ধূসর কাবিন রঙিন প্রণয়
পর্ব১৮
“চন্দ্র, তুমি কি আমার সাথে বাসায় যাবে? না এখানে থাকবে?”
“তোমার সাথে যাব। তোমাকে ছাড়া আমার একদম ভালো লাগে না।”
মিস্টার আবেদিন এগিয়ে আসেন।
“কিন্তু মামনী ডাক্তার কিছু টেস্ট দিয়েছেন তোমাকে। সেগুলো করে রিপোর্ট পেলে ডাক্তারকে দেখিয়ে গেলে ভালো। আমাদের বাসা থেকে হাসপাতাল কাছে। তোমার বারবার জার্নির ঝক্কিতে না পড়াই ভালো।”
“বাপি ঠিক বলছেন চন্দ্র। বারবার জার্নি না করাই ভালো।”
“তুমি চাও না আমি তোমার সাথে যাই?”
“অবশ্যই চাই। তুমি চাইলে আমি তোমাকে নিয়ে যাব। কিন্তু গাড়িতে লম্বা সময় থাকলে তোমারই শরীর খারাপ লাগে। ভেবে দেখ আজ দেড় ঘন্টা জার্নি করে যাবে, কাল আবার দেড় ঘন্টা জার্নি করে আসবে যাবে। তোমার শরীর খারাপ করবে।”
অনিচ্ছাসত্ত্বেও রাজি হয় চন্দ্রিমা। মাহিম গাড়িতে ওঠার আগে চন্দ্রিমা ওকে টেনে একপাশে নিয়ে যায়।
“মাহিম একটা প্রশ্ন ছিল।”
“চৈতালীকে নিয়ে?”
“আমাদের নিয়ে। আমাকে নিয়ে। যদি আমি চিকিৎসার পর একদম সুস্থ হয়ে যাই তাহলে আমি একাই কি তোমার জন্য যথেষ্ট নই?”
“অবশ্যই যথেষ্ট চন্দ্রিমা। অসুস্থ তুমিও আমার জন্য যথেষ্ট।”
“আমাদের বাচ্চা না হলেও সমস্যা তো নেই তাই না?”
“কোন সমস্যা নেই।”
“আম্মির যে নাতি নাতনির শখ।”
“আম্মির তো অনেককিছুরই শখ। আমি তুমি সেই শখ পূরণের হাতিয়ার নই। তুমি ভুলে গিয়েছ, এই কথা আমি সেদিনই বলেছিলাম। যেদিন..”
“যেদিন প্রথম গ্রহণ লেগেছিল আমার পূর্ণিমায়।”
“স্যরি, আমি কথা দিয়েছিলাম এই দিনটার কথা কখনও তুলবো না।”
“তুমি তোলোনি। আমিই তো তুললাম। মাহিম তাহলে চৈতালীর প্রয়োজন শুধু আমি সুস্থ হওয়ার জন্য। ওকে সারোগেট মা বানানোর কোন প্রয়োজন নেই। আমাদের জীবনে ওর কোন অংশই আর চাই না। আমি জানি তুমি নিজের মনের সাথে লড়াই করছো। কিন্তু যতদ্রুত সম্ভব অপারেশন শেষে আমি চৈতালীকে তোমার আমাদের জীবন থেকে সরিয়ে দিতে চাই।”
“আমিও তোমার সুস্থতা চাই। তাছাড়া আমি নিজের টেস্টও আবারও করাতে। যদি সম্ভব হয়, এবং সাকসেসের চান্স থাকে তবে আমিই তোমাকে আমার লিভার দেব।”
“এই বিষয়ে আমরা আগেই কথা বলেছি। সব শেষেই চৈতালীকে আমাদের জীবনে এনেছি। তোমার পাশে একটা মেয়ের ছায়াও যেখানে মানতে পারি না। সেখানে চৈতালীকে তোমার সাথে ভাগ করেছি। এখন তুমি আবার এসব কেন বলছো? চৈতালীই আমাদের ডোনার হবে। আমরা ইতোমধ্যে ওকে কাবিনের দশ লাখ দিয়েছি। তার বাবা মাকে জায়গা জমি দিয়েছি। ওর লিভারের মূল্য দিয়েই আমরা নিচ্ছি।”
“তাহলে ওকে জানিয়েই নেই। না জানিয়ে নিলে তা চুরিই হবে। এবং ও আদালতে পর্যন্ত যাওয়ার অধিকার রাখে। কারণ আমরা না বলে করে ওর শরীরের অংশ নিলে তা প্রতারণাই হয়।”
“ওকে তুমি চেননি? ও কখনোই রাজি হবে না।”
“আমার মনে হয় হবে। এর জন্য আমাকে ওর বিশ্বাস অর্জন করতে হবে।”
“বিশ্বাস অর্জন, না ভালোবাসা অর্জন? আমি যে ছিলাম না, তাতে কি তোমাদের মাঝে শারীরিক ঘনিষ্ঠতা হয়েছে?”
“চন্দ্রিমা, তুমি যদি আমার উপর বিশ্বাসই না রাখ তাহলে আর সবকিছুর কী কোন মানে আছে? প্রতারণা করতে হলে চৈতালীর সাথে করার প্রয়োজন আছে কি? চৈতালী বৈধ স্ত্রী। তার সাথে আমার কেন ধরনের সম্পর্ক প্রতারণা নয়। প্রতারণা করার জন্য আমার বিয়ে করার প্রয়োজন ছিল না। টাকার বিনিময়ে সুন্দরী, স্মার্ট গার্লফ্রেন্ড কাম রক্ষিতা রাখা আমার জন্য কোন বিষয়ই না। বারবার এই কথাগুলো তুলে তুমি যদি আমার ইগোকে হার্ট করো। তবে আমি ভুলে যাব তুমি অসুস্থ। আমার ইমোশনের সুযোগ নিয়ে আমাকে যথেষ্ট প্রেশার দিয়েছ। কিন্তু এসব বিষয়ে আর কোন ফালতু কথা বলবে না। চৈতালীকে এখানে আমি নিয়ে আসবো তখনই যখন ও সব জেনেশুনে স্বেচ্ছায় ডোনার হতে রাজি হবে। আর সারোগেসির বিষয়টা আমারও মত নেই এখন। এসব নিয়ে তোমারও এখন চিন্তা করে শরীর খারাপ করার মানে নেই।”
*****
“হ্যালো, চৈতালী। কেমন আছিস?”
“ভালো আছি। আপনারা ভালো আছেন?”
“আমাদের খোঁজ খবর একবারও নিছস তুই? মানুষ বিয়া হইলে এমনে পর হয়? তোর বাপে কী মনে কষ্টটা না পাইছে। কয় মাইয়ার জন্য কলিজা পোড়ে, আর মাইয়াটা একটু জিগায়ও না।”
“আমার জন্য এত কলিজা পুড়লে একটা ফোনও তো দিল না।”
“ফোন নষ্ট হয়ে গেছে তোর বাপের।”
“আপনার ফোন তো ভালো আছে। আপনিও অবশ্য ফোন দেন নাই।”
“তুই না দিবি।”
“কেন?”
“বাপ মায়ের খোঁজ নিবি না। তারা ভালো আছে না মন্দ।”
“ভালো না থাকার কারণ কি? কাঁচা টাকা হাতে।”
“টাকা আর কয়টা। তোর বাপের কাশি বাড়ছে। ডাক্তারের কাছে গেছিল। এই টেস্ট সেই টেস্ট।”
“বাংলা মদ কম খাইতে বলেন। এখন হাতে টাকা আছে জুয়ার নেশা যত বাড়বে মদের অভ্যাসও তত বাড়বে। মদ খেলে কাশি তো হবেই।”
“আমার কথা কী শুনে? আগে এমন ছিল না। মাঝেমধ্যে টুকটাক খেলতো।”
“আগে হাতে টাকা ছিল না। এখন আছে।
“কী করতাম বল? এই তোদের মুখের দিকে তাকায়ে থাইক্কা মাটি কামড় দিয়ে সংসার করছি।”
“আমি তো আর নাই। শাহিন, শফিক ছেলে মানুষ। ওরা নিজের ব্যবস্থা নিজে করবে। এখন আর মাটি কামড়ানোর কী দরকার।”
“নিজে তো বড়লোক সংসারে বিয়ে কইরা নিজের ব্যবস্থা কইরা নিয়েছিস। এখন এই বয়সে আমারে সংসার ভাঙার বুদ্ধি দেস? তোর বাপকে ছাইড়া দিলে আমারে জায়গা দিবে কে?”
“রেগে যান কেন। কথা শোনেন। যেহেতু আপনি আমাকে বড়লোক ঘরে বিয়ে দিয়ে এত বড় উপকার করেছেন। তাই আমিও আপনাকে একটা বুদ্ধি দিতে চাইছিলাম।”
“কী বুদ্ধি?”
“নানির বাড়ি যান। মামা তো মামলার মারপ্যাঁচ ভালো বুঝেন।”
“তুই কি নারী নির্যাতন মামলা দিতে কইতেছস?”
“আরে নাহ্। মামলা চালানোর টাকা আছে আপনার যে মামলা করবেন?
” তাইলে কী করবো?”
“কাগজ বানাবেন। বাড়ি আর পুকুরের কাগজ। আগে আসল দলিল সরাবেন। তারপর কাগজ বানাবেন মামাকে দিয়ে। আব্বা যেদিন জুয়া খেলে খুশি খুশি মনে বেশি গিলে আসবে সেদিন আস্তে করে কাগজে টিপসই নিয়ে নিবেন। সাইন নিতে পারলে ভালো। না পারলে টিপসই। না হলে এই জুয়ার নেশায় বাড়ি ঘর সব যাবে।”
শিউলি ফোন রেখে চিন্তায় পড়ে যায়। চৈতালীকে ফোন দিয়েছিলেন ইনিয়ে বিনিয়ে বাবার নামে নালিশ করে একটু মায়া জন্মাতে। তাহলে মাঝেমধ্যে বিকাশে কিছু টাকা নিতে পারতেন চৈতালীর কাছ থেকে। শফিক বলেছে চৈতালীর বেশভূষাই পাল্টে গিয়েছে। কলেজে এসেছে গাড়িতে করে। অনেক সম্ভ্রান্ত পরিবারের মানুষ মনে হচ্ছিল চৈতালীকে। নিশ্চয়ই বুঝেশুনেই বুদ্ধি দিচ্ছে।
(চলবে)