#চন্দ্রকলা
#পর্ব_১২
অনিমা এখনও বয়সে অনেক ছোট তাই টার ১৮ বছর হওয়ার আগে পর্যন্ত সে সাহিলের থেকে আলাদা রুমে থাকবে। যদিও তার আলাদা রুমে থাকা নিয়ে সাহিল কোনো আপত্তি জানালো না। রাত হতেই অনিমা আমেনা বেগমের সাথে ঘুমাতে চলে গেলো।
রান্না ঘরের টুকটাক কিছু কাজ শেষ করে চন্দ্র রুমে এসে দেখতে পেলো সাফোয়ান ল্যাপটপে বসে কাজ করছে। তাই সেও আর তাকে বিরক্ত না করে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে তার ঘন লম্বা চুল গুলো আঁচড়াতে লাগলো। হঠাৎই সাফোয়ানের নজর গেলো চন্দ্রের দিকে। তার কাছে চন্দ্রকে এখন কোনো স্বর্গীয় পরীর চেয়ে কম লাগছে না। সে ধীরে ধীরে চন্দ্রের দিকে এগিয়ে গেলো।
সাফোয়ান চন্দ্রের পিছনে গিয়ে দাঁড়াতেই চন্দ্র তার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো,
– আপনি এখানে? আপনি তো কাজ করছিলেন।
-হ্যা। কিন্তু হঠাৎই দেখলাম। একটা পরি আমার রুমে এসেছে তাই আমিও এসে পড়লাম তাকে দেখতে।
-বাহ্। আপনি তো দেখছি উঠতি বয়সী ছেলেরা যেমন মেয়েদের টিজ করে সেভাবে করছেন।
– আল্লাহ আমার এই দিন দেখার ছিল। আমার মতো একজন গণ্যমান্য জমিদারকে তুমি উঠতি বয়সী ছেলেদের সাথে তুলনা করছো। আমি না হয় একটু আমার বউ এর সাথেই ফ্ল্যার্ট করতে গিয়েছিলাম।
-উঠতি বয়সী ছেলেদের মতো করলে তো বলবোই।
-হে আল্লাহ আমাকে এ কি দিন দেখালে।এত আনরোমান্টিক বউ কেন আমাকেই দিলে?
চন্দ্র যেন সাফোয়ানের এমন ব্যবহার দেখে কিছুটা ভড়কে গেলো। কারণ যে জমিদারের হুঙ্কারে পুরো গ্রাম ভয়ে থরথরিয়ে কাপে সেই মানুষ নাকি তার সাথে এই রাত দুপুরে ফ্ল্যার্ট করেছে। বিষয় টা খুবই আশ্চর্যজনক।
সকাল সকালই বেপারী বাড়িতে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। অনিমার কে জামালের সাথে বিয়ে দিতে পারবে না জানালে লোকমান মিয়ার মা কিছুটা গাইগুই করলেও পরে রিমা আর লোকমান মিয়ার বিয়ের জন্য মত দেয়। তার সম্মতি শুনে রাহেলা বেগম যেন হাপ ছেড়ে বাঁচে। তাই তো সকাল থেকেই বাড়িতে বিয়ের জন্য বাজার করা হয়েছে। আজই লোকমান মিয়ার বাড়ি থেকে রিমার জন্য বিয়ের শাড়ি গহনা পাঠাবে। রাহেলা বানু তো মনে মনে আশা করে আছে যে তারা রিমাকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত গহনা দিয়ে মুড়ে নিবে।
দুপুর একটা বাজতেই রিমার হবু শাশুড়ি এলো রিমাদের বাড়িতে। সে তার সাথে করে একটা ছোট ব্যাগ নিয়ে এসেছে। ব্যাগ থেকে সে একটা খসখসে লাল শাড়ী, একটা পুরোনো আমলের নাকফুল আর এক জোড়া ইমিটিশনের চুরি বের করে দিয়ে বললো,
-এই লও। রিমার মা তোমার মাইয়ার বিয়ার বাজার। একবারে গঞ্জে থেকে কিন্না আনাইসি।
তার কথা শুনে রিমা অসহায় চোখে তার মায়ের মুখের দিকে তাকালো। তার পরিস্থিতি সামাল দিতে বললো,
-ওমা অনেক সুন্দার হইছে। দেখ দেখ রিমা কত সুন্দার শাড়ী।
-হয় বেয়ান আমরা এইগুলা দিলাম। অহন আমরা যতই না চাই আপনাগো ও তো উচিত হইবো মাইয়া সাজাই দেয়া।
-জি জি বেয়াইন।
দুপুরে ভরপেট খেয়ে পান চিবুতে চিবুতে লোকমান মিয়ার মা তাঁদের বাড়ি থেকে গেলো। সে যেতেই রিমা তার মার কাছে গিয়ে বসলো,
-ও মা তুমি না কইছিলা আমারে চন্দ্রের থাইক্কাও বেশি গয়না দিবো। কই নাকফুল ছাড়া তো কিছুই দিলো না।
-আরেহ আমার মনে হয় অহন আমগো কাছে দিতে ভয় পাইতেসে যে আমগো কাছ দিয়া যদি হারাই যায়। আমার মনে হয় তুই ঐবাড়ি গেলে তোরে দিবো। তয় আমি ভাবতাসি আমার যে টুকিটাকি গয়না অইয়া সব তরেই দিয়া দিমু। তুই তো ওই সব কিছুর ভাগিদার।
চন্দ্র ঘুম থেকে উঠে জানতে পারলো তার নানী শাশুড়ি এসেছে বাড়িতে। তাই সে তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে তার কাছে চলে গেলো। গিয়ে সে দেখতে পেলো সে তার রুমে একা আছে। সে তাকে দেখতে পেয়েই বললো,
– আরেহ আরেহ বড় নাতবৌ আহ। আমার পাশে বহো।
চন্দ্র বাধ্য বাচ্চার মতো তার পাশে গিয়ে বসলো। তার নানীশাশুড়ি তাকে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করতে লাগলো। হঠাৎই সে বলে উঠলো,
-তা আমার নাতিডারে বশ করতে পারছো নাকি। আমার নাতিডা অনেক ভালো মানুষ। খালি মাথাডা মাঝে মাঝে গরম হইয়া যায়। তয় ওরে একটু সামলাইয়া রাখতে পারলে তোমার জীবন ওয় জান্নাত বানাই দিবো।
চলবে….
পরবর্তী সকল পর্বই আমার আইডিতে পোস্ট করা হবে। যারা আইডি ফলো না করে গল্প পড়ছেন,তারা আইডি ফলো করে রাখুন।তাহলে পরবর্তী পর্ব পোস্ট করার সাথেই নোটিফিকেশন পেয়ে যাবেন। না হলে পরবর্তী পর্ব মিস হতে পারে।
আইডি ফলো করতে এখানে ক্লিক করুন:
👉 নিস্তব্ধ শহরツ