দ্বিতীয়_ফাগুন পর্ব:২ লেখিকা #Esrat_Ety

0
441

#দ্বিতীয়_ফাগুন
পর্ব:২
লেখিকা #Esrat_Ety

বইয়ের ভাঁজের মধ্যে মোবাইল লুকিয়ে রাখা। সেখান থেকে দুমিনিট পরপর মোবাইলটা বের করে মেসেজের রিপ্লাই দিতে হচ্ছে। অষ্টাদশীর চোখে মুখে চাপা আনন্দের ছটা। এই মুহূর্তে খুবই আবেগঘন কথাবার্তা চলছে অপরপ্রান্ত থেকে মেসেজ দিতে থাকা ব্যক্তির সাথে। বিকেলের দিকে প্রচন্ড মান অভিমান হয়েছিলো দুজনের মধ্যে। অষ্টাদশীর কোনো ছেলে বন্ধু থাকাটাকে মেনে নিতে নারাজ অপর পাশের ব্যক্তিটি। এই নিয়েই কথা কাটাকাটি হয় তাদের, তারপর বিচ্ছেদ। কাঁটায় কাঁটায় তিনঘন্টা পরে তাদের দুজনের শ্বাসনালী আটকে যাবার উপক্রম হয় সাময়িক বিচ্ছেদের যন্ত্রনায়। এখন চলছে অভিমান পরবর্তী আলাপ। যা প্রত্যেকবারই খুবই আবেগঘন হয়। এই সময়ে তারা আবার নতুন করে সারাজীবন একে অপরের পাশে থাকা,একে অপরের উপর বিশ্বাস এবং আস্থা রাখার প্রতিজ্ঞা করে। গত সাত মাসে কম করে হলেও সত্তর বার এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে।

কারো পায়ের শব্দ পেয়ে অষ্টাদশী তড়িঘড়ি করে ফোনটা বইয়ের মধ্যে রাখে। তারপর পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের পাতা উল্টিয়ে সূত্র আওরাতে থাকে।

“বৃষ্টি।”

রোদেলার ডাকে মাথা ঘুরিয়ে চায় সে। মুখ হাসিহাসি করে বলে,”
জ্বী আপু। বলো।”

“ফুচকা এনেছি। নে ধর।”

বৃষ্টি ফুচকার কথা শুনে চেয়ার থেকে প্রায় লাফিয়ে উঠে রোদেলার হাত থেকে প্যাকেট নিয়ে নেয়। আস্ত একটা ফুচকা মুখে দিয়ে চোখ বন্ধ করে আয়েশ করে চিবোতে থাকে। রোদেলা বোনকে দেখে হাসে। তারপর বলে,”এতো শুকিয়ে যাচ্ছিস কেনো তুই? খাস না ঠিক করে?”
বৃষ্টি ফুচকা মুখে নিয়েই জবাব দেয়,”খাই তো।”

রোদেলা উঠে বোনের ঘরটা একটু গুছিয়ে দেয়। বৃষ্টি সবকটা ফুচকা শেষ করে বলে,”কাল আমাকে একটু মায়ের কাছে দিয়ে আসবে আপু?”

রোদেলা মাথা ঘুরিয়ে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে,”হঠাৎ ওনার কাছে কেনো?”
_বা রে,আমার মায়ের কাছে আমি যাবো না? মা যেতে বলেছে।

_বলেছে যখন যা। তবে মাথায় রাখবি,উনি কিন্তু একজনের স্ত্রী,ওটা কিন্তু ওনার সংসার। ওনার দুটো ছেলে রয়েছে। এতো ঘনঘন যাওয়া কি ঠিক বৃষ্টি? তারা কিভাবে নেবে ব্যাপারটা?
_তারাও খুব ভালো আপু। সত্যি বলছি।

_হুম,তোর বয়ঃসন্ধি পেরিয়ে এখন ভালোঃসন্ধিকাল চলছে,যাকে দেখছিস তাকেই মনে হচ্ছে,কি ভালো! কি ভালো!
নিস্তেজ কন্ঠে বলে রোদেলা।

বৃষ্টি তার মেজো আপুর দিকে তাকায়। তারপর মৃদু স্বরে বলে,”আচ্ছা আপু তোমার কখনো মাকে দেখতে ইচ্ছে করে না?”

রোদেলা থমকে যায় বোনের কথায়। বিছানার বালিশ দুটো ঠিক স্থানে রাখতে রাখতে দৃঢ় কন্ঠে বলে,”না।”

রোদেলা ঘর থেকে বের হয় দরজা চাপিয়ে দিয়ে। বৃষ্টি সেদিকে তাকিয়ে থাকে। মেজো আপু কেমন অদ্ভুত, খুবই কঠিন মেজো আপুর মন। কিভাবে পারে মায়ের থেকে মুখ ঘুরিয়ে রাখতে সে? সত্যিই আপু একটা পাথর। নয়তো জাহিন ভাইয়ার সাথে তিনবছরের সম্পর্ক শেষ করে দিয়ে কিভাবে স্বাভাবিক থাকছে সে? অফিস যাচ্ছে, খাচ্ছে, ঘুমোচ্ছে। বৃষ্টির রিলেশনের বয়স সাত মাস মাত্র তার তো এখনি তার প্রেমিকের সাথে বিচ্ছেদের কথা কল্পনা করলে দমবন্ধ হয়ে যায়। হাত পা ঠান্ডা হয়ে মাথা ঘুরতে থাকে। মেজো আপু কিভাবে পারে থাকতে? বৃষ্টি কখনো মেজো আপুর মতো হতে পারবে না,হতে চায়ও না সে।

ক্যান্টিন পুরোই ফাঁকা। রোদেলা ফাইল গুলো দেখা শেষ করে মাত্র ক্যান্টিনে এলো। সব কর্মচারী যে যার লাঞ্চ করে নিজেদের ডেস্কে ফিরে এসেছে। হনহন করে ক্যান্টিনের দরজায় এসে দাঁড়ায় সে। হঠাৎ করেই তার মুখভঙ্গি বদলে যায়। এই মুহূর্তে ক্যান্টিনে ঢুকে কি করা উচিত ভাবতে থাকে সে। ক্যান্টিনে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আছে তাশরিফ হাসান বলে লোকটা।‌ ব্ল্যাক স্ট্রাইপের শার্ট আর ফর্মাল প্যান্ট পরে আছে। জানালার দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে কি যেনো করছে সে । রোদেলার গতকালকের ঘটনা মনে পরে যায়। কালকের জন্য একটু খারাপ লাগছে তার এই মুহুর্তে। লোকটা তো তার উপকারই করতে এসেছিলো । অফিসে যতদিন দেখেছে লোকটাকে যথেষ্ট অমায়িক মনে হয়েছে। তার সাথে রাগের মাথায় ওরকম ব্যবহার করা মোটেও উচিত হয়নি তার।‌ এখন কি রোদেলার তাকে সরি বলা উচিত? কিন্তু কিভাবে বলবে সে?

কারো পায়ের আওয়াজ পেয়ে তাশরিফ ঘুরে তাকাতেই একটা ধাক্কার মতো খায়। তার কাছে যে এগিয়ে আসছে তাকে কখনোই প্রত্যাশা করে নি সে। হকচকিয়ে উঠে হাতের আধ খাওয়া সিগারেটটা পায়ের নিচে ফেলে পিষে দেয়। এতক্ষণ সে এখানে দাঁড়িয়ে সিগারেটের ধোঁয়া উড়াচ্ছিলো। এভাবে রোদেলা এসে পরবে সে তার কল্পনাতেও ভাবে নি। হতভম্ব ভাব কাটিয়ে রোদেলার দিকে জিগ্যাসু দৃষ্টিতে তাকায়। এই বদমেজাজি মেয়েটা তার কাছে এসেছে কেনো আবার? কাল তাকে কথা শোনানো কি কম হয়ে গিয়েছিলো? আজ কি আবার কথা শোনাবে?
রোদেলা তাশরিফের চোখের দিকে সরাসরি তাকিয়ে আছে। তাশরিফ বেশ অবাক হয়,এই মেয়েটা যখন কারো সাথে কথা বলে সরাসরি তার চোখে চোখ রেখেই কথা বলে। একটুও মেয়েলি সংকোচ থাকে না চোখে মুখে। যেনো সে একজন প্রফেশনাল রিপোর্টার,তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটির ইন্টারভিউ নিচ্ছে।
তাশরিফ নিজের গলায় ঝোলানো অফিস আইডি কার্ডটা হাত দিয়ে ঠিক করে নেয়‌।
রোদেলা বলে,”আপনার সাথে আমার কথা ছিলো!”l

তাশরিফ খানিকটা অবাক হবার সুরে বলে,”আমাকে বলছেন?”
_এখানে আপনি আর টেবিল চেয়ার গুলো ছাড়া তো আর কেউ নেই।
তাশরিফ মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকে। খুবই জটিল ধরনের মেয়ে এটা। সহজে হজমযোগ্য নয়। মুখ খুললেই মনে হয় চাবুক মারছে। গলা খাঁকারি দিয়ে তাশরিফ বলে,” কি কথা?”
_কালকের জন্য আমি খুব দুঃখিত। আমি কাল খুবই ডিপ্রেশ্ড ছিলাম। তার উপরে অনেক কাজের চাপ। তাই হুট করে আপনার সাথে…….সরি কিছু মনে করবেন না।

কথাটি বলেই রোদেলা চলে যায়। তাশরিফ তার যাওয়া দেখতে থাকে,এই মেয়েটা সরি বলতে এসেছিলো তবে ! কিন্তু এটা কোনো সরি বলার ধরন হলো? মনে হচ্ছে একে কেউ মেরে ধরে সরি বলতে পাঠিয়েছিলো। অদ্ভুত মেয়ে মানুষ! সে বিড়বিড় করে বলে ওঠে,”আপনার সরির আমি কাঁথা পুড়ি।”

হাঁটুতে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে সে। দীর্ঘক্ষণ রোদেলা মেঘলাকে দেখে। রোদেলার উপস্থিতি টের পায়নি সে। বিছানায় মেঘলার পায়ের কাছে বসে সে মেঘলাকে ডাকে,”আপু।”

মেঘলা মাথা উঠিয়ে তাকায়। রোদেলা বোনের শুকনো মুখটার দিকে তাকাতেই তার বুকটা হুহু করে ওঠে। বোনদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরী মেঘলা। যেমন সুন্দর গাঁয়ের রং, তেমনি সুন্দর চুল। আজ সেই চাদপানা মুখটার কি হাল করেছে ওরা ! শুকিয়ে দাঁত বের হয়ে গেছে। চেহারায় কোনো লাবন্যতা নেই।

_তুমি এতো বিশ্রী দেখতে হয়ে গেছো আপু। তোমার দিকে তাকানোই যাচ্ছে না।
মেঘলা ম্লান হাসে।
_প্রেগ্ন্যান্সিতে মেয়েরা একটু এমন হয়। তুই যখন মা হবি তুইও টের পাবি।
_তোমারই এই হাল হয়েছে,আমাকে তো তখন পুরো ডাকিনীর মতো লাগবে।
মেঘলা শুকনো হাসি হাসে। রোদেলা পুনরায় জিজ্ঞেস করে,”ফোন দিয়েছিলো দুলাভাই?”
মাথা নাড়ায় মেঘলা। বলে,”যতক্ষন না তার মাকে ফোন দিয়ে ক্ষমা চাইছি ততক্ষণে দিবে না ফোন।”
_অসম্ভব। তুমি ওই মহিলার কাছে কোনো ক্ষমা চাইবে না। তোমাকে এই অবস্থায় একা বাড়িতে ফেলে রেখে মেয়ের কাছে যায় আবার নিজেই অভিযোগ তোলে তুমি কেনো তাকে ফোন দিয়ে বলে আসোনি। ভয়ংকর নাটকবাজ মহিলা।
মেঘলা কোনো কথা বলে না। রোদেলা কিছুক্ষণ পরে বলে ওঠে,”তোমার সাথেই এসব করে পার পেয়ে গেলো। আমি হলে ।”
দাঁত কিড়মিড় করে বলে কথাটি।

মেঘলা মৃদু স্বরে বলে,”তোকে নিয়ে তো আমার ভয়। তুই ঠিকঠাক মতো দুদিনও সংসার করতে পারবি না। তোর যা মেজাজ।”
_না করতে পারলে নাই। সংসার করাটা বাধ্যতামূলক নাকি?”
_নাহ।
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে মেঘলা। রোদেলা কাঁধে ব্যাগ উঠিয়ে উঠে দাঁড়ায়। বৃষ্টিকে নিয়ে বের হবে সে এখন। মেঘলা শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।

সংসার করাটা তো তার জন্যও বাধ্যতামূলক ছিলো না। যেকোনো সময় চাইলেই সবকিছু থেকে বেরিয়ে আসতে পারতো সে। কিন্তু সে তা করে নি। বরাবর একটা সংসারের যে খুব স্বাদ ছিলো তার। অতঃপর কাউকে ভালোবেসে, বিশ্বাস করে চূড়ান্ত ভাবে প্রতারিত হয়েছে সে।

রোদেলা যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই দরজা ঠেলে ভেতরে ঢোকে আয়েশা সিদ্দিকা। তার হাতে একটা পেয়ালা,তাতে কিছু ফল কেটে রাখা। আয়েশা সিদ্দিকাকে দেখতে পেয়ে মেঘলা অন্যদিকে ফিরে তাকিয়ে আছে। ভদ্রমহিলাকে কোনো এক অজানা কারনে মেঘলা কখনোই মেনে নিতে পারে নি। নিজের মায়ের প্রতি আজীবনের বিতৃষ্ণা থেকেই হয়তো অন্য কোনো নারীকে নিজের মা হিসেবে ভাবতে ইচ্ছে করেনি কখনোই। নিজের মা-ই যেখানে সন্তানদের ভুলে যেতে পারে সেখানে বাইরের একজন মহিলার থেকে অযাচিত ভালোবাসা কিভাবে হজম করবে সে। কিন্তু মেঘলা মনে প্রানে বিশ্বাস করে,সে একজন অনেক ভালো মা হবে। একজন অত্যন্ত ভালো মা।

বসার ঘরের চার দেয়াল বিভিন্ন পেইন্টিং দিয়ে সাজানো। রোদেলা মাথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে খুবই মনোযোগ দিয়ে দেখতে থাকে সেসব। বৃষ্টি খুবই উৎসাহী হয়ে রোদেলাকে বলতে থাকে,”এই বাড়িতে একটা বাথটাব আছে জানো আপু? খুব চমৎকার সেটি!”
রোদেলা কপাল কুঁচকে বৃষ্টির দিকে তাকায়। এমন সময় বসার ঘরে এসে দাঁড়ায় পঞ্চাশোর্ধ স্বাস্থ্যবান একজন পুরুষ। তার পরনে একটা সুতির সাদা পাঞ্জাবি। লোকটা চশমা পরে। ছোটোবেলায় যখন দেখেছিলো লোকটা অনেক কালো ছিলো। এখন এতো ফরসা হয়েছে কিভাবে বুঝতে পারছে না রোদেলা।
তাকে দেখে রোদেলা উঠে দাঁড়ায়। আচ্ছা এই লোকটাকে কি ডাকবে সে? লোকটা সম্পর্কে তার সৎ বাবা হয়। অবশ্য এছাড়াও আরো একটি সম্পর্ক রয়েছে তাদের। লোকটা তার মায়ের খালাতো ভাই। সেদিক থেকে লোকটা তার মামাও হয়। লোকটাকে রোদেলা কি ডাকবে এখন? বাবা নাকি মামা? তার চেয়ে লোকটাকে বামা ডাকলে কেমন হয়? বাবা+মামা=বামা।‌ মনে মনে যখন কথাগুলো ভাবছিলো রোদেলা তখন তার সামনে দাঁড়ানো রুবায়েত ফরাজী নামের ভদ্রলোকটি বলে ওঠে,”ভালো আছো রোদেলা মামনি?”

এই লোকটার মুখে অপ্রত্যাশিত ভাবে মামুনি ডাকটা রোদেলাকে কিঞ্চিৎ অপ্রস্তুত করে দিয়েছে। রোদেলা উত্তরে সালাম দিয়ে বলে,”জ্বি‌।”
লোকটা সালামের উত্তর দিয়ে বলে,”বসো তোমরা।”
রোদেলা বসে পরে। বৃষ্টি জিগ্যেস করে,”মা কোথায় আংকেল?”

রোদেলা দেখে বৃষ্টি খুবই সহজ ভাবে লোকটার সাথে কথা বলে। লোকটাও বৃষ্টির সাথে যথেষ্ট স্নেহমাখা কন্ঠে কথা বলছে। এতক্ষণ রোদেলা অযথাই বাবা মামা ডাকা নিয়ে দ্বন্দ্ব করছিলো মনে মনে। বৃষ্টির মতো আংকেল ডাকলেই তো হয়।

রোদেলা রুবায়েত ফরাজী কে বলে,”উনি কখন আসবে?”
রুবায়েত রোদেলার দিকে চায়। মেয়েটা নিজের মাকে মা সম্বোধন করে কথা বলে না। সে হাসিমুখে জবাব দেয়,”কে মলি? ও তো বাচ্চাদের কোচিং সেন্টার থেকে নিয়ে প্রায় এসেও গিয়েছে বাড়ির সামনে। তুমি বসো। এক্ষুনি এসে পরবে।”
রোদেলা উঠে দাঁড়ায়।
“আমি আসছি। আমার কাজ আছে।”
বলেই সে বৃষ্টির দিকে তাকায় তারপর বৃষ্টিকে বলে,”আমি ঠিক রাত আটটার সময়ে নিতে আসবো।‌”
বৃষ্টি মাথা নাড়ায়। এমন সময় বাইরে গাড়ির হর্ন বাজতে থাকে। রোদেলা দ্রুত পায়ে সদর দরজা থেকে বের হয়। বাড়ির বাইরে গাড়ি থেকে নামছে নাজমুন্নেছা মলি এবং তার দুই ছেলে রাকিন ও রাতুল। রাকিন দশ এবং রাতুল বারো বছর বয়সী।‌ মলিকে দেখতে পেয়ে রোদেলা মেইন গেইটের দিকে না গিয়ে বাড়ির পূর্ব দিকের পকেট গেইট থেকে বের হয়ে যায়। মলি সেদিকে তাকিয়ে থাকে। রাতুল এসে বলে,”মেয়েটা কে আম্মু?”
_তোমার আরেকটা আপু।
অস্ফুট স্বরে জবাব দেয় মলি।

আসরের আজানের সময় হয়ে গিয়েছে। নীলক্ষেতের বইয়ের দোকানের দোকানীরা নামাজের জন্য তৈরি হচ্ছে। দোকান কিছুক্ষণ বন্ধ থাকবে। রোদেলা অলস ভঙ্গিতে হাঁটতে থাকে। সে বই প্রেমী না, কোনো বই সে পড়েও না, নিজের জন্য কখনো কেনেও না। কখনো কখনো বৃষ্টিকে দুয়েকটা সাইন্স ফিকশন কিনে উপহার দিয়েছিলো,জাহিন কে প্রচুর বই গিফট করতো সে। জাহিন ছিলো প্রচন্ড রকমের বই প্রেমী একটা লোক। তার জন্য বই কিনতে এখানে সে প্রায়ই আসতো । এখন তো আর তার জন্য বই কেনা হয়না অথচ রোদেলা প্রায়ই এখানে আসে। এখানে আসতে তার ভালো লাগে।

ক্লান্ত পায়ে হাটছে সে। যেনো বাড়ি ফেরার কোনো তাড়া নেই তার।
“আম্মা একটু সাহায্য করেন আম্মা।”
রোদেলা থেমে যায়। দুজন ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ এবং বৃদ্ধা তার দিকে হাত বাড়িয়ে আছে। দুজনেই পঙ্গু।

বৃদ্ধ লোকটি আবারো আকুতির সুরে বলে,”আম্মা একটু সাহায্য করেন আম্মা। আপনের এই অসহায় বাপ মা দুইটারে একটু সাহায্য করেন।”

রোদেলা কয়েকমুহুর্ত তাদের দেখে,তারপর পার্স ব্যাগ খুলে একটা বিশ টাকার নোট বৃদ্ধটির দিকে এগিয়ে দিতে দিতে বিড়বিড় করে বলে , ” বাবা মা বলবেন না। আমার অলরেডি অনেক গুলো বাবা মা আছে চাচা। আর বাবা মায়ের দরকার নেই আমার।”

বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সেকথা শুনতে না পেলেও পাশ থেকে হেঁটে যাওয়া এক পথচারী শুনতে পায়। মাথা ঘুরিয়ে রোদেলার দিকে চায়। এই রূপবতী তরুণীর চোখে মুখে এতো কাঠিন্য কেনো! এর কি অনেক দুঃখ?

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here