নব_প্রেমের_সূচনা #Sumaiya_Akter_Bristy #পর্ব_১০

0
321

#নব_প্রেমের_সূচনা
#Sumaiya_Akter_Bristy
#পর্ব_১০

ইয়াসমিন ও অভি দত্তের কথোপকথন শুনে নোমান আহমেদ খবরের কাগজ টি-টেবিলের উপর রেখে উঠে এলেন। হঠাৎ নিজের বাড়িতে পুলিশ দেখে অবাক হলেন। কারন জানতে উনি অভি দত্তকে জিজ্ঞেস করলেন,”কি ব্যাপার আপনারা এখানে?”

প্রতিত্তোরে অভি দত্ত বললেন,”সমুদ্র মুনতাসিনের নামে অভিযোগ করা হয়েছে। উনাকে আমাদের সাথে থানায় যেতে হবে।”

সমুদ্রের নামে কেউ অভিযোগ করেছে কথাটি শুনে নোমান আহমেদ আরো বেশি অবাক হলেন। সমুদ্রের নামে কেউ অভিযোগ করতে পারে বলে উনার ধারনা ছিলো না। তাই উনি জিজ্ঞেস করলেন,”কি অভিযোগ?”

“উনি পথেঘাটে মেয়েদের উত্তক্ত করেন।”

অভি দত্তের কথায় এবার ইয়াসমিন প্রতিবাদ করে বললেন,”আপনার কোথাও একটা ভুল হচ্ছে। আমার ছেলে কখনোই এমন করতে পারে না।”

“স্বয়ং আরভী রায়হান অভিযোগ করেছেন। কিছু করার নেই। আপনি আপনার ছেলেকে ডাকুন। আমরা কোনো সিনক্রিয়েট করতে চাইছি না।”

অভি দত্তের এ কথা শুনে ইয়াসমিন নোমান আহমেদের দিকে তাকালেন। নোমান আহমেদ ইশারায় বললেন সমুদ্রকে ডেকে আনতে।
ইয়াসমিন নোমান আহমেদের ইশারা বুঝতে পেরে সিরি বেয়ে উপরে চলে গেলেন সমুদ্রকে ডেকে আনার জন্য।
সমুদ্রের ঘরে গিয়ে দেখলেন সমুদ্র এখনো বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। তা দেখে সমুদ্রকে জাগানোর জন্য সমুদ্রকে ডাকতে লাগলেন ইয়াসমিন।

“সমুদ্র, বাবু তাড়াতাড়ি উঠ। দেখ বাহিরে পুলিশ এসেছে।”

“মা আরেকটু ঘুমোতে দাও না।” ঘুম জড়ানো কন্ঠে বললো সমুদ্র।

“বাবু পুলিশ এসেছে। আরভী রায়হান নাকি তোর নামে অভিযোগ করেছে।”

আরভীর নাম শুনতেই সমুদ্রের ঘুম হালকা হয়ে এলো। চোখ বন্ধ করা অবস্থাতেই হাসতে লাগলো। আর তা দেখে ইয়াসমিন বোকা বনে গেলেন। এ কথায় হাসার কি হলো উনি তাই ভেবে পেলেন না। ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখে হাসছে না তো আবার!
উনি নিজের সন্দেহ দূর করতে শুধালেন,”বাবু তোর কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে? এ কথা শুনে এভাবে হাসছিস কেন নাকি তুই কোনো স্বপ্ন দেখছিস?”

সমুদ্র এবার নিজের চোখ মেলে উঠে বসে বললো,”তোমার ছেলের বউ তোমার ছেলের নামে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছে মা। তা ভেবেই হাসি পাচ্ছে।”

“যাহ! কি সব বলছিস? তুই চিন্তা করিস না বাবু। আমি তোর কিছু হতে দিবো না।”

“তোমার কিছু করতে হবে না মা। আমি যাবো আর আসবো। কোনো চিন্তা করো না কেমন?” কথাটি বলে সমুদ্র বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। ওয়াসরুমে গিয়ে চোখে-মুখে পানির ছিটে দিয়ে একটা শার্ট পড়ে ঘর থেকে বের হলো। সাথে করে নিজের সানগ্লাসটাও নিয়ে নিলো।
নিচে নেমে অভি দত্তকে স্যালুট দেখিয়ে বললো,”চলুন থানা থেকে ঘুরে আসি।”

——-

সমুদ্র চোখে সানগ্লাস পড়ে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে। আর সমুদ্রের সামনে বসে আছে ইন্সপেক্টর হাসান ও এসআই অভি দত্ত।

সমুদ্রকে এভাবে বসে থাকতে দেখে ইন্সপেক্টর হাসান বললো,”সমুদ্র মুনতাসিন এটা থানা, আপনার শ্বশুর বাড়ি নয়।”

“আই নো ইন্সপেক্টর।”

“তাহলে এভাবে বসে আছেন কেন? সানগ্লাস খুলে পা নামিয়ে ভদ্র ভাবে বসুন।”

“আগে আমার হবু বউকে ডাকুন। তারপর ভেবে দেখবো।”

“আপনার হবু বউ কে?”

“যে আমার নামে অভিযোগ করেছে।”

“পুলিশের সাথে ইয়ার্কি করা হচ্ছে?”

হাসানের এ কথায় সমুদ্র এবার চোখেমুখে গম্ভীরতা ফুটিয়ে তুলে বললো”কোনো প্রকার এভিডেন্স ছাড়া আপনারা আমাকে থানায় কিভাবে ধরে এনেছেন? এর জন্য আপনাদের সাসপেন্ড করা হতে পারে। জানেন নিশ্চয়?”

“আপনি মেয়েদের উত্তক্ত করেন। আরভী রায়হান নিজে আপনার নামে অভিযোগ করেছন।”

“জিডি করেছেন উনি? জিডি দেখান।”

সমুদ্রের এ কথা শুনে হাসান অমতা অমতা করে বললো,”না মানে উনি ফোন করে বলেছেন।”

এ কথা শুনে সমুদ্র উচ্চস্বরে হাসতে লাগলো। সমুদ্রকে হাসতে দেখে হাসান ও অভি দত্ত একে অপরের দিকে তাকালেন। তারপর আবার সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে অভি দত্ত বললেন,”এভাবে হাসছেন কেন আপনি?”

অভি দত্তের প্রশ্নে সমুদ্র নিজের হাসি থামিয়ে দিলো। আবারও চোখেমুখে গম্ভীরতা ফুটিয়ে তুলে হাসানের দিকে তাকিয়ে বললো,”জিডি নেই, প্রমাণ নেই অথচ আপনি আমাকে ধরে এনেছেন। এখন যদি বিনা অপরাধে আমাকে ধরে নিয়ে আসার জন্য আমি আপনাদের উপর মহলে যারা আছেন তাদের কাছে অভিযোগ করি তাহলে কেমন হবে ইন্সপেক্টর?”

সমুদ্রের এ কথায় গলা খাকারি দিয়ে সোজা হয়ে বসলো হাসান। কারন এটা ঠিক সমুদ্রের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ নেই আর না আছে কোনো জিডি। মেয়রের কথায় সমুদ্রকে ধরে তো এনেছে এখন যদি সমুদ্র নিজেও উনাদের নামে অভিযোগ করে তাহলে তো উনাদের উপর প্রেসার আসবে। তা ভেবেই উনি কিছু বলতে যাবেন কিন্তু তার আগেই একজন কনস্টেবল এসে বললেন,”স্যার বাহিরে দুই জন সাংবাদিক এসেছে।”

এ কথা শুনে সমুদ্র বাকা হাসলো। কারন সমুদ্র ঘর থেকে বেড়িয়ে নিচে নামার আগেই তন্ময়কে এসএমএসে বলে দিয়েছিলো এলাকার দু-একজন পরিচিত অনলাইন সাংবাদিক নিয়ে থানায় আসতে।

ওরা চলে এসেছে জানতে পেরে সমুদ্র বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললো,”আপনাদের কাছে না আছে জিডি, না আছে প্রমাণ। তাই আপনারা আমাকে এখানে আটকে রাখতে পারেন না। আসি ইন্সপেক্টর।” বলে সমুদ্র চোখ থেকে সানগ্লাস নামিয়ে তা গলার নিচে শার্টের উপর ঝুলিয়ে থানা থেকে বেড়িয়ে গেলো।
সমুদ্র বের হওয়ার পর দেখলো আপন ও তাহমিদ এসেছে।
সমুদ্রকে বের হতে দেখে তাহমিদ প্রশ্ন করলো,”ভাই আপনি থানায় কেন? আপনার মতো এতো ভালো একজন মানুষ থানায় কি করছে?”

তাহমিদের প্রশ্নে সমুদ্র দুঃখী হওয়ার ভাব করে বললো,”কি বলবো ছোট ভাই! ললনাকে ভালোবেসে আজ আমাকে থানা পর্যন্ত চলে আসতে হলো। ব্যাপার না ভালো যখন বেসেছি এইটুকু না হয় সহ্য করে নিলাম।”

“কি বলেন ভাই? ভালোবেসে কেউ থানায় আসে নাকি?” আপন জিজ্ঞেস করলো।

“জানি না আমি। তবে আজ আমি দেশের সব প্রেমিক পুরুষের কাছে একটা প্রশ্ন করতে চাই।”

“জ্বি ভাই করেন। আমরা আছি আপনার সাথে।” আপন বললো।

“কারো প্রতি ভালোবাসা জন্মে গেলে আমার কি দোষ? আমি তো ভালোবাসাকে বলি নি ললনাকে ভালোবাসতে। ভালোবাসা ললনাকে ভালোবাসলে আমার কি করার আছে?”

“সহমত ভাই। তবে এই ললনা টা কে?” তাহমিদ জিজ্ঞেস করলো।

“কে আবার আরভী রায়হান।”

“ভাই ভাবীর নামের সাথে আমাদের মেয়রের নাম পুরাই মিলে গেছে। এইজন্যই মনে হয় ভাবী একটু কঠিন হওয়ার অভিনয় করছে।”

আপনের এ কথায় সমুদ্র আপনের কাধে হাত রেখে বললো,”আরে পাগলা মেয়র আরভী রায়হানই তো তোদের ভাবী।”

আপন প্রথমে বুঝতে না পেরে “ওহ আচ্ছা” বললো। কিন্তু যখন কথাটার অর্থ বুঝতে পারলো তখন চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। ভীতস্বরে বললো,”ভাই! আমার একটা কাজের কথা মনে পড়ে গেছে। আমি এখন যাই হ্যাঁ?”

কিন্তু সমুদ্র আপনের কথা পরোয়া করলো না। আপনের কাধে হাত রেখে বলতে শুরু করলো,”মজনু যেমন লায়লাকে ভালোবাসে, ফরহাদ যেমন শিরিনকে ভালোবাসে ঠিক সেভাবেই এই সমুদ্র মুনতাসিন আরভী রায়হানকে ভালোবাসে। এখন বিশ্ববাসীর কাছে আমার একটাই প্রশ্ন। ভালোবাসা কি কোনো ভুল? মজনু, ফরহাদও কি আমার মতো ভুল করেছে? তবে সমগ্র বিশ্ব কেন তাদের স্মরণে রেখেছে?”

বাহিরে কি হচ্ছে দেখার জন্য হাসান ও অভি দত্ত বাহিরে এসেছিলেন। আর সমুদ্র উনাদের আসতে দেখে বললো,”ভালোবেসে যদি মরতে হয় তবে আমি তাতেও প্রস্তুত। ইন্সপেক্টর আপনি আমার মৃত্যুদন্ডের ব্যবস্থা করুন। আজ আবারো নতুন এক ইতিহাস তৈরী হোক। ভালোবেসে মৃত্যু হোক। সবাই এই সমুদ্রকেও মজনু, ফরহাদের মতো মনে রাখুক। বিদায় দেশবাসী, বিদায়।”

আপন আর দাঁড়িয়ে থাকলো না। কোনো রকমে সমুদ্রের থেকে ছাড়া পেয়ে লাইভ চলা অবস্থাতেই এক দৌড় লাগালো। নয়লে সমুদ্র আজ থামবে না তা ভালো করেই বুঝতে পারছে। তন্ময় তো তখন বলে নি মেয়র আরভী রায়হানই এই এলাকার ভাবী। তাহলে তো কখনোই আসতো না আপন। তন্ময় শুধু বলেছিলো সমুদ্র বের হওয়ার সাথে সাথেই লাইভ শুরু করতে হবে। আল্লাহ ভালো জানেন এখন আপনের সাথে কি হয়। তাই নিজেকে বাঁচাতে আপন দৌড়ানো অবস্থায় মোবাইল ক্যামেরা সামনে নিয়ে বললো,”আরভী ম্যাম আমাকে ক্ষমা করবেন। আমি জানতাম না আপনি আমাদের এলাকার ভাবী। সত্যি বলছি ম্যাম, এবারের মতো মাফ করে দিন।”
আর তাহমিদ যখন বুঝেছে মেয়র আরভী রায়হানের কথাই বলছে সমুদ্র সে বেচারা তখনই পালিয়েছি।

সমুদ্রের এসব কর্মকাণ্ড দেখে হাসান কিছুক্ষন ‘থ’ মেরে দাঁড়িয়ে রইলো। কোনো মেয়রের সাথে কেউ এমন করতে পারে বলে উনার মনে হয় না। এ ছেলের কি কোনো ভয় নেই? কিভাবে একজন মেয়রকে ভালোবাসার কথা বলতে পারে? নিঃসন্দেহে এ ছেলের মাঝে প্রবল সাহস লুকায়িত। উনি না চাইতেও সমুদ্রকে বলে ফেললেন,”কি চিজ তুমি গুরু, মেয়রকেও ছাড়লে না!”

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here