#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-১৯
৫৮.
আব্বু জলতি চলো।পিছনে তিন পাগলা কুত্তা আসছে।আমাকে দেখলেই কামড়ে দিবে।স্বাধীনের হাত টেনে তাড়াতাড়ি সেখান থেকে সরে যায়।পুতুল,সাজু নীরব দর্শক।কি হলো ব্যাপারটা তাদের মাথায় ঢুকে নিই?
ভাই এটা কি ছিল?গ্রামে আসতে না আসতেই একটা পিচ্চি ছেলে আমাদের তিন ভাইকে ঘোল খাওয়ালো।ছি,ওয়াক্ক পেট মোচড়ে বমি পাচ্ছে।আল্লাহ আমার ইজ্জত শেষ।
অর্পণ রাগে ফুঁসতে লাগল।একজন লিলিপুট জুতা মারে।আরেকজন বায়ুদূষণ করে।এদের ভাই,বোনের কি করা যায় ভাবছে অর্পণ?পিচ্চি কান্ড মনে পড়তেই,মুখ চেপে বোতলের বাকি পানিটুকু নিজ মাথায় ঢেলে বাড়ির দিকে রওনা হয়!আজ কি বাজে অভিজ্ঞতা হলো ছি।
বাসায় পা রাখতে খিলখিল করে হাসিতে ফেটে পড়ে মিলন।স্বাধীন হা হয়ে তাকিয়ে আছে।ছেলেটা এইভাবে হাসছে কেন?পাগল হলো না কি?
আব্বা কি হয়েছে আপনার?এইভাবে হাসেন কেন?
কিছু না আব্বু।এমনই হাসতে মন চাইলো আরকি?কথাটা শেষ করে ঘরে যায়।স্বাধীন নিজের কাজে জন্য বেরিয়ে পরে।পুতুল মিলনের পাগলামির কথা আর জিজ্ঞেস করলো না।এই পাঁজি ছেলে মাঝে মধ্যে এমন অদ্ভুত কান্ড করে বসে থাকে।সাজু,মিলনকে চেপে ধরতেই।গড়গড় করে কাহিনি ব’লে দিল।সাজু,মিলন সাথে হেঁসে উঠে।
-;বেশ করেছিস।আমাদের বোনকে লিলিপুট বলবে কেন?কোন এঙ্গেল থেকে তাকে লিলিপুট লাগে।লম্বু বেটা কোথাকার?
তালুকদার ভবনে পা রেখেই কারো সাথে কোনো কথা অর্পণ বললো না।নিজের রুমে ঢুকে ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে গেছে এক ঘন্টা হলো।এখনো ওয়াশরুম থেকে বের হয়নি।
রাবেয়া তালুকদার ছেলেকে এসে কয়েকবার ডেকে গেছে।সে কোনো রেসপন্স করেনি।বেলা যখন দুপুর দু’টো কাঁটার বেশি,তখনই
নিজেকে শান্ত করে রুমে ছেড়ে ডাইনিং টেবিলে খেতে বসে।রাবেয়া ছেলে কে খাবার দিতে দিতে আড়চোখে তাকায়।আজকে বাবা,ছেলের দেখাই হয়নি।তাহলে রাগ করলো কার সাথে?রাবেয়া বুঝতে পারছে না।
অর্পণ চুপচাপ খাবার মুখে তুলে খেতে লাগলো।
৫৯.
স্বাধীন মিয়া কি খবর?কেমন আছো?তুমি শিক্ষিত মানুষ হয়ে কেন যে গ্রামে পড়ে আছো?ঢাকায় চল।শহরের বাতাস তোমার গায়ে লাগলে বুঝতে পারবা।টাকায় সুখ,টাকাই ধর্ম।ঢাকা শহরের লাল,নীল বাতি দেইখা চোখ জুড়াইয়া যাইবো।বড় দালানে এসির নিচে বসে আরামে দিন কাটবো।
টাকায় যদি সুখ পাওয়া যেতো।তাহলে গ্রামের মানুষ এই গ্রামে থেকে চাষবাস করে খেতো না।সবাই টাকার জন্য গ্রামে ছুটতো।যেমন আপনি এবং আপনার ছেলে ছুটেছেন ঢাকায়।আপনার মতো মানুষদের জন্য ঢাকা শহরের এত জ্যাম লাগছে।ঢাকা শহরের এত কোলাহল।অতিরিক্ত লোকসংখ্যা বাড়ছে।ঢাকা শহরে হয়তো টাকার মেশিন আছে।কিন্তু এই মাটি,বায়ু,শান্ত পরিবেশ নেই।নদী,খাল বিলের পানিতে যে মাছ রয়েছে তার
স্বাদে আমি কাবু।ঢাকার চাষ করা মাছে আমার রুহ শান্তি পাবে না ভাই।এই গ্রামে আমার জম্ম।এই গ্রামে আমার শৈশব,কৈশোর কেটেছে।আমি এতেই খুশি।আমার ঢাকা পছন্দ নয়।শুধু শুধু ঢাকায় গিয়ে ঢাকার লোকজনের বিরক্ত কারণ হতে চাই না।আমি যাওয়া মানে আমার জন্য আরেকটু অতিরিক্ত জ্যাম হবে।জমিল চৌকিদার স্বাধীনকে কাবু করতে আরেকটু কিছু বলল।কিন্তু যুতসই না হওয়া চলে গেলেন।
স্বাধীন বাশঁ কেটে চারদিকে বেড়িবাঁধ দিয়ে দিলো।কলাগাছে কলা এসেছে।এখন ছোট ছোট।কিন্তু ইদানীং কলা চুরি হওয়া,বাধ্য হয়ে বাঁশ কেটে এনে চারদিকে আটকে দিলো।
কি জমিল?কাজ হলো।
না,মেম্বার সাহেব।টাকা লোভ দেখিয়ে কাজ হয়নি।
লেগে থাকো।আমার এই জমিটা চাই।স্বাধীন সরে পড়লে নিশ্চয় জমিটা পাবো।
আর যদি কাজ না হয় মেম্বার!তাহলে।
যদি আপোসসে না হয়।তাহলে ছিনিয়ে নিবো।
প্রয়োজনে স্বাধীনের লাশ পড়বে এই জমিতে।ওর রক্তে মাটি লাল হোক।আমি তাই চাই।পুরোনো কথাগুলো কিছুই ভুলিনি।আজকের মতো লেগে থাকো।এক,দুইবার কথায় কাজ না হলে শেষ করে দিবো।একদম জানে মেরে ফেলবো শূ**য়োরে বাচ্চাকে।
রেনু বসে বসে কাঁথায় নকশা করছে।শরীরটা এখন ভালো হয়েছে।সব কাজই করতে পারে।
পুতুল আম্মু কোথায় তুমি?
পুতুল ওড়নায় ভিজে হাতটা মুছতে মুছতে রেনু ঘরে ঢুকে।মামীর এক ডাকে সে হাজির।
আম্মু তোমার মামা সেই যে তোমাদের স্কুল থেকে বাসায় দিয়ে গেলো।এখনো এলোনা কেন?রাত অনেক হয়েছে।
পুতুল ইশারায় বলল চলে আসবে মামী।চিন্তা করো না।
ওই আপুরে তুই কই?তাড়াতাড়ি আয়।আমি ফাটা বাঁশে আটকে গেছি।
এটা মিলনের গলা না,বাদরটা আবার কি করলো?পুতুল দেখে আসো।আবার কি করেছে?
পুতুল উঠোনে আসতেই দেখতে পায়।তার বাঁদর ভাই প্যান্ট ধরে লাফাচ্ছে।কিন্তু কেন?সামনে যেতেই মিলন বলল,
আপু বাচাঁও।
পুতুল কিছু বলার আগেই স্বাধীন বাসায় ঢুকে।পুতুলকে চলে যেতে বলল।মিলনের প্যান্টের চেইন টান দিতেই সে বাথরুমে দৌড়।
এই ছেলের সবকিছুতেই তাড়াহুড়ো।আস্তে ধীরে কাজ কি করা যায় না?সব কিছু নিয়ে বাঁদরামী।কলপাড়ে হাত মুখ ধৌত করতে করতে বলল,
পুতুল আম্মা ভাত বাড়ো।খুব খুদা লাগছে।স্বাধীন কলপাড় থেকে চলে যেতে নিবে।সে সময়ই মিলন বাথরুম থেকে বের হয়।
আহা কি শান্তি?পেটে হাত ভুলাতে ভুলাতে বাথরুম থেকে বের হতে হতে কথাটা বলে হাসি দিলো।স্বাধীন মিলনের কান টেনে ধরে।
এই যে আব্বা আপনি ভালো হবেন না।বড় হচ্ছেন।জ্ঞান,বুদ্ধি একটু মাথায় রাখুন।
আমি আবার কি করলাম?আমার হিসু পেয়েছে।আমি হিসু করবো না।
না।আপনি কিছু করে নিই।যত দোষ,নন্দ ঘোষ এই স্বাধীনের।
৬০.
তালুকদার বাড়িতে আসর বসেছে।অসীম তালুকদার,রাবেয়া,অর্পণ,জিহান,
রিহান,মাসুদা,সাফিনকে পেয়েই আড্ডা জমেছে।তিন ছেলে আসবে শুনেই সাফিন আগেই রওনা দিয়েছিল।তাই সময় মতো বাড়িতে আসতে পেরেছে।
অর্নাস প্রথম বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা সামনেই শুরু।এরপর কি করবে চিন্তা করেছো?
-;জি,চাচ্চু।অর্নাস শেষ হলেই,মাস্টার্স করার পাশাপাশি কিছু করতে চাই।
সেই কিছুটা কি অর্পণ?রাজনীতি।বাবার প্রশ্নে তাকায় অর্পণ।মাথা উঁচু করে মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়।
হুম।
রাজনীতি তুমি বুঝো কতটুকু।আমি যতটুকু জানি এবং পূর্বের অভিজ্ঞতায় থেকে বলতে পারি।তুমি এখনো উপযুক্ত নও।পড়াশোনা করছো।তাতেই ফোকাস করো।দেশের জন্য কিছু করার সময় এখনো অনেক পড়ে আছে।আর তাছাড়া তোমার বয়স কত।একুশ বছর পূর্ণ হবে কাল বাদে পরশু।সেইজন্য বাসায় পার্টি রাখা হয়েছে।অর্নাস চার বছর ব’লে কিন্তু চার বছরে শেষ হয় না।অর্নাস শেষ করতে কিন্তু ছয় থেকে সাত বছর লেগে যায়।তারপরে মাস্টার্স করবে।তাই বাবা হিসেবে একটা রিকুয়েষ্ট করছি।এই মূহুর্তে রাজনীতি থেকে সরে আসো।অসীম তালুকদার ছেলের থেকে কোনো উত্তর পেলেন না।ছেলের সাথে রাগ করে বাড়ি ছেড়ে চলে গেলেন।অর্পণ চুপচাপ বসে রইলো।সাফিন,অর্পণ ভাতিজা এবং দুই ছেলের সাথে কথা বলায় মশগুল হলো।চাচার সাথে তার সম্পর্কটা অন্য রকম।একজন ফ্রেন্ডের মতো তার সাথে মিশতে পারলেও বাবা ছেলের সম্পর্ক দা,বটি মতো।রাবেয়া স্বামীর পিছনে ছুটে ধরতে পারলেন না।বাসায় ফিরলে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন ব’লে মন স্থির করলেন।এখন ছেলেকে সময় দেওয়া দরকার।সামনে ছেলের পরীক্ষা।ছেলেটা আবার চলে যাবে।কবে আসবে ঠিক নেই?এখন কোনোমতেই টেনশন দেওয়া যাবে না।
সবাই যার যার ঘরে চলে যেতেই অর্পণ সোফায় টান টান হয়ে শুয়ে পড়ে।রাবেয়া ছেলের মাথাটা কোলে নিয়ে নিলেন।মাথা হাত বুলিয়ে দিতেই ঘুমের দেশে পাড়ি দেয়।
৬১.
শীতের সকালে কুয়াশা ঘেরা।শীতের সকাল দিগন্তের পার বেয়ে গাছপালার উপরে কুয়াশা পড়েছে।দূর্বলা ঘাসের ওপর শিশির জমে আছে।পাখির কিচিরমিচির শব্দ হচ্ছে।এত কুয়াশা ভেদ করে যেখানে কিছু দেখা যাচ্ছে না।একটু এগিয়ে দেখে সেখানে একটি মেয়ে গায়ে চাদর জড়িয়ে
ঘাসের শিশির মাড়িয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।লম্বা কালো কেশীনি চুলগুলো ছেড়ে দিয়েছে।পায়ে তার একজোড়া নূপুর।সেখান রিমিঝিম শব্দ শুনা যাচ্ছে।অর্পণ একটু একটু করে সামনে এগিয়ে রমনীকে ছোঁয়ার চেষ্টা করতেই সে দৌড়ে পালিয়ে গেলো।দূর জঙ্গল থেকে কাজল কালো চোখ দুটো মেলে তাকিয়ে তার প্রাণে।মেয়েটি মিষ্টি হাসির শব্দ সাথে তার মিষ্টি কন্ঠ সুর তুলে।কানে বাজে মিষ্টি গলার আওয়াজ।
কোন এক শীতের সকালে আমি তোমায় নিয়ে হারাবো গ্রামগঞ্জের শিশির ভেজা পথে।
তুমি প্রাণ সখা হয়ে হাতে হাতটি রেখো মোর।
জায়গায় দিও তোমার বাহুডোরে।
অর্পণ এক পা সামনে এগোতেই মেয়েটি গায়েব হয়ে গেছে।অর্পণ পাগলের মতো ছুটে।কিন্তু তার নাগাল নেই।কোথায় হারালো কেশিনী?
ফজরের আজানের শব্দে অর্পণের ঘুম ভেঙে যায়।বিছানায় উঠে বসতেই দেখতে পায়।সাড়ে পাঁচটা বাজে।তারমানে এতক্ষণ
স্বপ্ন দেখছিলাম।শিট।
চলবে….