#চন্দ্রকলা
#পর্ব_১০
– আজকে সাফোয়ান চন্দ্রকে নিয়ে শহরের কলেজে এসেছে। চন্দ্র সপ্তাহে একদিন এখানে এসে ক্লাস করে যাবে। ভর্তির সব প্রসেস শেষ করেই সাফোয়ানের হঠাৎ মনে পড়লো চন্দ্রের চাওয়া উপহারের কথা তাই সে তার কিছু লোককে ফোন দিয়ে মুরগির খামারের জন্য ঘর আর জমি পরিষ্কারের জন্য ব্যবস্থা করতে বললো।
ড্রাইভার না থাকার কারণে সাফোয়ান নিজেই গাড়ি চালাচ্ছিলো। কিন্তু হঠাৎই তাঁদের গাড়ির সামনে একটি ছাগলকে আসতে গেয়ে সাফোয়ান তাড়াতাড়ি করে গাড়ি ব্রেক করলো। হঠাৎই ঘটনার আকস্মিকতায় চন্দ্র গিয়ে গাড়ির সাথে মাথায় বাড়ি খেলো। সাফোয়ান হুড়মুড় করে এসে চন্দ্রকে ধরলো। সে অস্থির হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করতে লাগলো,
-চন্দ্র তুমি ঠিক আছো তো। তোমার কিছু হয়নি তো।
-আরেহ না না আমার মাথায় কিছু হয়নি। শুধু হালকা বারি লেগেছে।
-তুমি সত্যিই বলছো তো। না গাড়ি ঘুরিয়ে হাসপাতালের দিকে যাবো।
-আরেহ না না আমি ঠিকই আছি।
সাফোয়ান তারপরও কেন জানি নিশ্চিন্ত হতে পারলো না। তাই সে চিন্তা করলো বাড়ি গিয়ে সামিরাকে একবার চন্দ্রকে চেক করতে বলবে। চন্দ্র সাফোয়ানের অস্থিরতা দেখে নিজেকে খুবই ভাগ্যবান মনে করতে লাগলো।
বাড়ি পৌঁছেই তারা জানলো কিছুক্ষন আগে সাহিলের জ্ঞান ফিরেছে। তাই তারা সাহিলের সাথে দেখা করতে গেলো।
-তুই ওই গভীর জঙ্গলে ওই আগুনের মধ্যে কী করছিলি। আর তোর চারপাশে আগুন লেগেছিলই বা কিভাবে?
তার চারপাশে ঐরকম ভয়াবহ আগুন লেগেছে শুনে সাহিল অনেকটা অবাক হলো। সে ধীরে ধীরে সব কথা সাফোয়ানকে বললো। সাফোয়ান এটাই বুঝতে পারলো না যে কে ছিল মহিলাটা। তবে এটা সে বুঝতে পারলো কেউ হয়তো তাঁদের উপর কালো জাদু করার চেষ্টা করছে। তাই সে তার লোকেদের কে কে এই গ্রামে কালো জাদু জানে বা করে তাঁদের তালিকা তৈরী করতে বললো।
সাফয়ান সাহিলের সাথে কথা শেষ করে বাহিরে এসে জানতে পারলো ইন্সপেক্টর আসাদ এসেছে তার সাথে দেখা করতে। সে তাই ইনসপেক্টর আসাদের সাথে দেখা করতে গেলো।
-হঠাৎ আপনি এখানে অফিসার। কেসের ব্যাপারে কোনো খবর আছে?
-না ওই কেস দুটোর ব্যাপারে তো সেরকম খবর নেই কিন্তু আরেকটা ইনফরমেশন আমরা পেয়েছি।
-কী?
-আপনাদের পুরো পরিবারের উপর হামলা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিছুদিন আগে আপনার গাড়ির ব্রেক ফেল করানো। কালকে আপনার ভাইয়ের সাথে ঘটা ঘটনা সব মিলিয়ে কেউ হয়তো আপনার পরিবারের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। তাই আজ থেকে সাব ইন্সপেক্টর আরিফ আর কনস্টবল মজিদ ২৪ ঘন্টা আপনাদের এখানে থেকে আপনাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে।
-আরেহ না না এইসবের দরকার নেই। বাড়ির ভেতরে আমরা সম্পূর্ণ নিরাপদ।
-না না স্যার এরকম বলবেন না। আপনাদের কোনো ক্ষতি হলে তখন গ্রামবাসী আমাদের কাছেই কৈফিয়ত চাইবে।
-ঠিক আছে। আপনি যখন এত করে বলছেন তখন ওনারা দুইজন আজ থেকে এইখানেই থাকবে।
-ধন্যবাদ স্যার।
পুলিশ অফিসার আসাদ জমিদার বাড়ি থেকে বের হয়ে এক প্রশান্তির নিঃশ্বাস নিলো। সে বুঝতে পেরেছিল যে সে সোজা পথে কোনোভাবেই জমিদার বাড়ির রহস্য বের করতে পারবে না। তাই নিরাপত্তা দেয়ার নাম করে সে মজিদ আর আরিফকে এই বাড়িতে পাঠিয়েছে যেন তারা এই জমিদার বাড়ির সব খবর জেনে তাকে জানাতে পারে। কিন্তু সে ভাবেনি সাফোয়ান চৌধুরী এত তাড়াতাড়ি তাঁদের এই বাড়িতে রাখার জন্য রাজি হয়ে যাবে।
সাহিল জ্ঞান ফিরতেই যখন শুনতে পেলো যে অনিমার জন্যই তার জীবন বেঁচে গিয়েছে সে ফুলিকে দিয়ে তাকে দেখে আনলো। অনিমা কিছুটা সংকোচের সাথেই এসে সাহিলের সামনে দাঁড়ালো।
-ধন্যবাদ আমার জীবন বাঁচানোর জন্য।
-আরে না না জমিদার সাহেব আমি না আপনিই বরং আমার জীবন বাঁচিয়েছেন।
-মানে?
-না না কিছু না এভাবেই।
মুখ ফসকে ভুল করে বের হওয়া কথাটা এড়ানোর জন্য অনিমা দ্রুত সেখান থেকে চলে গেলো। সাহিল কিছুটা অবাক হয়ে গেলো অনিমার করা ব্যবহারে। তারপরও সে এসবে পাত্তা না দিয়ে সে এবার তার নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
আজ রিমাকে পাশের গ্রামের সেই লোক বিয়ের জন্য দেখতে এসেছে। রাহেলা বানু যত পারে ততো তাঁদের তোষামোদ করছে। সে শুধু চায় এখানেই যেন বিয়েটা হয়ে যায় রিমার। যদিও ছেলের বাড়ি থেকে শুধু ছেলে আর তার মা এসেছে। ছেলের নাম লোকমান মিয়া আর তা মা কোহিনুর বানু। সে রিমার সাথে কথা বলা শেষ করেই রাহেলা বানুকে বলে উঠলো,
-আপনার মাইয়া তো পছন্দ হইসে। তয় আমাগো একটা শর্ত আছে।
-কী শর্ত?
-আপনার আরো একটা ছোট মাইয়া আছে না। ওই যে ক্লাস টেনে পরে।
-হয় আছে।
– আমি আমার ছোট পোলা জামালের লাইগ্গা ওই মাইয়াডারে নিতে চাই। দুই ভাইয়ের লইগ্গা দুই বইনরে নিমু।
জামালের সম্পর্কে আশেপাশের গ্রামের সবাই জানে। এক নম্বরের জুয়াড়ি আর নেশাখোর। দুই বছর আগের এক মেয়ের সম্মান নষ্ট করতে গিয়ে ধরা খেয়েছিলো। তখন সবাই মিলে ওই মেয়ের সাথেই বিয়ে দেয়। কিন্তু বিয়ের তিন মাসের মধ্যেই মেয়েটি মারা যায়।কানাঘুসায় শোনা যায় জামাল নিজেই নাকি মেয়েটিকে মেরে ফিরেছিল। এসব কিছুই রাহেলা বানু জানে। কিন্তু তারপর ও সে চিন্তা করলো এইরকম মহাজন পরিবারে দুইটা মেয়ের একসাথে বিয়ে দিতে পারলে সে চন্দ্রের সাথেও ভাব দেখাতে পারবে আর গ্রামেও তার অনেক সম্মান বাড়বে। তাই সে বললো,
-আরেহ এতো আমার সৌভাগ্য। আমার ছোট মাইয়াডা তো ওর বড়ো বইনের শশুরবাড়ি গেছে তায় এইখানে নাই। তয় আমি রাজি। আর আমি যা কমু আমার মাইয়া তাই শুনবো।
-আলহামদুলিল্লাহ। তাইলে সামনের শুক্রবার বিয়া।
-হয় হয়। আমি সব ব্যবস্থা করে রাখমু।
কালকেই লোকমুখে রাহেলা বানু শুনেছিলো অনিমা জমিদার বাড়িতে আছে। তাই সে ভর দুপুরেই জমিদার বাড়িতে গিয়ে হাজির হলো।সে যখন এলো জমিদার বাড়িতে তখন চন্দ্র অনিমার চুলে বেণী করে দিচ্ছিলো। এই সময় ফুলি এসে তাকে খবর দিলো যে অনিমাকে নেয়ার জন্য তার মা এখানে এসেছে। মায়ের এখানে আসার কথা শুনেই অনিমা ভয়ে কুঁকড়ে গেলো। কিন্তু তারপর ও সে চন্দ্রর পিছে পিছে জমিদার বাড়ির ড্রয়িং রুমে এসে উপস্থিত হলো।
চলবে…….
পরবর্তী সকল পর্বই আমার আইডিতে পোস্ট করা হবে। যারা আইডি ফলো না করে গল্প পড়ছেন,তারা আইডি ফলো করে রাখুন।তাহলে পরবর্তী পর্ব পোস্ট করার সাথেই নোটিফিকেশন পেয়ে যাবেন। না হলে পরবর্তী পর্ব মিস হতে পারে।