চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা #ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া #পর্ব-৮

0
360

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৮
২৫.
সকালে মোরগদের ডাকে পুতুলের ঘুম ভেঙে যায়।বিছানায় ভাইকে ছোট হাতে ঠিক করে দিয়ে বিছানা ছেড়ে ওঠে।রাণী কাচাঁ মাটির ঘরে পাটের বস্তা ওপর আরাম পেয়ে ঘুম।পুতুল ঘর ছেড়ে বাহিরে বের হতেই দেখে মামী রান্না করছে?মামীকে একটা মিষ্টি হাসি উপহার দিল।

-;পুতুল মা।ভাই কি এখনো উঠেনি?

পুতুল মাথা নাড়িয়ে না বল!যার মানে ভাই এখনো ঘুম।

-;আচ্ছা।তুমি হাত মুখ ধুয়ে আসো।খাবার প্রায় হ’য়ে এলো।পুতুল চলে যেতে নিলেই রেনু আবার তার পায়ের দিকে তাকিয়ে ডাকল।এই পুতুল দাঁড়াও।তোমার পায়ের জুতা কোথায়?

পুতুল রাতের কথা মনে পড়তেই চোখ বড়সড় করে ফেলেছে।রাতের আজব মানুষের জন্যই তো রানী তার ঘরে সারারাত ছিল।মামীর জুতা কথা বলতেই
চুপসে গেলো।এখন কি বলবে সে?মিথ্যে সে বলতে পারবেনা।

-;বুঝেছি রাতে মনে হয় হারিয়ে ফেলেছো।আচ্ছা তুমি যাও।আমি জুতাটা পরে খুঁজে দেব।পুতুল মাথা নাড়িয়ে তাড়াতাড়ি চলে যায়।

পুতুল বালতি ভরা পানি থেকে মগ দিয়ে পানি তুলো।এক জায়গায় বসে দাঁতের মাজন দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করতে লাগল।

লিলিপুট একখান জুতা দড়ি দিয়ে গাছে ঝুলিয়ে রেখেছে অর্পণ।ছোট ছোট ইটের টুকরো পুকুরে ফেলতে ফেলতে বলল,

-;অসভ্য মেয়ে মানুষকে তার পাওনা শাস্তি না দিয়ে আমি এই গ্রাম ছাড়ছি না।তোমার কপালে শনি লেগে গেছে লিলিপুট।অর্পণ কি চিজ বুঝতে পারো নিই?এবার বুঝবে তুমি।

সকাল হয়ে গেলো এখনো তিন তিনটা ছেলে উধাও আছে।কোথায় গেছে কোনো খবর নেই?একে তো অন্যায় করেছে।আবার লুকিয়ে রয়েছে।এদের সাহস দেখে আমি হতবাক হচ্ছি।

আর সাফিন তুমি,তাদের খোঁজে বের করতে পারলে না।

-;ভাইয়া পুরো গ্রামে আমাদের লোক লাগিয়েছি।কিন্তু কেউ সঠিকভাবে বলতেই পারেনি।আমার মনে হয়,ওরা গ্রামে নেই। আর গ্রামে থাকলে অবশ্যই ধরা পড়বে।

-;আসসালামু আলাইকুম চেয়ারম্যান সাহেব।বাড়ি ভিতরে আসতে পারি?

-;কে?

-;আমি হারুন মাস্টার।

-;হারুন মাস্টার এত সকালে কেন?ভেতরে আসুন।

-;জি আসতে হলো।?

-;হঠাৎ।

-;আপনার ছেলে জনাব অর্পণ তালুকদার স্কুল ঠিক মতো যায় না।আপনি স্কুলে যেয়ে হাজিরা খাতা দেখলেই বুঝতে পারবেন।অনুপস্থিতিতে ভরা।তার ওপর দশম শ্রেণি টেস্ট পরীক্ষা দিয়েছে নামে মাএ,গনিতে ফেল আসছে।বাকি সাবজেক্টে টেনেটুনে পাশ করছে।আর তার সাথে দুই ভাই গোল আলু পাইছে একই সাবজেক্টে।টেস্ট পরীক্ষা যে এত খারাপ করছে।তারে কি বোর্ড পরীক্ষা বসতে দেওয়া যায়?আপনি বলুন!হারুন মাস্টার তার অভিযোগ বলে চলে যায়।

চেয়ারম্যান সাহেব অসিম তালুকদার রেগে নিজেই ছেলের জন্য গাড়ি নিয়ে বের হলো।সাফিন ভাইয়ের সাথে যাচ্ছে।সে যেভাবে রেগে আছে।কিছু উল্টাপাল্টা না করে বসে।

২৬.
এই মেয়েকে আমাদের স্কুলে ভর্তি করানো যাবেনা।

-;কেন?কেন করানো যাবেনা?কি সমস্যা?

-;দেখো স্বাধীন,তুমি শান্ত হও।এভাবে শুধু শুধু রেগে যাচ্ছ।মেয়েটি সমাজ থেকে বিতারিত।তাঁকে এবং তার মা কে এক ঘর করা হয়েছিল।তা তুমি ভুলে গেলেও গ্রামের মানুষ কিন্তু ভুলে নিই।নেহাৎ ওর মায়ের মৃত্যুতে গ্রামের কিছু মহিলা শেষ অর্ন্তিম কাজে সাহায্য করেছে।এবং জানাজায় উপস্থিত হয়ে ছিলো।আর সেটা কিন্তু গ্রামের মেয়ে এক সময় ছিল ব’লে।আমি ওকে ভর্তি নিলে আমার চাকরি নিয়ে টানাটানি পড়বে।এই স্কুলের শিক্ষকতায় আমার সংসার চলে।তোমার জন্য নিজের পরিবারকে না খাইয়ে রাখতে পারব না।আর তাছাড়া মেয়েটা বাক প্রতিবন্ধী।সে কথা বলতে পারেন না।কানে শুনে না।এমন স্টুডেন্ট এখানে কোনোভাবেই এলাউ নয়।ওর জন্য বাকি স্টুডেন্ট সমস্যা হবে।

-;পুতুল হতে পারে আর দশটা বাচ্চাদের মতো নয়।কিন্তু তাই ব’লে এতটা অবজ্ঞা করা কি ঠিক সবুজ?আমি হতবাক হয়ে যাই।তুমি,আমি এক সময় একই সাথে পড়াশোনা করেছি।তোমার পরীক্ষা ফ্রী দেওয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না।অথচ সেই আমি তোমার সেমিস্টারে পরীক্ষা টাকা জোগার করে দিয়েছিলাম।ভাগ্যিস তোমার মতো এতটা নিমুক হারাম হতে পারিনি।দ্বিতীয় বার দেখে নিলাম।তুমি,রাফিদ এদের কে আমি আমার কলিজা কেটে খাওয়ালে মনে হয় কম হতো।
আজ চলে যাচ্ছি।আর যাওয়ার আগেই একটা কথা ব’লে যাই।আজ যাকে তুমি এবং তোমরা সবাই অবহেলা করলে,একদিন তারজন্যই আপসোস করবে।আমার কথা মিলিয়ে নিও।আমি স্বাধীন আজ কথা দিয়ে যাচ্ছি।পুতুল কথা বলতে না পারার জন্য ওর পড়াশোনা পিছিয়ে থাকবে না।ওকে আমি নিজের হাতে গৌরব।এমনভাবে মানুষ করব।সবাই একদিন তাকে আপন করে নিতে বাধ্য হবে।আমি দেখিয়ে দিবো।পুতুল নিজের লড়াই নিজে লড়তে পারে।আমার বোন নেই ব’লে।মামা হয়ে তাকে দূর ছাই করব।আমি এমন পাষাণ নই।আমি আমার শেরা ঠাঁই দিয়ে যাব।স্বাধীন পুতুলের হাতদুটো ধরে বলল।

-;আম্মা,আপনি পারবেন না।আপনার এই ছেলের জন্য দেখিয়ে দিতে।আপনার এই মামার মুখ রাখতে পারবেন না?

এতখন দুইজনের কথাই পুতুল সবটা শুনে মাথা নিচু করে কাঁদছিল।আজ তার জন্য মামাকে কতগুলো কথা শুনতে হচ্ছে।সে কি পারবে মামার বলা প্রত্যেকটা কথার মান রাখতে?এই ছোট্ট জীবনে তাঁকে যে বেঁচে থাকতে হলে লড়াই করতে হবে।সে যদি পিছুপা করে তাহলে কি হবে?

পুতুলের নীরবতা দেখে স্বাধীন হাঁটু ভেঙে অফিস রুমে সব শিক্ষকের সামনে বসে পড়ে।দুই হাতে পুতুলের চোখের পানি মুছে বলল,

-;আপনি পিছুপা হলেন তোও হেরে গেলেন আম্মা।এই লড়াই আপনার।যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই যে ভয় পেয়ে ময়দান ছাড়ে।সে কখনো বিজয়ী হয় না।আপনারা পিছিয়ে যাওয়া মানে হেরে যাওয়া।আপনি হেরে গেছেন তোও মরে গেছেন।আপনি কি ভীতু আম্মা?আপনি কি ভয় পাচ্ছেন?আপনি কি আমার কথার মূল্য বুঝতে পারছেন না?আমি জানি এই ছোট্ট মাথায় আপনার অনেক চাপ পড়ছে।কিন্তু আমি যে নিরুপায় আম্মা।আজ আমি আছি।কাল আমি না ওহ থাকতে পারি। আমরা এই পৃথিবীতে এসেছি স্বল্প সময়ের জন্য।আমাদের একদিন আসল ঠিকানা ফিরে যেতে হবে।আমি না থাকলে আপনি নিজে নিজেকে নিরাপত্ত রাখতে পারবেন।আমি তার ব্যবস্থা করে যাব।আমি জানি আম্মা। এই কঠিন কঠিন কথাগুলো আপনার মস্তিষ্কে চাপ নিতে এখন পারছে না।কিন্তু একদিন ঠিকই এই কঠিন কথাগুলো মানে আপনি বুঝতে পারবেন।

২৭.
স্বাধীন পুতুলকে কোলে নিয়ে গ্রামের স্কুল ছেড়ে চলে এসেছে সেই কখন।কিন্তু তার রেশ রয়ে গেছে স্কুল অফিস রুমে এখনো।স্বাধীন কথাগুলো ওই অফিস রুমের কিছু শিক্ষকের মন ছুয়ে গেছে।কিন্তু হেড স্যার যেখানে তার বন্ধু হয়ে ভর্তি করলো না।তখন তারা চুপচাপ সবটা নিরবে দেখে গেলো।তাদের খারাপ লাগছে এই ছোট মেয়েটি জন্য।সত্যি কি মেয়েটি পড়তে পারবে না?ছোট পুতুল কথা বলতে পারেন না,এটা কি তার অপরাধ?
পুতুল বাসায় এসে ভাইকে বিছানায় পা মেলে দুই হাতে কোলে নিয়ে কাঁদছে।সে কি করবে বুঝতে পারছে না।আজ মায়ের কথা বড্ড বেশি মনে পড়ছে।মা তাকে একা ফেলে কেন চলে গেলো?মা তার পাশে থাকলে সে সাহস পেতো।মায়ের হাসিতে দুনিয়ার সবচেয়ে কঠিন কাজ ওহ পানির মতো সহজ লাগত।কিন্তু মা নেই।তার বাবা থেকেও নেই।এই কষ্টগুলো একটু একটু করে বুকের বাম পাশে জ্বালা ধরিয়ে দিচ্ছে।

জেলে বসে মা,ছেলে সাজা কাটছে।তাদের মুক্তি কবে হবে জানা নেই?এমন সময় পুলিশ দারোগা এসে জানালো বড় স্যার নাসিমা বেগম কে ডাকছে।তিনি বের হয়ে অফিস রুমের সামনে আসতেই নিজের চাচা শ্বশুর চানঁ মিয়া মশাইকে দেখে আমতা আমতা করল।

-;চাচা আপনি এখানে?

-;হুম দেখতে এলাম তোমায়।কতটা ভালো আছো জিজ্ঞেস করার প্রয়োজনবোধ করছি না।নিজ চোখে দেখা যাচ্ছে।লজ্জা নেই তোমার।একটা নারী হয়ে এত ছলনা কেমন কর?নারী হয়ে এক নারী ঘর ভাঙ্গলে।আবার আরেক নারীকে মিথ্যে আশা দিয়ে বিয়ের আসর পযন্ত টেনে আনলে।আমাদের সরোয়ার বাড়িটা তুমি কলঙ্ক করে দিলে।তোমাকে আমার ভাই শখ করে তার ছেলের জন্য বউ করেছিল।কিন্তু তুমি বস্তি থেকে উঠে এসে বস্তি রয়ে গেলে।তোমার আবভাব আমার ভাতিজা বুঝতে পেরেছিল।তাই তাড়াতাড়ি বিদায় নিয়েছে।আর যাওয়ার আগেই তার গুনধর ছেলে তোমার জন্য অমানুষ হবে সেটা জানতোও।তাই তার সন্তানের ঘরে বংশের প্রথম সন্তান দুনিয়ায় যে আসুক।মেয়ে কিংবা ছেলে।তার নামে এই সম্পদ।যে বাড়িতে এতদিন ছিলে সেই সাত
শতাংশ জমি,তোমার নাতি পুতুলের নামেই হয়ে গেছে।তার বিয়ে আঠারো বয়সে কোনো যোগ্য পুরুষ সাথে হলে,সেই সম্পত্তির অংশীদার তার স্বামী হবে।মেয়েটি কথা বলতে পারেনা ব’লে কম অত্যাচার করো নিই।তুমি মেয়ে হয়ে মেয়েদের কষ্টে কষ্ট পাও না।ধিক্কার তোমায়।তুমি এবং তোমার ছেলে জেলে পঁচে মর।আর যদি কোনোদিন ছাড়া পাও।সেইদিন সরোয়ার বাড়িতে পা রাখবে না।আমি এটা বলতেই নাতির ঘরে ছেলে অন্তরকে নিয়ে এসেছি।তাঁকে নিয়ে পুতুল সাথে দেখা করতে যাচ্ছি।দেশ ছাড়ার আগেই অসহায় মেয়েটিকে একটিবার না দেখলে শান্তি পাবো না।আমরা পুরো পরিবার বিদেশে চলে যাচ্ছি।

-;অন্তর চলো।তোমাকে একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো।যার নাম পুতুল।

-;পু..তু.ল।

চলবে…

আসসালামু আলাইকুম।গল্পটা ছোট হয়েছে।আমার এক চোখ ফুলে ফেঁপে উঠছে।এক চোখের সমস্যা জন্য চোখ মেলে রাখা খুব কষ্ট হচ্ছে।চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।আজকের শব্দ সংখ্যা ১১৬০।
পুতুল ভবিষ্যৎ কি হবে?পুতুল কি পারবে নিজেকে তৈরি করতে।মামা কথাগুলো কি ভুল ছিল?আপনাদের মত প্রকাশ কমেন্ট করুন।

ধন্যবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here