#অনুভূতিরা_শব্দহীন
লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী
অষ্টাবিংশ পর্ব (২৮ পর্ব)
“রাত কয়টা বাজে দেখেছেন? ১২ টা বেজে গেছে। এখনো এই বই নিয়েই পড়ে আছেন।”
সারাহ্ আপন মনে আহনাফকে বকাবকি করে যাচ্ছে। আহনাফ বইটা বন্ধ করে বলে,
“রেগে আছো নাকি?”
“না, তাতা থৈ থৈ করছি আমি।”
দাঁত খিঁ°চিয়ে বলল সারাহ্।
আহনাফ বইটা রেখে চেয়ারে বসে বলে,
“আপনি এমনি করিয়া দন্ত বাহির করিলে আপনাকে বৃহৎ আকৃতির একখানা প্রানীর মতন দেখায়। তাহার সুবিশাল লে°ঙ্গুর ঝুলিয়া থাকে। অধুনা বিজ্ঞানীরা তাহাকে মনুষ্যকূলের আদিপুরুষ রূপে গণ্য করিয়া থাকে।”
সারাহ্ রেগে গিয়ে বলে,
“আমাকে বানর বললেন?”
“আহা, তাহা আমি কখন বলিয়াছি। আমি তো তাহার দন্তের সঙ্গে আপনার দন্তের বড়ই মিল পাইয়াছি। তাহারা অতি সুখে দন্ত বাহির করে আর আপনি অতি রাগিয়া তাহা প্রকাশ্যে দন্ত বাহির করো। ইহা পার্থক্য নহে, ইহা কালের বিবর্তন।”
সারাহ্ রেগে জোরে জোরে বিছানা ঝাড়তে শুরু করে। আহনাফ এখনো ক্রমাগত হেসে যাচ্ছে। ঝা°ড়ুটা ছু°ড়ে ফেলে সারাহ্ শুয়ে বলে,
“আমার পাশে আর কেউ শুতে আসবে না, এই বলে রাখলাম।”
আহনাফ উঠে এসে খাটে বসতে বসতে বলল,
“ইহা আপনার একান্ত সম্পত্তি নহে। ইহাতে আমার নিজস্ব অংশ খানিক রইয়াছে। আপনি ইহাতে আসিয়াছেন বলিয়া ইহা সম্পূর্ণ রূপে আপনার ব্যক্তিগত হইয়াছে বলিয়া আমি মান্য করিবো না।”
“আপনার সাধু ভাষা…”
সারাহ্ উঠে আহনাফকে ধরে ঠেলতে ঠেলতে বারান্দায় নিয়ে বলে,
“যতক্ষণ সাধু ভাষা জবান থেকে না যাচ্ছে, ততক্ষণ ঘরে আসবেন না।”
আহনাফ বুকে হাত বেঁধে বলে,
“ইহাও আমার অপরাধ নহে। কাল খানিক পূর্বে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপন্যাস পড়িয়া আমার এরূপ অধঃপতন হইয়াছে। আগামীকল্য হইতে আমি শুধরাইয়া যাইবো।”
“চুপ।”
ধমকে উঠে সারাহ্। আহনাফ হেসে দেয়। সারাহ্-র গাল টে°নে দিয়ে বলে,
“রাগিলে আপনাকে…”
আহনাফের কথার মাঝে ওকে ঝারি দেয় সারাহ্,
“ঘরে যাবেন না আর মুখ বন্ধ রাখবেন।”
সারাহ্ চলে যেতে নিলে আহনাফ ওকে টে°নে কাছে নিয়ে আসে। দুহাত আলতো করে আহনাফের বুকের কাছে রাখে, চঞ্চলতা থেমে গিয়ে দুজনেই শান্ত হয়েছে।
ডানহাতের তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে সারাহ্-র কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দেয়। সারাহ্ চোখ তুলে তাকায়। দুজনের দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো, একই চাওয়া দুজনের অথচ তা প্রকাশ হলো না।
সারাহ্ সরে রুমে চলে আসে, আহনাফ বারান্দায় গ্রিলে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকায়। চাঁদ যে অর্ধপূর্ণ, মিটিমিটি জ্বলতে থাকা তারাগুলো চাঁদের পূর্ণতার আশায় ছ°টফ°ট করছে। ঠিক যে ছ°টফ°টানি হচ্ছে আহনাফ আর সারাহ্-র মনে।
______________________________________
বিছানায় শুয়েও ঘুম নেই মৃত্তিকার। পাশে সুরভি বেশ আরামেই চোখ বুজেছে সেই কখন। এখন তো নাক ডাকাও শুরু করেছে।
মৃত্তিকা পাশবালিশটা জড়িয়ে ধরে ভাবছে, শুধুই ভাবছে। ভাবনায় ইমতিয়াজ আর ওর বাবার মাঝের ঘটনা নেই। ভাবনায় কেবলই ইমতিয়াজ। ইমতিয়াজের হাতের স্পর্শ আর কথা, দুটোই সে অনুভব করছে। কিন্তু ইমতিয়াজকে বিয়ে করার অর্থ ওকে আবারো বিপদে টেনে ফেলা। লজ্জা, ভয়, সংশ°য়ের বে°ড়াজালে পড়ে আছে সে।
চিন্তা করতে করতে কোনো একসময় সে ঘুমিয়ে পড়ে। ফজরের সময় সুরভির ডাকে ঘুম ভাঙলো।
“মিউকো, উঠো।”
“হুম।”
চোখ কচলে কচলে উঠে বসে মৃত্তিকা। সুরভি তার মায়ের রুমে চলে যায় নামাজের জন্য। মৃত্তিকা এখানেই নামাজ পড়ে নেয়।
নামাজ শেষে মাত্রই জায়নামাজ গুছিয়ে রাখছে তখন শাফিন সাহেব এসে বলে,
“মিউকো, মা মিউকো।”
“জি, মামা। বলেন।”
শাফিন সাহেব ভিতরে এসে চেয়ারে বসতে বসতে বলল,
“আজ অফিসে যাবা?”
মৃত্তিকা জায়নামাজ রেখে বিছানার কোণায় বসে বলে,
“যেতে হবে মামা, ইমার্জেন্সি।”
শাফিন সাহেব মাথা নাড়েন। মৃত্তিকা নিজে থেকেই বলে,
“কোনো সমস্যা?”
“কলরবের বাবার কোম্পানিতেই কেন জয়েন দিতে হলো?”
মৃত্তিকা সামনে ঝুঁ°কে বলে,
“জয়েন দেইনি, শেয়ার কিনেছি।”
“হ্যাঁ, সেটাই। এখানে কেন করতে হলো? ওরা তোমাকে ভালো নজরে দেখে না।”
মৃত্তিকা কাঁধ ঝাঁকিয়ে বলল,
“সেটা তাদের নজরের সমস্যা, আমার নয়।”
শাফিন সাহেব উঠে বেরিয়ে যেতে যেতে বলল,
“ওকে, যা ভালো বুঝো।”
মৃত্তিকা কিছুক্ষণ দরজার দিকে তাকিয়ে থাকে। এরপর সে বিছানা নিয়ে নেয়। রাতে ভালো ঘুম হয়নি, এখন তো একটু ঘুমানো লাগবেই।
______________________________________
আজ সকালের নাস্তা বানাচ্ছে আহনাফ নিজে। খিচুড়ি আর ঝাল ঝাল গরুর গোশত। সারাহ্ আহনাফের এসব কাজে খুবই বি°র°ক্ত। রান্নাঘর সবসময় গোছানো আর পরিষ্কার রাখতে পছন্দ করে সারাহ্, অথচ আহনাফ এখানে আসা মানেই হলো এর চেহারা পালটে ফেলা।
“অনেক হয়েছে ফয়েজ স্যার, এবারে গিয়ে তৈরি হয়ে নিন।”
সারাহ্ এসে কাজে হাত দিতে দিতে কথাটা বলল।
আহনাফ গেল না। পালটা জবাব দেয়,
“ফয়েজ স্যার বলবা না। সাদাবের আব্বু, সাইদার পাপা বলবা।”
সারাহ্ চোখ কুঁচকে তাকিয়ে ব্য°ঙ্গসুরে বলে,
“কোথায় সেই সাদাব আর সাইদা। একটা রুমে আর একটা পেটে?”
আহনাফ হেসে ওর দিকে এগিয়ে এসে গালে চুম্বন করে বলল,
“রেডি হয়ে নাও, আমার রান্না প্রায় শেষ।”
“এটা দূরে থেকেও বলা যায়।”
আহনাফ গোশত বাটিতে নিতে নিতে বলে,
“এভাবে দূরে থাকলে সাদাব-সাইদা আর আসবে না। পরে আমি বুড়ো হয়ে যাবো।”
“ছি, মুখের কি ছিরি।”
সারাহ্ রুমে চলে গেল। আহনাফ বেশ কিছুক্ষণ আপন মনে খিলখিলিয়ে হাসলো। সারাহ্ আসার পর ওর জীবনের খুব সুন্দর একটা মোড় এসেছে।
খাবার টেবিলে বসে আব্বাস সাহেব আহনাফকে বললেন,
“শুক্রবারে তোমার ছোটফুফু আর ছোটফুপা আসবে।”
আহনাফ মাথানেড়ে বলল,
“তা তো ভালো কথা।”
আব্বাস সাহেব আবারো বলেন,
“উনারা তিন-চার দিন থাকবেন, তাই গেস্টরুমটা পরিষ্কার করে ফেলো।”
সারাহ্ পাশ থেকে বলে,
“বাবা, গেস্টরুম পরিষ্কারই আছে। আমি উইকলি খালাকে দিয়ে পরিষ্কার করাই।”
“ভেরি গুড।”
আব্বাস সাহেব প্রশংসা করলেও আহনাফ খাবার মুখে ঠু°সে গমগমিয়ে বলল,
“বড় বড় গুড়ের বৈয়াম।”
সারাহ্ বুঝতে পারলো ওকে ঠে°স দিয়ে কথাটা বলা হয়েছে। রেগে চোখ ছোট করে তাকালেও আব্বাস সাহেবের সামনে কিছু বলে না।
আব্বাস সাহেব দুজনের দৃষ্টিই খেয়াল করেছেন। উনি না দেখার ভাণ করেই আহনাফকে বলেন,
“তোমার ছোটফুপা কিন্তু তোমার বিয়ের প্রস্তাব এনেছিল, তাই কোনো প্রকার সমালোচনা যেন না হয়।”
আহনাফ হাত নেড়ে বলল,
“আরে, কিসের সমালোচনা? তোমার এমন অতি গুণবতী অলরাউন্ডার পুত্রবধূ থাকতে আবার সমালোচনা কিসের?”
আব্বাস সাহেব ছেলের পরিবর্তন খেয়াল করছেন। যে ছেলে আগে বেছে বেছে কথা বলতো, সেই ছেলেই এখন দশটা উত্তর তৈরি করে কথা শুরু করে।
______________________________________
“তোমার মনে হয় ইমতিয়াজ মৃত্তিকাকে ভালো রাখবে? আবার তোমার মতো হবে না তো?”
পল্লবীর রাগি রাগি কন্ঠে শরীফ প্রতিবাদ করে না। আরাম কেদারায় বসে সি°গা°রেটের ধোঁয়া ছাড়তে থাকে। পল্লবী সি°গা°রেটটা নিয়ে পায়ের নিচে পি°শে ফেলে।
শরীফ ওর দিকে তাকায়। পল্লবী বলে,
“তুমি অন্যের কথায় নিজের সংসারে আ°গু°ন দিয়েছিলে। ভাবিকে তো কষ্ট কম দাওনি, আবার আমাদের সামনে ভাবিকেই ভি°লে°ন করেছিলে। আর এখন যখন ভাবি নেই তখন তুমি বুঝলে যে তুমি ভুল। (একটু থেমে) ওই ইমতিয়াজ ছেলেটা বিবাহিত, এর আগেও তার স্ত্রী ছিল। যদি সে মৃত্তিকাকে ভালোবাসতে না পারে?”
শরীফ নির্বিকার হয়ে জবাব দিলো,
“ইমতিয়াজ কেয়ারিং, মৃত্তিকা ওইখানেই ভালো থাকবে।”
“আমিও জানি সে কেয়ারিং, কিন্তু ভালোবাসা আর কেয়ার এক নয় ভাইয়া।”
শরীফ উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“আমি মৃত্তিকাকে দেখতে যাবো কাল, মেয়েকে বউ সাজলে মায়ের মতো লাগে কিনা তা আমাকেও দেখতে হবে।”
পল্লবী মুখ ভেং°চায়।
“আবারো না কোনো গ°ন্ডগোল লাগে।”
শরীফ রুমে চলে যায়। পল্লবী সি°গা°রেটটা ফেলে দিয়ে নিজের এপ্রোন নিয়ে বেরিয়ে পরে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে।
______________________________________
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা, ইসরাতের সাথে আলোচনায় ব্যস্ত মৃত্তিকা। ইসরাত শনিবারে ইতালিতে ফিরে যাবে, ফিওনা চলে গেছে প্রায় দেড়মাস। এর আগে টুকটাক অনেক কিছুই মৃত্তিকাকে শিখিয়ে পড়িয়ে দিয়ে যাচ্ছে ইসরাত।
কথা শেষে যাওয়ার সময় ইসরাত আবারো ফিরে আসে। বলল,
“তুই সত্যি বিয়ে করছিস?”
মৃত্তিকা আলতো করে হেসে বলল,
“কাল বাসায় আসলেই দেখবি দ্বিধার দেয়াল কিভাবে ভে°ঙেছি।”
ইসরাত মুচকি হাসে। বিয়ে নিয়ে মৃত্তিকার মধ্যে চলা বিরতিহীন দ্বিধাকে গুড়িয়ে দিয়েছে সে। এখন শুধুই ওই মুহূর্তের অপেক্ষা।
দুজনে একসাথে অফিস থেকে বের হয়। তারপর দুজনে নিজের গন্তব্যে রওনা দেয়।
বাসায় এসেই মৃত্তিকা নিজের ট্রলি খুলে। মায়ের জিনিসপত্র কিছু বের করাই ওর উদ্দেশ্য। কিন্তু ট্রলি খুলেই সে অবাক, সব যে এলোমেলো। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, কেউ ওর ট্রলিতে কেউ ঘা°টাঘা°টি করেছে।
সন্দেহের তী°রটা সুরভির দিকেই দেয় মৃত্তিকার। এ রুমে তার আনাগোনা বেশি হয়।
সুরভি এসে বলল,
“কালকে কি শাড়ি পড়বে নাকি লেহেঙ্গা?”
মৃত্তিকা শব্দ করে ট্রলিটা বন্ধ করে বলে,
“রুমে কে এসেছিল আপু? আমার ব্যাগ কে ধরেছে?”
সুরভি ব্যাগের দিকে তাকিয়ে বলল,
“কেউ না তো। রুমে কেউ আসেনি।”
মৃত্তিকা আড়চোখে ওকে শুধু দেখে, কথা না বাড়িয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। ব্যাগে যেহেতু কেউ ধরেছে তার মানে কিছু খুঁজতে এসেছিল। কি হতে পারে? মৃত্তিকা অনবরত ভাবতে থাকে।
______________________________________
ফজরের আযান দিচ্ছে। মৃত্তিকা ফ্রেশ হয়ে এসে নামাজের জন্য তৈরি হয়। সুরভি এখনো ঘুম থেকে উঠেনি। সুরভিকে একটু ডেকেই নামাজে দাঁড়িয়ে যায় মৃত্তিকা।
নামাজ শেষে বেশ লম্বা সময় জায়নামাজে কাটায় সে। আজকের দোয়াও বেশ দীর্ঘ হয়। সবকিছু ঠিক থাকলে আজকে সন্ধ্যায় সে ইমতিয়াজের স্ত্রী হবে। দোয়ায় প্রতিদিনের মতো মাম থাকলেও আজ ইমতিয়াজের নামও উচ্চারণ হয়েছে। সংসারটা যেন সুখের হয়, শরীফের মতো ব°দ°মেজাজি আর অ°ত্যা°চা°রী কেউ যেন জীবনে পদার্পণ না করে। চোখের কোণায় ফোঁটায় ফোঁটায় জল জমতে থাকে।
এদিকে ইমতিয়াজের অবস্থাও একই। আজ তার মোনাজাতে বাবা, মা, তাহমিনার পর মৃত্তিকার নাম এসেছে। যে মানুষটাকে স্বেচ্ছায় সে নিজের জীবনে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। পর্যাপ্ত সম্মান যেন দিতে পারে সেই দোয়া করছে উভয়ে। যেন দুজনের দোয়া একই প্রান্তে মিলে গেছে।
______________________________________
ঘূর্ণনশীল ঘড়িটা ঘুরে চলছে অবিরাম। সকাল পেরিয়ে মধ্যদুপুরে এসেছে সময়টা। আহনাফ কলেজ থেকে বের হয়েছে। উদ্দেশ্য ঢাকায় যাবে, তাই একটু আগে আগেই বের হয়েছে।
গেইটের কাছে সারাহ্ তাড়াহুড়ো করে এসে বলল,
“কেন যাচ্ছেন বলেন নাই তো? আমার চিন্তা হচ্ছে।”
আহনাফ একটু নিচুস্বরে বলে,
“এক বন্ধুর বিয়েতে যাচ্ছে। রাতারাতিই ফিরে আসবো।”
“না থাক, রাত করে আসা লাগবে না।”
“বউটা একা কেমনে থাকবে?”
বলে আহনাফ চোখ টি°পে দেয়। সারাহ্ সরে যায়।
“ঠিক আছে, সাবধানে যাবেন।”
সারাহ্-কে বিদায় জানিয়ে আহনাফ রওনা দেয় ঢাকার উদ্দেশ্যে। ঢাকায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা ছয়টা বেজে গেছে। প্রথমেই যায় কাকরাইলে সেখানে তানজিমের বাসার সবার সাথে দেখা হয়। মমতাজ বেগম আর লুৎফর রহমান ওকে দেখেই খুব খুশি হয়েছে। মূলত মমতাজ বেগমই ওকে দাওয়াত দেয়ার কথা বলেছিল।
তানজিমকে ইমতিয়াজকে কল দেয়। সে বাসায় আছে, এখনো তৈরি হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর ইমতিয়াজ আসে, আহনাফের সাথে কুশল বিনিময় হয় তার। সকলে একসাথে রওনা দেয় উত্তরা মৃত্তিকার মামা শাফিন সাহেবের বাসার উদ্দেশ্যে।
গাড়িতে ইমতিয়াজ একটু শান্তই রইলো। বাসায় আসার আগে সে গিয়েছিল গো°র°স্থানে। তাহমিনার কবরের কাছে কিছুটা সময় কাটিয়েছে।
এদিকে মামের হালকা গোলাপী বেনারসি শাড়িটা পড়েছে মৃত্তিকা। সুরভিকে সন্দেহ হতে থাকলেও আজ সুরভিই তাকে সাজিয়ে দিচ্ছে। শাড়ির সাথে মাথায় আবার হিজাব পড়িয়ে দিয়েছে সে। ইসরাত আসলেও ওকে সাজানোতে হাত দেয়নি সে, এসবে যে বড্ড কাঁচা।
মুখটা নিজের দিকে ঘুরিয়ে সুরভি বলল,
“দারুন লাগছে।”
মৃত্তিকা উত্তর দেয় না। সুরভি ওর নিরবতাকে লজ্জা বলে ধরে নিলেও একটা আসলে রাগ ছিল। সুরভি রুম থেকে বেরিয়ে গেলে মৃত্তিকা মনে মনে একটা কথাই বলে,
“মুখোশধারী মানুষগুলোর মধ্যে কি তুমিও আছো আপু?”
ইমতিয়াজসহ সকলে চলে এসেছে। ড্রইংরুমে মৃত্তিকা তাদের কথা শুনতে পাচ্ছে, তবে ইমতিয়াজের কোনো কন্ঠস্বর পায়না।
কিছুক্ষণ পর সুরভি আর তানজিম রুমে আসে। তানজিম ওকে দেখে একটা চওড়া হাসি দিয়ে বলল,
“বাহ আপু, তোমাকে আজকে অন্যরকম লাগছে।”
তানজিমের কথায় সুরভি হেসে বলে,
“মিউকো, চলো। তোমার ডাক পড়েছে।”
তানজিম বলে,
“আমি নিয়ে আসছি, তুমি যাও।”
সুরভি কথা না বাড়িয়ে চলে যায়। তানজিম মৃত্তিকার সামনে বসে বলল,
“ছোট ভাই তো আমি তোমার। বে°য়া°দ°বি করেছি, কষ্ট দিয়েছি, ক্ষমা করবে না?”
মৃত্তিকা ওর গোছানো চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বলে,
“রাগ নেই আমার। এভাবে মনের কথা বলে দেয়া মানুষগুলো অনেক ভালো। কিন্তু যাদের মুখে মধু আর অন্তরে বি°ষ?”
“তোমার বাবার কথা বলছো?”
মৃত্তিকা কিছু না বলে আয়নার দিকে তাকায়। শুধু কি ওর বাবাই মি°থ্যা চেহারা নিয়েছে? না, আশেপাশে এমন অনেক আছে।
দেলোয়ারা দরজার কাছ থেকে বলল,
“মিউকো।”
তানজিম মৃত্তিকার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
“তাহসিনা আপুকে এভাবে নিতে পারিনি, তোমাকে নিতে তো পারি?”
মৃত্তিকা ওর হাত ধরে। বোনকে নিরাপদে, যত্নে নিয়ে আসে বিবাহস্থলে। ইমতিয়াজের দিকে আড়চোখে তাকালো মৃত্তিকা। কালো পাঞ্জাবি আর সাদা পায়জামা, পৃথিবীর সবচেয়ে সাদামাটা একটা সাজ নিয়েছে সে। মৃত্তিকার দিকে একবার তাকায় ইমতিয়াজ। দুচোখে লজ্জা আর ভয়ের সাথে কিছুটা বিব্রত অবস্থাও নজরে পড়ে।
পাশাপাশি বসানো হলো দুজনকে। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলো। কোনোরকম ঝা°মেলা ছাড়াই বিয়ে সমাপ্ত হলো। তবে পুরো সময় জুড়ে মমতাজ বেগম আর সুরভি এখানে উপস্থিত নেই। মৃত্তিকা বিষয়টা লক্ষ্য করেও নিরব থাকে।
তানজিম বলার পর আহনাফ মৃত্তিকাকে চিনতে পেরেছে। সেদিনের ওই ভদ্রমহিলা রিপা বেগমের একমাত্র মেয়ে।
বাসার সদর দরজা খোলা আছে। দরজা ঠেলে ভিতরে আসে মৃত্তিকার বাবা শরীফ। বিবাহ পরবর্তী মোনাজাত চলছে, মৃত্তিকার নজর উনার দিকে পড়তেই দাঁড়িয়ে যায়। ইমতিয়াজ একহাতে ওকে ধরে বসিয়ে দেয়। মৃত্তিকা তাকায় ইমতিয়াজের দিকে, ইমতিয়াজ এখনো নিজের মোনাজাত ভঙ্গির হাতের দিকে তাকিয়ে আছে।
চলবে……