অনুভূতিরা_শব্দহীন লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী চতুঃচত্বারিংশ পর্ব (৪৪ পর্ব)

0
333

#অনুভূতিরা_শব্দহীন
লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী

চতুঃচত্বারিংশ পর্ব (৪৪ পর্ব)

লুৎফর রহমান ও মমতাজ বেগম ইমতিয়াজের বাসায় এসেছে, তানজিম আসেনি। এটুকু পর্যন্ত মৃত্তিকা খুশি থাকলেও শরীফ বাসায় আসার সে আর খুশি থাকতে পারলো না।

ড্রইংরুমে সকলের সাথে শরীফ বসেছে। মৃত্তিকা সকলের হাতে শরবত দিয়ে শরীফের গ্লাসটা টেবিলে রেখে চলে আসে।

রুমে এসেই ইমতিয়াজকে বলে,
“এই লোকটাকে খবর না দিলে হতো না?”

ইমতিয়াজ স্বাভাবিকভাবে জবাব দেয়,
“আরে, আজ ঈদের দিন। শশুর উনি, তো দাওয়াত দিতে হবে না?”

মৃত্তিকা কি°ড়মি°ড় করে উঠে,
“আপনার এসব শশুর-জামাই নাটক বন্ধ করেন।”

ইমতিয়াজ শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে বলল,
“কিসের নাটক? আমার কথাবার্তা কাজকর্ম কি তোমার কাছে নাটক মনে হয়?”

“এরচেয়ে কম কি?”
ইমতিয়াজের পা থেকে মাথা অব্দি দেখে বেশ গরম সুরে কথাটা বলে মৃত্তিকা চলে যায়। ইমতিয়াজ বুঝতে পারে চিঠির বিষয়টা নিয়ে মৃত্তিকার আচরণে পরিবর্তন এসেছে।

সুরভির ছেলের নাম রাখা হয়েছে রাইদ। সুরভি ছেলেকে কোলে নিয়ে ড্রইংরুমে আসে। সুরভির থেকে চেয়ে রাইদকে কোলে নেয় শরীফ।

মৃত্তিকা তা দেখে সুরভিকে বলে,
“এই মানুষের কাছ থেকে ছেলেকে দূরে রাখো। না হলে তার মতই হয়ে যাবে।”

শরীফ মৃত্তিকার দিকে তাকায়। মৃত্তিকার তেমন একটা হেলদুল হলো না। সে কথা শেষ করে চুপচাপ চলে গেল। শরীফ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
______________________________________

“চল আজ আমাদের বাসায় লাঞ্চ করবি।”

সামিহার কথায় তানজিম অল্প হেসে বলে,
“আজ না, আজ ইমতিয়াজ ভাইয়ার বাসায় যেতে হবে।”

সামিহার একটু মন খারাপ হলো।
“ওহ, কখনো তো আসিস না। ভাবলাম আজ আসবি।”
“আসবো একদিন, তবে আজ না।”
“ওকে, দেখব কবে আসিস।”

সামিহাকে বিদায় জানিয়ে তানজিম ফিরে হাঁটতে শুরু করার সময় রাস্তার অপরপাশে ওর সাথে সাথে হাঁটতে থাকা অপরূপার দিকে নজর যায়। টিএসসি থেকে মেয়েটা তাদেরকে অনুসরণ করছে। তানজিম খেয়াল করেছে, তবে নিশ্চুপ ছিল। তবে এবারে আর সে শান্ত থাকতে পারেনা।

রাস্তা পেরিয়ে অপরপাশে গিয়ে অপরূপা হাত ধরে বলে,
“কি সমস্যা? আপনি কখন থেকে আমাদের অনুসরণ করছেন, আবার আমাদের ছবিও তুলেছেন। কেন?”

তানজিমের গ°মগ°মে সুরের কথা শুনে অপরূপা ঘাবড়ে যায় না, বরং হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বেশ শান্ত সুরে বলল,
“ওমা, আমি কেন আপনাদের ফলো করবো? আমি তো ঘুরতে বেরিয়েছি।”
“তাই বলে আমাদের পিছুপিছু?”

অপরূপা মৃদু হাসে। কপালের চুলগুলো সরিয়ে বেশ ভাব রেখে বলল,
“আমার ঘুরা আমি ঘুরছি। এখন তা যদি আপনার পিছুপিছু হয়ে যায়, তাতে তো আমার কোনো দোষ নেই।”

তানজিম রেগে গিয়ে অপরূপার গালে একটা চ°ড় বসিয়ে দেয়। হাত সরানোর আগে অপরূপা কান থেকে ব্লুটুথ খুলে নিয়ে নেয়। আশেপাশে লোক জড়ো হয়ে গেল। লোকজন দেখেছে একটা ছেলে একটা মেয়েকে মে°রেছে। খুব স্বাভাবিক একটা বিষয় যে সবাই মেয়েটার পক্ষ নিবে। বিষয়টা হলোও তাই।

তানজিম লোকের কথায় খুব একটা মাথা না ঘামিয়ে স্থান ত্যাগ করে। একটু সরে এসে কানে ব্লুটুথটা লাগাতেই অপর পাশের মমতাজ বেগমের কন্ঠ শুনতে পায়। বেশ শান্ত শুনে উনি বলেন,
“তানজিম কি আছে না চলে গেছে? এত শো°রগো°ল কেন? অপরূপা?”

মায়ের কন্ঠ একবারেই বুঝে যায় তানজিম। দাঁতে দাঁত ঘ°ষে নিজেকে শান্ত রাখে। জবাব না পেয়ে মমতাজ বেগম বলেন,
“আমি মৃত্তিকার বাসায় আছি৷ বেশি কথা বলতে পারব না। জলদি বলো তানজিম গিয়েছে কিনা?”

“আমাকে কেন ফলো করছে মেয়েটা? মা, তাও তুমি তা আমাকে জানতে দিতে চাচ্ছো না।”
“তানজিম?”
অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করেন মমতাজ বেগম।

তানজিম নির্বিকার ভাবে জবাব দেয়,
“হ্যাঁ, আমি তানজিম।”

একটু দূরে দাঁড়ানো অপরূপা কল কেটে দেয়৷ দৌড়ে এসে তানজিমের কাছ থেকে ব্লুটুথটা নিয়ে বলে,
“মামাকে চিনেছো, মাকে না।”

তানজিম কপাল কুঁচকায়, তবে কি মাও একই কাজে জড়িত। বুকে হাত দেয় তানজিম। অস্ফুট স্বরে বলল,
“মা, এসব সত্যি করো না।”

অপরূপা চলে যেতে নিলে তানজিম তাকে বলে,
“আমাকে কি বলা যাবে পুরো ঘটনা?”

অপরূপা হেসে বলল,
“অবশ্যই, তবে তোমার মা বলবে। আমি শুধু ব্যবস্থা করে দিতে পারি।”
“তবে তাই করুন।”

অপরূপা রহস্যজনকভাবে হাসলো। তারপর বলল,
“এসো।”

তানজিম সরল মনে ভেবেছে অপরূপা সত্যি ব্যবস্থা করবে৷ অথচ বিষয়টি তা হলোই না। অপরূপা তাকে গলির ভিতরে নিয়ে এলো, এরপর নিজের লোকজন দিয়ে তানজিমকে আচমকা মা°রতে শুরু করলো। তানজিম চারজন বিশালদেহী লোকের সাথে পেরে উঠে না, তা সম্ভবও নয়।

আহত তানজিম রাস্তায় মুখ থু°ব°ড়ে পড়লে অপরূপা ওর সামনে এসে হাঁটু গেড়ে বসে বলল,
“দোয়া করো তানজিম, দোয়া করো। এমন মা যেন তোমার শত্রুরও না জোটে। (একটু হেসে) তোমার ভালোবাসা কাজে লাগিয়ে সামিহার ক্ষতি করতে চেয়েছিল। মায়ের নিরীহ মুখের আড়ালের শ°য়°তানকে তুমি চেনোই না।”

তানজিম রাগে রাস্তায় হাত দিয়ে দুইটা চা°প°ড় দেয়৷ ধুলো উড়ে, কিন্তু তানজিম উঠতে পারে না। অপরূপা তানজিমের পকেট থেকে ফোন বের করে তানজিমের হাত টেনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে আনলক করলো। তার কল লাগায় মৃত্তিকাকে৷

মৃত্তিকা রিসিভ করেই ধম°ক দেয়,
“কিরে তানজিম? কই তুই?”

অপরূপা ভ্রূ উঁচিয়ে তানজিমের দিকে তাকিয়ে বলল,
“সামিহার বাসার কাছে রাস্তায় পড়ে আছে, এসে নিয়ে যাও।”
“তুমি কে?”
মৃত্তিকা ঘাবড়ে গিয়ে প্রশ্ন করলো।

অপরূপা হেসে বলল,
“এক রহস্যে ভরা রূপকথা আমি।”

কল কে°টে ফোন ফেলে দিয়ে অপরূপা উঠে চলে যায়। যেতে যেতে বলে,
“মাকে বলে দিও, অপরূপাকে একটা চ°ড় মা°রায় অপরূপা তোমার এই হাল করেছে।”

তানজিম ধীরে ধীরে এগিয়ে বসতে চেয়ে আবারো পড়ে যায়। পায়ের দিকে আর হাতে বেশি মেরেছে। মনে সাহস এনে আবারো উঠতে চায়, পারে না। উপায় না পেয়ে ফোন বের করে সামিহাকে কল দেয়।

“হ্যালো।”
“সামি, তোদের বাসার পাশে যে ছোট গলিটা ওখানে একটু আয়।”

তানজিমের কন্ঠ শুনেই বোঝা যাচ্ছে সে ভালো নেই। ফোন ফেলে ছুটে যায় সামিহা। গলির ভিতর এসেই তানজিমকে দেখে সে।

“তানজিম, কি হয়েছে তোর?”

ওকে ধরে টেনে তুলে সামিহা। তানজিমের শরীরের ভার নিতে কষ্ট হয় সামিহার৷ তবুও চেষ্টা করে প্রাণপণে।

তানজিমকে নিয়ে বাসার গ্যারেজে বসিয়ে দারোয়ান সজীবকে বলে,
“আংকেল, একটু পানি আনেন প্লিজ।”
“হ্যাঁ মা, আনছি।”

তানজিম সামিহার দিকে তাকায়। সেই ওকে সামিহার সাহায্যেই প্রয়োজন হলো, আর ওকে দিয়েই সামিহার ক্ষতি করাতে চেয়েছে মমতাজ বেগম।
______________________________________

দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পর বাইরে বের হয়েছে সারাহ্, আহনাফ ও আব্বাস সাহেব। গন্তব্য খুব একটা দূরে নয়, আহনাফদের গ্রামের বাড়ি। কুমিল্লা শহর থেকে একটু দূরে সাহেবাবাদে৷

সিএনজি একদম বাড়ির উঠান পর্যন্ত গেল। সারাহ্ নেমে দাঁড়িয়ে আশপাশটা দেখে। একটা একতলা ছাদ করা বাড়ি, মোটামুটি পুরোনো বাড়িটা৷ বাড়ি সামনে উঠান আর ডানদিকে ছোট বাগান। পাতা জমে পড়ে আছে একপাশে৷ কাকে দিয়ে যেন আব্বাস সাহেব এটা পরিষ্কার করিয়েছেন।

আব্বাস সাহেব আহনাফকে বলেন,
“তোমার ঝুমা চাচী আছে না? উনাকে বলেছিলাম কাউকে দিয়ে পরিষ্কার করাতে, করিয়ে রেখেছে।”

আহনাফ হাসি হাসি মুখে বলল,
“ভালো হয়েছে। চলো।”

সবাই ভিতরে গেল। আহনাফ ব্যাগগুলো রেখে সারাহ্-কে বলে,
“এইতো বাড়ি, সুন্দর না? এই গ্রামের ফার্স্ট বিল্ডিং তুলেছিলো বাবা। এযুগের নয়।”

সারাহ্ আলতো করে হাসে। আব্বাস সাহেব হাসতে হাসতে অন্যমনস্ক হয়ে যান, উনার মনে পড়ে স্ত্রী রোজার স্মৃ°তি। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভিতরে নিজের রুমে চলে যায়। উনার মন খারাপ বা দীর্ঘশ্বাস কেউ খেয়াল করে না, উনি চায় না কেউ দেখুক। উনার রোজাকে উনি মনে করবেন, কষ্ট পাবেন, হাসবেন, স্মৃ°তির পাতায় দৌড়ে বেড়াবেন। এসব উনার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়, কেউ এসব জানবে না।

সারাহ্ ঘুরে ঘুরে প্রতিটা রুম দেখছে৷ আহনাফ ওর কৌতুহলটা দেখে হাসে।

“ঐশী?”
“জি।”

সারাহ্ না তাকিয়েই জবাব দেয়। আহনাফ বলে,
“ছাদে যাবে?”
“হ্যাঁ।”

আহনাফ ওকে সিঁড়ির কাছে নিয়ে যায়। সারাহ্ পা বাড়ালে ওকে পাঁজা কোলে তুলে ছাদে নিয়ে আসে। সারাহ্ চুপটি করে গলা জড়িয়ে থাকে।

ছাদে পুরো ময়লা রয়েছে। আহনাফ আফসোস করে বলে,
“এটা কি কেউ পরিষ্কার করতে পারেনি? ওফ।”
“হইছে।”

সারাহ্ ছাদের একপাশে গিয়ে দাঁড়ালো। অনেকদূর পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। আহনাফ ওর পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। সারাহ্-কে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলে সারাহ্ ওর বুকে মাথা রেখে বলে,
“আমরা এখানে কিছুদিন থাকি, কলেজ খুললেও এখানে থাকি প্লিজ৷ এখান থেকে গিয়ে ক্লাস করবেন।”

আহনাফ ওর মাথায় চুম্বন করে বলল,
“আচ্ছা থাকো। তোমার যতদিন ইচ্ছা থাকো।”
______________________________________

তানজিমকে বাসায় নিয়ে এসেছে মৃত্তিকা আর ইমতিয়াজ। এখন তানজিমের একপাশে মৃত্তিকা বসে আছে, অন্যপাশে সামিহা। তানজিম অপরূপার কথাটা দুজনকে জানালেও কৌশলে মায়ের কথাটা এড়িয়ে যায়। একটা মেয়ে তাদের ফলো করেছে এবং কোনো কারণ ছাড়াই তাকে লোক দিয়ে মে°রেছে, ব্যস এটুকুই বলেছে।

মৃত্তিকা একটু চিন্তায় পড়ে। শাফিন এসব করাচ্ছে এতে সে শিউর, তবে এখন তানজিমের পিছু পড়েছে। মৃত্তিকার মনে পড়ে স্টোররুম থেকে পাওয়া সামিহার ফ্যামিলি ফটোর কথা, তবে কি সামিহার জন্য কোনো বিপদ? মৃত্তিকা তাকায় সামিহার দিকে।

সামিহা খুব শান্ত হয়ে তানজিমের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর দৃষ্টি বোঝাচ্ছে এই মানুষটা তানজিমকে কতটা চায়, কতটা ভালোবাসে৷ মৃত্তিকা মুখ টি°পে হাসে, সাথে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এ ভালোবাসাই না সামিহার জীবনের কাল হয়।

“সামিহাকে চলে যেতে বলো আপু। আংকেল চিন্তা করবে।”

মৃত্তিকা ঘড়ি দেখে বলল,
“হ্যাঁ, সামিহা৷ তুমি চলে যাও বরং। ইমতিয়াজ পৌঁছে দিয়ে আসবে।”

সামিহা গাল ফুলিয়ে বলল,
“কারো যাওয়া লাগবে না। যখন প্রয়োজন হয়, তখন (ব্য°ঙ্গ করে) সামি একটু আয়। আর প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে ফুড়ুৎ।”

সামিহা হনহনিয়ে চলে যায়। তানজিম হেসে মাথা নাড়ে৷ সামিহার এই বাচ্চামোগুলো তার ভালো লাগে। তবে মায়ের বিষয়টা মনে পড়তেই গম্ভীর হয়ে যায় সে।

দুইদিন পার হয়, তানজিম শারীরিকভাবে কিছুটা ভালো হলেও মানসিক অবস্থা একেবারেই খারাপ। মায়ের সাথে কোনো কথা নেই তার। কেমন যেন গু°মরে আছে।

বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মমতাজ বেগম ওকে ডেকে বলে,
“খেয়ে যাও।”

তানজিম কিছু না বলে বেরিয়ে যায়৷ মৃত্তিকার সাথে দেখা করতে এসেছে। অপরূপার সেই কথা মামাকে চিনেছো, মাকে নয়। এর ব্যাখ্যা ওর চাই। ভ°য়ং°কর এক বাক্য।

বেইলি রোডের কাছে এক রেস্টুরেন্টে বসে মৃত্তিকাকে সেদিনের পুরো ঘটনা খুলে বলে তানজিম। সব শুনে মৃত্তিকা বলে,
“অনেক হয়েছে, এবারে আর নয়।”
“করবে কি তুমি?”

মৃত্তিকা তাকায় তানজিমের দিকে৷ তার মনে তো অন্যকিছুই চলছে। শাফিনকে শাফিনের টো°পেই ধরতে হবে৷

মৃত্তিকা হেসে বলল,
“যখন করবো তখন দেখবে৷ বড়মণিকে তুমি চোখে চোখে রাখো আর বেশি কথা বলো না। যে মা মেয়েদের মা°রতে পারে সে ছেলেকেও মা°রতে পারবে।”

এরমাঝেই মৃত্তিকার ফোনে একটা ম্যাসেজ আসে৷ ফোন কেঁপে উঠায় হাতে নিয়ে দেখে বাবার ম্যাসেজ,
“কাল সকালে আমার ফ্লাইট, মিটিং এর সিদ্ধান্ত আগে ভাগেই যেতে হবে। ভালো থেকো মা।”

মৃত্তিকা ম্যাসেজটা দেখে রেখে দেয়। বাবার প্রতি তার বিন্দুমাত্র ভালোবাসা নেই, এসবে তার কিছু যায় আসে না।

সে তানজিমকে জিজ্ঞাসা করে,
“মেয়েটার নাম কি?”
“অপরূপা।”
______________________________________

এখনো গ্রামের বাড়িতেই আছে সারাহ্, আহনাফ আর আব্বাস সাহেব। আনন্দ এখানেই সবচেয়ে বেশি। ভোরে মোরগের ডাকে ঘুম ভা°ঙা, নামাজের পর বাগানে ঘুরে বেড়ানো, পাখি দেখা। রাতে ঝিঁঝি পোকার ডাক আর ব্যাঙের ঘ্যাঙরঘ্যাঙ শব্দ। পুকুরে বর্শি ফেলে মাছ ধরা, কিংবা পুকুর ঘাটে দাঁড়িয়ে হাঁস গোনা। আনন্দ আছে সবকিছুতেই।

সারাহ্ খুশি, সারাদিন সে হাসতে থাকে। আহনাফ দেখে মুগ্ধ হয়ে।

সন্ধ্যায় আহনাফ বেরিয়ে গেছে নাস্তা কিনতে। সারাহ্-র ইচ্ছা হয়েছে বাইরের নাস্তা খাবে৷ আব্বাস সাহেব ঘরে নেই। সারাহ্ টেবিল সাজাচ্ছে।

দরজায় নক হয়। সারাহ্ জোরে বলল,
“খোলা আছে।”
“আমি জানি।”

দরজা ঠেলে ভিতরে আসে জামিল। সারাহ্ কন্ঠ শুনে ফিরে তাকিয়ে জামিলকে দেখে সরে যায়। পরিকল্পিত বিয়ের পিছনে জামিল আছে, শাফিনের সাথে জামিল মিলে ছিল। ছোট ছোট এই কয়েকটা কথা সারাহ্ জানে।

জামিল ভালো উদ্দেশ্যে এখানে আসেনি। মায়ের কথাগুলো মনে পড়ে। শাফিন কেমন মানুষ আর জামিল কেমন মানুষ তা ওর বোঝা হয়েছে। আর কোনো প্রশ্রয় শ°য়°তানকে দিবে না সে।

জামিল কিছু বলার আগেই চিনামাটির ফুলদানিটা নিয়ে তার মাথায় আ°ছ°ড়ে ফেলে সারাহ্। ভে°ঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায় সেটা। জামিল ওকে ধরতে গেলে ধা°ক্কা দিয়ে তাকে ফেলে দেয়। সারাহ্ জোরে নিশ্বাস ফেলে মাটিতে পড়ে যাওয়া জামিলের গ°লায় নিজের সর্বশক্তি দিয়ে পা ফেলে। জামিলের শ্বাস ব°ন্ধ হওয়ার জোগাড়।

সারাহ্ জোরে চেঁচিয়ে বলে,
“ইয়া আল্লাহ্।”

এমনসময়ই আহনাফ এসে ঘরে ঢুকে। সারাহ্ দৌড়ে এসে আহনাফের পিছনে দাঁড়িয়ে পড়ে। শার্টের হাতা খা°ম°চে ধরে লুকিয়ে যায়৷ এতোক্ষণের সাহসীকতাকে ব°লি দিয়েছে সে, এখন তাকে আহনাফ র°ক্ষা করবে।

আহনাফ ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল,
“পীপিলিকার পাখা গজায় ম°রি°বার তরে। বাসনা আজ তোমার নয়, আমার পূর্ণ হবে।”
“ওকে শাফিনের কাছেই নিয়ে যেতে এসেছি।”

আহনাফ ফিক করে হাসে। বলে,
“মেয়েটা একা ছিল, তাতেই টাচ অব্দি করতে পারোনি আর এখন তো আমি আছি।”

আহনাফ হুট করে চেঁচিয়ে বলে,
“আসতে বলো তোমার শাফিনকে। আমিও দেখবো সে আমার ঐশীর কি করতে পারে।”

সারাহ্ আহনাফের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। রাগে তার গলার পাশটা ঘনঘন কাঁপছে। সারাহ্ আহনাফের হাতটা জড়িয়ে ধরে। আহনাফ ওর দিকে তাকিয়ে হাত ছাড়িয়ে জামিলের দিকে এগিয়ে যায়।

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here