#দ্বিতীয়_ফাগুন
#পর্বসংখ্যা_২৭ (অন্তিম পর্ব)
#লেখিকা_Esrat_Ety
আদিল কাঁদছে। ছেলে মানুষের কান্না বরাবর অদ্ভুত লাগে রোদেলার কাছে। দেখলেই বিরক্ত হয়ে যায় রোদেলা। তবে এখন তার বিরক্ত লাগছে না,তার খারাপ লাগছে। আদিলকে দুটো শান্তনার কথা বলতে চেয়ে সে টের পেলো তার গলায় কোনো কথা আসছে না। কন্ঠনালীর ভেতরে কিছু একটা দলা পাকিয়ে উঠছে। আদিল কাঁদতে কাঁদতে ফোনে তার মায়ের কাছে তাশরিফের কথা জানাচ্ছে। রোদেলা টের পেলো কোনো এক অজানা কারনে তার চোখ দুটো ভিজে উঠছে। কি সর্বনেশে কথা! একটা বাইরের ছেলের জন্য তার চোখে পানি,লোকজনকে কি কৈফিয়ত দেবে সে? সবাই যে হাসবে! কি অযুহাত দেখিয়ে ধামাচাপা দেবে সে!
ঢাকা মেডিকেলের সামনে দু’টো সিএনজি এসে থামে। রোদেলা আদিলের কাঁধে হাত রেখে মৃদু স্বরে বলে,”নামো আদিল।”
এসেছে তারা চারজন, রোদেলা, আদিল এবং মেঘলা-সাদাফ। সিএনজি থেকে নেমে দ্রুত পায়ে হেঁটে ইমার্জেন্সি ইউনিটে ছুটে যায় তারা। আদিলকে যে ভদ্রলোক ফোন দিয়ে জানিয়েছিলো তাশরিফের এক্সিডেন্টের কথা সেই ভদ্রলোক এখনো সেখানে দাঁড়িয়ে। আদিলের সাথে কথা বলার পরে সে জানায় একটা প্রাইভেট কারের সাথে ধাক্কা লেগেছিলো তাশরিফের বাইকের।
সবাই যখন ডাক্তারের সাথে কথা বলতে ব্যস্ত রোদেলা গুটি গুটি পায়ে এসে তাশরিফের কেবিনের সামনে দাঁড়ায়। ডান হাত এবং ডান পা টা ভেঙে গিয়েছে তাশরিফের। মাথায় আঘাত লাগার সম্ভাবনা ছিলো তবে হেলমেট পরেছিলো বিধায় রেহাই পেয়েছে। গুরুতর জখম না হলেও কমপক্ষে দুই মাস ভোগাবে লোকটাকে। তাশরিফ এখন ঘুমিয়ে আছে । ডাক্তার তাকে ব্যথা নাশক ইনজেকশন দিয়ে দিয়েছে। কপালের কাছটাতে বিশ্রী ভাবে কেটে গিয়েছে। ডাক্তার ব্যান্ডেজ করে দিয়েছে। রোদেলা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে কেবিনের দরজার কাচ দিয়ে। হঠাৎ করে মানুষটাকে তার ছোট্ট একটা শিশু মনে হচ্ছে। নিচের ঠোঁট উল্টিয়ে রেখেছে,মনে হচ্ছে এক্ষুনি কেঁদে ফেলবে। যন্ত্রনায় ফরসা মুখটা কেমন নীল হয়ে আছে। রোদেলা চোখ সরিয়ে নেয়।
“কোথায় আমার বাবা,কোথায়।”
তাহমিনার আর্তনাদ কানে যেতেই রোদেলা হকচকিয়ে উঠে তাশরিফের কেবিনের দরজা থেকে সরে দাঁড়ায়। একপাশে সরে মাথা নিচু করে রেখেছে সে। তাহমিনাকে এসে আগলে নেয় আদিল। ছেলের জন্য আর্তনাদ করেই চলেছে সে। মেঘলা এসে তাকে শান্তনা দেয়। তাহমিনা সেসব শোনার মতো পরিস্থিতিতে নেই। বুক চাপড়ে সে কেঁদেই যাচ্ছে।
রাত তিনটা বেজে সাত মিনিট। ওয়েটিং রুমে সবাই বসে আছে চুপচাপ। রোদেলা দূরে একটা কোনায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। তাহমিনার চোখের সামনে ঘুরঘুর করে তাকে বিরক্ত করতে চায় না রোদেলা। নার্স এসে জানালো তাশরিফের হুঁশ ফিরেছে। কথা বলছে সে। তাহমিনা উঠে প্রায় ছুটে গেলেন তার ছেলের কাছে। বাকিরাও তার পিছু পিছু গিয়েছে। শুধু যায়নি রোদেলা। সে চুপচাপ যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলো সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে।
ছেলের চোখের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাহমিনা চেঁচিয়ে ওঠে,”কি খেয়ে বাইক চালাচ্ছিলি বল, বেয়াদব ছেলে,বল!”
তাশরিফ ম্লান হেসে অস্ফুট স্বরে জবাব দেয়,”আমি ঠিক আছি মা। এভরিথিং ইজ ফাইন।”
_এক হাত,এক পা ভেঙ্গে এভরিথিং ইজ ফাইন? একটা থাপ্পড় মেরে তোকে….
আদিল এসে মাকে ধরে বলে,”কি হচ্ছে মা! এটা হসপিটাল। ভাইয়া যে কথা বলার অবস্থায় আছে এটা কি যথেষ্ট নয়? তুমি চলো,তুমি বাইরে চলো। পরে কথা বলবে তুমি।”
তারপর তাহমিনাকে টেনে নিয়ে যায় সেখান থেকে আদিল। আফতাব হাসান ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে রেস্ট নিতে বলে বাইরে যায়। কেবিনে সাদাফ আর মেঘলা দাঁড়িয়ে। সাদাফ বলে,”কি ভায়া? রেস্টুরেন্ট থেকে তাড়াহুড়ো করে বেড়িয়ে গিয়েছিলে প্রাইভেট কারের নিচে পরতে? আচ্ছা বলো তো সমস্যা কি হয়েছিলো? ওভাবে বেড়িয়ে গিয়েছিলে কেনো? প্রেমিকার বিয়ে হয়ে যাচ্ছিলো? তা আটকানোর জন্য ছুটছিলে বাইক নিয়ে ওভাবে?”
তাশরিফ শুকনো হাসি হাসে। মেঘলা সাদাফকে থামিয়ে দিয়ে বলে,”আপনিও না! এসব কি বলছেন ছেলেটাকে? এখন মজা করার সময়? চলেন বাইরে চলেন। ও বিশ্রাম নিক। ”
মেঘলা সাদাফ বেড়িয়ে গেলে তাশরিফ শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে দরজার দিকে। কোনো একজন বিশেষ ব্যক্তির অস্তিত্ব খুঁজতে ব্যস্ত তার দুটি চোখ। পরক্ষনেই মনে পরে, সে এখানে কেনো আসবে? সে তো আসবে না। সে কেনো আসবে? সে তো একজন হৃদয়হীনা!
কয়েক মুহূর্ত চোখ দুটো বন্ধ করে থাকে সে। হঠাৎ কানে কাঁচের চুড়ির রিনিঝিনি আওয়াজ যেতেই চোখ খুলে তাকায় । দৃষ্টি ঘুরিয়ে দরজার দিকে দিতেই কিছুটা চমকে ওঠে । অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে ভাবে তার কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি এসে কেবিনের দরজার পর্দা ধরে দাঁড়িয়ে আছে। তাশরিফ রোদেলার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।
“আসবো?”
রোদেলা দাঁড়িয়ে আছে তার অনুমতির অপেক্ষায়। তাশরিফ ক্ষীণ কিন্তু গম্ভীর কন্ঠে বলে,”ভালো লাগলে আসুন।”
রোদেলা গুটিগুটি পায়ে ভেতরে ঢোকে। রোদেলাকে দেখে তাশরিফ ভেতরে ভেতরে যতটা খুশি হয়েছে, বাইরে সে ততোটাই গাম্ভীর্য বজায় রেখে বলে,”আসলেন কেনো?”
রোদেলা তাশরিফের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,”আমার আত্মীয় এক্সিডেন্ট করেছে। আমার আসাটা উচিৎ নয়কি? আমি কি অসামাজিক?”
তাশরিফ ম্লান হেসে বলে,”এসেছেন,তা আপনার হবু জানে? ফোন করে বলেছেন তাকে? ফোন নাম্বার দেওয়া নেওয়া হলো তখন দেখলাম!”
রোদেলা গম্ভীর কন্ঠে বলে,”হবু হবু করছেন কেন? সে কি আমার হবু? বিয়ে তো ঠিক হয়নি এখনো!”
_করেই তো ফেলবেন। এতো ভালো পাত্র,এতো ভালো চাকরি, এতো ভালো বডি পাত্রের!
রোদেলা বিরক্ত হয়। তারপর বলে,”আপনাকে বলেছি আমি এখানেই বিয়ে করবো? বলেছি একবারো? আমার পাত্রকে পছন্দ হয়নি।”
_যেখানে ইচ্ছা সেখানে বিয়ে করেন। আমাকে কৈফিয়ত দিচ্ছেন কেন।
তাশরিফ কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে বলে,”ব্যাপার কি আপনার? এক্সিডেন্ট করেছি বলে এখানে ছুটে এসেছেন আবার আমাকে কৈফিয়তও দিচ্ছেন। আচ্ছা প্রেমে টেমে পড়েছেন নাকি আমার?”
রোদেলা বলে,”একটা পা আর একটা হাত ভেঙে বসে আছেন তবুও মজা করতেই হবে? আপনি না কখনো শোধরাবেন না তাইনা? এই একটা কারনে আপনাকে আমার বিরক্ত লাগে। আর প্রেমে পরবো কোন দুঃখে আপনার? আপনি প্রেমে পড়ার জিনিস? বিরক্তিকর একজন লোক আপনি।”
তাশরিফ মুখটা শুকনো করে ফেলে, ঠান্ডা গলায় জবাব দেয়,”ওও।”
_কিভাবে বাইক চালান আপনি? চোখ কোথায় থাকে?
তাশরিফ কোনো জবাব দেয়না। রোদেলা বুঝতে পারে তাশরিফ তার কথায় অভিমান করেছে। সে তাশরিফকে ঠান্ডা গলায় বলে,”এরপর থেকে সাবধানে বাইক চালাবেন।”
_আপনার বলে দিতে হবে না। আপনি যান। এখানে এতক্ষণ ধরে বসে আছেন কেনো? মা এসে দেখলে ভাববে আপনি আমায় লাই দিচ্ছেন। আপনি যান।
গম্ভীর কন্ঠে বলে তাশরিফ।
রোদেলা ম্লান হেসে বলে,”ঠিক তাই। ভালো কথা বলেছেন। আমি উঠি হ্যা? আপনি বিশ্রাম নিন।”
রোদেলা উঠে চলে যায়। তাশরিফ আহত চোখে রোদেলার যাওয়া দেখে। অভিমান করে যেতে বলেছে তাই চলে যাবে এভাবে? আর কিছুক্ষণ বসে থাকা যেতো না? পা দুটো বেশি লম্বা এই মেয়ের!
তাশরিফের ওই পা দুটো আটকানোর কোনো ক্ষমতা বা অধিকার কিছুই নেই,নয়তো ওই পা দুটো আজ এই কেবিনের বাইরে ফেলতে পারতো না রোদেলা আমিন।
শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বিড়বিড় করে বলে ওঠে তাশরিফ,”আমায় একটু সুস্থ হতে দিন রোদেলা আমিন। আপনার খবর আছে! ওই পা দুটো পুরোপুরি আটকে ফেলবো আমি! একটুও দেরি করবো না,আই প্রমিজ! ”
***
অফিসের সবাই আজ একজোট হয়ে তাশরিফকে দেখতে এসেছে হসপিটালে। তাদের সাথে রোদেলাও এসেছে। সবাই তাশরিফের সাথে কথা বলছে তখন রোদেলা দূরে দাঁড়িয়ে তাকে দেখছে।
খলিলুর রহমান সহানুভূতি দেখিয়ে বলে,”তুমি চিন্তা করো না তাশরিফ। একমাস ফুল বেড রেস্টে থাকো তুমি। তোমার কাজ গুলো এই একমাস রোদেলা আমিন করবে। নতুন জিএম স্যার নির্দেশ দিয়েছে।”
তাশরিফ রোদেলার দিকে তাকায়। মেহেরিন বলে ওঠে,”রোদেলাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছি। কোনো সমস্যা হলে তোমাকে ফোন করে নেবে। রোদেলাকে এই একমাস তোমার কাজের দায়িত্ব দেওয়ার ব্যাপারে তোমার কোনো আপত্তি নেই তো?”
তাশরিফ ম্লান হাসে। যাকে নিজের সবকিছুর দায়িত্ব দিতে চাচ্ছে সে, তাকে অফিসের দায়িত্ব দিতে কেনো আপত্তি থাকবে তার।
“একি তাশরিফ। তুমি নামছো কেনো?”
সবাই চিন্তিত ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে তাশরিফের দিকে।
একহাত দিয়ে বেডে ভর দিয়ে অন্যহাতে ক্রাচ ধরে ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায় তাশরিফ। ক্ষীণ কন্ঠে বলে,”ওয়াশ রুমে যেতে হবে।”
অসহ্য যন্ত্রনা দাঁতে দাঁত চেপে বাম পা মাটিতে ফেলতেই তাল হারিয়ে পরে যেতে নেয়। কয়েক মুহূর্ত পরে সে বুঝতে পারে তাকে কেউ শক্ত করে ধরে ফেলেছে ছুটে এসে। সে আর কেউ না, রোদেলা আমিন। তাশরিফ যন্ত্রনা ভুলে বাঁকা হাসি হাসে। তাশরিফের চোখে চোখ পরতেই রোদেলা তাকে ঠিক করে দাঁড় করিয়ে দিয়ে দূরে সরে দাঁড়ায়।
তাহমিনা রোদেলার দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ করে সে এই মেয়েটার চোখে তার ছেলের জন্য উৎকণ্ঠা আবিষ্কার করলো। সে খেয়াল করলো তার খুব একটা খারাপ লাগছে না।
***
“আপু আমায় ডেকেছিলে?”
রোদেলা মেঘলার দিকে তাকিয়ে আছে। সাদাফ বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে আছে, মেঘলা বিছানার পাশে দাড়িয়ে। রোদেলাকে দেখে আমতা আমতা করে মেঘলা বলে,”হ্যা। আয় বস আগে।”
রোদেলা কিছুটা অবাক হয়ে বলে,”কি ব্যাপার? তোমাদের মুখ এতো শুকনো লাগছে কেনো? দুটোতে কি ঝগড়া করেছো নাকি?”
মেঘলা সাদাফের দিকে তাকিয়ে বলে,”কি হলো! বলেন আপনি!”
_তুমি বলো।
_আপনি বলেন।
_আরে তুমি বলো।
রোদেলা বিরক্ত হয়ে বলে,”তোমাদের কারো বলতে হবে না। এই আমি গেলাম। রাত দুপুরে ডেকে এনে মশকরা করা হচ্ছে।”
রোদেলা চলে যেতে নিলে মেঘলা একটা হাত ধরে ফেলে। সাদাফ বিছানা থেকে নেমে দাঁড়িয়ে বলে,”আসলে একটা বিচ্ছিরি ব্যাপার হয়েছে রোদেলা। আমার নিজেকে ভীষণ ছোটো লাগছে। তোমাকে যে কিভাবে বলি!”
_ভাইয়া আপনি অন্তত আমার সাথে এভাবে কথা বলবেন না। কি হয়েছে ফ্রাংকলি বলুন!
_আসলে, মিহিরের একটা খালাতো বোন আছে রোদেলা। এইবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। সে নাকি ছোটো বেলা থেকে মিহিরকে পছন্দ করতো। ছোটো বলে মিহির পাত্তা দিতো না। কিন্তু গতকাল সেই মেয়ে নয়টা টা ঘুমের ঔষধ খেয়েছে মিহিরের বিয়ের কথা শুনে। দ্রুত হাসপাতালে নিতে পেরেছে বলে বেঁচে গিয়েছে। আর দুই ফ্যামিলি মিলে ঠিক করেছে মিহিরের সাথে ওই মেয়ের বিয়ে দেবে। মিহির খুব লজ্জা পাচ্ছে তোমায় ফোন দিয়ে বলতে এসব কথা । আমার হাত ধরে বলেছে তোমায় সরি বলে দিতে।
রোদেলা কয়েক মূহুর্ত সাদাফের দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর খুশিতে গদগদ হয়ে উচ্চশব্দে চেঁচিয়ে বলে,”তাই নাকি!”
সাদাফ আর মেঘলা দুজনে বেশ অবাক হয়ে যায়। রোদেলা হাসছে দেখে মেঘলা তার মাথায় একটা গাট্টা মেরে বলে,”তোর বিয়ে ভেঙেছে আর তুই হাসছিস!”
রোদেলা থতমত খায়। বিড়বিড় করে বলে,”তাই তো! আমি হাসছি কেনো! আমার তো কষ্ট পাওয়া উচিত। জীবনে প্রথম কোনো বিয়ের প্রস্তাব এক্সেপ্ট করেছিলাম…..”
সাদাফ বলে,”মন খারাপ করো না রোদেলা! আই প্রমিজ,ওই মিহিরের থেকেও ভালো পাত্র জুটিয়ে ফেলবো তোমার জন্য। আর ওই মিহির কি একটা পাত্র হলো নাকি? চেহারা অতটাও ভালো না। ”
মেঘলা আর রোদেলা দুজনেই সাদাফের শান্তনা শুনে হেসে ফেলে।
মেঘলা বলে,”আপনি যেভাবে পল্টি খেলেন তাতে বোঝাই যাচ্ছে আপনি প্রকৃত রাজনীতিবিদ! পল্টিবাজ কোথাকার!
_এই কি বললে তুমি?
_ঠিকই বলেছি। ফের কোনো বিয়ের প্রস্তাব আনার আগে দেখে নেবেন পাত্রের কোনো খালাতো বোন আছে কি না, তা না হলে আপনার খবর আছে।
রোদেলা মেঘলাকে বলে,”ভাইয়া আর তুমি ঝগড়া কনটিনিউ করো। আমি এলাম। আমার একটা ইম্পরট্যান্ট কাজ আছে। ”
***
আজ দুদিন হলো তাশরিফকে হসপিটাল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। সে ক্রাচে ভর করে প্রয়োজনে হাঁটাহাঁটি করে। এছাড়া সারাদিন বিছানাতেই শুয়ে বসে কাটিয়ে দেয়।
ফোনের রিংটোনের শব্দ পেয়ে তাশরিফ ফোনটা হাতে নেয়। ফোনের স্ক্রিনে রোদেলা আমিনের নাম্বার দেখে একটা বাকা হাসি দেয় সে। সে বেশ লক্ষ্য করেছে রোদেলা আমিন তার প্রতি কনসার্ন দেখাচ্ছে।
ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরেই গম্ভীর কন্ঠে বলে,”বলুন।”
রোদেলা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলে , “আমার বিয়েটা ভেঙ্গে গিয়েছে।”
তাশরিফ কথাটি শুনে অতিরিক্ত খুশিতে “ইয়েস” বলে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ঝাকাতেই যন্ত্রনায় কোকিয়ে ওঠে। রোদেলা উতকন্ঠা নিয়ে বলে,”কি হলো! স্যার আপনি ঠিক আছেন?”
তাশরিফ স্বাভাবিক গলায় বলে,”হু।”
রোদেলা বলতে থাকে,”অবশ্য বিয়েটা তো আমিই ভেঙে দিতাম। ভালোই হলো,আমার কাঁধে দোষ ওঠেনি।”
তাশরিফ খুশিতে আত্মহারা হয়ে হাতের যন্ত্রনার কথা ভুলে যায়। রোদেলা আমিনের এই অস্বাভাবিক আচরণ গুলো তাশরিফকে বুঝিয়ে দিচ্ছে সে তাশরিফের প্রতি ইন্টারেস্টেড। কিন্তু পেঁচা মুখী তা মুখে স্বীকার করছে না ! তাশরিফ মনে মনে ঠিক করে ফেলে পেঁচা মুখীর মুখ দিয়েই স্বীকার করিয়ে নেবে সবটা!
তাশরিফের নীরবতা দেখে রোদেলা বলে,”স্যার….আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন!”
তাশরিফ হাসি চাপিয়ে রেখে গম্ভীর কন্ঠে বলে,”এটা কি অফিশিয়াল কোনো কথা রোদেলা আমিন?”
রোদেলা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলে,”না তো স্যার।”
_বা আমি কি আপনার থেকে জানতে চেয়েছি?
_না স্যার।
_তাহলে আপনি আমায় বলছেন কেনো?
রোদেলা বিব্রত হয়ে পরে। সে তাশরিফকে এসব কথা কেনো বলছে তার ব্যখ্যা তো সে নিজেও খুঁজে পাচ্ছে না।
ওপাশ থেকে তাশরিফ বলতে থাকে,”তা বিয়েটা ভাঙলো কেনো?”
_পাত্র তার কলেজ পড়ুয়া খালাতো বোনকে বিয়ে করবে।
তাশরিফ বলে,”বেশ ভালো। কচি মেয়ে পেয়েছে,তাই বিয়ে করে নিচ্ছে। পাত্র বুদ্ধিমান। আমিও ঠিক করেছি সুস্থ হলে ক্লাস টেনে পড়ুয়া মায়ের পছন্দ করা মেয়েটাকে বিয়ে করে নেবো। এটাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। বেশি বয়সী মেয়ে বিয়ে করাটা বোকামি বুঝলেন। এরা অতিরিক্ত বুদ্ধিমতি হয়। অতিরিক্ত বুদ্ধিমতিদের সাথে সংসার করা যায় না।”
রোদেলা চুপ করে থাকে। তাশরিফের কথায় সে বেশ আহত হয়। কিন্তু সে দেখতে পারছে না তাশরিফ ফোনের ওপাশে বসে হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে গা দুলিয়ে হাসছে।
কিছুক্ষণ পরে হাসি থামিয়ে বলে,”আচ্ছা ঠিক আছে। রাখছি, কেমন? ”
তাশরিফ ফোন কেটে দেয়। রোদেলা কান থেকে ফোনটা নামিয়ে চুপচাপ বসে থাকে।
***
এক হাতে বৃষ্টি এবং তাশরিফের দেখভাল করতে হয় তাহমিনার। এই শরীরে এতো চাপ নিয়ে সেও কিছুটা অসুস্থ হয়ে পরেছে। দুপুর বেলা কলিং বেলের আওয়াজ পেয়ে দরজা খুলে দেখে রোদেলা দাঁড়িয়ে আছে। তাহমিনাকে দেখে সালাম দেয় সে। তাহমিনা সালামের জবাব দিতেই রোদেলা বলে,”অফিশিয়াল কাজে এসেছি। একটা ফাইল স্যারকে দেখাতে হবে।”
তাহমিনা দরজা থেকে সরে দাঁড়ায়। রোদেলা ভেতরে ঢুকে বলে,”স্যার কোথায়?”
_তার ঘরে। যাও।
রোদেলা ইতস্তত করে বলে,”সত্যিই যাবো?”
তাহমিনার বেশ হাসি পাচ্ছে রোদেলার প্রশ্ন শুনে। সেই অহংকারী, বদমেজাজি মেয়েটি হঠাৎ করে এতোটা বিনয়ী হয়ে উঠেছে কেনো সে বুঝতে পারে না। সে স্বাভাবিক গলায় বলে,”যাও।”
“আসবো?”
তাশরিফ মাথা তুলে তাকিয়ে আছে। মনে মনে বলে,”এটা আপনারই ঘর হবে একদিন। তখন কি না আমাকেই আপনার কাছে পারমিশন নিয়ে ঢুকতে হয়।”
মুখে বলে,”আসুন।”
রোদেলা ভেতরে ঢোকে। তাশরিফ নিজের বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে আছে। রোদেলা গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যায়। তার হাতে একটা ফাইল। সেটা সে তাশরিফের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,”এটা একটু বুঝিয়ে দিলে ভালো হতো স্যার। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। যদি কোনো ভুল করে ফেলি!”
তাশরিফ রোদেলার চোখে চোখ রেখে হাত বাড়িয়ে ফাইলটা নেয়। তারপর বলে,”একটা চেয়ার টেনে বসুন।”
রোদেলা একটা চেয়ার টেনে বসে পরে। তাশরিফ রোদেলাকে সব বুঝিয়ে দিচ্ছে। রোদেলা তার দিকে তাকিয়ে শুনছে তার কথা।
“এইবার বুঝতে পেরেছেন?”
রোদেলা মাথা ঝাঁকায়।
_বেশ।
এমন সময় রান্নাঘর থেকে তাহমিনার চিতকার শোনা যায়। রোদেলা তাশরিফের দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ায়। দৌড়ে রান্নাঘরে এসে দেখে তাহমিনার পায়ে গরম পানি পরেছে। সে মেঝেতে বসে গলাকাটা মুরগির মতো ছটফট করছে। রোদেলা ছুটে গিয়ে নিচু হয়ে বসে। বৃষ্টি ধীরে ধীরে নিজের ঘর থেকে আসে,তাশরিফও ক্রাচে ভর দিয়ে এসে দাঁড়ায় রান্নাঘরের দরজায়।
রোদেলা একটা বাটিতে কিছু বরফ নিয়ে তাহমিনার পাশে বসে পরে। তারপর তাহমিনার জ্বলে যাওয়া পা টা ধরে বাটিতে বরফ পানির ভেতরে ডুবিয়ে দেয়।
তাহমিনা গোঙাতে থাকে, হঠাৎ অস্ফুট স্বরে বলে,”পায়ে হাত দিও না।”
রোদেলা গম্ভীর হয়ে বলে,”অসুবিধা নেই। আপনি আমার মায়ের বয়সী।”
তাহমিনা রোদেলার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে মনে বলে,”এই মেয়ে? তুমি ঠিক আছো তো? তুমি এতো ভালো হলে কবে?”
রোদেলা উঠে গিয়ে বৃষ্টির কাছ থেকে একটা মলম এনে তাহমিনার পায়ে লাগিয়ে দেয়। তারপর বলে ওঠে,”আপনার বড় ছেলে অসুস্থ। বৃষ্টিও অসুস্থ। বাড়িতে আর কেউ নেই। আমি যদি আপনাকে ধরে ধরে আপনার রুমে দিয়ে আসি আপনার কোনো অসুবিধা আছে?”
তাহমিনা রোদেলার মুখের দিকে তাকিয়ে মাথা ঝাঁকায়। তার কোনো অসুবিধা নেই। রোদেলা এসে তাহমিনার হাত ধরে টেনে আস্তে আস্তে উপরে তোলে। যন্ত্রনায় পা টা যেনো অবশ হয়ে গিয়েছে। রোদেলা বিড়বিড় করে বলে,”আমার কাঁধে হাত রাখুন। নয়তো পরে যাবেন।”
তাহমিনাকে বিছানায় শুইয়ে তার পায়ের কাছে বসে পরে রোদেলা। এবার বেশ ভালো করে মলম লাগিয়ে দিতে থাকে সে।
তাশরিফ ক্রাচে ভর দিয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে মুচকি হাসছে। তাহমিনা তার দিকে তাকায়। তাশরিফ মনে মনে বলে,”কি মা? এবার বলো, শশুর শাশুড়ির সেবা করতে পারবে না এই মেয়ে?”
***
#দ্বিতীয়_ফাগুন গল্পের কাহিনী দুইমাস এগিয়ে যায়। এই দুইমাসে মূখ্য যে পরিবর্তন গুলো হয়েছে তা হলো,
১.”তাশরিফ সুস্থ হয়ে উঠেছে (আলহামদুলিল্লাহ, গল্পের নায়ক ল্যাংড়া থাকবে তা কি করে হয়!),
২.বৃষ্টির পেটটা আরো বড় হয়েছে,সামনের মাসে তার ডেলিভারি!
৩. সুহা সিরাতের সামনের পাটির দাঁত দুটো করে পরে গিয়েছে,মেঘলার জীবনে আপাতত এটা ছাড়া আর কোনো দুঃখ নেই।
৪.আদিল একজন দায়িত্ববান স্বামীর পাশাপাশি, দায়িত্ববান বাবা হওয়ার প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।
৫. তাহমিনা রোদেলাকে কোনো এক অজানা কারনে পছন্দ করতে শুরু করেছেন।(আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ)
#দ্বিতীয়_ফাগুন গল্পে এই দুই মাসে যে জিনিসটার পরিবর্তন হয়নি তা হলো রোদেলা আর তাশরিফের সম্পর্ক। রোদেলা তাশরিফের কাছে স্বীকারই করছে না তার অনুভূতির কথা। বলা বাহুল্য এই মেয়ে ভাঙে তবু মচকায় না। তাশরিফ এখন হাল ছেড়ে দিয়ে অন্য পরিকল্পনা করেছে। তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সে লোকবল জুটিয়ে ফেলেছে ইতিমধ্যে। চলুন দেখা যাক ভীতু তাশরিফের পরিকল্পনা ঠিক কি!
***
“আপনারা সবাই রেডি তো?”
পাঁচটি মাথা একসাথে বলে ওঠে,”একেবারেই প্রস্তুত। তুমি শুধু ইশারা দেবে!”
তাশরিফ গম্ভীর হয়ে বলে,”আজ যদি কিছু না হয় তাহলে আমি নির্বাসনে যাবো।”
পাঁচ জনের একজন বলে ওঠে,”থিংক পজিটিভ তাশরিফ থিংক পজিটিভ! ওই যে দেখো রোদেলা আসছে তুমি তৈরি হও! আমরা লুকাচ্ছি।”
তাশরিফ মাথা ঘুরিয়ে পেছনে তাকাতেই দেখে তার পেঁচা মুখী ধীরপায়ে এগিয়ে আসছে। তাশরিফ বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। রোদেলা আমিনকে তার নার্ভাসনেস বুঝতে দেওয়া যাবে না।
রোদেলা এসে তাশরিফের সামনে দাঁড়ায়। চোখে চোখ রেখে বলে,”আজ অফিসে এলেন যে ঘটা করে, আপনার ছুটি তো আরো দুদিন বাকি আছে।”
তাশরিফ বলে,”আজ একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ করতে এলাম।”
_কি এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজ?
_আপনাকে তুলে নিতে এসেছি।
রোদেলা অবাক হয়ে বলে,”মানে?”
_মানে সেটাই যেটা আপনি শুনেছেন।
রোদেলা বিরক্ত ভঙ্গিতে বলে,”সুস্থ হতে না হতেই আবারো শুরু করে দিয়েছেন?”
তাশরিফ হাসে,হাসতে হাসতেই বলে,”তুলে নিয়ে যাবো না, যদি আমার কিছু অনুরোধ আপনি রাখেন।”
_কিছু অনুরোধ? সেগুলো কি কি?
_থেকে যান।
_মানে?
_মানে আর আমাকে অপেক্ষা না করিয়ে থেকে যান আমার জীবনে।
_আর আপনার মা? সে বুঝি আমাকে মেনে নেবে? আমি যে বড্ড অযোগ্য।
_মা মেনে নিয়েছে ,এক শর্তে।
_কি শর্ত? কি এমন শর্তে সে একজন বেশি বয়সী,রাগী, অহংকারী, বদমেজাজি মেয়েকে মেনেছেন?
_সময় মতো তার নাতি নাতনি তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে।
রোদেলা চুপ হয়ে যায়। তাশরিফ বলতে থাকে,”জানেন আমার ভাইয়ের বৌটা খুব মিষ্টি। ওর জা হিসেবে থেকে যান।”
কয়েক মুহূর্ত চুপ থেকে বলে,”আমার মা,খুব ভালো মহিলা,বাইরে রাগী,ভেতরটা নরম। বৃষ্টির কাছে জেনে নিয়েন। তার বড় বৌ হয়ে থেকে যান।
আর সেটা না পারলে,আমার বাবা, অত্যন্ত বিশুদ্ধ একজন মানুষ,তার আদরের বড় বৌমা হয়ে থেকে যান।
আর তা না হলে,আমার ভাই! চমৎকার একটি ছেলে,তার সিমেন্ট ভাবী হয়ে থেকে যান।
জানেন আমার ভাই আর ভাইয়ের বৌয়ের শুনেছি ছেলে হবে, আপনি ওসব কিছু হয়ে থাকতে না পারলে আমার ভাইপোর বড় চাচী হয়ে থেকে যান।”
এই পর্যন্ত বলে তাশরিফ একটু সময় নেয়, তারপর বলে,”এসব কিছু না পারলে অন্তত আমার বৌ হয়ে থেকে যান। তবুও থেকে যান।”
রোদেলা নীরব থাকে। তাশরিফ উতকন্ঠা নিয়ে বলে,”আল্লাহর ওয়াস্তে এখন আমায় সম্মতি দিন রোদেলা আমিন। দেখছেন দুজনের বয়স বেড়ে যা তা অবস্থা হয়ে যাচ্ছে । এরপর দুজনের কপালে ভালো পাত্র পাত্রীও জুটবে না। দেখেন আমার দিকে তাকিয়ে,মাথার চুল উঠে মাথা টাক হতে শুরু করেছে।”
রোদেলা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। দেয়ালের ওপাশ থেকে পাঁচ টা মাথা উঁকি দিয়ে ওদের দেখে। রোদেলার নীরবতা সবাইকে রাগিয়ে দিচ্ছে। একজন বলে ওঠে,”এখন একটা সিএনজি ডাকতেই হবে দেখছি। তারপর গিয়ে ওর মুখ চেপে ধরে সিএনজিতে ওঠাতে হবে।”
আরেকজন বাঁধা দিয়ে বলে,”দাঁড়াও। আরো কিছুক্ষণ দেখি।”
রোদেলা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। বাইরে হঠাৎ বৃষ্টি পরতে শুরু করেছে। রোদেলা সেদিকে তাকায়। তাশরিফ কিছুটা উত্তেজিত হয়ে পরে,”সম্মতি দেবেন না,তাই না?”
রোদেলা এখনো চুপ। তাশরিফ রোদেলার দিকে শীতল চোখে তাকিয়ে আছে। তারপর অভিমানের সুরে বলে,”আচ্ছা ঠিক আছে,সম্মতি দিতে হবে না।”
রোদেলা তাশরিফের দিকে একপলক তাকিয়ে পোর্চের বাইরে পা রাখে। সে বৃষ্টিতে ভিজছে। তাশরিফ আহত চোখে তার হৃদয়হীনাকে দেখে কয়েক মুহূর্ত, তারপর প্রস্তুতি নেয় পাঁচ সদস্যের টিমকে ইশারা করার।
এমন সময় রোদেলা মাথা ঘুরিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলে,”আমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজবেন তাশরিফ?”
কিছু সময় তাশরিফ তাকে দেখে।
তাশরিফ পেয়ে গেছে তার উত্তর। হ্যা তার পেঁচা মুখী তাকে সম্মতি দিয়ে দিয়েছে। সে প্রায় ছুটে গিয়ে রোদেলার সামনে দাঁড়ায়। রোদেলা তার দিকে তাকিয়ে আছে, মুখে প্রশস্ত হাসি তার।
তাশরিফ কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,”আমি কি আপনার হাতটা একটু ধরতে পারি?”
রোদেলা কিছু বলে ওঠার আগেই তাশরিফ খপ করে রোদেলার বা হাতটা ধরে ফেলে। বুক পকেট থেকে একটা আংটি বের করে চোখের পলকেই রোদেলাকে পড়িয়ে দেয়।
রোদেলা হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। তাশরিফ বলে,”হয়ে গিয়েছে বাগদান। এখন থেকে আগামী তিন ঘণ্টা আপনি আমার হবু।”
রোদেলা অস্ফুট স্বরে বলে,”আগামী তিন ঘণ্টা মানে? তার পরে আমি কি?”
_আমার বৌ, ভীতু তাশরিফ হাসানের বৌ।
রোদেলা অবাক হয়ে তাশরিফকে দেখছে। তাশরিফ বলে,”চলুন দেরী করবেন না। কাজীকে বসিয়ে রেখে এসেছি। আত্মীয় স্বজন সবাইকে খবর দেওয়া। মা বধূবরণ করবে বলে বসে আছে। বেশি দেরি করলে বাড়িতে পৌঁছাতে অনেক রাত হয়ে যাবে। মা বেশি রাত জাগতে পারেন না। ঘুমিয়ে গেলে বধূবরণ করবে কে? আর তাছাড়া…..”
_তাছাড়া কি?
_বিয়ে করতে যত রাত হবে বাসর রাত টা ততো ছোটো হয়ে যাবে। আমি রিস্ক নিতে চাচ্ছি না!
রোদেলা মাথা নিচু করে ফেলে। দেয়ালের ওপাশ থেকে কেউ একজন চেঁচিয়ে ওঠে,”এই তাশরিফ! ভাই তোমার কিছু হলো ? আমাদের মশা কামড়াচ্ছে ভাই! আর পারছিনা লুকিয়ে থাকতে।”
রোদেলা অবাক হয়ে যায় সেদিকে তাকিয়ে। দেয়ালের ওপাশ থেকে উঁকি দিচ্ছে খলিলুর রহমান,মেহেরিন,তনি, রিয়াজ এবং শারমিন।
রোদেলা হতভম্ব ভাব নিয়ে বলে,”আপনারা!”
তাশরিফ রোদেলার দিকে তাকিয়ে বলে,”ওনাদের আজ ভাড়া করেছিলাম আপনাকে তুলে নেওয়ার জন্য। আজ যদি সত্যিই আমার সাথে উলটো পাল্টা কিছু করতেন ,তাহলে আপনাকে সত্যিই আমি তুলে নিতাম।”
রোদেলা তাশরিফের দিকে হা করে থাকে। তাশরিফ বলে,”চলুন কাজী এসে বসে আছে বাড়িতে। সব সমস্যা গুলো দুজন মিলে রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করে আমার নোট প্যাড থেকে ভ্যানিশ করে ফেলি! সেভেন প্রবলেম! ওয়ান সল্যুশন।”
_মানে?
_মানে কিছু না, চলুন। আচ্ছা দু’জনেই ভিজে একাকার হয়ে গিয়েছি দেখছি। সমস্যা নেই,এটাই আমাদের বিয়ের সাজ। ঠিকাছে?
রোদেলা মাথা নাড়িয়ে অস্ফুট স্বরে বলে,”ঠিকাছে!”
~সমাপ্ত~