নব_প্রেমের_সূচনা #Sumaiya_Akter_Bristy #পর্ব_০৭

0
311

#নব_প্রেমের_সূচনা
#Sumaiya_Akter_Bristy
#পর্ব_০৭

আরভী ও ফায়াজ হসপিটাল থেকে বের হতেই সাংবাদিকরা আরভীকে ঘিরে ধরে। আরভীর উপর ক্যামেরা ফোকাস করে আরভীর সামনে মাইক্রোফোন ধরলো। আর একনাগাড়ে একেক জন আরভীকে একেক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে লাগলো।

আরভী সবার দিকে একবার তাকিয়ে বললো,”দয়া করে আপনারা একটা একটা করে প্রশ্ন করুন। আমার জন্য সুবিধা হবে।”

“এটা দূর্ঘটনা ছিলো নাকি আক্রমণ? আপনার কোনটি মনে হচ্ছে?” একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করলেন।

যিনি প্রশ্ন করেছেন তার দিকে তাকিয়ে আরভী উত্তর দিলো,”আমি যখন সমাবেশে ছিলাম তখন কিছু হলো না অথচ আমার যাওয়ার সময়টাতেই বিস্ফোরণ ঘটলো। এটা কি সন্দেহজনক নয়? এছাড়া আমার গাড়িতে এমন কিছুই ছিলো না যা দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটবে।”

“আপনি মাত্র বললেন আপনার সেসময় গাড়িতে থাকার কথা ছিলো। তবে আপনি বেঁচে ফিরলেন কি করে?” আরেকজন সাংবাদিক প্রশ্ন করলো। আরভী এবার এই সাংবাদিকের দিকে তাকিয়ে প্রতিত্তোরে বললো,”রাখে আল্লাহ মারে কে, বাক্যটি শুনেছেন নিশ্চয়!”

“আপনাকে কে বা কারা আক্রমণ করতে পারে বলে মনে হচ্ছে আপনার? এটা কি নির্দিষ্ট একজনের কাজ নাকি একাধিক জনের?”

“আপনার শেষের প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নেই। জানা থাকলে অবশ্যই এতোক্ষণে সে বা তারা কারাগারে থাকতো। আর ব্যাক্তিগত জীবনে আমার কোনো শত্রু নেই।”

“তারমানে আপনি বলতে চাচ্ছেন রাজনীতির সাথে জড়িত এমন কেউ আপনার উপর আক্রমণ করেছে। তবে কি আপনি আপনার প্রতিপক্ষ নাহিদ চৌধুরীকে সন্দেহ করছেন?”

“আমি আগেই বলেছি, কে বা কারা এ কাজ করেছে আমি জানি না।”

“যে দুজন ব্যাক্তি আহত হয়েছে তাদের জন্য আপনি কি ভেবেছেন?”

“তাদের চিকিৎসার সমস্ত দায়িত্ব আমার। তারা যতোক্ষণ না সুস্থ হয়ে কাজ করতে পারবে তাদের পরিবারকে আমিই দেখবো। আর অপরাধীকে খুঁজে বের করে তার উপযুক্ত শাস্তি দিবো। আশা করছি আপনাদের আর কোনো প্রশ্ন নেই।” আরভী কথাটা বলার সাথে সাথে ফায়াজ আরভীর সামনে এসে আরভীকে যাওয়ার রাস্তা করে দিতে লাগলো।

আরভীর গাড়ি সামনের মোড়ে গিয়ে সমুদ্রের সামনে থামানো হলো। সমুদ্র গাড়িতে উঠে বসলে আরভী সাথে সাথে বললো,”কি বলবেন দ্রুত বলুন।”

“এতো তাড়াহুড়ো করতে নেই ললনা। বাই দ্যা ওয়ে গাড়িটা কি আপনার?”

সমুদ্রের মুখে ললনা সম্বোধন শুনে ফায়াজ প্রতিবাদ করে বললো,”আরভী আপু এ এলাকার মেয়র। আপুর সাথে সম্মানের সহিত কথা বলুন।”

“বড়দের মাঝে কথা বলতে নেই বাচ্চা। চুপচাপ বসে থাকো।”

“প্লিজ সমুদ্র, আমি অনেক ক্লান্ত। হেয়ালিপনা বন্ধ করুন।” আরভী খানিকটা বিরক্ত নিয়েই বললো।

“দেখুন ললনা, আজ কিন্তু আপনি আমার জন্য বেঁচে ফিরেছেন। আমি তো জানতামও না এমন কিছু একটা হবে। জানলে আমি আপনার গাড়ির আশেপাশেও যেতাম না। ভাগ্যিস তখন বিস্ফোরণ ঘটে নি। নয়লে আপনি আমার মতো প্রেমিক পেতেন কোথায়?”

সমুদ্র এমন মুখোভঙ্গি করে কথাগুলো বলছিলো যেনো অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আরভী প্রথমে বেশ মনোযোগ সহকারে কথা শুনতে নিয়েছিলো। কিন্তু যখন পরের কথাগুলো শুনলো তখন নিজেকে দুটো থাপ্পড় দিতে ইচ্ছে করলো। এ ছেলের কথা মনোযোগ সহকারে শোনার মতো ভুল আরভীর করা উচিত হয় নি।

“আপনি এই কথা বলার জন্য তখন এমন করেছিলেন?” ধীর কন্ঠে কথাটি জিজ্ঞেস করলো আরভী।

“আর নয় তো কি? বলা তো যায় না আপনি যদি এখন আমাকে ফাসিয়ে দেন? আপনাকে জ্বালানোর জন্য।”

“আর ইউ সিরিয়াস সমুদ্র!” সমুদ্রের দিকে খানিকটা ঘুরে বসে কথাটি বললো আরভী।

আরভীর দেখা দেখি সমুদ্র নিজেও আরভীর মতো বসে মুখে সিরিয়াসনেস ফুটিয়ে তুলে বললো,”আমাকে দেখে মনে হচ্ছে আমি মজা করছি?”

সমুদ্রের কথায় আরভী সোজা হয়ে বসলো। গাড়ির উইন্ডোতে কনুই রেখে হাতের দু আঙ্গুল দিয়ে মাথার একপাশে চেপে ধরলো। আরভীর মেজাজ যেনো তরতর করে বেড়েই। এমনিতেই আজ এতো ধকল গেলো। তারউপর এই রাতের বেলা সমুদ্র আরভীকে বিরক্ত করছে।
জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে আরভী নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করলো। আর গাড়ির ড্রাইভারকে উদ্দেশ্য করে বললো,”গাড়ি থামান।”

আরভী বলার সাথে সাথে ড্রাইভার গাড়ি থামালো। আর তা দেখে সমুদ্র বললো,”আরে ললনা এখন গাড়ি থামাচ্ছেন কেন? আমি তো আরো সামনে নামবো।”

“নামুন।” ক্ষিপ্ত স্বরে বললো আলো।

“ললনা এখান থেকে রাতে সহজে গাড়ি পাওয়া যায় না।”

সমুদ্র যে কোন লেভেলের নাছোড়বান্দা তা আরভী বুঝে গেছে। এভাবে শুধু মুখে বললে সমুদ্র গাড়ি থেকে নামবে না। তাই সমুদ্রকে গাড়ি থেকে নামাতে অন্য পথ অবলম্বন করলো আরভী।
আরভী নিজের হ্যান্ডব্যাগ থেকে রিভলবার বের করে সমুদ্রের মাথার পাশে ধরে বললো,”নামবেন নাকি না?”

“নামছি তো। কখন বললাম নামবো না। শুধু শুধু এটা দিয়ে ভয় দেখাচ্ছেন কেন? তাড়াতাড়ি সরান এটা।” সমুদ্র চোখে-মুখে ভয় ফুটিয়ে কথাটি বললো।

আরভী রিভলভার সরালে সমুদ্র গাড়ি থেকে নেমে কিছু বলতে চাইলে ফায়াজের ইশারায় ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সমুদ্রকে পিছনে ফেলে চলে যায়। সমুদ্র গাড়ির দিকে তাকিয়ে থেকে বিরবির করে বলে উঠলো,”কি মেয়েরে বাবা! সব সময় রিভলবার নিয়ে ঘুরে।”

সমুদ্রকে পিছনে ফেলে আসার পর ফায়াজ অবাক হয়ে আরভীকে বললো,”এটা কি হলো আপু? তখন এমন ভাবে গাড়ি থামাতে বলেছিলো শুনে মনে হয়েছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু বলবে। আর এখন তো দেখছি!”

“বাদ দাও এই ছেলের কথা। আমারই ভুল হয়েছিলো, আমার বুঝা উচিত ছিলো এ ছেলে অপ্রয়োজনীয় সব কথাই বলবে।” ক্লান্ত স্বরে বললো আরভী।

বাড়িতে ফিরতে রাত দশটা পাড় হয়ে গেলো। আরভী বাড়ির ভিতরে গিয়ে দেখলো আফিফা আফরোজ আরভীর পথ চেয়ে বসে আছেন। আরভীকে বাড়িতে প্রবেশ করতে দেখে আরভীর কাছে এসে আরভীকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন। আর বলতে লাগলেন,”আরভী মা আমার, তুই ঠিক আছিস তো? তোর কোথাও লাগে নি তো?”

আরভী নিজেও আফিফা আফরোজকে জড়িয়ে ধরে বললো,”না মা, আমি একদম ঠিক আছি। আমার কোথাও লাগে নি।”

“এসব রাজনীতি থেকে সরে আয় মা। নয়লে ওরা তোকেও বাঁচতে দিবে না। তোকেও তোর বাবার মতো তাদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দিবে।”

আরভী এবার আমেনা বেগমকে ছেড়ে উনার চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বললো,”আমার কিছু হবে না মা। আমাকে নিয়ে তুমি একদম চিন্তা করো না। এখন কান্না বন্ধ করে খেতে দাও তো। অনেক বেশি ক্ষুদা পেয়েছে।”

——-

পাখির কিচিরমিচির শব্দে আরভীর ঘুম ভাঙ্গলো। আড়মোড় ভেঙে উঠে বসে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সাতটা পনেরো বাজে। আজ অনেক বছর পর এতো শান্তিতে ঘুমিয়েছে আরভী। হয়তো কাল অনেক বেশি ক্লান্ত ছিলো বলেই। নয়লে একসাথে দুজন কাছের মানুষকে হারিয়ে আরভীর ঘুমও যেনো কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলো।

আরভী একজন সার্ভেন্টকে ডেকে বললো কফি দিয়ে যেতে। সার্ভেন্ট কফি দিয়ে গেলে বেলকনিতে থাকা দোলনায় গিয়ে বসলো আরভী। কফির মগ থেকে উঠা ধোঁয়ার দিকে তাকিয়ে কালকের সব কথা ভাবতে লাগলো। ভাবতে লাগলো সমুদ্রের কথা।
সমুদ্রের বিষয়টা কি সত্যি কাকতালীয় কোনো ঘটনা ছিলো? নাকি সমুদ্র জড়িত এ আক্রমণের সাথে। কিন্তু সমুদ্র যদি জড়িত হয়ে থাকে তবে টায়ার কেন পাঞ্চার করবে? সমুদ্র টায়ার পাঞ্চার না করলে কাল হয়তো আক্রমণকারী সফল হতো। সমুদ্রের মতো এতো বড় একটা ছেলে টায়ার পাঞ্চার করবে ব্যাপারটা কেমন অদ্ভুত। অবশ্য সমুদ্র নিজেই পুরোটা অদ্ভুত। তারপরও কোথাও একটা খটকা থেকেই যায়। সমুদ্র যেমনই হোক না কেন, এই বয়সে এসে গাড়ির টায়ার পাঞ্চার! শুনতেই তো কেমন লাগছে। সমুদ্রের উপর নজর রাখা দরকার। এতো বড় একটা ছেলে কাজকর্ম ছেড়ে সারাদিন এভাবে টইটই করে কেন ঘুরে বেড়াচ্ছে? কাজ-কর্ম কিছু করে না নাকি? এসব ভেবে আরভী ফায়াজের নম্বরে কল করলো। ফায়াজ কল রিসিভড করলে বললো,”সমুদ্রের সব ইনফরমেশন কালেক্ট কর।”

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here