#মায়াবিনী_(২)
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_০৬
______________________________
” রৌদসী আপু একটা গুড নিউজ আছে! সেটা কি গেস করো তো দেখি, দেখি ডক্টর আপুর সিক্স সেন্স কতটা কার্যকারী? হুম হুম ”
রুগী দেখা শেষ করে চোখ বন্ধ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে কিছু একটা ভাবনার মধ্যে ই ফোনের আওয়াজে মনোযোগ বিঘ্ন ঘটে রৌদসীর। সোজা হয়ে বসে ফোন পিক কানে ধরতেই রুশার এমন কথায় ভ্রু কুঁচকালো রৌদসী।
“সকাল সকাল কি মাথা টাথা সব আউলা হয়ে গেছে রে রুশো? কি আবল তাবল বকছিস? ”
রৌদসীর কথার পাত্তা না দিয়ে রুশা গদগদ কন্ঠে বলে উঠলো,
” আররে আপু গেস করই না, একটা সেইই ঝাক্কাস একটা খবর আছে, গরমা গরম তাজা তাজা খবর! ”
রৌদসী উঠে দাড়িয়ে ফোন কানে নিয়েই হাটতে হাটতে জানালার গ্রিল ধরে দাঁড়ালো। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,
” তোর গরমা গরম তাজা তাজা খবর তোর কাছেই রাখ পিচ্ছি। ভালো লাগছে না এমনি , তুই সবসময় আমাকে টেনশনে ফেলে মজা নিস, তাই আজ আর তোর ফাঁদে পা দিচ্ছি না, আর এই ফাঁকি বাজ মেয়ে তোর না এখন ক্লাস টাইম, তুই আমাকে ফোন করছিস মানে তুই ক্লাসে নাই, এক তো ক্লাস করিস নি আবার আমার সাথে মজা নেস, আয়ুমা কে বলব নাকি তোর কীর্তি? ”
রুশা ফোস করে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
” দিলে তো মুডটার খিচুড়ি বানিয়ে, তোমার বিয়ের খবর দিতে ফোন দিয়েছিলাম, হুহ! ”
রৌদসী থমকালো, কি বলে কি এই মেয়ে? আমার বিয়ে আর আমি জানি না! কথাটা এমন হলো না, যার বিয়ে তার খবর নাই পাড়া পড়শীর ঘুম নাই!
” আমার বিয়ে আর আমি জানি না? আজকা তোর মাথা মনে হয় পুরোটাই গেছে রে পিচ্ছি! আর তোর দজ্জাল বোন না আসলে বললাম তো আমি বিয়ে করবো না তারপরও এসব কথার কোন মানে হয়? ”
” তোমাকে কে বলল দিভাই আসে নি? দি ভাই তো বাংলাদেশে! ”
রৌদসী থমকে গেলো সেকেন্ড কয়েকের জন্য! কাপা কাপা গলায় বলল,
” মানেহ? ”
রুশা রৌদসীর কাপা কন্ঠে শুনে বেশ মজা পেলো, গদগদ কন্ঠে বলল,
” হুম দিভাই তো গত চব্বিশ ঘণ্টা যাবত বাংলাদেশে! সকালে তো আমার সাথে দেখা ও হয়েছে, জানো রোদুপু দিভাই না অনেক চেঞ্জ হয়ে গেছে, কথা বার্তা, আচার ব্যবহার, পোষাক সবকিছু, তবে চুল গুলো আরো অনেক লম্বা হয়েছে! জানো রোদুপু দিভাই নাকি স্পেশাল ফোর্স অফিসার! ”
রৌদসীর চোখে পানি টলমল করছে যেকোনো মূহুর্তে পানি গড়িয়ে পড়বে মেঝেতে রৌদসী খুশির চোটে মুখ দিয়ে কথায় যেন বের হচ্ছে না, শুধু বলল,
” তাই? ”
” হুমম তো , আজকে দিভাই আমার ভার্সিটিতে সরকারি গাড়ি নিয়ে এসেছিলো, গাড়ির সামনে বড় বড় করে লেখা স্পেশাল ফোর্স অফিসার ”
রৌদসীর গাল বেয়ে চোখের পানি টপটপ করে নিচে মেঝেতে পড়ে গেলো, রৌদসী জানালা ছেড়ে আসতেই হঠাৎ তার নজর গেলো হসপিটালের পার্কিং লটে পার্ক করা একটা গাড়ির দিকে, তার কেবিন থেকে সেটা সরাসরি দেখা যাচ্ছে , যেই গাড়ি টার সামনে বড়ো বড়ো অক্ষরে লেখা স্পেশাল ফোর্স অফিসার।
রৌদসী ভ্রু কুঁচকালো, ফোনটা ভালো ভাবে কানে ধরে বলল,
” রুশো আছিস? ”
” হুম আপু বলো ”
” গাড়ির সামনে কি যেন লেখা বললি? ”
” স্পেশাল ফোর্স অফিসার ”
” গাড়িটা কি রঙের? ”
” ব্ল্যাক, কেন বলো তো? ”
রৌদসী কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসি দিয়ে বলল,
” নাহ কিছু না এমনি, আচ্ছা রাখি একটা কাজ বাকি আছে, পরে কথা হবে ”
বলেই ফোন টা কেটে দিলো,
রৌদসী হাটতে হাটতে রিসিপশনে গেলো, রিসিপশনে থাকা মেয়েটা তাকে দেখে দাঁড়িয়ে বলল,
” মেম এনি প্রবলেম? ”
রৌদসী মুচকি হেসে বলল,
” তেমন কিছু না জেসি, আচ্ছা হসপিটালে কি কোন অফিসার এসেছে? ”
” জি ম্যাম, মেডিসিন পরীক্ষা করতে কার্যালয় থেকে অফিসার এসেছে, তবে মেইন যিনি, শুনেছি উনি নাকি সব ইনভেস্টিগেশনে নিজে যান না তবে এই হসপিটালে উনি নিজে এসেছেন পরীক্ষা করতে! ”
রৌদসী আবারো বাঁকা হেসে বলল,
” ধন্যবাদ জেসি, তুমি কাজ করো আমি গেলাম ”
বলেই রৌদসী ল্যাবে চলে আসলো, ল্যাবের দরজায় দাঁড়িয়ে আরুহীকেই দেখে যাচ্ছে সে,
আরুহীকে তার প্রথম থেকে ই সন্দেহ হচ্ছিল , কেন জানি তার মনে হচ্ছিলো মেয়েটা আরুহী ই, কিন্তু সিউর হতে পারছিলো না, তবে এখন সে সিউর যে এটা আরুহী।
রৌদসী ধীরে ধীরে আরুহীর দিকে এগিয়ে গেলো কিন্তু আরুহীর তো সে দিকে কোন খেয়াল ই নেই সে তো এক মনে মেডিসিন পরীক্ষা করছে।
রৌদসী আরুহীর পিছনে গিয়ে দাড়ালো,
” মিস আরুহী চৌধুরী? ”
আরুহী থমকে গেলো, হুট করেই পিছনে তাকিয়েই অবাক হলো রৌদসী তার দিকেই এক মনে তাকিয়ে আছে, আরুহী কিছু ই বুঝতে পারছে না, রৌদসী জেনে গিয়েছে নাকি আন্দাজে ঢিল মেরেছে! আরুহী ভ্রু কুচকে রৌদসীর দিকে তাকিয়ে রইলো।
” মিস আরুহী চৌধুরী! কেমন আছেন আপনি? ”
বলতে বলতেই রৌদসীর চোখ থেকে আবারো পানি গড়িয়ে পড়লো মেঝেতে। আরুহী অবাক দৃষ্টিতে তাকালো রৌদসীর দিকে,
আরুহী কিছু বলতে নেবে হুট করে রৌদসী আরুহীর গালে ঠাস করে থাপ্পড় লাগিয়ে দেয়, আরুহী আবারো গালে হাত দিয়ে বোবা হয়ে তাকিয়ে আছে,
থাপ্পড় দেওয়ার সাথে সাথে ই রৌদসী আরুহীকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরলো,
” এতো নিষ্ঠুর কিভাবে হতে পারে একজন মানুষ, তুই তো শুধু নিষ্ঠুর না আরু তুই পাষাণ, বড্ড পাষান মানুষ তুই আরু, একবার ও তোর আমার কথা মনে হলো না আরু? তুই তো আমার সব কিছু র সঙ্গী ছিলি একবার ও ভাবলি না তুই চলে যাওয়ার ওর আমি কি করে থাকবো? কিভাবে চলব একা একা? এতো টা স্বার্থ পর কি করে হতে পারলি তুই? ”
আরুর রৌদসীর প্রতি জমে থাকা অভিমানের পাহাড় এক নিমিষেই উধাও হয়ে গেলো, আসলে আরু এমন ই বাইরে থেকে যতটা কঠোর দেখা যায় সে ভেতর থেকে তার চেয়ে ও নরম।
আরুহী ল্যাবে থাকা সকল কে বেরিয়ে যেতে ইশারা করতেই সবাই একে একে মাথা নিচু করে বেরিয়ে যায়,
আরু ধীরে একটা হাত রৌদসীর পিঠে রেখে জরিয়ে ধরলো, রৌদসী ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো, এতো বছর পর আদরের বোন আর বেস্ট ফ্রেন্ড কে দেখে আবেগ কন্ট্রোল করতে পারে নি।
আরু হাসলো, তার বোন টা আগের মতোই ছিচকাদুনে রয়ে গেছে , এত বড় একজন ডক্টর অথচ কেমন বাচ্চাদের মতো কান্না করছে।
” এটা কেমন কথা ডক্টর রৌদসী? অচেনা একজন মেয়েকে কখন থেকে জরিয়ে ধরে আছেন? লজ্জা সরম নেই নাকি? ”
রৌদসী জরিয়ে ধরে রেখেই নাক টানতে টানতে বলল,
” থাপ্পড় টা কি আস্তে হয়ে গেছে আরু? ”
” এই না না, ঠিক আছে ঠিক আছে যতক্ষন ইচ্ছা জরিয়ে ধরে রাখো, নো সমস্যা! ”
বেশ কিছু ক্ষন পর, রৌদসী আরুকে ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো, কেঁদে কেটে চেহারার হাল বেহাল করে ফেলেছে মেয়েটা,
” কি একটা অবস্থা করেছো তুমি? ”
বলেই নিজের পকেট থেকে রুমাল বের করে রৌদসী কে দেয়,
রৌদসী সেটা হাতে নিয়ে মুখ মুছে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আরুর দিকে তাকালো,
” কি হলো এভাবে তাকাচ্ছো কেন? ”
” এসব লুকোচুরির মানে কি আরু? নিজের বাড়ি ছেড়ে এপার্টমেন্ট এ থাকিস কেন তুই? ”
” আমি গভার্নমেন্ট এর কাজে বিডি তে এসেছি, ঘুরতে আসি নি, আর তুমি জানো কেন আমি বাসায় যায় না, আই থিংক তুমি এসবের জন্য আমাকে ফোর্স করবে না আর তাড়াতাড়ি বিয়ে টা করে নাও, বুড়ি হয়ে যাচ্ছো তো ”
” তুই আসবি তো আরু? ”
” বললাম তো আসবো, এতো চিন্তা করো না তো, আর বাসার সবাই কেমন আছে? ”
” হুম আলহামদুলিল্লাহ সবাই ভালো আছে ”
” আর তোমার ভাবিরা? ”
আরুহীর কথায় রৌদসী ভ্রু কুচকে বলল,
” ভাবিরা মানে কি? কাদের ভাবি? ”
” এমা তোমার ভাবি, তোমার জমজ দুই ভাইয়ের বউ! ”
রৌদসী এবার আরুর কথা টার মানে বুঝলো, মুচকি হেসে বলল,
” হুমম খুউউব ভালো, আচ্ছা তুই তোর কাজ কর আমি আমার বিয়ের ব্যবস্থা করি, কেমন? ”
আরুহী মুচকি হেসে সম্মতি জানালো, রৌদসী কাউকে ফোন করতে করতে বেরিয়ে গেলো, সে দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরুহী।
চলবে…
[ সরি জনগন আমি রেগুলার দিতে পারছি না, দুটো গল্প কন্টিনিউ করছি তো আর সাথে পড়াশোনা তো আছেই, সামনে আবার এইচএসসি পরীক্ষা, আর কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ মানে তো জানোই, প্যারা আর বাঁশ! ]