#মায়াবিনী_(২)
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_২৮
_____________
” আমি দুঃখীত মামিমা, আমি এই বিয়ে টা করতে পারব না, তুমি চাইলে আমি আরোও অনেক সুন্দরী আর ভালো মেয়ে তোমাকে এনে দেবো তবুও আমাকে এভাবে বলো না, ইউ নোও না মামিমা আমি তোমার কথা ফেলতে পারি না ”
আরুহী এক দমে কথা গুলো বলে এক পলক মিরার দিকে তাকালো। আপাতত আরুহী তার ঘরের বিছানার উপর বসে আছে আর তার ই পাশে মিরা, রাইসা, মিরাজ আর আরাফ দাঁড়িয়ে।
আরুহী মিরাজের দিকে তাকিয়ে বলল,
” ভাইয়া আম্মু কোথায়? ”
মিরাজ দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বসতে বসতে বলল,
” ফুপি মা তো ফুপার সাথে অফিসে গিয়েছে, কি জানি কি ঝামেলা হয়েছে ম্যানেজার ফোন দিয়ে ইমিডিয়েটলি যেতে বলেছে, তাই তাড়াহুড়ো করে চলে গেছে, তুই রুমে ছিলিস তাই আর তোকে বলা হয় নি ”
” ওহ ”
মিরা মাথা নিচু করে কিছু একটা ভাবছে, আরুহী তাকে এভাবে রিজেক্ট করবে! মেয়েটা যে বড্ড জেদি, একবার মুখ থেকে কোন কথা বের করলে তার থেকে আর নড়ানো যাবে না আরুহী কে। তবুও মিরা শেষ চেষ্টা করে দেখতে চায়।
মিরা জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলতে লাগলো,
” দেখ আরু মা, আমি জানি তুই আরুশ কে পছন্দ করিস না, তবুও আমাদের সম্মানের কথা চিন্তা করে বিয়ে টা কর না মা! তোকে বলছি না সংসার করতে, তুই তোর মতো করে থাকবি, তোকে কেউ পিছু টানবে না, আমি মিরা কথা দিচ্ছি তোকে, তোর মামিমা কথা দিচ্ছে আরু, শুধু নাম মাত্র বিয়েটা কর! আমি তোকে অনুরোধ করছি আরু! আমাদের সম্মান টা বাচাঁ। বাইরে নানান মানুষ নানান কথা বলছে, তুই তো জানিস সমাজে আমাদের সম্মান টা কোথায়, সম্মানে কালো দাগ লেগে গেলে সেটা শত চেষ্টা করলেও আর মুছা যায় না, আমি বুঝতে পারছি আমি স্বার্থপরের মতো কথা বলছি, তবুও আমি মা হয়ে তোর কাছে অনুরোধ করছি আরু, এবার সবটা তোর হাতে, তুই ই ডিসিশন নে ”
মিরা একদমে কথা গুলো বলে চোখ মুছতে মুছতে বাইরে চলে গেলো।
মিরার পিছনে পিছনে রাইসা ও এক পলক আরুহীর দিকে তাকিয়ে চলে গেলো। আরাফ আরুহীর পাশে বসে আরুহীর কাঁধে হাত রাখতেই আরুহী আরাফ কে জড়িয়ে ধরে বলল,
” মামা আমি কি করবো বলো? আমি কি তোমার ছেলেকে বিয়ে করবো নাকি অন্য কিছু করবো? বুঝতে পারছি না মামা! একটা সলিউশন দাও না, তুমি তো অনেক কিছু বোঝো”
আরাফ আরুহীর মাথায় হাত রেখে বলল,
” তোর মন কি বলে আরু? তোর মন যা বলে তুই তাই কর, আমার ছেলে বলে যে সাত খু*ন মাফ তা কিন্তু না, ও যেমন আমার ছেলে তুই ও আমার আদরের পুতুল মেয়ে, ওর থেকে তোর জায়গা টা আমার কাছে বেশি স্পেশাল আরু৷ তুই বাচ্চা নোস, যা করবি ভেবে করবি মা”
আরুহীর ফোনে কল আসাতে আরুহী উঠে বসলো,
পকেটে হাত দিয়ে ফোন বের করে স্ক্রিনে সুলতান নাম টা জ্বলজ্বল করছে, আরুহী ভ্রু কুঁচকে ফোন টা ধরে এক পলক আরাফ আর মিরাজের দিকে তাকিয়ে বারান্দায় চলে গেলো, আরাফ আর মিরাজ রুম থেকে বের হতেই আরুহী রুমে ঢুকে ফোন টা লাউড স্পিকারে দিয়ে টেবিলের উপর রেখে আলমারি খুলল,
” আসসালামু আলাইকুম আরুহী ”
” ওয়ালাইকুম সালাম সুলতান ভাই! কোন খবর আছে নাকি ? হঠাৎ ফোন করলে যে! ”
” খবর তো একটা আছেই, তবে তুমি সেটা কিভাবে নিবে সেটাই ভাবছি ”
ভ্রু জোড়া কুঁচকে এলো আরুহীর,
কি এমন কথা বলবে সুলতান!
” কি খবর বলো তো ”
” আসলে তোমার অজান্তেই চৌধুরী বাড়ির চারপাশে সিভিল পোষাকে বডিগার্ড রেখেছিলাম যাস্ট সেইফটির জন্য ”
আরুহী ভ্রু কুঁচকে বলল,
” তা সমস্যা কোথায়? ”
” সমস্যা টা বডিগার্ড নিয়ে না, কথা টা হচ্ছে, আজ দুপুর বেলা সময় তখন একটা কি দেড় টা। এক বডিগার্ড আমাকে কল করে বলল চৌধুরী বাড়ির পিছনে দরজা দিয়ে কালো বোরখা পরিহিত একজন মহিলা আর সাথে আরুশ খান কে দেখেছে আমার বডিগার্ড! তবে এটা সন্দেহ জনক হতো না যদি না মহিলা টির হাত পা বাঁধা অবস্থায় থাকতো। মানে আরুশ খান আরো ও দুটো বডিগার্ড দিয়ে মহিলা কাউকে কিডন্যাপ করিয়েছে, দ্যাট মিন আমি যতদুর বুঝলাম। ”
আরুহী চমকে উঠলো, তার মানে কি আরুহীর ধারনায় ঠিক! এসব আরুশ খান এর কারসাজি!
” কোথায় নিয়ে গেছে জানো কিছু? ”
” পিছু নিয়ে ছিলো কিন্তু হয়তো আরুশ খান কিছু টা সন্দেহ করেছে, গাড়ি স্পিডে ছেড়ে একে বেঁকে কোথাও একটা ঢুকলো, পরে আর খোঁজে ই পেলো না তাকে ”
” আচ্ছা তুমি দেখো, আর কোন খবর পাও নাকি!”
” আচ্ছা, রাখি তাহলে ”
” আচ্ছা ”
আরুহী ফোন টা কেটে পরনে টি শার্ট চেঞ্জ করে কালো রঙের লং শার্ট পরে বের হয়ে শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে আরুশের রুমের দিকে এগুলো,
আরুহী আরুশের রুমের সামনে গিয়ে থমকে দাঁড়ালো। ভেতরে যাবে কি যাবে না দোটানায় পড়ে গেলো সে। অনুমতি ছাড়া কারো রুমে প্রবেশ করা টাও ভালো ম্যানার এর মধ্যে পড়ে না। আরুহী কিছু একটা ভেবে আরুশের রুমের ভেতরে ঢুকে গেলো, আরুহী ভেতরে ঢুকেই ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে সামনে তাকালো,
আরুশ তার রুমের সোফার উপর পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে,
” ওয়েলকাম ওয়েলকাম মিস আরুহী চৌধুরী! ”
আরুহী রাগী দৃষ্টিতে আরুশের দিকে তাকিয়ে বলল,
“What is this Mr. Arosh khan? ”
আরুশ কিছু না জানার ভান করে বলল,
” আপনি ঠিক কোন টার কথা বলছেন আরুহী চৌধুরী? ”
” নাটক সিনামা বাইরে গিয়ে করবেন আমার সামনে না, আর এতদিন ধরে এতো নাটকের মানে কি? ”
আরুশ ইনোসেন্ট ফেস করে বলল,
” আমি নাটক কোথায় করলাম”
আরুহী দাঁতে দাঁত চেপে ধরলো, কোন ভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে হয়, যেই পরিমাণ রাগ উঠছে, এই রাগের তাড়নায় আরুশের মুখ বরাবর দু একটা ঘুষি দিলে অস্বাভাবিক কিছু হবে না। এই জায়গায় অন্য কেউ থাকলে আরুহী কি করতো তা তার নিজের ও জানা নেই, নেহাৎ আরুশ!
আরুহী ঠান্ডা গলায় বলল,
” পুষ্মিতা কোথায়? ”
” তার জায়গায় ”
আরুশ নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে উত্তর দিলো।
আরুশের খাপ ছাড়া উত্তরে আরুহীর রাগের পরিমান বাড়ছে বয় কমছে না।
আরুহী দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
” কোথায় আঁটকে রেখেছেন ওকে? আর কেন এমন নাটক? উত্তর দেন ”
আরুশ এগিয়ে এলো আরুহীর দিকে, আরুহীর দু হাত নিজের হাতের মুঠো ই শক্ত করে ধরলো,
” সব তো জানিস ই আবার জানতে চাচ্ছিস কেন? হে হে আমি করেছি এমন, আমি পুষ্মিতা কে আঁটকে রেখেছি আমি ই বিয়ের নাটক করেছি।
কথা গুলো বলতে বলতে আরুহীর হাতের উপর নিজের মাথা ঠেকালো,
আমি সব করেছি শুধু তোকে জেলাস ফিল করানোর জন্য, তোকে কাছে পাওয়ার জন্য, তোর থেকে একটু ভালেবাসা না হোক সহানুভূতি পাওয়ার জন্য, তুই আমাকে ঘৃণা করিস সেটা আমি জানি, বাসতে হবে না তোকে ভালো, আমি বাসবো, আমার ভালোবাসার পরিমান দুজনের হয়ে যাবে শুধু তুই আমার চোখের সামনে থাক, তুই চোখের সামনে থেকে যা শাস্তি দিবি আমি মাথা পেতে নেবো, তুই আমাকে ছেড়ে যাস না আরু আমি আর নিতে পারব না আরু, আমি আর কষ্ট সহ্য করতে পারব না তোকে ছাড়া, ট্রাস্ট মি আরু বড্ড বেশি ভালোবাসি তোকে, আমি আর লড়াই করতে পারছি না আরু, ভেতরে ভেতরে শেষ হয়ে যাচ্ছি
আই ক্যান নট লিভ উইথ আউট ইউ! আই লাভ ইউ আরু আই লাভ ইউ ”
চলবে…….
[ আজকের পর্ব টা কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্ত আর কারো মতামত থাকলে তাও বলবেন ]