নব_প্রেমের_সূচনা #Sumaiya_Akter_Bristy #পর্ব_০২

0
499

#নব_প্রেমের_সূচনা
#Sumaiya_Akter_Bristy
#পর্ব_০২

“তা আব্বাজান, তোমার অভিনয় শেষ হয়েছে নাকি আরো কিছু বাকি আছে?” নোমান আহমেদের কন্ঠস্বর পেয়ে তন্ময় আসল ঘটনা বুঝে গেলো। সমুদ্রের হঠাৎ পল্টি খাওয়ার কারন তবে নোমান আহমেদ।
পুরো ঘটনা বুঝতে পেরে তন্ময় সমুদ্রের দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে দ্রুতবেগে হাতে থাকা সিগারেটটা ফেলে দিলো। ডান হাত দিয়ে মাথা চুলকে দৃষ্টি মাটির দিকে নিক্ষেপ করে নম্র স্বরে বললো,”ইয়ে মানে আংকেল আসসালামু আলাইকুম।”

সমুদ্র এবার নোমান আহমেদের দিকে ঘুরে দাঁড়ালো। ইনোসেন্ট ফেইস বানিয়ে শুধালো,”বাবা তুমি এখানে?”

নোমান আহমেদ তন্ময়ের দেওয়া সালামের প্রতিত্তোর করে সমুদ্রের উদ্দেশ্যে বললো,”কি ভেবেছিস আমি কিছু দেখি নি?”

“ওহ আমি যে তন্ময়কে বুঝাচ্ছিলাম তা তুমি দেখে ফেলেছো?”

“হতচ্ছাড়া তুই যে আমাকে দেখে নিজের সিগারেট পিষে ফেললি আমি সেটার কথা বলেছি।”

“তুমি না ওইদিকে তাকিয়ে ছিলে তাহলে এটা দেখলে কিভাবে?” বলেই সমুদ্র দু-হাত দিয়ে নিজের মুখ চেপে ধরলো। মুখ ফসকে ভুল জায়গায় সঠিক কথা বলে ফেলেছে, এবার যে এর হিসাব নোমান আহমেদ কড়াগন্ডায় উসুল করবেন তা বেশ বুঝতে পারছে সমুদ্র।

“আমার চোখ ওইদিকে থাকলেও নজর ছিলো তোর দিকে।”

“ছেলের প্রাইভেসি নষ্ট করতে তোমার বিবেকে বাধলো না বাবা?” সমুদ্র কথাটি এমন ভাবে বললো যেনো নোমান আহমেদ বিরাট কোনো কান্ড করে ফেলেছেন।

“তবে রে হতচ্ছাড়া!” বলে নোমান আহমেদ পায়ের জুতো হাতে তুলে নিলেন। কিন্তু সামনে তাকাতেই দেখলেন সমুদ্র নেই, হাওয়া হয়ে গেছে। এটা দেখে নোমান আহমেদ বোকা বনে গেলেন। মাত্রই তো ছেলেটা এখানে ছিলো। হুট করে গায়েব হলো কি করে। কারন জানতে তন্ময়ের দিকে তাকাতেই তন্ময় ইশারায় ডান দিকে তাকাতে বললো। তন্ময়ের ইশারা অনুসারে ডান দিকে তাকাতেই দেখলেন সমুদ্র দৌড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। নোমান আহমেদ তা দেখে বলে উঠলেন,”ছেলেটা আর শোধরাবে না।”

“আংকেল আমিও যাই তবে। আসসালামু আলাইকুম। ” বেশ ভয়ে ভয়েই কথাটি বললো তন্ময়। তন্ময়ের ভয় হচ্ছে এটা ভেবে যে সমুদ্রের রাগ না আবার তন্ময়ের উপর দেখান নোমান আহমেদ। কিন্তু নোমান আহমেদ তেমন কিছুই বললেন না তন্ময়কে। শুধু বললেন,”এই যে, নেক্সট টাইম থেকে যেনো এসব ছাইপাঁশ খেতে না দেখি। দেখলে কিন্তু মার একটাও মাটিতে পড়বে না। দু বাদরকে একসাথে বেঁধে তারপর পেটাবো।”

নোমান আহমেদের কথায় তন্ময় উপর-নিচে সম্মতিসূচক মাথা নাড়িয়ে বোকার মতো দাঁত বের করে হাসলো কেবল।

——

সমুদ্র কিছুটা দূর যাওয়ার পরে ক্লান্ত হয়ে থেমে গেলো। কোমরে দু’হাতে রেখে জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগলো। তারপর আশেপাশে ভালো করে তাকিয়ে দেখে নিলো কেউ সমুদ্রকে এভাবে দৌড়াতে দেখেছে কিনা। এতো বড় ছেলে এখনো বাবার থেকে দৌড়ে পালিয়ে বেড়ায়, কথাটি নিশ্চয়ই শুনতে ভালো লাগবে না। যখন দেখলো আশেপাশে কেউই নেই তখন যেনো সমুদ্র হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো। আর ধীর কন্ঠে বললো,”যাক কেউ দেখে নি। মান-সম্মান বেঁচে গেছে।

সমুদ্র যে পথে এসেছে সেপথের দিকে আরো একবার তাকিয়ে দেখে নিলো তন্ময়ের দেখা মেলে কিনা। না, দেখা যাচ্ছে না। হয়তো এখনো সেখানেই রয়েছে। তা ভেবেই সমুদ্র সামনের দিকে একাই আনমনে হাটতে লাগলো। কিন্তু হঠাৎ একটা দৃশ্য দেখে থমকে দাঁড়ালো সমুদ্র। যেনো ভুলে গেলো চোখের পলক ফেলতে। এক দৃষ্টিতে সেদিকটায় তাকিয়ে রইলো। দেহের শিরায়, উপশিরায় কেমন শীতল হাওয়া বইতে লাগলো। সমুদ্র দেখতে লাগলো শুভ্র রঙের ড্রেস পরিহিত এক মেয়েকে। যার খোলা চুল বাতাসে হালকা উড়ছে। মেয়েটা নিজের হাতে বাচ্চাদেরকে বেলুন দিচ্ছে। বাচ্চাদের সাথে যেনো একেবারে মিশে গেছে মেয়েটা।
এর’ই মাঝে সেখানে তন্ময় এলো। সমুদ্রকে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে শুধালো,”কিরে কি হয়েছে? এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?”

“হয়ে গেছে।” আনমনে কথাটি বললো সমুদ্র।

এদিকে সমুদ্রের কথা বুঝতে না পেরে তন্ময় শুধালো,”কি হয়ে গেছে?”

“#নব_প্রেমের_সূচনা।” বলে সমুদ্র সামনের দিকে এগিয়ে গেলো। মেয়েটা যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেখানে গিয়ে সমুদ্রও দাঁড়িয়ে মেয়েটাকে দেখতে লাগলো।
তন্ময় সমুদ্রের পিছু পিছু গিয়ে বুঝলো সমুদ্র মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে। তা দেখে তন্ময় বললো,”ও এই কাহিনি তবে?”

প্রতিত্তোরে সমুদ্র কিছু বললো না। মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইলো শুধু।
মেয়েটা খানিক সময় পর বাচ্চাদের থেকে বিদায় নিয়ে পাশের এক বেঞ্চে বসে পড়লো। সমুদ্র নিজেও তন্ময়কে সাথে নিয়ে অপর আরেকটি বেঞ্চে বসে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইলো।

মেয়েটি অনেক্ষন যাবত খেয়াল করছে একটা ছেলে এক ধ্যানে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে। শুরুতে কিছু না বললেও এবার বেশ বিরক্ত হয়েই বললো,”এই যে, এক্সকিউজ মি!”

সমুদ্র হাতের আঙ্গুল নিজের দিকে ইশারা করে শুধালো,”আমাকে বলছেন?”

“হ্যাঁ আপনাকেই। কি সমস্যা আপনার? তখন থেকে দেখে যাচ্ছি আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।”

“জ্বি আমার নাম সমুদ্র, সমুদ্র মুনতাসিন।”

“অদ্ভুত তো! আমি আপনাকে নাম জিজ্ঞেস করলাম কখন?”

“জ্বি আমার ফোন নম্বর হলো ০১৭৫*******”

“তা আপনার কাছে কে জানতে চেয়েছে?”

“এখান থেকে সোজা হেটে বাম দিকে যে গলিটা গিয়েছে, সেই গলির দু নম্বর বাড়িটাই আমাদের।”

“আপনার মাথায় সমস্যা নাকি বাংলা কম বুঝেন?

“জ্বি আমি একদম পিউর সিঙ্গেল। তবে বাবা-মা বিয়ে দেওয়ার জন্য পাত্রী খুজছে।”

“মেয়েদের উত্তক্ত করার অভিযোগে যখন পুলিশ ধরে নিয়ে যাবে তখন হয়তো আপনার মাথার স্ক্রুগুলো ঠিক হয়ে যাবে। যা এই মূহুর্তে নড়বড়ে হয়ে আছে।”

“কে অভিযোগ করবে? আপনি?”

“যদি বলি হ্যাঁ?”

“করুন তবে। পুলিশের সাথে আবার আমার খুব ভালো সম্পর্ক। আমিও দেখি পুলিশ আমার কি করে।” অনেকটা ভাব নিয়েই কথাটি বললো সমুদ্র।

মেয়েটি আর কথা বাড়ালো না। বুঝে নিলো ছেলেটি সোজা কথার মানুষ না। তাই সেখান থেকে উঠে দাড়ালো জায়গা হতে প্রস্হান নেওয়ার জন্য।
মেয়েটিকে উঠতে দেখে সমুদ্র নিজেও দ্রুতবেগে উঠে দাড়িয়ে শুধালো,”এই যে মিস, নাম কি আপনার?”

মেয়েটি কোনো প্রতিত্তোর করলো না। সোজা হেটে কালো রঙের একটি গাড়িতে উঠে চলে গেলো সেখান থেকে। আর তা দেখে সমুদ্র বিরবির করে বললো,”যাহ চলে গেলো!”

—–

রাতে আরভী নিজের রুমে বসে ল্যাপটপে কিছু একটা করছিলো। সে মূহুর্তে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে আরভীর পার্সোনাল নম্বরে কল আসে। এই নম্বরটি গুটিকয়েক ব্যাতিত আর কারো কাছে নেই। প্রয়োজনীয় কল ভেবে রিসিভড করতেই বুঝতে পারে প্রতিদ্বন্দ্বী নাহিদ চৌধুরী কলটি করেছেন। কল করার কারণ জানতে চাইলে নাহিদ চৌধুরী বলেন,”তা মামনী, মেয়ে হয়ে তুমি শুধু শুধু রাজনীতিতে জড়াতে গেলে কেন বলো তো? রাজনীতি করবে পুরুষ জাতি। আর মেয়ে জাতির জন্মই তো পুরুষের আদর-যত্নের জন্য। মেয়েরা আবার রাজনীতি সামলাতে জানে নাকি?”

কথাটি যে নাহিদ চৌধুরী বাজে ইঙ্গিতে বলেছে তা বেশ বুঝতে পেরেছে আরভী। তাই কন্ঠ স্বর কঠিন করে বললো,”ভুলে যাবেন না আমি একজন মেয়র। তাই সম্মানের সহিত কথা বলুন। আর কি যেনো বলছিলেন? মেয়েরা রাজনীতি সামলাতে জানে নাকি! তাহলে আপনার কাছে আমার একটা প্রশ্ন রইলো। মেয়েরা রাজনীতি না জানলে আপনি একটা মেয়ের থেকে এবার নির্বাচনে হারলেন কি করে মিস্টার নাহিদ চৌধুরী?”

কথাটি নাহিদ চৌধুরীর সম্মানে লেগেছে। তাই উনিও স্বর কঠিন করে বললেন,”স্বামী-সংসার করার বয়সে নিজের প্রাণটা হারাতে চাইছো কি? মেয়ে বলে এখনো চুপ করে আছি, তারউপর বয়সে তুমি আমার অনেক ছোট। তা না হলে এতোদিনে হয়তো পরপারে চলে যেতে।”

“আমিও তো আপনাকে বলি, আপনার বয়স হয়েছে। পরপারে যাওয়ার সময় ঘনিয়ে এসেছে। এখন কি আর আপনি ঠিকমতো রাজনীতি করতে পারবেন? আপনি বরং এখন একটু নামাজ কালাম করুন। আমার মতো বয়সের মেয়েরা না হয় এবার রাজনীতি করুক।” কথাটি বলে আরভী কল কেটে দিলো। আর ভাবতে লাগলো এই নম্বর নাহিদ চৌধুরী পেলেন কিভাবে।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here