মায়াবিনী_(২) #Ayrah_Rahman #পর্ব_০৭

0
561

#মায়াবিনী_(২)
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_০৭
______________________________

” ম্যাম! আপনি যে ঔষধ গুলো পরীক্ষা করতে দিয়েছিলেন সেগুলোর কিছু কিছু সেম্পলে বিভিন্ন ধরনের মিশ্রন পাওয়া গেছে! ”

আরুহী ল্যাবের কাজ শেষ করে মাত্র ই রৌদসীর কেবিনে এসে সোফায় শুয়ে পড়ে, ভীষণ ক্লান্ত লাগছে তার! চোখ বন্ধ করে থাকতে থাকতে ই হঠাৎ ফোন এর শব্দে বেশ বিরক্ত হয়। ফোন পিক করতেই সুলতানের কথায় ভ্রু কুঁচকে বলল,

” কেমন মিশ্রন? ”

” ম্যাম সম্ভবত মা*দক!”

আরুহী উঠে বসে অবাক কণ্ঠে বলল,

” মা*দক? কিন্তু ঔষধে মাদ*ক দ্রব্য মিশ্রিত করে মিশ্রিতকারীর লাভ কি? ”

” ম্যাম পৃথিবীতে এমন ও অনেক মাদ*ক দ্রব্য পাওয়া যায় যা সেবনে বহু বছরের পুরনো কোন ব্যাথা ও স্বল্প সময়ের জন্য উপশম হয়। কিন্তু মাদ*ক দ্রব্য টি শরীরের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। ”

” বাট এতে কি কোন প্রোফিট আসে? ”

” জি ম্যাম, ওই ঔষধ টা খুব ভালো চলে বাজারে, মানুষ তো আর ভেতরে খুঁটিয়ে দেখে না ভেতরে কি আছে, তারা ভাবে হয়তো এটা খুব ভালো ঔষধ তাই তো তৎক্ষনাৎ কাজ করে ফেলেছে তাদের এই বিশ্বাস কে কাজে লাগিয়ে কিছু কোম্পানি এমন বিষাক্ত মাদ*ক দ্রব্য ঔষধে মিশ্রন করে”

আরুহী কিছু ক্ষন নিরবতা পালন করার পর বলল,

” কোন কোম্পানির ঔষধ এগুলো? ”

” SK company ”

আরুহী বসা থেকে উঠতে উঠতে বলল,

” তুমি ড্রাইভার কে বলো গাড়ি বের করতে আমি SK company তে যাবো ”

আরুহীর কথা শুনে সুলতান আমতাআমতা করে বলল,

” কককিন্তু ম্যাম, এখন আপনার যাওয়াটা কি ঠিক হবে? শুনেছি ওই কোম্পানির লোক বেশ প্রভাবশালী। ”

” সুলতান, তুমি হয়তো ভুলে যাচ্ছো আমি একজন ফোর্স অফিসার! সব কিছুর ট্রেনিং প্রাপ্ত আমি ”

” ঠিক আছে ম্যাম, আমিও আসছি ”

” হুম ”

ফোন রেখে রৌদসীর দিকে তাকালো,

” আমাকে এক্ষুনি যেতে হবে, পরে দেখা হবে আর শোনো আমার আসার খবর টা যেন পাঁচ কান না হয়, একেবারে গায়ে হলুদের দিন উপস্থিত হবো ”

রৌদসী মাত্র ই অপারেশন শেষ করে কেবিনে এসে বসলো, এরই মাঝে হঠাৎ আরুহী কথা গুলো বলে উঠলো ।

রৌদসী প্রথমে খানিকটা অবাক হলেও পরবর্তী তে আরুহীর যাওয়ার কথা শুনে খুশি হয়ে বলল,

” ঠিক আছে তোর যা ইচ্ছে, আর সব কাজ বুঝে শুনে করবি, কেমন? ”

আরুহী মুচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলে বেরিয়ে গেলো, রৌদসী তার যাওয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ই রইলো।

প্রায় ত্রিশ মিনিটের মাথায় আরুহীর গাড়ি এসে দাড়িয়েছে SK company এর সামনে,

আরুহী গাড়ির জানালা দিয়ে মাথা বের করে ১৩ তলা বিল্ডিংয়ের দিকে তাকালো,

মোবাইলে একবার নিজের মাস্ক পরা ফেইস টা দেখে নিলো সব ঠিক আছে নাকি তারপর দরজা খুলে বাইরে বের হয়ে এলো,

” ম্যাম আপনি কি এখন ভিতরে যাবেন নাকি আমি গিয়ে কথা বলব? ”

আরুহী শান্ত দৃষ্টিতে সুলতানের দিকে তাকিয়ে বলল,

” তুমি কি ভয় পাচ্ছো সুলতান? তুমি তো আমার সাথে আছো আজ চার বছর, কত ক্রিটিক্যাল সিচুয়েশন আমি হেন্ডেল করেছি, তুমি তো জানোই তাই না? ”

” বাট ম্যাম বাঙালি ভালো না ম্যাম, আমি জানি আপনি সব সিচুয়েশন সামলাতে পারেন তবে এসকে কোম্পানির এমডি বেশ একটা সুবিধা জনক না যদিও এখন তার ছেলে কোম্পানি সামলায় তবে ছেলে বাপের থেকে ও এক কাঠি উপরে, খুবই ধূর্ত স্বভাবের ”

আরুহী মুচকি হেসে এগিয়ে গেলো কোম্পানির ভিতরে,

রিসিপশনে কথা বলে লিফটে উঠে সুলতানের মুখের দিকে তাকালো আরুহী , বেচারা সত্যি ভীষণ ভয়ে আছে তবে আরুহীর কাছে তেমন কোন ফিলিং হচ্ছে না।

সে নির্বিকার তাকিয়ে আছে সামনের দিকে, লিফট এসে ১৩ তলায় থামতেই আরুহী বেরিয়ে গেলো, সুলতান আরুহীর পিছনে পিছনে আসছে।

আরুহী কেবিনের দরজায় নক করতেই ভেতর থেকে আওয়াজ এল,

” কাম ”

আরুহী ভেতরে ঢুকলাম, ছেলেটা বিপরীতদিকে ঘুরে আছে। বিপরীত দিকে ঘুরে থাকতে থাকতে ছেলেটা বলল,

” ওয়েলকাম টু মাই অফিস মিস আরুহী চৌধুরী ”

বলেই উনি সামনে ঘুরলো,

আরুহী ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে ছেলেটার দিকে, কেন জানি আরুহীর ছেলেটাকে চেনা চেনা মনে হচ্ছে কিন্তু কোথায় দেখেছে ঠিক ঠাউর করতে পারছে না,

” দাঁড়িয়ে কেন বসুন ”

আরুহী কিছু না বলে সামনে রাখা চেয়ারে বসে পড়লো, সামনে থাকা ছেলেটা আরুহীর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,

” আপনি এসকে কোম্পানির এমডি তাই তো? ”

ছেলেটা আরুহীর কথার কোন রুপ উত্তর না দিয়ে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরুহীর দিকে যা দেখে আরুহী ভ্রু কুঁচকালো,

” এই যে শুনতে পাচ্ছেন? ”

ছেলেটি চমকে উঠলো,

” জি শুনতে পাচ্ছি ”

আরুহী গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,

” মিস্টার আপনাকে আমি প্রশ্ন করেছি, আপনি তো এই কোম্পানির এমডি?”

ছেলেটা মুচকি হেসে হ্যান্ডশেক করার উদ্দেশ্যে আরুহীর দিকে হাত বাড়িয়ে বলল,

” হাই আমি সাজিদ খন্দকার ”

আরুহীর মাঝে হ্যান্ডশেক করার কোন রুপ আগ্রহ দেখা গেলো,

আরুহী চেয়ারে হেলান দিয়ে সাজিদের দিকে তাকিয়ে বলল,

” সোও সাজিদ খন্দকার! আপনি নিশ্চয়ই আমাকে চিনতে পেরেছেন? ”

আরুহীর এমন গা ছাড়া ভাবে খানিকটা ভরকে গেলো সাজিদ, বাড়িয়ে দেওয়া হাত টা গুটিয়ে নিয়ে ঠিক হয়ে বসলো চেয়ারে,

” স্পেশাল ফোর্স অফিসার আপনি তাই তো?

” ইয়েস আপনি একদম ঠিক ই ধরেছেন মিস্টার সাজিদ খন্দকার! আর আমার এখানে আসার কারণ টা সম্পর্কে হয়তো আপনি অবগত? ”

সাজিদ শব্দ করে হেসে উঠলো,

” তো আপনার ডিমান্ড কি বলুন তো মিস আরুহী চৌধুরী? ”

আরুহী ভ্রু কুঁচকালো,

” ডিমান্ড? কিসের ডিমান্ড? ”

সাজিদ বাঁকা চোখে তাকালো আরুহীর দিকে,

” আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন মিস আরুহী বাট আমি ক্লিয়ার করছি, পুরো ইনভেস্টিগেশন এর জন্য কত নিবেন সেটাই বলছিলাম ”

আরুহীর রাগ হলো, মানে সাজিদ খন্দকার তাকে কিনে নিতে চাচ্ছে! কিন্তু আরুহী বরাবর ই তার মায়ের মতো ঠান্ডা মস্তিষ্কের মানুষ, ঠান্ডা মাথায় খুব সূক্ষ্ম ভাবে কাজ করে। তাই সে রাগলো না!

মুচকি হেসে বলল,

” আপনার ঠিক কত এমাউন্ট আছে মিস্টার সাজিদ খন্দকার? ”

সাজিদ খন্দকার এর মুখে বাঁকা হাসি বিদ্যমান হয়তো ভাবছে আরুহী তার ফাঁদে পা দিলো বলে!

” আপনি ঠিক কত এমাউন্ট চান মিস? ”

” তা নাহয় আপনি ই ডিসাইড করেন! ”

” আপনার আগেও আরোও অনেক ক্ষমতাবান পুলিশ এসেছে কিন্তু কেউ আমার বিরুদ্ধে কোন রুপ প্রমান জোগাড় করতে পারে নি, শেষে আমার প্রস্তাবে রাজি হতেই হয়েছে! শুনে বেশ খুশি হলাম আপনি এতো তাড়াতাড়ি আমার প্রস্তাবে রাজি হলেন বলে! ”

আরুহী পায়ের উপর পা তুলে আরাম করে বসে বলল,

” নিজেকে বেশ চালাক মনে করেন মিস্টার সাজিদ খন্দকার! আপনার সাথে পরিচয় হয়ে ভালো লাগলো বাট…. ”

সাজিদ ভ্রু কুচকে বলল,

” বাট? ”

” আপনি হয়তো ভুলে যাচ্ছেন আমি কোন পুলিশ অফিসার নই আমি একজন ফোর্স অফিসার, সূদুর কানাডা থেকে বাংলাদেশ এসেছি শুধু মাত্র কিছু কালপ্রিট ধরার জন্য, সরকার তো আমাকে এমনি এমনি এতো এতো ক্ষমতা দেন নি, আমি যদি এই মূহুর্তে চাই আপনার পুরো কম্পানী সিল মেরে দিতে পারবো উইথআউট এনি গভার্নমেন্ট পারমিশন অর প্রোভ, শুধু মাত্র আমার একটা ফোন কল ই যথেষ্ট! ”

সাজিদ ভ্রু কুঁচকে বলল,

” আপনি ঠিক কি বলতে চাচ্ছেম মিস চৌধুরী? ”

” বলছিলাম, আমাকে আর দশটা অফিসারের মতো না ভাবলেই আপনার জন্য ভালো হবে মিস্টার খন্দকার! ”

” আপনি কিন্তু আমার সাথে শুধু শুধু ই শত্রুতা তৈরি করছেন মিস, ফলাফল টা খুব সুবিধা জনক হবে না আপনার জন্য! ”

আরুহী হাসলো,

” নিজের কথা চিন্তা করেন সাজিদ খন্দকার, আজ আপনি তেরো তলার উপর এসি রুমে আরামে বসে আছেন কাল এমন ও হতে পারে আপনার গাছ তলায় ও ঠাই হবে না ”

আরুহী ঘাড় ঘুরিয়ে সুলতানের দিকে তাকাতেই সুলতান তার হাতের মোবাইল টা আরুহীকে দিলো,

আরুহী ফোন টা অন করে সাজিদের দিকে তাক করলো যেখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ,

এতোক্ষণ সাজিদ যা কিছু বলেছে সব রেকর্ড হয়ে গেছে,

সাজিদ খন্দকার চমকে উঠলো, সে ভাবতেও পারে নি মেয়েটা এতো ধূর্ত স্বভাবের!

আরুহী বাঁকা হাসলো,

” তাহলে আজ উঠি মিস্টার সাজিদ খন্দকার, আবারো দেখা হবে! ”

বলেই আরুহী গটগট পায়ে বেরিয়ে এলো…

চলবে…

[ গঠন গত মন্তব্য করবেন আশা করি ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here