অনুভূতিরা_শব্দহীন লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী পঞ্চত্রিংশ পর্ব (৩৫ পর্ব)

0
390

#অনুভূতিরা_শব্দহীন
লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী

পঞ্চত্রিংশ পর্ব (৩৫ পর্ব)

“মিউকো, মিউকো।”

শরীফের কন্ঠ শুনে মনে কোথাও একটা সাহস পায় মৃত্তিকা। প্রথমবার সে তার বাবাকে ভ°য় না পেয়ে আছে। দরজা খুলে দেখে শরীফ দাঁড়িয়ে আছে, শাফিন নেই। ইমতিয়াজ সদর দরজা খুলে দ্রুত বাসায় প্রবেশ করে।

মৃত্তিকার ওড়না ডাইনিং এর ফ্লোরে পড়ে আছে, কপালে কা°টা দাগ, ঠোঁটের কোণায় র°ক্ত জমেছে, কেঁদে কেঁদে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে। ইমতিয়াজ ওর অবস্থা দেখে আরো ঘাবড়ে যায় আর ইমতিয়াজকে দেখে মৃত্তিকার কলিজায় পানি আসে। মৃত্তিকার ওড়নাটা হাতে তুলে নেয় ইমতিয়াজ।

মৃত্তিকা গিয়ে সোজা ওকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়। ইমতিয়াজ ভ°য় পেতে থাকে শাফিন খারাপ কিছু না করে ফেলেছে। আবারো হয়তো কেউ ওকে ডেকেছে আর ও সাড়া দেয়নি।

মূলত শাফিনের বাসায় আসা খেয়াল করে মৃত্তিকার দিকে নজর রাখা শরীফের সেই লোক। শরীফ দুলালকে খোঁজায় ব্যস্ত ছিল, দুলালকে ঠিক কখন বা কিভাবে শাফিন নিয়ে গেছে সে জানে না। শরীফ মৃত্তিকার খবর পেয়ে ইমতিয়াজকে জানায় আর নিজেও ছুটে আসে। তবে ওরা আসার আগেই শাফিন বেরিয়ে গেছে। প্রায় দেড়ঘন্টা সময় লেগেছে ওদের আসতে, এতোক্ষণ মৃত্তিকার অবস্থা কি ছিল তা কেবল আল্লাহ্ই জানে।

ইমতিয়াজ ধীরে ধীরে ওর মাথায় হাত বুলায়। বলে,
“মৃত্তিকা।”

ইমতিয়াজের বুকে মাথা ঠেকিয়ে ক্রমাগত কেঁদেই যাচ্ছে মৃত্তিকা। শরীফ ওদের পাশ কা°টিয়ে বেরিয়ে যায়। যেহেতু ইমতিয়াজ চলে এসেছে তাই ওর এখানে আর কোনো দরকার নেই।

ইমতিয়াজের শার্টে বারবার চোখ মুছছে মৃত্তিকা, কিন্তু মাথা তুলে না। ইমতিয়াজ আলতো হাতে ওকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“বলেছিলাম না এসো না এই কাপুরুষের কাছে।”

ইমতিয়াজের পিঠে খা°মচে ধরে মৃত্তিকা। কেন সে বারবার নিজেকে দোষারোপ করে। এসবে ওর কি দোষ?

ইমতিয়াজ চেয়ার টে°নে ওকে বসিয়ে দেয়। তারপর দরজা বন্ধ করে এসে ওর সামনে ফ্লোরে বসে বলল,
“শাফিন এসেছিল?”

মৃত্তিকা ঢোক গিলে মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো। ওর ওড়না গায়ে জড়িয়ে দিয়ে বলে,
“কি হয়েছে?”

মৃত্তিকার কান্নার বেগ বেড়ে যায়। ইমতিয়াজ ওকে দ্রুত জড়িয়ে ধরে। হঠাৎ জোরে জোরে নিশ্বাস নিয়ে মৃত্তিকা জ্ঞান হারায়। প্রচন্ড ভ°য় আর উ°ত্তে°জনা থেকে এটা হওয়া স্বাভাবিক। ইমতিয়াজ ওকে কোলে তুলে নেয়। বিছানায় শুইয়ে দিয়ে মুখে হালকা পানির ছি°টা দিতেই জ্ঞান ফিরে।

মৃত্তিকা চোখ খুললে ইমতিয়াজ উঠে যেতে নিলে মৃত্তিকা ওর হাত ধরে বলল,
“থাকেন না আমার কাছে কিছুক্ষণ।”

ইমতিয়াজ পাশে বসে। পিঠের দিকে বালিশ দিয়ে বসেছে। মৃত্তিকা এখনো তার হাতটা ধরে রেখেছে। ইমতিয়াজ হাত ছাড়িয়ে ওর ঠোঁটে আঙ্গুলের স্পর্শ করে। র°ক্ত জমে আছে এখানে। মৃত্তিকা মিনমিনে কন্ঠে বলে,
“চ°ড় দিয়েছে।”

ইমতিয়াজ কপালের কোণায় আঙ্গুল ছোঁয়াতেই মৃত্তিকা বলে,
“পড়ে গিয়েছিলাম, চেয়ারে লেগেছে।”

মৃত্তিকা ইমতিয়াজের গা ঘেষে শুয়ে বলল,
“মামের আসল নাম রাহা সুলতানা আর মাম তাদের আপন বোন না, চাচাতো বোন। মামের প্যারেন্টসকে শাফিনের বাবা মে°রেছে আর ওই লোকটাকে আমি এতোদিন নিজের নানা ভাবতাম।”

মৃত্তিকা কান্না করে দেয়। ইমতিয়াজ চেয়ে আছে ওর দিকে। কতটা অসহায়ত্ব কাজ করছে মেয়েটার মধ্যে।

মৃত্তিকা ফুঁপিয়ে উঠে বলে,
“মামের মাকে মা°রার সময় উনি প্রেগন্যান্ট ছিল, আর ওই লোকটা তাকেও তাহমিনার মতো…”

কথা শেষ হওয়ার আগেই ইমতিয়াজ ওর মাথাটা বুকে চেপে ধরে বলল,
“থামো প্লিজ, থামো।”

মৃত্তিকা থামলো। চুপ করে ইমতিয়াজের বুকে পড়ে রইলো। জীবন শেখাচ্ছে কিভাবে কষ্টিপাথরে ঘ°ষে সোনা চিনতে হয়, কিভাবে পু°ড়ে পু°ড়ে সোনা খাঁটি হয়। ইমতিয়াজও চোখ বন্ধ করে। কষ্ট হয়তো মাথায় নিয়েই জন্মেছে সে। জন্মের পর মা আর যৌবনের শুরুতে বাবাকে হারিয়ে জীবনে অনেক ধা°ক্কা খেয়েছে সে। স্ত্রী-সন্তানকে বাঁচাতে না পারার আ°ক্ষে°প যেমন আছে, তেমনি আজকে মৃত্তিকার প্রতিও সে অনুতপ্ত। শরীফ না থাকলে ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে খুব একটা সময় লাগতো না। ইমতিয়াজের হাতের বন্ধন আরো শক্ত হয়।

মৃত্তিকা ধীরে ধীরে উঠে বসে। ইমতিয়াজের দিকে তাকিয়ে বলল,
“প্রয়োজনে এ জীবন দিয়ে দিবো, তবুও তুমি ছাড়া আর কারো স্পর্শ আমার সহ্য হবে না।”

ইমতিয়াজ সোজা হয়ে বসে। ওর শার্টের বুকের কাছের বোতাম খুলে মৃত্তিকা ওর ঘন লোমে আবৃত বুকে হাত দেয়। এলোমেলো চুলের মেয়েটার আবেদনময়ী দৃষ্টি লক্ষ্য করে ইমতিয়াজ। মৃত্তিকার চুলগুলো মুখের উপর থেকে সরিয়ে দেয়। মৃত্তিকার হক আছে ওর উপর, এসব আবেদন সে করতেই পারে। তবে আপাতত ইমতিয়াজ তাতে সারা দিতে চাচ্ছে না।

মৃত্তিকাকে আবারো জড়িয়ে ধরে বলে,
“কিছুদিন সময় দাও, মৃত্তিকা।”

মৃত্তিকা কিছু বলার আগেই কলিং বেল বাজে। দুজনেই চমকে উঠে বসে। ইমতিয়াজ উঠে গিয়ে দরজা খুলে দেখে তানজিম, সাথে সামিহা আর মিউকো। মিউ মিউ করে ভিতরে চলে আসে সে। তানজিমের সাথে কথা বলতে বসে ইমতিয়াজ, বিষয় শাফিন।

সামিহা দৌড়ে মৃত্তিকার কাছে যায়৷ মৃত্তিকার জন্য কিছু উপহার এনেছে সে৷ একটা মাঝারি শপিং ব্যাগ মৃত্তিকার হাতে দিয়ে বলে,
“তোমার বিয়ের গিফট, তখন দিতে পারিনি তাই এখন দিলাম।”

মৃত্তিকা খুলে দেখে ভিতরে কাঁচের চুড়ি, হিজাব আর কয়েকটা ব্রুচ। মুখ টি°পে হাসে মৃত্তিকা। সামিহা ওর হাত ধরে বসে পড়ে।
______________________________________

কলেজ থেকে ফেরার পর সারাহ্ চুপচাপ আছে। সন্ধ্যা হয়ে গেছে, এখনো কোনো কথা নেই। সারাহ্ ভাবছে নিজের মায়ের কথা, মা কি লুকাচ্ছে? কেন লুকাচ্ছে?

ভেবেচিন্তে উপায় না পেয়ে মাকে কল করে সারাহ্। মা রিসিভ করতেই সারাহ্ কোনো সূচনা ছাড়াই বলে,
“মা, তোমাকে এতো মানুষজন কিভাবে চিনে? আর এরা আমার আশেপাশেই কেন ঘুরঘুর করে?”

নার্গিস পারভিনের হাতপা থ°রথ°র করে কাঁপতে লাগলো। মেয়ের কোনো ক্ষতি না হয়ে যায়, এই ভ°য়ে তার মন আনচান করতে শুরু করলো।

সারাহ্ হয়তো মায়ের অবস্থা বুঝেছে। শান্তভাবে বলল,
“কি লুকাচ্ছো আমার থেকে আম্মু?”

নার্গিস পারভিন নিরবে কাঁদলেন। অনেকক্ষণ চুপ থেকে তারপর বলে,
“কিছুই না। ওরা তোমাকে বা সামিহাকে চাইছে না, ওরা আমাকে চায়।”

সারাহ্-র চোখ কো°ট°র থেকে বের হয়ে আসার উপক্রম হয়। ভ°য় জড়ানো কন্ঠে বলে,
“কেন? কি চায় ওরা?”

নার্গিস পারভিন মাথা নেড়ে বলেন,
“তা আমি সঠিক জানি না। তবে রিপাকে যেমন ধোঁকায় ফেলে দেশে এনেছিল আর খু°ন করেছিল, সেভাবে আমাকেও করবে।”
“রিপা?”
“সরি, ভুল নাম বলেছি। ওর নাম রাহা।”

সবকিছু যা একটু গোছানো ছিল তাও পেঁচিয়ে গেল সারাহ্-র। নার্গিস পারভিন মেয়ের অস্থিরতা বুঝলেন।

সারাহ্-র মনে পড়ে আহনাফকে কিছুদিন আগে কোনো এক রাহা কল করেছিল। আহনাফ কি মাকে বলেনি? হয়তো বলেনি। যদি রাহা খু°ন হয়ে থাকে তবে আহনাফকে কে কল দিয়েছিল।

নার্গিস পারভিন আশেপাশে তাকিয়ে রুমের দরজা চাপিয়ে দিয়ে এসে বললেন,
“যা যা এখন বলবো তা মনোযোগ দিয়ে শুনো। কথার মাঝে কথা বলো না আর বেশি মানুষের মাঝে জানাজানি করো না। কারণ তাতে আরো কয়েকটা লা°শ পড়বে।”

সারাহ্ চমকে উঠে। আরো কয়েকটা লা°শ পড়বে মানে কি? এর আগে কার লা°শ পড়েছে?

“রাহা আমার ফ্রেন্ড, ওর নাম রিপা করেছিল ওর চাচি অরফে পালিত মা। ওর বাবা মায়ের কথা ও জেনেছিল, তাদেরকে নির্মমভাবে হ°ত্যা করেছিল তাদেরই ভাই আর ভাবি। যদিও এসব সে অনেক পড়ে জানতে পারে। কলেজ লাইফে আমার অন্য দুই ফ্রেন্ড পর পর দুই সপ্তাহে আ°ত্ম°হ°ত্যা করেছিল, তবে সেটা আ°ত্ম°হ°ত্যা না খু°ন ছিল। খু°নটা করেছিল রিপার ভাই শাফিন। আমার ওই দুজন ফ্রেন্ড তখন প্রেগন্যান্ট ছিল, (একটু থামে) শাফিন প্রেগন্যান্ট মেয়েদের প্রথমে (আবারো থামে) রে°প করে তারপর খু°ন। ইয়াং বয়সে সে এসব করে বেড়াতো। রিপা এসব জেনেছিল, তবে শাফিন আর তার মায়ের ভ°য়ে চুপ ছিল। দশ দশটা বছর পর আমাকে এসব জানিয়েছে। তবে (লম্বা একটা বিরতি নেয়) তবে তার আগে রিপা যখন প্রথমবারের মতো প্রেগন্যান্ট হয় তখন শাফিন ওকে কলেজের রুমে আটকে রেখেছিল। আর ওকেও…”

নার্গিস পারভিন কান্না করে দেন। সারাহ্ নির্বিকার হয়ে জিজ্ঞাসা করে,
“কি হয়েছিল উনার?”

কিছুক্ষণ পর কান্না থামিয়ে শান্তভাবে বলেন,
“সেদিন আমি আর রোমি ওকে বাঁচিয়েছিলাম, তখন থেকেই আমরা শাফিনের নজরে চলে আসি। তোমার নানা এসব জানতে পেরেই দ্রুত আমার বিয়ে দেন। বিয়ের পর শাফিন আর আমাকে খুঁজে পায়নি বা খুঁজতে চায়নি। কিন্তু রিপা আর আমার সম্পর্ক টিকে থাকায় এতো বছর পর সে আমাকে খুঁজে নিয়েছে। কিসমত এতোই খারাপ যে আমার মেয়েদের দিকেই তার নজর গেছে।”

সারাহ্-র হাত থেকে ফোনটা পড়ে যায়। নিজের পেটে হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে। জমে থাকা অশ্রুতে সিক্ত হয় ওর কপোল। মায়ের কথাগুলো এখনো তার কানে ক্রমাগত বেজে চলেছে। প্রতি°শো°ধ°পরায়ণ একজন মানুষ প্রতি°শো°ধের স্পৃ°হায় এখন কি ওর সন্তানকেও শেষ করে দিবে?

ফোনের ওপাশে নার্গিস পারভিন বারবার মেয়েকে ডাকছেন,
“সারাহ্, মা আমার। কথা শুনো মা।”

নার্গিস পারভিনের কথা শেষ হয় না, কিন্তু সারাহ্ আর শুনে না। ফোনটাও তুলে না। বিছানা থেকে উঠে গিয়ে দাঁড়ালো আয়নার সামনে। মা ডাকটা শুনতে পারবে তো সে? আধো আধো কন্ঠে কেউ মা ডাকবে, ছোট হাতগুলো ওর আঙ্গুলকে ধরে রাখবে। আসবে তো সেই দিন?

“ঐশী?”

সারাহ্ দ্রুত চোখ মুছে ফেললেও আহনাফ ঠিকই ওর কান্না ভেজা মুখটা দেখে ফেলে। আহনাফ এগিয়ে এসে বলল,
“কাঁদছো কেন? শরীর খারাপ লাগছে?”

সারাহ্ নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরে বসে পড়ে। একটু জোরেসোরে বলতে থাকে,
“আমি ম°রে যাবো আহনাফ, আমার বেবিকে মে°রে ফেলবে ওরা।”

আহনাফ ওকে উঠিয়ে বিছানায় বসায়৷ চোখ মুছে দিয়ে বলল,
“হুশ, এসব বলে না। বলে না। কারা মা°রবে? আমি আছি না, ভ°য় নেই।”

আহনাফ ওর ঠোঁটে হালকা চুম্বন করে। সারাহ্-র কান্নার বেগ কমে যায়। একটু শান্ত হয় সে।

“আহনাফ, আমি না থাকলে আপনি কি তাহসিনার মতো আমাকেও ভালোবাসবেন?”

আহনাফের জীবনের সবচেয়ে কঠিন প্রশ্ন বোধহয় এটাই। ‘আমি না থাকলে’ এই একটা কথা ওর বুকে ঘা°য়ে°ল করলো। সেই রিসোর্ট, সেই কান্না, কেউ র°ক্তা°ক্ত নিথর দেহগুলো। একে একে সবগুলো দৃশ্য আবারো জীবন্ত হয়ে উঠে। ভুলতে না পারা অসমাপ্ত গল্পের পুনরাবৃত্তি হলে তা মেনে নেয়া যায় না। আহনাফও পারবে না আর মেনে নিতে।
______________________________________

তিনদিন পর, অফিসে আজ সন্ধ্যায় এক অনুষ্ঠান আছে। ঘটনা খুবই সাধারণ, বায়ারদের সামনে প্রমোশনপ্রাপ্ত কয়েকজনকে সম্মানিত করা আর শ্রমিক অ°সন্তোষ নেই এটাই প্রমাণ করা। এই পরিকল্পনা শরীফের, মৃত্তিকার মত নেই তবে ইমতিয়াজ অনুমতি দিয়ে দিয়েছে।

ইমতিয়াজের ইচ্ছায় তৈরি হচ্ছে মৃত্তিকা। হাফ সিল্কের শাড়ির সাথে হিজাব আর হালকা মেকআপ। সামিহার দেয়া চুড়িগুলো বের করে পড়ছে, এরমধ্যে কয়েকবার ইমতিয়াজ এসে তাড়া দিয়ে গেল। মৃত্তিকা দ্রুত গতিতে তৈরি হয়।

সামিহার দেয়া চুড়িগুলো মৃত্তিকার হাতের তুলনায় বড় হলো। একে তো সিল্কের শাড়ি আবার এতো বড় বড় চুড়ি। এগুলো ঠিক করতে করতে বাইরে এসে ইমতিয়াজকে বলল,
“আমাকে ঠিকঠাক লাগছে?”

ইমতিয়াজ ফোন স্ক্রল করছিল। ফোন থেকে চোখ সরিয়ে মৃত্তিকাকে দেখে থমকে গেল। এ কোন মৃত্তিকাকে দেখছে সে। ইমতিয়াজকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে মৃত্তিকা লজ্জায় পড়ে গেল। ইমতিয়াজের এমন দৃষ্টি ওর অচেনা।

মৃত্তিকা মৃদুস্বরে বলল,
“শুনুন, আমি কি পালটে ফেলবো?”

ইমতিয়াজ ওর দিকে এগিয়ে এলো। হিজাবের ব্রুচটা সোজা করে দিয়ে আবারো তাকালো ওর মুখের দিকে। লাজুকতায় ছেড়ে গেল মৃত্তিকা। কিছু বলতে নিলে ইমতিয়াজ ওর ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে বলল,
“চুপ, সারাদিন এতো বকবক করো কেন?”

মাথানিচু করে ফেলল মৃত্তিকা, আড়চোখে তাকালো বেসিনের উপরে থাকা আয়নার দিকে। ইমতিয়াজের দৃষ্টি এখনো ওর দিকে নিবদ্ধ। ওমা, দেরি হচ্ছে না ওদের?

ইমতিয়াজ ওর যতকাছে আসছে ততই হৃদপিণ্ডের গতি বাড়ছে, ওষ্ঠদ্বয় কেঁপে কেঁপে উঠছে। আবারো সে ইমতিয়াজের ছোঁয়া পেতে উন্মাদ হচ্ছে। চোখ বন্ধ করলো সে।

হুট করে ইমতিয়াজ সরে গেল। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে চোখে পরপর কয়েকবার পলক ফেলে দ্রুত বলল,
“তাড়াতাড়ি চলো, দেরি হচ্ছে তো।”

মৃত্তিকা চোখ খুলে ইমতিয়াজকে আর দেখলো না। সে ততক্ষণে বেরিয়ে গেছে। এতোকাছে এসেও ভালোবাসা না পাওয়ার আ°ক্ষে°পগুলো ওকে প্রতিনিয়ত পো°ড়া°চ্ছে।
______________________________________

“কোথায় যাবে দুলাল?”

দুলাল ফেরদৌসী অফিস পার্টিতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। কারো কথা শুনে পিছনে ফিরে দেখলো শাফিন। দুলাল টাই বেঁধে বলে,
“তোমার তাতে কি?”

দুলাল আর শাফিনের মধ্যে অনেক কথা কা°টাকা°টি হয়েছে। মূলত ইমতিয়াজকে সবটা বলে দেয়াই প্রধান কারণ। শাফিন এসে দুলালের শরীরে পারফিউম দিয়ে বলল,
“রাগ করো না। আমি তোমার জন্য গিফট এনেছি।”

ব্যাগ থেকে একটা কাঁচের বোতল বের করে তার দিকে এগিয়ে দিলো। বোঝা যাচ্ছে এতে পারফিউম আছে। মুখ খুলে পুরো বোতল দুলালের গায়ে ঢেলে দিলো শাফিন। দেরি না করে ঝটপট পকেট থেকে গ্যাস লাইট বের করে শরীরে আ°গু°ন লাগিয়ে দেয়।

তারপর সে দ্রুত ফ্ল্যাট ত্যাগ করে। গ্যাস সিলিন্ডারের মুখটা আগেই শাফিন খুলে ফেলেছে, দুলালের স্ত্রীকে ড্রইংরুমে বেঁধে রেখেছে। কিছুক্ষণ পরই সিলিন্ডার বি°স্ফো°রণ ঘটে, শাফিন শ°য়°তা°নি হাসি দিয়ে স্থান ত্যাগ করে। খবরে হেডলাইন হবে, সিলিন্ডার বি°স্ফো°রণে মা°রা গেছে শিল্পপতি দুলাল ফেরদৌসী ও তার স্ত্রী।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here