নব_প্রেমের_সূচনা #Sumaiya_Akter_Bristy #পর্ব_০১

0
962

#নব_প্রেমের_সূচনা
#Sumaiya_Akter_Bristy
#পর্ব_০১

“এবারের নির্বাচনে বিপুল সংখ্যক ভোটে জয়ী হয়েছেন আরশাদ রায়হানের একমাত্র মেয়ে আরভী রায়হান। হৃদয়পুরের ইতিহাসে এই প্রথমবার কোনো মেয়ে মেয়র পদে আসন গ্রহণ করেছেন। এবার দেখার পালা নতুন মেয়র আরভী রায়হান কতটুকু নিষ্ঠার সাথে নিজের দায়িত্ব পালন করতে পারেন।”

এইটুকু দেখেই টিভি বন্ধ করে দিলো সমুদ্র মুনতাসিন। রিমোট দূরে ঢিল দিয়ে ছুড়ে সোফায় আয়েস করে বসে বললো,”ছ্যাহ! কি দিনকাল আয়লো। শেষমেশ নাকি মাইয়া মানুষ এলাকা চালাইবো।”

সমুদ্রের কথা শুনে তার ছোট বোন নিলু প্রতিবাদ করে বললো,”মেয়ে দেখে কি হয়েছে? আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী মেয়ে হতে পারলে এই এলাকার মেয়র কেন মেয়ে হতে পারবে না?”

সমুদ্র উঠে সোজা হয়ে বসে নিলুর মাথায় হাত দিয়ে চাপড় মেরে বললো,”তোরে জিগাইছে কেউ?”

“আব্বু! দেখো সমুদ্র ভাইয়া আবার আমাকে মারছে।” কথাটা খানিকটা জোরেই বললো নিলু।

সমুদ্র নিলুর মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরে আশেপাশে ভালো করে দেখতে দেখতে বললো,”চুপ, চুপ, চুপ। ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চার মতো এমনে চিল্লাস কেন?”

নিলু নিজের মুখের উপর থেকে সমুদ্রের হাত সরানোর জন্য লাগাতার চেষ্টা করে যাচ্ছে কিন্তু পারছে না।
নিলুর স্বর তখন নিলু ও সমুদ্রের বাবা নোমান আহমেদ এর নিকট পৌছায়। উনার আদরের একমাত্র মেয়ের গায়ে সমুদ্র হাত তুলেছে শুনতে পেয়ে নিজের রুম থেকে বেরিয়ে এলেন উনি।

এদিকে নোমান আহমেদকে আসতে দেখে সমুদ্র আর সময় ব্যায় না করে এক দৌড়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে গেলো।

——-

আরভী সবে মাত্র বাড়িতে প্রবেশ করেছে। নিজের রুমে এসে ক্লান্ত শরীরটা বিছানায় এলিয়ে দিতেই রাজ্যের সব ঘুম এসে ধরা দিলো তার চোখে। ধরা না দিয়ে উপায় আছে? গত রাতে নির্বাচনের চিন্তায় তো ঘুম’ই হয় নি।

চোখ বন্ধ করতেই গভীর তন্দ্রায় তলিয়ে গেলো আরভী। খানিক সময় বাদে মাথায় কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে আরভীর ঘুম হালকা হয়ে এলো। নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে দেখলো আরভীর মা আফিফা আফরোজ মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। আরভী নিজের মাকে দেখে মলিন হেসে বললো,”টেবিলে খাবার দাও মা। অনেক বেশি ক্ষুদা লেগেছে।”

“এসব রাজনীতিতে কেন নিজেকে জড়াতে গেলি মা? একটা মেয়ে হয়ে এ পথে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবি তো? তোর বাবার মতো আবার বাষ্প হয়ে দূর আকাশে উড়ে যাবি না তো?” চিন্তিত স্বরে শুধালেন আফিফা আফরোজ।

“জীবনে রিস্ক না নিয়ে কিছু করা যায় না মা। এ পথে হয় বাঁচার মতো বাঁচবো। নয়লে বাবার মতো বাষ্প হয়ে আকাশে উড়ে বেড়াবো।”

“এ বয়সে মেয়েরা স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখের ঘর বাঁধে। আর তুই রাজনীতির সাথে ভয়ানক সম্পর্ক গড়তে চাইছিস!”

আফিফা আফরোজের এই কথায় আরভী উঠে বসলো। গম্ভীর স্বরে বললো,”রাজনীতি তো আমার রক্তে মিশে আছে মা। আমার দাদা রাজনীতি করেছেন, বাবা রাজনীতি করেছেন। তাদের রক্ত’ই তো আমার শরীরে বইছে।”

“আর এই রাজনীতি করেই কিন্তু তোর বাপ-দাদা মারা গেছেন আরভী।”

“অতীত যে বারবার পুনরাবৃত্তি ঘটাবে তার কি প্রমাণ রয়েছে?”

“তোর সাথে কথায় আমি কখনো পেরে উঠবো না। যা ইচ্ছে কর। আমার কি? আমার কথা কেউ কখনো শুনেছে নাকি?” বলে আফিফা আফরোজ মেয়ের উপর অভিমান করে সেখান থেকে চলে গেলেন। আর আফিফা আফরোজ যেতেই আরভী বিরবির করে বললো,”তুমি সত্যি বলেছো মা, এই আরভীর সাথে কেউ কখনো পেরে উঠবে না। আর তাই তো আমি আজ এই এলাকার মেয়র আরভী রায়হান। ডটার অব আরশাদ রায়হান।”

সমুদ্র তার বন্ধু তন্ময়ের সাথে টংয়ের দোকানে বসে সিগারেট খাচ্ছিলো। হঠাৎ তন্ময় এবারের নির্বাচনের কথা তুলে বললো,”কিরে খবর দেখছোছ? এইবার তো এলাকায় নতুন ইতিহাস হইয়া গেলো।”

“ইতিহাস পরিহাস হতে বেশি সময় লাগবো না।” সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে কথাটি বললো সমুদ্র।

“এই মাইয়ারে চিনছ বেটা? পুরা একটা ধানী লংকা।”

“যতো ধানী লংকাই হোক না কেন, মাইয়া মানুষ প্রকৃতপক্ষে নাজুক হয়। তারা তাদের এই সত্ত্বাকে বেশিক্ষণ লুকিয়ে রাখতে পারবো না। রাজনীতির মারপ্যাঁচে যখন পড়বো তখন বুঝবো।”

কথার মাঝেই সমুদ্র দেখতে পেলো নোমান আহমেদ বাজারের ব্যাগ হাতে এদিকেই আসছেন। তা দেখে সমুদ্র তৎক্ষনাৎ নিজের হাতের সিগারেট নিচে ফেলে পা দিয়ে পিষে আগুন নিভিয়ে ফেললো। দোকান থেকে সেন্টারফ্রুট নিয়ে দুটো একসাথে মুখে দিয়ে তাড়াতাড়ি করে কয়েক বার চিবিয়ে দূরে ফেলে দিলো। নোমান আহমেদকে তন্ময় দেখে নি। তাই অবাক করা চাহনিতে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে বুঝতে চাইছে আসলে সমুদ্রের হয়েছেটা কি।
নোমান আহমেদ খানিকটা কাছাকাছি আসতেই সমুদ্র নিজের দু-হাত তন্ময়ের দু কাধে রেখে দুঃখ ভরাক্রান্ত চেহারা বানিয়ে বলতে আরম্ভ করলো,”দেখ আমার ভাই, আমি তোকে বন্ধু হিসেবে অনেক বেশি ভালোবাসি। আমি কখনোই তোর থেকে দূরে যেতে চাই না। আর তুই নাকি এসব ছাইপাঁশ খেয়ে আমার থেকে দূরে সরে যেতে চাইছিস?”

তন্ময় কিছু বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করলো,”মানেহ?”

“মানে এটাই যে তোকে আর কিভাবে বুঝাবো বল। তুই জানস না সিগারেট আমাদের জন্য কতোটা ক্ষতিকর? এটা খেলে তোর নিকোটিনে জং ধরে যাবে। তারপর তুই আরমান আলিফের মতো গান গাইবি আজ নিকোটিন হইছে কালো আর আমি তোর বন্ধু হয়ে সেসব দেখতে পারবো না আমার ভাই। তুই জানস না সিগারেট খাইলে ক্যান্সারের মতো রোগ হইয়া মানুষ মইরা যায়? তাও এতোবার না করার পরেও কেন খাস ভাই?”

“হোপ পাগল হইছোস তুই? কিসব উল্টাপাল্টা বইলা যাইতাছোস তখন থেকে।” তন্ময় নিজের কাধ থেকে সমুদ্রের হাত সরিয়ে সিগারেটে আরেকবার টান দিয়ে কথাটি বললো। সমুদ্র তন্ময়ের সামনে ছিলো বিদায় এখনো নোমান আহমেদকে দেখে নি তন্ময়।
সমুদ্র এখনো নিজের অভিনয় চালিয়ে রাখতে বললো,”কথা দে আমায় তুই আজকের পর এসব ছুয়েও দেখবি না। আর আমার বাবা যদি কখনো তোকে সিগারেট হাতে দেখে ফেলে ভাবতে পারছিস তুই কি হবে? উনি তো ভাববেন আমিও তোর মতো সিগারেটে আসক্ত। প্লিজ ভাই, নিজের সাথে সাথে আমার এতো বড় সর্বনাশ তুই করিস না। তোর কাছে হাতজোড় করে বলছি আমি।”

চলবে…

বি.দ্র. : অনেক আগেই কিছু পর্ব লিখে রেখেছিলাম। তাই ভাবলাম পোস্ট করে দেই😐

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here