#দ্বিতীয়_ফাগুন
#পর্বসংখ্যা_২১
#লেখিকা_Esrat_Ety
তাহমিনা কিছুক্ষণ শান্ত হয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। তাশরিফ আমতা আমতা করে বলে,”তোমাকে কয়েকদিন পরে জানাতেই যাচ্ছিলাম মা।”
_তুই কি আমার সাথে মজা করছিস? একটু পরিষ্কার করে বলতো।
_না।
একশব্দে জবাব দেয় তাশরিফ। তাহমিনা চেঁচিয়ে ওঠে,”খবরদার যদি আর একবার তোর মুখে এসব কথা শুনি তো। খুব খারাপ হয়ে যাবে তাশরিফ।”
_মা সমস্যা কোথায়? তুমিই তো বলতে আমার পছন্দ থাকলে তোমাকে জানাতে। তুমি মেনে নিবে,তাহলে এখন এমন করছো কেনো?
_পছন্দ করতে বলেছি বলে রোদেলা আমিনকেই করবি? দুনিয়ার আর কোনো মেয়ে নেই?
_রোদেলা আমিনের মধ্যে কি সমস্যা দেখলে তুমি? ওনাকে কেন পছন্দ করা যাবে না?
_তুই কি আমাকে জেরা করছিস?
_একটা আপত্তি তুললে অথচ কারন জানাবে না?
_কারন হচ্ছে ওই মেয়ের কোনো যোগ্যতা নেই আমার বড় ছেলের বৌ হবার। চাল চলন ঠিক নেই, আদব কায়দা জানেনা, অহংকারী।
_মা এগুলো তোমার মনে হচ্ছে। উনি খুব ভালো মনের মেয়ে মা, তুমি বিশ্বাস করো।
ছেলের কথায় তাহমিনা রাগে দাঁত কিড়মিড় করতে থাকে।
_বাহ! এরই মধ্যে ওই মেয়ের হয়ে সাফাই গাইতে শুরু করেছিস তাও মাকে ধমক দিয়ে।
তাশরিফ নরম গলায় বলে,”ভুল বুঝছো মা তুমি।”
_শোন,ওই মেয়ে আর যাই হোক আমার সংসারের বৌ হবার অযোগ্য।
_তাহলে বাদল চাচার ছেলের জন্য কেনো পছন্দ করেছিলে?
_কারন তোর চাচা চাচী জীবিত নেই। ছেলে এতিম। আর রোদেলাকে দেখলে তোর মনে হয় যে ও শশুর শাশুড়ি নিয়ে সংসার করার মতো মেয়ে? ও তো পরিবার কি তার মানেই জানে না। কথায় কথায় বৃষ্টিকে আদিলের থেকে দূরে নিয়ে যেতে চায়, আমাদের থেকে দূরে নিয়ে যেতে যায়। আর শুনেছি তো আমি,ওর বড় বোনের ডিভোর্স টাও তো ও দায়িত্ব নিয়ে করিয়েছে। ছাড়াছাড়ি হয়ে যাওয়া পরিবারের মেয়েদের মানসিকতা এমনই হয়।
_মা আন্দাজে একটা কথা বলে দিলে না? আচ্ছা,রোদেলা আমিন কে নিয়ে এতো সমস্যা,তাহলে বৃষ্টিকে মানতে পারলে কেনো?
_কারন বৃষ্টি ওর মতো না। বৃষ্টির বয়স কম,আমি গড়ে নিয়েছি বৃষ্টিকে আমার মতো। ওই মেয়েটা তো ভাব করে যেন পৃথিবীর সব জ্ঞান নিজেই মাথায় করে বয়ে বেড়ায়, আর বয়স টা? তোর কাছাকাছি বয়স। এই বয়সী মেয়েরা খুব ধূর্ত হয়, সংসারে বেশি চালাকি করে। আমার তো মনে হয় বয়স তোর চেয়েও বেশি।
তাশরিফ মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। তাহমিনা মেজাজ দেখিয়ে বলতে থাকে,”শোন তাশরিফ। ফের যদি আমি এ ধরনের কথা শুনি তাহলে আমি এই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যাবো। মনে রাখিস।”
তাশরিফ চুপ করে থাকে। তাহমিনা বলে,”কি? এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো? এখন এটা বলবি তাই না যে রোদেলাকে না পেলে আর কাউকে বিয়ে করবি না? ঠিকাছে,করিস না। ওমন মেয়েকে বৌ বানিয়ে সংসার টা ভাসিয়ে দেওয়ার চেয়ে তোর বিয়ে না করাই ভালো।”
মাকে এই মুহূর্তে আর রাগিয়ে দিতে চাচ্ছে না তাশরিফ। তাই চুপচাপ শুনতে থাকে সব কথা। তাহমিনা প্রচন্ড ক্ষেপে গিয়েছে। গটগট করতে করতে ঘর থেকে বেরিয়ে যায় সে। তাশরিফ বিছানার উপর ধপ করে বসে পরে। এরকম একটা পরিস্থিতি তৈরি হবে তা সে জানতো। মা যে কোনোভাবেই রোদেলা আমিনকে মানবে না, সবটাই তো তাশরিফের জানা। তবুও তার বিশ্বাস সে একদিন ঠিকই রোদেলা আমিন নামের ওই অহংকারী,বদমেজাজি মেয়েটিকে পাবে। কিন্তু কিভাবে সম্ভব হবে সেটা!
আয়নায় নিজের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে তাশরিফ বলতে থাকে,”সমস্যা নাম্বার পাঁচ। তোমার মা রোদেলা আমিনকে রিজেক্ট করেছে তাশরিফ হাসান।”
***
“মন খারাপ নাকি তাশরিফ?”
খলিলুর রহমান,মেহেরিন এবং আরো কয়েকজন জুনিয়র এম্প্লয়ি তাশরিফের দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের চোখে কৌতুহল।
তাশরিফ টিফিন বক্স সামনে নিয়ে বসে আছে। রোদেলা খেতে খেতে একপলক তাশরিফের দিকে চায়। তারপর আবার খেতে থাকে।
মেহেরিন বলে,”তাশরিফ স্যার? আপনাকে বলছি! আপনার কি মন খারাপ?”
তাশরিফ মেহেরিনের দিকে তাকিয়ে শুকনো গলায় বলে,”প্লিজ মেহেরিন আপা! স্যার বলবেন না। এটা ক্যান্টিন। এখানে অফিশিয়াল কথা আমরা বলি না। আর আমার মন খারাপ নেই। আমি ঠিক আছি।”
_ঠিক নেই। তোমার চেহারা বলে দিচ্ছে তুমি কিছু একটা নিয়ে চিন্তিত। সবসময় ক্লিন শেভ করা তাশরিফ হাসানের মুখে খোচা খোচা দাড়ি দেখতে পাচ্ছি!
খলিলুর রহমান হাসতে হাসতে বলে।
তাশরিফ চুপ করে আছে। খলিলুর রহমান বলতে থাকে,”প্রেম ঘটিত ব্যাপার? প্রেমিকার অন্যত্র বিয়ে হয়ে যাচ্ছে? প্রেমিকা ছেড়ে চলে গিয়েছে? কোনটা? বলো!”
তাশরিফ একপলক খলিলুর রহমানের দিকে তাকিয়ে বলে,”বিষয়টা খুবই কম্প্লিকেটেড! আচ্ছা খলিল স্যার,আপনার কাছে শুনেছি আপনার লাভ ম্যারেজ ছিলো, আপনার মা প্রথমে নাকি ভাবীকে মেনে নেয়নি। পরে কিভাবে মেনে নিয়েছিলো?”
_একথা জিজ্ঞেস করছো কেনো? আছে নাকি কেউ? তোমার মা মানছে না?
_হু।
মৃদু স্বরে জবাব দেয় তাশরিফ।
সবাই অবাক হয়ে দেখে তাশরিফকে। রোদেলাও কিছুটা অবাক হয়। খাওয়া থামিয়ে রেখে তাকিয়ে আছে।
খলিলুর রহমান বলে,”মানছে না কেনো? কি সমস্যা? কি নিয়ে আপত্তি তুলেছে?”
_মায়ের মতে সে রাগী, অহংকারী, তার বয়স বেশি হয়ে গিয়েছে।
“বয়স বেশি” শব্দটা শুনেই রোদেলার রাগ উঠে যায়। তাচ্ছিল্যের সাথে বলে,”বয়স কত তার?”
তাশরিফ থতমত খেয়ে রোদেলার দিকে তাকায়। আমতা আমতা করে বলে,”সাতাশ।”
_আর আপনার?
_ত্রিশ।
_তার সাতাশ,সে বুড়ি। আর আপনার ত্রিশ,আপনি কচি খোকা?
তাশরিফ চুপ করে আছে। রোদেলা বলে,”এক কাজ করুন। আপনি বরং আপনার মাকে নিয়ে কিন্ডারগার্টেন স্কুলের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকুন। দেখবেন ওখানে আপনার মা আপনার জন্য তার মনের মতো পুত্রবধূ খুজে পাবে। একদম কচি, আপনার মতো কচি।”
তাশরিফ রোদেলার কথা শুনে তাজ্জব বনে যায়। অন্য সবাই একটু রোদেলার প্রতি বিরক্ত হয়,এভাবে অপমান করে দিলো বসকে! রোদেলা খাওয়া শেষ করে নির্বিকার ভঙ্গিতে উঠে চলে যায়। তাশরিফ তার টিফিন বক্সের দিকে তাকিয়ে আছে।
মেহেরিন বলে,”কিভাবে পরিচয় হলো তাশরিফ? কতদিন হয়েছে? কেমন দেখতে?”
বিরস মুখে তাশরিফ জবাব দেয়,”সম্পর্ক হয়নি আপা। এক তরফা। সে জানেই না।”
খলিলুর রহমান বলে,”যাকে বিয়ে করবে সেই জানে না। আর তুমি মা মানছে না বলে খাবি খাচ্ছো! ধূরর মিয়া! তুমি এতো কাচা কাজের জানতাম নাতো। তোমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না।”
তাশরিফ মুখ কালো করে ফেলে। সত্যিই তাকে দিয়ে কিছু হবে না। কিছুই না!
***
বৃষ্টি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছে। তাকে ভীষণ মোটা লাগছে। চেহারায় আগের সেই লাবন্যতা নেই। কেমন ফ্যাকাশে লাগছে মুখটা। আদিল আড়চোখে তার বৌকে একবার দেখে।
“কি দেখছো এভাবে?”
_আমাকে খুব বাজে লাগছে দেখতে তাই না?
_হু ,তা লাগছে। কোচিং-এ এমন রুপে তোমাকে দেখলে আমি কখনোই ক্রাশ খেতাম না।
বৃষ্টি মুখ কালো করে ফেলে। বাচ্চা হয়ে গেলে তার সৌন্দর্য পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাবে,মোটা হয়ে যাবে সে। তখন আদিল আর তার মাঝে মুগ্ধতা খুজে পাবে না। তার প্রতি বিতৃষ্ণা জন্মে যাবে। আজ ক্লাসে গিয়ে শুনেছে তাদের এক বান্ধবীর সাথে ঠিক এমনটাই হয়েছে। বৃষ্টির নিজেকে দেখে খুব খারাপ লাগছে।
আদিল বৃষ্টির দিকে তাকায়। তারপর উঠে এসে বৃষ্টিকে জরিয়ে ধরে বলে,”তোমাকে খুব বিশ্রী লাগছে দেখতে। কিন্তু একজন মাকে অসম্ভব সুন্দরী লাগছে। দেখবে তুমি?”
বৃষ্টি আদিলের দিকে তাকায়। আদিল বৃষ্টিকে ধরে ঘুরিয়ে দেয়। আয়নায় বৃষ্টির প্রতিবিম্বের দিকে আঙুল তুলে বলে,”ওই দেখো,কি চমৎকার দেখতে একজন মা।”
বৃষ্টি ঘুরে আদিলের বুকে মুখ লুকায়। তাহমিনা দরজায় নক করে ডাকে বৃষ্টিকে। আদিলের থেকে দূরে সরে দাঁড়ায় বৃষ্টি। ওড়না দিয়ে পেটটা ভালোভাবে ঢেকে নেয়। পেটটা একটু একটু করে বড় হচ্ছে। তার লজ্জা লাগে কাউকে দেখাতে। আদিল ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। তাহমিনা ঘরে ঢোকে, বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলে,”ফল যা কেটে দিয়েছিলাম খেয়েছিলে?”
বৃষ্টি মাথা নাড়ায়। তাহমিনা এসে বিছানার উপর বসে। বৃষ্টিকে বলে,”তোমাকে একটা কথা বলতে চাই। জানিনা কথাটা কিভাবে নেবে। কিন্তু আমার বলা জরুরি।”
বৃষ্টি নিচু স্বরে বলে,”আপনি বলুন মা।”
তাহমিনা কোনোরকম ভনিতা না করে বলে,”তোমার ভাসুর কাল আমায় জানিয়েছে সে তোমার মেজো বোন রোদেলা আমিনকে বিয়ে করতে চায়।”
বৃষ্টির মুখ হা হয়ে যায় শাশুড়ির কথা শুনে। তাহমিনা বলে,”ব্যক্তিগত ভাবে আমি রোদেলা আমিনকে পছন্দ করিনা। তাই আমি চাইও না ছেলের এই আবদারকে প্রশ্রয় দিতে। তুমিও তোমার বোনকে বলে দিও দয়া করে সে যেনো আর আমার ছেলেকে প্রশ্রয় না দেয়। তাহলে খুব উপকৃত হব। এতটুকু বলতে পারবে না বোনকে? আমি চাচ্ছি না তোমার বোনের সাথে সরাসরি কথা বলতে এই ব্যাপারে।”
বৃষ্টির হতভম্ব ভাব কাটছে না। তাশরিফ ভাইয়া রোদেলা আপুকে পছন্দ করে! কি আশ্চর্য কথা!
তাহমিনা উঠে চলে যায়। কিছুক্ষণ পরে আদিল ঘরে ঢুকে বলে,”মায়ের কি হয়েছে বলোতো! কেমন থমথমে মুখ নিয়ে ঘুরছে। তুমি জানো কিছু?”
বৃষ্টি মৃদু স্বরে বলে,”তাশরিফ ভাইয়া তোমার সিমেন্ট আপুকে পছন্দ করে। সেটা জানতে পেরে মায়ের এই হাল হয়েছে।”
_ওও
আদিল প্রথমে বৃষ্টির কথাটা বুঝতে পারেনি। পরক্ষনেই চোখ বড়বড় করে চেঁচিয়ে ওঠে,”মানে? কি বললে তুমি? ভাইয়া সিমেন্ট আপুকে পছন্দ করে?”
বৃষ্টি মাথা নাড়ায়।
“শুধু তাই না। কাল নাকি মাকে জানিয়েছে আপুকে সে বিয়ে করতে চায়।
আদিল ধপপ করে বিছানার উপর বসে পরে। তার হতভম্ব ভাব যেন কাটছেই না। বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে,”আমি ভাইয়ার সাহস দেখে অবাক হচ্ছি। কত বড় কলিজা হলে কেউ ওই ভয়ংকর মহিলাকে বৌ বানানোর শখ করতে পারে।”
বৃষ্টি আদিলের দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকায়। আদিল বলে,”সিমেন্ট আপুকে সিমেন্ট ভাবী হিসেবে কিছুতেই মানতে পারবো না আমি। অসম্ভব!”
***
দরজার নব ঘোরানোর আগে রোদেলা ভাবতে থাকে আজ কি গল্প শোনাবে সে যাতে ওই লোকটার সামান্য হলেও শিক্ষা হয়, লজ্জা হয়।ভেতর থেকে রাশেদুজ্জামানের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। তিনি মুঠোফোনে কারো সাথে “হাহা হিহি” টাইপ কথা বলছেন। নিশ্চয়ই কোনো প্রেমিকা হবে। অন্যদের কাছ থেকে শুনেছে রোদেলা,এই রাশেদুজ্জামান বলে লোকটার নাকি অসংখ্য প্রেমিকা আছে। এজন্যই নাকি লোকটার স্ত্রীর সাথে ডিভোর্স হয়েছে। আর সব প্রেমিকাই নাকি বিশ থেকে পঁচিশ বছর বয়সী ভার্সিটি পড়ুয়া। রোদেলার কাছে বিদঘুটে লাগে শুনতে,এই মেয়ে গুলো এই বুড়ো লোকটার ফাঁদে আটকায় কিভাবে! দামী উপহার পেলেই এভাবে আত্মমর্যাদা বিকিয়ে দিতে হবে? এদের মা বাবা কি এজন্য এদের পড়াশোনা করায়!
দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে দাঁড়ায় সে। রাশেদুজ্জামান ফোনে কথা বলতে বলতে রোদেলাকে হাত দিয়ে ইশারা করে বসতে বলে।
রোদেলা বসে। ফোন রেখে রাশেদুজ্জামান কয়েক পলক রোদেলাকে দেখে। মেয়েটা আরো সুন্দরী হয়ে গিয়েছে ! এতো পারফেক্ট শারীরিক গঠন খুবই কম দেখেছে রাশেদুজ্জামান। রোদেলা রাশেদুজ্জামানের দৃষ্টি দেখে নিজেকে গুটিয়ে নয়। রাশেদুজ্জামান গলা খাঁকারি দিয়ে বলে,”মিটিং এ আপনাদের যা কাজ দেওয়া হয়েছে আশা করি তা বুঝতে পেরেছেন?”
লোকটা আবার আপনি আপনি করে বলতে শুরু করেছে। রোদেলা কিছুটা স্বস্তি পায়। সেদিনের অপমান কিছুটা হলেও গায়ে মেখেছে তাহলে। রোদেলা মাথা নাড়িয়ে জবাব দেয়,”জ্বি স্যার।”
রাশেদুজ্জামান টেবিল থেকে একটা ফাইল উঠিয়ে রোদেলাকে দিয়ে বলে,”এটা দেখবেন। ধীরে সুস্থে দেখবেন,কোনো চাপ নেই। আর ফাইলটা সাবধানে রাখবেন।”
রোদেলা হাত বাড়িয়ে ফাইলটা নেয়। তারপর উঠে চলে যায়। রাশেদুজ্জামান পেছন থেকে দেখছে রোদেলাকে। তার মুখে পৈশাচিক হাসি!
বিড়বিড় করে বলে উঠলো,”তোমাকে খুব শীঘ্রই পেতে চলেছি আমি রোদেলা আমিন! অপেক্ষা করো।”
***
“কি? মুখটাতো শুকনো লাগছে। এই সময়ে একটু হরমোনাল চেইঞ্জ আসে , তাই বিষন্নতায় ভোগে মেয়েরা আমি জানি।”
বৃষ্টির দিকে একবার তাকিয়ে কথাটি বলে একগ্লাস কমলার রস তার দিকে এগিয়ে দেয় রোদেলা। বৃষ্টি কাঁচুমাচু মুখ করে বসে আছে। সে বুঝতে পারছে না রোদেলাকে কথাটা সে কিভাবে বলবে,আপু কিভাবে রিয়েক্ট করবে। রোদেলা বলে,”আচ্ছা আমি এখন উঠবো,তুই নিজের খেয়াল রাখিস।”
রোদেলা উঠে দাড়াতেই বৃষ্টি বলে,”আপু একটা কথা বলবো?”
_হ্যা বল,কি কথা?
বৃষ্টি একটা ঢোক গিলে বলে,”তাশরিফ ভাইয়া তোমাকে পছন্দ করে,বিয়ে করতে চায় তুমি জানতে?”
রোদেলার মনে হলো সে ভুলভাল কিছু শুনছে। আবারো জিজ্ঞেস করে,”বুঝলাম না। কি, আবার বল!”
_তাশরিফ ভাইয়া তোমাকে পছন্দ করে,ভালোবাসে, তোমাকে বিয়ে করতে চায়। তুমি জানতে?
রোদেলা বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছে। বৃষ্টি বলে, “ভাইয়া তোমাকে বিয়ে করার কথা মাকে জানিয়েছে। মা সাফ মানা করে দিয়েছে। ভাইয়ার সাথে কথা বলছে না মা। মা তোমাকে বলে দিতে বলেছে তুমি যেন ভাইয়াকে আর লাই না দাও।”
হুট করে রোদেলার মাথায় রক্ত উঠে যায়,”আর লাই না দেই মানে কি? আমি ওই লোকটাকে কখন লাই দিলাম যে উনি “আর” শব্দটা ব্যবহার করলেন?”
রাগে কেঁপে ওঠে রোদেলা। অফিসে যে মেয়েটির কথা তাশরিফ সবাইকে বলেছে সেদিন সেটা তার মানে রোদেলা ছিলো! রোদেলার বয়স নিয়ে তাহমিনা কথা শুনিয়েছে সেটা ভাবতেই তার রাগ বাড়তে থাকে।
বৃষ্টি ভয় পেয়ে যায় রোদেলার রাগ দেখে। আমতা আমতা করে বলে,”আপু তুমি……”
রোদেলা বৃষ্টির কথা না শুনেই উঠে দাঁড়ায়। বৃষ্টি বলে,”কোথায় যাচ্ছো আপু?”
_তোর শাশুড়ির কাছে।
হনহন করে বৃষ্টির ঘর থেকে বের হয় রোদেলা। বৃষ্টি বিছানা থেকে নেমে রোদেলার পিছু নেয়। আজ একটা কুরুক্ষেত্র বেঁধে যাবে সে নিশ্চিত!
দ্রুত পায়ে হেঁটে বসার ঘরে এসে দাঁড়ায়। তাহমিনা তখন বসার ঘরের সোফায় বসে তার হবু নাতী নাতনির জন্য নকশিকাঁথা সেলাই করছিলেন। তাশরিফ এবং আদিল বসার ঘরের সাথে লাগোয়া ডাইনিং রুমে বসে খাচ্ছিলো।
“আপনি বৃষ্টিকে কি বলেছেন? আমি আপনার ছেলেকে লাই দিয়েছি? এটা বলতে চেয়েছেন?”
তাহমিনা হতভম্ব হয়ে মাথা তুলে তাকায়। তাশরিফ খাওয়া রেখে রোদেলার দিকে তাকিয়ে আছে।
রোদেলা বলতে থাকে,”শুনুন। একটা কথা আপনাকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিচ্ছি। আমি কখনোই আপনার ছেলেকে লাই দিইনি আর তাকে লাই দেওয়ার নূন্যতম ইচ্ছেও আমার নেই । বুঝতে পেরেছেন আপনি?”
রোদেলার ধমকে তাহমিনা উঠে দাঁড়ায়। তাশরিফ হাত ধুয়ে উঠে পরে। আদিলও উঠে দাঁড়ায়।
রোদেলা বলে,”কি ভাবেন কি আপনারা ছেলের জন্ম দিয়ে? আর আপনার ছেলে একটু সুন্দর বলে ভেবেছেন সব মেয়ে তার জন্য পাগল হয়ে যাবে তাইনা,ভেসে যাবে তার জন্য?”
তাশরিফ মৃদু স্বরে কিন্তু দৃঢ় ভাবে বলে,”রোদেলা আপনি এভাবে মায়ের সাথে কথা বলতে পারেন না। উনি আপনার গুরুজন।”
রোদেলা তাহমিনার দিকে তাকিয়ে বলে,”আমি কখনোই কোনো মায়ের আঁচল ধরা “সন্টু মন্টু” ধেরে খোকাকে বিয়ে করতে,তাকে লাই দিতে ইচ্ছুক না। আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন।”
তারপর তাশরিফের দিকে তাকিয়ে বলে,”আপনার সাহস কি করে হয় আমাকে নিয়ে এই সমস্ত ভাবার?”
রোদেলার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে তাশরিফ। রোদেলা বলতে থাকে,”আপনার প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই, আপনাকে বিয়ে করারও আমার ইচ্ছে নেই। এটা আপনিও বুঝে নিন আর আপনার মাকেও বুঝিয়ে দিন,এই বিষয়ে তিনি আমার বোনকে যেন ফের কোনো কথা না শোনায়।”
রোদেলা চলে যাওয়ার পরে তাশরিফ তার মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। আদিলও চিন্তিত ভঙ্গিতে মাকে দেখে। এতো কান্ডের পরে মায়ের আক্রোশ যদি বৃষ্টির উপর গিয়ে পরে! যদি মা বৃষ্টিকে কথা শোনায়!
কিন্তু তাহমিনা বৃষ্টিকে কিছু না বলে তাশরিফকে বলে,”দেখলি? কতো চমৎকার একটি মেয়ে পছন্দ করেছিস দেখলি?”
তাহমিনা হাতের নকশিকাঁথা ফেলে রেখে নিজের ঘরে চলে যায়। তাশরিফ পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, বিড়বিড় করে বলে ওঠে,”সমস্যা নাম্বার ছয়: রোদেলা আমিন তোমাকে রিজেক্ট করে দিয়েছে তাশরিফ হাসান!”
চলমান…..