#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-১৫+১৬
৪৭.
স্বাধীন হাসপাতালে বসে আল্লাহকে ডাকছে। সকল সমস্যা সমাধান হয়ে যাক।একদিকে মেয়েটা বাড়িতে নেই।কোথায় গেছে জানে না?অন্যদিকে সে বউকে নিয়ে হাসপাতালে পরে আছে।অপারেশন রুম থেকে ডাক্তার সালেহা খাতুন বের হয়ে আসেন।
-;মিষ্টার স্বাধীন।মা,এবং বাচ্চা দু’জনই বিপদে আছে।বাচ্চা নরমালে হবেনা।আমাদের সিজার করতে হবে।কারণ বেবি মায়ের বুকের কাছে চলে এসেছে।এবং তার পজিশন উল্টো রয়েছে।আর সেইজন্যই আপনাকে কাগজে সই করতে হবে।সেখানে উল্লেখ থাকবে।আপনার বউ এবং বাচ্চা অপারেশন রুমে মারা গেলে তার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না।যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার দ্রুত করুন।আমাদের হাতে সময় নেই।স্বাধীন বোনের মুখটা কথা ভেবেই হাত,পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।কি করবে বুঝতে পারছে না?আজ আবারও একই পরিস্থিতি তার সামনে এসে দাড়িয়েছে।বোনকে জীবিত অবস্থায় বাড়িতে নিতে পারেনি।আজ তবে কি…?
-;মিষ্টার স্বাধীন কি ভাবছেন?কাগজে সই করে দিন।আপনি যত দেড়ি করবেন।আমাদের কাজ ততই দেড়ি হবে।স্বাধীনের চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে।কাঁপা হাতে কাগজে সই করতেই।নার্স কাগজটা নিয়ে চলে গেলো।ডাক্তার তার ওটিতে কাজ শুরু করে দিয়েছেন।
এইদিকে পুতুল পাগলের মতো গভীর জঙ্গলে দাপিয়ে যাচ্ছে।নিজেকে ছাড়ানোর জন্য।কে বা কারা তাঁকে জোর করছে জানে না।তার মাথায় একটা চিন্তা তাকে বাঁচতে হবে।চোখের সামনে সবার হাসি মুখগুলো ভেসে ওঠে।তার,মা,মামা স্বপ্ন পূরণ করা এখনো বাকি।এখান থেকে পালাতে হবে।মামা শিখানো কৌশল কাজে লাগিয়ে দুই হাতের আঙুল ঢুকিয়ে দিলো একজন আক্রমণকারীর চোখে।সে পুতুল কে ছেড়ে নিজের চোখ নিয়ে ব্যাস্ত হলো।সেই সুযোগে পুতুল দুই হাতের সাহায্যে নিজের মুখের কাপড়টা টেনে খুলে ফেলে।আরেকজন তাঁকে ধরতে এলেই ডান পা দিয়ে লাথি বসিয়ে দিলো পুরুষটির গোপন জায়গায়।তাদের দুইজনকে কুপোকাত করেই এক ধলা থু থু মেরে দৌড় দিতে নিলেই,পিছন থেকে একজন চুলের মুঠি ধরে পর পর দুই গালে ঠাসস করে থাপ্পড় মারে।পুতুল থাপ্পর খেয়ে মাথা ঘুরতে থাকে।চোখের সামনে অন্ধকার দেখে।তাকে এই ঘনো গভীর জঙ্গলে টেনে এনেছে এই দুইজন।তাহলে তৃতীয় ব্যাক্তিটি কে?তা দেখার জন্য পুতুল পিটপিট করে চোখ খুলতেই দেখতে পায়।অমানুষ পিতা তারই সামনে দাঁড়িয়ে আছে।কি ভয়ংকর তার হাসি?মনে হচ্ছে রুপকথার কোনো রাক্ষস তাকে মেরে ফেলতে তার দিকে একটু একটু করে এগিয়ে আসছে।পুতুলের আর কিছু মনে নেই।সে ততক্ষণে জ্ঞান হারিয়ে কাঁদা মাটিতে মুখ থুবড়ে পড়েছে।
৪৮.
গ্রামবাংলায় একটা কথা প্রচলিত আছে।’মা মরলে বাপ হয় তাঁলই”।কথাটা কি সত্যি হয়?
সবার জন্য সত্যি হয় না।কিন্তু পুতুলের মতো মেয়েদের জন্য এই কথাটা সত্যি।আজ পুতুল এর বিয়ে।গায়ে তার লাল বেনারসি।মাথায় লাল ওড়না দিয়ে ঘোমটা বড় করে টানা হয়েছে।মুখে কোনো সাজসজ্জা নেই।মেয়েটি কেমন কাঠ পুতুলের মতো বসে আছে।জ্ঞান ফিরে আসতেই নিজেকে আবিষ্কার করে একটা ভাঙা বাড়িতে।তাঁকে আটকে রাখা হয়েছে।পালানোর চেষ্টা করতেই মোস্তফা সরোয়ার ঘরে ঢুকে।তাঁকে দেখেই পুতুলের মাথাটা গরম হয়ে যায়।হাতের কাছে যা পায় তা ছুড়ে মারে।কিন্তু এতে সরোয়ার এর কিছু হয় না।বরং উচ্চস্বরে হেঁসে উঠে।পুতুল সামনে কিছুটা নিচু হয়ে কিছু বলতেই পুতুল চমকে উঠে।পিতা নামক অমানুষটার গলা দুই হাত দিয়ে ধরতে গেলেই পাশের রুম থেকে দুটো বাচ্চার কান্না শব্দ পেতেই হাত থেমে যায়।পুতুল নিজের জন্য ভয় পায় না।কিন্তু ওদের সাথে খারাপ কিছু হলে পুতুল নিজেকে কোনোদিন মাফ করতে পারবে না।তাই অমানুষ পিতার কথায় নিজেকে ঠেলে দেয় অনিশ্চিত ভবিষ্যতে দিকে।মাথা নাড়িয়ে সায় দেয় বিয়ে নামক নাটককে।
অপারেশন রুমের লাইট অফ হতেই স্বাধীন বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়।ওটি থেকে ডাক্তার বের হতে ছুটে যায়।
– ;আলহামদুলিল্লাহ,অপারেশন সাকসেসফুল।মা এবং সন্তান দুইজনই সুস্থ আছেন।আপনার ওয়াইফ এর এখনো জ্ঞান ফিরে নিই।তাকে একটু পর কেবিনে শিফট করা হবে।নার্স ওনার বাচ্চাকে নিয়ে আসুন।
সাদা তোয়ালে করে একটা শিশুকে কোলে করে নার্স নিয়ে এলো।তাকে কোলে নিতেই স্বাধীন হাত বাড়িয়ে দেয়।নবজাতক শিশুকে কোলে নিয়ে খুশি হয়।পুতুল জন্য তার মনটা পুড়ছে।তাঁকে একটা পলক দেখতে ইচ্ছে করছে।এখন বউ,বাচ্চা ভালো আছে। ডাক্তারের সাথে কথা ব’লে রেনু কাছে আসে।রেনু জ্ঞান ফিরেছে।
-;আপনি একা এখানে।ওদের আনেন নিই।
-;চিন্তা করো না বউ।পুতুল আছে।সে তার দুই ভাইকে ঠিক সামলে নিতে পারবে।তুমি আরাম কর।বাবু তোমার পাশে রইলো।আমি বাড়ি থেকে আসছি।রেনু সায় দিতেই।স্বাধীন বাড়ির দিকে ছুটে।
-;আম্মা,আম্মা আপনি কই?বাহিরে আসেন।আপনার ছেলে আসছে।তাকে পানি দিয়ে যান।কিন্তু ভিতর রুম থেকে পানি নিয়ে পুতুল আসে না।পুরো বাড়ি নীরব।তার দুই ছেলেকে ওহ কোথাও দেখা যাচ্ছে না।স্বাধীন বাড়ির আশেপাশে সব জায়গায় খোঁজে।না তাদের কারো দেখা নেই।স্বাধীন ভয় পেয়ে যায়।পাগলের মতো পুরো গ্রামে খুঁজতে বের হয়।রাস্তায় যার সাথে দেখা হচ্ছে।তাকেই জিজ্ঞেস করে।
-;এই যে ভাই আমার মেয়েকে দেখছেন।ওহ কথা বলতে পারেনা।ওর নাম পুতুল।বয়স এগারো।কিন্তু কেউ বলতে পারলো না।
পুতুল এই গ্রামে নাই।কোথাও নাই।স্বাধীন খুঁজতে খুঁজতে হয়রান।আবার সন্ধ্যায় বাড়িতে পা রাখে।ভাবে এই বুঝি পুতুল বাড়িতে আছে।কিন্তু না।পুতুল নেই।কলপাড়ে সকালের থালাবাসন যেভাবে রাখছিল সেভাবেই পড়ে আছে।
৪৯.
কাজী বিয়ে সম্পূর্ণ কাজ শেষ করে কবুল বলতে ব’লে।ছেলে কবুল বলে দেয়।কিন্তু পুতুল কোনো শব্দ করেনা।মোস্তফা সরোয়ার ভয় দেখায় কিন্তু কাজ হয় না।পুতুল চুপ করে আছে।
-;কি’রে তুই নাটক করিস আমার সাথে?কবুল বল।আর সই কর।পুতুল চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে থাকে।যার মানে কবুল, বলবে না আর সই সে করবে না।মোস্তফা মেয়ের গায়ে হাত তুলতে নিলেই,এরমধ্যেই পুলিশ অফিসার উপরে নিশানা করে গুলি ছুড়ে মারে।কানের সামনে বিকট শব্দ হতে সবাই কানে হাত দিয়ে বসে পড়ে।মোস্তফা চিতকার করে বলল।
-;কে
-;তোর জম?
কুড়াল হাতে স্বাধীন দাঁড়িয়ে আছে।মোস্তফা অবাক হয়।স্বাধীন এখানে আসলো কি করে?এই জায়গার খবর তোও কেউ জানেনা।
মোস্তফা ভালো করে তাকাতেই দেখলো ছোট দুই বাচ্চা স্বাধীনের পিছন থেকে বের হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।তাদের সাথে পুলিশকে দেখা যাচ্ছে।এরা পালালো কি করে?পুতুল দিকে তাকায়।পুতুল মাথা থেকে ওড়না সরিয়ে দাঁড়িয়ে যায়।পুতুলকে দাঁড়িয়ে যেতে দেখে ধমক লাগা মোস্তফা।
-;কই যাস তুই?বিয়া না হওয়া পর্যন্ত এক পা-ও নড়লে খবর আছে।
-;কি করবেন আপনি?এতটুকু মেয়েকে বিয়ে দিচ্ছেন।আপনি জানেন না বাল্য বিবাহ অন্যায়।আঠারো বছর আগে কোনো মেয়ে কে বিয়ে দিতে নেই।আঠারো আগেই বিয়ে দিলে এতে কতটা ঝুঁকি আপনি বুঝেন।
আর এই ছেলে তুমি কোন সাহসে এতটুকু মেয়ে কে বিয়ে করতে এসেছো।কনস্টেবল এই ছেলেকে এরেস্ট কর।মিন্টু ভয় পেয়ে সত্যি শিখার করে বলল,
-;আমার কোনো দোষ নাই।মোস্তাফা চাচা তার মেয়ের সাথে আমার বিয়ে দিতে চাইছে।বিয়ে পর যৌতুক হিসেবে বিশ হাজার টাকা আমার হাতে তুলে দিবেন ব’লেছে।
-;কি?যৌতুক দেওয়া এবং নেওয়া আইনগত অপরাধ।আর মেয়েটা এত ছোট তাকে কি করে বিয়ে দিতে চাইছেন?এটা বাল্য বিবাহ।
-;বিয়া দিমু না কি করুম,স্যার।মেয়েরা পরিবারের বোঝা।এজন্য তাদের তাড়াতাড়ি বিয়ে দেওয়া ভালো।কারণ তাদের প্রধানত কাজই হল,স্বামীর খেদমত করা,সন্তান লালন-পালন করা।
-;ভুল।মেয়েরা বোঝা হয় না।আমার আম্মা আমার জন্য বোঝা নয়।আমার মাথার তাজ।আমার ঘরের আলো।তাকে এই বয়সে বিয়ে দিয়ে তার কোমল মনটাকে দূষিত করতে চাই না।হ্যা মেয়েদের একটু বয়স হলেই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়।বিয়ে হলেই তাদের বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে।এরপর তারা তাদের বন্ধু বা পরিবারের সাথে ঠিক মতো দেখা করতে পারে না।তাছাড়া শ্বশুর বাড়িতে সবার সম্মান তাকেই রাখতে হয়।কিন্তু তার সম্মানের কথা কেউ ভাবে না।এভাবে দিনের দিনের পর তারা শোষণের শিকার হয়।তাদের কিছুই বলার থাকে না।আর আমি এসব জেনেশুনে আমার আম্মাকে বিপদগামী করতে চাই না।তারে পড়া লিখা করাতে চাই।মানুষের সেবায় তারে নিয়োজিত করতে চাই।এখন এই বিয়ে অবধি তার সীমাবদ্ধ নয়।তার স্বপ্ন পূরণ এখন বাকি স্যার।আমি আমার আম্মা নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছি।যা পূরণ হওয়ার আগেই তাকে বিয়ে নামক সম্পর্কে বাঁধনে বেঁধে দিতে চাই না।তার সপ্ন পূরণ হলেই আমি নিজেই তাকে যোগ্য সুপাত্র হাতে দান করব।স্বাধীন কথায় পুলিশ অফিসার মুগ্ধ হন।নিজের সন্তান নয়।তবুও তার কত চিন্তা।আর এই লোকটা বাবা হয়ে তার কষ্ট বুঝতে পারলোনা।
৫০.
মেয়েরা কখন বিয়ে করবে,কাকে বিয়ে করবে এগুলো বেছে নেওয়ার অধিকার প্রতিটা মেয়ের থাকা উচিত।আইন দ্বারা বাল্য বিবাহ নিষেধ করা হয়েছে তবুও বাল্য বিবাহের প্রকোপ অনেক বেশি দেখা যায় বাল্য বিবাহ কাকে বলে না জানার কারণে।এজন্য আগে মেয়েদের নিজেদের সংগ্রাম করতে হবে এবং সাথে কিছু পদক্ষেপ মেনে চলতে হবে।বাল্য বিবাহ পাশাপাশি যৌতুক প্রথা চলে আসছে যুগ যুগ ধরে।
বিবাহ হলে যৌতুক দিতে হবে এটা তো আমাদের দেশের সংস্কৃতিতে পুরো মিশে গেছে।মেয়ে পক্ষ গাড়ি,বাড়ি,টাকা-পয়সা দিবে ছেলে পক্ষকে।তবে এই যৌতুকের পরিমাণ কম হবে যদি মেয়ের বয়স কম হয়। এজন্য পিতামাতা তাঁর সন্তানকে অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেয় যৌতুক থেকে বাঁচতে। তাছাড়া যৌতুক যদি ঠিক মতো প্রদান না করতে পারে।তাহলে মেয়েদের উপর নির্যাতন করা হয়।বাল্য বিবাহ কাকে বলে না জানার কারণে এর ফলে অনেকে মেয়ে মারাও যায়।অল্প বয়সে বিবাহ,যৌতুক কারণে কত মেয়ে মারা যাচ্ছে তার হিসেবে নেই।
কোন ব্যক্তি জেনে শুনে যদি বাল্য বিবাহ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন।সেই ব্যক্তির মোট দুই বছরের জেল হতে পারে।সাথে পঞ্চাশ হাজার টাকাও জরিমানা হতে পারে।তাই যাঁরা বিয়ের অনুষ্ঠানে পরিচালনা করেন তাঁরা আগে নিশ্চিত হয়ে নিবেন বিয়েটা বাল্য বিবাহ কি-না।এই এদের সবাইকে থানায় নিয়ে চলো।
-;দাড়ান স্যার।এতখন যখন থাকতে পেরেছেন।আরেকটু দাঁড়িয়ে শুনে যান মা, ছেলে অপকর্মের কথা।শুনে যান এক মেয়ে এতিম হওয়ার গল্প।
পুতুল আজ চুপ থাকতে পারলো না।মামা দিকে তাকিয়ে মনে পড়ে গেলো পুরনো অতীত।মায়ের কান্না,কষ্টের দিনগুলো কথা।
স্বাধীন বলতে শুরু করে পুরনো অতীত।
রোহিতপুর কন্যা রাজিয়া সাথে প্রেম করে মোস্তফা সরোয়ার।রাজিয়া বাবা মেয়ের প্রেমঘটিত খবর বুঝতে পেরে অন্য জায়গায় বিয়ে ঠিক করেন।রাজিয়া,মোস্তফা প্রেমে এতটা পাগল ছিল।বাপ,ভাইয়ের কথা মাথা রাখে নিই।দুইজন পালিয়ে বিয়ে করে।বিয়ের কয়েকমাস ভালোই চলছিল।আমার বোন যখন এই জানোয়ার সত্যিটা জানতে পারে।জামাই জুয়াখেলে।রাজিয়া মায়ের গহনা শেষ সম্বলটুকু জুয়া হারে।রাজিয়া তবুও ভালোবেসে তাকে ভালো পথে ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিল।কিন্তু এই মোস্তফা ভালো হয় নিই।দিন দিন অত্যাচার বেড়ে যায়।শত কষ্টের মাঝে জম্ম হয় পুতুল মেয়েটির।রাজিয়া ভাবে হয়তো সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে সে শুধরে যাবে।কিন্তু সে শুধুরে যায়নি।বরং তাকে মা,ছেলে অবজ্ঞা,অবহেলা করে।রাজিয়া মেয়েকে কোলে পিঠে করে মানুষ করে।ধীরে ধীরে বুঝতে পারে পুতুল আর পাঁচটা বাচ্চার মতো নয়।সে কথা বলতে পারে না।মেয়েকে নিয়ে রাজিয়া কোনোমতো সময় চলে।কিন্তু মা,ছেলে লোভ বেশি ছিলো।
রাজিয়া তখন অন্তসত্বা।বাপের বাড়ি থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা আনতে ব’লে চাপ সৃষ্টি করে। কিন্তু সে রাজি হয় না।বাপ,ভাইয়ের মুখে চুলকানি মেখে চলে আসছিল।সে কোনো মুখে বাপ,ভাই কাছে টাকা চাইতে যাবে।তার সেই মুখ ছিলো না।তাই সে বাপের বাড়ি থেকে টাকা আনতে পারবে না। সাফসাফ জানিয়ে দেয়।কিন্তু মোস্তফা সরোয়ার না শব্দ পচ্ছন্দ হয় নিই।সে আটমাস অন্তসত্বা রাজিয়া ওপর নির্যাতন চালায়।শুধু মাত্র যৌতুকের টাকা জন্য।আমার বোন কেঁদেছে।তাদের একটু দয়া, মায়া হয়নি।বরং মায়ের উস্কানীমূলক মন্তব্য জন্য মোস্তফা আরো আঘাত বেশি করে।এক পর্যায় মুখে তিন তালাক দিয়ে বসে।বোন আমার মানতে পারেনি।জ্ঞান হারিয়ে শ্বশুর বাড়ি ভিটায় পরে থাকে।ছোট পুতুলের বয়স তখন ছয় বছর।মা’কে জড়িয়ে কেঁদেছে।এক সময় যখন তাদের খবর কেউ রাখল না তখন আমার বোন বাপের বাড়ি চলে আসে।এরা যৌতুক জন্য যা কিছু করতে পারে।গর্ভবতী স্ত্রীকে মেরে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। তারা মানুষ হতে পারে না।এক একটা অমানুষ।যৌতুক এদের কাছে সব।আমার বোনকে তালাক দিয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করতে যায়।তাদের কেউ ধোকা রেখে ছিল।যা আমি গিয়ে সত্যিটা ব’লে দেই।কনের বাবা আলতাফ হোসেন তাকে পুলিশ দিয়েছিল।খবর নিলেই জানতে পারবেন।মা,ছেলে পাঁচ বছর জেলে খেটেছে।কিন্তু এদের কোনো লজ্জা নেই।এরা আমার বোনের খুনি স্যার।ওদের জন্য আমার রাজিয়াকে হারিয়েছি।আমার একমাত্র আদরের বোন আজ কবর ঘরে।তার পেটের সন্তান নিয়ে মারা গেছে।আমি ভাই হয়ে বাঁচাতে পারিনি।এই মেয়েটি এতিম হয়ে গেছে। পাঁচ বছর মেয়েটা আমার কাছে মানুষ হয়েছে।তার লিখা,পড়া থেকে শুরু করে সব কিছু আমি করে আসছি।তাহলে তার সম্পূর্ণ দায়িত্ব যেখানে তার মা মারা যাওয়ার আগেই আমার হাতে দিয়ে গেছে।সেখানে এরা অধিকার দেখায় কোন সাহসে।জম্ম দিলেই কি পিতা হওয়া যায়?
যায় না স্যার।পুতুল আমার মেয়ে।ওর সবকিছুতে আমার অধিকার বেশি।আমি ওর মা,আমি ওর বাবা।এই পৃথিবীতে আমি ওর সব।সেখানে অন্য কারো হস্তক্ষেপ আমি পচ্ছন্দ করব না।মেয়ে যেহেতু আমার।তারজন্য মাথাটা অবশ্যই আমি ঘামাবো।অন্য কাউকে সেই অধিকার আমি দেয়নি।আজকের পর থেকে যে আমার এবং আমার মেয়ের মাঝে দেয়াল হওয়ার চেষ্টা করবে।তাকে কিন্তু আমি ছেড়ে কথা বলবো না।বারবার অন্যায় করবে।আর বারবার তাকে ছেড়ে দিবো।এটা ভাবা সম্পূর্ণ ভুল।তাই আমি রাজিয়া খু*ন এবং পুতুলকে বাল্যবিবাহ জোর করে দেওয়ার জন্য মামলা করতে চাই।তারা কোন কারণে এমন জগন্য কাজ করছে তা আমার বুঝতে বাকি নেই।
রাজিয়া মারা গেছে শুনে মোস্তফা সরোয়ার মাটিতে ঠাসস করে পড়ে গেলো।নাসিমা অবাক হয়ে মুখে কাপড় দিলেন।পুলিশ সবকিছু শুনেই তাদের জেলে নিলো।এবং যেহেতু বাল্য বিবাহ এখানে হচ্ছিল।তাই বর পক্ষসহ জেলে নিলো।বাল্যবিবাহ শাস্তি অনুযায়ী দুই বছর জেল এবং পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।পুলিশ,স্বাধীনের বয়ান অনুযায়ী মা,ছেলের কোমড়ে দড়ি বেঁধে নিয়ে যায়।পুতুল দৌড়ে মামা বুকে ঝাপিয়ে পড়ে।আজ তার মায়ের কথা মনে পড়ছে।এই লোকটা তার মা’কে শান্তিতে থাকতে দেয়নি।মায়ের জন্য হ্রদয় পুড়ছে।তার মা কতটা কষ্ট নিয়ে মারা গেছে।সেইসব স্মৃতি মনে আসতেই কলিজা কেঁপে ওঠে।আজ বুঝি সব কিছুর সমাপ্ত হলো।
৫১.
মোস্তফা সরোয়ার যখন তাকে হুমকি দিয়ে চলে যায়।তখন দুই ভাইকে কি করে বাঁচাবে সেই চিন্তা বিভোর পুতুল?দুই ঘরে মাঝে ভাঙ্গা জানালা দিয়ে মিলন,সাজুকে চোখ,হাত,পা বাঁধা পড়ে থাকতে দেখে মাটিতে।পুতুল নিজের শরীরের ক্ষত কথা চিন্তা করে না।ভাঙ্গা দরজা আরেকটু ভাঙ্গার জন্য কিছু খুঁজতে থাকে।হাতের কাছে আধ ইটের টুকরো পেয়ে সেটা দিয়ে আঘাত করে।জঙ্গ ধরা জানালা খুলে যেতে পুতুল ওহ ঘর ছেড়ে মিলন,সাজু কাছে চলে আসে।তাদের চোখ, হাত,পায়ে বাঁধন খুলে দিতেই দুই ভাই,বোনকে জড়িয়ে ধরে।পুতুল ওদের শান্ত করে এখান থেকে পালাতে ব’লে।পুতুল যে এখানে আছে এই খবর স্বাধীন অবদ্ধি পৌঁছাতে বলে।মামা পারবে এই বিয়ে নামক নাটক থেকে তাকে বাঁচাতে।পুতুল যতটুকু আন্দাজ করলো।তাতে মনে হলো তাদের এক থেকে আরেক গ্রামে রাখা হয়েছে। গ্রাম দুটো পাশাপাশি। দুই গ্রামের মাঝে বড় সড়ক রাস্তা রয়েছে।মোস্তফা তাদের কে নিজেদের বাড়িতে রাখে নিই।কারণ স্বাধীন তাদের না পেলে সরোয়ার বাড়িতে যাবে।তাই চালাকি করে পাশাপাশি গ্রামে ভাঙ্গা পুরনো বাড়িতে রেখেছে।পুতুল বুদ্ধিতে বিকাল বেলার মধ্যেই মিলন,সাজু ওই গ্রাম ত্যাগ করে।নিজেদের গ্রামে ঢুকেই বাড়ির পথে রওনা হয়।ততক্ষণে সন্ধ্যা নেমে গেছে।স্বাধীন সন্ধ্যা বাসায় এসে যখন পুতুলকে না পেয়ে মনটা খারাপ হয়।ঠিক সেই সময় দুই ভাই বাড়িতে পা রাখে।এবং জানায় আজ রাতেই এশারের পর পুতুল বিয়ে।স্বাধীন শুনেই চমকে যায়।এসব কে করেছে মিলন,সাজু জানে না?শুধু জানে পুতুল বড় বিপদে রয়েছে।স্বাধীন পুলিশকে সাথে নিয়ে তখনই রওনা দেয়।পুতুল তার মামা আসা পর্যন্ত বিয়ে নাটকটি চালিয়ে যায়।মামা পুলিশ নিয়ে আসতেই সে দেহে প্রাণ ফিরে পায়।তারপর যা হওয়ার তাই হয়েছে।
চলবে….
কালকেই পর্ব-১৫ লিখেছিলাম।কিন্তু আমার একটু ভুলের জন্য পুরোটা ডিলিট হয়ে যায়।তাই ভাবলাম দুটো পর্ব একসাথে দিয়ে দেই।অপেক্ষা ফল মিষ্টি হয়।আশা করছি তারা উওর পেয়ে গেছেন।পর্ব বড় হয়েছে।কমেন্ট বড় চাই।