চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা #ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া #পর্ব-৫

0
441

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা
#ইয়ানুর_আক্তার_ইনায়া
#পর্ব-৫
১৪.
সলিমুল্লাহ চলে যেতেই রাজিয়া দুই চোখের পানি ঝড়ে পড়ে।এটাই তো হওয়ার কথা ছিল।বন্ধ কামরায় বসে সবটাই সে শুনতে পেয়েছে।মানুষটা তার এত পাষাণ।যার জন্য জীবন যৌবন সব শেষ করলো।সে নাকি দ্বিতীয়বার ঘরে বউ তুলছে।একটিবার তার খবর নিলোনা।নিজের মেয়ে আর ভবিষ্যতে আসা সন্তানের কথা সে ভুলে গেছে।তার এই অবহেলায় রাজিয়া নরম মনটা একটু একটু করে পাথরের পরিনত হচ্ছে।ঘৃনা হচ্ছে এমন একটি মানুষকে সে ভালোবেসে ছিল।পরিপূর্ণ সংসার গড়ে তুলতে চেয়েছিল।

ইয়া রহমান,ইয়া রহিম,ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম,”ইয়া গাফফার” ইয়া সাত্তার, “ইয়া জব্বার,ইয়া ওয়াদুদ,ইয়া আজিজু,ইয়া আজিম,ইয়া হান্নানু,ইয়া মান্নান হে আমার রব,হে আমার সৃষ্টি কর্তা।

আপনার পবিত্র নামগুলোর উছিলায়, আপনার তাওহীদের সাক্ষী লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু এর উছিলায়,আপনার বন্ধু ও হাবীব হযরত মুহম্মদ (সঃ) এর উম্মত হিসেবে আমাদের সকলের মনের নেক ইচ্ছে গুলো পূরণ করে দেন।অভাব,ঋণ দূর করে দিন।
আমার মতো যারা যারা বিপদে আছে তাদের সকল কে তুমি বিপদ থেকে মুক্ত করে দাও।আমাদের মানসিক কষ্ট,দুঃখ দূর করে দাও।আমাদের রিযিকে বরকত দান করুন।বাবা মা পরিবারের সকলকে নেক হায়াত দান করুন।আমিন।

ফজরের নামাজে রাজিয়া সাথে পুতুল নামাজ পড়তে উঠেছে।খোদার দরবারে মায়ের সাথে সে ওহ মুনাজাতে তুই হাত তুলেছে।আজ জুম্মার দিন।সময় দেখতে দেখতে চলে যাচ্ছে।রাজিয়া,পুতুলের এই বাড়িতে দশ দিন পূর্ণ হলো।আজ মোস্তফা সরোয়ারের বিয়ে।রাজিয়া মন থেকে গভীর দীর্ঘ নিশ্বাস বের হয়।সময়ের সাথে নিজেকেও পরিবর্তন পথে নামিয়েছে রাজিয়া।আজ থেকে স্বামী নামক নরপশুটাকে চিরদিনের জন্য ভুলে যাবে।ভুলে যাবে সাড়ে ছয় বছরের সংসারটাকে।যে সংসার এবং সংসারের মানুষটাকে সে আপন ভেবেছিলো।কিন্তু তাদের আপন সে যখন হতেই পারেনি।তখন তার মধ্যে মায়া,মোহাব্বত শব্দ সে আর রাখতে চায় না।মোস্তফা সরোয়ার তার কাছে মৃত।আজ এবং এখন থেকে জানবে তার স্বামী নেই।সে কোনো এক দূ*র্ঘটনা মারাত্মকভাবে খু*ন হয়েছে।

১৫.
মাথা পাগড়ি,গায়ে পাজামা-পাঞ্জাবি পরে চলো বিয়ের আসনে।পাচঁশত জন লোক আসবে বরযাত্রী সাথে।কিন্তু সেখানে এক হাজার জন লোক এসেছে।বরের মায়ের কথা অনুযায়ী কনে পক্ষ পাচঁশত জনের খাবার আয়োজন করেছে।এখন বাকি পাঁচশত জনের খাবার কথা থেকে দিবে।কনে পক্ষ প্রচন্ড রেগে গেলো।কিন্তু কনের বাবা ব্যাপারটা সামলাতে আবার বাকিদের খাবার তৈরি আয়োজন জন্য লোক নিয়োগ দিল।

নিজেদের ফার্ম থেকে মুরগি ধরে এনে জবাই করে রোস্টের জন্য হাঁড়ি বসিয়ে দিলো।একটা গরু মেয়ে বিয়ের জন্য আনছে।যতটুকু লাগবে ব্যবহার করা হবে।আর বাদ বাকিটুকু এতিমখানা দান করবেন।কিন্তু এত মানুষ আসায়,পুরোটা হাঁড়িগুলোতে জায়গায় দখল করে নিলো।তা ওহ যদি না হয়,কনের বাবা নিজে গরুর মাংস আনতে বাজারের যাবেন।তবু্ও মেয়ের সুখ চান।ছেলেটা গরিব হলে কি হবে?ছেলেটার আচরণ ব্যবহার ভালো।তিনি মেয়ে দেখার দিন ভালো করে যাচাই-বাছাই করে বিয়েতে মত দেন।ছেলের না-কি কোনো চাওয়া নেই।ছেলের মা’ই নাকি ছেলের এবং ছেলের বউ জন্য কিছু জিনিস চেয়েছে।আর সাথে জামাই নতুন ব্যাবসা শুরু করব।তার জন্য পনেরো লাখ টাকা দাবি।মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করেই সব দিতে রাজি হয়েছেন।কিন্তু তিনি হয়তো ভুলে গেছেন।টাকা দিয়ে মেয়ে সুখ নয়।দুঃখের ভাসিয়ে দেওয়ার ব্যাবস্থা করছেন।মেয়ে তার সুখে থাকবেনা।বরং কষ্ট হবে তার নিত্যদিনের জীবন সঙ্গী।

-;বলছিলাম বেয়াইন সাহেব।খাবার আয়োজন প্রায় হয়ে গেছে।খাবার তৈরি হতে হতে মিষ্টি মুখ করে বিয়ের কাজটা যদি শুরু করতেন।যদিও দোষ তাদের ছিল।তাই নাসিমা বিয়ের দিন কোনো ঝামেলা না করে মত দিল।
বর পক্ষ খাবার না খেয়ে রাজি হলো, আপাতত বিয়েটা মিঠে যাক।তারপরে সবাই পেট ভোজন করবে।

কাজী দুই পরিবারে অনুমতি নিয়ে কাগজপত্র তৈরি করে বর পক্ষ কাছ থেকে সই নিলো।
কন্যার কাছ থেকে সই আনতে যাবে এমন সময় স্বাধীন উপস্থিত হয়।মোস্তফা সরোয়ার স্বাধীনকে দেখে গলার কাঁটা বিঁধলে যেমন করে তেমন করে উঠে।নাসিমা বেগম স্বাধীন দেখে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে রয়।তার এত কিছু করা সব বিধা যাবে তা মেনে নিতে পারবেন না।তাই এগিয়ে স্বাধীনকে কিছু বুঝাতে চাইলে স্বাধীন পাত্তা দিলো না।

১৬.
ঘরে এক বউ থাকতেই যে স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করতে চায়।তাকে কি করা উচিত বলুন চাচা?কনে পক্ষের বাবা হতভম্ব হয়ে যান।কি বলছে এই ছেলে?তার মাথায় কিছু টুকছে না।

-;আপনি বুঝতে পারছেন না তাইতো।আমি বুঝাচ্ছি আপনাকে।স্বাধীন মোস্তফা সরোয়ার গ্রাম থেকে এবং নিজের গ্রাম থেকে প্রায় পঞ্চাশ জন লোক নিয়ে আসছে।তাদের সামনেই বরকে টেনে আসন থেকে নামিয়ে দুই গালে ঠাসস করে চড় লাগায়।

-;এই কুলাঙ্গার আমার বোনের জামাই।যার একটা বউ আছে।একটা ছয় বছরের মেয়ে সন্তান আছে।এমনকি বউটা আবার মা হতে চলেছে।সে আট’মাসের বেশি অন্তসত্বা।তাকে নির্মমভাবে মেরেছে।শুধু মাএ টাকার জন্য।এদের মা,ছেলের এত লোভ চাচা আপনি ভাবতেই পারবেনা।আপনি কার হাতে মেয়ে তুলে দিচ্ছেন?একটু খবর নিয়ে দেখুন।এই আমার সাথে তার গ্রামে বিশজন লোক আসছে।তাদের জিজ্ঞেস করুন।কি নির্মমভাবে তারা বউ নির্যাতন করে?আমার আদরের বোনটাকে পালিয়ে বিয়ে করেছে।আমার মায়ের যত গহনা ছিল সব তার জুয়ার ঘরে হেরে আসছে।

শুধু তাই নয়,আমার বোনটা তাকে ভালোবেসে ছিল ব’লে তার হাত ধরে ঘর ছাড়ে।কিন্তু আজ সেই আদরের দুলারি পরিনতি খুব খারাপ।যে বোনের গায়ে আমি কোনোদিন হাত তোলা দূরের কথা একটা ধমক পর্যন্ত দেয়নি।সে বোনের শরীরের মা’রের দাগ স্পষ্টভাবে ঝলঝল করছে।আমার বোনটার গর্ভে তার অনাগত সন্তান রয়েছে।তা ওহ একটু রেহাই দেয়নি।এতটা নি*ষ্ঠুর আর ব*র্বরত।আমার বোনটা ভালোবাসার অন্ধ হয়ে তারে ভালো পথে ফিরে আনতে চেয়েছিলো।তাদের সাড়ে ছয় বছরের সংসার ছিল।কিন্তু এই ডায়নী মহিলা নাসিমা বেগম আমার বোনকে মারতে ছেলেকে উৎসাহ দিত।এমন একটা দিন যায়না যে টাকা বাপের বাড়ি থেকে আনতে অত্যাচার করে নিই।মা হয়ে কম অত্যাচার করেননি আমার বোনটার ওপর।তার কথায় ছিল বিষ।যা মানুষের বুকটা ছু*রি মতো এসপার ওসপার করতে পারতো।এই দুর্রন্ত মহিলা নিজেকে অনেক চালাকচতুরভাবে।ছেলে নামে জিনিসপত্র হাতিয়ে নেওয়া।এমনকি পনেরো লাখ টাকা দাবি সেসব ছেলের বউ নামে মাএ নেওয়া।আসল কথা হলো জুয়া খেলতে নামবে।দিন শেষে যখন হাতে কিছু থাকবে না।তখন আবার বাপের বাড়ি টাকা আনতে নির্যাতন শুরু করবে।এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ মেয়েকে ঠেলে দিবেন।সেখানে অসাধ্যের মত কতগুলো অমানুষে বসবাস।তাদের স্বাথে ব্যবহার হবে আপনার মেয়ে।তারপর দিনের পর দিন মেয়ে নির্যাতন সইতে না পেরে গলায় দড়ি দিবে।তখন পারবেন নিজেকে মাফ করতে।বাপ হয়ে আপনার কি একটু কষ্ট লাগবে না?মেয়ে এই দুনিয়া সুখ পায়নি।আর ওই দুনিয়ায় আজাব হবে গলা দড়ি দিয়ে মরার জন্য।আমার বোন তার একমাত্র মেয়ে আর অনাগত সন্তানের জন্য বেঁচে আছে।এই দুই সন্তান না থাকলে হয়তো কবে হারিয়ে ফেলতাম আমি আমার আদরের বোনটাকে।
আর কেউ ডাকতো না ভাইজান ব’লে।আমি ভাইয় হয়ে বোনের কান্না মুখটা প্রতিদিন দেখি।সে জায়নামাজে বসে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে কাঁদে।তার এই কান্নার শেষ নেই। তার একটি ভুলের মাশুল তাকেই দিতে হচ্ছে।
আমি পারিনি ভাই হয়ে তার কষ্ট দূর করতে।সে কষ্ট পায়।বাবা হারিয়েছে।ভাই ফিরে ওহ তাকায় না।এতটা মানসিকভাবে তার জীবন কাটছে।

-;এসব মিথ্যে কথা।আমি কিছুই করিনি। এ আমার নামে ষড়যন্ত্র করে এসব বলছে।মা তুমি কিছু বলছো না কেন?

ছেলের কথায় নাসিমা তাল মিলিয়ে ব’লে।

-; হ এই পোলা মিছা কথা কয়!তারা মিথ্যা অপবাদ দিতাছে।আমাগো সুখ সয্য করতে না পাইরা।এরা লোক ভাড়া কইরা আনছে।শুনছে,বড় লোক পরিবারে মাইয়া আনতাছি।তাই এমন অমানবিক কাজ করতাছে।আমি তোমারে জেলে দিমু বান্দর পোলা।আবার আমারে ডায়নি কস।তোর জিহ্বা কাইটা লবণ দিয়া একদম কচকচ কইরা খাইয়া ফালামু।

-;আমি মিছা বলছি না আছা বলতাছি।তা গ্রামের লোক ভালো জানে।কি মিয়ারা আপনার ব’লেন আমি মিথ্যে বলছি?

১৭.
গ্রামের লোক একে একে সত্যি কথা বলতেই নাসিমা বেগমের মুখটা ফাটা বেলুনের মতো চুপসে যান।ছেলেকে রেখেই এখান থেকে কেটে পড়ার ধান্দা করে।সবাইকে সামনে ফেলে নিজেকে পিছনের দিকে নিতে শুরু করে।তার পিছানো দেখে স্বাধীন মোস্তফা সরোয়ারকে নিজ গ্রামের লোকের হাতে তুলে দেন।দৌড়ে এসে নাসিমা বেগমের হাত ধরে ব’লে।

-;এই-যে আপনি কোথায় পালাচ্ছেন?আপনি তোও এই সকল নাটের গুরু।আপনি না থাকলে হবে।নাসিমা বেগমকে কনের মায়ের হাতে তুলে দিতেই সকল মহিলা মিলেই উত্তম পাত্তম দিতে শুরু করে।ঐদিকে মোস্তফা সরোয়ারকে দুই গ্রামের মানুষ মে’রে পাজামা,পাঞ্জাবি ছিড়ে ফেলছে।মাথা টুপি মারের চোটে কোথায় পড়ছে খবর নেই।কনে পক্ষের মধ্যে থেকে কয়েকজন জুতা ছুড়ে মারে।তাদের নিশানা মতো মোস্তফার গালে আর মুখে জুতা পরে।পিছন থেকে মেয়েরা ঝাড়ুর বারি দিয়ে ভাঙ্গা কোমড় আরোও ভেঙে দেয়।পাবলিকের এমন গণধোলাইয়ের কথা সারাজীবন মনে রাখবে মা,ছেলে।

সেই কখন স্বাধীনের কথা শুনে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে বসে পড়েন কনের বাবা আলতাফ হোসেন।মেয়ে সুখ দেখতে গিয়ে মৃত্যু ডেকে আনছিলেন।এই ছেলেটা ঠিক সময় না আসলে হয়তো এর থেকে বড় সর্বনাশ হয়ে যেতো।আল্লাহ ঠিক সময় তাকে হয়তো পাঠিয়ে দিয়েছেন।কিন্তু এদের মা,ছেলেকে এত সহজে ছাড়া যায় না।এদের শাস্তি পেতে হবে।আলতাফ হোসেন ভাতিজাকে ফোন লাগাতে বলেন।এরমধ্যেই পুলিশকে খবর দেওয়া হলো।

-;সবাই থামুন।এদের পুলিশে দেওয়ার ব্যাবস্থা করা হয়েছে।

আলতাফ হোসেন মোস্তফা সরোয়ার সামনে এসে পায়ের জুতা খুলে দুই গালে আর পিঠে ঠাসস,ঠাসস করে বারি মেরে বলল,

-;ধোঁকাবাজের শাস্তি এটা।তোর মতো জা*নোয়ারদের হাতে আমার মেয়েকে তুলে দেওয়ার থেকে ঘরে বসিয়ে রাখা অনেক ভালো।এই কে আছিস,একে উল্টো করে গাছের সাথে বাঁধ।পুলিশ না আশা পর্যন্ত এভাবে থাকুক।আর এই মহিলাকে তোমরা মেয়েরা ঘরে মধ্যে আটকে রাখো।

চলবে….

আসসালামু আলাইকুম।
কেমন লাগলো মা,ছেলের গণধোলাই?অনেকেই রাগ করে বিয়ে বাড়ির দাওয়াত গ্রহণ করলেন না।এখন মিস করে গেলেন।
আপনার থাকলে আরো দুই চারটে মা’র বেশি পেতো।আবার কালকে কমেন্ট কয়েকজন বলছো,জুতার মালা আর ঝাড়ুর বারি দিবা।এখন সেই পাঠক/পাঠিকার চাদঁ মুখগুলো দেখতে চাই।তাদের মনের আশা পূরণ করে দিলাম।
আজকে সরাদিন অনলাইনে আসতে পারিনি।এত নেট সমস্যার কারণ কি?

#চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা এই নামটা কেন রাখলাম প্রশ্ন করেছেন?এই নামের গল্প লেখক বা লেখিকার ফেসবুক জগতে রয়েছে।
এখন আমার উত্তর,হ্যা এই নামে এক বা একাধিক গল্প রয়েছে।তাদের গল্প আমি পড়ি নিই।তাই জানি না তাদের গল্পের মধ্যে কি রয়েছে?আমি এই নামটা হুমায়ুন আহমেদ উপন্যাস #চক্ষে_আমার_তৃষ্ণা থেকে নেওয়া হয়েছে।যদিও তার কোনো গল্পই আমি পড়িনি।কিন্তু নামটা আমার প্লটের সাথে হুবহু মিল ছিল ব’লেই এই নামটা দেওয়া।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here