#অনুভূতিরা_শব্দহীন
লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী
ষট্ চত্বারিংশ পর্ব (৪৬ পর্ব)
অপরূপার পিছু পিছু যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত আসে মৃত্তিকা। এখানে অপরূপা গাড়ি থেকে নামে, দুজন লোকের সাথে কিছু একটা নিয়ে কথা হয় এবং তাদেরকে একটা ব্যাগ দেয়৷ সবকিছুই ফোনে ভিডিও করে মৃত্তিকা।
এ সুযোগে মৃত্তিকা নেমে ভাড়া মিটিয়ে একটা সিএনজি নিয়ে নেয়। একই গাড়ি বেশিক্ষণ পিছনে দেখলে সন্দেহ হতেই পারে।
অপরূপা এবারে একটা গলির ভিতর যায়। মৃত্তিকাও সিএনজি নিয়ে পিছু নেয়। কিছুক্ষণ পর সিএনজি ছেড়ে দিয়ে হেঁটে পিছু নেয়া শুরু করে। সরু গলি এবং খানাখন্দে ভর্তি রাস্তা হওয়ায় গাড়ি খুব ধীরে চলছে।
মৃত্তিকার পিছু নিতে খুব একটা কষ্ট হলো না। বেশ কিছুক্ষণ হেঁটে গিয়ে একটা বাসার সামনে গাড়িটা থামে। মৃত্তিকা কয়েক বিল্ডিং পরে একটা বাসার গেইটের কাছে দাঁড়িয়ে দেখে৷
অপরূপা ভিতরে চলে যায় আর ড্রাইভার গাড়িতেই থাকে। তারমানে অপরূপা আবারো বের হবে। আধঘন্টার মতো একই জায়গায় থাকে মৃত্তিকা, কিন্তু অপরূপার দেখা পায় না।
ফোনের কম্পন অনুভব করে চমকে উঠে মৃত্তিকা। ফোন বের করে ইমতিয়াজের নাম্বার দেখেও রিসিভ করে না। বাসায় গিয়েছে কিনা সেটা জানতেই বোধহয় কল করছে৷ একসময় কল কে°টে গেল। সঙ্গে সঙ্গেই ফোন সুইচ অফ করে দেয় সে।
“চলো, এখন সোজা বাসায় যাবো।”
অপরূপার কন্ঠ শুনে মৃত্তিকা ফোন থেকে চোখ সরিয়ে সেদিকে তাকায়। অপরূপা আবারো গাড়িতে উঠে পড়েছে। সে চলে গেলে মৃত্তিকা ভিতরে যায়।
দোতলা বাড়ির নিচতলা সম্পূর্ণ অন্ধকার। বাড়িটা হয়তো এখনো নির্মাণাধীন, বাইরের ইটের স্তুপ তো সে কথাই জানান দিচ্ছে। অন্ধকারে দেখতে অসুবিধা হওয়ায় ফোন অন করতে বের করার সময় একটা গো°ঙা°নির মতো শব্দ পায়। মৃত্তিকা চমকে উঠে, চোখ বড়বড় করে আশেপাশে তাকায়। এতোক্ষণে ওর চোখ অন্ধকারে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। আবছাভাবে একটা দরজা দেখে সে।
সাবধানে হেঁটে দরজার কাছে গিয়ে কান পাতে। কেউ ভিতরে গো°ঙা°চ্ছে। যতটুকু বুঝলো কোনো মেয়ে হবে৷ দরজায় তালা দেয়া আছে। মৃত্তিকার শরীরে লেগে তালা নড়ে শব্দ হয়৷
সিঁড়ির উপর থেকে কেউ বলে উঠে,
“কে?”
পুরুষ কন্ঠ, মৃত্তিকা সরে যায়। বাইরে থেকে নিয়ে আসা ইটটা হাতে শক্ত করে ধরে। কম বয়সী একটা লোক নেমে আসে। লোকটা এসেই লাইট জ্বালায়। মৃত্তিকা ইটটা নিজের পিছনে লুকিয়ে ফেলে।
লোকটা মৃত্তিকার দিকে একটা ক°ড়া বাক্য ছুড়ে বলল,
“কি সমস্যা? কি চাই?”
মৃত্তিকা কিছু বলার আগেই দরজার ওপার থেকে “উম, উম” কিছু শব্দ ভেসে আসে৷ লোকটা ধম°কের সুরে বলল,
“ওই চুপ।”
মৃত্তিকার দিকে ফিরে ওর পা থেকে মাথা অব্দি দেখে বলল,
“ম্যাম বেশ খুশিই হবেন।”
মৃত্তিকাকে ধরতে আসলে ইটটা দিয়ে লোকটার মাথায় আ°ঘাত করে। মাথা কপাল কে°টে ফেঁটে র°ক্ত পড়া শুরু হয়। পকেট হাতড়ে চাবি পায় সে। দরজা খুলেই সে একদফা হতভম্ব হয়ে যায়।
চারজন অল্পবয়সী মেয়ে হাতপা, মুখ বাধা অবস্থায় পড়ে আছে৷ তাদের এলোমেলো অর্ধ পোশাক জানান দিচ্ছে তাদের সাথে কি হয়েছে। গলায়, ঘাড়ে, বাহুতে আঘাতের চিহ্ন। কপাল, ঠোঁট ফুলে লাল হয়ে আছে।
মৃত্তিকা তাড়াতাড়ি করে জানলার পর্দা খুলে এনে মেয়েগুলোকে ঢেকে দেয়। একে একে ওদের হাত-পা, মুখ খুলে।
মেয়েগুলো সদ্য চোখে দেখা বিড়াল ছানার মতো ভ°য়ে কুঁচকে যেতে থাকে। মৃত্তিকা দরজার দিকে তাকিয়ে ওদেরকে জিজ্ঞাসা করে,
“ওই মেয়েটা কে? একটু আগে যে এসেছিল?”
মেয়েগুলো একজন আরেকজনের দিকে তাকায়। একজন মিনমিনে কন্ঠে বলে,
“অপরূপা।”
মৃত্তিকার আর কিছু বোঝার দরকার নেই। অপরূপা এসেছিল, তার মানে এসবের পেছনেও শাফিন আর মমতাজ বেগমেরই হাত আছে। তানজিম তো ওকে অপরূপার নামই বলেছিল।
মৃত্তিকা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“অপরূপা আজ আর আসবে?”
“জানা নেই, তবে কাল আসবে।”
মৃত্তিকা রশি নিয়ে বাইরে যায়৷ একটু আগের লোকটা মেঝেতে পড়ে আছে, তার হাতপা বেঁধে রেখে বলে,
“আর কেউ আছে এখানে?”
“আরেকজন থাকতে পারে।”
মৃত্তিকা আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে দেখে না। ভিতরে এসে দেখে মেয়েগুলো এতোক্ষণে আশপাশ থেকে নিজেদের পোশাক নিয়ে পড়ে ফেলেছে।
মৃত্তিকা বলে,
“চলো।”
চারজনকে নিয়েই সে বেরিয়ে আসে। দ্রুত গতিতে হাঁটতে হাঁটতে মৃত্তিকা বলে,
“কোথায় যাবে তোমরা?”
মেয়েগুলোর মধ্যে একজন মাথা নেড়ে বলল,
“বাসায় যাবো।”
“আগে আমার সাথে আসো।”
মৃত্তিকা ওদেরকে নিয়ে শরীফের বাসায় যায়৷ যাত্রাবাড়ী থেকে সিএনজি করেই চলে আসে। স্টোররুমের দরজা খুলে ভিতরে এনে বলল,
“আপাতত একটু এখানে বসো।”
ওদের জন্য হালকা নাস্তার ব্যবস্থা করে সে৷ বিস্কুট, পাউরুটি, কলা আর পানি। ব্যস, এটুকুই গো°গ্রা°সে গিলছে ওরা৷ মৃত্তিকা ওদের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ মনে পড়ে ইমতিয়াজ কল করেছিল।
ফোন অন করে কলব্যাক করে সে। সাথে সাথেই রিসিভ হয়। ইমতিয়াজ জোরে ধমক দিয়ে বলে,
“কোথায় আছো তুমি? কান্ডজ্ঞান কি আছে? ফোন অফ কেন?”
মৃত্তিকা একটু নিচুস্বরে বলল,
“সরি, নেটওয়ার্ক ছিল না বোধহয়।”
ইমতিয়াজ একটু শান্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করে,
“কোথায় আছো তুমি?”
“শপিংয়ে এসেছি।”
“ওকে, বাসায় ফিরে জানিয়ো।”
“হুম।”
মৃত্তিকা ফোন রাখে। ইমতিয়াজের ফোনে একটা ম্যাসেজ আসে,
“মিউকো যাত্রাবাড়ী থেকে ধানমন্ডি শরীফ স্যারের বাসায় এসেছে।”
নাম্বারটা শরীফের স্পা°ই ফাহাদের। ইমতিয়াজই তাকে মৃত্তিকার খেয়াল রাখতে বলেছিল। ম্যাসেজটা দেখে ইমতিয়াজ নিজে নিজেই বলে,
“আমাকে লুকিয়ে কি করছো তুমি মৃত্তিকা?”
______________________________________
সন্ধ্যা সাতটা বেজেছে। সারাদিনে আহনাফ একবারের জন্যও বাইরে যায়নি। শুধুমাত্র ওই বন্ধ রুমে গেছে আর বাইরে এসেছে। সকালে জামিল আর আহনাফের মধ্যে হওয়া সব কথাই সারাহ্ শুনেছে। শাফিন ঠিক কতটা জঘন্য কাজ করেছে তা সারাহ্-র ভাবতেও কষ্ট হচ্ছে। নিজের ভাগ্নির দিকে কেউ কিভাবে কু°দৃষ্টি দেয়?
সকালের পর সারাদিনে তাদেরকে আর কিছুই খেতে দেয়নি আহনাফ। সারাহ্ ওকে ভ°য়ে কিছু জিজ্ঞাসাও করেনি।
চা বানিয়ে এনে আহনাফের সামনে রেখে বলে,
“নাস্তা করে নিন।”
আহনাফ ওর দিকে তাকিয়ে বলল,
“তুমি খেয়েছো?”
“এইতো খাবো।”
সারাহ্ও চা এনে ওর সাথে বসে। আহনাফ আজ একটু চুপচাপ আছে। সারাহ্ ওর কাঁধে মাথা রেখে বলল,
“আজ এতো শান্ত কেন?”
আহনাফ একটু হেসে বলল,
“প্রতিদিন তো শান্ত থাকতেই বলো।”
সারাহ্ মাথা তুলে আহনাফের দিকে তাকায়। আহনাফ কেমন যেন অনুভূতিহীন হয়ে চায়ের কাপে চুমুক দেয়। সারাহ্ ওর গালে হাত দিয়ে বলে,
“আপনাকে শান্ত অবস্থায় আমার ভালো লাগে না।”
আহনাফ ওর দিকে তাকিয়ে ওর ওষ্ঠোধরকে আপন করে নিলো। সারাহ্ ওকে সরানোর চেষ্টা না করে বরং আরো কাছে নিয়ে আসে। প্রতি ছোঁয়ায় আহনাফ তাকে ক্রমেই পাগল করছে। সারাহ্-র হাত থেকে চায়ের কাপ পড়ে যায়, মাটির কাপটা শব্দ করে পড়ে ভে°ঙে যায়। দুজনে চমকে সরে আসে।
সারাহ্ ছটফট করে বলে,
“আমি পরিষ্কার করে দিচ্ছি।”
পাশের রুমে শব্দ হওয়ায় সারাহ্ থেমে যায়। আহনাফ উঠে সে রুমে যায়। গিয়েই দরজা বন্ধ করে সে। জামিল দরজায় ধা°ক্কা দিয়েছে বলেই শব্দটা হয়েছিল।
আহনাফ জামিলের বুকে লা°থি দিয়ে ফেলে বলল,
“কি সমস্যা?”
আহনাফ তার মুখের বাঁধন খুলে দেয়। জামিল বলে,
“আমি তো সব বলেছি। আমাকে তবুও কেন আ°টকে রেখেছো?”
আহনাফ ওর সামনে বসে বলল,
“সবটা তো বলোনি, বাবার প্রতি রাগ বুঝলাম। কিন্তু সারাহ্-র মায়ের সাথে কি? পুরোনো খু°নের রেশ? এটা তো হতে পারে না।”
“শাফিন সব করতে পারে।”
জামিলের নাকেমুখে জোরে থা°প্প°ড় দেয় আহনাফ। বলে,
“তোমার তার সাথে কি? তাহসিনার সাথে কি ছিল আর তাহমিনার সাথেই বা কি ছিল? রিপা আন্টি কি করেছিল?”
জামিল মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“শাফিনকেই জিজ্ঞাসা করে নাও।”
“কোথায় থাকে সে?”
জামিল ফিসফিস করে বলে,
“তোমার ঘাড়ের কাছে।”
মরিচের গুড়ার বক্সে এখনো কিছু অবশিষ্ট ছিল। আহনাফ রাগে সেখান থেকে এক খাবলা নিয়ে জামিলের চোখমুখে ছুড়ে ফেলে। জোর করে তার চোখ খুলে ভিতরে ঢু°কিয়ে দেয়৷ “আহ” করে চেঁচিয়ে উঠে সে।
আহনাফ তার মুখ জোর করে বেঁ°ধে দিয়ে বেরিয়ে আসে। আহনাফের হাত জ্বা°লাপো°ড়া করছে। ঠান্ডা পানি দিয়ে হাত ধুয়ে নেয় সে।
সারাহ্ ওর দিকে ভ°য়া°র্ত চোখে তাকিয়ে বলল,
“কি করেছেন ভিতরে?”
আহনাফ উত্তর দেয় না। সে ক্রমাগত হাত ধুয়ে চলেছে। রাগে তার মাথা কাজ করা থামিয়ে দিয়েছে।
______________________________________
রাত আটটায় বাসায় আসে ইমতিয়াজ। সদর দরজার উপরে একটা চিরকুট লাগানো।
“নিজের চাবি দিয়ে দরজা খুলেন, আর লাইট জ্বা°লানো যাবে না।”
ইমতিয়াজ একটু হেসে কাগজটা পকেটে নিয়ে দরজা খুলে। ভিতরে অন্ধকার, দরজা বন্ধ করতেই তা আরো গাঢ় হলো।
মৃত্তিকা টেবিলের উপর রাখা মোমবাতি জ্বা°লিয়ে দেয়। ইমতিয়াজ তাকায় ওর দিকে। বেনারসি শাড়ি পড়েছে, আঁচল দিয়ে ঘোমটা দিয়েছে সে। ঠোঁট গাঢ় লাল লিপস্টিক, চোখে মোটা কাজল। ইমতিয়াজ কাঁধের ব্যাগটা ফ্লোরে ফেলে দেয়। একটা ঢোক গিলে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়।
মৃত্তিকা ওর দিকে এগিয়ে এসে বলে,
“সারপ্রাইজটা কেমন হলো?”
ইমতিয়াজ ভ্রূ উঁচিয়ে জোরপূর্বক হাসে। মৃত্তিকাকে কি কি ব°কা দিবে তা ভাবতে ভাবতেই বাসায় এসেছে সে। অথচ এখন কথাই বলছে না।
মৃত্তিকা ওর গালে হাত দেয়। মৃত্তিকা কাছে এসে ইমতিয়াজের গলায় ঠোঁট ডু°বায়।
মৃত্তিকা ফিসফিস করে বলল,
“এ সাজ আপনার জন্য ইমতিয়াজ। সাজটা নষ্ট করে দিন না আজ?”
অমায়িক আবেদন, আবেদনময়ীর আবেদনে সারা না দিয়ে কি উপায় আছে?
______________________________________
ভোরে নামাজ শেষে আহনাফ কোরআন তেলাওয়াত করছে। সারাহ্ পাশেই শুয়ে আছে৷ ঘুমাবে ঘুমাবে করেও তার ঘুম হচ্ছে না। আহনাফ ওর মাথায় হাত বুলায়।
সারাহ্ নিচুস্বরে বলে,
“একটু জোরে পড়ুন, আমি শুনবো।”
আহনাফ হেসে একটু জোরে জোরে তেলাওয়াত শুরু করে। সারাহ্ মনোযোগ দেয়। কিছুক্ষণ পর আহনাফ কোরআন শরীফ রেখে উঠে যায়। সারাহ্ ঘাড় বাঁকিয়ে তাকিয়ে থাকে।
জামিলের রুমে আসে, সাথে সেই চারটা রুটি। জামিলের অবস্থা ভ°য়া°বহ। চোখে সে কিছুই দেখছে না। রাতে জ্ঞা°ন হারিয়েছিল, তবে পানি দেয়ার পরই জ্ঞা°ন ফিরেছে।
আহনাফ কল করে ডা. সৌহার্দ্যকে। জামিলের কথা জানালে সৌহার্দ্য তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসতে বলে। আহনাফ এখন তার হাতের বাঁ°ধন খুলে জো°র করে রুটি খাইয়ে দেয়। পরিচিত একজনের সিএনজি করে কুমিল্লা মিশন হাসপাতালে নিয়ে আসে।
ডা. সৌহার্দ্য তাকে দেখে। আহনাফ তাকে সত্যটা জানায় না। বলে,
“কোনো এক শ°ত্রু এ কাজ করেছে।”
আহনাফ সর্বক্ষণ সামনে দাঁড়িয়ে থাকায় জামিল কিছুই বলতে পারেনা। চুপচাপ তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই তার।
সৌহার্দ্য সব দেখে জানায়,
“ডানচোখ একেবারেই অ°কেজো হয়ে গেছে। শুধু মরিচ দেয়নি, এখানে জোরে প্রেশার দিয়েছে। ভর্তি করাও, দেখি কি করা যায়।”
“ভর্তি ছাড়া আর কোনো উপায়?”
“না, ভর্তি করিয়ে নাও। চিকিৎসা একটু লম্বা হবে এটার।”
আহনাফ জামিলের দিকে তাকায়। মাথানিচু করে জামিলকে বলল,
“শুধু শুধু টাকা খরচের কোনো মানে দেখি না।”
______________________________________
সকাল এগারোটা ত্রিশ মিনিট, আজ থেকে পুরোদমে অফিসের কাজে ব্যস্ত হয়েছে ইমতিয়াজ। মৃত্তিকাকেও নিয়ে এসেছে। তবে মৃত্তিকা কিছুক্ষণ আগেই বেরিয়ে গেছে। ইমতিয়াজ দেখেও চুপ ছিল, ফাহাদকে পিছনে পাঠিয়ে দিয়েছে।
মৃত্তিকার গন্তব্য যাত্রাবাড়ী, দুইঘন্টা পর এসে পৌঁছায়। রাস্তায় মাত্রাতিরিক্ত না হলেও মোটামুটি জ্যাম ছিল। গলির ভেতর প্রবেশ করতেই পেছনে ফাহাদকে খেয়াল করে মৃত্তিকা।
আজ মৃত্তিকা খালি হাতে আসেনি, শরীফের শোবার রুমের আলমারি থেকে পি°স্ত°লটা নিয়ে এসেছে। যদিও তা ওর ব্যাগে। পি°স্ত°ল চালাতে সে জানে না, তবে এটা দেখিয়ে যে ভ°য় দেখানো যাবে তা জানে।
বাসাটা কাছাকাছি এসে ফাহাদের দিকে পি°স্ত°ল তাক করে মৃত্তিকা। বলে,
“পিছু নিচ্ছো কেন?”
“আপনি কোথায় যান তা জানতে স্যার আমাকে পাঠিয়েছে।”
মৃত্তিকা পি°স্ত°লটা ব্যাগে রেখে বলল,
“দেখো তুমি আমার বাবার বেতনভুক্ত একজন কর্মচারী। সারা মাস আমাকে নজরবন্দী রেখে মাস শেষে কত টাকা বেতন পাও? দশ হাজার? বিশ হাজার? চল্লিশ হাজার? এর চেয়ে বেশি তো নয়?”
ফাহাদ ওর কথা ঠিকমতো বুঝে উঠতে পারে না। তবুও মাথা নাড়লো।
মৃত্তিকা হেসে বলে,
“বেতন দ্বিগুণ হবে। এক মাস আমার কথা মতো চলো, জাস্ট এক মাস। এই এক মাস তুমি তোমার স্যারকে আমার সম্পর্কে কোনো ইনফরমেশন দিতে পারবে না। রাজি?”
মৃত্তিকার অফারটা ভালো। ফাহাদের বেশ পছন্দ হয়। সে রাজি হয়ে যায়। মৃত্তিকা মাথা নেড়ে বলে,
“এখানেই কোথাও লুকিয়ে থাকো আর আমার ইশারার অপেক্ষা করো।”
কথা শেষে মৃত্তিকা বাসার ভিতরে প্রবেশ করে। গতকালকের সেই রুমে গিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে অপরূপার। সময় গড়ায়, বিকেল চারটা বেজে যায়। কিন্তু অপরূপা আসে না। মৃত্তিকা ধরে নেয় অপরূপা আজ আসবে না।
এমনসময় দরজা খুলে ভেতরে আছে অপরূপা। মেয়েগুলো কেউ নেই, অপরূপা অবাক হয়। চোখ বড়বড় করে তাকায় সামনে বসে থাকা মৃত্তিকার দিকে। মৃত্তিকা শব্দ করে হেসে ওঠে বলে,
“গেম ইজ ওভার।”
চলবে….