খোলা_জানালার_দক্ষিণে #পর্ব_৩৪ #লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

0
527

#খোলা_জানালার_দক্ষিণে
#পর্ব_৩৪
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

খুলবে না জানালা ফিরবে না রমনী। হবে না খোলা জানালার দক্ষিণে প্রনয়নের আদান-প্রদান। পড়ে থাকবে বাড়ি বন্ধ হবে জানালা। ফিরবে না সেই মধুর কিছু মুহূর্ত। ধুলাবালির মতো শহরে বুকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকবে কিছু স্মৃতি। এত স্নিগ্ধ অনুভূতি রেখে যাওয়া এই বাড়িটা যে ভিষণ পোড়াবে। কাউকে দেখার জন্য আঁখিযুগল খোলা জানালার দক্ষিণে দৃষ্টিপাত করবে না। কেউ দুষ্টু হেসে বলবে না এভাবে তাকাবেন না ম্যাডাম প্রেমে পড়ে যাবেন। শহরের ধুলাবালির সাথেও প্রনয়নের আদান-প্রদান হয়েছে। সেজন্য এই শহরের প্রতি এত টান এত মোহ এতা মায়া! যেতে মন সায় দেয় না তবুও কিছু তিক্ত অনুভূতি নিয়ে যেতে হয়৷ বুক ভরা চাপা কষ্ট নিয়ে মেহেভীন গৃহ ত্যাগ করল। অনুভূতিরা আজ শূন্যহীন হয়ে গিয়েছে। শব্দগুলো যেন আজ বাক হারা। বিষন্ন রজনীর সাথে বিষাদের ছেয়ে গিয়েছে মন। বিষাদিনী কি জানে তার বিষাদগ্রস্ত মন কারো হৃদয়ে অস্থিরতার ঝড় তুলে দেয়। অশান্ত সমুদ্রের মতো ভেতরটা উথাল পাথাল করতে থাকে মন গহীনে। কিছু তিক্ত অনুভূতি আর বুকভরা বিষাদ নিয়ে শহর ত্যাগ করল মেহেভীন।

তাহিয়া ড্রয়িং রুমে বসেছিল তখনই নজর কারা রমনী প্রবেশ করে চৌধুরী বাড়িতে। তাহিয়া ভ্রুযুগল কুঁচকে রমনীর দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। দুধে আলতা গায়ের রঙের সাথে কালো রঙের শাড়ি যেন নিজ দায়িত্ব রমনীর সৌন্দর্যের বর্ণনা দিচ্ছে। রিনি তাহিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলল,

–এটা রিয়াদ আংকেলের বাড়ি? তাহিয়া উৎসুক হয়ে গম্ভীর কণ্ঠে জবাব দিল,

–জি।

–আমি রিনি আমি আমার বাবা আংকেলের বন্ধু। আংকেল আমাকে এখানে আসতে বলেছে। আপনি একটু আংকেলকে ডেকে দিবেন। তখনই রিয়াদ চৌধুরী হন্তদন্ত হয়ে প্রবেশ দাঁড়ে এসে হাজির হন। মুখশ্রীতে চিৎকার হাসি ফুটিয়ে তুলে বলল,

–মামনি তুমি এসে গিয়েছ? আমি তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। একটু বাগানের দিকে গিয়েছিলাম। সেজন্য তোমার সাথে দেখা হয়নি। তোমার আসতে কোনো সমস্যা হয়নি তো মামনি?

–আমার আসতে কোনো সমস্যা হয়নি আংকেল। আমি প্রচুর ক্লান্ত আমাকে আমার কক্ষটা দেখিয়ে দিন। আমি একটু বিশ্রাম করতে চাই। রিয়াদ চৌধুরী গার্ডকে ডেকে রিনিকে নিয়ে যেতে বলল। রিনি নিজের ব্যাগ হাতে নিয়ে কক্ষের দিকে চলে গেল। কিছুক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে হালকা খাবার খাওয়ার জন্য আসলো। তখনও তাহিয়া বসে বসে নখ ঘষছিল। রিনিকে আড়চোখে পরখ করে নিল। রিনি এসে তাহিয়ার পাশে বসলো। কিছুটা অহংকার নিয়েই বলল,

–বাড়িতে এত সুন্দর সুন্দর মেয়ে থাকতেও বাহির থেকে মেয়ে নিয়ে আসা হয়, চৌধুরীর ছেলের মন জয় করার জন্য! রিনির কথায় জ্বলে উঠল তাহিয়া। রাগান্বিত হয়ে বলল,

–তুমি কি কথা গুলো আমাকে বললে রিনি আপু?

–তোমাকেই তো বললাম। জাল পেপার বানিয়েও তো মুনতাসিমকে নিজের আয়ত্ত করতে পারলে না। এই রুপ দিয়ে কি করবে? বিদেশে গিয়ে সাদা বিলাতী ধরে নাও।

–তুমি মনে হয় খুব পারবে মুনতাসিম ভাইয়াকে বশ করতে?

–আমার কাছে এটা কোনো বিষয়ই না। আমি যে পথ ধরে হেঁটে যাই। সেই পথের ধুলাবালি গুলোও আমার প্রেম পড়তে বাধ্য হয়। আর মুনতাসিম তো সাধারণ একজন মানুষ মাত্র। রিনির কথায় তাহিয়ার অধরের কোণে হাসি ফুটে উঠল। দীর্ঘ দিন পর তার প্রাণ খুলে হাসতে ইচ্ছে করছে। তবুও সে নিজেকে দমিয়ে নিল। মনে মনে তাচ্ছিল্য করে বলল, ‘একবার যাও মুনতাসিম ভাইয়ের কাছে তারপরে বুঝবে। মুনতাসিম ভাই কি জিনিস। মুনতাসিম ভাইকে ভালোবাসার মতো অপরাধ করেছিলাম। ভালোবাসার উপহার স্বরুপ পেয়েছি যন্ত্রনা আর আঘাত। দীর্ঘ দেড় মাস আমাকে হসপিটালের বেডে শুয়ে থাকতে হয়েছে। ভাইয়াকে ভোলোর জন্য কত নির্ঘুম রজনী আমি পার করেছি। চাইলেই কি এত বছর ধরে মনের মধ্যে রাখা মানুষটাকে ভোলা যায়! আঁখিযুগলের কোণে অশ্রুকণা এসে হানা দিল। মুখশ্রীতে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে বলল,

–তুমি মুনতাসিম ভাইয়াকে বশ করতে পারলে, আমি তোমার কথা মতো বিদেশি বিলাতী ধরে বিয়ে করে নিব। আমার থেকে তোমার রুপ কমই আছে। যেখানে আমার মতো মেয়েকে মুনতাসিম ভাই তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছে। সেখানে তুমি কোন কালনাগিনী। কথা গুলো বলেই শব্দ করে হেসে উঠল। রিনি রক্তিম চোখে তাহিয়ার দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে।

–তোমার যোগ্যতা যেখানে মুনতাসিম তোমাকে সেখানেই বসিয়ে দিয়েছে। আমি আমার যোগ্যতা তোমাকে দেখিয়ে দিব। এই যে আমি এখন তোমার পাশে বসে আছি। একটু পরে আমার স্থান হবে মুনতাসিমের কক্ষে। মুনতাসিম নিজে আমায় আপন করে নিবে। আমাকে ছাড়া সে এক মুহূর্তে চলতে পারবে না। তুমি শুধু অপেক্ষা করো আর আমার কেরামতি দেখো। তাহিয়া বুঝল রিয়াদ চৌধুরী রিনিকে সবকিছু বুঝিয়েই নিয়ে এসেছে। তাহিয়া মলিন গলায় বলল,

–মুনতাসিম ভাইয়া এক নারীরে আসক্ত। এক নারীতে আসক্ত পুরুষ গুলো ভিষণ ভয়ংকর রকমের সুন্দর হয় জানো তো। যেমন তাদের ভালোবাসার প্রখরতা বেশি হয়। তেমনই নিজের প্রিয় মানুষকে আপন করে পাবার আকুলতা টাও দৃঢ় হয়। তোমার মতো রাস্তার মেয়েকে মুনতাসিম ভাই তার জুতা পরিষ্কার করার জন্যও রাখবে না। রিনি নিজের ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করতে পারল না। রাগান্বিত হয়ে তাহিয়ার গালে প্রহার করতে যাবে। তখনই তাহিয়া হাত ধরে ফেলে। দু’জনকে এমন অবস্থায় দেখে চমকে উঠল রিয়াদ চৌধুরী! রিনির পছন্দের খাবার কেনার জন্য বাহিরে গিয়েছিল তিনি। রিনি রিয়াদ চৌধুরীকে দেখে কৃত্রিম কান্না দেখিয়ে বলল,

–আংকেল জানেন এই মেয়েটা আমাকে রাস্তার মেয়ে বলছে। রিয়াদ চৌধুরী গম্ভীর দৃষ্টিতে তাহিয়ার দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। তাহিয়ার মুখশ্রীতে কোনো অনুশোচনার ছাপ নেই। ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রিনির বলা শেষ হলে তাহিয়া চিৎকার করে বলল,

–আপনার বন্ধু মেয়ে যদি আমাকে বিদেশি বিলাতী ধরে বিয়ে করতে বলে, তাহলে আমি কেন তাকে রাস্তার মেয়ে বলতে পারব না? একমাত্র রাস্তার মেয়ের মুখেই এমন বিশ্রী বাক্য উচ্চারিত হতে পারে। আমি নিজের প্রিয়তমকে পাবার জন্য জালিয়াতি করেছি। কিন্তু কাউকে এমন বিশ্রী ভাষা প্রয়োগ করিনি মামা। এবার তার হয়ে যদি আপনি আমাকে কথা শোনাতে আসেন। তাহলে আমি মাকে বলব কালই যেন এ বাড়ি ছাড়েন তিনি। কথা গুলো বলে দ্রুত পায়ে স্থান ত্যাগ করল তাহিয়া। রিয়াদ চৌধুরী রিনিকে উদ্দেশ্য করে বলল,

–তুমি তাহিয়াকে সত্যি এসব বলেছ?

–আপনার কি মনে হয় আংকেল? আমি এসব বিশ্রী ভাষা ব্যবহার করতে পারি!

–আমি তোমার অবস্থা বুঝতে পেরেছি। তুমি কষ্ট পেও না আমি কালকে তাহিয়াকে বুঝিয়ে বলব। সে যেন আর তোমার সাথে বাজে ব্যবহার না করে, তাকে দিয়ে তোমার কাছে মাফ চাইয়ে নিব। কথা গুলো বলেই রিনিকে খাবার জন্য টেবিলে নিয়ে গেল। অদ্ভুত বিষয় রিনি গৃহে প্রবেশ করেছে অনেকক্ষণ যাবৎ। কেউ তার সাথে সাক্ষাৎ করতে আসলো না। এতে অপমানে রিনির মুখশ্রী চুপসে গেল।

মুনতাসিমের কাজ শেষ করে বাসায় ফিরতে একটু দেরি হয়ে গেল। ধমনীর বুকে মানসিক শান্তির ওপরে কিছু নেই। মানসিক শান্তি থাকলে পুরো দুনিয়ায় শান্তি থাকে। মুনতাসিমের সমস্ত শরীরে অনুভূতিরা আনন্দে মিছিল করছে। মনের শহরের অলিতে-গলিতে গর্জন করে বলছে। এবার নিজের প্রেয়সীকে ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে ফেলার সময় এসে গিয়েছে। যে চাদর সরানো ক্ষমতা সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আর কারো নেই। কিন্তু কিছু তিক্ততা খারাপ লাগলেও ভয়ংকর রকমের সত্যি। রজনী কি মুনতাসিমকে বলেনি? এই হাসি এই আনন্দ তোমার জন্য নয়। তোমাকে কেবল দুঃখ দেওয়ার জন্য আপন মানুষরা ভালোবেসেছে। সে আনন্দ নিয়ে বাসায় ফিরেছিল। সে কি জেনেছিল তা মুহুর্তে মধ্যে বিষাদে রুপ নিবে। নিজের কক্ষে প্রবেশ করতেই চারদিকে আঁধারে আচ্ছন্ন দেখে মস্তিস্ক টগবগ করে উঠল। তার বিনা অনুমতিতে কে তার কক্ষ প্রবেশ করেছে? কার এত বড় স্পর্ধা মুনতাসিমের কক্ষে প্রবেশ করার দুঃসাহস দেখিয়েছে! তার বাবা আসলে তো কখনো আলো নেভায় না। কক্ষে প্রবেশ করতেই একজোড়া কোমল হাত মুনতাসিমের গলা জড়িয়ে ধরল। মুনতাসিম বিস্ময়ের শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেল। তার কক্ষে কোনো নারী প্রবেশ করেছে। কে সে যে তার কক্ষে আসার অনুমতি পেল? মুনতাসিমের ভাবনার মানেই রমনীকে ভয়ংকর রকমের কাজ করে বসলো। সে মুনতাসিমের গালে চুমু খেয়েছে। মুনতাসিম যেন এবার নিয়ন্ত্রণ হারা হয়ে গেল। সে দ্রুত ফোনের আলো জ্বালিয়ে কক্ষের আলো জ্বালালো। নববধূর মতো রুপ নিয়েছে রিনি। মুনতাসিমের জায়গান অন্য কোনো পুরুষ থাকলে, রিনিতেই আঁটকে যেত। রিনির প্রেম পড়েনি এমন পুরুষ খুব কমই আছে। রিনির মুখশ্রীতে রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়েছে। মুনতাসিনের আঁখিযুগলে দৃষ্টিপাত করার সাহস হচ্ছে না। লজ্জা মস্তক নুইয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মুনতাসিম শরীরের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে রিনির গালে ক’ষে থা’প্প’ড় বসিয়ে দিল। সাথে সাথে রিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। রিনির কর্ন দিয়ে উত্তপ্ত ধোঁয়া বের হচ্ছে। সমস্ত ধরনী অন্ধকার হয়ে আসছে তার কাছে। মুনতাসিমের রক্তাক্ত আঁখিযুগলের দৃষ্টিতে দৃষ্টি পড়তেই অন্তর আত্মা কেঁপে উঠল তার। ভয়ে পুরো শরীর থরথর করে কাঁপছে। মুনতাসিম হুংকার ছেড়ে সবাইকে ডাকলো। এতক্ষণ কারো সাড়াশব্দ ছিল না। মুনতাসিমের এক ডাকেই নিস্তব্ধ বাড়িটা মুহূর্তের জাগ্রত হয়ে গেল। কাল বৈশাখী ঝড়ের গতিতে সবাই মুনতাসিমের কক্ষে এসে হাজির হলো। সবাইকে দেখে মুনতাসিম বজ্র কণ্ঠে বলল,

–এই মেয়ে কে? এই মেয়ের এত সাহস হলো কি করে আমার বাড়িতে এসে আমার কক্ষে প্রবেশ করে, আমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাওয়ার! এই মেয়েকে এত সাহস কে দিয়েছে আমি জানতে চাই? মুনতাসিমের হুংকারে কেঁপে উঠল চৌধুরী বাড়ির প্রতি দেওয়াল। ভয়ে সবাই জড়সড় হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তাহিয়া মুখ চেপে হাসছে এই মুহূর্তটার জন্যই সে অপেক্ষা করছিল। সবার মুখশ্রীতে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। মেয়ে টাকে মেরে না ফেলে আবার মুনতাসিম। রিনি লজ্জায় মাটির সাথে মিশে থাকলো। সে মুনতাসিমকে যতটা সহজ ভেবেছিল মুনতাসিম যে তার বিপরীত চিত্র হবে। সেটা রিনির ভাবনার বাহিরে ছিল। রিনিকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে, রিয়াদ চৌধুরী অস্থির হয়ে তাকে তুলে দাঁড় করালো। রাগান্বিত হয়ে বলল,

–তুমি কোন সাহসে ওর গায়ে হাত তুললে?

–ও কোন সাহস আমার কক্ষে এল? ওর এত বড় কলিজা কে দিয়েছে? আমার কক্ষে এসে আমার গলা জড়িয়ে ধরে চুমুর খাওয়ার! আজকে আমি ওর কলিজা টেনে বের করে দেখব। তার কলিজা ছিঁ’ড়ে এনে ভেজে কু’কু’র’কে দিয়ে খাওয়াব।

–মুনতাসিম সাবধানে কথা বলো। আমি তোমার বাবা সামনে দাঁড়িয়ে আছি। কন্ঠস্বর নিম্ন করে কথা বলো!

–যেখানে আমার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। সেখানে আমি চুপ থাকব। আপনি এই কথা বলছেন। এই মেয়েকে এখানো খু’ন না করে বাঁচিয়ে রেখেছি। এটাই তো তার ভাগ্য ভালো। আমার সামনে থেকে একে নিয়ে যান না হলে আপনার সামনেই খু’ন করে ফেলব।

–দু’দিন পরে যে মেয়ে তোমার অর্ধাঙ্গিনী হবে। তাকে সন্মান দিয়ে কথা বলো। রিনিকে নিয়ে আর একটা বাজে মন্তব্য করলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। এত সুন্দর একটা মেয়ে কিসের কমতি আছে তার কাছে!

–আমার মনের রাণী ছাড়া সব নারী আমার কাছে বিষাক্ত। আমি মেহেভীনকে ভালোবাসি। আমি বিয়ে করলে মেহেভীন কেই করব৷ আমি মেহেভীনের না তো কারো না। মুনতাসিমের একটা বাক্যে পুরো পরিবেশ নিস্তব্ধ হয়ে গেল। যে ছেলে বিয়ের কথা বললেই লজ্জা পেত। সেই ছেলে বিয়ে ভালোবাসার কথা বলছে! তবে আঘাতটা কি একটু বেশিই করা হয়ে গেল? রিয়াদ চৌধুরী নিজেকে দমিয়ে রাখলেন না। মুনতাসিমের থেকে দ্বিগুন গর্জন করে বলল,

–আমার বাড়ির বউ হিসেবে আমি রিনি কেই মেনে নিব। রিনি ছাড়া অন্য কাউকে আমার বাড়ির বউ হিসেবে মেনে নিব না। আর মেহেভীনকে তো একদমই নয়। কারন আমি মেহেভীনকে পছন্দ করি না।

–কেন মেহেভীনকে পছন্দ করেন না? কিসের কমতি আছে মেহেভীনের মধ্যে।

–তাকে অপছন্দ করার কোনো কারন নেই। তাকে একটা কারনেই পছন্দ করি না। কারন সে তোমাকে কষ্ট দিয়েছে। নিজের বুকে পাথর চাপা রেখেছি। তবু ও তোমায় কষ্ট পেতে দেয়নি। সেই ছেলেকে দু’দিনের একটা মেয়ে এসে এক টার পর একটা আঘাত করে যাবে। আমি সেটা বাবা হয়ে সহ্য করব। তোমার চরিত্র নিয়ে এত ভয় সে-ও তো তোমায় চরিত্রহীন প্রমাণ করার চেষ্টা করেছে। তাহিয়া, রিনি যদি ছাড়া না পায় তবে সে পেল কি করে?

–আপনি আমার কষ্টের কথা বলছেন আব্বা। সেটা তো আপনি নিজেও দ্বিতীয় বিয়ে করে আমাকে দিয়েছেন৷ চরিত্রহীন প্রমাণ করার চেষ্টা আপনিও করলেন। আপনি ছাড়া পেলে সে কেন পাবে না? সবাই আমার এত ভালো চাইলো। ভালো চাইতে চাইতে আমার ভালো থাকাই কেড়ে নিল। রিয়াদ চৌধুরী নিস্তব্ধ হয়ে গেল মুখশ্রী থেকে বাক্য গুলো হারিয়ে গিয়েছে। মস্তিষ্ক ঝিম মেরে গিয়েছে। দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি ক্ষয় হচ্ছে এক মুহুর্তে বিলম্ব করল না। দ্রুত রিনিকে নিয়ে কোনো রকমে কক্ষ ত্যাগ করল। ধীরে ধীরে কক্ষ একদম ফাঁকা হয়ে গেল। মুনতাসিম দেওয়ালে হাত ঠেকিয়ে ফ্লোরের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। শরীরের মধ্যে ভিষণ খারাপ লাগছে। আঁখিযুগল অস্বাভাবিক ভাবে রক্তিম বর্ন ধারণ করেছে। নির্ঘুম রজনী আর নিস্তব্ধ কক্ষ মুনতাসিমের হাহাকারের সাক্ষী হয়ে রইল।

চলবে…..

(সারাদিন বাসায় ছিলাম না। কতটা জার্নির ওপর দিয়ে গিয়েছি। শরীর আর টানছিল না। আপনারা অপেক্ষা করবেন ভেবে তবুও জোর করে লিখেছি। সবাই রেসপন্স করবেন কিন্তু। শব্দসংখ্যা:১৭৯০)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here