চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা #ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া #পর্ব-৯

0
620

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৯
২৮.
ছোট পুতুলকে নিয়ে চিন্তা করছে স্বাধীন। কাল একবার নদীর ওপারের স্কুল যাবে কথা বলতে।সেখানে দেখি কি ব’লে?দুপুরের খাবার খেয়ে স্বাধীন আবার নিজের কাজে চলে যায়।স্বাধীন চলে যেতেই একটা গাড়ি স্বাধীনদের বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে রাখল।বাকিটা পথ হেঁটে আসতে হবে।কারণ রাস্তা সরু আর চিকন।এখানে গাড়ি নেওয়া সম্ভব নয়।গাড়ি থেকে নেমেই হাঁটতে হাঁটতে উঠোনে দাঁড়ায়।রেণু নিজের ছেলে কে ঘুম পাড়িয়ে, রাজিয়া ছেলেকে কোলে নিয়ে বোতলের দুধ খাওয়াচ্ছে।এমন সময় অচেনা দুইজনকে ভর দুপুর বেলা দেখে পুতুলকে দেখতে পাঠালো।কে এসেছে পুতুল জানেনা?তবুও মামীর কথায় ঘর ছেড়ে বাহির আসে।তাঁকে দেখে চানঁমিয়া জড়িয়ে ধরে আদর করতে নিলে সে ভয় পেয়ে পিছনে চলে যায়।পুতুল কে পিছনে চলে যেতে দেখে তিনি ডাকেন।

-;আমায় তুমি ভয় পেলে পুতুল।ভয় পেয়ে ও না। আমি তোমার কোনো ক্ষতি করতে আসেনি।আমি চানঁমিয়া তোমার দাদুর বাড়ির লোক।সম্পর্কে তোমার বড় আব্বু হই।আর এই যে আমার পাশে যাকে দেখছো।সে তোমার বড় ভাই অন্তর।অন্তর এই সেই পুতুল যার কথা তোমাকে আমি একটু আগে ব’লেছিলাম।অন্তর হাই দিলো।কিন্তু পুতুল কোনো কিছু না ব’লে চুপটি করে রইল।রেনু ততক্ষণে পুতুলের ভাইকে কোলে নিয়ে বাহিরে এসে অচেনা দুই জনকে দেখে বলল,

-;আপনারা কারা?কাকে চাই?

-;জি,আমরা পুতুলের দাদুর বাড়ির লোক।পুতুলের মা’কে একটু ডেকে দিবেন।কিছু জরুরি কথা ব’লে চলে যাব।রেনু কি বলবে বুঝতে পারছে না?তবুও মুখ ফুটে বলল।

-;রাজিয়া এখানে থাকেনা।

-;রাজিয়া থাকেনা মানে।সে কোথায় গেছে?সেখানের ঠিকানা দিন।আমরা কথা বলব।

-;সেখানে মৃত্যুর আগে কেউ যেতে পারে না।রাজিয়া এই পৃথিবীতে নেই।সে মারা গেছে একমাসের বেশি হ’য়ে গেছে।

চানঁমিয়া চমকে পিছনে থাকাতেই রাজিয়া ভাই স্বাধীনকে দেখতে পান।

-;মারা..গেছে।কিন্তু কিভাবে?এটা কিভাবে হলো?

-;যে স্বামীকে ভালোবেসে বিয়ে করে ছিল।তার সেই স্বামী তাকে মেরে ঘর ছাড়া করে।আটমাসের গর্ভবতী রাজিয়া চোখের পানি নিয়ে ভাইয়ের কাছে আসে।ভন্ড,প্রতারক স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে খবর।এবং তার কয়েকদিন পরই কলপাড়ে পা পিছলে পড়ে আহত হয়।অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণের জন্য সে এবং তার সন্তান দু’জনই মারা গেছে।আমি পারিনি তাকে এবং তার সন্তানকে বাঁচাতে।রেনু আর পুতুল দুইজনই চমকে স্বাধীন দিকে তাকিয়ে রয়।ওদের চোখে,মুখে একটাই প্রশ্ন।স্বাধীন মিথ্যে বলল কেন?

স্বাধীন কথায় তিনি মর্মাহত হন।চোখে তার হতাশা ছাপ।ছোট নিশ্বাস ফেলে বলল।

-;রাজিয়া স্বামী রাজিয়া মৃত্যু খবরটা জানে?

-;না।আর জানাতে চাই না।কারণ বেঁচে থাকতে যার খবর তারা রাখার প্রয়োজনবোধ করে নিই।আর সে যেখানে মারা গেছে।তাতে তাদের কিছু যায় আসবেনা।বরং ঝামেলা থেকে মুক্তি পেয়ে গেছে।আমি চাই না আমার বোনের ব্যাপারে কেউ আর কিছু জানুক।পুতুল মা তাদের জন্য পানি নিয়ে এসো।অনেক দূর থেকে এসেছেন।তারা নিশ্চয় খুব ক্লান্ত।পুতুল মাথা নাড়িয়ে ঘরে পানি আনতে গেলো।

-;আশা করি আপনাদের আর কিছু বলার নেই।গরিবের বাড়িতে দুপুরে এসেছেন।না খেয়ে যাবেনা।রেনু তাদের খেতে দেও।

-;দাঁড়াও স্বাধীন।আমার কথা এখনো শেষ হয়নি।চানঁ মিয়া কিছু কাগজ বের করে দিলেন।স্বাধীন কাগজটা না নিয়ে চুপচাপ গম্ভীর মুখে তাকিয়ে রইলো।

-;এখানে সরোয়ার বংশের কন্যা পুতুলের নামে সম্পত্তি ভাগ লিখা আছে।পুতুলের দাদা
তার বংশের কথা চিন্তা করেই দলিল লিখিত করে গেছেন।সেখানে ছেলে কিংবা মেয়ে। প্রথম যে সন্তান আসবে।তার নামেই ই সম্পত্তি হয়েছে।যেহেতু প্রথম সন্তান মেয়ে এবং পরবর্তী আর কোনো সন্তান নেই।তাই এই হক পুতুলের।পুতুলের আঠারো পূর্ণ হলেই সে সম্পত্তির মালিক হবে।তার বিয়ে যদি কোনো ছেলের সাথে হয়।তাহলে সে ওহ তার অংশীদার হবে।

২৯.
আপনি মিথ্যে কেন ব’লেন?রাজিয়া নেই ঠিক আছে।কিন্তু তার ছেলে মারা গেছে?
স্বাধীন,রেণুর দিকে তাকিয়ে বলল,

-;আমি যা করেছি ঠিক করেছি।কারণ সরোয়ার বংশধর হিসেবে তাদের ছেলে আগমনে মোস্তফা এবং তার মা এই বাড়িতে কোনভাবে পা রাখুক।তা আমি চাই না।তারা পুতুলের ভাই।মিলন কে নিতে এই বাড়িতে ছুটে অবশ্যই আসবে।কিন্তু পুতুলের জন্য তাদের মন পুড়বে না।আর আমার বোনের শেষ চিহ্ন তাদের হাতে তুলে দিতে পারবো না।তাই আমি মিথ্যে বলেছি।তারা লোভের জন্য আসবে।পুতুলের পর মিলনই তাদের শেষ ভরসা হবে সম্পত্তের ভাগের অংশের জন্য।একটা মিথ্যে যদি সবকিছুর সমাধান হয়ে যায়।তাহলে সে মিথ্যেই ভালো।

-;আপনি ভুলে যাচ্ছেন।সত্যিটা মিথ্যে ব’লে ঢেকে রাখা যায় না।একদিন না একদিন সত্যিটা প্রকাশ পেয়ে যায়।

-;পরে যদি সত্যিটা প্রকাশ পায়।ততক্ষণে আমি পুতুলের বিয়ে দিয়ে দিবো।আর আমি তখন সত্যিটা সবাইকে জানিয়ে দিবো।তুমি ভয় পাও কেন?আমি থাকতে তোমাদের সাথে খারাপ কিছু হতে দিবোনা।ভরসা রাখ।

-;ভরসা,বিশ্বাস করি ব’লেই চুপ ছিলাম। আপনি পাশে থাকলে আমাদের কিসের ভয়।আপনি আছেন তো আমি আছি।আপনি নেই তো আমরা নেই।

-;তাহলে আজকের কথাগুলো এখানেই সমাপ্ত কর।পুতুলের বিয়ে দিলে তখণ ভাবা যাবে।শুনো,কালকে আমি পুতুল কে সাথে নিয়ে নদীর ওপারে স্কুলের শিক্ষক কাছে যাবো।আমি চাই পুতুল পড়ুক।অনেক অনেক পড়ুক।পড়াশোনা করে নিজের ভবিষ্যত নিজে গড়ুক।মানুষের মতো মানুষ হোক।শুধু পুতুল নয় রেনু।আমাদের দুই ছেলে সাজু,মিলন পড়বে।ওদের আমি পড়াবো।যে স্বপ্ন পূরণ আমার হয়নি।সেটা ওরা অর্জন করুক।আমি একদিন গৌরব করে বলতে পারব।আমি আমার তিন সন্তানকে পড়াশোনা করিয়েছি।আবার মানুষের মতো মানুষ বানিয়েছি।তাদের চোখে ধনী,গরিব,বড় ছোট ব’লে কিছু না থাকুক।তাদের চোখে সবাই সমান মানুষ মানুষের জন্য একটু সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিক।বিশ্বাস, ভরসা,আস্থা বাঁচব।

৩০.

অসিম তালুকদার নদীর এপারে রোহিতপুর গ্রামের পথে রওনা হয়েছেন।
এইদিকে রাত হতেই জিহান,রিহানকে নিয়ে সারাদিন না খাওয়া অর্পণ।লিলিপুটকে শিক্ষা দিতেই আজ চুপচাপ পুকুর পাড়ে বসে ছিল।কোনো কিছুতেই তার মনোযোগ ছিলো না।রাগে,কষ্টে কারো বাড়িতে যেতে ভুলে গেল।
কারো কোনো ক্ষতি করেনি।তাদের সারাদিন ধরে না খাওয়া খিদে পেট মোচড় মারছে।পেটের মধ্যে কেমন বুদবুদ শব্দ করছে।রাতের আঁধার নেমে আসে চারদিক থেকে শিয়াল ডাক।কেমন ভয়ংকর অবস্থা? শেয়ালের হাঁকডাকের জন্য ঘর ছেড়ে রাতে বের হওয়া মুশকিল।কেউ যদি বাড়ির উঠোনে পাঁচ মিনিটের বেশি দাঁড়িয়ে থাকতে চায়।তাহলে শিয়ালের আক্রমণ থেকে বাঁচা সম্ভব নয়।সে আঘাত করে বসে।ইদানীং শিয়ালের উৎপাত বেশি বেড়ে গেছে।পুতুল তার ভাইকে জড়িয়ে ধরে ঘরে বসে আছে।মামীর ডাক দিয়ে গেছে।তাদের ঘরে শোয়ার জন্য। কিন্তু পুতুল আসেনি।এই ঘরে তার মা ছিলো।মায়ের গন্ধ এখনো এই ঘর থেকে পায়।সে এই ঘর ছেড়ে যেতে চায় না।আর ভাইকে ওহ দিতে চায় না।
তাই রেনু চলে গেছে।দুপুরে শরীরটা একটু বেশি খারাপ লাগায় তাড়াতাড়ি কাজ থেকে চলে আসে।এখন রাতে অসুস্থা বেড়েছে।স্বাধীন শরীরটা ভালো না থাকায় একটু তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ে।এই দিকে পুতুলের মধ্যে ভয়ে ঢুকে গেছে।তার হাত,পা কাপছে। কি করবে বুঝতে পারছে না?তবুও জিদ ধরেছে।মামাদের রুমে যাবে না।কারণ তাদের খাটটা বেশি একটা বড় নয়।তিন জনের শোয়ার খাটে সে এবং ভাই গেলে মামাকে নিচে মাটিতে শুতে হবে।এখন প্রচুর ঠান্ডা পড়ে।এই সময় মাটিতে ঘুমালে আরো অসুস্থ হয়ে পড়বে।তাই সেই রুমে না গিয়ে নিজের রুমে চুপচাপ শুয়ে রইলো।

পুতুলের চোখ বুঝে নিতেই শিয়ালের ডাক ভেসে আসে তাদের উঠোন থেকে।উঠোনের পূর্ব দিকে বাথরুমে চাক বসানো।সেইদিকে চারদিকে কলাগাছে ঘেরা।সে জায়গায় থেকে কেমন ভয়ংকরভাবে ডাকছে।মনে হচ্ছে শব্দগুলো আরো সামনে এগিয়ে আসছে।ভাইকে দুই হাতে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ফুফিয়ে কেঁদে ওঠে।মনে মনে মায়ের শেখানো দোয়া পড়তে থাকে।
».
আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল ‘আফওয়া ওয়াল- ‘আ-ফিয়াতা ফিদ্দুনইয়া ওয়াল আ-খিরাতি।আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল ‘আফওয়া ওয়াল-‘আ-ফিয়াতা ফী দ্বীনী ওয়াদুনইয়াইয়া,ওয়া আহ্‌লী ওয়া মা-লী, আল্লা-হুম্মাসতুর ‘আওরা-তী ওয়া আ-মিন রাও‘আ-তি। আল্লা-হুম্মাহফাযনী মিম্বাইনি ইয়াদাইয়্যা ওয়া মিন খালফী ওয়া ‘আন ইয়ামীনী ওয়া শিমা-লী ওয়া মিন ফাওকী। ওয়া আ‘ঊযু বি‘আযামাতিকা আন উগতা-লা মিন তাহ্‌তী

● “হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট দুনিয়া ও আখেরাতে ক্ষমা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট ক্ষমা এবং নিরাপত্তা চাচ্ছি আমার দ্বীন, দুনিয়া,পরিবার ও অর্থ-সম্পদের।হে আল্লাহ! আপনি আমার গোপন ত্রুটিসমূহ ঢেকে রাখুন।আমার উদ্বিগ্নতাকে রূপান্তরিত করুন নিরাপত্তায়।হে আল্লাহ! আপনি আমাকে হেফাযত করুন আমার সামনের দিক থেকে, আমার পিছনের দিক থেকে,আমার ডান দিক থেকে,আমার বাম দিক থেকে এবং আমার উপরের দিক থেকে।আর আপনার মহত্ত্বের অসিলায় আশ্রয় চাই আমার নীচ থেকে হঠাৎ আক্রান্ত হওয়া থেকে”।

শিয়ালের একটা শব্দ নয় বেশ কয়েকটা শব্দ আসছে।শিয়াল কতগুলো বাহিরে জানা নেই।একটু পর দামদুম শব্দ হচ্ছে।মনে হয় ঘরে চাল ভেঙে ঘরে ঢুকে যাবে।পুতুল আর নিতে পারলোনা।চিতকার করতে চাইলো পারছে না।ভয়ে কপাল বেয়ে ঘাম ছুটে আসে।এরমধ্যেই মিলন ঘুম ভেঙে যায়।ছোট দুধের শিশুর উচ্চস্বরে কান্না করছে।সেটা বাহিরে পশুর ভয়ে না-কি বোনের কষ্ট বুঝতে পেরে কান্না করছে জানা নেই।কিন্তু পুতুল আর ঠিক নেই।হাত থেকে ভাই ছিটকে খাটের বিছানায় পড়ে।আর পুতুল তার পাশে বেহুশ হয়ে যায়।

চলবে….

আসসালামু আলাইকুম।কালকে গল্পটা দিতে পারিনি। আজকে চেয়েছিলাম দু’টো পর্ব দিয়ে পুষিয়ে দিবো।কিন্তু হাত আর চলছে না।আরেকদিন সুযোগ পেলে দুটো পর্ব দিয়ে পুষিয়ে দিব।আর একটা কথা।গল্পটা বর্তমান নিয়ে ভাবুন।ভবিষ্যতে হিরো আসবে কি না।সেটা এই মুহূর্তে না ভাবলেই ভালো হয়।কারণ গল্পের নামের সাথে মিল রেখে পুতুলের পথচলাটা দেখাতে চাই।একটি অন্য রকম গল্প আনতে চাই।অনেক তো পড়লেন রোমান্টিক গল্প।হিরো এসে গল্পটা মোড় ঘুড়িয়ে দিয়েছে।এমন হাজার গল্প পড়ছেন।এটা অন্য রকম হবে।হিরো নিয়ে কিছুই ভাবিনি।এই লড়াই একটি মেয়ে বেঁচে থাকার লড়াই।তার সাথে বাস্তবতা আনতেই এতটা চেষ্টা করছি।গল্পটা আপনাদের হ্রদয় ছোঁয়া চেষ্টা করেছি।আনকমন কিছু পড়ুন।যদি হতাশ হন।তখন না এই আপু টাকে ছোট বোন হিসেবে ভুল শুধরে দিয়ে ক্ষমা করে দিবেন।যারা জিজ্ঞেস করেছেন।আমার চোখের অবস্থা কি?আমি ভালো আছি কি না?তাদের বলবো।হ্যা,আলহামদুলিল্লাহ।আমি ভালো আছি।

ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here