অনুভূতিরা_শব্দহীন লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী দ্বিপঞ্চাশৎ পর্ব (৫২ পর্ব)

0
352

#অনুভূতিরা_শব্দহীন
লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী

দ্বিপঞ্চাশৎ পর্ব (৫২ পর্ব)

অপরূপা দরজা খুলে থেমে যায়। ইমতিয়াজ দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে আছে। অপরূপা একটু পিছিয়ে আসে। ইমতিয়াজ বাসায় ঢু°কেই দরজা লাগিয়ে দেয়। অপরূপার ডানগালের অবস্থা সে দেখে, সেখানেই একটা চ°ড় বসিয়ে দেয়৷

“আমি শুরুতেই সন্দেহ করেছিলাম মৃত্তিকা কিছু একটা করছে।”

ইমতিয়াজের সাথে অপরূপার পেরে উঠা সহজ কথা নয়। অপরূপার হাত উ°লটে পেছনে এনে টেনে ধরে ইমতিয়াজ। দুহাত দুইদিকে ধরে জোরে টা°ন দেয়।

অপরূপা চেঁ°চিয়ে উঠে, হয়তো হাত মচকে গেছে। প্রচুর ব্য°থা অনুভব হচ্ছে। ডাইনিং এর চেয়ারের সাথে ওকে বেঁধে রেখে ফাহাদকে টেনে তুলে বলে,
“কেমন পুরুষ তুমি? একটা মেয়ের সাথে পারো না?”

ফাহাদের নাকেমুখে পানি দেয় ইমতিয়াজ। কিছুটা ঠিক লাগলে সোফায় বসিয়ে দেয়৷ ফাহাদ নিচুস্বরে বলে,
“ম্যাডাম কিছুক্ষণ পরই চলে আসবে।”
“আসুক।”

ইমতিয়াজ অপরূপার সামনে চেয়ার টে°নে বসে। মৃত্তিকা নিষেধ করার পরেও ওর সকল তথ্য ইমতিয়াজকে দিয়েছে ফাহাদ। গতরাতেই দিয়েছে, তাইতো আজ সকাল সকাল এসে হাজির হয়েছে সে।

ইমতিয়াজ পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে অপরূপাকে বলে,
“শাফিনের সাথে যুক্ত আছো, তবে এটাও জানো শাফিন কোথায় আছে?”

অপরূপা চুপ থাকায় ইমতিয়াজ হেসে বলল,
“দেখো, যে লোক জামিল আর দুলালকে মারতে পারে সে তোমাকেও মারতে পারবে। এটা ওর কাছে কোনো বিষয়ই না।”

কথা বলতে বলতে অপরূপার নাম্বার থেকে মৃত্তিকার নাম্বারে ডায়াল করে, রিং হচ্ছে।

ইমতিয়াজ অপরূপাকে বলে,
“ম্যাডামকে আসতে বলো। আমার কথা জানিও না।”

মৃত্তিকা রিসিভ করে, অপরূপা বলে,
“মৃত্তিকা, বাসায় কেউ একজন এসেছে।”

মৃত্তিকা চমকে উঠে। সে এই বাসায়ই আসছিল। চটপট করে বলে,
“কে এসেছে?”

কল কে°টে যায়। মৃত্তিকা আবারো কলব্যাক করলে ইমতিয়াজ কে°টে দেয়। মৃত্তিকা চিন্তিত হয়। এ আবার কোন নতুন সমস্যা?
______________________________________

“শাফিনকে আমি একসময় পছন্দ করতাম। অন্যরকম সম্পর্ক ছিল আমাদের। নার্গিস, রিপা ওরা জানতো আমাদের কথা। তবে ওই দুইটা খু°নের পর আমি সম্পর্ক শেষ করে দিই। শাফিন মেনে নিতে পারেনি এটা। অনেক ঝা°মেলা করেছে আমার সাথে। মানিনি, নিজের জে°দ নিয়ে বসেছিলাম। তখনও আমি ওর অতীত সম্পর্কে জানতাম না। আমি জানতাম না শাফিন রিপাকে পছন্দ করতো।”

একটু থামেন রোমি খন্দকার। তারপর আবারো বলেন,
“আমরা যখন ফাইনাল ইয়ারে পড়ছি তখন রিপা জেনেছিল শাফিন বিভিন্ন অ°বৈধ ব্যবসার সাথে জড়িত। সে শাফিনকে কয়েকবার সর্তক করলেও শাফিন তা মানে না। বরং রিপা যখন মিউকোকে নিয়ে প্রেগন্যান্ট ছিল, তখন…”

রোমি খন্দকার থেমে গেলে সারাহ্ বলে,
“আমি জানি বাকিটা কি?”

রোমি খন্দকার মাথা নেড়ে বলল,
“সেদিন খুব ভয়ংকরভাবে সে আমাদের উপর ক্ষে°পেছিল। তারপর যদিও নার্গিসের বিয়ে হয়ে যায় আর সে অন্য এলাকায় চলে যায়। তবে আমরা ওর এসব সামনে আনতে ম°রিয়া হয়ে ছিলাম। নার্গিস একটা পরিকল্পনা করে, আর সে অনুযায়ী আমি শাফিনের ব্যবসার একটা ভাগ নিয়ে ওর সাথে যুক্ত হই। খুব কাছ থেকে আমি ওর এসব দেখেছিলাম। যত জায়গায় ডিল করেছে সব কাগজ আমি হাতে পেয়েছিলাম। এই ফাইলে সেগুলোর নকল আছে।”

আহনাফ উনার কথাগুলো সব ভিডিও করছে। সে বলে,
“তা না হয় বুঝলাম, তবে এতো বছর পর কেন সে আপনাদের পিছু লেগেছে?”
“ও লাগেনি আমরা লাগিয়েছি, না চাইতেই লাগিয়েছি।”

সারাহ্ একটু অবাক হয়। বি°পদ কেউ ডেকে আনে নাকি?

“রিপার ডি°ভো°র্সের পরপর শাফিনের নামে একটা কে°ইস করেছিল সে। এতে শাফিনের কিছুই হয়নি, জে°লেও যায়নি, কেউ জানেও নি। শাফিনের নজর তখন রিপার উপর তীব্র, আমার বা নার্গিসের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানেনি তখন। তারপর রিপা ইতালি চলে যায়, প্রায়ই দেশে আসতো তবে শাফিনের গোপনে। একের পর এক কুকর্ম সে চালিয়ে যাচ্ছিল, অথচ পুরো সমাজে তার একটা ভদ্র চেহারা ছিল। কোনো কে°ইস তার কিছু করতে পারেনি, লিগ্যাল রাস্তাগুলো যেন তার জন্য বন্ধ। রিপা অনেকবার দেশে এসেছিল, রিপা আর নার্গিস মিলে অনেক চেষ্টা করেছে। তবে কাজ হয়নি। রিপা সমসময় আমাদেরকে লুকিয়ে রেখে নিজে সামনে থাকতো। (একটু থেমে) শেষবার রিপা দেশে আসে ওর বোনের মেয়ের বিয়েতে।”

আহনাফের দৃষ্টি স্থির হয়। রোমি খন্দকার থামে না,
“বিয়ের কয়েকদিন আগে নার্গিস শাফিনকে মে°রে ফেলার পরিকল্পনা করে, রিপা সম্মত হয়। এছাড়া আর কোনো রাস্তা খোলা ছিল না। কাজটা আমাকে করতে হতো। করতে পারিনি, উলটো নার্গিসের পরিকল্পনা সম্পর্কে সে জেনে যায়। নার্গিসকে সে ভ°য়া°নকভাবে টার্গেট করেছিল। তারপর যতটুকু শুনেছি রিপা…”

আহনাফ মাঝ থেকে বলে উঠে,
“তাহসিনার বিয়েতে রিপা বেগম মা°রা যায়।”

রোমি খন্দকার আহনাফের দিকে তাকায়, সারাহ্ও তাকায়। রোমি খন্দকার মাথা নেড়ে বলেন,
“হ্যাঁ, এর আগের রাতে রিপার সাথে আমার ফোনে কথা হয়েছিল। রিপা বলেছিল ওর বোনের দুজন মেয়েই নাকি মামার কথা জেনে গেছে, তাই ছোট মেয়ে মানে যার বিয়ের কথা ছিল তাকেও নাকি পা°চারের হু°মকি দিয়েছিল। তোমাদেরকে এসবের সাথে আমরা জড়াতেই চাইনি সারাহ্।”

আহনাফ ভিডিও সেভ করে ফোন রেখে বলল,
“সবকিছুর জন্য তবে আপনারাই দায়ী, তবুও এতোদিন আপনারা চুপ ছিলেন। এতোটা বছর গু°ম°রে ছিলেন। আজও আমাদের জানাতে চাচ্ছেন না, আরো কয়জন মানুষ ম°রলে জানাতেন আপনারা?”

রোমি খন্দকার মাথানিচু করে ফেলে। সত্যিই তার নিজেকে ছোট মনে হচ্ছে। আহনাফ বেরিয়ে যায়। সারাহ্ বের হতে নিলে রোমি খন্দকার ওর হাতে ফাইলটা দিয়ে বলে,
“এটা মিউকোকে দিয়ে দিও। রিপার বড়বোন আরো অনেক কিছুই জানে, এখানে অনেক ষড়°যন্ত্র আছে সারাহ্।”

“আপনারাও সেই ষড়°যন্ত্রেরই অংশ হয়েছেন আন্টি। চাইলে আরো আগেই অনেক কিছু করা যেতো। এতোগুলো নিরীহ মানুষকে ম°রতে হতো না।”

সারাহ্ ফাইল নিয়ে বেরিয়ে যায়। মায়ের উপর প্রচন্ডভাবে রেগে আছে সে। সব জেনেও কেন বারবার গোপন করেছে উনি।
______________________________________

ঘন্টাখানেক পর মৃত্তিকা এসে বাসার দরজা খুলতে নিয়ে বুঝতে পারে দরজা ভেতর থেকে আটকানো। ব্যাগ থেকে পি°স্ত°ল বের করে বামহাতে রেখে বেল বাজায় সে৷

ফাহাদ এসে দরজা খুলে। মৃত্তিকা ওকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বলে,
“কে এসেছে বাসায়?”

মৃত্তিকা ভিতরে এসে ইমতিয়াজকে দেখে হাত থেকে পি°স্ত°ল পড়ে যায়। অপরূপাকে বাধা অবস্থায় চেয়ারে বসে থাকতে দেখে।

“ইমতিয়াজ।”

ইমতিয়াজ একটু মাথা নাড়ে। চেয়ার ইশারা করে বলে,
“বসো, তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।”

মৃত্তিকা চেয়ারে বসে। ইমতিয়াজ ওর দিকে ঝুঁকে বলল,
“এতো লুকোচুরি কেন আমার সাথে? বিশ্বাস করতে পারো না?”

“ও তোমাকে মোটেও বিশ্বাস করে না, তুমি..”

অপরূপার কথার মাঝেই ইমতিয়াজ ওর গালে ঠা°টিয়ে একটা চ°ড় লাগায়। মৃত্তিকা চমকে উঠে।

ইমতিয়াজ বলে,
“ইনোসেন্ট ভাব নিয়ে কোনো লাভ নেই।”
“ইমতিয়াজ, এটা আমার ফ্যামিলির সমস্যা, তাই আপনাকে জড়াতে চাইনি।”

ইমতিয়াজ রাগে চেঁ°চিয়ে উঠে,
“তোমার ফ্যামিলি কি আমার ফ্যামিলি নয়? তাহমিনা কি আমার কেউ নয়?”

মৃত্তিকা উঠে দাঁড়িয়ে ইমতিয়াজকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“শান্ত হন। আপনার ভ°য়ং°কর চেহারা আমার ভালো লাগে না।”

ইমতিয়াজ শান্ত হয়। ওর রাগ ভ°য়াবহ রকম, সে জানে এটা। তাহমিনাও তার রাগকে ভ°য় পেতো।

সময় গড়ায়, দুপুর ছাড়িয়ে বিকাল আর বিকাল ছাড়িয়ে রাত হয়। এরমধ্যে একটা পরিকল্পনা সাজানো হয় ওদের। নিজেদের ছোট এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলেই শাফিন ধরা পড়ে যাবে। তবে এতে কিছুটা সময় লাগবে।

ইমতিয়াজ আজ এ বাসায়ই থাকবে। অপরূপাকে আর যাই হোক, ফাহাদের কাছে ছাড়া মোটেও ঠিক হবে না। মৃত্তিকা চলে গেছে তানজিমের বাসায়। মমতাজ বেগমকে প্রতিদিন সে নিয়ম করে এককাপ চা খাওয়াচ্ছে, ঘুমের ওষুধ মেশানো চা।
______________________________________

একমাস পর,

কয়েকদিন ধরেই কাগজপত্র অদৃশ্য হচ্ছে এডভোকেট বিথীর। সব নয়, বেছে বেছে কিছু কাগজ পাচ্ছে না। এটা নিয়ে শাফিনের সাথে কথা বলতে বলতে বাসায় ফিরছে। রাত প্রায় দশটা বেজে গেছে। নিজের গাড়িতে করেই ফিরছে সে। ড্রাইভার গাড়িটা বাসার দিকে না নিয়ে অন্যরাস্তায় নিচ্ছে দেখে বিথী ফোন রেখে বলে,
“কোথায় যাচ্ছো তুমি?”
“তা তো আমি জানিনা।”

কন্ঠটা বিথীর ড্রাইভারের মতো লাগেনি। ধ°মক দিয়ে বলে,
“কে আপনি?”
“হয়তো কেউ, যে আপনার পরিচিত নয়। চিৎকার করবেন না, আপনি গান পয়েন্টে আছেন।”

গাড়ি থামে শরীফের বাসার সামনে। দরজা খুলে ড্রাইভারের আসন থেকে ইমতিয়াজ বের হয়। উনাকে হেঁচকা টা°নে বের করে বাসার ভিতরে নিয়ে যায়।

মৃত্তিকা বাসার ভিতরেই ছিল। বিথীকে এনে ড্রইংরুমে বসিয়ে ইমতিয়াজ দরজা লাগায়। তারপর ফাহাদকে কল দিয়ে বলে,
“এখন চালু করো।”
“ওকে।”

এতোক্ষণ বাসার সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ ছিল। এখনই মাত্র চালু হলো। ইমতিয়াজ বিথীকে চেয়ারের সাথে বেঁধে দেয়। অপরূপা আর বিথী মুখোমুখি।

অপরূপার চেহারা দেখে চেনার উপায় নেই। একমাসে তার চেহারায় কোনো বিলাসিতার ছোঁয়া পড়েনি। উলটো সকাল-সন্ধ্যা মৃত্তিকার অ°ত্যা°চারে সে অ°তিষ্ঠ। দুহাত ভে°ঙে গেছে, ব্যান্ডেজ করা আছে সেখানে। সুন্দর চেহারাটা এখন আর সুন্দর লাগছে না, কেমন যেন অগোছালো হয়ে গেছে।

“একে চেনেন?”

খুব শান্তভাবে বিথীর কানের কাছে কথাটা জিজ্ঞাসা করে ইমতিয়াজ। বিথী চুপ করে আছে। ইমতিয়াজ সোজা হয়ে মৃত্তিকাকে বলে,
“শাফিন নি°র্ঘাত এদেরকে শাটআপ ডো°স দিয়েছে।”

মৃত্তিকা একটু হেসে বলে,
“বকবক ডো°স লাগবে বোধহয়।”

মৃত্তিকা এসে বিথীর গাল চেপে ধরে বলল,
“তোমার কাগজপত্র আমি গা°য়েব করেছি। তোমরা চুপ থেকে কয়দিন বাঁচবে আমিও দেখবো।”

বিথী গাল ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,
“আমি যা করেছি নিজের জন্য করেছি, আর কিছু না। আমি উকিল, আমি এমনটা করতেই পারি।”
“ন্যায়-অ°ন্যায় বোধটা তোমার নেই। অথচ তোমরাই মোটা মোটা আইনের বইপুস্তক পড়ো।”

মৃত্তিকা বিথীকে চেয়ার থেকে খুলে ওয়াশরুমে নিয়ে আসে। এক বালতি পানিতে মাথা ঢুকিয়ে দেয়। হাত তার পেছনে বাধা, চাইলেও সে মৃত্তিকাকে সরাতে পারবে না। নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে তার।

বেশ কিছুক্ষণ পর মৃত্তিকা তার মাথা তুলে বলে,
“এখন তো বলবে?”
“উকিলের কথার প্যাঁ°চ নিতে পারবে না।”
“আর তুমি আমার প্যাঁ°চ নিতে পারবে?”

আবারো একই কাজ করে সে। বারবার করলেও বিথী মুখ খুলে না। রাগে মৃত্তিকার গা রিরি করতে শুরু করেছে। বিথী বুঝতেও পারছে না এতে তার উপর অ°ত্যা°চারের মাত্রা কেবলই বাড়বে।
______________________________________

সারাহ্ আয়নার সামনে দাঁড়ায়। নিজেকে দেখছে সে। স্পষ্ট একটা মাতৃকালীন সৌন্দর্য এসেছে তার মধ্যে।

আহনাফ রুমে এসে ওকে আয়নার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল,
“নিজেকে এভাবে মুগ্ধ হয়ে দেখছো?”

সারাহ্ ফিক করে হেসে উঠে বলল,
“না তো।”

আহনাফ ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“তবে যে চেয়ে আছো?”

দুজনেই আয়নার দিকে তাকিয়ে আছে। সারাহ্-র হাসিটা ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল। আহনাফের হাতের উপর হাত রেখে বলে,
“আমার ভ°য় করছে আহনাফ?”
“কেন? শাফিনের ভ°য় পাচ্ছো?”

আহনাফ ওকে ঠিক বুঝে। সারাহ্ আহনাফের বুকে পিঠ ঠেকিয়ে বলে,
“তাহমিনা আমার মতোই ছিল, তাই না?”

আহনাফ ওকে নিজের দিকে ফিরিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে,
“থামো ঐশী, আমার সহ্য হবে না।”

সারাহ্ ওকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“আহনাফ, এমনও তো হতে পারে আম্মু আর আন্টি আমাদের ভালোর জন্যই এসব লুকিয়েছে।”
“কোনো ভালো তো এতে হয়নি।”
“উনারা তো চেষ্টা করেও কিছুই করতে পারে নি। আন্টি তার মেয়েকে হারিয়েছেন। তাহলে তো আম্মুও তার..”

সারাহ্ নিজে থেকেই থেমে যায়। আহনাফও চুপ থাকে। দুজনই কাঁদছে, কিন্তু কেউ কাউকে দেখছে না।
______________________________________

সূর্য উঠে, সকাল হয়। আজ শরীফ অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরে আসবে। মৃত্তিকাকে কথাটা জানায়নি ইমতিয়াজ। ভোরে ফ্লাইট ল্যান্ড করেছে। সকাল সাতটায় বাসায় চলে এসেছে শরীফ।

ইমতিয়াজ আজ অফিসে একটু দেরি করে যাবে। মৃত্তিকা এখনো ঘুমাচ্ছে, কালরাতটা এখানেই কা°টিয়েছে সে। এমনি মিউকোকেও সাথে এনেছে, ওকে নিয়েই আরামে ঘুমাচ্ছে সে। কলিং বেল শুনে তার ঘুম ভা°ঙে।

মিনমিনে স্বরে বলল,
“ইমতিয়াজ, কে এসেছে?”

ইমতিয়াজ পাশে বসে ফোন দেখছিল।
“দেখছি।”
বলে ফোন রেখে সে উঠে যায়।

দরজা খুলে শরীফকে দেখে কোলাকুলি করে সে। ইমতিয়াজ তো জানে শরীফ এখন আসবে। শরীফ ড্রইংরুমে বসে বলল,
“মিউকো কি ঘুমাচ্ছে?”
“হুম।”

ডাইনিং এ বাধা অবস্থায় আছে অপরূপা ও বিথী। দুজনেই মাথা হেলিয়ে রেখে ঘুমাচ্ছে। পাশেই দাঁড়িয়ে আছে ফাহাদ। ইমতিয়াজের থেকে প্রায় সকল কথাই শরীফ জেনেছে আর শরীফের কথামতোই কাল বিথীকে তুলে এনেছে ইমতিয়াজ।

শরীফ ওদেরকে ইশারা করে বলে,
“কান টা°নলে মাথা আসবে। তবে আসল কানটা এখনো বাকি।”
“আসল কান?”

মৃত্তিকা চোখ কচলে উঠে আসে। শরীফকে দেখে চমকে উঠে বলল,
“আজকে আপনার দেশে আসার কথা ছিল নাকি?”

শরীফ উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“না, সারপ্রাইজ।”

মৃত্তিকা রান্নাঘরে গিয়ে চা বসায়। ব্য°ঙ্গ করে বলে,
“সারপ্রাইজ? ঢং যতসব।”

সারাদিন শরীফ বাসায় থাকলেও মৃত্তিকা তার সাথে একটা কথাও বলে না। সেই জে°দ, সেই রাগ মৃত্তিকার মধ্যে খুঁজে পায় শরীফ। মায়ের মেয়ে মায়ের মতোই, বাবার মতো হিং°স্র°তা ছাড়া আর কিছুই নেই।

সন্ধ্যার পর শরীফ হাসপাতালে যায়। পল্লবী সবটা সামলে নিলেও নিজেকে তো কিছুটা দেখতেই হবে।

মৃত্তিকা চুল আঁচড়াচ্ছে আর ভাবছে। গভীর ভাবনায় মগ্ন সে। শাফিনকে কিভাবে দ্রুত হাতে আনবে? চিন্তা এই একটাই। হঠাৎ মৃত্তিকার মাথায় সেই পুরোনো শর্টকাট বুদ্ধিটাই আবার খেলে গেল।

শাফিন যেহেতু প্রেগন্যান্ট মেয়েদের দিকে আ°কৃষ্ট হয়, তাই ওর প্রেগন্যান্সিই পারে শাফিনকে দ্রুত সম্মুখে আনতে। তবে কি সে মি°থ্যা খবর ছড়িয়ে দিবে? ইমতিয়াজ জানলে ওকে কি বলবে?

ইমতিয়াজ এমনসময় রুমে আসে।
“মৃত্তিকা, কলরব আজ অফিস জয়েন করেছে।”

মৃত্তিকা পিছন দিকে ফিরে তাকিয়ে মাথানিচু করে ফেলে। ওর চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে লজ্জা পাচ্ছে। ইমতিয়াজ কপাল কুঁচকায়, ওর কথায় লজ্জার কি খুঁজে পেল মৃত্তিকা বুঝে না সে।

ইমতিয়াজ ওর সামনে এসে বলল,
“কি হয়েছে? কোনো সমস্যা?”

মৃত্তিকা ওকে জড়িয়ে ধরে। ওর বুকে মাথা রেখে দুহাতে পিঠের দিকের শার্টের অংশ মুঠোয় ধরে। ইমতিয়াজ ওর মুখটা দেখতে পারে না।

ইমতিয়াজ ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“মৃত্তিকা?”

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here