#নব_প্রেমের_সূচনা
#Sumaiya_Akter_Bristy
#পর্ব_০৩
আরভী নগর ভবনে বসে নিজের কাজ করছিলো। আজ একটু সকাল সকাল’ই এসেছে এখানে। এখনো সবাই নগর ভবনে এসে উপস্থিত হয় নি। একটু আগে আরভী নিজের পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট ইমতিয়াজকে কল করে আগে আগে চলে আসতে বলেছে। কিছু হিসাব-নিকাশ বাকি রয়েছে ইমতিয়াজের সাথে।
খানিক সময় বাদে দরজায় নক হলে আরভী ভিতরে আসার অনুমতি দেয়। ইমতিয়াজ এসে আরভীর সামনে দাঁড়ালে আরভী চেয়ারের দিকে ইশারা করে বললো,”বসুন।”
“জ্বি ম্যাম।” বলে ইমতিয়াজ বসে পড়লো।
“তা দিনকাল কেমন যাচ্ছে ইমতিয়াজ ভাই?”
“এই তো ম্যাম আপনার কৃপায় ভালোই যাচ্ছে।” ইমতিয়াজের এ কথায় আরভী যেনো দারুন মজা পেলো। রহস্যময়ী হেসে বললো,”আচ্ছা ইমতিয়াজ ভাই একটা কথা বলুন তো!”
“জ্বি ম্যাম কি কথা?”
“নাহিদ চৌধুরীর জন্য ঠিক কতোদিন ধরে কাজ করছেন?”
আরভীর উক্ত কথায় ইমতিয়াজ ঘাবড়ে গেলো। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের দেখা মিললো। এভাবে হুট করে আরভী প্রশ্নটা করে বসবে তা একদমই বুঝতে পারে নি ইমতিয়াজ। তাই কোনো রকমে অমতা অমতা করে বলতে লাগলো,”এএসব কি বলছেন ম্যাম, আমি তো আপনার জন্য কাজ করি।”
“ওহ তাই তো! আমার তো একদম’ই খেয়াল ছিলো না। কিন্তু ইমতিয়াজ ভাই, আপনার কল লিস্ট যে অন্য কথা বলছে!”
ইমতিয়াজ চুপ হয়ে গেলো। বুঝে নিলো চুরি ধরা পড়ে গেছে। এখন এর জন্য যে বড় মাপের মূল্য চুকাতে হবে তাও বেশ বুঝতে পারছে। ইমতিয়াজের গলাটা কেমন শুকিয়ে আসছে। তাই বড় এক ঢোক গিলে কিছু বলবে তার আগেই আরভী এক গ্লাস পানি ইমতিয়াজের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,”আপনি চাইলে পানি পান করে নিতে পারেন। আর ভুলক্রমেও মিথ্যা বলার চেষ্টা করবেন না। তাহলে কিন্তু পরিনাম খুব বেশি একটা ভালো হবে না।”
ইমতিয়াজ আরভীর দিকে তাকিয়ে দেখলো আরভীর চোখে-মুখে রাগ স্পষ্ট। যেকোনো সময় আক্রোশে ফেটে পড়বে। এছাড়া নির্বাচনের আগে দেখেছে আরভী রায়হান আসলে কেমন প্রকৃতির মানুষ। ইমতিয়াজ পুরো জীবনে এখন পর্যন্ত এমন মেয়ে দেখেছে বলে সন্দেহ। তাই কম্পনরত স্বরে বললো,”ম্যাম আসলে,,,”
ইমতিয়াজকে কথার মাঝে থামিয়ে দিয়ে আরভী কঠিন স্বরে বললো,”আমি শুধু জানতে চাই কত দিন ধরে কাজ করছেন। এক্সট্রা একটা ওয়ার্ডও বলবেন না।”
“পনেরো দিন ধরে।”
“তারমানে নির্বাচনের আগে আমার সব ইনফরমেশন আপনিই লিক করতেন?”
ইমতিয়াজ নিরব রইলো। আর এই নিরবতাকে আরভী সম্মতি ধরে নিলো। তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো,”আর আমি কিনা ব্যাপারটা এতো দিনে ঘূনাক্ষরেও টের পেলাম না। বেশ লুকোচুরি খেলেছেন কিন্তু। তা নাহিদ চৌধুরী আপনাকে কত টাকা দিয়েছে?”
“তিন লাখ।”
ইমতিয়াজের এ কথায় আরভী উচ্চস্বরে হাসতে লাগলো। সব মানুষ এখনো নগর ভবনে আসে নি বলে পরিবেশটা বেশ শান্ত ছিলো। এই শান্ত পরিবেশে হঠাৎ আরভীর এমন হাসি যেনো ইমতিয়াজের ভয়ের কারন খানিকটা বাড়িয়ে দিলো।
আরভী কোনো রকমে নিজের হাসি থামিয়ে বললো,”সিরিয়াসলি! সরি বাট আপনার কথা শুনে আমি নিজের হাসি কন্ট্রোল করতে পারছি না। আরে আপনার টাকার দরকার হলে আমাকে বলতেন, আমি আপনাকে এর থেকেও ঢের বেশি টাকা দিতাম। শুধু শুধু কেন নিজের মাঝে মীরজাফরের চরিত্র ধারণ করতে গেলেন বলুন তো! সে যাই হোক, আমি নবাব সিরাজউদ্দৌলার মতো মহৎ নই যে আপনার ভুল আমি ক্ষমা করে দিবো। ভুল যেহেতু করেছেন শাস্তি তো আপনাকে পেতেই হবে।”
আরভীর এই কথায় ইমতিয়াজের চোখে-মুখে আতংকের ছাপ ছড়িয়ে পড়লো। আর তা দেখে যেনো আরভী বেশ আনন্দ পেলো।
——
আরভী সন্ধ্যার দিকে আজকের সব কাজ শেষ করে নিজের বাড়ি ফিরছিলো। অর্ধেক পথ আসার পর আফিফা আফরোজ কল দিয়ে জানালেন উনার মেডিসিন শেষ হয়ে গিয়েছে। আরভী যেনো আসার সময় নিয়ে আসে। তাই আরভী ড্রাইভারকে বললো কাছাকাছি কোনো ফার্মেসীর সামনে গাড়ি থামাতে। আরভীর কথা মোতাবেক ড্রাইভার সামনের এক ফার্মেসীর সামনে গাড়ি থামালে আরভী মুখে মাস্ক পড়ে নিজেই গেলো মেডিসিন কিনতে।
সমুদ্রও এসেছিলো নোমান আহমেদ এর জন্য মেডিসিন কিনতে। মেডিসিন কিনে ফার্মেসী থেকে বের হওয়ার সময় দেখলো কালকের সেই মেয়েটা এদিকেই আসছে। আর তা দেখে সমুদ্র দাঁড়িয়ে গেলো। এদিকে আরভী সমুদ্রকে দেখে নিচের দিকে তাকিয়ে পাশ কাটিয়ে যেতে চাইলো। ফার্মেসীর ভিতরে যেতে নিলেই সমুদ্র আরভীর পথ আটকে দাঁড়ালো।
“এভাবে পথ আটকে দাড়িয়েছেন কেন?” নাক-মুখ কুচকে মুখে বিরক্তিকর ভাব ফুটিয়ে শুধালো আরভী।
“সেদিন আপনি আমার থেকে আমার নাম, ফোন নম্বর, ঠিকানা সব জানতে চাইলেন। অথচ আপনি নিজের ব্যাপারে কিছু জানালেন না। দিস ইজ নট ফেয়ার মিস ললনা।”
“আরভী, আমার নাম আরভী রায়হান।” তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো আরভী
এ কথা শুনে সমুদ্র হাসলো। আকাশের দিকে তাকিয়ে কৌতুক করে বললো,”দেখলে তো কি অবস্থা? এখন এলাকার সব মেয়ে মুখে একটা মাস্ক লাগিয়ে নিজেকে আরভী রায়হান বলে পরিচয় দিচ্ছে।”
সমুদ্রের এই কান্ড দেখে আরভী নিজ মনে বিরবির করে বললো,”আস্ত একটা পাগল!”
আরভীর এখন মনে হচ্ছে গতকাল বের হওয়াটাই আরভীর উচিত হয় নি। গতকাল যদি আরভী বের না হতো তবে এই উন্মাদ ছেলের সাথে দেখা হতো না।
আরভী সাধারণ ভাবে চলতে ভালোবাসে। সাথে ভালোবাসে বাচ্চাদের সঙ্গ দিতে। বাচ্চাদের সঙ্গ দিতে গিয়ে মাঝে মাঝে মনে হয় আরভী নিজেও বাচ্চা হয়ে যায়। তাই তো সুযোগ পেলেই বাচ্চাদের সঙ্গ দিতে চলে যায়। আর গতকাল বাচ্চাদের সঙ্গ দিতে গিয়েই সমুদ্রের সাথে দেখা হয়ে যায়। তা নিয়েই আরভীকে এখন আফসোস করতে হচ্ছে।
সমুদ্র আরভীকে হঠাৎ অন্যমনস্ক হতে দেখে হাতে তুরি বাজিয়ে ডাকলো,”এইযে ললনা।”
সমুদ্রের ডাকে আরভী নিজের ভাবনা হতে বেড়িয়ে এলো।
আরভী সমুদ্রকে গ্রাহ্য না করে পাশ কাটিয়ে ফার্মেসীর ভিতরে চলে গেলো। আর তা দেখে সমুদ্র গলার স্বর উচু করে বললো,”এই যে ললনা, আমার বন্ধু বলেছিলো আপনি নাকি ধানী লংকার মতো। আমার কিন্তু তা মনে হয় না। আমার তো আপনাকে সুইট লাগে। লাইক আ বাটার স্কচ আইসক্রিম।”
রাতের আধারে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে আরভী। হেমন্তের শেষের দিক হওয়ায় বাহিরে বেশ ঠান্ডা পড়েছে। এই ঠান্ডায় আরভী হাতে এক মগ ধোঁয়া উঠা কফি নিয়ে ভাবনায় মগ্ন হয়ে আছে। আজ যেনো সব কিছু বিরস লাগছে। মনে হচ্ছে বিষাদের ছায়া আলিঙ্গন করে নিয়েছে আরভীকে। মনে পড়ে যাচ্ছে আট বছর আগের প্রথম প্রেমের কথা। যে প্রেমের সূচনা হয়েছিলো এই হেমন্ত ঋতুতেই।
সমুদ্রের বলা প্রতিটি কথা তখন আরভী ফার্মেসীর ভিতর থেকে শুনতে পেয়েছিলো। কিন্তু শেষোক্ত দু লাইন আরভীর মনের গহিনে দাগ কেটে যায়। পুরোনো ক্ষত আবার তাজা হয়ে উঠে। মনে পড়ে যায় পুরোনো কিছু মিস্টি মধুর স্মৃতি। সেও তো ঠিক একই ভাবে এ কথাগুলো বলতো। কিন্তু সে সমুদ্রের মতো একদমই ছিলো না। সে তো ছিলো প্রখর ব্যাক্তিত্বের অধিকারী। যার কন্ঠস্বর ঝড় তুলেছিলো আরভীর হৃদয় গহীনে।
আরভী আকাশেরর দিকে তাকিয়ে দেখলো আজ আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। তাই চাঁদ দেখা যাচ্ছে না। তবুও আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলো আরভী। আর আনমনে বলে উঠলো,”দেখুন না হেমন্ত, আপনার অভাববোধ আমাকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে। আচ্ছা হেমন্ত! আপনি না আমাকে চাঁদের সাথে তুলনা করেছিলেন? কিন্তু আমি যে চাঁদের সাথে নিজের কোনো মিলই খুজে পাচ্ছি না। কারন চাঁদ তো একা নয়! চাঁদের আশেপাশে অগণিত তারা রয়েছে। তবে আমি কেন একা রয়ে গেলাম?”
চলবে…..
বি.দ্র. : রাতে কেউ গল্প পড়ে না দেখে আজ সকালেই দিলাম😐