নব_প্রেমের_সূচনা #Sumaiya_Akter_Bristy #পর্ব_০৯

0
472

#নব_প্রেমের_সূচনা
#Sumaiya_Akter_Bristy
#পর্ব_০৯

“তোমার মেয়ে যে এখনো ব্রেকফাস্ট করে নি সেদিকে খেয়াল করেছো?”

“তোর কি হয়েছে বল তো! দেখছিস তো ছেলেটাকে আপ্যায়ন করছি আমি। আর তোর সামনেই তো খাবার পড়ে আছে। নিয়ে খেলেই পারিস।” আরভীর কথায় বিরক্ত হয়ে বললেন আফিফা আফরোজ। আর এতেই যেনো সমুদ্রের প্রতি আরভীর রাগ আরেকটু বেড়ে গেলো। আজ এই ছেলেটার জন্যই আফিফা আফরোজ আরভীর খেয়াল রাখছেন না। এ ছেলেটা না থাকলে ঠিকই তো আরভীর দিকে খেয়াল রাখতেন। তাই আরভী রোষ পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সমুদ্রের দিকে। আর তা দেখে সমুদ্র আফিফা আফরোজকে উদ্দেশ্য করে বললো,”আন্টি উনার মনে হয় হিংসে হচ্ছে। দেখছেন না আমার দিকে কিভাবে যেনো তাকাচ্ছেন।”

“এই চোখ নামা।” আফিফা আফরোজ ধমকে বললেন।

আফিফা আফরোজের ধমকে সমুদ্রের উপর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিজের প্লেটের দিকে তাকালো আরভী। দাঁতে দাঁত চেপে বিরবির করে বললো,”আপনাকে তো আমি পরে দেখে নিবো মিস্টার সমুদ্র মুনতাসিন।”

অপরদিকে নাহিদ চৌধুরীকে সব সাংবাদিকরা একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছে। কিন্তু নাহিদ চৌধুরী সাংবাদিকদের করা সব প্রশ্নের উত্তর ও বেশি সময় দিতে চাইলেন না। এমনিতেই আরভীকে মারতে না পেরে মাথা গরম হয়ে আছে। তারউপর এদের এতো এতো প্রশ্ন। কখন যে উনি মাথা গরম করে ভায়োলেন্স হয়ে যাবেন তা উনি নিজেও জানেন না। এর থেকে ভালো কোনোরকমে এদের বিদায় করা।
নাহিদ চৌধুরীকে এতোক্ষণ চুপ থাকতে দেখে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করলেন,”আপনার এই নিরবতার কারন কি? তবে কি আমরা ধরে নিবো আরভী রায়হানের উপর আক্রমণে আপনার হাত রয়েছে?”

“চোর কি চুরি করে বলবে আমি চুরি করেছি? কিসব অদ্ভুত কথাবার্তা। তদন্ত করে দেখা হোক এই আক্রমণের পিছনে কার হাত রয়েছে। আমি নিজেও তার উপযুক্ত শাস্তি চাই। আর আমি কেন আরভী রায়হানকে আক্রমণ করতে যাবো? আরভী রায়হানের কিছু হলে তো তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আমার উপরেই আঙ্গুল উঠবে। এছাড়া আরভী রায়হান আমার মেয়ের মতো। আমি কেন এমন একটা জঘন্য কাজ করতে যাবো?”

কথাটি বলে নাহিদ চৌধুরী আবার ভিতরে চলে গেলেন। আর কারো কোনো প্রশ্নের উত্তর উনি দিলেন না। উনার মেজাজ এমনিতেই খিটখিটে হয়ে আছে। ইচ্ছে করছে সবাইকে মেরে দিতে।

বিকেলে আরভী হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে গাড়ির দিকে পা বাড়ালো। কিন্তু গাড়ির কাছে গিয়ে বুঝলো গাড়ির সামনের গ্লাসের উপর হেলান দিয়ে বনেটের উপর কেউ বসে আছে। কে বসে আছে তা জানার জন্য আরভী আস্তেধীরে গাড়ির সামনের দিকে এগিয়ে গেলো। বনেটের উপর বসে থাকা ছেলেটির সম্মুখে গিয়ে দাঁড়ালো।
ছেলেটিকে দেখে কিছুক্ষন ‘থ’ মেরে দাঁড়িয়ে রইলো আরভী। আরভীর এতো দিন সন্দেহ হতো ছেলেটা পাগল। কিন্তু আজ নিশ্চিত হয়েছে।

আরভীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সমুদ্র নিজের দু পাটি দাঁত বের করে হেসে বললো,”হায় ললনা।”

“আপনি আমার গাড়ির উপর বসে কি করছেন?” গম্ভীর স্বরে জিজ্ঞেস করলো আরভী।

“হায় এর বদলে হ্যালো বলতে হয়। জানেন না বুঝি?”

“মেয়রের সাথে কিরুপ ব্যবহার করতে হয় আপনি সেটা জানেন তো?”

সমুদ্র এবার একলাফে বনেট থেকে নেমে আরভীর সামনে এসে দাঁড়ালো। আরভীর কাছাকাছি এসে ফু দিয়ে চোখের উপর পড়ে থাকা ছোটছোট চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে বললো,”আপনি জানিয়ে দিলেই পারেন।”

আরভী সমুদ্রের থেকে দু’পা পিছিয়ে গেলো। এর আগে কখনো এমন পরিস্থিতিতে পরে নি আরভী। তাই রাগ ও অস্বস্তি নিয়ে বললো,”মেয়রের সাথে এরুপ ব্যবহারের জন্য আপনার সাথে কি কি হতে পারে তার ধারনা আছে আপনার?”

সমুদ্র আরভীর দিকে দুপা এগিয়ে এসে আরভীর দিকে খানিকটা ঝুকে বললো,”কিরুপ ব্যবহার ললনা?”

সমুদ্র আরভীর দিকে ঝুকে এলে আরভী নিজেও খানিকটা পিছনের দিকে ঝুকে যায়। একবার আশেপাশে তাকিয়ে কিছুটা তোতলানো স্বরে বলে,”দেদেখুন সমুদ্র,”

আরভীকে নিজের কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে সমুদ্র নিজের কন্ঠ খাদে নামিয়ে বললো,”দেখছি’ই তো। বলুন না।”

আরভী আবারো দু’পা পিছিয়ে গেলো। মুখের মাস্ক ঠিক করতে করতে বললো,”আপনি একজন মেয়র বা একটা মেয়ের সাথে এমন অসদাচারন করতে পারেন না। আর পাবলিক প্লেসে তো একদম’ই না।”

“তবে কি প্রাইভেট প্লেসে নিয়ে গেলে আপনি আমাকে অনুমতি দিবেন ললনা?”

আরভী এবার বেশ রাগান্বিত হয়ে নিজের তর্জনী আঙ্গুল দেখিয়ে শাসিতে বললো,”আপনি কিন্তু নিজের লিমিট ক্রস করছেন সমুদ্র।”

“তাই বুঝি?”

সমুদ্রকে হেয়ালি করে কথা বলতে দেখে আরভী চোখ-মুখ শক্ত করে বললো,”আপনি জাস্ট দেখতে থাকুন আপনার সাথে কি কি হয়। অনেক সহ্য করেছি আপনার এসব। আর না। নাও গেট রেডি ফোর ইউর পানিশমেন্ট সমুদ্র মুনতাসিন।”

আরভীর কথায় সমুদ্র উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। তারপর একসময় হাসি থামিয়ে নিজের ডান হাত বুকের বা’পাশে রেখে বললো,”উফফ ললনা, আমি তো সেই কবে থেকেই প্রস্তুত।”

————-

আরভীর প্রচুর রাগ হচ্ছে। নিজের উপরেই বেশি রাগ হচ্ছে। এতোদিন কেন চুপচাপ বসে ছিলো তা ভেবে। কিন্তু আজ তো সমুদ্র নিজের লিমিট ক্রস করে ফেলেছে। আজ সমুদ্রকে শাস্তি দিতেই হবে। নয়লে সমুদ্র এরকমটা করেই যাবে।

আরভী নিজের মোবাইল হাতে নিয়ে এসআই অভি দত্তকে কল করলো।

“হ্যালো, আমি আরভী রায়হান বলছি।”

“জ্বি ম্যাম কোনো প্রয়োজন ছিলো?”

“এলাকার সব বখাটেদের বখাটেপনা বন্ধ করার ব্যবস্থা করুন। বিশেষ করে সমুদ্র মুনতাসিন এর কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করবেন। যেনো দ্বিতীয়বার আর কোনো মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকাতে না পারে।”

“ওকে ম্যাম আমি দুদিনের মাঝে কাজ শেষ করে আপনাকে সব আপডেট জানিয়ে দিবো।”

আরভী কল কেটে দিয়ে ডিভানে বসলো। জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগলো।

নোমান আহমেদ সংবাদপত্র পড়ছিলেন আর ক্ষণে ক্ষণে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছিলেন। সকালে সংবাদপত্রের সাথে চা না পেলে উনার দিনটায় খারাপ যায় মনে হয়। সারাদিন শরীর কেমন মেজমেজে হয়ে থাকে।
হঠাৎ কলিং বেলের শব্দে উনার কাজে ব্যাঘাত ঘটে। উনি বিরক্ত নিয়ে উনার সহধর্মিণী আশরাফি ইয়াসমিনকে ডেকে বললেন,”শুনছো, দেখো তো কে এসেছে!”

নোমান আহমেদের ডাকে ইয়াসমিন রান্নাঘর থেকে খুন্তি হাতে ছুটে এলেন। এসে দেখলেন নোমান আহমেদ খবরের কাগজ পড়ছেন আর দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে কেউ একজন একনাগাড়ে কলিং বেল বাজিয়ে যাচ্ছে। এটা দেখে উনি বেশ ক্ষিপ্ত হলেন। খুন্তি উপরের দিকে তুলে নোমান আহমেদকে শাসিয়ে বললেন,”কে এসেছে তা নিজে দরজা খুলে দেখলে কি মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেতো? আমি রান্নাঘরে কাজ করছিলাম তা জানেন না?”

“আহা! রাগ করছো কেন? একটু খুলে দেখো না কে এসেছে।”

“হ্যাঁ আমি তো সবার চাকরানী। আমি একা হাতেই তো সবটা সামলাবো।”

নোমান আহমেদ আর প্রতিত্তোরে কিছু বললেন না। সংবাদপত্রের দিকে মন দিলেন উনি।

“আমার হয়েছে যতো জ্বালা।” কথাটি বলতে বলতে ইয়াসমিন গিয়ে দরজা খুলে দিলেন। আর দেখলেন বাহিরে দুজন পুলিশ দাঁড়িয়ে। উনি বুঝলেন না হঠাৎ পুলিশ কেন এসেছেন। তাই চিন্তিত স্বরে জিজ্ঞেস করলেন,”আপনারা এখানে?”

“এখানে কি সমুদ্র মুনতাসিন থাকে?” অভি দত্ত জিজ্ঞেস করলেন।

“হ্যাঁ, কেন বলুন তো? আমার ছেলেকে দিয়ে আপনাদের কি কাজ?”

“সেটা এখনি জানতে পারবেন। ডাকুন আপনার ছেলেকে।”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here