অনুভূতিরা_শব্দহীন লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী পঞ্চচত্বারিংশ পর্ব (৪৫ পর্ব)

0
341

#অনুভূতিরা_শব্দহীন
লেখনীতে: #ইসরাত_জাহান_তন্বী

পঞ্চচত্বারিংশ পর্ব (৪৫ পর্ব)

জামিলকে চেয়ারে বেঁধে বসিয়ে রাখা হয়েছে। আব্বাস সাহেবের জন্য অপেক্ষা করছে আহনাফ৷ সারাহ্ শোবার ঘরের দরজা ধরে দাঁড়িয়ে আছে, দৃষ্টি তার আহনাফে নিবদ্ধ৷ আহনাফ জামিলের সামনে সমানে পায়চারি করে যাচ্ছে।

প্রশ্ন তার একটাই,
“শাফিন কেন সারাহ্-কে চায়? শুধুই কি নার্গিস পারভিনের সাথে পুরোনো শ°ত্রু°তা?”

জামিল কোনো উত্তর দিচ্ছে না। কথাই বলছে না সে। আহনাফ থেমে থেমে একই প্রশ্ন করে যাচ্ছে।

আব্বাস সাহেবকে খবর দেওয়া হয়েছে। উনি যথাসম্ভব দ্রুত চলে আসেন। ঘরে ঢুকেই আহনাফকে প্রশ্ন করেন,
“কি হয়েছে? সারাহ্ ঠিক আছে?”

আহনাফ একবার সারাহ্-র দিকে তাকায়। তারপর মাথা হেলিয়ে বলে,
“হ্যাঁ, সে ঠিক আছে।”

আব্বাস সাহেব জামিলের সামনে গিয়ে বলেন,
“কি চাও? কেন এত বড় বড় পরিকল্পনা করছো তোমরা?”
জামিল হেসে অন্যদিকে তাকায়।

আহনাফ চেয়ার টে°নে তার মুখোমুখি বসে বলে,
“দেখো যত তাড়াতাড়ি তুমি মুখ খুলবে তত তোমার ভালো, আর যত দেরি করবে (একটু থেমে) ততই খারাপ হবে।”

জামিল এবারে বলে,
“খারাপের কি হবে? কোন পর্যায়ে যাবে? বড়জোর মা°রবে এরচেয়ে বেশি তো কিছু না।”

আহনাফ কপাল কুঁচকায়। “বড়জোর মা°রবে” কথাটা বলতে বুঝায় যে মা°র তার কাছে কোনো ব্যাপারই না।

আহনাফ জামিলের দিকে ঝুঁকে বলল,
“শুধু মা°র নয়, ট°র্চা°র করব। মা°র আর ট°র্চা°রের পার্থক্য বোঝো? না বুঝলে সমস্যা নেই, ফিজিক্সের মতো এই সূত্রটাও আমি ভালোই বুঝাই।”

আহনাফ আব্বাস সাহেবের দিকে তাকালে উনি মাথা নাড়িয়ে ওকে অনুমতি দিলো। মুখে বললো,
“মেইন গেট অফ করে দিও।”

আব্বাস সাহেব রুমে চলে গেলেন। সারাহ্ বাপ-বেটার কথোপকথন বেশ মনোযোগ দিয়ে শুনলো এবং যা বুঝলো তার অর্থ দাঁড়ায় দুজনেই শান্ত স্বভাবের, কিন্তু হিং°স্র। চুপি চুপি এসে বাঘের মতো ঝাঁ°পিয়ে পড়াই এদের স্বভাব।

জামিলের মুখে মোটা লাল স্কচটেপ লাগিয়ে দিলো আহনাফ। তারপর দুইহাতের বাঁধন হালকা করে চেয়ার থেকে উঠিয়ে আবারো দুইহাত শক্ত করে বেঁধে দিলো।

সারাহ্-কে বলল,
“ঐশী, নিজের রুমে থাকবে।”

জামিলকে টে°নে°হিঁ°চ°ড়ে ডাইনিং এর পাশের খালি রুমে নিয়ে যায় সে। সারাহ্ রুমে যায় না, বরং ধীর পায়ে গিয়ে সে রুমের দরজায় দাঁড়ায়। আহনাফ ওকে পাশ কা°টিয়ে বেরিয়ে এসে বাড়ির সব দরজা-জানলা লাগিয়ে দেয়।

রুমে আবারো প্রবেশের সময় সারাহ্-র দিকে তাকিয়ে বলল,
“রুমে যেতে বলেছি তোমাকে।”
“আমি একটু থাকি?”
“না।”

আহনাফ সারাহ্-কে সরিয়ে দিয়ে শব্দ করে দরজা বন্ধ করে দেয়। পিনপতন নিরবতা চলে এসেছে পুরো ঘরে। সারাহ্ চলে যায় না, দেয়ালে হেলান দিয়ে এখানেই বসে থাকে। একসময় ঘুমিয়ে যায়।

সময় কা°টে, সন্ধ্যারাত পেরিয়ে মধ্যরাতে প্রবেশ করলো পৃথিবীর এ প্রান্তটা। ঘড়িটা জানান দিচ্ছে রাত একটা বেজেছে।

হঠাৎ সারাহ্-র ঘুম ভা°ঙে, কেউ তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে রেখেছে৷ সারাহ্ কোনোমতে মাথা তুলে অন্ধকার রুম দেখে চেঁচিয়ে উঠে,
“এই কে?”

আহনাফ চমকে উঠে ওর মুখ চেপে ধরে বলল,
“কে হবে? আমি। আস্তে চেঁচাও, বাইরে থেকে লোকে শুনলে খারাপ ভাববে।”

সারাহ্-র ঠোঁট কাঁপে, আহনাফ হাত সরায়। স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে সারাহ্ বলে,
“আমরা কোথায় আছি? রুমে?”
“না, আমরা মঙ্গল গ্রহে যাচ্ছি। স্পেসশিপে আছি।”

সারাহ্ আহনাফের হাতে একটু চিমটি কে°টে বলে,
“ধুর, কি বলেন এসব? (একটু থেমে) ওই লোকটার কি হলো?”
“কিছু না।”
“মে°রেছেন?”

আহনাফ উত্তর দেয় না। রুমের ঘুটঘুটে অন্ধকারে আহনাফের চেহারাও সারাহ্-র দেখা হয় না। সারাহ্ হাত বাড়িয়ে আহনাফের চোখেমুখে হাত দিতেই সে বলে,
“কি হচ্ছে, ঐশী?”

সারাহ্ মুচকি হাসে। সে অনুভব করছে তার আহনাফকে। আহনাফের গালে হাত দিয়ে বলল,
“এতো ঘটা করে রুমে নিয়ে গিয়ে মা°রে°ননি?”

আহনাফ সারাহ্-র আরো কাছে নিয়ে এসে বলল,
“তাকে মে°রেছি কিনা সেটা তার বিষয়, তোমার বিষয় হলো তোমাকে এখন আদর করবো।”
“সরুন।”

সারাহ্ জানে আহনাফ সরবে না আর আহনাফও জানে সারাহ্-র এই সরুন কথার অর্থটা উলটো। ভালোবাসার নৌকার পালে হাওয়া লাগে জোরে, তড়তড় করে নৌকা এগিয়ে যায়। সাথে একটা সুর বেজে উঠে, এ কি ভাটিয়ালি গান?
______________________________________

সকাল সকাল ইমতিয়াজের সাথে এয়ারপোর্টে আসে মৃত্তিকা। ইমতিয়াজ কোনোদিন ভাবেনি বাবাকে বিদায় দিতে মৃত্তিকা আসবে।

শরীফের সাথে দেখা হলো, পল্লবীও সাথে এসেছে। শরীফ ইমতিয়াজের সাথে কুশল বিনিময় শেষে বলল,
“মিউকোর খেয়াল রেখো।”

ইমতিয়াজ মাথা নাড়িয়ে বলল,
“ইনশাআল্লাহ, আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করবো।”

মৃত্তিকা কয়েকবার শরীফের দিকে তাকায়। শরীফ ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,
“ভালো থেকো মিউকো।”

মৃত্তিকা এগিয়ে এসে ইমতিয়াজকে পিছনে সরিয়ে নিজে সামনে এসে শরীফকে বলল,
“আপনার সাথে আমি একটু আলাদা কথা বলতে চাই, পাঁচ মিনিট সময় হবে?”
“অবশ্যই।”

ইমতিয়াজ দুজনকে বলল,
“তবে কথা বলো।”

ইমতিয়াজ সরে যায়। মৃত্তিকা ইমতিয়াজের দিকে একবার তাকিয়ে তারপর শরীফকে বলে,
“আপনার বাসা এখন পুরো খালি?”
“হ্যাঁ।”
“আপনি ফিরে না আসা পর্যন্ত ওখানে আমি (একটু থেমে) মানে আমরা কি থাকতে পারবো?”

শরীফ হেসে মৃত্তিকার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
“কেন পারবে না?”

পকেট থেকে চাবি বের করে মৃত্তিকার হাতে দিয়ে বলে,
“এইযে বাসার চাবি।”

মৃত্তিকা বাসার চাবি হাতে নিয়ে বলল,
“আরেকটা জিনিস চাই।”
“কি?”
“স্পা°ইদের সরিয়ে দেন আমার পিছন থেকে।”

শরীফ একটু ভেবে বলল,
“আমি যদি না সরাই তবুও তুমি টের পাবে না।”

শরীফ চলে যেতে নিলে মৃত্তিকা বলে,
“ভুলে যাবেন না আমি আপনারই মেয়ে, আমি ঠিকই বুঝে যাবো।”

শরীফ ঘাড় ঘুরিয়ে বলল,
“মেয়ে হলে তো আমাকে বাবা বলেই ডাকতে, কই ডাকতে তো শুনিনি।”

মৃত্তিকা আর কিছু না বলে অন্যদিকে চলে যায়৷ শরীফ কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে থেকে ব্যাগ নিয়ে ভিতরে চলে যায়।

ইমতিয়াজ পল্লবীর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,
“মৃত্তিকা আপনাকে চেনে?”
“এখন চিনবে। আমি তার ফুপ্পি হই।”

ইমতিয়াজ হাসে। বলে,
“শরীফ সাহেবকে শশুর ডাকলে যে মেয়ে রেগে যায়, সে আপনাকে ফুপ্পি ডাকবে?”

পল্লবী একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মৃত্তিকাকে ডাকে,
“মিউকো?”

মৃত্তিকা পল্লবীর কাছে এগিয়ে আসে। ধীর পায়ে আসতে আসতে ইমতিয়াজের দিকে তাকায়। ইমতিয়াজ ওকে বলে,
“আমার ফুফু শাশুড়ী।”

মৃত্তিকা কপাল কুঁচকে বলল,
“আপনি কে?”
“শরীফের বোন মানে তোমার..”

কথার মাঝেই মৃত্তিকা বলে,
“কেউ না।”

মৃত্তিকা চলে যাওয়ার সময় একটু দূরে অপরূপাকে দেখে। নজর যাওয়ার কারণ বারবার সে মৃত্তিকার দিকে তাকাচ্ছে।

“বাবার নতুন স্পা°ই?”

কথাটা ভেবে পরক্ষণেই মনে হলো,
“না, একে আমি জে°লে দেখেছিলাম।”

মৃত্তিকা আর তাকায় না, সে যে অপরূপাকে দেখেছে তাই বুঝতে দেয় না। ইমতিয়াজ একটু দৌড়ে এসে ওর পাশাপাশি হয়৷

এয়ারপোর্ট থেকে বাসা পর্যন্ত গাড়ি ঠিক করে ইমতিয়াজ। মৃত্তিকাকে গাড়িতে উঠিয়ে দিয়ে বলে,
“আমি একটু ফ্যাক্টরিতে যাবো, আজ জরুরি শিপমেন্ট আছে।”
“আচ্ছা, যান। সাবধানে যাবেন।”
“তুমিও।”

ইমতিয়াজ মৃত্তিকার কপালে চুম্বন করে৷ চলে আসার সময় মৃত্তিকা ওকে কাছে টে°নে এসে সেও ইমতিয়াজের কপালে চুম্বন করে দেয়। ইমতিয়াজ মুচকি হেসে চলে যায়। মৃত্তিকা জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে অপরূপাকে দেখে ওদের দিকে তাকিয়ে থাকতে। সন্দেহ আরো তীব্র হয় মৃত্তিকার।
______________________________________

সকাল সকাল ঘর থেকে বেরিয়ে উঠানে পা দিতেই কুকুরের ঘেউ ঘেউ শুনে দৌড়ে আবারো ঘরে ফিরে আসে সারাহ্। উঠানে একটা দেশি কুকুর ওকে দেখেই ঘেউ করা শুরু করেছে।

আহনাফ ডাইনিং এ বসে ফোনে কিছু একটা দেখছে আর চা পান করছে। সারাহ্ ওকে ধা°ক্কা দিয়ে বলল,
“দেখেন না আহনাফ, ওখানে একটা কুকুর।”

আহনাফ ওকে টে°নে কোলে বসিয়ে বলে,
“আহনাফ বলে না।”

সারাহ্ রেগে ধম°ক দেয়,
“আমি কুকুরের ভ°য়ে আছি আর আপনি আছেন আহনাফ বলা নিয়ে।”

আহনাফ হাসতে হাসতে বলে,
“জামিলকে ভ°য় পাওনি আর কুকুরকে ভ°য় পাচ্ছো?”

সারাহ্ মাথা নাড়ে। আহনাফ ওর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে,
“ওকে, দেখি কি করা যায়। (একটু থেমে) ওমা ঐশী, তুমি আমার কোলে বসেছো কেন? ভেরি ব্যাড।”

সারাহ্ লাফিয়ে উঠে সরে যায়। আহনাফ হেসে একটা বিস্কুটের প্যাকেট নিয়ে বাইরে আসে৷ সারাহ্ও সাথে সাথে এসে একটু পিছনে দাঁড়ায়। আহনাফকে দেখেই কুকুরটা লেজ নাড়তে নাড়তে এগিয়ে আসে।

“আপনি এটার আমদানি করেছেন?”

আহনাফ কপাল কুঁচকে বলে,
“আমদানি? (একটু থেমে) সেফটির কথা ভেবে এনেছি।”

আহনাফ ওর হাতে বিস্কুট দিয়ে বলল,
“খেতে দাও।”

সারাহ্ কুকুরটার দিকে বিস্কুট ছুড়ে ফেলে সরে যায়। আহনাফ বলে,
“একটু ভদ্রভাবে দাও।”
“পারবো না।”
“ঘরে আসো।”

আহনাফের সাথেই ঘরে আসে সারাহ্। আহনাফ চারটা রুটি আর এক লিটার পানি নিয়ে পাশের রুমে যেতে নিলে সারাহ্ বলে,
“একজন মানুষ চারটা রুটি খাবে, তাও খালি খালি?”

আহনাফ যেতে যেতে বলে,
“একজন না চারজন।”
“চারজন?”

সারাহ্ চমকে উঠে। জামিল ছাড়া আর কে আছে ওখানে?

সারাহ্ দ্রুত ওইরুমে যায়। আহনাফ দরজা লাগিয়ে দিয়েছে, সে ভিতরে যেতে পারে না। তবে কান পাতে, ওইরুমের শব্দ মোটামুটিভাবে বাইরে থেকে শোনা যায়।

চারজন মানুষ রুমে বসে আছে। একজন জামিল আর বাকি তিনজন ওকে সাহায্য করতে এসেছিল। জামিলের দেরি হওয়ায় রাতে এরা বাড়িতে ঢুকলে আহনাফ একে একে তিনজনকেই পা°কড়াও করেছে।

আহনাফ রুটিগুলো সামনে রেখে বলল,
“কাল শুধুই ট্রেইলার দিয়েছি, আজ কিন্তু মেইন মুভি হবে। সো আগে আগে বলে দাও।”

কালরাত থেকে জামিলের সামনে বাকি তিনজনকে বেল্ট দিয়ে পাগলের মতো পিটি°য়েছে আহনাফ। শরীরের এমন কোনো অংশ নেই যেখানে সে মা°রেনি। একপর্যায়ে দেহের সমস্ত পোশাক খুলে পিটিয়েছে সে। একেকজন ব্য°থায় কুঁ°ক°ড়েছে কিন্তু হাতমুখ বাধা থাকায় চিৎকার করতে পারেনি। জামিল এসব দেখেছে, ছটফট করেছে।

চারজনের সামনে ছুড়ে ছুড়ে রুটি ফেলে আহনাফ। মুখে বলে,
“তুলে খাও।”

ওদের মুখ বাধা দেখে হাসে সে। তিনজনের মুখ খুলে দেয়, তবে জামিলের মুখ খুলেনি। তিনজন খুবই ক্লান্ত, সাথে ক্ষুধার্ত থাকায় চার পায়ের প্রাণীর মতোই মুখ দিয়ে খেতে শুরু করে। আহনাফের একটু খারাপ লাগলেও শক্ত থাকে সে। যেমন করেছে, তার চেয়ে কমই তো ফেরত পাচ্ছে।

জামিল “উম, উম” করে শব্দ করে। আহনাফ ওর মুখ খুলে দেয়। জামিল বলে,
“কথা বলতে হলে তো মুখ খুলতে হবে, নাকি?”

আহনাফ চেয়ার টে°নে বসে একটু হেসে বলে,
“হ্যাঁ, বলো।”

জামিল একটা ঢোক গিলে বলল,
“একটু পানি..”

কথা শেষ হওয়ার আগেই আহনাফ চোখ রা°ঙিয়ে বলে,
“বলো।”

“শাফিনের সব কুকর্মে আমার নব্বই শতাংশ অংশ আছে। সে নারী পা°চা°রে যুক্ত, আমি সেখানে শেয়ার রেখেছি৷ সে যখন তাহমিনাকে (একটু থেমে) রে°প করেছিল, আমি দেখেছি। তাহসিনাকে পি°টি°য়ে হাতপা ভে°ঙেছিলাম আমি।”

আহনাফ চোখ বন্ধ করে। তাহসিনাকে কবরে নামানোর সময় কেউ কি বুঝেনি তার হাতপা ভা°ঙা? কষ্ট কি পরিমাণ পেয়েছিল সে?

“রিপার চিৎকার শুনে শাফিনের সাথেই হেসেছিলাম আমি। তাহমিনা মা°রা গেলে তিনজনকে গাড়িতে আ°টকাতে আমি সাহায্য করেছিলাম। রিপা অনুরোধ করছিলো বাচ্চাগুলোকে ছেড়ে দাও। শাফিন আর দুলালের মতো আমিও সেদিন হেসেছিলাম।”

আহনাফ চোখ বন্ধ করেই বলে,
“নব্বই নয়, একশ শতাংশই অংশ রেখেছো।”
“একশ নয়, শাফিনের মতো প্রেগন্যান্ট নারীদের প্রতি আমার লো°ভ হয়না। হলে সারাহ্-কে..”

কথা শেষ করার আগেই জামিলের গলা চে°পে ফ্লোরে ফেলে দেয় আহনাফ। দাঁতে দাঁত ঘ°ষে বলল,
“খু°ন করে ফেলবো, এই ঘরে মে°রে এখানেই পুঁ°তে রেখে দিবো।”

কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে ছেড়ে দিয়ে টে°নে তুলে আহনাফ। তারপর বলে,
“আমার সাথে আর কি সমস্যা হয়েছে তোমার?”

জামিল মাথা নাড়িয়ে হেসে বলে,
“তোমার বাবার সাথে হয়েছিল। তোমার ফুফুর বিয়েতে যা যা দেয়ার কথা ছিল তা তো দেয়নি আবার বারবার অপমান করেছে। আফরোজার বিয়ে আমার পছন্দের ছেলের সাথে করাতে চেয়ে পারিনি। তবে যখন শাফিন নার্গিসের বিষয়টা বলে তখন ভাবলাম এক ঢি°লে দুই পাখি মা°রলে মন্দ হয় না।”

আহনাফ চেয়ার সরিয়ে নিচে জামিলের মুখোমুখি বসে বলল,
“কয়টা পাখি ম°রেছে?”
“একটা, (একটু থেমে) নার্গিস ঘাবড়ে আছে, এটাই কম কি?”

জামিল ঘাড়টা দুদিকে হালকা ঝাঁ°কিয়ে বলল,
“আর শাফিন সারাহ্-কে সহজে ছাড়বে না। তাহমিনার মতো চিৎকার করবে সারাহ্ও, বলবে আহনাফ আ…”

জামিলের নাকেমুখে ঘু°ষি দেয় আহনাফ। তারপর বলে,
“ওহ, এসব তো খুব সাধারণ ব্যাপার।”

আহনাফ উঠে গিয়ে একটা বক্স আনে আর একটা ছু°ড়ি। জামিলের শার্ট খুলে ফ্লোরে ফেলে ছু°ড়ি দিয়ে আঁকিবুঁকি দাগ কা°টে৷ রাগে ক্ষো°ভে দ্রুত হাত চালাচ্ছে আহনাফ। র°ক্ত পড়ছে, ক্ষ°ত হচ্ছে, মাংস বের হয়ে থাকছে। আহনাফ থামে না, জামিল দাঁতে দাঁত চেপে চুপ থাকে।

বাকি তিনজন চেঁ°চানোর আগেই আহনাফ গিয়ে তাদের মুখ আবারো বেঁধে দেয়। জামিলের সামনে এসে বক্সটা খুলে তার মুখের সামনে ধরে বক্সে মরিচের গুড়া দেখে চোখ বড় করে জামিল। কিছু বলতে নিলে মুখে শার্টটা ঠু°সে দেয় আহনাফ। তারপর পিঠে মরিচের গুড়া ঘ°ষে ঘষে লাগায়। ব্য°থায় চিৎকার করতে চেয়েও চিৎকার না করতে পারার য°ন্ত্র°ণায় ছ°টফ°ট করতে থাকে জামিল।

আহনাফ বক্সটা রেখে বলে,
“এটা লেভেল ওয়ান, ওয়েটিং ফর নেক্সট।”
______________________________________

“জামিলের কোনো খোঁজখবর নেই, কালরাতে সারাহ্-কে আনতে গিয়েই লাপাত্তা হয়েছে৷”
“ধরা পড়েছে নাকি?”

অপরূপার কথা হাওয়ায় উড়িয়ে দিয়ে শাফিন বলে,
“আরে না।”

অপরূপা কান থেকে ফোন সরিয়ে চুল ঠিক করে আবারো ফোন কানে রেখে বলল,
“শরীফ চলে গেছে। আমি এয়ারপোর্টে এসেছিলাম দেখেছি।”

শাফিন শব্দ করে হেসে বলল,
“খুব ভালো কথা। এখন মৃত্তিকার পালা।”
“তানজিম কিন্তু কোনো দিক দিয়ে কম যায় না। সৎ হলে কি হবে? বোনের দিকেই গেছে।”

শাফিন ব্য°ঙ্গ করে বলে,
“র°ক্ত তো লুৎফরেরই। মা আলাদা হলে কি হবে?”
“তানজিম জানে এসব?”
“না, বোনদের মা ম°রেছে, সব লুকিয়েছে। লুৎফর তো ভাবে তার অন্য স্ত্রীর মেয়েদের মমতাজ নিজের মেয়ের মতো পেলেপু°ষে বড় করেছে। (একটু থেমে) আচ্ছা রাখো এখন।”

অপরূপা ফোন রাখে। একটা মানুষ নি°কৃ°ষ্টতার কোন ধাপে পৌঁছালে হতে পারে তা ভাবা কষ্টকর।

অপরূপা নিজের সাথে আনা কালো গাড়িটাতে উঠে পড়ে। গাড়ি চলতে শুরু করে। পেছনে থাকা ধূসর রঙের গাড়ি থেকে মৃত্তিকা বলে,
“আংকেল, ওই গাড়িটার পিছু পিছু যান।”

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here