নব_প্রেমের_সূচনা #Sumaiya_Akter_Bristy #পর্ব_০৬

0
293

#নব_প্রেমের_সূচনা
#Sumaiya_Akter_Bristy
#পর্ব_০৬

আরভীর উপর এ আক্রমণের খবর বাতাসের গতিতে পুরো হৃদয়পুরে ছড়িয়ে পড়েছে। মেয়রের উপর আক্রমণ এ যে বিশাল বড় ব্যাপার। কেউ কেউ বলছে এ আক্রমণ সাবেক মেয়র নাহিদ চৌধুরী করিয়েছেন। আবার কারো ধারনা এ কাজ অন্য কারো। কিন্তু সবার প্রশ্ন একটাই এ আক্রমণ থেকে মেয়র আরভী রায়হান বেঁচে ফিরলেন কি করে! উনার তো সেসময় গাড়িতেই থাকার কথা!

আরভীর গাড়িতে টাইম বোম সেট করা হয়েছিলো। আক্রমণকারী জানতো আরভী সে সময় গাড়িতে চরে বাড়ি ফিরবে। হয়তো সব কিছুই পূর্ব পরিকল্পনা করা ছিলো।
আরভীর কিছু না হলেও দু’জন লোক আহত হয়েছেন। উনারা গাড়ির কাছাকাছি ছিলেন বলে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হোন। গাড়ির কিছু অংশ ছিটকে উনাদের উপর পড়ে। তৎক্ষণাৎ দুজনকে কাছাকাছি এক হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

জায়গাটিতে মূহুর্তের মধ্যেই আবারো ভিড় জমতে থাকে। সবাই দেখতে আসছে মেয়রের আগুনে পুড়ো গাড়িটি।
আরভী এখানে দাঁড়ালো না। ফায়াজকে বললো সিএনজি থামাতে। এই মূহুর্তে আরভীর হসপিটালে যাওয়া প্রয়োজন। কেননা আরভীর জন্যই তো লোক দুটোর এ অবস্থা। আরভীর এখন আফসোস হচ্ছে। আরেকটু সতর্ক কেন হলো না এ ভেবে। আরেকটু সতর্ক হলে হয়তো আজ এ দুজন লোক সুস্থ স্বাভাবিক থাকতেন।

আরভীর কথামতো ফায়াজ একটা সিএনজি থামালো। আরভী ও ফায়াজ সিএনজিতে উঠে বসার পর ফায়াজ সিএনজি চালককে আরভীর বাড়ির ঠিকানায় যেতে বললো। কিন্তু আরভী বাঁধা দিয়ে বললো,”না, সামনে যে হসপিটাল সেখানে নিয়ে চলুন।”

সিএনজি চালক আরভীর কথা মতো হসপিটালে যাওয়ার জন্য সিএনজি স্টার্ট দিলো।
ফায়াজ তখন আরভীর মুখের উপর কিছু বলতে না পারলেও মিনিট তিনেক পর অনেকটা সংশয় নিয়ে বললো,”বলছিলাম কি আপু, এখন তো অনেক ঝামেলা হতে পারে হসপিটালে গেলে। আপনি বাড়ি চলে গেলে আমি একাই হসপিটালের দিকটা সামলে নিতে পারতাম।”

“না ফায়াজ, এটা আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এতো বড় একটা দূর্ঘটনা ঘটে গেলো, এখন আমি যদি মুখ লুকিয়ে ঘরে বসে থাকি তাহলে জনগন আমাকে ভরসা করবে কেন? আমার উচিত সবার দূরসময়ে পাশে দাঁড়ানো।”

“আপু একটা কথা বলবো?”

“বল।”

“আপনি পুরো আরশাদ আংকেলের মতো হয়েছেন।”

ফায়াজের কথা শুনে আরভী হাসলো। আরভী নিজেও চায় আরশাদ রায়হানের মতো সৎ, নিষ্ঠাবান ও দায়িত্বশীল হতে, বিপদে সবার পাশে দাঁড়াতে। নিজের বাবার চলা পথেই আরভী চলতে চায়। যেনো লোকে দেখলে বলে,”এ দেখো, আরশাদ রায়হানের মেয়ে যাচ্ছে।”

কিছুক্ষণের মধ্যেই সিএনজি হসপিটালের সামনে এসে থামলো। আরভী সিএনজি থেকে নেমে ভাড়া দিতে চাইলে সিনএনজি চালক আপত্তি জানিয়ে বললো,”না না ভাড়া দিতে হইবো না। আপনি আমাদের মেয়র, আপনার থেকে কিভাবে ভাড়া নেই।”

“মেয়র দেখে কি হয়েছে? আমিও তো আপনাদের মতোই সাধারণ একজন মানুষ। আপনি এতো কষ্ট করে সিএনজি চালিয়ে নিয়ে এসেছেন আর ভাড়া রাখবেন না এটা হয় নাকি? রাখুন এটা।” আরভী সিএনজি চালকের সামনে টাকা ধরে বললো।

সিএনজি চালক আরভীর ব্যবহারে বেশ খুশি হলেন। সঠিক মানুষকে ভোট দিয়েছেন ভেবে নিজের ভিতর আনন্দ আনুভব করলেন। আরভীর থেকে টাকাটা নিয়ে বললেন,”আল্লাহ আপনার ভালো করুক।”

আরভী সামান্য হেসে হসপিটালের ভিতরের দিকে গেলো। আহত ব্যাক্তি দুজনকে যেখানে রাখা হয়েছে সেখানে গিয়ে দেখলো আহত ব্যাক্তির স্বজনরা চিৎকার করে কাঁদছে। তাদের এ হাহাকার যেনো পরিবেশটাকে ভারী করে ফেলেছে। আরভীর মনে পড়ে যায় পুরোনো কিছু কথা। একদিন এভাবেই তো আরভী ও আফিফা আফরোজের চিৎকারে ভারী হয়েছিলো চট্টগ্রামের এক হসপিটালের পরিবেশ।
আরভী পুরোনো কিছু কথা মনে করে গভীর শ্বাস নিয়ে আহত হওয়া ব্যাক্তিদের স্বজনদের কাছে এগিয়ে যায়।

আরভীকে দেখে স্বজনদের কান্না যেনো আরেকটু বেড়ে গেলো। কান্নারত স্বরে সবাই একই কথা বলতে থাকে,”আমরা শাস্তি চাই।”

সবার মাঝ থেকে বয়স্ক এক মহিলা এসে আরভীর ডান হাত ধরেন। সম্ভবত আহত ব্যাক্তি দুজনের মধ্যে একজনের মা হবেন। উনি আরভীর হাত শক্ত করে ধরে কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলেন,”যে এই কাজটা করছে তার উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা কইরো মা। আমি তোমার কাছে অনুরোধ কইরা কইতাছি। অপরাধীদের খুঁইজা তাদের শাস্তি দিও। আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম, যাদের জন্য আমার পোলাটার এ অবস্থা ওদের যেনো কোনোদিনও ভালো না হয়।”

আরভী বয়স্ক মহিলার হাতের উপর হাত রেখে আশ্বস্ত করে বলল,”শাস্তি পাবে, যারা এমনটা করেছে তাদের প্রত্যেকে শাস্তি পাবে। আমি নিজে সে ব্যবস্থা করবো।”

হঠাৎ একটা বাচ্চা মেয়ের উপর আরভীর চোখ পড়লো। মেয়েটার বয়স নয় কি দশ বছর হবে। হসপিটালের দেওয়াল ঘেষে এক কোনে দাঁড়িয়ে হিচকি তুলে কান্না করছে। আরভী গুটিগুটি পায়ে মেয়েটার কাছে গিয়ে মাথায় হাত রাখলো। বাচ্চা মেয়েটা আরভীকে চিনতে না পেরে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো। আরভী মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে অনুমানের উপর আদুরে কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,”বাবার জন্য কাঁদছো?”

মেয়েটা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানালো। আরভী মেয়েটার সাথে নিজের মিল খুঁজে পেলো। যদিও বাবার মৃত্যুর সময় আরভী আরো অনেক বড় ছিলো। তবুও যেনো কোথায় একটা মিল পাচ্ছে।
আরভী মেয়েটার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো,”কেঁদো না হুম? তোমার বাবা খুব জলদি সুস্থ হয়ে তোমাকে কোলে নিয়ে ঘুরবে।”

“সত্যি বলছো?” মেয়েটা ঠোঁট ফুলিয়ে জিজ্ঞেস করলো।

“হ্যাঁ সত্যি।” আরভী মেয়েটার গাল টেনে উত্তর দিলো।

আরভী বাচ্চা মেয়েটার গালে একটা চুমু খেয়ে উঠে দাঁড়ালো। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো ফায়াজ এখনো রিসিপশন থেকে ফিরে নি। তাই আরভী একাই নিচে যাওয়ার জন্য লিফটে উঠে নিচে যাওয়ার বাটন চাপলো।

লিফটের দরজা বন্ধ হয়ে যাবে সেসময় দ্রুত বেগে সমুদ্র লিফটে প্রবেশ করে। সমুদ্রকে দেখে আরভী অনেকটা অবাক হয়েছে। কারন তখন তো দেখলো উল্টোপথে যেতে, এখন আবার এ হসপিটালে এলো কিভাবে!

আরভী নিজের কৌতুহল দূর করতে জিজ্ঞেস করলো,”আপনি এখানে? তখন না অন্যদিকে গিয়েছিলেন?”

“আবার ঘুরে এখানে এসেছি ললনা।”

সমুদ্রের খামখেয়ালিপনা দেখে আরভী কিছু বলবে তার আগেই লিফটের দরজা আবার খুলে গেলো। একজন মহিলা লিফটে প্রবেশ করছেন। তাই দুজনে চুপ হয়ে লিফটের দুপ্রান্তে দাঁড়িয়ে রইলো।

লিফট নিচ তলা এসে থামলে সবাই লিফট থেকে বের হয়ে যায়। আরভী রিসিপশনের দিকে যেতে চাইলে সমুদ্র আরভীর পথ আটকে দাঁড়ায়। আরভী আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো অনেকে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।

মেয়রের সাথে একটা ছেলেকে দেখে অনেকেই কৌতুহলি চোখে তাকিয়ে থাকে দুজনের দিকে। যেহেতু মেয়র এখনো বিয়ে করে নি তাই এই ছেলেটি মেয়রের ভাই নাকি প্রেমিক তা বুঝতে চাইছে।

আরভী আশেপাশে আবারো একবার তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে সমুদ্রকে বললো,”পথ ছাড়ুন। সবাই দেখছে।”

“আগে আমার কথা শুনে নিন।”

“পরে শুনবো। এখন যেতে দিন।” বলে পাশ কাটিয়ে যেতে চাইলো আরভী। কিন্তু সমুদ্র যেতে দিলো না। পুনরায় পথ আটকে বললো,”যতোক্ষণ না আপনি আমার কথা শুনবেন ততোক্ষন যেতে দিবো না।”

আরভী বুঝে নিলো সমুদ্রের কথা না শুনা পর্যন্ত সমুদ্র আরভীকে সহজে ছাড়বে না। কিন্তু এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে কথা বলাও সম্ভব নয়। তাই আরভী সমুদ্রকে বললো,”আমার সাথে চলুন, গাড়িতে উঠে বাকি কথা হবে।”

সমুদ্র এবার আরভীর কথা মেনে নিলো। এরই মাঝে ফায়াজ এলো। এসে সমুদ্রের দিকে অবাক হওয়ার দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আরভীকে বললো,”আপু গাড়ি চলে এসেছে। তবে সমস্যা হচ্ছে হসপিটালের সদর গেইটে কিছু সাংবাদিক দেখেছি। হসপিটাল কর্তৃপক্ষ তাদের ভিতরে আসতে দেয় নি রোগীদের সমস্যা হবে বলে।”

“সমস্যা নেই চলো।” ক্লান্ত স্বরে বললো আরভী।

“আপু আপনাকে অনেক ক্লান্ত দেখাচ্ছে। এখন সাংবাদিক দের সামনে গেলে ওরা অনেক প্রশ্ন করবে। ভালো হয় আপনি পিছনের গেইট দিয়ে বের হয়ে যান। আমি উনাদের কালকে আসতে বলে দিবো।”

“না ফায়াজ, ঝামেলা ঝুলিয়ে রেখে লাভ নেই। চলো সদর গেইট দিয়েই বের হবো আমি।”

সমুদ্র এতোক্ষণ চুপ করে ছিলো। কিন্তু যখন শুনলো আরভী এ গেইট দিয়েই বের হবে তখন বললো,”এই ঝামেলার মাঝে পড়ে আমার লাভ নেই। আমি পিছনের গেইট দিয়ে বের হয়ে সামনের মোড়ে দাঁড়াচ্ছি। যদি ভুলক্রমেও আমার কথা না শুনে চলে যান তবে কিন্তু একদমই ভালো হবে না ললনা।”

কথাটি বলে সমুদ্র পিছনের গেইটের দিকে এগিয়ে গেলো। আর আরভী ও ফায়াজ এগিয়ে যেতে লাগলো সদর গেইটের দিকে। যেতে যেতে ফায়াজ আরভীকে বললো,”আপু, ছেলেটাকে অদ্ভুত লাগলো না?”

“এ ছেলে পা থেকে মাথা পর্যন্ত পুরোটাই অদ্ভুত।” আরভী প্রতিত্তোরে বললো।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here