার।”

কথাগুলো বলেই তাশরিফ চলে যায়। সকালে খাম ছিঁড়ে ফেলার ঘটনার পর থেকেই রোদেলার উপর প্রচন্ড রাগ হয়েছিল তার। এখন এসে দেখছে জিএম স্যার ডাকা মাত্রই সুড়সুড় করে তার আদেশ পালন করতে যাচ্ছে অমনি রোদেলাকে কথা শুনিয়ে দেবার জেদ চেপে যায় মাথায়।

রোদেলা আরো কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে একটা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে জিএম স্যারের কেবিনের দরজার নব ঘোরায়। রাশেদুজ্জামান বলে ওঠে,”কাম ইন।”

রোদেলা কেবিনে ঢোকে। জিএম স্যার খুশি খুশি গলায় বলে,”বসো রোদেলা।”

রোদেলা চোখ বড় বড় করে ফেলে।
আপনি থেকে তুমিতে নেমে গিয়েছে সম্বোধন ! অসভ্য ! বুড়ো বাঘডাশ একটা !
রোদেলা মনে মনে গালি দিতে থাকে জিএম কে।

চেয়ারে বসতে বসতে বলে,”বলুন স্যার কেনো ডেকেছেন?”

রাশেদুজ্জামান ফুরফুরে মেজাজে বলতে থাকে,”খুব লোনলি ফিল হচ্ছিলো। কথা বলার লোক খুঁজে পাচ্ছিলাম না। এই অফিসে তুমি ছাড়া আমার উপযুক্ত কাউকে পাইনা কথা বলার মতো। তাই ভাবলাম ডেকে একটু গল্প করি।”
রোদেলা চোখমুখ শক্ত করে ফেলে। জিএম বলতে থাকে,” কি বলো তো, আমার ওয়াইফের সাথে ডিভোর্সের মামলাটা অনেকদিন ধরে কোর্টে ঝুলছিলো, শেষমেশ ডিভোর্সটা ফাইনাল হয়েছে।”

রোদেলা চোখ মুখ স্বাভাবিক রেখে বলে,”এসব আমাকে কেনো বলছেন স্যার।”

রাশেদুজ্জামান হাসে, তারপর বলে,”এমনি। তোমাকে বোঝাতে চাইছি আমি খুব লোনলি। কথা বলার মানুষ নেই। গল্প করার মানুষ নেই। ”

_গল্প শুনতে চান স্যার?
রোদেলা রাশেদুজ্জামানের দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটি করে। রাশেদুজ্জামান উৎফুল্ল হয়ে ওঠে, গদগদ হয়ে বলে,”হ্যা অবশ্যই। তুমি বলবে আর আমি শুনবো না?”

রোদেলা একটা তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে। তারপর বলতে থাকে,”এক অফিসের বস সবসময় তার মহিলা এম্প্লয়িদের বিরক্ত করে বেরাতো। নিজের ভাল্লুকের মতো চেহারা নিয়ে সবসময় মহিলা এম্প্লয়িদের কফি নয়তোবা চাইনিজ খেতে যাওয়ার প্রস্তাব দিতো। কেউ তার প্রতি ইন্টারেস্ট না দেখালে তাকে বিভিন্নভাবে হেনস্থা করতো। একটা মেয়েকে এভাবে বিরক্ত করতে করতে তার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে ফেলেছিল ওই লোক। প্রথম প্রথম কেউ মেয়েটির পাশে ছিলো না, পরেরদিন একজন তার পক্ষ নিলো,তার পরেরদিন আরেকজন,তার পরেরদিন আরেকজন। এভাবে সবাই যখন ঐক্যবদ্ধ হলো,সবাই মিলে ঠিক করলো এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করা দরকার। তারপর একদিন অফিসের মধ্যে ফেলে ওই বসের পশ্চাৎদেশে দোররা মারা হলো।”

রাশেদুজ্জামান রোদেলার দিকে তাকিয়ে আছে। তার চোখে মুখে ক্রোধের আগুন। রোদেলা তা সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে মুচকি হেসে বলে,”আজ এই পর্যন্তই স্যার। অন্য কোনোদিন গল্পের বাকি অংশ শোনাবো না হয়। আমি উঠি?”

রোদেলা উঠে চলে যায়। রাশেদুজ্জামান রাগে কাঁপছে,বিরবির করে বলে,”তোকে তো আমার বিছানায় নিয়েই ছাড়বো।”

***
তাহমিনা ফ্রাইং প্যানে তেল ঢেলে আড়চোখে বৃষ্টির দিকে তাকায়। বৃষ্টি রান্নাঘরের দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে। আজ সে একটি লাল রঙের সালোয়ার কামিজ পরেছে। এইমাত্র গোসল সেরে এসেছে তাই চুল গুলো ভেজা।ওড়না দিয়ে মাথা ঢেকে রেখেছে। তাহমিনা মুগ্ধ হয়ে যায়, সত্যিই ভারি মিষ্টি দেখতে।
_কিছু বলবে?
_আপনাকে সাহায্য করবো মা?
_তোমাকে আদিল পাঠিয়েছে এখানে? এসব করে আমার মন জয় করার জন্য?

বৃষ্টি মাথা নাড়ায়। কেউ তাকে পাঠায়নি। তাহমিনা বলে,”যা করার মন থেকে করবে। মন না চাইলে করার প্রয়োজন নেই।”

বৃষ্টি এগিয়ে আসে।
“মাছ গুলো ভেজে দেবো আমি?”
_ইচ্ছে হলে ভাজো।
তাহমিনা সরে দাঁড়ায়। বৃষ্টি একটা হলুদ লবণ মাখা রূপচাঁদা মাছ তুলে নিয়ে তেলে ছেড়ে দিতেই তেল ছিটকে বৃষ্টির হাতে লাগে। “মা গো” বলে চেঁচিয়ে ওঠে সে। তাহমিনা চুলা বন্ধ করে বৃষ্টির হাত ধরে,”কই দেখি। কোথায় লেগেছে? এভাবে কেউ তেলে মাছ ছেড়ে দেয়? একটু হলেই তো মুখে ছিটকে পরতো সব তেল।”

বৃষ্টি দাঁড়িয়ে থাকে। ভীষণ জ্বলছে হাতটা, তাহমিনা দৌড়ে গিয়ে একটা মলম নিয়ে আসে, তারপর বৃষ্টির হাতে লাগিয়ে দেয়।

“আগে কখনো চুলার কাছে যাওনি বুঝি?”
বৃষ্টি মাথা নাড়ায়। তাহমিনা বলে,”ছেলে হোক বা মেয়ে সবাইকে এসব কাজ শেখানো উচিত। আমার তাশরিফ আদিল তো প্রায় সবকিছুই পারে, ওদেরকে শিখিয়েছি সব। কখন কোথায় ঠেকে যায় বলা তো যায় না।”

বৃষ্টি অস্ফুট স্বরে বলে,”আমিও শিখতে চাইতাম। আপুরা বকতো খুব। যেতেই দিতো না চুলার কাছে।”

_আর তোমার মা?
তাহমিনার প্রশ্নে বৃষ্টির চোখ মুখ ফ্যাকাশে হয়ে যায়। তাহমিনা সেটা লক্ষ্য করে।‌ আবারো প্রশ্ন করে,”তোমার মা ও বুঝি শেখাতে চাইতো না?”

_আমার মা ছিলো না শেখানোর জন্য।

তাহমিনা অবাক হয়,”ছিলো না মানে? তোমার মা নেই?”
_আমার বাবা মায়ের ডিভোর্স হয়েছে আমি যখন দুই বছর বয়সী তখন।

বৃষ্টি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তাহমিনা তাকিয়ে থাকে বৃষ্টির দিকে। শেষ পর্যন্ত একটা ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়া পরিবার থেকে বৌ নিয়ে এসেছে তার গুণধর ছেলে !

***
রাত প্রায় আটটা বাজতে চললো। এখনো রোদেলা ফেরেনি বাড়িতে। আজ সাপ্তাহিক বাজার করার কথা। তাই হয়তো দেড়ি হচ্ছে। রুহুল আমিন নিজের ঘরে শুয়ে আছে চুপচাপ। আয়েশা সিদ্দিকা রান্নাঘরে রুটি বানাচ্ছেন স্বামীর জন্য। মেঘলা কোমড়ে শাড়ির আঁচল গুঁজে বই গুলো গুছিয়ে রাখছে বইয়ের তাকে। কলিং বেলের শব্দ পেয়ে বসার ঘরের দিকে যায় মেঘলা। সম্ভবত রোদেলা এসেছে। দরজা খুলে দাড়িয়ে থাকে মেঘলা। দরজার বাইরে সালমান সাদাফ নামের ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে আছে। এক হাতে তিনি সুহাকে ধরে রেখেছে।
মেঘলা তাড়াহুড়ো করে কোমরে গুজে রাখা আঁচল উঠিয়ে ডান কাঁধে তুলে নেয়।

“আপনি বিকেলে আমাদের বাসায় গিয়েছিলেন,তখন সুহা নাকি আপনার সাথে অভদ্র আচরণ করেছে শুনলাম। সুহা এখন আপনাকে সরি বলবে।”

মেঘলা অবাক হয়ে যায়। এতটুকু একটা বাচ্চা সরির কি বোঝে! সে সালমান সাদাফের দিকে তাকিয়ে বলে,”ও তো বাচ্চা। বাচ্চারা একটু দুষ্টুমি করবেই! তাই বলে ওকে দিয়ে সরি বলাতে হবে !”

_বাচ্চাদের সবকিছু আমরা বাচ্চামি বলে এড়িয়ে গিয়ে ওদের আসলে ক্ষতি করি। এভাবে সব অন্যায় বাচ্চামি বলে এড়িয়ে যেতে নেই। আমি চাইনা আমার বাচ্চার কোনো আচরণে কেউ বিরক্ত হয়ে ওর প্রতি নেগেটিভ ধারনা রাখুক।
তারপর সুহার দিকে তাকিয়ে বলে,”সুহা সরি বলো আন্টিকে।”

সুহা কপাল কুঁচকে ফেলে। তারপর গম্ভীর গলায় বলে,”সরি।”

মেঘলা মুচকি হেসে সুহাকে টেনে নিজের কাছে নেয়। খুবই মিষ্টি দেখতে ভদ্রলোকের দুটো বাচ্চাই। গায়ের রঙ একেবারে বাবার মতো,কিন্তু খুব মায়া চেহারায়।
মেঘলা আদুরে গলায় বলে,”ইটস ওকে বাবু।”

সুহা মেঘলার থেকে হাত ছাড়িয়ে দৌড়ে সিঁড়ির কাছে যায়। সালমান সাদাফ নামের ভদ্রলোক মেঘলার দিকে তাকিয়ে বলে,”আসছি।”

***
“একটা ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়া পরিবার থেকে বৌ এনেছে তোর ভাই, বলেছে তোকে সে কথা?”

তাশরিফ ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে মায়ের দিকে তাকায়।
“মানে? কি বলছো বুঝতে পারছি না।”

_বৃষ্টির মা বাবার যে ছাড়াছাড়ি হয়েছে সেকথা জানিস তুই? তারা যে অন্যত্র বিয়ে করে সংসার করছে জানিস?

তাশরিফ কিছুটা অবাক হয়ে যায়। সে তো জানেনা এসবের কিছু,তার জানার কথাও না।
তাহমিনা বলতে থাকে,”শেষমেশ এমন পরিবার থেকে মেয়ে আনলো তোর ভাই। যার বাবা মা-ই ঠিকমতো সংসার করতে পারেনি সে মেয়ের স্বভাব চরিত্র কেমন হবে? ”
তাশরিফ ল্যাপটপ সরিয়ে মায়ের দিকে তাকায়,”মা এটা কোনো যুক্তি হতে পারে না। একজনের সাথে বনিবনা না হলে ডিভোর্স হতেই পারে। তাই বলে তাদের সন্তানদের এতো খাটো করে দেখবে?”

_বৃষ্টির বড়বোনেরও নাকি ডিভোর্স হয়ে গিয়েছে, এখন বল ,আমি কিভাবে দেখবো বিষয় টা?

_মা তোমাকে দেখতে হবে না এতো কিছু। ওরা ওদের মতো ভালো থাকলেই তো হলো তাইনা? আমাদের আসল প্রায়োরিটি হচ্ছে বৃষ্টি। ওর পরিবার দিয়ে কি করবো?

_পরিবার সন্তানদের চরিত্র গঠনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে,জানিস না? যাই হোক,যার বৌ সে বুঝে নেবে। শোন আমি এসেছি একটা কথা বলতে, তোদের অফিসের মেহেরিন বলে মেয়েটা ফোন দিয়েছিলো। তার একটা ননদ আছে,তার সাথে তোর বিয়ের কথা বলতে। ছবি পাঠিয়েছে আমাকে। মেয়েটি সুন্দরী। সম্মান তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। পরিবার খুবই ভালো। বাবা বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি করতেন। রিটায়ার্ড করেছেন। আমি ভাবছি তার সাথে তোর বিয়ের কথা আগাবো।

তাশরিফ দুমিনিট চুপ করে থাকে,”মা আমি তো বলেছি তোমাকে আমার একটু সময়…”

_সমস্যা কি তোর?
তাশরিফকে থামিয়ে দিয়ে চেঁচিয়ে বলে তাহমিনা।
_চাস কি তুই? আচ্ছা তোরা যে যার ইচ্ছা মতো চলবি? আমার কোনো কথা শুনবি না? একজন বড়ভাই বিয়ে করার আগে নিজে বিয়ে করে বসে আছে। ঘরে বড় ভাই অবিবাহিত আর সে সন্ধ্যে হতে না হতেই বাড়িতে এসে বৌকে নিয়ে ঘরের দরজা লাগিয়ে দিচ্ছে। আর তার বড় ভাইয়ের বিন্দুমাত্র লজ্জা হচ্ছে না সেসব দেখে। চিরকুমার থাকার পরিকল্পনা করেছিস নাকি তুই?

তাশরিফ হাসতে থাকে। তাহমিনা রাগী চোখে তাকিয়ে থাকে তার দিকে।

চলমান……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here