চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা #ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া #পর্ব-১৮

0
348

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-১৮
৫৫.
আয় বৃষ্টি ঝেঁপে,
ধান দেব মেপে।
ধানের ভিতর পোকা,
জামাই বাবু বোকা।

গ্রামে মেলা বসেছে।সেখানে চড়কি থেকে শুরু করে বিভিন্ন খেলনা হাট দেখা যাচ্ছে।মিলন খেলনা পুতুল হাতে তুলে নিয়েছে।যেখানে এক মেয়ে কনে সাজে তার বরের পাশে বসে আছে।খেলনা পুতুল হাতে নিয়ে নড়াচড়া করতে করতে উপরোক্ত কথাগুলো ব’লে খিলখিল হাসিতে ফেটে পড়ে।পুতুল কপাল কুঁচকে হাতের ইশারা বলল,

কি হয়েছে তোর?

দেখ আপু পুতুলটা তোমার মতো করে বউ সেজেছে।পুতুল মিলনের মাথায় আস্তে থাপ্পড় মেরে ইশারায় বলল,

চুপ থাক ফাজিল।টিভিতে ওইসব ছবি দেখে দেখে এসব বলছিস।

মিলন মাথা কষে বলল।

তুমি মারলে কেন?এই পুতুলের মতো করে তোমারও বর আসবে দেখে নিও।মিলন কথা পাত্তা দিলো না।নিজের মাপের আকাশী চুরি হাতে পড়ে মিষ্টি করে হাসলো।স্বাধীন এসে দেখে পুতুলের হাতে রেশমী চুরি।

-;আম্মা পচ্ছন্দ হয়েছে।পুতুল মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো।স্বাধীন পাঞ্জাবি পকেটে হাত দিয়ে দেখে মাত্র বিশ টাকা পড়ে আছে।মন খারাপ করে পুতুল দিকে তাকাতেই,পুতুল বুঝতে পারে।মামা কাছে কোনো টাকা নেই।তাই মন খারাপ করলোনা।মিষ্টি হেসে আস্তে করে একের পর এক চুরিগুলো খুলে রেখে দিল।মামা হাতের বিশ টাকা নিয়ে মামার পাঞ্জাবির পকেটে হাত ঢুকিয়ে রেখে দেয়।আরেকটু আগেই স্বাধীন মেলার ভিতর থেকে দুই পদের নিমকি আদা কেজির মতো নিয়েছে।সেটা নিয়ে সবাই বাড়িতে ফিরে গেলো।কিন্তু মিলন বারবার পিছনে ঘুরে রেশমি চুরিগুলো দিকে তাকায়।বাড়িতে ঢুকেই চুপচাপ গালে হাত দিয়ে ভাবতে লাগল।কিছু মনে পড়তেই সাজু দিকে তাকিয়ে চোখ,মুখ উজ্জল হয়ে ওঠে।মিলন দৌড়ে রুমে ছুটে।সাজু পিছুপিছু চলে আসে।পুতুল ঘরে নেই।সেই সুযোগে ছোট মাটির ব্যাংক ভেঙে ফেলে।দুই টাকা থেকে শুরু করে পাঁচ টাকা কয়েন পেলো।সবগুলো হাতে তুলে দুই হাতের মুঠোয় নিয়ে স্বাধীনের রুমে ছুটে।স্বাধীনকে গুনে দিতে ব’লে।কত টাকা জমা হয়েছে।স্বাধীন গুনে দেখে।সত্তর টাকা হয়েছে।মিলন ভীষণ আনন্দ হয়ে টাকাগুলো নিয়ে মেলার দিকে ছুটে যায়।সাজু ও তার পিছু নেয়।হাতের সত্তুর টাকা দিয়ে কাচের রেশমি চুরি দিতে বলে।দোকানদার বলল,

-;এক মুঠো কাচের চুরি চল্লিশ টাকা।

দোকানদারের তখনকার কথা মনে পড়তেই হাসি মুখে দুই মুঠো চুরি সত্তুর টাকায় দিয়ে দেন।মিলন হাসিমুখে দৌড়ে ছুটে চলে যায়।সাজুও রওনা হয়।পুতুল রুমে এসে ব্যাংক ভাঙ্গা দেখে।এটা মিলনের কাজ বুঝতে পারে।নিশ্চয় মেলায় কিছু পচ্ছন্দ হয়েছে।যা মামা কিনে দিতে পারেনি।তাই এখন কিনতে ছুটেছে।পুতুল ভাঙ্গা টুকরোগুলো উঠিয়ে সব পরিষ্কার করে নেয়।নিজের পড়ার টেবিলে বসতেই মিলন রুমে প্রবেশ করে।ভাইয়ের ছোট দুই হাতে রেশমী চুরি দেখে পড়ার টেবিল ছেড়ে পুতুল দাড়িয়ে যায়।বোনের সামনেই দুই মুঠো কাচের চুরি রাখে।পুতুলের আর কিছু বুঝতে বাকি নেই।তার ভাই তার জন্য কাচের চুরি আনতে গিয়েছিল।খুশিতে দুই চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করে।কাঁপাকাপা দুই হাতে ভাইয়ের দুই গাল ধরে কপালে ভালোবাসার স্পর্শ একে দেয়।আজ এতটা খুশি লাগছে পুতুল কোন ভাষায় প্রকাশ করবে বুঝতে পারছে না।তার ঈদের দিনের মতো আনন্দ লাগছে।ভাইয়ের জমানো টাকায় তার জন্য প্রথম উপহার।সে গ্রহণ না করে কিভাবে থাকবে?

-;আপু পড়বে না।

পুতুল মাথা নাড়িয়ে দিল।যার মানে সে পড়বে।মিলনকে সামনেই বসিয়ে দুই হাতে রেশমী চুরি পড়ে নিলো।সুন্দর দুই হাতে রেশমী চুরি কেমন সুন্দর মানিয়েছে?মিলন ভীষণ খুশি হয়েছে।সুখের মূহুর্তগুলো একটু বেশিই সুন্দর হয়।

৫৬.

স্বাধীন ভাই কোথায় যাচ্ছেন?
এই তো ভাই মেয়ে,আর ছেলেদের আনতে এগিয়ে যাচ্ছি।

ওহ।তাদের ওই পাশের গ্রামে পড়তে দিয়েছেন।ওই পাড়ের চেয়ারম্যান সাহেব বাড়ি চিনেন।

হ্যা চিনি।অসিম তালুকদার।তাদের বেশ নামডাক।

সেই ছেলে বছরখানিক আগে ঢাকায় পড়তে গিয়েছিল।এখন আবার গ্রামে আসছে।সঙ্গে তার দুই চাচাতো ভাই।এরজন্যই এলাকার মানুষ ভয়ে থাকত।ছেলে একটা গুন্ডা।

মানে।কার কথা বলছেন?

আরে চেয়ারম্যান ছেলে অর্পণ কথা বলছি।এই ছেলে না-কি ঢাকায় রাজনীতি করে।

ওহ।কিন্তু যারা পড়াশোনা করতে ঢাকায় যায়।তারা কি গুন্ডা হয়?

আরে সবাই না হলে কি হবে?এই ছেলে ছোট বেলা থেকে গুন্ডা।বাপ এলাকার চেয়ারম্যান।তার চাচা সাফিন তালুকদার খুলনা জেলার পুলিশ অফিসার।চাচী পাচঁ বছর ধরে হাইস্কুলে মাস্টারগিরি করে।লোকটার কথা শুনে স্বাধীন চিন্তা পরে গেলো।পুতুল,এবং দুইছেলেকে নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না তো।

ঢাকা থেকে চেয়ারম্যান সাহেবের ছেলে আসছে।পাঁচ বছর আগে ছেলেকে ঢাকায় অনেক কষ্টে পড়তে পাঠিয়ে ছিল।আজ ছেলে গ্রামে আসছে।রাবেয়া ছেলে আসার খবর শুনে নিজ হাতে রান্না বসিয়ে দিলো।বাবা,ছেলে এই লড়াই তার ভালো লাগে না।তবুও ছেলের ভালো জন্য চুপচাপ স্বামীর সাথে রাগ করে।বাবার বাড়িতে কিছুদিন পরে ছিল।কিন্তু বেশিদিন স্বামীর সাথে রাগ করে রাবেয়া থাকতে পারেনি।ছেলে ঢাকায় যাওয়ার দুই সপ্তাহের মাথায় তালুকদার বাড়িতে চলে আসে।অসীম তালুকদার বউয়ের সব দেখে ওহ কিছু ব’লে নিই।পরিবেশ সময়ের সাথে ঠান্ডা হয়েছে।

বাইক নিয়ে তিন ভাই এলাকা ঘুরে বেড়াচ্ছে।গ্রামের সাথে তাদের পুরনো কত দূষ্টুপণা সৃতি জড়িয়ে আছে।

নিজের পুরনো হাইস্কুলে প্রাঙ্গনে পা রাখে অর্পণ।হারুন মাস্টার খবর নিতেই জানতে পারে।সে ফেনীতে টান্সফার হয়েছে।বাকি শিক্ষকদের সাথে কথা ব’লে স্কুলটা ঘুরে দেখতে থাকে।দ্বিতীয় তলায় ষষ্ঠ শ্রেনীর “ক” শাখা পার হয়ে “খ” শাখা সামনে দিয়ে যেতে নিলেই জানালার পাশে পুতুলকে দেখতে পায়।কোথায় দেখেছে ঠিক মনে করতে পারছে না।হাই স্কুলের প্রিন্সিপাল ম্যাম অর্পণকে দেখে এগিয়ে আসে।অর্পণ তুমি বাসায় যা ও নিই।ভাইজান কিন্তু তোমার ওপর খুব রাগ করবে আব্বু।বাসায় যাও।তোমার আম্মিজান বাসায় অপেক্ষা করছে তোমার জন্য।অর্পণ আঙুল তুলে ইশারায় পুতুল দিকে তাক করে বলল,

-;চাচী এই মেয়েটি কে?

অর্পণ হাত বরাবর তাকিয়ে মাসুদা তালুকদার কপাল কুঁচকে যায়।এক প্রকার বিরক্ত হয়ে বলল,

-;তুমি ওকে চিনবে না আব্বু।ওহ রোহিতপুর থেকে এখানে পড়তে আসে।নাম পুতুল।

-;রো..হি..ত..পুর। নামটা শুনতেই অর্পণের কিছু মনে পড়ে যায়।শয়তানি হাসি দিয়ে চোখে স্নানগ্লাস পরে বের হয়ে যায়।মাসুদা তালুকদার পুতুল দিকে আরেকবার তাকিয়ে চলে যায়।এতখন ধরে তাঁকে নিয়ে কথা হয়েছে।সেই দিকে পুতুলের কোনো খেয়াল নেই।সে মনযোগ দিয়ে খাতায় অঙ্গ করতে ব্যাস্ত।একটা অঙ্গ বারবার করেও হচ্ছে না।এক পর্যায় উত্তর মিলে যেতেই বিজয় হাসি ঠোঁটে ফুটে ওঠে।স্যারকে খাতা দেখিয়ে ব্যাগ গোছাতেই ছুটির ঘন্টা পরে যায়।

৫৭.?
কারো একদিন হবো
কারো এক রাত হবো
এর বেশি কারো রুচি হবে না
আমার এই বাজে স্বভাব কোনোদিন যাবে না,,

জিহান গান বন্ধ করতে একটা ইটের টুকরো ঢিল মারতেই জিহান মাথার পিছন সাইটে লাগে।
আ.বে কোন হালায় রে।
তোর বাপ হালায়।যা সর।বসতে দে।
কি মামা?এত খুশি কেন?খবর কি?
অর্পণ,জিহান হাত থেকে পানির বোতল নিয়ে সব মাথায় ঠেলে দিলো।
জিহান,রিহান বাইককে বসা ছিল।অর্পন কাজে জিহান,রিহান দাঁড়িয়ে যায়।
পুরনো শত্রুকে এতদিন পরে পেয়েছি।এত সহজে পাবো আশা রাখিনি ইয়ার।জিহান কিছু বলতে নিবে।তখনই পুতুল কদম গাছের নিচে এসে দাড়াতেই,সাজু,মিলন চলে আসে।দুই ভাইকে নিয়ে সামনে এগোতে কয়েক পা ফেলে।ঠিক সে সময় পিছন থেকে ডেকে ওঠে।

ওই লিলিপুট।পুতুল এমন অদ্ভুত নাম শুনে পাত্তা দিলো না।হেঁটে চলে যেতে নিলে আবার একই ডাক।মিলন পিছনে তাকিয়ে দেখে লম্বা তিনটি ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।

-;আপু,লম্বুগুলো মনে হয় নির্মা ওয়াশিন পাউডার খেয়েছে।তাই দিন দুপুরে এমন করছে।তুমি এখানে সাজু সাথে দাঁড়াও আমি আসছি।বাম হাতের সাহায্যে মাথার ছোট চুলগুলো পিছনে ঠেলে পেন্টের পকেটে দুই হাত দিয়ে বড় ছেলেদের মতো ভাব নিয়ে এগিয়ে গিয়ে বলল,

-;কি ভাই?কি সমস্যা?দিন দুপুরের আমাদের স্কুল মাঠে কি?স্যারের কাছে বিচার দিলে না।পাছা পিঠিয়ে লাল করে দিবে।

-;ওলে বাবু সোনা ব’লে কি?আমাদের পাছা পিটিয়ে লাল করবে!তার আগে তুমি ভাবতে থাকোও সোনা।এখন তিন জন একসাথে তোমাকে ধরলে তুমি পালিয়ে বাঁচতে পারবে।
এবার একটু মিলন নড়েচড়ে দাঁড়িয়ে রইল।এরা তিনজন একসাথে তাকে ধরলে সে বাঁচবে কি করে?আর বোনকে সেফ করবে কি করে?দূর থেকে স্বাধীন কে আসতে দেখে মিলনের ভাবনা চলে যায়।এখান থেকে চলে যাওয়ার আগেই পেট মোচড় মারে।কিছু চিন্তা করেই হাসি চলে আসে।পিছনে ঘুরে চলে যাওয়ার আগেই বায়ু দূষণ করে দৌড় মারে।তিন ভাই দূগর্ন্ধে মুখে হাত দেয়।তাদের পেট মোচড় মেরে বমি আসতে চায়।ওয়াক্ক ওয়াক্ক করতেই তিন ভাইয়ের অবস্থা খুব খারাপ।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here