#নব_প্রেমের_সূচনা
#Sumaiya_Akter_Bristy
#পর্ব_১১
রাতারাতি এ লাইভ পুরো হৃদয়পুরে ভাইরাল হয়ে গেলো। শুধু হৃদয়পুর নয়, পুরো বাংলাদেশ জুড়ে ভাইরাল হলো এই লাইভ। যার ক্যাপশনে লোকজন লিখেছে,”সাধারণ ছেলে যখন মেয়রের প্রেমে।”
আরো অনেকে অনেক রকমের ক্যাপশন দিয়েছে।
ইয়াং জেনারেশনের কাছে সমুদ্র প্রেমিক পুরুষ অব দ্যা ইয়ার হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। কারন আজ পর্যন্ত কোনো মেয়রকে প্রেমের প্রস্তাব দিতে দেখেছে বলে কারো মনে হয় না। তাও আবার এভাবে।
থানা থেকে সোজা বাড়ি ফিরলো সমুদ্র। সকালে কিছু খাওয়া হয় নি। তাই প্রচুর ক্ষুদা পেয়েছে।
বাড়ি ফিরে কলিং বেল চাপতেই নোমান আহমেদ এসে দরজা খুলে দিলেন। সমুদ্র ভিতরে প্রবেশ করলে উনি বলে উঠলেন,”আমার মজনু, ফরহাদ। ইতিহাস কি তৈরী করেছেন নাকি এখনো কিছু বাকি আছে?”
নোমান আহমেদের কথার প্রতিত্তোরে সমুদ্র ভাবুক হয়ে বললো,”ভালো প্রশ্ন করেছো। খেতে খেতে ভাববো।”
তারপর উচ্চস্বরে ইয়াসমিনকে ডেকে বললো,”মা খাবার দাও।”
ইয়াসমিন সমুদ্রের কন্ঠস্বর পেয়ে দৌড়ে এলেন। সমুদ্রের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন,”বাবু ঠিক আছিস তুই? ওরা তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করে নি তো?”
“কারো সাহস আছে তোমার ছেলের সাথে খারাপ ব্যবহার করার?”
মা-ছেলের এই ভালোবাসা দেখে নোমান আহমেদ ইয়াসমিনকে উদ্দেশ্য করে বললেন,”এই তোমার আস্কারা পেয়েই ছেলে বাদর হয়েছে।”
নোমান আহমেদের এ কথায় ইয়াসমিন চোখ গরম করে নোমান আহমেদের দিকে তাকিয়ে বললেন,”ছেলের সামনে মুখ খুলতে বাধ্য করবেন না। আপনার ছেলে আপনার মতোই হয়েছে। বরং আপনার থেকে হাজারগুনে ভালো হয়েছে।”
ছেলের সামনে ইয়াসমিনকে এ কথা বলতে শুনে নোমান আহমেদের কাশি উঠে গেলো। আর তা দেখে সমুদ্র মিটিমিটি হেসে উনার দিকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো।
নোমান আহমেদ পানি খেয়ে নিজেকে ধাতস্থ করে বললেন,”তা বাবা মজনু, দেশে কি মেয়ের অভাব পড়েছিলো? মেয়রের প্রেমেই কেন তোকে পড়তে হলো?”
“মেয়র তো কি হয়েছে সে কি মেয়ে নয়? আর ভেবে দেখো বাবা, তোমার ছেলের বউ মেয়র হলে এলাকার সবাই তোমাকে কত সম্মান করবে। এই এলাকায় তোমার একটা আলাদা দাপট থাকবে। সবাই তোমাকে মেয়রের শ্বশুর বলে ডাকবে।” সমুদ্র কথাগুলো এমন ভাবে বললো যেনো নোমান আহমেদের সাথে বিশেষ কোনো বিষয় নিয়ে ডিল করছে। তা দেখে নোমান আহমেদ বিদ্রুপ করে বললেন,”তুমি ওই দিবাস্বপ্নই দেখতে থাকো। আরভী রায়হান কখনো তোমার মতো বাদর ছেলেকে বিয়ে করবে না।”
“সাতদিনের মধ্যে আরভী রায়হান তোমার ছেলের প্রেমে হাবুডুবু খাবে। দেখে নিও তুমি।”
“আর সাতদিনের মাঝে এরকমটা না হলে আমি যাকে বলবো তাকেই তুই অষ্টম দিনে বিয়ে করবি।”
“চ্যালেঞ্জ এক্সেপটেড।
——
আরভী সকাল থেকে এখন পর্যন্ত অনলাইনে যায় নি বলে এখনো এসবের কিছুই জানে না। আর ফায়াজও নিজের কাজে ব্যাস্ত বিধায় ফায়াজও এখনো এসবের সম্পর্কে জানে নি।
সন্ধায় বাড়ি ফিরার পথে গাড়িতে বসে ফেসবুকের নিউজফিড স্ক্রোল করছিলো আরভী। হঠাৎ দেখতে পেলো একটা ভিডিওতে সমুদ্রকে দেখা যাচ্ছে। আরভী ক্যাপশন না পড়েই কৌতূহলী হয়ে ভিডিওতে ক্লিক করলো। কিন্তু পুরো ভিডিওটা দেখে আরভী তাজ্জব বনে গেলো। সমুদ্র এমন কিছু করবে তা কখনো ভাবতেও পারে নি আরভী। সমুদ্রকে শাস্তি দিতে গিয়ে নিজেই তো ফেসে গেছে মনে হচ্ছে। এ ছেলে তো দেখা যায় আরভীর থেকে এক ধাপ এগিয়ে। কিন্তু সমুদ্র চাইছে টা কি তাই বুঝতে পারছে না আরভী।
ভিডিও বন্ধ করে কিছুক্ষণ চুপটি করে ‘থ’ মেরে বসে রইলো আরভী। তারপর ভাবতে লাগলো কি করে শায়েস্তা করবে সমুদ্রকে। কারন যতোদিন যাচ্ছে সমুদ্র ততো নিজের লিমিট ক্রস করে ফেলছে। এভাবে তো আর চলতে দেওয়া যায় না। কিছু তো একটা করতেই হবে।
বাড়ি ফিরে ফায়াজকে কল করলো আরভী। ফায়াজ তখনও বাসায় যায় নি। ফোনের অপাশ থেকে গাড়ির হর্নের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। সম্ভবত জ্যামে আটকা পড়েছে।
ফায়াজ কল রিসিভড করলে আরভী অন্য কথায় না গিয়ে সরাসরি সমুদ্রের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলো।
“সমুদ্র মুনতাসিন এর খোঁজ-খবর নিতে বলেছিলাম। নিয়েছিলে?”
“আপু এখনো তেমন কিছু জানতে পারি নি। তবে শুনেছি গাজীপুর নাকি একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করেন উনি।”
“খোঁজ নাও কোন কোম্পানি।”
ফায়াজ “জ্বি আপু।” বলতেই আরভী কল কেটে দিলো। ডিভানের উপর বসে ভাবতে লাগলো সমুদ্রকে নিয়ে। এই ছেলেকে একদমই সুবিধার মনে হচ্ছে না। নয়লে একজন মেয়রের সাথে প্রেম করতে চাওয়ার দুঃসাহস করলো কিভাবে ছেলেটা! সত্যিই কি সমুদ্র আরভীর প্রেমে পড়েছে নাকি সমুদ্রের অন্য কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে? আরভীর কেন যেনো বারবার মনে হয় এ ছেলে দেখতে যেমন আসলে ছেলেটি তেমন না। নয়লে এতো বড় একটা ছেলে এসব করে কিভাবে? কিন্তু সমুদ্র তো রাজনীতির সাথেও জড়িত না। আর না দুজনে পূর্ব পরিচিত। তাহলে এসবের পিছনে কি কারন থাকতে পারে?
এই রাজনীতির জগতে পা ফেলার পর থেকেই আরভী কাউকে বিশ্বাস করতে পারছে না। কখন কে পিছন থেকে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করে বসে তা বলা যায় না।
আরশাদ রায়হানও তো দলের লোকদের বিশ্বাস করেছিলেন। কিন্তু প্রতিদানে কি পেলেন? একটি ভয়ানক মৃত্যু!
বিশ্বাস করে ভুল করেছিলেন বিধায় আজ উনি বেঁচে নেই। উনি যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে হয়তো আরভী এই রাজনীতির জগতে পা ফেলতো না। জীবনটা হতো একদম অন্যরকম। বাকি পাঁচ-দশটা মেয়ের মতো আরভী নিজেও সাধারণ জীবনযাপন করতে পারতো আর সাথে থাকতো হেমন্ত।
হেমন্তের কথা মাথায় আসতেই আরভীর অন্যসব চিন্তা-ভাবনা মাথা থেকে বেড়িয়ে গেলো। আরভী আনমনে হেসে ডিভানে হেলান দিয়ে বসে চোখ বন্ধ করলো। কল্পনা করতে লাগলো পুরোনো কিছু মোবাইল ফোনের কথোপকথন-
“হেমন্ত! আমার না বড্ড ভয় হচ্ছে। কেন জানি না কিছু দিন ধরে মনে হচ্ছে আমি আপনাকে হারিয়ে ফেলবো।”
“তোমার থেকে আমি হারিয়ে গেলেও আমার থেকে কখনোই তোমাকে হারাতে দিবো না আমি। হয়তো তোমার সামনে থাকবো না তবে তোমার চারপাশে এমন এক মায়াজাল সৃষ্টি করে রাখবো যার ধোয়াশায় পড়ে তুমি বারবার আমার কাছেই ফিরবে।”
এ পর্যন্ত কল্পনা করে কল্পনার দুনিয়া থেকে বেড়িয়ে এলো আরভী। কিন্তু চোখ মেলে তাকালো না। মলিন হেসে বিরবির করে বললো,”কোথায় আপনি হেমন্ত? কেন খুজে পাচ্ছি না আপনাকে? এই লুকোচুরি আর ভালো লাগছে না। প্লিজ সামনে আসুন। দেখুন আপনার আরু এখনো আপনার পথ চেয়ে বসে আছে।”
অপরদিকে সমুদ্র ইয়াসমিনের পায়ের উপর মাথা রেখে শুয়ে আছে। আর ইয়াসমিন পরম স্নেহে সমুদ্রের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।
কিছু একটা ভেবে সমুদ্র হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো,”মা, আরভীকে তোমার ভালো লেগেছে ?”
“আমার বাবুর পছন্দ ভালো লাগবে না আবার? কিন্তু!”
প্রথম বাক্যটি হাসিমুখে বললেও ‘কিন্তু’ শব্দটা অনেকটা চিন্তিত স্বরে উচ্চারণ করলেন ইয়াসমিন।
“তুমি চিন্তা করো না মা। তোমার ছেলে সবটা সামলে নিবে।”
“যাই করিস না কেন কখনো কোনো মেয়েকে কষ্ট দিস না বাবু। মেয়েরা ভালোবাসার কাঙ্গাল হয়। কারো কাছে একটু ভালোবাসা পেলে তাকে নিজের সবটা দিয়ে ভালোবাসে।” এইটুকু বলে ইয়াসমিন থেমে গেলেন। সমুদ্রের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে শুধালেন,”বাবু! তুই সত্যি মেয়েটাকে ভালোবাসিস তো? নাকি ওর কথায় এসব করছিস?”
“সব প্রশ্নের উত্তর হয় না মা। সময়ের সাথে সাথে উত্তর নিজ থেকেই সবার সামনে চলে আসে।”
“আমি আশা করছি তুই ওর চলা পথে হাটবি না।”
এ কথার বিনিময়ে সমুদ্র কেবল হাসলো। কিন্তু সমুদ্রের এই হাসিতে কিছু একটা লুকিয়ে ছিলো যা ইয়াসমিন ধরতে পারলেন না।
চলবে…..