মায়াবিনী_(২) #Ayrah_Rahman #পর্ব_৩০

0
500

#মায়াবিনী_(২)
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_৩০

_____________
আরুহী ভাবছে আসলে তার কি করা উচিত! এই তো মাত্র ই মাকে ফোন করেছিলো কিন্তু আয়াত আশানুরূপ কোন উত্তর দেয় নি, শুধু বলল, তুমি বড়ো হয়েছো, তোমার ভালো তুমি বুঝো যা ভালো মনে করবে তাই করো, আমি সবসময় তোমার পাশে আছি।

ব্যস এতোটুকুই! বিরক্তি তে আরুহী দীর্ঘ শ্বাস ফেলল। মন বারবার বলছে আরুশকে মেনে নিতে কিন্তু ইগো বারবার তা আটকে দিচ্ছে।

আরুহীর চিন্তার মধ্যে ই টেবিলের উপর থাকা ফোন টা স্ব শব্দে বেজে উঠলো, আরুহী কপাল কুঁচকে ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে সুলতান নাম টা জ্বলজ্বল করছে,

আরুহী ফোন টা পিক করে কানে ধরলো,

” আসসালামু আলাইকুম সুলতান ভাই। ”

“__________________”

” কোন খবর আছে নাকি? ”

“_____________

” কয়টায় শুরু হবে? ”

“________

” আচ্ছা আমি সময় মতো চলে আসবো, তুমি টেনশন নিও না ”

বলেই আরুহী ফোন কেটে দিলো। কিন্তু পরবর্তী তে আবার ফোন বাজতেই আরুহী ফোন ধরে লাউড স্পিকার এ দিয়ে টেবিলের উপর রাখলো,

” হ্যা সুলতান ভাই? ”

” আরুহী এই কাজটার জন্য তুমি চাইলে ছুটি আরোও বাড়াতে পারো ”

আরুহী দীর্ঘ শ্বাস ফেলল,

” প্রয়োজন হলে বাড়াবো, আপাতত ইচ্ছে নেই”

” আর শোনো ”

” হুমম! ”

” তোমার বিডি ট্রান্সফারের ব্যাপারে স্যারের সাথে কথা হয়েছে আমার ”

আরুহী ভ্রু কুঁচকালো,

” বিডি ট্রান্সফার?”

” হুম, আয়াত ম্যাম বলেছেন। মা যখন বলেছে মেয়ে হিসেবে এটা পালন করা তোমার দায়িত্ব, কতকাল আর মা মেয়ে আলাদা থাকবে তাই আমিই ইচ্ছে করে বলেছি”

আরুহী কিছু বলল না, সেও এটাই ভাবছিলো,

সুলতান পুনরায় বলল,

” স্যার বলেছেন তুমি যদি এই কেস টা সল্ভ করতে পারো তবে তোমার প্রমোশন নিশ্চিত আর বিডি ট্রান্সফার ও কনফার্ম সাথে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর পদেও যোগ দিতে পারবে, সেই ভাবেই কাগজ পত্র প্রসেস করা হবে আর এটা স্যার নিজে করবেন ”

আরুহী ছোট করে বলল,

” হুম রাখি, পাঁচ টায় অপেক্ষা করো আমি ঠিক সময় মতো চলে আসবো। ”

” ঠিক আছে ”

বলেই ফোন টা কেটে দিলো।

আরুহী ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সাড়ে চারটা বাজতে চলল, ব্ল্যাক লং শার্ট, ব্ল্যাক প্যান্ট, ক্যাপ এবং মাস্ক পড়ে শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে নিচে নেমে এলো।

আরুহী চারপাশে তাকিয়ে দেখে মানুষ জন তো কমার নাম ই নেই, উল্টো বাড়ছে, পুরো ড্রয়িং রুম জুড়ে মানুষের আনাগোনা। আরুহী গিয়ে আরাফের গা ঘেঁষে দাড়ালো। আরাফ ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই আরুহী আরাফের কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে কিছু একটা বলতেই আরাফ বাড়ির বাইরে চলে গেলো।

আরুহী গিয়ে সোফার উপর বসলো, সামনে দাঁড়িয়ে থাকা রুশা কে কিছু একটা ইশারা করতেই রুশা ছুটে উপরে চলে গেলো। সবাই উৎসুক দৃষ্টি তে আরুহীর দিকে তাকিয়ে আছে, তারাও ঠিক বুঝতে পারছে না আসলে আরুহী কি করতে চাইছে।

প্রায় মিনিট তিনেক এর মাথায় রুশা আরুশের হাত ধরে টানতে টানতে নিচে নামিয়ে আনছে আর আরুশ রুশা কে বারবার জিজ্ঞেস করছে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে কিন্তু রুশা কিছু ই বলছে না।

আরুহী খেয়াল করলো আরুশ রুশা কে এটা সেটা জিজ্ঞেস করলেও টেনে আনতে কোন প্রকার বাধা দিচ্ছে না।

রুশা সিড়ি দিয়ে আরুশ কে টেনে এনে সোফায় বসিয়ে দিলো, আরুহী আরুশ কে খেয়াল করতেই প্রথমে তার নজরে এলো তার লাল হয়ে যাওয়া নাকের ডগা আর কান, আরুশ যখন খুব বেশি কান্না করে তার কান আর নাক লাল হয়ে যায় তা আরুহীর খুব ভালো করে জানা আছে, আজও ব্যতিক্রম হয় নি।

আরুশ এক পলক আশেপাশে তাকাতেই তার নজরে এলো আরুহীর উপস্থিতি, ভ্রু কুঁচকে তাকালো সেদিকে। আরুহী নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বসে বসে ফোন ঘাটছে।

হঠাৎ আরুশ লক্ষ্য করলো তার আব্বু সাথে কাউকে নিয়ে সদর দরজা দিয়ে প্রবেশ করছে, লোকটা পেশা গত ভাবে কাজী । তবে কথা সেটা না এরা এখানে কি করছে সেটায় ভাবছে আরুশ।

কাজী সাহেব গিয়ে আরুশের ঠিক অপজিটের সিটে বসলো, খাতা বের করে কিছু একটা লিখতে লিখতে বলল,

” বর কে? ”

পিছনে থেকে মাহির বলে উঠলো,

” আমি বলছি কাজী সাহেব আপনি লিখুন ”

আরুশ ঘাড় ঘুরিয়ে তার ছোট বাবার দিকে তাকালো, তার মাথায় যেন কিছু ই ঢুকছে না, বোধ শক্তি ও যেন ক্ষনে ক্ষনে লোপ পাচ্ছে।

কাজী লিখতে লিখতে বলল,

” বরের নাম? ”

মাহির পিছনে থেকে উত্তর দিলো,

” আরুশ খান ”

আরুশ চমকে পিছনে তাকালো, তার বিয়ে! কি করে সম্ভব? আর পাত্রী কে? শেষ মেষ পাত্রী বিহীন বিয়ে! কি করে সম্ভব?

” বরের বাবার নাম? ”

” আরাফ খান ”

এরকম অনেক কিছু জিজ্ঞেস করে বরের তথ্যের পাঠ চুকিয়ে কাজী বলে উঠলো,

” এবার পাত্রীর তথ্য”

কাজী এক পলক আশেপাশে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলল,

” পাত্রী কে? এখানে কি পাত্রী অনুপস্থিত? ”

আরুশ উৎসুক দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে পাত্রী কে তা জানার অপেক্ষায়। শুধু আরুশ নয় ড্রয়িং রুমের প্রতিটি সদস্যদের চোখ একই কথা বলছে।

আরুহী এতোক্ষণ মোবাইল ঘাটছিলো, হঠাৎ বসা থেকে উঠে দাড়িয়ে মোবাইল পকেটে ঢুকাতে ঢুকাতে কাজীর সামনে গিয়ে দাড়ালো,

” কেন কাজী সাহেব আমাকে কি পাত্রী বলে মনে হয় না? ”

কাজী অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আরুহীর দিকে, এই প্রথম মনে হয় কোন বিয়ের কনেকে শার্ট আর প্যান্টে দেখলো,

কাজী যেমন অবাক হয়েছে আরুহীর এহেন কথায় চৌধুরী বাড়িতে যেন বাজ পড়লো, সবাই বিস্ফোরণ দৃষ্টিতে আরুহীর দিকে তাকিয়ে আছে।

আরুহী সবার দিকে এক পলক তাকিয়ে ঘাড় বাঁকিয়ে বললো,

” what’s happen? সবাই এভাবে তাকিয়ে আছো কেন? ভুল কিছু বললাম? ”

আরুহী দৃষ্টি ঘুড়িয়ে কাজীর দিকে তাক করলো,

সোফায় বসতে বসতে বলল,

” পাত্রী আমি, তাড়াতাড়ি করুন কাজী সাহেব আমাকে বের হতে হবে ”

কাজী চমকে উঠলো, নিজেকে সামলে লিখতে শুরু করলো,

” পাত্রীর নাম? ”

” আরুহী চৌধুরী, বাবা আবরার চৌধুরী আর কিছু লাগবে? ”

” বাসা? ”

” বাংলাদেশের যেকোনো এক জায়গায় লিখে দেন হয়ে যাবে ”

কাজী অবাক হয়ে আরুহীর দিকে তাকালো, আরুহী নিচে লিখার জন্য ইশারা করতেই কাজী বাকি সব গুলো পুরন করলো,

আরুশের যেন সব মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। রেজিস্ট্রার কাগজে সই করতে দিলে আরুশ এক পলক আরুহীর দিকে তাকিয়ে সই করে দিলো, পরবর্তী তে আরুহীর কাছে দিলে সে বিনাবাক্যে কাগজে সই করে উঠে দাঁড়ালো।

পকেট থেকে ফোন বের করে সুলতান কে কল করলো, চঞ্চল পায়ে ড্রয়িং রুম ত্যাগ করলো সে,

” হ্যালো সুলতান ভাই! কোথায় তুমি? ”

ওপাশ থেকে সুলতান কিছু বলতেই আরুহী বলে উঠলো,

” তুমি ওখানে থাকো আমি বাইক নিয়ে আসছি ”

বলেই আরুহী ফোন পকেটে রেখে, বাইকের চাবি বের করে বাইকে বসে হ্যালমেট মাথায় দিয়ে বাইক স্টার্ট দিলো।

কিছু দুর সামনে আসতেই নজরে এলো সুলতানকে, সুলতানের সামনে বাইক পার্ক করে পিছনে রাখা হ্যালমেট টা এগিয়ে দিলো তার দিকে,

সুলতান বিনা বাক্যে পিছনে উঠে বসলো,

আরুহী বাইক স্টার্ট দিলো,

প্রায় বিশ মিনিটের মাথায় আরুহীর বাইক এসে পৌঁছালো একটা বক্সিং কম্পিটিশনের জায়গায়। একটা বড় হল রুমের মাঝে একটা স্টেজে বক্সিং কম্পিটিশন টা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, প্রায় শ’ দুয়েক মানুষ তো হবেই এর চারপাশ ঘিরে। আরুহী বাইকের আয়নায় মাস্কে ঢাকা মুখের অবয়ব টা এক পলক দেখে নিলো, নাহ্ ঠিক আছে সব।

ভীড় ঠেলে এগিয়ে গেলো সামনে, মনের মধ্যে চলছে কোন এক ছক পূরনের দীর্ঘ প্রচেষ্টা।

চলবে…
[ আমাকে প্লিজ কেউ বকা দিয়েন না! গল্প সাজাতে গিয়ে এই বিয়ে টা দিতে হলো, নয়তো জীবনে ও দিতাম না! থাক বিয়ে যখন হয়েই গেলো কিছু তো করার নেই, মেনে তো নিতেই হবে! আমিও মেনে নিয়েছি আপনারাও মেনে নিন!

হ্যাপি রিডিং ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here