নব_প্রেমের_সূচনা #Sumaiya_Akter_Bristy #পর্ব_০৫

0
506

#নব_প্রেমের_সূচনা
#Sumaiya_Akter_Bristy
#পর্ব_০৫

হঠাৎ করে গুলির শব্দ হলো। সমুদ্র নিজের ডান দিকে মাটিতে তাকিয়ে দেখলো বুলেট মাটিতে গেঁথে আছে। তা দেখে সমুদ্র ভয় পাওয়ার ভান করে বললো,”আরে আরে আরে কি করছেন ললনা? মেরে ফেলবেন নাকি!”

“দু’মিনিটের মধ্যে আমার বাড়ি থেকে বের না হলে পরবর্তী বুলেট আপনার বক্ষপিঞ্জর ভেদ করে তবেই ক্ষান্ত হবে।”

“উফফ ললনা, আর কতভাবে ঘায়েল করবেন? অলরেডি আপনার ওই ক্রোধে ভরা চোখের চাহনিতে ক্ষতবিক্ষত হয়েছি আমি হাজারো বার। এবার না হয় আপনার রিভলভারের বুলেটেও ক্ষতবিক্ষত হয়ে নিলাম!”

আরভী কিছু না বলে রুমে এসে বেলকনির গ্লাস লাগিয়ে দিলো। কারন এ ছেলেকে কিছু বলা আর না বলা একই কথা। এক প্রকার বিরক্ত হয়েই রুমে চলে এসেছে আরভী
আরভীকে রুমে যেতে দেখে সমুদ্র চিৎকার করে বললো,”শুভ রাত্রী ললনা।”

আরভীর বেলকনি ও আফিফা আফরোজের বেলকনি পাশাপাশি হওয়ায় গ্লাস ভাঙ্গার শব্দ আফিফা আফরোজও স্পষ্ট শুনতে পান। কিসের শব্দ জানতে বেলকনিতে আসেন উনি। বেলকনিতে এসে দাঁড়ালে আরভী ও সমুদ্রের সকল কথোপকথন উনার কানে আসে। সমুদ্রের কথা শুনে উনার মনে হচ্ছে এ ছেলেই আরভীর উপযুক্ত। কেননা আজ পর্যন্ত কোনো ছেলে বাড়িতে প্রবেশ করে আরভীকে এভাবে বিরক্ত করার সাহস করে উঠতে পারে নি। একমাত্র এ ছেলেই এতো বড় সাহস দেখিয়েছে। মেয়রের বাড়িতে প্রবেশ করে মেয়রকে উত্তক্ত করা চারটি খানি কথা নয়। ছেলেটার সাহস আছে বৈকি। হয়তো এ ছেলেই পারবে আরভীর সকল রাগ সহ্য করে আরভীর সাথে সারাটা জীবন পাড় করে দিতে। যেমন ভাবে সংসারে একজন আগুন হলে আরেকজনকে হতে হয় পানি। তেমন ভাবেই আরভীর ক্রোধ নিবারনের জন্য সমুদ্রকে প্রয়োজন বলে মনে হচ্ছে আফিফা আফরোজের।

সকালে আরভী ও আফিফা আফরোজ একসাথে বসে ব্রেকফাস্ট করছিলেন আর টুকটাক কথা বলছিলেন। কথার মাঝেই আফিফা আফরোজ সমুদ্রের কথা তুলতে জিজ্ঞেস করলো,”আরভী, কালকে রাতের ছেলেটা কে রে?”

“রাস্তার বখাটে।” আরভীর অকপট উত্তর।

“এমা! এভাবে বলছিস কেন? ছেলেটাকে দেখে তো ওমন মনে হয় নি।”

“বখাটে না হলে কি আর এতো রাতে এসে এমন একটা কান্ড বাধাতো মা?”

“যাই বলিস না কেন, ছেলেটাকে কিন্তু আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে।”

আরভী প্রতিত্তোরে কিছু বললো না। কারন আরভী বেশ বুঝতে পারছে আফিফা আফরোজ মনে মনে কি চাইছেন।

আরভী নিজের ক্যাবিনে বসে কাজ করছিলো। দরজায় নক হলে আরভী দরজার দিকে তাকিয়ে ভিতরে প্রবেশের অনুমতি দিতে বললো,”কাম ইন।”

আরভী অনুমতি দিলে ফায়াজ নামের ছেলেটি ভিতরে প্রবেশ করে। ফায়াজকে দেখে আরভী বসতে বললো। ফায়াজ চেয়ারে বসে আরভীর দিকে তাকিয়ে বললো,”আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আপু। এ সময় আমার একটা কাজের খুব বেশি দরকার ছিলো।”

ফায়াজের চোখে-মুখের কৃতজ্ঞতার ছাপ স্পষ্ট। তা দেখে আরভী খানিকটা হেসে বললো,”ধন্যবাদের প্রয়োজন নেই। তোমার বাবা সবসময় আমার বাবার পাশে থেকেছেন। আমার বাবা এ রাজনীতির জগতে সব থেকে বেশি ভরসা করেছে তোমার বাবাকেই। আমি আশা করছি তুমিও তোমার বাবার মত সৎ ও ভরসা যোগ্য হবে।”

“ইনশাআল্লাহ আপু।”

বিকেলের দিকে পার্টি অফিসের পাশের মাঠে সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। মেয়র হওয়ার সুবাদে আরভীকে সেখানে থাকতে হবে।
আরভী ফায়াজকে নিয়ে সময় মতো সেখানে উপস্থিত হলো। প্রতিবারের তুলনায় আজকের সমাবেশে বেশ ভীড় জমেছে। ভীড় জমার মূল কারন হলো নতুন মেয়র আরভী রায়হান। আজ পর্যন্ত কোনো মেয়ে এ সমাবেশে ছিলো না। আজ এই প্রথমবারের মতো একজন মেয়ে মেয়র এসেছে এ সমাবেশে। তাই জনগনের মাঝে বেশ কৌতুহল পরিলক্ষিত করা যাচ্ছে।
গাড়ি মাঠের পাশে থামলে আরভী দীর্ঘ শ্বাস ফেলে গাড়ি থেকে নেমে চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে মঞ্চের দিকে এগিয়ে গেলো। আরভীকে দেখে জনসমাগমের মাঝে বেশ গুঞ্জন শোনা গেলো। ইয়াং ছেলেরা সমস্বরে আরভীর নাম উচ্চারণ করতে লাগলো। “আরভী রায়হান” ধ্বনিতে চারপাশ মুখোরিত হতে লাগলো

আরভীর জন্য নির্ধারিত আসনে গিয়ে আরভী বসলো। আর ফায়াজ একপাশে দাঁড়িয়ে রইলো। কিছুক্ষণ বাদে আরভীকে ডাকা হলো মাইকে জনসাধারণের উদ্দেশ্যে কিছু বলার জন্য। আরভী উঠে দাঁড়ালে আবারো চারপাশ আরভীর নামের ধ্বনিতে মুখোরিত হয়ে উঠে।
আরভী মাইকের সামনে গিয়ে সবার উদ্দেশ্যে ডান হাত খানিকটা উপরে তুললে সবাই থেমে যায়। পুরো জায়গা জুড়ে বিরাজ করে পিনপতন নীরবতা। উৎসুক দৃষ্টিতে জনগন আরভীর দিকে তকিয়ে থাকে আরভী কি বলে তা শোনার জন্য।

পরিবেশ পুরোপুরি শান্ত হলে আরভী জনগনের দিকে তাকিয়ে নম্র ভাবে বললো,”আসসালামু আলাইকুম।”

আরভী সালাম দিলে পরিবেশ কোলাহল যুক্ত হলো। সকলে সমস্বরে সালামের উত্তর দিলো। আরভী এবার উৎসুক জনগনের দিকে তাকিয়ে নিজের বক্তব্য পেশ করতে বলতে শুরু করলো।

“এখানে উপস্থিত হওয়ার জন্য আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ। আপনারা সবাই আমাকে ভোট দিয়েছেন বলেই আজ আমি এখানকার মেয়র হতে পারেছি। তার জন্য আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ আমি। আপনারা আমাকে মেয়র বানাতে না চাইলে আমি কখনোই এ পদে আসতে পারতাম না।
তবে আমি কথা দিচ্ছি, এ এলাকার উন্নয়নে যা কিছু করা সম্ভব আমি করবো। আমার প্রতি আপনাদের যে আস্হা রয়েছে তা আমি ভাঙ্গতে দিবো না। অলরেডি রাস্তা-ঘাট ঠিক করার জন্য উপর মহলে আবেদন করেছি আমি। আশা করছি খুব দ্রুত আবেদন মঞ্জুর হবে।” এতোটুকু বলার পর জনগন আবারও চিৎকার করে উঠলো। আবারো একবার চারপাশ “আরভী রায়হান” ধ্বনিতে মুখোরিত হলো।

সবাই থামলে আরভী পুনরায় বলতে শুরু করলো,”আমি বেশি কিছু বলবো না। কারন শুধু বললেই হবে না। কাজ করে দেখাতে হবে। আর আমি আপনাদের কখনো কোনো মিথ্যা আশা দিতে চাই না। আমি যতোটুকু করতে পারবো আপনাদের জন্য শুধু ততোটুকুই বলবো। আশা করছি আপনারা সবাই সবসময় আমার পাশে থাকবেন, ইনশাআল্লাহ।”

আরভীর সাথে সাথে অধিকাংশ জনগণ ইনশাআল্লাহ বলে উঠলো।

“এ এলাকার উন্নয়নে আপনাদের কি কি প্রয়োজন আপনারা আমাকে জানাবেন। আমি উপর মহলে এ প্রয়োজন গুলো তুলে ধরবো। আজ তবে আর কিছু না বলি। সবসময় আমার জন্য দোয়া করে যাবেন আপনারা। আপনাদের দোয়া ছাড়া আমি কিছুই না। আসসালামু আলাইকুম।” বলে আরভী নিজের বক্তব্য শেষ করলো।

বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা নেমে এলো। চারপাশ কৃত্রিম আলোতে ঝলমল করতে লাগলো। সমাবেশ প্রায় শেষের দিকে। জনগন ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। এখন অন্যান্য নেতারা বক্তৃতা দিচ্ছেন। আরভী দেড় ঘন্টার জন্যই এসেছিলো এখানে। তাই আরভীর সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় আরভী মঞ্চ থেকে নেমে গাড়ির দিকে অগ্রসর হলো। যেহেতু এখনো অন্যান্য নেতারা বক্তব্য পেশ করছেন তাই আরভীর গাড়ির দিকে কারো তেমন একটা নজর গেলো না।
আরভী গাড়ির কাছাকাছি যাওয়ার পর বুঝলো কেউ একজন আরভীর গাড়ির টায়ার পাঞ্চার করতে ব্যাস্ত। ফায়াজ এগিয়ে গিয়ে কিছু বলতে চাইলে আরভী নিষেধ করে দিলো। আরভী দেখতে চায় ছেলেটা আর কি কি করতে চায়। আরেকটু কাছাকাছি যাওয়ার পর বুঝলো ছেলেটা আসলে সমুদ্র। সমুদ্রকে দেখে আরভী “চ” শব্দ উচ্চারণ করে নিজের বিরক্ত প্রকাশ করলো। তবে কিছু না বলে চুপচাপ সমুদ্রের কাছে গিয়ে সমুদ্রের পিছনে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের টায়ার পাঞ্চার করা দেখতে লাগলো।

কয়েক সেকেন্ড পর সমুদ্র উঠে দাড়িয়ে দু হাত ঝারতে ঝারতে বললো,”যাক কাজ শেষ।”

“ভালো ভাবে কাজটা করেছেন তো?”

“একদম, সমুদ্রের কাজ কখনো খারাপ হতেই পারে না।” কথাটি বলে সমুদ্র ভাবতে লাগলো কথাটি কে জিজ্ঞেস করেছে। গলার স্বর কেমন চেনা-পরিচিত মনে হচ্ছে। হ্যাঁ, মনে পড়েছে। ললনার গলার স্বরও তো এমনি।

“এই আপনার গলার স্বর তো দেখা যায় পুরো ললনার মতো।” বলে সমুদ্র পিছনের দিকে ঘুরে দেখলো আরভী দুহাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে। আরভীকে দেখে সমুদ্র যেনো বিষম খেলো।
সমুদ্রকে এভাবে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আরভী বললো,”হাই সমুদ্র।”

“বাই ললনা।” বলে সমুদ্র দৌড় দিয়ে রাস্তায় গিয়ে একটা সিনএনজিতে উঠে চলে গেলো। সমুদ্রকে এমন করতে দেখে আরভী সমুদ্রের যাওয়ার পথে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বললো,”এ কেমন বাচ্চামো স্বভাব?”

“আপু আপনি একটু একপাশে গিয়ে দাঁড়ান আমি গাড়ি ডেকে আনছি।” ফায়াজ বললো।

“এখানে দাঁড়িয়ে থেকে লাভ নেই। চলো আমিও তোমার সাথে যাবো।”

তারপর আরভী ও ফায়াজ দুজনেই রাস্তার দিকে এগিয়ে গেলো। আপাতত সিএনজিতে চড়েই বাড়ি ফিরতে হবে। নয়লে বাড়ি ফিরতে অনেকটা রাত হয়ে যাবে। আর রাত করে বাড়ি ফেরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন আফিফা আফরোজ।

গাড়ি থেকে অনেকটা দূরে যাওয়ার পর হঠাৎ বিকট এক শব্দ হলো। শব্দটা পাওয়ার সাথে সাথে আরভী নিজের পা থামিয়ে দিলো। চারপাশ থেকে চিৎকার চেচামেচির শব্দ আরভীর কানে ভেসে আসতে লাগলো। সাথে একটা পুড়ো গন্ধও আরভীর নাকে এলো। শব্দটা আসলে কিসের জানার জন্য আরভী ঘার ঘুরালো।
ঘার ঘুড়িয়ে পিছনে তাকাতেই দেখতে পেলো আরভীর গাড়িটি জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। যা দেখে কিছুসময়ের জন্য আরভী হতবিহ্বল হয়ে গাড়ির দিকে তাকিয়ে রইলো। কিভাবে দাউদাউ করে জ্বলছে গাড়িটি!
আজ যদি সমুদ্র টায়ার পাঞ্চার না করতো তবে হয়তো আরভী নিজেও এ আগুনে জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে যেতো। মজার বা প্রতিশোধের ছলেই হোক, আজ সমুদ্রের জন্যই আরভী সুস্থভাবে প্রাণ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অন্যথায় আজ আরভীর অস্তিত্ব চিরতরে এ পৃথিবী থেকে হারিয়ে যেতো। তাই মনে মনে সমুদ্রকে ধন্যবাদ জানাতে বাধ্য হলো আরভী।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here