অনুভূতিরা_শব্দহীন লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী একপঞ্চাশৎ পর্ব (৫১ পর্ব)

0
358

#অনুভূতিরা_শব্দহীন
লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী

একপঞ্চাশৎ পর্ব (৫১ পর্ব)

অপরূপার মুখের সামনে সুই সুতা ঝুলিয়ে রেখে মৃত্তিকা বলে,
“জীবনের সবচেয়ে বড় কষ্ট আজ তুমি পাবে৷ যে রূপের অ°হং°কার তোমার এতোদিন ছিল, তা শেষ করবো আমি।”

বড় সুইটা অপরূপার দুই ঠোঁটে ঢু°কিয়ে দিয়েছে মৃত্তিকা। অপরূপার ঠোঁট ক্রমাগত কাঁপছে, প্রচুর ভ°য় পেয়েছে। ফোঁটায় ফোঁটায় রক্ত পড়া শুরু করেছে। কিছুক্ষণ পর মৃত্তিকা আবারো সুইটা বের করে নেয়। অপরূপা হাফ ছেড়ে বাঁচে।

রান্নাঘর থেকে খুন্তি এনে তা অপরূপার মুখে ঢুকিয়ে জোর করে মুখ হা করায় মৃত্তিকা। তারপর ওর ডান গালে সুই ঢু°কিয়ে দিয়ে বলে,
“এভাবে হা করে থাকবে, মুখ বন্ধ করলে এই সুই তোমার জিহ্বা চি°ড়ে দেবে। না তুমি তোমার মুখ বন্ধ করতে পারবে, আর না তুমি তোমার জিহ্বা নাড়তে পারবে। আপাতত এটাই তোমার শা°স্তি। পরে তোমাকে পাকাপাকি কিছু একটা ভেবে দেখবো।”

অপরূপাকে ভ°য়ং°কর দেখা যাচ্ছে। কপালে ক্ষ°তের চিহ্ন, গালে সুই ঢু°কানো, ঠোঁটে ক্ষ°ত, গলায় পো°ড়া দাগ।

উঠে আসার সময় মৃত্তিকা বলে,
“ডাক্তার আরিফাকে কিভাবে খুঁজে বের করতে হবে তা আমি ভালো করে জানি। সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুলকে একটু বাঁকা করতে হয়।”

মৃত্তিকা বাইরে এসে দোকান থেকে অনেকগুলো ঘুমের ওষুধ কিনে নেয়। তারপর এগুলো নিয়ে বাসায় চলে আসে।

ইমতিয়াজ এখনো অফিসে আছে। তাই এর মতো সুযোগ আর পাওয়া যাবে না। মৃত্তিকা সবগুলো ওষুধ খুলে ব্লেন্ডারের গুঁড়ো করার জারে নিয়ে নেয়। সুন্দর মতো গুঁড়ো করে সবগুলোকে একটা বক্সে নেয়।

বক্সটা ব্যাগে ঢুকিয়ে নিজে নিজেই বলে,
“ডাক্তার আরিফা, তৈরি হয়ে যান।”
______________________________________

দুপুরের খাওয়া দাওয়ার পর সারাহ্ বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। এখনো সে ডা. আরিফার এই চাহনির কথাই স্ম°রণ করছে। ওর মা ওকে যা যা বলেছে, তার অর্থ করলে এতো বছর পর শাফিন ওর পিছু নেওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। শ°ত্রু°তার পরিসর আরো অনেক বড়, যা মা ওকে বলেনি নাকি তাহসিনার সাথে আহনাফের সম্পৃক্ততা থেকে সারাহ্-র পিছু করা?

“ঐশী?”

ডাক শুনে পিছন ফিরে আহনাফকে দেখে মুচকি হাসে সারাহ্। তারপর বলে,
“আজ বোধহয় একটু দেরি হয়েছে।”

আহনাফ মাথা নেড়ে বলল,
“হ্যাঁ, একটু দেরি হয়েছে।”

সারাহ্ হুট করে আবারো চুপ হয়ে যায়। আহনাফ বলে,
“তুমি কি কোনো বিষয় চিন্তিত?”

সারাহ্ বোধহয় ওর কথা শুনেনি। সে এক দৃষ্টিতে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আহনাফ এসে ওর পাশে দাঁড়ায়। আলতো করে ডাকে,
“ঐশী।”

সারাহ্ চমকে উঠে বলল,
“জি।”
“কি চিন্তা করছো?”

সারাহ্ আবারো আকাশের দিকে তাকিয়ে দুহাতে বারান্দার রেলিং ধরে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“মা আমাদের সাথে মিথ্যা বলছে নাকি অন্য কারণে শাফিন আমার পিছু করছে? বুঝতে পারছি না আমি।”

“তুমি কি করে বলছো যে মা মিথ্যা বলেছে?”

“আজ ডাক্তার আরিফাকে দেখেছিলাম। রাস্তায়, এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল।”

আহনাফ কপাল কুঁচকে বলল,
“ডাক্তার আরিফা কে?”

সারাহ্ ওর দিকে তাকায়। একটু অবাক হয়ে বলে,
“আপনি চেনেন না? কলেজে এসেছিল যে সাইক্রিয়াটিস্ট আরিফা।”

আহনাফ একটু ভেবে বলে,
“সে তো অনেক আগে।”
“হ্যাঁ, সেদিন উনি সেশনের মাঝখানে আমাকে বলেছিল আপনার মা কেমন আছেন, আবার উনি আমাদের বেবির কথা জানতেন।”

আহনাফ চিন্তায় পড়ে যায়। এখন তো জামিলও নেই যে জানতে পারবে ডাক্তার আরিফা আসলে কে? নিজের চিন্তা গোপন করে সারাহ্-কে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য বলে,
“ভ°য় পেয়ো না, আমি আছি তো।”

সারাহ্ ওকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“এজন্যই তো আমি এখনো নিশ্বাস নিতে পারছি।”

আহনাফও দুহাতে ওকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“ধন্যবাদ, এতোটা বিশ্বাস করার জন্য।”

কিছুক্ষণ চুপ থেকে সারাহ্ বলে,
“আমাকে এক জায়গায় নিয়ে যাবেন?”
“কোথায়?”
“রোমি আন্টির বাসায়।”
“রোমি আন্টি?”
“হু, ঢাকায় থাকেন। নিয়ে যাবেন?”
“আচ্ছা, কয়েকদিন পর।”
______________________________________

সন্ধ্যায় মৃত্তিকা মমতাজ বেগমের সাথে দেখা করতে তানজিমদের বাসায় এসেছে। তানজিম বা লুৎফর রহমান কেউই বাসায় নেই।

অনেকক্ষণ দুজনে বসে গল্প করে। নানা বিষয় নিয়ে কথাবার্তা হয় দুজনের মাঝে, তবে মৃত্তিকার কথা বেশ ধা°রালো লাগলো মমতাজ বেগমের।

কথার মাঝে মৃত্তিকা হঠাৎ করে বলল,
“চা বানিয়ে আনবো? চা খাবে বড়মণি?”
“হ্যাঁ, আনো।”

মৃত্তিকা উঠে যায়। চটপট দুইকাপ চা বানিয়ে মমতাজ বেগমের কাপে ঘুমের ওষুধের গুড়া মিশিয়ে দিয়ে নিজে নিজেই বলে,
“শুধু কি সাইক্রিয়াটিস্ট হলেই সাইকোলজি সম্পর্কে জ্ঞান থাকে?”

চা নিয়ে মমতাজ বেগমকে দিয়ে বলে,
“বড়মণি, তোমার চা।”

মমতাজ বেগম হাসিমুখে চায়ের কাপ নিয়ে তাতে চুমুক দেয়।
“বেশ ভালো হয়েছে।”

মৃত্তিকা মুচকি হেসে নিজের কাপ নিয়ে বসে। মমতাজ বেগম একটু হায় হু°তাশ করে বলে,
“তাহমিনার সাথে ইমতিয়াজের বিয়ের সময় দেনমোহর নির্ধারণ করেছিল মাত্র এক লক্ষ টাকা আর তোমাকে দিলো চার লক্ষ টাকা। এজন্যই বলে পুরুষ মানুষ রঙ বদলায়।”

মৃত্তিকা আড়চোখে তাকায় উনার দিকে৷ উনি ঠিক কি বোঝালো তা নিয়ে ওর সন্দেহ আছে।

মৃত্তিকা একটা ঢোক গিলে বলে,
“আমি এতো টাকা নেই নাই।”
“সে তোমার ইচ্ছা, কিন্তু নির্ধারণ তো হয়েছে। (একটু থেমে) তবে তাহমিনার সাথে ওর যে সম্পর্ক ছিল সেটা তোমার সাথে হবে না।”

মৃত্তিকা এবারে একটু রেগে যায়। তবুও নিজেকে শান্ত রেখে বলল,
“বড়মণি, সম্পর্ক যা আছে আলহামদুলিল্লাহ।”

মমতাজ বেগম এক ঢোক চা গিলে বলে,
“হ্যাঁ আলহামদুলিল্লাহ তো হবে। তবে ওই বলে না যে প্রথম সে প্রথমেই থাকে, ওই প্রেম আর কারো নয়।”
“মানে?”

মমতাজ বেগম হেসে বলল,
“রিপা থাকলে কথাটা বুঝিয়ে দিতো। আমি তো আর বোঝাতে পারবো না। তবে সত্যি বলতে, রিপা থাকলে ইমতিয়াজের সাথে তোমার বিয়েও হতো না।”
“হ্যাঁ, কারণ তখন তাহমিনা থাকতো।”

মমতাজ বেগম চায়ে চুমুক দিতে নিয়েও দিলেন না। মৃত্তিকার মুখের দিকে তাকালেন উনি। মৃত্তিকা নির্বিকার হয়ে আছে।

মমতাজ বেগম কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবারো বলেন,
“তোমার মনে হয় ইমতিয়াজ তোমাকে তাহমিনার স্থান দিবে?”
“চাই না তো ওই স্থান।”

মমতাজ বেগমের কাছে এসে মৃত্তিকা বলে,
“তুমি কি আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) ও খাদিজা (রা.) এর ঘটনা শুনোনি? তারপর হযরত মুহাম্মদ (স.) ও আয়েশা (রা.) এর মিষ্টি সম্পর্কের ব্যাপারে জানো না?”
“সবাই কি মহামানব?”
“না, তবে আমাদের নবীজি (স.) তো আমাদের আদর্শ। আর তাছাড়া এসবের উপরের আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।”

কাপ হাতে নিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মৃত্তিকা বলে,
“যদিও মনুষ্য সমাজ এটা বুঝে, পশু সমাজ নয়৷ পশুকে তো আর ধর্মের কথা বোঝানো যাবে না। হালাল-হা°রা°মের পার্থক্য কি আর পশু বুঝবে? যেমন দুলাল, শাফিনসহ আরো অনেকে।”

মৃত্তিকা হনহনিয়ে চলে যায়। পরোক্ষভাবে সে মমতাজ বেগমকেও পশু বলে গেছে। চা খাওয়ার পর থেকে ঘনঘন হাই তুলছে মমতাজ বেগম। তবে ওষুধের পরিমান কম থাকায় উনি ঘুমান না। উনি ধরে নেন, সারাদিনের ক্লান্তিতে বোধহয় ঘুম পাচ্ছে।

মৃত্তিকা উনাকে হাই তুলতে দেখে মুখ বাঁ°কিয়ে আলতো হাসে। সবকিছু নিয়ে চিন্তা করতে ওর মস্তিষ্ক বাধ্য নয়। ও বাধ্য করবেও না। চিন্তামুক্ত থাকলেই তো এদেরকে শা°স্তি দিতে পারবে।
______________________________________

দুইদিন পর, সকাল সকাল ঢাকায় এসেছে আহনাফ-সারাহ্। রোমি খন্দকারের সাথে দেখা করতে এসেছে। উনার বাসার ঠিকানা সারাহ্ জানে।

দরজা খুলে রোমি খন্দকার অবাক হন। তবুও মুচকি হেসে বলেন,
“ভিতরে আসো।”

সারাহ্ ভিতরে আসতে আসতে বলে,
“আসসালামু আলাইকুম আন্টি।”
“ওয়া আলাইকুমুস সালাম। কেমন আছো সারাহ্?”
“আলহামদুলিল্লাহ, ভালো।”

সোফার দিকে ইশারা করে বলল,
“বসো তোমরা। (আহনাফকে বলে) তুমি কেমন আছো?”
“জি, ভালো আছি।”

সারাহ্ গলা ঝে°রে বলল,
“আন্টি, আসলে আমরা একটা কথা জানার জন্য এসেছি?”

রোমি খন্দকার কপাল কুঁচকে বলল,
“কি কথা? তাও আমার কাছে?”
“জি, কারণ ঘটনার সাথে আপনি জড়িত।”
“কোন ঘটনা?”

সারাহ্ একবার আহনাফের দিকে তাকায়, তারপর বলে,
“শাফিনকে চেনেন?”

রোমি খন্দকারের মুখের হাসিটা যেন মলিন হয়ে গেল। শাফিনের নাম শুনতেই ওনার চোখ দুটো চঞ্চল হয়। কি যেন এক ভাবনা-চিন্তায় মগ্ন হয়ে পড়েন।

সারাহ্ বুঝতে পারে, ঘটনা এখানে অনেক কিছু আছে। কথায় একটু জোর এনেই বলে,
“আন্টি, চেনেন আপনি শাফিনকে?”

জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে রোমি খন্দকার বলেন,
“সে অনেক আগের ঘটনা। এখন কেন জানতে চাইছো?”
“তারমানে আপনি চেনেন?”
“হ্যাঁ, চিনি।”

আহনাফ হাতের ইশারায় সারাহ্-কে চুপ থাকতে বলে। নিজে উঠে দাঁড়িয়ে দুহাত পিছনে নিয়ে বলে,
“শাফিনের সাথে আপনার আর ঐশীর মায়ের কি শ°ত্রু°তা?”

রোমি খন্দকার জানেন না ওরা কতটুকু জানে। তাই উনি বানিয়ে বানিয়ে মি°থ্যা আগডুম বাগডুম শোনানোর চেষ্টা করে। আহনাফ এতে বেশ অনেকটা রেগে যায়।

বয়সে বড়, প্রায় মায়ের সমবয়সী একজন মানুষ, তাই নিতান্তই ভদ্রতা বজায় রাখতে শান্ত মেজাজে আহনাফ বলে,
“আপনি মিথ্যা বলছেন।”

সারাহ্ পাশ থেকে বলল,
“মা আমাকে দুটো খু°নের কথা বলেছে। শাফিনের একটা বড় প্রবলেম আছে, সে প্রেগন্যান্ট মেয়েদের সাথে কি রকম বিহেভ করে তা আপনি জানেন। এইটুকু পর্যন্ত, শুধুমাত্র এইটুকু পর্যন্তই আমরা জানি। আরেকটা যেটা জানি, তা হলো রাহা সুলতানার ঘটনা। (একটু থেমে) তবে এতো পুরনো ছোট ছোট ঘটনার রেশ ধরে, আজ এত বছর পর আমার আর আমার সিস্টারের উপর কারো নজর পড়তে পারে। এটা আমি বিশ্বাস করতে পারি না।”

সারাহ্ বেশ শান্তভাবে, স্পষ্ট ভাষায় কথা বললেও ওর কথায় বেশ জোর ছিল। রোমি খন্দকার একটু চুপ হয়ে যায়।

কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর রোমি খন্দকার বলেন,
“তুমি ঠিক ধরেছো, সারাহ্। তোমাদের কাছে যেটা এইটুকু ঘটনা, সেটা আমাদের কাছে অনেক বড় কিছু ছিল। তবে এরজন্য শাফিন তোমার পিছু করেনি, কারণ ভিন্ন। ও তোমাদের কাজে লাগিয়ে নার্গিসকে দুর্বল করে নিজের প্রতি°শোধ নিতে চাচ্ছে। (একটু থেমে) আর আমার মেয়েকে তো অনেক আগেই মে°রে ফেলেছে, ছেলেকেও সারাজীবনের মতো প°ঙ্গু করে দিয়েছে। আমার ছেলের একটা পা নেই, শাফিনই এটা করেছে।”

“কিন্তু কেন?”
হুট করে প্রশ্ন করে বসে আহনাফ।

রোমি খন্দকার নিজের চশমা চোখে দিয়ে নিজের শোবার রুমে চলে যায়। আলমারি খুলে একটা ফাইল নিয়ে আসে। ওদের সামনে ফাইলটা রেখে বলে,
“তোমরা ভেবেছো শাফিন আজকাল থেকে এরকম। কিন্তু না, অনেক আগে থেকে ও এরকম কাজ করে আসছে। নিজের কুকর্মের প্রমাণ লো°পাটের জন্য, নিজের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুকে মে°রে ফেলেছিল। ওর অনেক কাজের সাক্ষী আমি আর প্রমাণ এই ফাইলে আছে।”

আহনাফ-সারাহ্ একে অপরের মুখের দিকে তাকায়। আহনাফ বলে,
“প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও চুপ করে বসে আছেন কেন?”

“কারণ মুখ খুলেও কোনো লাভ নেই। তাই বলে খুলিনি ব্যাপারটা তা নয়। শাফিন জে°লেও গিয়েছিল, তবে ছাড়া পেয়ে গেছিলো। (একটু থেমে) কিন্তু শাফিন তো মা°রা গেছে, ফাঁ°সি হয়ে ওর।”
“শাফিন বেঁচে আছে, কবর দেয়ার পরও সে বেঁচে বেরিয়েছে। এসবের কোনো রিপোর্ট হয়নি আর হয়েও কিছুই হবে না।”

দাঁড়ানো থেকে সোজা বসে যায় রোমি খন্দকার। বুকে হাত দিয়ে বলে,
“কবরও তাকে আ°টকাতে পারেনি।”
______________________________________

গত কয়েকদিন ধরেই অপরূপার প্রতি মায়া হচ্ছে ফাহাদের। হওয়াটা স্বাভাবিক, মুখে একটা সুই ঢু°কানো। খাবার খাওয়ানো যাবে না, মৃত্তিকার কড়া হুকুম। ড্রপার দিয়ে অল্প অল্প করে পানি দেয় ফাহাদ। মেয়েটা থেমে থেমে ছটফট করে।

এখন আবারো পানি খাওয়াচ্ছে সে। অপরূপার চোখের দিকে তাকায় সে। একটা আলাদা মায়া আছে, বড়বড় চোখ দুটো হরিণীর মতো। সুন্দর গড়নের শরীর, কালো চোখের মণি পানিতে ঝলমল করছে।

ফাহাদ সুইয়ে হাত দিয়ে আবারো হাত সরিয়ে নেয়। ভ°য় হচ্ছে তার, যদি সুই খুলতে গিয়ে র°ক্ত°পাত শুরু হয়।

অপরূপার ঘন ঘন আন্দোলিত হওয়া চোখের পাপড়ি দেখে ফাহাদের আবারো মায়া বাড়ে। আলতো করে বাম গালে হাত ছোঁয়ায় সে। দুজনের চোখ একে অপরকে দেখছে।

টিস্যু দিয়ে ধরে এক টা°নে সুই খুলে ফেলে ফাহাদ। অপরূপা জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে বলে,
“একটু হাত খুলে দাও, আমার প্রচুর য°ন্ত্র°ণা হচ্ছে।”

ওর কথায় ভিন্ন একটা জাদু আছে। নরম কন্ঠ, ঘন নিঃশ্বাস, যেন এক ঘোর লাগা বিষয়। ফাহাদ ওর হাত খুলে দেয়। অপরূপা দুহাত সামনে এনে কয়েকবার মুষ্টিবদ্ধ করে হাতকে স্বাভাবিক করে।

খোলা চুলগুলো খোঁপা করে নিয়ে ধা°ক্কা দেয় ফাহাদকে। ফাহাদ একটু দূরে গিয়ে পড়ে বলে,
“এই কি করছো?”

“যা আমার কাজ।”
অপরূপা উঠে এসে কাঁচের টি টেবিলটা ফাহাদের উপর ফেলে। ফাহাদ গড়িয়ে সরে গেলেও কাঁচের কয়েকটি টুকরা তার পিঠে ঢুকে যায়। ব্য°থায় অ°স্ফুটস্বরে কিছু শব্দ করে সে। তবুও ফাহাদ উঠে দাঁড়ায়।

সোফায় থাকা ড্রা°গের প্যাকেট এনে মুখ দিয়ে ছিঁ°ড়ে অপরূপা। একমুঠো ফাহাদের নাকে মুখে জোর করে ঢুকিয়ে দেয়, নে°শায় একপ্রকার বুদ হয়ে থাকে ফাহাদ। ওর গাল চেটে কিছুটা ড্রা°গ অপরূপা নিজে খায়।

“এবার মৃত্তিকা বুঝবে, এই অপরূপা কি করতে পারে? (একটু থেমে) মৃত্তিকার জা°হা°ন্নাম আমি দেখেছি, এবার আমার জা°হা°ন্নাম মৃত্তিকা দেখবে।”

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here